#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৪
মেয়েটাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করার পরও কোন রেসপন্স করল না। ক্রমাগত কান্না করেই যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ওর পায়ে হাত দিলাম। একটা কাচের টুকরো গেথে রয়েছে পায়ে। টান দিয়ে বের করে দিলাম। রক্ত পরার পরিমান বেড়ে গেল। মেয়েটা ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম রুমালটা পকেটেই আছে। সেটা দিয়ে ওর পা টা বেধে দিলাম। মেয়েটা আস্তে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করল। হ্যা একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে পারছে। মেয়েটা সামনের দিকে হাটতে শুরু করল একটা কথাও বলল না। মেয়েটা হাটতে হাটতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমি সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম। কেমন মেয়েরে বাবা একটা বার থ্যাংকস দেয়ার প্রয়োজন মনে করল না।
যাই হোক সেদিনের মতো সেখান থেকে চলে আসছিলাম। কিন্তু বিপত্তি ঘটল রাতে। যাই করি না কেন মেয়েটার মুখ শুধু সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মেয়েটার কান্নারত চেহারা, ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখা চেহারা, তিরতির করে কাপা ঠোঁট সব কিছু বারবার মস্তিষ্কে ঘুরতে লাগল। রাতের মতো ঘুম হারাম হলো। কতক্ষণ মনকে বোঝালাম এমন একটা গেয়ো মেয়ের প্রেমে তুই কিভাবে পরিস আয়ান। মেয়েটা সামন্য মেনার্স জানেনা তার প্রেমে কীভাবে। এটা কি আধৌ প্রেম।
আমার সাথে কি হচ্ছিল আমি বুজতে পারছিলাম না। কোন মতে রাতটুকু পার করলাম। সকালে নাস্তা করে আবার হাটার নাম করে বের হলাম। মনটা কেমন যেন মানাতে পারছিলাম না। আমার মন বলছিল আমি ওই মেয়ের দেখা পাব আবারও।
যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। মেয়টা ওই রাস্তা দিয়েই কলেজে যাচ্ছিল দেখা হয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটার ফেস দেখে মনে হলো বেশ ভয় পেয়েছে।
আমি তো ওকে কিছু বলিনি তাও ভয় কেন পাচ্ছে মেয়েটা বুজলাম না। কিছু বলতে পারিনি সেদিন। বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় এসে আমার ফ্রেন্ড নবীনকে সব খুলে বললাম। কিন্তু ও যা এন্সার দিল তাতে চমকে গেলাম আমি। ও বলেছিল যে
– দোস্ত তুই ভুল দিকে নজর দিয়ে ফেলছিস। এই মেয়ে যেই সেই মেয়ে না। এই মেয়ে কা’টাযুক্ত গোলাপের ন্যায়।
– মানে।
– এই মেয়ের উপর এলাকার এক বখাটের কুনজর পড়েছে। এই মেয়ের দিকে কেউ হাত বাড়ালে তার হাত পা আস্ত রাখেনা। গুন্ডা টাইপ একটা ছেলের কু নজর পড়েছে।
– তুই বলতে চাইছিস এই মেয়েকে পছন্দ করার অপরাধে আমাকেও শাস্তি দিবে।
– জানতে পারলে দিতেও পারে।
– তুই যখন বলছিস তো ট্রাই করে দেখি কি হয় আমার।
– এই ভুল করিস না বলে দিলাম।
এরপর আরো দুই তিনবার মেয়েটার সামনে পড়েছি। কিন্তু মেয়েটা সব সময় আমাকে দেখে পালিয়ে যেত।
তারপর একদিন মেয়েটার সামনে গিয়ে বললাম আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
– দেখুন অপরিচিত কারো সাথে আমি কথা বলতে চাই না।
– কথা বলে পরিচিত তো হতেই পারি।
– তার কোনো প্রয়োজন আমি দেখছি না। আপনি আমার সাথে কথা বইলেন না প্লিজ। এটাই ভালো হয়।
– কারনটা কি জানতে পারি।
– এতে আপনারই ক্ষতি হবে।
– কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। তুমি ভয় পেও না। তুমি কি ওই ছেলেটাকে পছন্দ কর।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল। অর্থাৎ সে শুধু ছেলেটাকে ভয়ই পায়।
এরপর আস্তে আস্তে মেয়েটা আমার সাথে একটু একটু করে ফ্রি হতে শুরু করে। আমার সেখানে আর বেশিদিন থাকা হয়নি। ভ্যাকেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি আবার ঢাকা ব্যাক করেছিলাম। কিন্তু আসার সময় তার ফোন নাম্বারটা সংগ্রহ করে এনেছিলাম।
