তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -১০

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১০
সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে নিহান।মাথাটা ব্যাথা করছে। তার উপর ওর মায়ের নানান কথা তো আছেই।

নিহানের মা বলেই চলেছেন,” দেখেছিস! দেখিছিস আমার কথাই ঠিক হলো।এই মেয়ে আমাদের মুখে চুন কালি মেখে ভেগে গেছে কোন ছেলে হাত ধরে।কাল মুখী এই মেয়ে।আমার কথাতো কেউ বিশ্বাস করিস না।আমি কিছু বললেই ছ্যাৎ করে উঠিস।এখন তোর আদুড়ে বোন কোথায় গিয়েছে তার কোন খোঁজ নেই।অবশ্য কোথায় আর যাবে?ছেলেদের সাথে ফুর্তি করছে।নির্লজ্জ,বেহায়া মেয়ে একটা।”

নিহান তাকালো মায়ের দিকে ভয়ানক সেই দৃষ্টি।মনে হয় এখনি সব ধ্বংস করে দিবে।এমনিতেই আহিকে পাওয়া যাচ্ছে না তার উপর মায়ের এইসব কথা ও কিছুতেই সয্য করতে পারছে না।নিহান নিজেকে যথা সম্ভব সামলে নিয়ে বলে,”মা! প্লিজ এইসব বলো না।এখন আহি ঠিক আছে কিনা এটা জানা আমাদের বেশি দরকার।তোমার এইসব অযৌক্তিক কথা বন্ধ করো।”

আসলে নিহান প্রতিদিনের মতো কাজ থেকে ফিরবার পথে আহিকে নিতে যায় ক্লাবে কিন্তু গিয়ে শুনে আহি নেই এখানে।ম্যানেজার বলে আহি এসেছিলো পরে যখন ক্লাবে লোডশেডিং হয় তারপর থেকে আহিকে আর কেউ দেখেনি।নিহান সব জায়গা খুজে যেখানে যেখানে আহি যায়।তারপর আদ্র,ফাহিম,তিয়া আর আয়রা থেকেও জিজ্ঞেস করে কিন্তু তাদের একই উত্তর আসে।আদ্র এই খবর পেতেই সেও বেরিয়ে পরে আহিকে কিন্তু কোথাও পায় না।

নিহানের ফোন এসেছে।ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে আদ্র’র অস্থির কন্ঠে শোনা গেলো,” হ্যালো ভাইয়া আহি এসেছে?”

নিহান আশাহত হয়েই বলে, ” নাহ!এখনো না।সব জায়গা খোঁজা শেষ।কোথায় যেতে পারে বোনটা আমার।”

” তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া।আমি দেখছি।”

নিহান উঠে দাড়ালো বললো, ” আমিও যাচ্ছি ওকে খুঁজতে এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।”

আদ্রও সম্মতি জানিয়ে ফোন কেটে দিলো।নিহান বাড়ির বাহিরে যাওয়ার জন্যে এক পা বাড়াতেই , নিহানের মা চেঁচিয়ে উঠে, ” কটা বাজে সেই খেয়াল আছে তোর?রাত বারোটা এতো রাতে তুই কোথায় যাবি ওই মুখপুরিকে খুঁজতে? দিন দিন আমার সব কথার অবাধ্য হচ্ছিস তুই।”

নিহান পিছে না ফিরেয় মায়ের উদ্দেশ্য বলে উঠে,
” মা প্লিজ আস্তে কথা বলো দাদি ঘুমোচ্ছে।আমি চাইনা দাদি অযথা টেন্সন করে নিজের শরীর খারাপ করুক।তুমি কাইন্ডলি একটু চুপ থাকো।এতো চেঁচাচেচি আর ভালো লাগে না!”

নিহানের মা আরো কিছু বলতে নিলেই তার আগে নিহান আবার বলে,” এখন আর একটা কথা বললে আমি দাদি আর আহিকে নিয়ে চলে যাবো এই বাড়ি থেকে একেবারে।”

ছেলের কথায় তিনি চুপসে যান।তার ছেলে যে ঘারত্যাড়া দেখা যাবে সত্যি সত্যি চলে যাবে বাড়ি থেকে।তাই চুপ থাকাটাই এখন আপাততো ভালো মনে করলেন তিনি।নিহান বাড়ির সদর দরজা খুলতেই দেখে একটা গাড়ি ওদের বাড়ির গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। নিহান আর দেরি করলো না যদি তার বোন হয় এটা।তাই দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।এবং হলোও তাই গাড়ির দরজা খুলে আহি কে বের হতে দেখা গেলো।আহি বের হতেই গাড়িতে চলে গেলো।এইদিকে আহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে আছে গাড়িটার দিকে।নিহান তাড়াতাড়ি করে আহি’র কাছে গিয়ে অস্থির কন্ঠে বলতে লাগলো, ” আহি! বোন আমার ঠিক আছিস তুই?কোথায় গিয়েছিলি?আমি তোকে খুঁজে শেষ।সবসময় তো ক্লাবেই থাকিস আজ তাহলে কোথায় ছিলি?প্লিজ বল আমাকে আমার ভয় করছে আহি!”

