তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৭

#তোমাতে- আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২৭)

“”একদিন এমন লাল শাড়ি পড়ানো অবস্থায় আপনাকে বিয়ে করেছিলাম। আজ সেই লাল শাড়িতেই আপনাকে আমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে গেলাম। সেদিন হঠাৎ করেই আপনি আমার জীবনে নতুন অধ্যায় খুলেছিলেন আজ ঠিক তেমনি হঠাৎ করে আপনাকে আপনার বাড়িতে রেখে অধ্যায়টা ক্লোজ করে দিলাম। আপনি ভালো থাকবেন। খুব ভালো থাকবেন। আপনাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি তাইনা অথৈ? আর কোনো যন্ত্রনা আপনাকে পেতে হবেনা। এই মাহির আর কোনোদিন আপনাকে জ্বালাতে আসবেনা,কোনোদিন কোনো অধিকার নিয়ে আসবেনা,কোনোদিন কোনো ভালোবাসার দোহায় নিয়ে আসবেনা।””

এসব কি বলছেন কি আপনি? আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন? আপনি কি বুঝতে পারেননি আমিও যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি? আমার চোখ মুখ দেখে কি মনে হয়নি আপনার প্রেমে পড়ে লজ্জায় কেমন লজ্জাবতী হয়ে গেছি? একবারও ভাবেননি আপনার পাগলামো,আপনার জ্বালানোগুলোতেই আমি আসক্ত হয়ে গেছি? আপনি যে আমার নেশা হয়ে গেছেন মাহির,আমি যে আপনাতে আসক্ত হয়ে গেছি। কিভাবে থাকবো আপনাকে ছাড়া? সকালের ঘুম ভেংগেই আপনার ওই লোমশ বুক না দেখলে যে আপনার দিনটা ভালো যায়না। আপনার ভালোবাসাময় অত্যাচারগুলো ছাড়া যে আমি দিন কাটাতে পারবোনা। আপনার জোর করে স্পর্শগুলো ছাড়া যে আমার আর কোনো স্পর্শেই কোনো অনুভূতি হবেনা,মাহির আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার বুকের ভেতরের চিৎকারগুলো???

হ্যা অথৈ খুব চিৎকার করে তার ভালোবাসার জানান দিতে চেয়েছিলো কিন্তু সে পারেনি। মাহিরের চোখে অবাক নয়নে তাকিয়ে চোখে জল জমিয়েছে। তার ভেতরের চিৎকারগুলো আজ মাহির কেন বুঝতে পারেনি! কেন? অথৈর ভীষন অভিমান হলো। সে যখন বুঝতেই পারেনি তাহলে সেও বলবেনা।

মাহির পেছনে ঘুরেই এনামুক হককে দেখতে পেলেন। সে দৌড়িয়ে তার শ্রদ্ধেয় স্যারের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

“”স্যার,আমি পারিনি আপনার মেয়ের মন জয় করতে। কিছু জিনিস জোর করে পাওয়া যায় না তার মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে এই ভালোবাসা। আমার মতো এমন মানুষ কিভাবে পারবে? ছোটবেলা আপনি কঠিন কঠিন অংক দিয়ে বলতেন যে মাহির এবার তুমি অকৃতকার্য হবে। কিন্তু আমি কেমন করে জানি কঠিন কঠিন অংকগুলোও সলভ করে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আপনার সেই আফসোসময় চেহারা দেখে আমার ভীষন মায়া হতো। ইচ্ছে করতো নেক্সটটাইমে আমি ঠিকই অকৃতকার্য হয়ে আপনাকে খুশি করবো। কিন্তু পরক্ষনেই যখন বলতেন মাহির তুমিই আমার দেখা শ্রেষ্ঠ স্টুডেন্ট তখন আপনার তৃপ্তি ভরা হাসির দিকে তাকিয়ে আমি বলতাম আপনার এই তৃপ্তির হাসি আমি কখনো মুছতে দিবোনা। কিন্তু আজ দেখেন আপনার মেয়েই আমাকে অকৃতকার্য করে দেখিয়ে দিয়েছে। আপনার সেই আফসোসটা আজ পুরন হয়ে গেছে স্যার।””
“”মাহির,শান্ত হ বাবা। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।””

