তোর মায়ায় আসক্ত পর্ব -০৬ এবং বোনাস

#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#বোনাস_পর্ব

আদিয়া সায়নকে দেখে ভয়ে ঢোক গিলল।

– আ আপনি।

– হ্যা আমি। সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছিল না।

– হ্যা।

– তাহলে তোমরা যাওনি কেন?

– আপনি কি জানেন না খাবার নষ্ট করা পাপ। আমি খাবার নষ্ট করে আপনার কথা মতো চলে গেলে সেটা অন্যায় হতো।

– ভেরি ইম্প্রেসিভ!

– কি বললেন।

– না কিছুনা। তুমি ভারী ইন্টারেস্টিং গার্ল। আচ্ছা খাবার শেষ করে তাড়তাড়ি চলে যাও।

– ওকে।

এরপর সায়ন গিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে। আদিয়া মাহিকে টেনে টেবিলের নিচ থেকে বের করে।

– কিরে ওই বেটা নাকি গোমড়ামুখো। কই ভালোভাবেই তো কথা বলল।

– আরে সে কথা ছাড়৷ সে তোকে ভারী ইন্টারেস্টিং গার্ল বলে গেল কেন? আবার ভেরী ইম্প্রেসিভও বলে গেল কেন?

– আমি কি জানি।

– আমার মনে হয় তোর তেড়ামি বেটার ভালো লাগছে।

– এএ আসছে। এখন খেয়ে চল তাড়াতাড়ি।

এরপর ওরা খেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে সায়ন ওর পাশে দাড়িয়ে থাকা নীলয় নামের ছেলেটাকে ডাক দেয়।

– হ্যা ভাই বলেন।

– মেয়েটা দারূন না।

– কি যে বলেন না ভাই। মেয়ে মানুষ মানেই আগুন।

– স্টুপিড৷ শোন কান খুলে শুনে রাখ মেয়েটাকে আমার ভালো লাগছে। তো ওর দিকে কেউ নজর দিবি না।

– জ্বি ভাই।

– আর শোন খেয়াল রাখবি কেউ যেন এই মেয়ের দিকে না তাকায়।

– ওকে ভাই।





এর পর থেকে আদিয়া যখনই কলেজে আসত দেখত কোন ছেলে ওর আশপাশ ঘেসে না। ওকে দেখলেই চোখ নামিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। কেউ ফ্রেন্ডশিপও করে না ওর আর মাহির সাথে।

তারপর একদিন আমি ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আদিয়া আমাকে ডাক দেয়

– এই আকাশ শোনো?

– জ্বি আপু বলো।

– এই আমি তো তোমার ক্লাসমেট তাহলে আপু ডাকতেছ কেন?

– আপু আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ। আর আপনাকে আপু ডাকতে বলেছে।

– কে নিষেধ করেছে?

– সায়ন ভাইয়া।

– সায়ান ভাইয়া আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে কেন?

– তাতো আমি জানিনা আপু। আচ্ছা আমি যাই এখন।

– ওকে যাও।

আদিয়াতো বেশ অবাক। ওর সাথে কথা বলতে কেন নিষেধ করছে এটা বুজতে পারে না। ও ভাবে যে ওইদিন ক্যান্টিনে তেড়ামি করার কারনে হয়ত ওর সাথে কাউকে ফ্রেন্ডশিপ করতে দিচ্ছে না। আদিয়া এ ব্যাপারটায় তখন আর মাথা ঘাটাল না। ভাবল কাল সায়নের সাথে দেখা করে কথা বলবে। তাই বাসায় চলে গেল। সেদিনের মতো সব ঠিকঠাক ছিল।

পরদিন যথারীতি প্রতিদিনের মতোই কলেজে আসে আদিয়া। কলেজ গেটএ মাহির থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাহি সেখানে নেই দেখে ও রে’গে যায়। মনে মনে ভাবে আজ মাহিকে ইচ্ছে মতো বকা দিবে। গেট এ না দাড়িয়ে ক্লাসে গিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে ভাব জমানো ছাড়িয়ে দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকল। ভিতরে ঢুকতেই নজর গেল এক কর্নারের দিকে।
সেখানে বেশ জটলা বেঁধেছে। বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়া ভালোভাবে তাকালোদিয়ে সেদিকে। ওদিকে তাকিয়ে দেখতে পেল মাহি আছে। মাহিকে নিয়ে যেন চিল্লাচিল্লি করছে। কি হয়েছে দেখতে আদিয়াএগিয়ে গেল সেদিকে।

