তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -১১

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১১
বিছানায় উপুর হয়ে ঘুমোচ্ছে আদিয়াত।কাল রাত বেশ দেরি করে এসেছে তার উপর আবার ঘরে এসে ভাংচুর করেছে যাতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে।আদিয়াতের হাতও কেটে গিয়েছে সেটাকে কোনরকম ব্যান্ডেজ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।আদিয়াতের ফোন বাজছে।আদিয়াত বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেললো এতো ভোরে আবার কে ফোন করবে তাকে?মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আদিয়াতের। রেগে মেগে ফোন রিসিভ করে দিলো এক ধমক,” হ্যালো কি সমস্যা? এতো ভোরে কেন ফোন দিয়েছো?”

ফোনের অপাশে ছিলো আদিয়াতের একটা গার্ড।আদিয়াতের ধমকে সে ভয় পেয়ে বলে, ” স্যার আমি বলছি।রিয়াজ! আপনি আমাকে আহি ম্যামের বাড়ির সামনে পাহারে দিতে বলেছিলেন সাথে আমার আরো দুজন আছে।”

আদিয়াত কান থেকে ফোন সরিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নাম্বারটা দেখে নিলো।তারপর কিছুটা শান্ত হয়ে বলে, ” ও হ্যা! তা এতো সকালে কেন ফোন করেছো?”

গার্ডটি একনাগাড়ে বলতে লাগলো, ” স্যার, আহি ম্যাম তার বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে গেছেন।তাইতো আপনাকে এতো সকালে জানালাম।”

আদিয়াত লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র সাতটা বেজে আটত্রিশ মিনিট।কিন্তু এতো সকালে মেয়েটা যাচ্ছে কোথায়? আদিয়াত প্রশ্ন করলো, ” কিন্তু ওর ক্লাস তো দশটায়। ও এতো তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছে?”

” সেটাই তো জানি না স্যার।”

আদিয়াত বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে, ” ওকে ফলো করো আমি ১০ মিনিটে আসছি।”

গার্ডটি মুচকি হেসে বলে, ” আমরা ম্যামকে আরো আগে থেলে ফলো করা শুরু করে দিয়েছি।আমি আপনাকে লোকেশন বলে দিবোনি স্যার।”

আদিয়াত প্রসন্ন হয়ে বলে, ” ইমপ্রেসিভ।আমি আসছি আমাকে লোকেশন পাঠিয়ে দিও।আর হ্যা তোমাদের একাউন্টে এক্সট্রা টাকা আমি সেন্ড করে দিবো।”

” থ্যাংক ইউ স্যার।”

আদিয়াত ফোন রেখে।কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াসরুম ছুটলো।যতো তাড়াতাড়ি তার আহিয়ানার কাছে যেতে হবে।
♣️
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে আহি।নিহানের ফোনে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে যাতে চিন্তা না করতে।এতো সকালে বের হওয়ার একটাই কারন আহি’র যেন আদিয়াতের সাথে ভার্সিটি যাওয়া না লাগে।এই লোকটার সামনেই ও আর যেতে চাইছে না।কাল রাতেই না কি এক কান্ড করলো।তারপর আবার যদি ভার্সিটিতে সবার সামনে এমন করে তখন?না! আহি যতোটুকু পারবে আদিয়াত থেকে লুকিয়ে থাকবে।তাই এতো সকালেই রওনা হওয়া ওর।অনেক্ষন স্কুটি চালিয়ে অবশেষে রাস্তার একপাশে স্কুটি থামালো আহি।আহি’র কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে।কিন্তু চারদিকে তাকালে এমন কিছুই দেখছে না সে।আশ্চর্য বিষয় একটা।যাইহোক আহি বেশি মাথা ঘামালো না।এখন ভাবার বিষয় এখন আহি যাবে কোথায়?আহি বিরবির করে বললো,” রাক্ষসটার জ্বালায় বাড়ি থেকে তো বের হয়ে আসলাম কিন্তু এখন যাবো কোথায় আমি?”

আহি ঠোঁট উলটে কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো।তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই ওর ঠোঁটের কোণে অদ্ভূত এক সুন্দর হাসি ফুটে উঠে।আহি স্কুটি স্টার্ট দিলো।কাঙ্খিত জায়গায় পৌছাতে প্রায় পনেরো মিনিট লেগেছে। আহি স্কুটি থামিয়ে চোখ বুজে লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো।তারপর চোখ খুলে চারপাশে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো।এখানে ছোট্টও না আবার বেশি বড়ও না একটা পুকুর।তার চারপাশে অসংখ্য গাছের সাড়ি।ফল গাছ,ফুল গাছ দিয়ে ভরা।পুকুরপাড়ে পাকা করে বসার জায়গা বানানো আছে।সেখানের দারোয়ান আহিকে দেখেই পান খাওয়া ফোকলা দাঁতে হাসলো।বলে, ” আরে আহি মা না-কি কতোদিন পর এলি!”

