#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১২
ভার্সিটির সামনে আদিয়াতের গাড়ি এসে থামলো।দুজনেই চুপচাপ।কারো মুখেই কোন কথা নেই।কিন্তু দুজনেই দুজনের কাছ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছে।আহি অপেক্ষা করলো আদিয়াতের কিছু বলার কিন্তু আদিয়াত কিছু বললো না বিধায় আহি গাড়ি ডোরলক খুলে বের হতে নিলেই আদিয়াত আহি’র হাত ধরে থামিয়ে দেয়।আহি অবাক হয়ে তাকানোর সাথে সাথে আদিয়াত আহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আহি’র হাতজোড়া আদিয়াতের বুকে আর আদিয়াত আহিকে নিজের সাথে আকড়ে ধরে আছে।আদিয়াত তীক্ষ্ন এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আহি’র দিকে।তারপর অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলে,” কাল থেকে যেন তোকে এইসব পোশাকে না দেখি।আই ওয়ান্ট টু গো ব্যাক টু মাই প্রিভিয়াস আহিয়ানা। কি বুজেছিস??”
আহি ভয় পেলো বলতে গেলো গা হিম করা এই হুমকিতে অনেকটাই ভয় পেলো।তবুও নিজের ভয়টাকে দমিয়ে রেখে অনেকটা সাহস জুগিয়ে বলে, ” যদি আমি আগের মতো না হই তাহলে?”
আহি’র বলা কথায় ধপ করা রাগটা যেন মাথাচড়া দিয়ে উঠলো আদিয়াতের।আহি’র কোমড় শক্ত করে ধরলো।ফলে আহি অনেকটাই ব্যাথা পেলো।ব্যাথায় তার কপাল কুচকে এলো।তবুও কিছু বললো না।আদিয়াত রাগী কন্ঠে বলে, ” আমার কথার হেরফের হলে আমি কি করবো তা আমি নিজেও জানি না।আর আমার রাগ কতোটা ভয়ানক সেই সম্পর্কে তোর ধারনা সবার থেকে ভালো আছে।যদি ছোট্টোবেলার মতো আমার হাতে থাপড়া থাপড়ি না খেতে চাস আমি যা বলবো তাই করবি।”
আহি ধাক্কা দিয়ে সরালো আদিয়াতকে।তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলো।বললো,” আগের আহিয়ানাকে আপনারাই মেরে নিজ হাতে কবর দিয়ে দিয়েছেন।তাই তাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।এর বিনিময়ে যদি আমাকে মেরে ফেলাও হয় আমি অকপটে তা গ্রহণ করবো।আসি তাহলে।ভালো থাকবেন।”
আদিয়াতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আহি ফটাফট ভার্সিটির গেট পেরিয়ে ভিতরে চলে গেলো।আদিয়াতের রাগে গা রি রি করছে।বিধায় পাবলিক প্লেস নাহলে আহিকে দু চারটা চর থাপ্পড় মেরেই দিতো আজ ও।কিসের এতো দেমাগ এই মেয়ের?কেন এমন হয়ে গেলো ও?কি কারন আছে এর পিছনে?আদিয়াত স্টেরিংয়ের সাথে মাথা ঠেকালো।তার মাথায় চলছে একটাই ভাবনা। ‘ আহি’র সাথে এই পাঁচবছরে কি কি হয়েছে সব জানতে হবে তাকে।আর জানতে গেলে সবার আগে আহি’র চাচা,চাচির খোজ নিতে হবে।কারন আহি তাদের কাছেই থাকে পাঁচ বছর যাবত।’
আদিয়াত নিজেকে শান্ত করলো।জটিল এই পরিস্থিতির সমাধান বের করার চেষ্টায় তার মস্তিষ্ক করেই চলেছে করেই চলেছে।দেখা যাক তা কতোটুকু সফল হয়।গাড়ি স্টার্ট করে আহি’কে ছোট্ট একটা মেসেজ দিলো আদিয়াত তা হলো,
” ভার্সিটি শেষে আমি নিতে আসবো।কোথাও যেন না যাওয়া হয় আমি আসা না অব্দি।”
তারপর আদিয়াত নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।
.