গিয়ে দেখো আকাশ এখানে দাঁড়ানো আর তার পাশে সায়ন গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে। দুটো ছেলে আকাশের কলার ধরে রেখেছে। আর মাহি পাশে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছে ভাইয়া ওর কোন দোষ নেই। মাহির কথা কেউ কানেই নিচ্ছে না। ভিড় ঢেলে ঠুলে আদিয়া এগিয়ে গেল সেদিকে। এগিয়ে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে আকাশের কলার ছাড়িয়ে নিল। আদিয়া ছাড়তে বলা ছেলের দুটো সাথে সাথে ছেড়ে দিল।

– কি হয়েছে এখানে?

আদিয়া এই কথা জিজ্ঞেস করায় ফাহিম নামের একটা ছেলে পাশ থেকে বলল এই ছেলে নাকি কাল তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিল ?

– কে বলেছে এই ছেলে আমাকে ডিস্টার্ব করেছিল? আমি ওকে ডেকেছিলাম। কিন্তু আপনার কলার ধরে রেখেছেন কেন।কে আমার সাথে কথা বলবে না বলবে সেটা আমার ব্যাপার আপনাদের কি?

– কেউ তোমার সাথে কথা বললে সমস্যা আছে ( ফাহিম )

– কিসের সমস্যা। আমি কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছিনা এখানে। আর আকাশ আমার ফ্রেন্ড। আমি ওকে ফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ওর কোনো দোষ নেই। ছেড়ে দিন ওকে।

আদিয়ার কথায় সেদিনের মতো তো আমি বেচে গিয়েছিলাম৷ এরপর থেকে আদিয়ার সাথে আর মাহির সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপটাও ভালো হয়। এভাবে আমাদের দিন ভালোই কা’ট’ছিল। সায়ন ভাইয়াও কখনো আদিয়াকে কিছু বলত না। এমনি সায়নের সাঙ্গ পাঙ্গ মাঝে মাঝে খেয়াল রাখত কেউ ডিস্টার্ব করে কিনা। মাঝে আমার ডাক পরত সায়ান ভাইয়ের মহলে। আমাকে দায়িত্ব দিত আমি যেন আদু ভাইয়ের খেয়াল রাখি। তারপর সে আদিয়ার জন্য চকলেট, চিপস, আইসক্রিম এগুলা কিনে দিত। কিন্তু আদিয়া তার দেয়া জিনিস বলে ছুয়েও দেখত না। আমি আর মাহি জমিয়ে পেট পুজো করতাম তা দিয়ে। আমাদের দিনকাল ভালোই চলছিল। একসাথে কলেজে যাওয়া আসা করতাম। তো এমনি একদিন আমরা তিনজন একসাথে কলেজে ঢুকি। কলেজে ঢুকে এক জায়গায় জটলা দেখতে পাই। তিনজনের বুকই ধ্বক করে ওঠে৷ তিনজনই ভেবেছিলাম যে আবার কোন ছেলে কোন ভুল করছে তার শাস্তি দিচ্ছে। তাই তাড়াহুরো করে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। গিয়ে দেখি একটা ছেলে কান ধরে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ সহজ সরল। আর এ গ্রাম থেকে এসেছে তা হাব ভাব দেখেই বুজতে পারল। ছেলেটা চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া ছিল। ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট লাগছিল দেখতে। ছেলেটা ভয়ে আর লজ্জায় কান্না করতেছে। চোখের পানিতে চশমাটা ভিজে গেছে। যা বাহির থেকেই দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে তো আদিয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। তাই আশপাশে সায়নকে খুজতে থাকে। কিন্তু পাশে কয়েকজন সাঙ্গ পাঙ্গ ছিল। সাায়ন ছিল না। তাই আদিয়া গিয়া ওই ফাহিম আর অন্য ছেলেদের সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করে আর বলতে থাকে এই তোমাদের সমস্যা কি৷ আর কত ছেলের সাথে তোমরা এমন করবে।

তখন একটা ছেলে একটু তেজী স্বরেই বলে এই মেয়ে তুমি যাওতো এখান থেকে। তোমার জন্য এখন আমরা শান্তিতে কাউকে কিছু বলতেও পারি না। তখনই তোমার এসে ঝামেলা করা লাগবে। এই ছেলেকে তোমার জন্য মা’র’ছি না। এ নতুন তাই একটু মজা নিচ্ছি। তুমি যাও এখান থেকে।
কথাটা একটু জোরেই বলেছিল।