আহি তাকালো নিহানের দিকে।এই লোকটা তার ভাই।ইসস আপন ভাই নাহয়েও তার থেকে কম। রক্তের সম্পর্ক তো আছে।তাদের শরীরের যে একই রক্ত বইছে।তাইতো এতো টান।আচ্ছা! আদিয়াত ও তো তার ভাই লাগে।তাহলে প্রেমিক না হয় হলো না অন্তত ভাই হয়েও তো পারতো আহিকে আগলে রাখতে।কিন্তু না সে চলে গেলো আহিকে ফেলে চলে গেলো।এই অন্ধকার জগতে আহি যখন সব গুটিয়ে যাচ্ছিলো তখন আদিয়াত নামক আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো সে।যাতে ওকে এই অন্ধকার থেকে দূরে দিয়ে যায়।কিন্তু না সে যে অন্ধকারের আরো গভীরের তাকে ঠেলে দিয়েছে।সাথে এই অন্ধকার জগতে এই ভাই নামক মানুষটিকেও ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কি করবে?তার এই ভাইটা ছাড়া তো তার আর গতি নেই।দাদি সে তো নিজেই চলতে পারে না।আবার আহি’কে কিভাবে সামলাবে।তবুও সে চেষ্টা করে নিজের নাতনিকে হাসি খুশি রাখার।কিন্তু আদৌ কি আহি সুখি? উঁহু একটুও না! বরংচ তার সাথে যারা থাকে তাদের হাসি খুশিগুলো আহি ধ্বংস? আহি এখন আর সেই আগের মতো নেই যাকে মানুষ দেখলে বলতো ‘ বাহ মেয়েটা কি সুন্দর লক্ষী।’
কিন্তু এখন সবাই বলে ‘ এই মেয়ের মতো খারাপ মেয়ে একটাও নেই।অলক্ষী,অপয়া,মুখপুরি আরো কতো কি বলে সবাই।’ আহি ঠুকড়ে কেঁদে উঠে।সে চাইছিলো না কাঁদতে কিন্তু এতো কষ্ট সে কি করে সইবে।এই কষ্টগুলো কি পারে না ওই নীল আকাশে উড়ে যেতে?এখন এইভাবে আহি’র বুকটাকে ক্ষতবিক্ষত করে প্রতিনিয়ত।এই কষ্টগুলোকে ভুলতেই তো সে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের নেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে।তাও কেন এই কষ্টগুলো শেষ হয় না?

এইদিকে নিহান বোনকে কাঁদতে দেখে অস্হির হয়ে বোনের গালে হাত দিয়ে বলে,” কি হয়েছে আহি বল আমায়?কেন কাঁদছিস তুই?আমাকে বল ভাইয়া সব ঠিক করে দিবে।”

আহি জড়িয়ে ধরলো নিহানকে।এই একমাত্র এই ভাইটার বুকেই সে শান্তি পায় এখন।এই মানুষটাই তাগে আগলে রাখে প্রতিনিয়ত। আহি ভাঙ্গা গলায় বলে, ” ভা..ভাইয়া ও.. ও ফিরে এ..এসেছে ভাইয়া।ও কেন ফি..ফিরে এলো।দিব্যি তো ভা..ভালো ছিলাম আমি।আবার কেন ন..নতুন করে কষ্ট দিতে এলো আমাকে।পু..পুরনো স্মৃতিগুলোই আমি এখনো ভুলতে পারছি না।সে এসে আবার আমাকে নতুন করে কষ্ট দিবে।আমি এটা চাই না ভাইয়া। চাই না।”

নিহান বোনকে দুহাতে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।ও বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না।কার কথা বলছে আহি?আদিয়াতের কথা?কিন্তু সে আবার ফিরে কেন আহি’র কাছে আসবে?আহি তো ওর কেউ না।আর আহি’র সন্ধানই বা পেলো কোথায় ও?না এইবার আর আহিকে সে কষ্ট পেতে দিবে না।যতো ঝড় আসুক নিহান নিজের বোনকে ঠিক সামলে নিবে।নিহান শক্ত মুখ করেই বললো, ” কে এসেছে আদিয়াত?”