ক্লাস রুমের দিকে যাওয়ার পথেই অন্য ভবনের বারান্দায় দাড়ানো দেখতে পায় আদ্র,ফাহিম,তিয়া আর আয়রাকে। সেদিকেই পা বাড়ায় আহি যাওয়ার জন্যে কিন্তু তার আগেই নিজের ফোনে মেসেজ টোনের শব্দ পেয়ে।ফোন করে দেখে আদিয়াত মেসেজ দিয়েছে।হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহি।সকল ভাবনা চিন্তা ফেলে বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেলো। আপাততো সে সময়টা হাসিখুশিভাবে তার বন্ধুদের সাথে কাটাতে চায়।
.
চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে একটা বড় গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে সিয়া।দু কোমড়ে হাত দিয়ে গাছের উপরের ডালপালার দিক চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।তারপাশেই ছোট্ট একটা মেয়ে দাড়ানো তার হাতে একটা পাখির বাসা।ছোট্ট মেয়েটি তার বাচ্চাসুলভ মিষ্টিসুরে বলে,
” আপু এতো বড় একটা গাছে তুমি কিভাবে চড়বে?”
সিয়া দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে তাকালো বাচ্চাটির দিকে।ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,” আমি জীবনেও কোনদিন গাছে চড়িনি।”
বাচ্চাটি একবার পাখির বাসাটি দেখলো।তারপর আবার সিয়ার দিক তাকিয়ে বলে, ” তাহলে এখন কি করবে?এই ছোট পাখির বাচ্চারা তো মারা যাবে ওর মা’র কাছে না গেলে।”
সিয়া চিন্তায় পড়ে গেলো।কি করবে এখন ও?কোন উপায় খুজে পাচ্ছে না সিয়া।
রাস্তা দিয়ে স্কুটি চালিয়ে কলেজে যাচ্ছিলো সিয়া।মাঝপথে এই বাচ্চাটি যখন তাকে হাক ছেড়ে ডাক দেয়। স্কুটি থামিয়ে দিয়ে সেদিকে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটি থেকে শুনতে পায়।একটা পাখির বাসা গাছ থেকে পড়ে গেছে।আর বাসাটায় দুটো পাখির বাচ্চাও আছে।আর এখন বাচ্চাটি সিয়াকে এই পাখির বাসাটি গাছে তার ঠিক জায়গা মতো রেখে আসতে বলছে।এখন সিয়া তো গাছে চড়তে পারে না।
তাই সিয়া মন খারাপ করে এদিক সেদিক তাকালো দেখছে কাউকে পাওয়া যায় কি-না।
হঠাৎ একজন ব্যাক্তিকে দেখে সেদিকে দৌড় দেয় সিয়া।ধরাম করে ব্যাক্তিটির সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে হাসে ওঁ।
এদিকে নিহানের গাড়িতে কি এক সমস্যা হয়েছিলো তাই সে ড্রাইভারকে দিয়ে সেই গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়ে দিয়েছে।অন্যদিকে অফিসেও লেট হচ্ছিলো তাই সে রিকশা খুজতে খুজতে অনেকটা পথ হেটেই চলে এসেছে।তাও রিকশার দেখা নেই।নিজ মনেই হাটছিলো নিহান।হঠাৎ উল্কাপিন্ডের মতো একটা মেয়েকে ওর সামনে আসতে দেখে হতভম্ভ হয়ে যায় সে।বড়বড় চোখে মেয়েটির দিকে।এদিকে মেয়েটি একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে দিলো তাকে।কেন যেন মেয়েটার এই মিষ্টি হাসিটা বড্ড ভালো লাগলো নিহানের।মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো।মেয়েটি আর কেউ না সিয়া।সিয়া হাসিমুখেই বলে,
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
সিয়ার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে কেন যেন রাগ লাগলো নিহানের তাও ভদ্রতার সহিত সালামের জবাব দিলো সে, ” ওয়া আলাইকুম আসসালাম।জ্বি কিছু দরকার ছিলো?”