সাথে সাথে গালে ঠা’স করে একটা চ’র পড়ে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে আদিয়ার দিকে তাকায়। ভেবেছে এটা আদিয়া মে’রে’ছে। তাই আবার কিছু বলতেই নিচ্ছিল তখনি ওর কান টেনে ওর মাথাটাকে ডানদিকে ঘোরায়। ও রেগে কিছু বলতে যাবে তখন তাকিয়ে দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে৷ চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ভীষন রেগে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।

ছেলেটা কিছু বলার জন্য মুখ হা করে। কিন্তু কিছু আর বলতে পারেনা। তার আগেই মুখে হাত দিয়ে চুপ করতে বলে সায়ন।

#চলবে #তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৬

সায়ন ছেলেটাকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিয়া বলে ওঠে দেখুন তার কোনো দোষ নেই।

– এই মেয়ে চুপ করো৷ তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি৷ সেই শুরু থেকে দেখে আসছি কারো কিছু হলেই তুমি এগিয়ে আস। তুমি কি জনসেবা করতে এসেছ।

– আপনারা অন্যায় করলে আমি বলব না।

– না তোমাকে বলতে হবে না তুমি যাও এখান থেকে। (ধমক দিয়ে)

এরপর আদিয়া সেই চাশমিশ ছেলেটাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আর সায়ন ওই ছেলেটাকে ইচ্ছে মতো বকে। যে ওর সাহস কীভাবে হলো আদিয়ার সাথে মিস বিহেভ করার। ছেলেটা অনেক স্যরি বলে। আর বলে সে আর কখনো এমন করবে না।

তারপর আদিয়া,মাহি আর আমি ওকে নিয়ে প্রথম ক্লাস মিস দিয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে বসি। সেখান থেকেই আনাফের সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। আনাফ অন্য কলেজ থেকে ট্রান্সফার হয়ে আমাদের কলেজে এসেছে। ও যেহেতু একটু সহজ সরল টাইপের ছিল তাই ওকে আমাদের সবারই ভালো লাগে। ওকে ফ্রেন্ড বানিয়েছিলাম আমরা।
ফাস্ট ইয়ার যখন প্রায় শেষ তার আগে আগেই আনাফ কলেজে এসেছিল। তো ও কখনোই বেশি সময় আমাদের সাথে আড্ডা দিত না। বেশিরভাগ টাইম পড়াশোনা নিয়েই থাকত। মাঝে মাঝে আমাদের সাথে আড্ডা দিত। এই স্টাডির ব্যাপারটা আদিয়ার অনেক ভালো লাগত। আদিয়া প্রায়ই প্রশংসা করত দেখ আনাফ কত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। ইসস আমার বরটা কোথায় আছে কে জানে। সে যদি একটু ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হতো। আমি তো পড়াশোনা তেমন করি না সেও যদি না করে তাহলে হবে বল। ব্লা ব্লা ব্লা।

আমি আনাফকে একদিন আদিয়ার ব্যাপারটা বলেছিলাম। বলছিলাম যে আনাফ আদিয়ার কাছে না ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের অনেক ভালো লাগে। কিন্তু আনাফ তখন আমার কথা এড়িয়ে যায়। ও এসবে পাত্তা না দিয়ে পড়াশোনা ঠিকভাবে করতে থাকে।




এরপর বেশ কিছুদিন কে’টে যায়। আমাদের ইয়ার চেন্জ এক্সাম শেষ হয়ে যায়। এরপর কলেজ বন্ধ থাকার কারনে আমাদের কারো সাথেই তখন দেখা হত না৷ এদিকে এতগুলো দিন কলেজে না আসায় সায়ন ভাই ও আদিয়াকে দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু সে ছিল একটু আলাদা ধরনের মানুষ। তাই সে যে আদিয়াদের বাসার নিচে এসে দাড়িয়ে থাকবে এটাও তার বিবেকে বাধতে ছিল। এগুলা বখাটেদের কাজ। তাই এটাও সে করতে পারছিল না৷ যেদিন আমাদের কলেজের রেজাল্ট দিবে সেদিন খুব সকাল বেলা আদিয়ার বাসা থেকে কলেজে আসার রাস্তায় সায়ন ভাই দাড়িয়ে থাকে।
আদিয়া যখন কলেজের জন্য আসতে ছিল তখন সে তার বাইকটা আদিয়ার সামনে দাড় করায়।

– কি সমস্যা আপনি আমার সামনে বাইক দাঁড় করালেন কেন?

