তোলপাড় পর্ব ১৩

তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-১৩
___________________
অরূণীর মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন বৈ কিছুই নয়।আর এসব যদি বাস্তব হয় তাহলে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিবে। রুদ্র ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে অবস্থায় এসে তাড়াহুড়ো করে সিটে বসার কারণে এখনো আশেপাশে তাকানোর ফুরসৎ পায় নি।তবে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে যে অরূণীর দিকে রুদ্রের চোখ যাবে সে রকমই পূর্বাভাস দিচ্ছে অরূণীর মন।অরূণী কিছু ভাবতে পারছে না।কী করে সম্ভব এগুলো? রুদ্র সাহেদ আহমেদ’কে চিনে? আতঙ্কে অরূণী তৃষ্ণার্ত হয়ে গেল। এভাবে রুদ্রের সাথে দেখা হওয়ার খুশিতে অরূণীর আকাশ-পাতাল ভুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু অরূণী এত আশ্চর্য হয়েছে যে খুশি হতে ভুলে গেল।সাহেদ আহমেদের পাশের সিটে বসেছে রুদ্র।সাহেদ আহমেদের মুখোমুখি সিটে বসা অরূণী আর রুদ্রের মুখোমুখি সিটে বসা সেলিনা আহমেদ। সাহেদ আহমেদ ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুদ্র’কে চেনার চেষ্টা করল। রুদ্র বলল, “স্যার আমায় চিনতে পারছেন না? আমি রুদ্র আকন। ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করার সময় আপনার সাথে পরিচয়।”
সাহেদ আহমেদ কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রুদ্রের দিকে।এক পর্যায়ে প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে বলল, “আরে রুদ্র তুমি? একদম জোয়ান এক পুরুষ হয়ে গেছো। চেনার উপায় কি বলো?”
অরূণী বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আড় চোখে তাকাচ্ছে রুদ্র আর সাহেদ আহমেদের দিকে। চৈত্র মাসের খাড়া রৌদ্রতাপে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া বিল-ঝিলের মত অরূণীর অন্তরতম অঁচল আতঙ্কে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।কান দিয়ে গরম ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে যেন। মনে মনে শুধু ঝপছে মিথ্যে হয়ে যাক এসব,স্বপ্ন হয়ে যাক। রুদ্রের সাথে এভাবে দেখা হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই‌।
সাহেদ আহমেদ রুদ্র’কে চিনতে পারায় রুদ্র হৃষ্টচিত্তে প্রত্যুত্তর করল, “স্যার এভাবে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে..।”
রুদ্রের চোখ যায় জানালার পাশে বসা অরূণীর দিকে। রুদ্র এই পৃথিবীতে যেন আর নেই।চলে গেছে পৃথিবীর বাইরের এক জগতে।যেখানে বিস্ময় আর বিস্ময়। রুদ্র চোখ দুটো জুড়ে যেন ক্রমাগত বজ্রপাত হতে লাগলো। রুদ্র অরূণীর দিকে তাকাতেই অরূণী অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলল। রুদ্রের ওই দৃষ্টি অরূণী দেখতে চায় না,কখনো দেখতে চায় না। রুদ্রের দিকে তাকানোর সাহস কিছুতেই জোগাতে পারছে না অরূণী।অরূণী টের পেলো ওঁর হাত-পা কাঁপছে।শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যাচ্ছে।অরূণীর মনে হচ্ছে কেউ ওঁর গলা টিপে ধরেছে। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে অরূণীর।ট্রেন এর ভিতর ছেড়ে দিয়েছে।রুদ্র স্থান-কাল ভুলে অরূণীর দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা কিছু’টা চেঁচিয়ে বলল, “এ্যাই মেয়ে।”
অরূণীর প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমদ চোখ চাওয়া-চাওয়ি করল কয়েক বার। সাহেদ আহমেদ রুদ্রের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে বলল, “রুদ্র ও আমার মেয়ে অরূণী।তুমি কি ও’কে চিনো না-কি?কোনো সমস্যা?”
