তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -০৭

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৭

আদিয়া আকাশকে জিজ্ঞেস করে ও সায়নের থেকে টাকা আনার ব্যাপারটা কেন লুকিয়েছিল। আকাশ ওকে বলে যে শান্ত হতে। আকাশের কথায় আদিয়া কিছুটা শান্ত হয়।

আকাশকে কিছু না বললেও আনাফের উপর থেকে রাগ কমেনা আদিয়ার। ও গিয়ে কলার ধরে আনাফের৷

তুই একটা নিচ মেন্টালিটির ফালতু ছেলে। আমার ভুল হয়েছে তোকে বিশ্বাস করা। আগে যদি কেউ বলত যে নির্দিষ্ট কারো মায়ায় আসক্ত হওয়া ঠিক না। তখন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতাম আমি। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে তারা খুব খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল বলেই এমন কথা বলে। আমিতো #তোর_মায়ায়_আসক্ত ছিলাম তাই এসব আমার গায়ে লাগত না। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তুই খারাপ।খুব খারাপ।

এরপর আদিয়া ঝাড়া মে’রে কলারটা ছেড়ে দিল। কলার ছেড়ে একটা কথা বলে আনাফকে – আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। কারো সাথে বেইমানি করে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না।

এরপর আদিয়া সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আকাশ গিয়ে আনাফের পিঠে হাত রাখে। তারপর বলে

– ভালো থাকিস।

– আকাশ তুইও চলে যাচ্ছিস।

– কিছু কিছু স্বার্থপর মানুষ জীবনে থাকার থেকে না থাকা ভালো৷ আদিয়া এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। ওকে বাসায় পৌছে দিব। আসি আন্টি।

এরপর আদিয়া আর আকাশ সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়।

ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় লোকের কথা। পাশের ফ্লাটের মহিলা গুলো শুরু করে তাদের মতো কথা শেনানো। কেমন ছেলে। শিক্ষার অভাব আছে এই সেই৷ কেউ কেউ তো এত ড্রামা দেখে বিরক্ত হয়ে চলে যায় সেখান থেকে।

এদিকে নিশির বাবার কাছেও সব খবর পৌছে যায়। তিনি ঠিক করেন এমন ছেলের কাছে তিনি মেয়ে বিয়ে দিবেন না। তিনি তার সিদ্ধান্ত আফিয়া বেগমকে ( আগে কি নাম দিয়েছিলাম মনে নেই এখন পড়ে দেখতে মন চাচ্ছে না তাই এটাই দিলাম) তার সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু আফিয়া বেগম এ বিয়ে এখন এই বিয়ে ভেঙে যেতে দিবে না। এই নিয়ে তাদের মধ্যে ছোট খাট একটা তর্কও হয়ে যায়।

– দেখো আফিয়া নিশিকে আমি এমন ছেলের হাতে কখনোই তুলে দিতে পারব না। ও একটা বজ্জাত ছেলে। কীভাবে স্বার্থপরের মতো কাজ করল দেখলা।

– কি করেছে।

তারপর নিশির বাবা নিশির মাকে সব খুলে বলে।

– মানুষের জীবনে এমন কিছু হতেই পারে। এটা একটা এ’ক্সি’ডেন্ট। তাই বলে এমন একটা ছেলেকে হাত ছাড়া করবে।

– আফিয়া তুমিওতো তোমার ভাইয়ের ছেলের মতোই কথা বলছ। আসলে র’ক্ত তো র’ক্তের টান টানবেই। সে যাই হোক নিশিকে আমি এর থেকে ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দিব।

– এখন বিয়ে ভেঙে গেলে কে তোমার মেয়েকে বিয়ে করবে। বিয়ে ভেঙে যাওয়া একটা মেয়ের জীবনে একটা কলঙ্ক। এরপর অন্য কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।

– সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। তুমি এখনো আগের যুগেই পড়ে আছো। সে যাই হোক যদি বিয়ে না দিতে পারি তাহলে দিবনা। আমার একটা মাত্র মেয়ে। যদি বিয়ে নাও হয় তারপরও আমার যা আছে তা দিয়ে ওর পুরো জীবন খুব ভালোভাবে চলে যাব। ভালো ছেলের কাছে পাত্রস্থ করার নামে মেয়ের জীবন আমি নষ্ট করতে চাই না।