– আদিয়া তোমার সাথে আমার কথা আছে।

– জি বলুন।

– দেখো, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগেনা। সরাসরি বলছি।

– কি বলবেন সেটা বলুন।

– তোমাকে আমার ভালো লাগে। সেই প্রথম দিন থেকে। যেদিন তুমি ওই অন্ধ লোকটাকে রাস্তা পার করে দিচ্ছিলে সেদিন তোমাকে দেখেই আমার ভালো লেগে যায়। তুমি প্রতিবাদী মেয়ে। আমার অ্যাটিটিউড। সবকিছু আমাকে ষণভাবে আকৃষ্ট করে। তুমি হয়তো খেয়াল করেছো কথা বলতে কম পছন্দ করি। তাই আবার অনুভূতি হয়তো সুন্দরভাবে ব্যক্ত করতে পারিনি। আশা করছিতুমি বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাইছি।

– হুম সেটা বুঝলাম। কিন্তু আপনি আমার মাঝে এতক্ষণ খুঁজে বের করলেন আপনার কি যোগ্যতা আছে?

এরপর শায়ন ভাইয়া পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে একটা বহুতল ভবনের দিকে তাকালো। বলল ঐযে ভবনটা দেখতে পাচ্ছ ওটা আমাদের।

– আমাদের বলতে আপনার নাকি আপনার বাবার?

– এখন আপাতত আমার বাবার। যেহেতু আমি বাবার একমাত্র ছেলের তাই পরেতো আমারই হবে তাই না।

– সেটা তো আমি শুনতে চাইনি। আপনার কি যোগ্যতা আছে সেটা বলুন। করেন তো সারাদিন গু’ন্ডামি। সব বাদ দিয়ে ভালো মানুষ হতে পারলে সামনে আসবেন। অন্যের উপর নির্ভর হয়ে থাকাটা কোনো ভাল কাজ নয়।

কথাটা সায়নের বেশ গায়ে লাগে। এর আগে কাউকে প্রপোজ করেনি প্রথম করতে এসে এভাবে কথা শুনতে হলো। তাই সে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়। সে ঠিক করে এখন থেকে ভালোভাবে পড়ালেখা করবে। তাই আদিয়াকে বলে এখন চলে যাচ্ছি। আবার দেখা হবে।
আদিয়া আর কথা বাড়ায় না। ওর ধারণা এই ছেলে কিছুই করতে পারবে না।

ঠিক তখনি আনাফও সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। ব্যাপারটা ওরও নজর এড়ায় না। কিন্তু ও তখন
আদিয়ার সাথে কথা না বললে চলে যায়। আদিয়া ডাকলে এমন একটা ভান করে যেন শুনছে না। জোরে জোরে পা চালিয়ে কলেজে চলে আসে।
পরে আদিয়া আর না ডেকে পেছন পেছন আসতে থাকে।

কলেজে এসে দেখে রেজাল্ট পাবলিস্ট হয়ে গেছে। নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দিয়েছে। আদিয়া কলেজে ঢুকে নোটিশ বোর্ডের দিকে যায়। আনাফ নোটিশ বোর্ড থেকে কিছুটা দূরে দাড়ানো ছিল। সবাই ওকে কংগ্রেস জানাচ্ছিল। আদিয়া তাড়াতাড়ি ভীড় ঠেলে নোটিশবোর্ডের কাছে এগিয়ে যায়। গিয়ে নিজের রেজাল্ট না দেখে আগে খেয়াল করে উপরের দিকে। সেখানে আনাফের নামটা সবার উপরে লেখা৷ পাশে ১ম লেখা। অর্থাৎ এবার প্রথম বর্ষে টপার হয়েছে আনাফ। বেশ ভালো লাগে আদিয়ার। ও সেখান থেকে নিজের রেজাল্টটা দেখে এগিয়ে যায় আনাফের দিকে। কিন্তু আনাফ ওকে ইগনোর করে চলে যায়। আদিয়াতো পুরো হা হয়ে দাড়িয়ে থাকে। আদিয়া বুজতে পারে না এর আবার কি হলো।

এরপর আনাফ যতটা সম্ভব আদিয়াকে ইগনোর করেই চলে। এদিকে সায়নকেও এরপর থেকে আর কলেজে দেখা যায় নি। মাহি আদিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করে ওদের সাথে কিছু নিয়ে ঝগড়া হয়েছে কিনা। তখন আদিয়া মাহিকে পুরো ব্যাপার খুলে বলে। মাহি বলে আচ্ছা ব্যাপারটা আমি দেখতেছি।

এরপর মাহি আনাফকে জিজ্ঞেস করে যে ওর সমস্যা কি। তখন আনাফ মাহিকে বলে যে আদিয়াকে সায়নের পাশে দেখলে ওর সহ্য হয়না।

– কেন ভালোবাসিস নাকি ওকে?