আহি বিনিময়ে মিষ্টি করে হাসলো।তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা ক্যাডবেরি চকোলেট বের করে দারোয়ান চাচার হাতে দিলো।এইবার তার হাসিটা আরো চওড়া হলো।বলেন,” যতো বার আসিস আমার জন্যে চকোলেট আনতে একদমি ভুলিস না।”

আহি কিছুই বললো না।আসলে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।সকালের সময় দেখে মানুষ একেবারে নেই বললেই চলে।আহি গিয়ে একেবারে পুকুরের পাকা সিরিগুলোর লাস্ট সিড়িতে গিয়ে পা ভিজিয়ে বসলো।চোখ বুজে এই স্নিগ্ধ সকালটা অনুভব করছে আহি।মনটা তার হঠাৎই ভালো হয়ে গেলো।আর হবেই বা না কেন?এতো সুন্দর একটা পরিবেশে আসলে যে কারোই মন ভালো হয়ে যাবে।আহি চোখ বুজে গুনগুনিয়ে গান ধরলো,

” ~’তোমাকে খুজে পাই ওই নীল আকাশে,
♪পাইযে খুজে ওই মিষ্টি বাতাসে।
~’ তোনাকে খুজে পাই ওই নীল আকাশে,
♪পাইযে খুজে ওই মিষ্টি বাতাসে।~”

“~’ হুমমম! তোমায় ভালোবাসি,আমি ভালোবাসি,
♪পেতে চাই আরো কাছে,আরো কাছে।~”

হঠাৎ অন্য কারো গলায় গানের এই লাইনটুকু শুনে চমকে চোখ মেলে তাকায় আহি।ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে চারশো চল্লিশের ঝটকা খায় ও।এ আর কেউ না আদিয়াত বসে আছে ওর পিছে।আহি কে এইভাবে নিজের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকাতে দেখে আদিয়াত দুভ্রু নাঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?আহি আমতা আমতা করে বলে, ” আপ..আপনি এ..এখানে? মানে কি করে এলেন?”

আদিয়াত ঝুকে গেলো আহি’র দিকে।আহি ভরকে গিয়ে নিজের মাথাটা পিছিয়ে নিলো।আদিয়াত বাকা হেসে বলে, ” আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো এতোটাও সোজা না প্রাণপাখি।”

আহি ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে আদিয়াতের দিকে।হঠাৎ আহি’র চোখ আটকে যায় আদিয়াতের হাতের দিকে।একি?লোকটার হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজের উপর দিয়েও রক্তে ভেজা হয়ে আছে! আহি’র মনটা বিষিয়ে উঠলো।লোকটা এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে?আহি’র প্রচন্ড ভয় করছে আদিয়াতের দিকে আগাতে।তাও চোখ বুজে কাঁপা হাতে আদিয়াতের ব্যান্ডেজ করা হাতে স্পর্শ করলো।আদিয়াত এতোক্ষন একধ্যানে আহিকেই দেখছিলো।আহি ওর হাত ধরায় ও তাকায় সেদিকে।আবারও আহি’র দিকে তাকায়।মেয়েটার চোখে পানি।তবে কি আহি ওর জন্যে কাঁদছে?কেন কাঁদছে?আহি’র কি আদৌ আদিয়াতের জন্যে কষ্ট হয়? যদি হতো তাহলে এতোগুলো বছর কি ওর থেকে এইভাবে লুকিয়ে থাকতে পারতো?এইভাবে ওর আহিকে বদলে দিতে পারতো?পারতো না! আদিয়াত রাগে দুঃখে এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় আহি’র হাত থেকে।তারপর গম্ভীর এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠে চলে যায়।আদিয়াত চলে যেতেই আহি দুহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে।আদিয়াত কেন এমন করে তার সাথে?কেন করে? ঠিক পাঁচ বছর আগেও আদিয়াত তার সাথে এমন করতো।আদিয়াত ওর সাথে মাজেমাজে এতো সুন্দর বিহেভ করতো আর এমন এমন কথা বলতো যা শুনে আহি মনে করতো আদিয়াত ওকে ভালোবাসে।আবার এতো বাজে বিহেব করতো যে আহি ভয়ে দু-তিন আদিয়াতের সামনেই যেতো না।তার আদিয়াত নিজে এসেই আহি’র সাথে কথা বলতো।কিন্তু কতো দিন আর?কয়দিন পর আবার যেই সেই হয়ে যেতো! আহিয়ান যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে তখন আদিয়াত কি এক কারনে জানি আহিয়ানাকে থাপ্পর দিয়েছিলো কারন টা কি তা ঠিক মনে নেই আহি’র।এরপর প্রায় ১ মাস আহি পালিয়ে পালিয়ে থাকতো আদিয়াতের থেকে।তখন অবশ্য আহি এমনিতেও অনেক ভয় পেতো।কারন তখন ছোট্ট আহি’র মনে আদিয়াতের জন্যে ভালোবাসা তখন সৃষ্টি হয়নি।সে তো ব্যস্ত ছিলো নিজের জগতে।১ মাস আদিয়াত থেকে লুকিয়ে থাকার পর।একদিন আদিয়াত ওকে বাগে পেয়ে আদিয়াত ওকে এমন থ্রেড দিয়েছিলো যে আহি দুইদিন পর্যন্ত জড়ে ভুগেছিলো।কি করেছিলো জানেন?আহি’র গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দিয়েছিলো।অবশ্য আহির জ্বড়ের মাজে ওর সেবা আদিয়াতই করেছিলো।সেটা ওর খেয়াল নেই মামার থেকে শুনেছিলো সে এটা।আজও আদিয়াত তার সাথে এমন করে।নিজেই কাছে আসে আবার নিজেই দূরে সরিয়ে দেয়।চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় আহি।নিজেকে সামলে নিয়ে আদিয়াতকে খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু খুজে পাচ্ছেই না আশ্চর্য লোকটা গেলো কোথায়?এদিক ওদিক ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আদিয়াত একটা মেহগনি গাছের চারপাশে পাকা করা সেখানে বসে আছে।আহি মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে হেটে গিয়ে সামনে দাঁড়ায় আদিয়াতের।দাঁড়িয়েই থাকি।আহি এমন সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিয়াত ভ্রু-কুচকে হালকা ধমকে বলে,” এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস!”