সাহেদ আহমেদের কথা শেষ হতেই সেলিনা আহমেদ অরূণী’কে উদ্দেশ্য করে বলল, “কি হলো অরূণী? ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
মেয়েটার নাম অরূণী। সাহেদ আহমেদের মেয়ে অরূণী!এভাবে অরূণীর সাথে দেখা হওয়ার দরুন রুদ্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে যেন।সাহেদ আহমেদ ওঁর পাশে বসা এটা ভুলে গেছে। রুদ্র অতি কষ্টে মুহূর্তেই নিজেকে সামলে বলল, “না স্যার কিছু না।তখন দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ে ট্রেনের দিয়ে দৌড়ে আসছিলো। মেয়েটা একটুর জন্য বেঁচে গেল।”
সাহেদ আহমেদ হালকা হেসে বলল, “আমি ভেবেছি তুমি অরূণী’কে দেখে বলেছো।”
রুদ্র অপ্রতিভ ভাবে হাসলো।বলল, “না স্যার। আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
রুদ্র সাহেদ আহমেদের সাথে কথা বললেও রুদ্রের মনোযোগ সেদিকে নেই। রুদ্র উন্মনা ভাবে বলছে। রুদ্রের মাথায় শুধু অরূণী নাম’টা আন্দোলিত হচ্ছে।এভাবে অরূণীর সাথে দেখা হবে এ যেন কল্পনাতীত। সেই মেয়ে’টা রুদ্রের সামনে বসে আছে।কি এক অনুভূতিতে রুদ্র জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। সাহেদ আহমেদের মত ভদ্রলোকের মেয়ে!
এসব চিন্তায় বিমগ্ন হয়ে থাকতে থাকতে সাহেদ আহমেদের করা প্রত্যুত্তর শুনতে পেলো না রুদ্র। রুদ্র আবার নিজেকে সংবরণ করে সাহেদ আহমেদের দিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করল, “স্যার কোথায় যাচ্ছেন?”
সাহেদ আহমেদ একটু আগেই বলল পাবনা যাচ্ছে। রুদ্রের কর্ণপাত হয় নি তা। সাহেদ আহমেদ আবার বলল, “পাবনা যাচ্ছি।তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
– “পাবনা হয়ে রাজশাহী যাবো।”
সাহেদ আহমেদ সেলিনা আহমেদ’কে দেখিয়ে বলল, “আমার স্ত্রী।”
রুদ্র হেসে সালাম দেয় সেলিনা আহমেদ’কে। অরূণী তখনো মুখ আড়াল করে রেখেছে। চকিত হরিণীর মতো কান দুটো খাড়া করে রেখে রুদ্র আর সাহেদ আহমেদের কথা শুনছে। অরূণীর কেমন অনুভূতি হচ্ছে অরূণী নিজেও বুঝতে পারছে না।অরূণী শুধু বুঝতে পারছে এটা তীব্র অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু। এক বারের জন্যেও তাকাবে না রুদ্রের দিকে। রুদ্রের চোখে চোখ পড়লেই রুদ্র ওঁর চোখের রোষপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে গিলে খাবে অরূণী’কে।অরূণীর বুক কেঁপে ওঠছে। রুদ্র যদি সাহেদ আহমেদ’কে সব বলে দেয়?এক্ষুণি যদি অরূণীর গালে চড় মেরে বসে?অরূণীর ভাবনা চিন্তা অবশ হয়ে আসছে। এসব ভাবতে পারছে না। রুদ্রের মনে কী চলছে?কী ভাবছে রুদ্র? এত কাছে রুদ্র তাও তাকানোর সাহস হচ্ছে না অরূণীর। অরূণীর তো রোমাঞ্চকর অনুভূতি হওয়ার কথা। কিন্তু ভয়, আতঙ্ক আর অপ্রস্তুত ভাবে দেখা হওয়ায় অরুণীর রোমাঞ্চকর অনুভূতি হারিয়ে গেছে।
এর ভিতর আবার সাহেদ আহমেদের গলার আওয়াজ গেল অরূণীর কানে।সাহেদ আহমেদ রুদ্র কে জিজ্ঞেস করছে, “রুদ্র এখন কোথায় পড়ছো? কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি’তে চান্স পেয়েছিলে?”