সিয়া হালকা গলায় বললো, ” না মানে আসলে আপনার একটা ছোট্ট হেল্প লাগতো ভাইয়া!”
নিহান সরু চোখে তাকালো আশ্চর্য মেয়েটা বারবার ভাইয়া কেন বলছে তাকে?তাকে কি দেখতে এতোটাও বুড়ো লাগছে?
নিহান রাগ দমালো।বলে,
” জি বলুন কি হেল্প করতে পারি।”
সিয়া আবারো মিষ্টি করে হাসে।বলে,” আসলে কি ওইযে দেখছেন বাচ্চাটা সে কান্না করছে কারন একটা পাখির বাসা গাছ থেকে পরে গেছে।বাসাটায় ছোট ছোট দুটো পাখির বাচ্চা আছে।তাই সে হেল্প চাইতে আমাকে ডাকে।কিন্তু আমিও তো গাছে চড়তে পারি না।এখন তাই আমি আপনার কাছে হেল্প চাইতে আসছি।”
সিয়া একনাগাড়ে কথাগুলো বলে শ্বাস নিলো। নিহান একবার বাচ্চটির দিকে তাকালো আসলেই বাচ্চাটির হাত একটা পাখির বাসা।নিহান চোখ সরিয়ে আবার সিয়ার দিকে তাকালো।ঠান্ডা গলায় বলে, ” তো এখন আপনি বলছেন আমাকে গাছে চড়তে আর এই বাসাটা জায়গা মতো রেখে আসতে।”
সিয়া দাঁত বের করে হাসলো তারপর মাথা উপর নিচ করলো।মানে ‘হ্যা সে এটাই চাইছে।’ সিয়ার এই কাজটা কেন যেন নিহানের অনেক ভালো লাগলো।মেয়েটা কি কিউট দেখাচ্ছে।নিহান রাজি হলো।সুন্দর মতো গাছে চড়ে পাখির বাসাটা জায়গা মতো রেখে আসলো।তারপর সাবধানে গাছ থেকে নেমে আসলো।নিহান নামতেই সিয়া বলে, ” অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনি না করলে এই কাজটা কেউ করে দিতো না।আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি।”
নিহান বিনিময়ে বলে, ” ইট্স ওকে।আমিও হ্যাপি আপনাদের হেল্প করতে পেরে।”
” অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।” কথাটা শেষ করে নিজের হাত ঘড়িতে নজর যেতেই চিল্লিয়ে উঠে সিয়া।নিহান এতে গাবড়ে
তারপর আবার বাচ্চা মেয়েটির গাল টেনে দিয়ে বলে, ” আর এই কিউটির মুখে হাসি ফুটাতে পেরে আমি ধন্য।”
” অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।” কথাটা শেষ করে নিজের হাত ঘড়িতে নজর যেতেই চিল্লিয়ে উঠে সিয়া।নিহান এতে গাবড়ে বলে,” কি হয়েছে এনি প্রোবলেম?”
সিয়া তাড়াহুড়ো করে বলে, ” আমার কলেজে লেট হয়ে যাচ্ছে আজ আসি।সাবধানে থেকো পিচ্চি।আর হ্যা আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।”
সিয়া গিয়ে দ্রুত স্কুটিটে উঠে বসলো।স্কুটি স্টার্ট দিয়ে সিয়া চলে গেলো।এদিকে সে জানলও না যে ও একজনের মনে ঘন্টি বাজিয়ে দিয়ে গেছে।নিহান একধ্যানে সিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটার মিষ্টি হাসিটা বুকে বড্ড বাজেভাবে গেঁথে গেছে তার।এখন নিহান কি করে নিস্তার পাবে? মেয়েটার মায়াবি চেহারাটা হৃদয়ের মনিকোঠায় এই সামন্য সময়ের মাজে এইভাবে বিরাজ করবে ভাবতে পারেনি নিহান।কি হবে এখন নিহানের?এ কি সর্বনাশ করলো মেয়েটা তার? তবে নিহানেরও কি মেয়েটার প্রেমের ছোঁয়া মনে লেগে গেলো।কি জানি দেখা যাক কি হয়?
#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।