আহি কেঁপে উঠে আদিয়াতের ধমকে।কাঁদো কাঁদো মুখ করে আদিয়াতের পাশে বসে।তার ধীরেসুস্থে আদিয়াতের হাতটা নিজের কোলে নিয়ে আলতো করে রক্তেভেজা জায়গায় ছুইয়ে দেয়।কান্না ভেজা গলায় বলে, ” কি করে হলো এসব?”

আদিয়াত গম্ভীর গলায় বললো, ” তুই শুনে কি করবি?”

আহি’র নজর এখনো সেই ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকেই।ও আবার বলে, ” বলুন না প্লিজ।”

আদিয়াত এইবার আর ঘুরলো না সোজাসাপ্টা বলে দিলো, ” কাল প্রচুর রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছি সেখান থেকেই হাতে লেগে গিয়েছিলো।”

আহি ততোক্ষনে নিজের ব্যাগ থেলে এন্টিসেপ্টিক আর ব্যান্ডেজ বের করে ফেলেছে।এটা আহি’ ব্যাগে সবসময়ই থাকে।কারন বিপদের কথা বলা যায় না।আহি আদিয়াতের পুরনো ব্যান্ডেজটা কাচি দিয়ে আস্তে আস্তে কেটে ফেললো।কাটা জায়গা দেখে আহি চোখ বুজে ফেললো।অনেক্ষানি কেটেছে।আদিয়াত আহি’র এক্সপ্রেসন দেখে বললো, ” তুই রাখ! আমি করছি!”

আহি দ্রুত চোখ খুলে ব্যস্ত গলায় বলে, ” আমি করছি তো।”

আহি তুলোর মধ্যে এন্টিসেপ্টিক নিয়ে আস্তে আস্তে কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলো।আর বার বার ফু দিয়ে দিচ্ছে।জিজ্ঞেস করছে,” জ্বলছে আপনার?আমি কিন্তু আস্তে দিচ্ছি ব্যাথা পেলে আমাকে বলবেন!”

কিন্তু কে শুনে কার কথা আদিয়াত তো আহি’কে দেখতে ব্যস্ত।আহি’র চোখ দিয়ে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে।মেয়েটার কান্নাভেজা চেহারাটাও আদিয়াতের দেখতে ভালোলাগে।চোখ দুটো ফুলে গেছে, চোখ,গাল,নাক,কান সব লাল হয়ে আছে কান্না’র কারনে।ভীষন আদুড়ে লাগছে ওকে দেখতে।
এদিকে আহি’র ব্যান্ডেজ করা শেষ।বলে,” শেষ।এখন আপনি সোজা ক্লিনিকে গিয়ে ভালোভাবে ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন।”

আহি’ কথা শেষ করতে দেরি আদিয়াতের ওকে বুকে টেনে নিতে দেরি নেই।আদিয়াত আহিকে বুকে ঝাপ্টে ধরে। কপালে চুমু খেলো অনেক্ষন ঠোঁট ছুইয়ে রাখলো কপালে।আহি চোখ বুজে দুহাতে আদিয়াতের পিট জড়িয়ে ধরলো।আদিয়াত আহির কাঁধে থুতনি রেখে ঘোরলাগা গলায় বলে,

” আমার কষ্টে তুই আহত;তোর ভালোবাসার আঘাতে আমি ব্যাথিত! বল কি করে নিস্তার পাই আমি।তোর প্রেমের ছোঁয়ায় আমার মরণ হবে তো।”

#চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here