রুদ্রের আড় চোখের দৃষ্টি বার বার যাচ্ছে অরূণীর দিকে। মেয়েটা ওভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে কেন এখন? এসব ভাবনার মাঝে সাহেদ আহমেদের প্রশ্নের উত্তরে বলল, “না স্যার কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি’তে হয় নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স নিয়ে অনার্স করছি।”
সাহেদ আহমেদ বলল, “এটাও খারাপ না। কিন্তু তোমার যে মেধা তাতে এর থেকে ভালো কিছু তোমার প্রাপ্য ছিলো।”
রুদ্র হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। সাহেদ আহমেদ বিবেচক ভঙ্গিতে বলল, “জীবনে সফল হওয়া বড় ব্যাপার। চেষ্টা থাকলে তুমি এখান থেকেও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর থেকে ভালো কিছু করতে পারবে।”
রুদ্র এইচএসসি পরীক্ষার পর যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছিলো তখন সাহেদ আহমেদের সাথে পরিচয় হয়।সেই কোচিং সেন্টারের পরিচালক ছিলো সাহেদ আহমেদ। কোচিং সেন্টারে এত ছাত্র-ছাত্রীর ভিতর এভাবে কাউকে মনে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু রুদ্রের সাথে একদিন সাহেদ আহমেদের দেখা হয়েছিল চট্টগ্রামে।তখন সাহেদ আহমেদ জানতে পারলো রুদ্র তাঁর কোচিং সেন্টারে কোচিং করছে। ধীরে ধীরে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। রুদ্রের চোখে সাহেদ আহমেদ একজন সুদর্শন পুরুষ।যে দৃঢ় গলায় কথা বলে। চলা ফেরার দারুন বনেদি ভাব আছে। সাহেদ আহমেদের সাথে কারো একবার কথা হলে সে সারাজীবন মনে রাখবে সাহেদ আহমেদ কে। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত সেরা গুন আছে তাঁর ভেতর।
রুদ্র হঠাৎ করে অরূণীর দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে ওঠল, “অরূণী কিসে পড়ছো এবার?”
অরূণীর পাঁজর সহ কেঁপে উঠছে।পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছে অরূণী‌। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। রুদ্র কথা বলছে ওঁর সাথে?অরূণীর ভয় ছিলো সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদ’কে রুদ্র কী সব বলে দিবে?।না-কি চড় মেরে বসবে? এই পর্যায়ে অরূণী বুঝতে পারলো রুদ্র ওসব বলবে না।বলার হলে এতক্ষণে বলে দিতো।
অরূণী ওভাবেই মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। ব্যাপার’টা সাহেদ আহমেদ খেয়াল না করলেও সেলিনা আহমেদ খেয়াল করেছে। সেলিনা আহমেদ অরূণীর কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল, “কি হলো তোর?”
রুদ্রের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সাহেদ আহমেদ তাড়া দিতে লাগলো অরূণী কে।অরূণীর এমন অদ্ভুত আচরণে বিরক্ত সে। অরূণী শুধু ভাবছে রুদ্রের দিকে তাকাবে?কথা বলবে?এই চিন্তা’টা অরূণীর মাথায় এক সেকেন্ডে কয়েক হাজার বার উত্থাপিত হচ্ছে। সাহেদ আহমেদের ঝাঁঝালো গলায় অরূণী নিভু নিভু চোখে ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকালো রুদ্রের দিকে। আস্তে করে শুধু বলল, “ ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার।”
রুদ্র একদম স্বাভাবিক গলায় বলল, “তা অরূণী কী সব সময় চুপচাপ থাকো এমন?”