তারপর থেকে তার সাথে টুকটাক কথা হতো। একসময় অনেক ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটা হাইড ছিল। সেই গুন্ডা ছেলেটা ততদিন টের পায় নাই কিছুই।
এরপর হঠাৎ একদিন তার ফোন থেকে কোনো মেসেজ আসল না। এমন তো হয়না। প্রতিদিন সকালে অন্তত গুড মর্নিং তো বলে। আমি ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। অনেক বার ট্রাই করলাম কিন্তু কাজ হলো না। আমি পরের দিন অবধি অপেক্ষা করলাম কিন্তু কোনো ফোন আসল না।
অবশেষে আমি রবিনকে বললাম। ওকে সাথে নিয়েই আবার ওদের গ্রামে গেলাম। সেখানে গিয়ে খুজলাম। কিন্তু সিরাত আর ওর মা বাসায় নেই। একদিন যাবত নাকি তাদের ঘর এমন তালাবদ্ধ। তারা কোথায় গেছে কি করেছে তাদের সাথে কি হয়েছে এগুলা নাকি কেউই জানেনা। অনেক খুজলাম আমি সিরাতকে কিন্তু কোথাও পেলাম না। এই কয়েক মাসে ওর উপর অনেক মায়া জন্মে গিয়েছিল। বলতে পার আমি ওর মায়ায় আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। অনেক খুজেছি কিন্তু সিরাতকে আমি কোথাও পেলাম না। হাল ছেড়ে দেইনি আমি। এখনো মনে মনে সিরাতকেই খুজি বলতে পার। আম্মু এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে বিয়ে করানোর জন্য। কিন্তু সেসব কথা শুনলেই আমার সিরাত এর মুখটা সামনে ভেসে উঠত। তাই আজও বিয়ের পিরিতে বসা হয়ে ওঠেনি।
এতটুক বলে থামে আয়ান। এরপর আবার বলে
সেদিন যখন তোমাকে দেখলাম আমি যে খুশি হয়েছি তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না। তুমি জানো আমি কতগুলো বছর যাবত তোমাকে আমি খুজতেছি আর এত বছর পর তোমাকে পেলাম। এখন তুমি বলতেছ তোমার কিছুই মনে নেই। আমি এতক্ষণ যাবত যা কিছু বললাম তোমার কিছুই মনে নেই।
– স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি সিরাত না আর না কখনো আমি গ্রামে থাকতাম কিভাবে কি।
– কি বলছ তুমি। তাহলে এত মিল কীভাবে সম্ভব।
– আমার মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি একটু আমার আম্মুর সাথে কথা বলে দেখতে চাই।
– আমি তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে চাই।
– কি বলছেন আপনি এসব। আপনি যাবেন আমার সাথে।
– হ্যা। আর এখনি যাব।
আয়ান আদিয়ার সাথে অফিস থেকে বের হয়। যাওয়ার আগে আয়ান ওর পিএ নাজিয়াকে বলে যায় এদিকটা সামলাতে। আয়ান আদিয়ার সাথে যাচ্ছে ব্যাপারটা ওর পিএ এর মোটেও সহ্য হচ্ছে না। বেশ হিংসা হচ্ছে আদিয়ার উপর। মেয়েটা নতুন এসেই বসকে হাত করে নিল যাদু জানে নাকি মেয়েটা এসব ভাবতে লাগল।
ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আকাশ ফোন দিয়ে সায়নকে জানায়।
আদিয়া সায়নের সাথে বেরিয়েছে শুনে মাথায় রক্ত উঠে যায় সায়নের। এই মেয়ে পাইছেটা কি। আর কত। এবার একটা হেস্তনেস্ত করবেই। তাই সায়নও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
।
।
।
।
।
।
আদিয়া আর আয়ান আসে আদিয়াদের বাসায়। দরজা খুলে বেশ অবাক হয় জায়েদা বেগম। এই ছেলে কে। একে তো তিনি কখনো আদিয়ার সাথে দেখেননি। তবে কি আদিয়া আবারও ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। মায়ের মন আগেই কু ডাকতে শুরু করেছে।
– কি হলো আম্মু ভিতরে ঢুকতে দাও।
– আদিয়া
– আম্মু এটা আমার নতুন অফিসের বস। কিছু জটিলতার মধ্যে পড়ে তোমার কাছে এসেছে সমাধানের জন্য।
এরপর আয়ান সালাম দেয় তাকে। জায়েদা বেগম সালামের জবাব দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসেন তাদের। তিনি কিচেনে যেতে চাইলে আটকে দেয় আয়ান। বলে আন্টি আমি এখানে বসতে আসিনি। অফিস আওয়ার এখন। আমাদের আবার ব্যাক করতে হবে।।
তারপর জায়েদা বেগম বসেন ওদের সাথে। তারপর আদিয়াই প্রশ্ন তোলে।
– আম্মু সিরাত কে? কি তার পরিচয়? আমার সাথেই বা সম্পর্ক কি?