আহি কাঁদতে কাঁদতেই মাথা ঝাকালো।নিহান আহিকে কোলে তুলে নিলো।ওকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে করতেই বলে, ” এইবার আর ও তোকে কিছু করতে পারবে না।আমি আছি না।তখন তো আমি ছিলাম না তাই ওইসব হয়েছিলো এখন আমি আছি তাই আর কেউ পারবে না তোকে কষ্ট দিতে।”

আহি কিছুই বললো না শুধু ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে রইলো।বাড়িতে ডুকতেই নিহানের মা শকুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু কিছু বললো না ছেলের শক্ত মুখ দেখেই।নিহান আহিকে নিয়ে উপরে আহির রুমে দিয়ে আসলো।ওকে সুইয়ে দিলো আর বললো টেন্সন করতে না।আহিও মুচকি হেসে সম্মতি দিলো।নিহান চলে গেলো নিজের রুমে।এদিকে নিহান যেতেই আহি কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।আদিয়াতের পরিয়ে দেওয়া শার্টটা খুলে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে পানির নিচে দাড়ালো।আর সাথে সাথে আদিয়াতের দেওয়া কামড়ের জায়গায় জ্বালা করতে শুরু করলো।আহি চোখ মুখ খিচে ব্যাথাটা সয্য করে নিলো।আহি’র সামনে বিশাল বড় একটা আয়না যেখানে সব দেখা যায়।আহি দেখছে আদিয়াতের দেওয়া চিহ্নটা। ইসস কি বাজেভাবেই না কামড়িয়েছে। আসলেই একটা রাক্ষস লোকটা।একবার ছোট থাকতেও তার হাতে কামড়ে দিয়েছিলো পাশের বাড়ির বাবলুর সাথে খেলতে গিয়েছিলো তাই।সে কি কান্না আহি’র।পরে আদিয়াত নিজেই আহির হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলো।আবার পাঁচটা চকোলেট ও দিয়েছিলো।আহি তখন মিষ্টি হেসি আদিয়াতের গালে চুঁমু খেয়েছিলো আর ধন্যবাদ দিয়েছিলো কিন্তু গুমড়োমুখো আদিয়াত কিছুই বলে নি তেজ দেখিয়ে চলে গিয়েছিলো।আর প্রায় মারতো ছোট বেলায় কারো সাথে খেলতে দিতো না সে।শুধু বলতো ‘ মেয়ে মানুষ হয়েছিস ঘরে থাকবি এতো বাহিরে ঘুরতে যাওয়া কিসের?দরকার ছাড়া যাবি না বাহিরে।আর ওই ছেলেদের সাথে খেলতে দেখলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবো।’ আহি হাসলো পুরনো কথাগুলো মনে পড়লে ওর নিজের উপর হাসি পায়।ইসস! কি পাগলামিই না করতো সে আদিয়াতের জন্যে।কিন্তু এখন সে সকল শুধু স্মৃতি হয়েই মস্তিষ্কে রয়ে গিয়েছে।পাক্কা দেড় ঘন্টা গোসল করে বের হলো আহি।আয়নার সামনে বসে চুল থেকে তোয়ালেটা খুজে সেটা দিয়ে চুল মুছতে লাগলো।আর তখনি ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।আহি মেসেজ চেক করার জন্যে ফোনটা হাতে নিলো।ফোন অন করে মেসেজ দেখলো।লিখা আছে,

‘আমাকে ভুলে যাওয়া তোর পক্ষে সম্ভব না।আমি আমি তোকে আমায় ভুলে যেতে দেবেও না।আমাকে যেভাবে তোর নামক অসুখে আক্রান্ত করেছিস।আমি যেইভাবে এই অসুখে দিনরাত ছটফট করি।ঠিক একইভাবে তোকেও ভুগতে হবে।আমি তোর প্রতিটা রন্দ্রে রন্দ্রে এমনভাবে মিশে যাবো যে তুই চাইলেও কিছু করতে পারবি না।প্রস্তুত হো এই এই আমি নামক অসুখে নিজেকে নিঃস্ব করে দিতে।আর হ্যা! কাল সকালে আমি তোকে ভার্সিটি যাওয়ার জন্যে রিসিভ করতে আসবো।আর আমার সাথে জোড়াজোড়ি করে তুই পারবি না। যেইভাবে তোর ফোন নাম্বার আর ভার্সিটি নেম আর তোর বাড়ির ঠিকানা আমি তোর থেকে যেনে নিয়েছি ঠিক সেইভাবেই দরকার পড়লে কাল তোকে নিয়ে যাবো।আমার সাথে না তুই আগে পেরে উঠতি আর না এখন পারবি।গুড নাইট! তোর স্বপ্নগুলো সব আমিময় হোক।”

আহি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তার যে করার কিছুই নেই।এই আদিয়াত নামক মানুষটার থেকে তার নিস্তার নেই।একেবারেই নেই তা সে আহিকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে।

#চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here