– জানিনা।

– জানিনা বলে কোন কথা নেই। যদি ভালোবাসিস তাহলে সরাসরি বলে দে। এভাবে নিজের মধ্যে চেপে রেখে লাভ নেই।

আনাফের আর আদিয়া রিলেশনশিপে যাওয়ার সময়টায় মাহির পাকনামিই বেশি ছিল। কিন্তু ওরা রিলেশনশিপে যাওয়ার পর ওরা হয়েছিল বেস্ট জুটি।

আনাফ যেহেতু মেসে থাকত সেখানের খাবার খেতে ওর কষ্ট হতো। তাই আদিয়া বাসা থেকে টিফিন নিয়ে আসত। কিন্তু সে খাবার না খেয়ে আনাফকে দিয়ে দিত।

একদিন সকালে আদিয়া আনাফকে লেক পাড়ে আসতে বলে। সেখানে আনাফ আসার পর মন খারাপ করে বসে ছিল৷ আদিয়া কারণ জানতে চাইলে আনাফ জানায় ওর মা অসুস্থ। আদিয়া আনাফকে বলে মায়ের সাথে একবার দেখা করে যেতে বলে। কিন্তু আনাফ তখন বলেছিল যে ও দেখা করতে আসতে পারবে না।

আদিয়া তখন আনাফের সমস্যা বুজতে পেরেছিল। তাই ওর ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আনাফের পকেটে গুজে দিয়ে বলেছিল যাও এবার মাকে দেখে এস।

আনাফ তখন খুশিতে আদিয়াকে জরিয়ে ধরেছিল।
– আচ্ছা আদিয়া তুমি আমাকে এত হেল্প কেন করছ?

– ভালবাসি তাই।

– আমি একটা সাধারণ পরিবারের ছেলে। আমি তোমাকে ভালো রাখতে পারব না তাও ভালোবাস কেন?

– আনাফ ভালোবাসা কখনো টাকা পয়সা দেখে হয়না। এটা মনের ব্যাপার। আমি যখন তোমার পাশে থাকি তখন আমার ভালো লাগে৷ আমার হ্যাপিনেসটাই যে তুমি। আর কি বললে তুমি আমাকে ভালো রাখতে পারবেনা। কেন পারবে না। অবশ্যই পারবে। তোমার মধ্যে ভালো কিছু করার ইচ্ছা শক্তি আছে। তুমি অবশ্যই ভালো কিছু করবে।তোমার উপর আমার ভরসা আছে৷ আর তোমাকে তো এজন্যই বেশি ভালো লাগে যে তুমি বাবার টাকার উপর নির্ভর করে নেই। নিজে কিছু করার চেষ্টায় আছো।

– তোমার ঋন আমি কীভাবে শেষ করব আদিয়া।

– ঋন শোধ করতে হবেনা। একটু ভালোবাসলেই হবে।

– পা’গলি।




ততদিনে সায়ন ভাইয়াও হয়ত ওদের ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল। কিন্তু সে তারপরেও আর কোন সিনক্রিয়েট করেনি৷ সেই মানুষটা আসলেই ভালো ছিল।

এরপর বেশ কিছু মাস কে’টে যায়।আমাদের এইচএসসি শেষ হয়। যে যে যার যার এডমিশন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। তখন আনাফেরও বাহিরের কান্ট্রিতে একটা ভার্সিটিতে স্কলারশিপ হয়ে যায়। কিন্তু আনাফ সেই ভার্সিটিতে পড়তে চাচ্ছিল না৷ কেননা সেখানে যাওয়ার যে খরচটা লাগবে এটা যোগাড় করা ওর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই ও দেশেই কোন একটা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়তে চাচ্ছিল। কিন্তু আদিয়া ওকে আশ্বাস দেয় যে টাকা যোগাড় করতে ও সাহায্য করবে৷

