তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪১
__________________
অরূণী ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসলো।অরূণীর এই স্বাভাবিক আচরণে বাসার সবার স্বস্তি মিলল।সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদ খাওয়া শেষে টেবিল ছাড়লে সূর্য অরূণী’কে উদ্দেশ্য করে বলল, “আচ্ছা তোর সাথে তো রুদ্রর যোগাযোগ নেই?”
অরূণী না বলতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেল।অরূণী মনে মনে এই ভয়টা’ই পাচ্ছিলো।বাসার সবাই সহজে বিশ্বাস করলেও সূর্যর মনে সন্দেহ জাগতে পারে।অরূণী যদি এখন বলে যোগাযোগ নেই।তাহলে সূর্য হয়ত জিজ্ঞেস করবে তাহলে ব্রেকাপ কীভাবে হলো?অরূণীর অবচেতন মনে এমনই শঙ্কা জাগে। অরূণী অপ্রস্তত ভাবে বলল, “ছিলো যোগাযোগ। শামীমা আপার ফোন দিয়ে কথা বলতাম সুযোগ পেলেই।”
শামীমা একটু তফাতেই দাঁড়িয়ে ছিলো। হকচকিয়ে গিয়ে তাকালো অরূণীর দিকে।অরূণী বোকার মত কী বলল এটা? এখন যদি এই বাসার সবাই শামীমা’কে দোষারোপ করে? শামীমার এই ভাবনা চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে অরূণী ফের বলল, “শামীমা আপা সাদাসিধে মানুষ।এতসব কি বুঝে? উনার ফোন রান্নাঘরে পড়ে থাকতো।আমি নিয়ে কথা বলতাম। শামীমা আপা তো খেয়ালই করতো না।”
শামীমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।অরূণীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।অরূণী সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সূর্যর দিকে। সূর্য কী অরূণীর কথা বিশ্বাস করছে না? সূর্য নাস্তা মুখে তুলতে তুলতে বলল, “তারপর?”
অরূণী হালকা গলায় জবাব দেয়, “তারপর কালকে আমায় ফোন দিয়ে বলে উনি না-কি কানাডায় স্কলারশিপ পেয়েছে।দুই দিন বাদে কানাডায় চলে যাবে।আমি তাঁর যোগ্য না। উনি কত হ্যান্ডসেম আর আমি শ্যাম বর্ণের। উনার না-কি আরো অনেক গুলো গার্লফ্রেন্ড আছে।প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে উনি এত সিরিয়াস না।এসব উনার কাছে টাইম পাস ছাড়া আর কিছুই না।আমি না-কি বোকার মত সিরিয়াস হয়েছি। এসব কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো,বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না।”
অরূণী মুখ’টা পাংশুবর্ণ করে ফেলল।গলায় ভীষণ দুঃখী ভাব আনার চেষ্টা করলো।সূর্য খাবারের দিক থেকে মনোযোগ সরে গেল।উন্মনা হয়ে কি যে ভাবলো কতক্ষণ।এসব নিয়ে কথা শেষ হলে বিষণ্ণ গলায় বলল, “কতদিন হয়ে গেল ভার্সিটিতে যাচ্ছি না।”
সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমেদ এর ভিতর তাঁদের রুম থেকে বের হয়ে খাবার রুমের দিকে আসছিলো।অরূণীর কথার উত্তরে সাহেদ আহমেদ বলল, “না খেয়েদেয়ে চেহারার কী হাল করেছিস!দুই দিন পরে যা।”
রুদ্রর সাথে দেখা করার জন্য অরূণীর পাগলপ্রায় অবস্থা। সাহেদ আহমেদের কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করার ব্যাপারটা সন্দেহজনক।অরূণী হাসার চেষ্টা করে বলল, “আচ্ছা,আচ্ছা।”
অরূণী চেয়ার ছেড়ে ওঠে। এতক্ষণ বসে বসে খাবার নাড়াচাড়া করেছে।খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বুকের ভিতর পাহাড়সম যন্ত্রণা লুকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখা যে কি দুঃসহ কাজ তা অরূণী এই মুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারছে। সেলিনা আহমেদের কাছে মোবাইল চেয়েছিলো রাতে।সকালে ওঠে হয়ত বিষয়’টা ভুলে গিয়েছে সেলিনা আহমেদ।অরূণীর একবার ইচ্ছে সেলিনা আহমেদের কাছে আবার ফোন’টা চাইতে।পরক্ষণে নিজেকে সামলে নেয়।ফোনের জন্য এত দিশেহারা হওয়া’টা সেলিনা আহমেদের চোখে হয়ত সমীচীন হবে না।অরূণী হুড়মুড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে।ঝর্ণা ছেড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। রুদ্র কত বছর থাকবে কানাডা? কাঁদতে কাঁদতে এক সময় নিঃস্তেজ হয়ে পড়ে অরূণী। রুদ্র কানাডায় চলে যাওয়ার আগে কী একবার দেখা করার ভাগ্য হবে না? কতদিন দেখে না রুদ্র’কে।অরূণীর ইচ্ছে করে সব বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে ছুটে যেতে রুদ্রর কাছে।খুব শক্ত করে রুদ্র’কে জড়িয়ে ধরতে।