মেয়ের কথায় চুপ করে থাকেন জায়েদা বেগম।
– আম্মু এভাবে মৌন হয়ে থেকনা। আমি জানি তুমি জানো। সিরাত নামটা শুনলেই তুমি কেমন চুপসে যেতা। আমার ধারণা তুমি জানো। প্লিজ বলো আম্মু।
– হ্যা আন্টি বলেন প্লিজ।
জায়েদা বেগম এখন আর ভনিতা না করে বলেই দেন সত্যিটা।
– সিরাত হচ্ছে আদিয়ার জমজ বোন। আমার আরেকটা পুতুল ছিল সিরাত। আমার ছোট্ট পুতুলটা আমার কাছে নেই। চলে গেছে আমার সাথে রাগ করে। কোথায় গিয়েছে আমি জানিনা। অনেক খুজেছি ওকে কিন্তু কোথাও পেলাম না।
#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১৫
আমার ছোট্ট পুতুল আমার থেকে হারিয়ে যায় নি বাবা ওকে নিয়ে গেছে আমার থেকে। যে নিয়ে গেছে তাকে আমি ক্ষমা করব না। একটা সন্তান তার মায়ের থেকে কেড়ে নেওয়া সেই মায়ের জন্য যে কতটা কষ্টের তা কেবল আমিই জানি বাবা। যে নিছে সে কীভাবে বুজবে তার তো সন্তান নেই তাই সে এই টান বুজবে না।
এসব বলতে বলতে চোখ ভিজে ওঠে জায়েদা বেগমের। আদিয়া গিয়ে তার পাশে বসে। আদিয়া বা আয়ান কারোই কনফিউশান দূর হচ্ছে না। আদিয়ার বোন আছে এটা আদিয়াই জানেনা। তা কীভাবে সম্ভব।
– আচ্ছা আম্মু আমার বোন আছে তা আমি কেন জানিনা। আর কেই বা নিয়ে গেছে।
– খুব ছোট ছিলি তখন তুই তাই তোর মনে নেই।
– কীভাবে হারালো আমার বোন। আর ছোট বেলায়ই যদি হারায় তাহলে ওর নাম সিরাতই কীভাবে হল বলতো একটু ক্লিয়ার করে।
– এক কাল নাগিনীকে বাসায় জায়গা দিয়েছিলাম। সন্তান হচ্ছিল না মেয়েটার। তাই স্বামীর বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। ডিভোর্সের পরে বাবার বাড়িতেও জায়গা হয়ে ওঠে নি। ভাইয়ের বউয়েরা এমন ডিভোর্সি ননদের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে না বলে জানায়। ভাইয়েরাও তাদের বউয়ের কথায় স্বায় দেয়। মেয়েটা তখন অসহায় হয়ে পড়েছিল। এরপর মানুষের বাসায় কাজ করে খেত। আমি তখন দুইটা বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। আদিয়ার বাবা থাকত অফিসে।তখন মেয়েটার খোজ পেয়ে মেয়েটাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। ও আমাদের সাথেই থাকত। কাজেও হেল্প করত আর দুটো বাচ্চা নিয়ে পারতাম না তাই বাচ্চাও রাখত। মাথা গোজার ঠাই পেয়ে মেয়েটা হাসিখুশিই ছিল। প্রায় অনেকদিন ছিল আমাদের সাথে। মেয়েটার উপর একটা মায়া জন্মে গিয়েছিল। ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। মেয়ে দুটো তখন একটু বড় হল। আদো আদো বুলিতে বাবা আর মা বলতে শিখেছে। এমন এক দিনে আদিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচন্ড জ্বর হয় মেয়েটার। চোখগুলো কেমন নীলাভ হয়ে গিয়েছিল। বেশ গাভড়ে যাই আমরা। আমি আর আজমাইন ওকে নিয়ে হসপিটালে যাই। সিরাতকে রেখে যাই সেই কাল নাগিনি মেয়েটার কাছে। সেদিন রাতে আদিয়াকে নিয়ে হসপিটালেই থাকতে হয়েছিল। আজমাইন ফোন করে খোজও নিয়েছিল সিরাত কান্নাকা’টি করছে কিনা। বলল সিরাত কান্নাকা’টি করছে না। তারা থাকতে পারবে।