কথা’টায় ক্রুর বিদ্রূপ ছিলো।অরূণীর গা অস্বস্তি’তে যেন কাঁটা দিয়ে ওঠছে। আশ্চর্য! অরূণীর গলা থেকে কথা বের হচ্ছে না‌। সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদ কপাল ভাঁজ করে তাকাচ্ছে অরূণীর দিকে। সাহেদ আহমেদ বলল, “কি হলো?শরীর খারাপ লাগছে তোর?মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে না-কি?”
অরূণী একবার রুদ্রের দিকে তাকায়। আরেকবার সাহেদ আহমেদের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে।
______________
ট্রেন চলতে থাকে।মাতাল হাওয়ায় অরূণীর চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বার বার মুখে পড়ছে। অরূণী তখন জাগতিক সব ভাবনা-চিন্তার ঊর্ধ্বে। শুধু ভাবছে এই জার্নি সারা জীবন চলুক‌। আড়চোখে রুদ্রের দিকে তাকায়। রুদ্রের চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।অসীম লজ্জা পায় রুদ্রের চোখে চোখ পড়ায়।লজ্জা’টা অরূণীর মনেই নিমজ্জিত থাকে। চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এমন জার্নি অরূণীর জীবনে আসবে কে ভেবেছে? সাহেদ আহমেদের পরিচিত রুদ্র! কথাটায় অন্য রকম আনন্দ খুঁজে পায় অরূণী। অরূণী যে আতঙ্ক ,ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ছিলো তা কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মন জুড়ে শুধু এক ধারালো অনুভূতি হচ্ছে। এবার একদম সরাসরি তাকায় রুদ্রের চোখের দিকে। রুদ্রের মাথা নিচু করা। অরূণী সেলিনা আহমেদ’কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে, “আম্মা এই জার্নি যেন কখনো শেষ না হয়। সারা জীবন এই জার্নি ধরে রাখার কোনো উপায় আছে?”
রুদ্র চোখ তুলে তাকায় অরূণীর দিকে। রুদ্রের চোখের দৃষ্টি অরূণী’কে নানান বার্তা দেয় যেন। চোখের দৃষ্টিতে বিদ্রূপ রয়েছে।অরূণী যে এভাবে রুদ্রের সামনে পড়ে গেল সে নিয়ে রুদ্রের অভিব্যক্তি, রুদ্র চাইলে এখন সব সাহেদ আহমেদ কে বলে দিতে পারে সেই অহংকারও রয়েছে রুদ্রের চাহনিতে।
সেলিনা আহমেদ অরূণীর এই কথার অর্থ বুঝলো না। জার্নি ধরে রাখা মানে কী? সেলিনা আহমেদ ভেবে নিয়েছে অরূণীর হয়ত ট্রেন জার্নি ভালো লেগেছে তাই বলেছে। অরূণী সাহেদ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আব্বা এর পর থেকে আমরা যেখানেই যাই ট্রেনেই যাবো।এই ট্রেনেই যাবো।”
সাহেদ আহমেদ বলল, “আমার ট্রেনে চড়া বিরক্ত লাগে।”
শুধু রুদ্রই বুঝছে অরূণীর কথার অর্থ। মনে মনে হাসছে রুদ্র। অরূণী’কে রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করল, “অরূণী লেখাপড়া কেমন করছো?”