মাহির এনামুল হককে ছেড়ে দাড়িয়ে বেশ কঠিন স্বরেই বলে,

“”কিছু ঠিক হবেনা স্যার। কিছু ঠিক হবেনা। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আর আপনার শ্রেষ্ঠ স্টুডেন্ট হয়ে থাকতে পারলামনা। আমার জন্য দোয়া করবেন। আসি।””

মাহির নিজের চোখগুলো মুছে নিয়ে বের হতে নেয়।

অথৈর রাগ হচ্ছে,অভিমান হচ্ছে আবার কষ্টও হচ্ছে। এতোকিছু একসাথে হলে সে কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখবে? উনি এমনটা কেন করলো? আমি তো সব কিছু মেনে নিয়ে উনাকে ভালোইবাসতে চাইলাম। এই যে এতো সাজুগুজো তো উনাকে খুশি করার জন্যই করেছিলাম তাহলে? উনি কি পারতেননা আজকে আমার বাড়ি না এসে কোনো একটা রোমান্টিক জায়গায় গিয়ে আমার হাতটা ধরে বলতে।

“”অথৈ তোমার এই হাতটা আমাকে দিবে? আমার এই হাতের বাধনটা খুব দরকার।””

তাহলে তো আমিও খুশি খুশি মনে তাকে দিয়ে দিতাম। আরো শক্ত করে ধরে বলতাম,

“”শুধু হাতটাই নিবেন? আর কিছু লাগবেনা???””

এমনটা কেন হলো না মাহির? অথৈ লুকিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে নেয়। আর মাহিরের দিকে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।

আজ কেন জানি মাহিরকে খুব সার্থপর মনে হচ্ছে অথৈর কাছে। স্বার্থপর না হলে সে একটাবার ও কেন জানতে চায়নি আমার মনের কথা? আমাকে আরেকটু টাইম দিলে কি খুব খারাপ হয়ে যেতো?? আমাকে আরেকটু গভীরভাবে কেন বুঝতে চাননি মাহির??

মাহির দরজার কাছে গিয়েছে। কিন্তু তার খুব ইচ্ছে করছে অথৈকে আরেকবার মন ভরে দেখে নিতে। আর তো কোনোদিন দেখা হবেনা। সে কি পারবে তাকে ছাড়া থাকতে??? ভাবতেই মাহিরের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে আর কাদবেনা। অথৈর জন্য আর এক ফোটা চোখের পানিও ফেলবেনা। কিন্তু এই চোখের পানি কি তার কথা শুনবে???

“”দাড়ান।””

হঠাৎ অথৈর ডাকে দাড়িয়ে যায় মাহির। পেছনে ঘুরতেই অথেকে ড্যাবড্যাব করে দেখে নেয় আর মনে অন্য কিছু উকি দিচ্ছে। অথৈ ধীরে ধীরে পায়ে তার দিকেই এগিয়ে আছে। তাহলে কি অথৈ তাকে মেনে নিয়েছে? তাকে ভালোবেসে ফেলেছে? সে কি এখন তাকে জড়িয়ে ধরবে? অভিমানে গাল ফুলিয়ে নাক টানতে টানতে বলবে যে আমাকে ছেড়ে যাবেননা প্লিজ। তাহলে আমি মরে যাবো।

মাহির অধীর আগ্রহে অথৈর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথৈ মাহিরের ঠিক কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথৈর রক্তরাঙা চোখ দেখে মাহির ভয় পেলে যায়। অথৈ তার চোখের পলক না ফেলেই মাহিরের টি-শার্ট দুহাতে খামচে ধরে। আর মাহিরকে অবাক করে সজোরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।

“”আমার খুব শখ ছিলো আপনার একটা টি-শার্ট ছিড়বো। শেষ ইচ্ছেটা পুরন করে নিলাম। আসতে পারেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here