আদিয়া ওর পাশের ফ্লাটে থাকা চারটা ছোট বাচ্চাকে দুবছর যাবত টিওশন করাত। এটা করত অবশ্য শখের বসে। সেখান থেকে ওর কিছু টাকা ইনকাম হতো। সেগুলো ও জমিয়ে রাখত। সেসব টাকা, তারপর ওর গলায় থাকা চেইনটা, কানের ছোট দুল ছিল তাও বিক্রি করে দিয়েছিল।

তারপর ওর কাছে যখন আর কিছু ছিলনা ও আমার কাছে এসে সমস্যাটা শেয়ার করেছিল। আমি ওকে বলেছিলাম বাকিটা আমি দেখব। আমি ওকে আশ্বাসতো দিয়েছিলাম কিন্তু তখন বাবার বিজনেস লস হওয়ার কারনে আমি তার কাছ থেকে টাকা আনতে পারিনি৷ এরপর আমি সায়ন ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম। ওইযে বলেছিলাম মানুষটা ওমন হলেও তিনি অনেক ভালো ছিল। তিনি আদিয়ার নাম শুনেই সাহায্য করতে রাজি হয়ে যায়। এবং সাহায্যও করে। কিন্তু আদিয়া এ ব্যাপারটা জানত না।

আমাদের এই প্রচেষ্টায় আনাফ তখন এব্রোড গিয়েছিল। কিন্তু আনাফ ওর মাকে এ টাকা পয়সার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছিল।ও বলেছিল এটা কোন ফ্রেন্ড এর থেকে ধার নিয়েছে।

আনাফ চলে যাওয়ার পর আদিয়া অনেক ভেঙে পড়েছিল। কান্নাকা’টি করত৷ কিন্তু আমরা যখন ওকে বুঝাতাম বা আনাফ ফোন করে ওকে বোঝাত যে ওদের ফিউচার ভালো করতেই তো এখন দূরে আছে তখন আদিয়া মেনে নিয়েছিল। প্রথম প্রথম বেশ কয়েক মাস আনাফও বেশ যোগাযোগ রাখত৷ এরপর থেকেই আনাফ কথা বলা কমিয়ে দেয়। দিনে একবার ফোন দিত৷ মাঝে মাঝে দিতও না৷ আদিয়া কিছু বললে তখন বলত
বিদেশের মাটিতে টিকে থাকা এত সহজ না। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জবও করতে হয়। নাহলে টিকে থাকা যায় না। তারপর মাকে খরচ পাঠাতে হয়।

আনাফের এমন কথায় আদিয় দমে যেত। আর অভিযোগ করত না। কিন্তু ওতো বুজতেই পারেনি যে এই আনাফ আর সেই আগের আনাফ নেই। সে এখন উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। এতগুলো বছর আদিয়ার অপেক্ষা করাটাও সহজ কাছ ছিল না। শুধুমাত্র জায়েদা আন্টি ভালো মানুষ বলে সে সমাজের মুখ থেকে মেয়েকে আড়াল করে রাখতে পেরেছিলেন। তার কাছে তার মেয়ের ভালো থাকাটাই মূল।

আনাফের কথা বাদ দিলাম। আন্টির কথা কি বলব আনাফের অবর্তমানে আদিয়া সর্বদা আনাফের তার খেয়াল রেখেছে। সেখানে আন্টি কীভাবে এমন কথা বলল।

আমি আর কিছু বলব না। এতক্ষন তো সবাই শুনল। এবার তারাই বলুক আদিয়ার চ’ড় মা’রা’টা কি অন্যায় হয়েছে।

ফ্লাসব্যাক এন্ড।

আনাফ আর ওর মা দুজনই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আনাফের মায়ের মুখটা চুপসে গেছে। তিনি ছেলের হয়ে কথা বলতে এসে এতগুলো মানুষের সামনে তার ছেলের নামে এসব শুনবেন ভাবতে পারেননি। আর তাকেও তো ছাড় দিল না এই ছেলে।

আশপাশে সবাই ফিসফিস করে কিসব বলাবলি করছিল। আদিয়া সেসব উপেক্ষা করে এগিয়ে যায় আকাশের সামনে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে৷

– এই তুই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

– তোকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি।

– আমি আবার কি করলাম।

– তুই সায়ানের কাছ থেকে আমার নামে টাকা এনেছিস আমাকে জানাস নি কেন?

#চলবে

( কি গো বোনাস পর্ব পেয়ে সবাই হ্যাপি তো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here