তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৪

#তোমাতে আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২৪)

অথৈর ঠোটে হালকা চুৃমু খেয়ে নিলো মাহির।

“”নিন,মুছে দিয়েছি। আপনি চাইলে আরেকটু মুছে দিবো।””

অথৈ হাত দিয়ে নিজের ঠোটদুটো ঢেকে কপাল গুছিয়ে নিলো। চোখগুলো ছোটছোট করে মাহিরকে বুঝাতে চাইছে সে বেশ রেগে গেছে। কিন্তু মাহির একটা ছোট হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলো। তারমানে কি উনি বুঝতে পারছে আমি জোর করে রাগার চেষ্টা করছিলাম?!!

অথৈ রুমে এসে মাহিরকে খুজে পেলোনা। কোথায় গেলো উনি?? ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে কানপাততেই বুঝতে পারলো ওখানেই আছে। অথৈ বিছানার কাছে এসে উঠে বসলো,পা দুটো বাজ করে গালে হাত দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে রইলো। অথৈর মনে হলো মাহির আজকে বের হবেনা পুরোদিন রাত ধরে ওখানেই থাকবে। দুর!

অথৈ আর অপেক্ষা করতে পারলোনা। আবার ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দরজায় খটখট করতে লাগলো। প্রথমে আসতে আসতে করলেও এবার জোরে জোরে করতে লাগলো। মাহির বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিলো।

“”কি হয়ছে আপনার? আমাকে কি একটু শান্তিমতে গোসলও করতে দিবেননা?””

অথৈতো মাহিরকে দেখে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। মাহিরের পুরো শরীরে সাবান দিয়ে মাখা। মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত এমনকি মুখেও সাবান লেগে আছে।

“”আপনি কি আপনার হাসি শুনানোর জন্য দরজায় টুকা দিচ্ছিলেন?””
“”নাহ,আপনার হনুমানের মতো রুপ দেখার জন্য!””
“”দুর!””
“”আরে দরজা লাগাচ্ছেন কেন? আমি আপনার গোসল করা দেখবো?””
“”আরমান বুঝি আপনাকে গোসল করা দেখাতো?””
“”হুম,দেখাইতোই তো। ও কি আপনার মতো হনুৃমান সেজে গোসল করতো? ও অনননন…”””

মাহির অথৈকে টেনে গোসলখানায় নিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো। পানি দিয়ে নিজের মুখটা ধুয়ে নিয়ে বললো,

“”আরমান কিভাবে গোসল করতো এখন বলেন।””
“”আমার এখন বলতে ইচ্ছে করছেনা। আমি রুমে যাবো।””

মাহির অথৈকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নিলো। অথৈ ওর চোখ দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। চোখগুলো কেমন লাল লাল হয়ে আছে।

“”আপনি এখনি বলবেন। বলেন কিভাবে গোসল করতো?””
“”জানিনা।””
“”আপনার দেখতে লজ্জা লাগেনি আর আমাকে বলতে লজ্জা লাগছে? শুধু আরমানের গোসল করাই দেখেছেন নাকি নিজের গোসল করাও আরমানকে দেখিয়েছেন???””

অথৈ এবার ভীষন রেগে গেলো। ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো মাহিরের গালে। তারপর ওকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে এলো।

মাহির ঝর্নাটা ছেড়ে পানির নিচেই দাড়িয়ে রইলো। আজ খুববেশি কষ্ট হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে এই ঝর্নার সাথেই ফাসি দিয়ে মরে যেতে। কি হবে আর বেচে থেকে? কার জন্য বাচবে সে? তাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই। মা বাবাকে হারিয়ে যাকে নিয়ে বাচার নতুন করে স্বপ্ন দেখলাম তার চোখে নিজের জন্য এক ফোটা ভালোবাসাও কখনো দেখিনি তাহলে কি হবে তাকে জোর করে আটকে রেখে???

অথৈর ভীষন কান্না পাচ্ছে মাহির এরকম কথা বলবে এটা কখনো ভাবেনি সে। কি করে বলতে পারলেন উনি? উনি কি আমাকে ওরকম মনে করেন? আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবোনা কক্ষনোনা মাহির।

মাহির সাওয়ার শেষ করে বের হতেই অথৈকে বিছানায় গুটিশুটি হয়ে বসে থাকতে দেখলো। মাহির সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজে রেডি হতে লাগলো।

অথৈ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলো মাহির কি করছে। কালো একটা শার্ট গায়ে দিতেই অথৈর রাগ হতে লাগলো। এতো সুন্দর করে সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করার জন্য নাকি ইউনিভার্সিটির ক্লাসে মেয়েদেরকে পটানোর জন্য? খুব তো বউ বউ করে তাহলে এতো সুন্দর বউ ঘরে থাকতে উনাকে এতো সেজেগুজে বাইরে যাওয়ার কি দরকার? আমি মনে হয় কিছু বুঝিনা আমি সামনে থাকলেই যতো ভালোবাসা দেখাতে আসে আর বাইরে গেলে সব উধাও। সব ছেলেরাই এমন হয়। ভার্সিটিতে খোজ নিলে ঠিকই জানতে পারবো কাউকে বলেইনি হয়তো, উনি বিবাহিত। জানাবে কেন জানালে তো সব বানুরা উনাকে পাত্তায় দিবেনা তখন কার সাথে গুন্ডামী করবে???