রাতে কয়েকবার ফোন দিয়ে খোজ নিয়েছি বলেছে সিরাত ঠিক আছে। সকালে যখন বাসার ফোনে ফোন দেই কেউ ফোন রিসিভ করে না। প্রথম ভাবি হয়ত কিচেনে বা ওয়াশরুমে আছে তাই রিসিভ করেনি। কিছুক্ষণ পর আবার দেই তখনো ধরেনা। তখন একটু চিন্তা হয়। এদিকে আদিয়ার এই অবস্থা অন্য দিকে সিরাত এর খোজ নিতে পারিনি। শেষে আজমাইন বাধ্য হয়ে বাসায় আসে। বাসায় এসে দেখে দরজা বাইরে থে্ে লক করা। এক্সট্রা চাবি দিয়ে ভিতরে ঢোকে। বাসায় কেউ ছিলনা। সিরাতের জামা কাপড়গুলোও ছিলনা। আজমাইন বুঝে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। তখনো জানায়নি আমাকে। আত্মীয় স্বজনদের ফোন দেয়। কোথাও যায় নাই ওরা। এরপর আমাকে জানায়। থানায় যাই আমরা।কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা না হলে মিসিং কেস ফাইল করবে না।এখন চব্বিশ ঘন্টাতো আর বসে থাকতে পারিনা তাই নিজেদের মতো খুজি। কোথাও পাইনা। তখন আমিও ভেঙে পড়েছিলাম, আদিয়াও অসুস্থ সব মিলিয়ে আজমাইন এর অবস্থা হযবরল হয়ে গিয়েছিল। পুলিশও কিছু করতে পারেনি। কোথায় নিয়ে গেল আমার মেয়েটাকে, কি উদ্দেশ্য নিল আমি কিছুই জানিনা। ও আদৌ বেচে আছে কিনা জানিনা। যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন ওকে সব সময় ওর মঙ্গল করেন। সিরাতকে হারানোর পরে প্রায় পাগল পাগল অবস্থা ছিল। আদিয়াকে আকড়ে বেচে ছিলাম। এজন্যই তো আদিয়ার কোন চাওয়া আমরা অপূর্ণ রাখিনা। সব সময় বন্ধুর মতো আচরণ করি। ও কোন ভুল করুক বা কোন কারনে ওর জীবন নষ্ট হোক তা চাইনা।
আচলে চোখ মুছে জায়েদা বেগম। আদিয়া মায়ের পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াও কান্না করে। জায়েদা বেগম বলে পাগলি মেয়ে কাদঋিস কেন তুই। এজন্যই বলতে চাইনি। আচ্ছা তোর হঠাৎ কেন ওর কথা হলো। এরপর জায়েদা বেগম আয়ানের দিকে তাকায়। তুমি কীভাবে চিন বাবা।
এরপর আয়ান বলে যে আন্টি সিরাত বেচে আছে। তাকে আমি খুজেও পেয়েছিলাম। যে তাকে নিয়ে পালিয়েছে হয়ত তার কাছেই সিরাত আছে। কেননা ও বলেছিল ওর ফ্যামিলিতে শুধু ওর মা আছে। তার মানে ওই মহিলাকেই ও মা বলে জানে।
জায়েদা বেগম এটা শুনে উত্তেজিত হয়ে যান।তার মনে ক্ষীণ আশা জেগে ওঠে যে তিনি আবার মেয়েকে দেখতে পাবেন। তারপর জিজ্ঞেস করে বসেন।
– তুমি সত্যি বলছ বাবা। ওটাই আমার সিরাত ছিল। কেমন আছে ও। ওতো অনেক বড় হয়ে গেছে এখন। এখন তো আমাদের চিনবেই না।
– ওয়েট আন্টি আমি পিক দেখাচ্ছি আপনাকে।
এরপর আয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে পিক দেখায় জায়েদা বেগমকে। জায়েদা বেগম ফোনটা খপ করে টেনে নেন হাত থেকে। তারপর নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। এরপর আচমকাই ফোনটায় চু’মু খেতে শুরু করেন জায়েদা বেগম। আসলে ফোনে না ফোনের স্কিনে থাকা মেয়ের পিকে চু’মু খাচ্ছেন তিনি। তার এমন আচরন দেখে আায়ান, আদিয়ার চোখও ভিজে উঠল।
হঠাৎ আয়ান এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে। সে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে পড়ে জায়েদা বেগমের সামনে। জায়েদা বেগম অবাক হয়ে তাকান তার দিকে।
– কিছু বলবে বাবা।
– আচ্ছা আন্টি আমি যদি আপনার ছেলে হতাম তাহলে কি আপনি আমার কথা ফেলতে পারতেন বলেন। মনে করেন আমি আপনার ছেলে। ছেলে আবদার করলে যেমন ফেলতেন না তেমন আমারটাও ফেলবেন না।
– তুমি বলতে কি চাইছ বাবা।