এরকম অনেকক্ষন তর্ক চলার পর আফিয়া বেগম নতি স্বীকার করেন। তারপর তাদের মেয়ের কি ইচ্ছে এটা জানার জন্য নিশির৷ রুমের দিকে যায়। পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে। তারা সেখানে নিশিকে সাজাচ্ছিল। নিশির সাথে কথা বলতে চান বলে সবাইকে একটু বাহিরে যেতে বলে। সবাই বাহিরে গেলে নিশি জিজ্ঞেস করে বাবা কিছু কি হয়েছে।

– হ্যা রে মামনি একটা কথা বলার ছিল। কিভাবে যে বলব সেটা ভাবতেছি।

– কি হয়েছে বলো।

মেয়ের সাজ এখনো কম্পিলিট হয়নি। সেইখানেই মেয়ে এখনো বসে আছে৷ এই অবস্থায় কি করে বলবে দুজনে দ্বিধায় পড়ে যায়। নিশি একবার ওর বাবার দিকে তাকাচ্ছে ও একবার মায়ের দিকে।

– আরে কি হয়েছে৷ বলবে তো।

– আসলে আমরা চাচ্ছি বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে।

এমন একটা কথা শুনে প্রথমে চমকে ওঠে নিশি। কিন্তু মনে মনে খুশিও হয়৷ ওরও মন চাচ্ছিল না আনাফকে বিয়ে করতে। কিন্তু সাহস করে কাউকে বলতে পারেনি৷ এই মুহূর্তে নিজের খুশি খুশি ভাবটা লুকিয়ে রেখে বাবার কাছে জানতে চায় কি হয়েছে। ওর বাবা ওকে বুজিয়ে বললে ও জানায়

– বাবা তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো৷ মেয়ের কাছে এমন উত্তর পেয়ে খুশি হন তারা। এরপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে৷ বাহিরটা তিনি সামলে নিবেন।



এরপর তিনি আনাফের মায়ের কাছে ফোন করেন।

– হ্যা ভাইজান বলেন।

– ভাবি আপনাকে কথাটা যে কীভাবে বলব সেটা ভেবে পাচ্ছি না।

– হুম কি হয়েছে বলুন না।

– আসলে ভাবি আমি চাচ্ছিলাম যে এ বিয়েটা আটকে দিতে।

আনাফের মা চমকে ওঠে এমন কথা শুনে। কিছুক্ষন আগে যে ড্রামা হইল তাতে মান ইজ্জত যা যাওয়ার গেছে এখন যদি বিয়েটা নাহয় তাহলে তিনি মুখ দেখাবেন কি করে।

– কেন ভাইজান কিন হয়েছে?

– আসলে এমন ছেলের কাছে আমি মেয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না।

– প্লিজ ভাই। শেষ মুহুর্তে এসে এমন কথা বলবেন না। পারলে সেই মেয়েকেই আপনার ছেলের বউ করে আনেন।

– ভাইজান এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক খারাপ হয়।

– দেখেন ভাবি সবার আগে আমার মেয়ের জীবন, ওর ভালো মন্দ এসব। দেখেন কন্যার পিতা হয়ে যেখানে আমি সমাজের পরোয়া না করে মেয়ের ভালোটা দেখেছি সেখানে আপনি এই সমাজের কথা ভেবে চিন্তিত হচ্ছেন৷ এই সমাজের কথার ভয়ে আমি কোনো উল্টা পাল্টা সিদ্ধান্ত নিব না। যদি সমাজের কথা ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নেইও তারপর আমার মেয়ে যদি সুখী না হয় সেটা তখন সমাজ দেখতে আসবে না। আশা করি আমার কথা আপনি বুজতে পারছেন।

আনাফের মা আর কী বা বলবে। তাই কিছু না বলে তিনি চুপ করে যান। এরপর নিশির বাবা আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কে’টে দেন।