“”বিকেলে রেডি হয়ে থাকবেন,আপনাকে নিয়ে বের হবো।””
“”পারবোনা।””
“”আপনার ইচ্ছে পুরন করার জন্যই বলছি। রাগগুলো জমিয়ে রাখেন, আমাকেই সব দিয়ে দিলে অন্য কাউকে দেওয়ার জন্য আর কিছু থাকবেনা।””

অথৈ বিছানা থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসলো।

“”আপনার কি মনে হয় আমি সবার সাথেই রাগ দেখায়,আমি ঝগড়ুটে?””
“”আপনার কি সন্দেহ আছে?””
“”আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?””
“”এই এই এই একদম আমার কাছে আসবেননা। দুরে থেকে কথা বলেন।””

অথৈ কপাল গুছিয়ে চোখগুলো বড় বড় করে নিলো। মাহিরের কাছে যেতেই মাহির আরো দুরে চলে গেলো।

“”কেন কাছে আসবোনা?””
“”আমি চাইনা আমার শখের শার্টটা আপনার হাতে ইন্তেকাল করুক। অথৈ প্লিজ,দুরে থেকে ঝগড়া করুন।””

মাহিরের কথায় অথৈর মাথায় দুষ্টুবুদ্ধী চাপলো। সবসময় মনের অজান্তেই শার্ট ছিড়ে ফেললেও এবার জেনেশুনেই ছিড়বে। এত সুন্দর সুন্দর সাজুগুজু করে মেয়েদের সাথে লুতুপুতু আমি ছোটাচ্ছি।

অথৈ দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে মাহিরের কাছে এগিয়ে গেলো। অথৈর এমন হাসি দেখে মাহির বেশ অবাক হয়ে গেলো। উনার আবার কি হলো? একটু আগেও তো রাগে ফুলেফেপে যাচ্ছিলো এখন আবার মুচকি মুচকি হাসছে কেন? মাথায় কি অন্য প্লেন? মাহির দ্রুত নিজের শার্টে নিজের দুহাত দিয়ে চেপে ধরে অন্য দিকে যেতে লাগলে অথৈ শার্টের কিছুটা অংশ খামচি দিয়ে ধরে ফেললো। মাহির বেশ হতাশা হয়েই অথৈকে বললো,

“”অথৈ প্লিজ,এই শার্টটাকে রেহাই দিন। আমি আর জীবনেও শার্ট পড়বোনা যে দোকানে শার্ট আছে ওই দোকানেই ঢুকবোনা,প্লিজ????””

মাহির ছুটাছুটির জন্য অথৈ ঠিকমতো কিছু করতেই পারছেনা। দুজনের হাতাহাতিতে মাহির বিছানায় পড়ে গেলো সাথে অথৈও।

“”আপনি এমন করছেন কেন? আমার একটা কথাতো রাখুন,ছাড়ুন পরে ব্যথা পেয়ে আমার দোষ দিবেন।””

অথৈ মাহিরের কোনো কথায় শুনলোনা সোজা লাফ দিয়ে মাহিরের পেটের উপর বসে পড়লো। আর মাহিরের শার্টটা দুহাতে খামচি দিয়ে ধরে চোখবুজে একটানে ছিড়ে ফেললো।

“”আমি ঝগড়ুটে না এইবার দেখেন ঝগড়ুটে মেয়ের ঝগড়া কেমন লাগে।””

অথৈ খুব জোরে হাসতে লাগলো। মাহিরের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেনা।

মাহির পুনরায় অথৈর মিস্টি হাসির মিস্টি শব্দে প্রেমে পড়ে গেলো। সে মুগ্ধ হয়ে অথৈর হাসি দেখতে লাগলো। যদি সে কবি হতো তাহলে হয়তো সে এই হাসি নিয়ে কবিতার বই বের করে ফেলতো তবুও হয়তো তার মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারতোনা। অথৈর হাসির শব্দে মাহির অন্যঘোরে চলে গেলো। অথৈকে ধরে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।

অথৈর হাসি টুপ করে উধাও হয়ে গেলো।

“”কি করছেন আপনি,ছাড়ুন বলছি!””

মাহিরের কানে অথৈর কোনো কথায় ঢুকলোনা। তার কানে শুধু অথৈর সে হাসির শব্দ বাজছে। যা তাকে ঘোরের গভীরে নিয়ে যেতে লাগলো। মাহির চোখ বন্ধ করে অথৈর ঠোট দুটো নিজের আয়ত্বে নিলো।

অথৈ মাহিরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও কেন জানি পারলোনা। মাহিরের ছোয়ায় নিজের মধ্যে এক ভালোলাগার শিহরন কাজ করতে লাগলো। যা তার মন উপভোগ করতে চাইছে। অথৈর মনকে সায় দিতে খুব ইচ্ছে করলো। মাহিরকে আলতো করে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বুঝতেই আরমানের মুখ ভেসে উঠলো,,

“”অথৈ!!””

আরমানের মুখে নিজের নাম শুনেই ঝট করে চোখ মেলে ফেললো অথৈ। মাহিরকে ধাক্কা দিয়েও যখন সরাতে পারলোনা ওর মুখটা উচু করে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here