লেখাপড়ার প্রসঙ্গ আসলেই সাহেদ আহমেদের আক্ষেপ শুরু হয়। বলতে লাগলো, “তাঁর আর লেখাপড়া। লেখাপড়া আর সে বিপরীত মেরুর জিনিস।”
সাহেদ আহমেদের জন্য অরূণী আর কথা বলার সুযোগ পেলো না। রুদ্র অরূণীর মুখ থেকে কথা শুনতে চাচ্ছে। রুদ্রের এখন ইচ্ছে হচ্ছে কিরণ’কে ফোন দিতে।সেই মেয়ে ওঁর সামনে বসে আছে এসব শুনলে কিরণের অবস্থা দেখার মতো হবে। অরূণী সকল সংকোচ কাটিয়ে রুদ্র কে বলেই ফেলল, “রুদ্র ভাইয়া আপনায় দেখতে আল্লু আর্জুনের মত লাগে।”
কথা’টা বলা শেষেই অরূণী দেখে সাহেদ আহমেদের কঠিন দৃষ্টি ওঁর দিকে।অরূণী দমে গেল। রুদ্র প্রত্যুত্তর করল না। রুদ্রের সাথে দেখা হয়েছে,কথা বলছে এতসব আনন্দ যেন অরূণী দাঁত কামড়ে সহ্য করছে এখন।অরূণীর আকাশ-পাতাল মাতিয়ে আনন্দ চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে।
রুদ্রের এখন অত কিছু ভাবছে না।যেহেতু অরূণী সাহেদ আহমেদের মেয়ে, বিষয়টা এখন রুদ্রের হাতের নাগালে। রুদ্র শুধু মনে মনে ভাবছে এই সেই মেয়ে যাকে ও হন্য হয়ে খুঁজেছে।
অরূণীর ভাবনা-চিন্তা এখন রুদ্রের ফোন নম্বর কীভাবে নেওয়া যায়।কোনো উপায় খুঁজে পেলো না। এদিকে আর আধা ঘন্টা পরই ট্রেন পৌঁছে যাবে পাবনায়।অরূণীর মনের ভিতর ছটফট করতে লাগলো। এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছে কেন সময়?
চারদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে।সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদের দৃষ্টিগোচর করে অরূণী তাকাচ্ছে রুদ্রের দিকে।ট্রেন তো এসে গেছে প্রায়। রুদ্রের মনে কি চাচ্ছে না এই জার্নি দীর্ঘ সময় চলুক? রুদ্রের কি আফসোস হচ্ছে না কেন এত তাড়াতাড়ি ট্রেন পৌঁছে যাচ্ছে? হয়ত না! পৃথিবীর সমস্ত বিষণ্ণতা অরূণী’কে জেঁকে ধরেছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে অরূণীর।
ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে গেল।অরূণীর কান্না পাচ্ছে ভীষণ।সময় টুকু থেমে থাকলো না কেন?আবার কবে দেখা হবে রুদ্রের সাথে? আবার কবে কথা হবে? কীভাবে কথা হবে? রুদ্রও অরূণী’দের সাথে নামলো। ট্রেন থেকে নেমে রুদ্র সাহেদ আহমেদ’কে খুব জোর গলায় বলল, “স্যার আমাদের বাসায় সময় হলে যাবেন কিন্তু।আপনি শুধু আমায় একবার বলবেন।আমি আপনার নিতে পাবনায় আসবো।”
সাহেদ আহমেদ হেসে বলল, “যাবো,যাবো।”
অরূণী জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেলিনা আহমেদের পাশে। অরূণী’কে নিয়ে কী কিছুই ভাবছে না রুদ্র?এর ভিতর রুদ্র সাহেদ আহমেদের ফোন নম্বর নিলো। সাহেদ আহমেদের ফোন নম্বর না নিয়ে রুদ্রের ফোন নম্বর’টা সাহেদ আহমেদ কে দিলে কী হতো? সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদ লাগেজ,ব্যাগ নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অরূণীর চোখ তখন ছলছল।আজ বড্ড আবেগী হয়ে পড়েছে অরূণী। এমন’টা আগে কখনো হয়নি। অরূণী সুযোগ পেয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলল, “আপনি কী চান নি জার্নি’টা আরো দীর্ঘ হোক?”
প্রশ্ন’টা করার সাথে সাথেই সাহেদ আহমেদ অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আয় আয়।”
রুদ্রের কাছ থেকে উত্তর টা জানা হলো না। যদি সাহেদ আহমেদ না আসতো তাহলে কী রুদ্র উত্তর দিতো? দিলেও কী উত্তর দিতো?অরূণী যেতে লাগলো ওঁর গন্তব্যে, রুদ্র যেতে লাগলো রুদ্রের গন্তব্যে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here