বিয়ে ভেঙে গিয়েছে এ কথাটা যেন পুরো বাড়িতে খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছে। সবার মুখে এখন একটাই কথা ছেলে যে কান্ড বাধিয়েছে তাতে মেয়ের বাবা মায়ের বিয়ে ভেঙে দেওয়া স্বাভাবিক। যে ছেলে একটা মেয়ের সাথে এভাবে বেইমানি করতে পারছে সে যে আবার এসব করবে না তার গ্যারান্টি কি।

নিকটাত্মীয়রা বাদে প্রায় সবাই আস্তে আস্তে বিয়ে বাড়ি চলে যায়।






আকাশ আর আদিয়া বাসায় আসে। আদিয়ার মা আদিয়ার পছন্দের খাবার লুচি তৈরি করেছে। ওরা বাসায় আসলে ওর মা ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে দুজনকেই। আদিয়া ওর রুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আনাফ গেস্ট রুমে যায়।

ফ্রেশ হয়ে এসে দুজনই ডায়নিংএ বসে। ওর মা ওদের সামনে খাবার দেয়। এমন সময় আলভিও চলে আসে। সে এসেই খেতে বসে পড়ে।

আদিয়া ওর মাকে কিছু বলতে যায় আজকের ব্যাপারে। কিন্তু ওর মা ওকে চুপ করিয়ে দেয়। বলে যে তিনি পরে সব শুনবেন। তাই আদিয়াও চুপ করে যায়। এরপর জায়েদা বেগম জানতে চান ওর জব এর কি খবর।

– কিরে আদিয়া তোর জব এর কি খবর। তুই কি ছুটি নিয়েছিস। কত দিন হলো যাচ্ছিস না। ফোনও দিল না। কি খবর রে এটাও গেছে।

– হুম।

– হুম কি। চাকরি শেষ।

– আম্মু তুমি বোঝনা যে ও অফিস কেন যাচ্ছে না। এই তিন বছরে দেখছ ও একটা চাকরি ঠিক মতো করতে পারছে৷ সকাল বেলা পরে পরে ঘুমায় আর অফিসে দেরী করে যায়৷ ওর চেহারা দেখে চাকরি দিবে মানুষ ( আলভি)

আলভির কথা শুনে আকাশ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে এই পুচকি ছেলে এগুলা কি বলতেছে।

আদিয়া দেয় আলভিকে এক ধমক। এই তোরে এত বেশী কথা বলতে কে বলেছে৷ শোন বেশী কথা বললে আমার চকলেট আর চিপস থেকে তোকে দিবনা মনে রাখিস।

– হুহ উচিত কথা বললেই দোষ। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর কিছু বলব না।

– এইত গুড বয়।

এরপর আকাশ আদিয়াকে বলে

– আদিয়া আমার অফিসে ম্যানেজারের পোস্টটা খালি হয়েছে। তুই তো একাউন্টটিং এর স্টুডেন্ট এপ্লাই করে দেখতে পারিস৷

আদিয়ার মা বলে সেই চাকরি তো থাকবেই না চেষ্টা করে কি লাভ।

– উফফ মা তুমি একটু থামো তো। এই আকাশ কবে এপ্লাই করব জানাইস।

– আচ্ছা আদু ভাই।

– 🤬🤬






রাতে আজমাইন সাহেব দেরী করে বাসায় আসে। জায়েদা বেগম দরজা খুলে দিলে তাকে ঠেলেঠুলে রুমে ঢুকে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে গেছেন তিনি। জায়েদা বেগম বার বার জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কিন্তু সে কোনো জবাব না দিয়ে ব্যাগটা ছুরে মে’রে মেয়ের রুমের দিকে গেলেন।

– আদিয়া এই আদিয়া। দরজা খোল ( চিল্লিয়ে)

আদিয়া দরজা খুলে দিলে তিনি কোন কথা না বলে আদিয়াকে দুটো চ’ড় মা”রেন।

আদিয়া গালে হাত দিয়েই একবার বাবার দিকে তাকায়। চোখ দুটো ছলছল করছে। যে বাবা কোন দিন ধমক ও দেয়নাই সে আজ মা’রছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে ওর।

জায়েদা বেগম জিজ্ঞেস করে বার বার কি হয়েছে। তারপর আজমাইন সাহেব যা বলে তা শুনে আদিয়া আর ওর মা তো অবাক হয়ে যায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here