– আন্টি আমি সিরাতকে অনেক ভালোবাসতাম। অনেক খুজেছি ওকে। কিন্তু যে গ্রামে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ও এখন আর সেখানে নেই। ও ছোট বেলায় যেমন আপনার থেকে হারিয়ে গেল আর পেলেন না। বড় হয়ে আমার থেকে হারাল। পেয়েও রাখতে পারিনি আন্টি। ওকে কত খুজলাম পেলাম না। কি বলব সিরাতের জন্য আমি মেন্টালি অনেক ডিপ্রেশড হয়ে গিয়েছিলাম। পরিবারের সবার সাথেও রুড বিহেব করি। সব সময় কেমন যেন একটা আচরন করতাম। সেদিন হঠাৎ গাড়ির সামনে আদিয়াকে দেখি আমার মনে হয়েছিল আমি সিরাতকে পেয়ে গেছি। কিন্তু ও সেদিন বলে ও সিরাত না। তবে ওর কথা আমি বিশ্বাস করিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম এটাই সিরাত। তাই আমি আবার নতুন করে ওকে পাওয়ার জন্য সপ্ন দেখি। আমি আমার আম্মুকে বলেছি ওর কথা। আম্মুও অনেক খুশি হয়েছে।
আমি জানতাম না যে সিরাতের জীবনে এত বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে। আমি নতুন করে যাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি সে আদিয়া। আন্টি আশা করি আপনি বুজতে পারছেন কি বলতে চাচ্ছি। আন্টি আপনি একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ। এরপর উঠে দাড়ায় আয়ান।
জায়েদা বেগম হতভম্ব। কি বলবেন তিনি বুজতে পারছেন না। এদিকে আদিয়া মনে মনে গালি দিয়েই চলেছে আয়ানকে। বেটা খবিশ একটা। এভাবে নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজে বলে। তাও এমন একটা সিচুয়েশনে। তুই তো বেটা একটা আস্ত খবিস। তুই আসলে আমার বোনকে ভালোই বাসিস নি। তাহলে তুই সিরাতের জায়গায় আমার কথা ভাবতেও পারতিনা। আমি তো তোকে বিয়ে করব না। একজন মানুষ আমার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করছে তাকে ছেড়ে কি আমি আমার বোনের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে করবনাকি হুহ।
আদিয়া মনে মনে বিড়বিড় করেই যাচ্ছিল জায়েদা বেগম আস্তে ধাক্কা দেয় ওকে।
– কিরে কি বিড়বিড় করছিস।
– ক ক কই কিছুনাতো।
– হুম তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
এরপর জায়েদা বেগম আয়ানকে বলেন বাবা এসব পারিবারিক ব্যাপার। আদিয়ার বাবা আসুক তারপর তোমার ফ্যামিলির সাথে আলোচনা করা হবে। তুমি বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসি। এরপর জায়েদা বেগম সেখান থেকে চলে যায়। আয়ান সেখানে বসে। তার মুখের কোনে দেখা যায় মুচকি হাসি। আদিয়া যে রাগান্বিত তা তার ফেস দেখে বোঝা যাচ্ছে। এটা দেখে তো আয়ান আবারও বাকা হাসি দেয়।
এতক্ষণ দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আরও একজন এদের কথোপকথন শুনছিল। আদিয়ার বিয়ের কথা শুনে তো রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে ব্যাক্তিটি। হাতের কাছে থাকা ফুলের টবটা ধরে জোরে আছাড় মা’রে। ভেঙে গুড়িয়ে যায় টবটি। শব্দ পেয়ে ততক্ষণে সবাই দৌড়ে সামনে বের হয়। কিন্তু ভাঙা ফুলের৷ টব ছাড়া কিছুই দেখতে পায়না। সিড়ির দিকে ছুটে যায় আয়ান কিন্তু কাউকে দেখেনা।
জায়েদা বেগমের মনে ভয় ঢুকে। সে বলে
– আদিয়া আমার মনে হয় আনাফ এসেছিল। সে তোর বিয়ে ভালোভাবে করতে দিবেনা আমি শিওর। মায়ের কথায় আদিয়াও চমকায়। আসলেই কি তাই।
#চলবে
(