________________
সূর্য খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রুদ্র সত্যি সত্যি কানাডায় যাবে।অরূণীর প্রতি যে অবিশ্বাস ছিলো তা নিমিষেই কেটে গেল সূর্যর।অরূণী তাহলে মিথ্যে বলে নি। সূর্য বাসায় এসে সাহেদ আহমেদের সাথে এই নিয়ে আলোচনা করলো।অরূণীর কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত হয়ে সাহেদ আহমেদ অরূণীর বিয়ের কথা বলেছে। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার মত লোক সাহেদ আহমেদ না।ক্রোধের বশে বিয়ের কথা বললেও আসলে এমনটা কখনোই করতো না।
অরূণী চোখ দু’টো বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। চারদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। রুদ্র সেদিন বলেছিলো দুইদিন বাদে চলে যাবে। শামীমার ছেলে অসুস্থ,সে কাজে আসছে না।দুই দিন বাদে মানে আগামীকাল রুদ্র চলে যাবে?অরূণীর বুকের ভিতর বার বার হুঁ হুঁ করে ওঠছে।অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো অরূণী। রুদ্রর সাথে কি দেখা হবে না? কষ্টে অরূণীর দম বন্ধ হয়ে আসছে। কীভাবে দেখা করবে রুদ্রর সাথে? সেলিনা আহমেদ অরূণীর পাশে এসে দাঁড়ালো।অরূণী হকচকিয়ে ওঠে চেহারা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।চোখ-মুখে ফুটে ওঠা তীব্র কষ্ট গুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করলো। চেহেরার অভিব্যক্তি স্বাভাবিক করতে বেশ বেগ পোহাতে হলো অরূণীকে। অন্য দিকে তাকিয়ে সেলিনা আহমেদের উদ্দেশ্যে বলল, “আম্মা কিছু বলবেন?”
– “সন্ধ্যা বেলায় এভাবে বসে আছিস কেন?এই নে ধর তোর মোবাইল।”
অরূণী ভীষণ চমকে গিয়ে তাকায়। মোবাইল! রুদ্রর সাথে কথা বলতে পারবে তাহলে?অরূণীর বিশ্বাস হচ্ছে না।দ্রুত সেলিনা আহমেদের হাতে থেকে মোবাইল’টা নেয়। আনন্দে অরূণী দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। সেলিনা আহমেদ মাগরিবের নামাজ পড়বে তাই অরূণীর হাতে মোবাইল দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল।অরূণী দিশেহারা হয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রুদ্রর নম্বরে ডায়েল করে। রুদ্র তখন নামাজ পড়ছিলো।নামাজ শেষে ফোনের স্ক্রিনে অরূণীর ফোন নম্বর দেখে বিশ্বাস করতে না পেরে চোখ ভালো করে কচলে আবার ফোনের দিকে তাকায়। চমকানোর পালা শেষ হতেই রুদ্রর মনে সন্দেহ জাগে।অরূণীর ফোন নম্বর থেকে অন্য কেউ ফোন দেয় নি তো?সাত-পাঁচ না ভেবে রুদ্র কল ব্যাক করে।অরূণীর পাশে তখন সেলিনা আহমেদ ছিলো।কথা বলার কোনো উপায় নেই।অরূণী শুধু কাঁপছিলো উত্তেজনায়। সাইলেন্ট থাকা ফোন’টার দিকে ভেজা চোখে তাকিয়ে রইল শুধু।
একটু আগে ফোন দিয়ে এখন কেন রিসিভ করছে না?অরূণী ফোন কোথায় পেল? রুদ্র বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারছে না। রুদ্র মেস ছেড়ে ওঁর খালার বাসায় থাকছে বেশ কয়েকদিন ধরে। যেহেতু কাল কানাডায় চলে যাচ্ছে সেহেতু বাসার সবাই উদ্বিগ্ন। মুকুল আকন এখন বেশ সুস্থ। তানভীরও এসেছে।তবে শাহানাজ বেগম ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।মায়ের এই রাগ কিংবা অভিমান নিয়ে তানভীরের মাঝে তেমন ভাবান্তর দেখা গেল না। রুদ্র রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।একা থাকতে ইচ্ছে করছে রুদ্রর। বিষাদময় লাগছে সবকিছু।অরূণী এখন কেন ফোন ধরছে না? রুদ্র অস্থির ভাবে পায়চারি করতে লাগলো।অরূণীর সাথে কি তাহলে দেখা হবে না কানাডা যাওয়ার আগে?কাল তো চলেই যাচ্ছে তাহলে কখন আর দেখা হবে? রুদ্রর বুক চিরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়।এতসব কষ্টের মাঝেও রুদ্র একটু স্বস্তি পেলো।এই স্বস্তির কারণ হলো অরূণীর পরিবার বিশ্বাস করেছে যে রুদ্রর সাথে অরূণীর সম্পর্ক নেই এখন।অরূণীর খোঁজে শামীমার কাছে ফোন দিয়েছিলো রুদ্র। তারপর শামীমার কাছ থেকেই এসব শুনেছে। রুদ্র’কে খাওয়ার জন্য ডাকলো। রুদ্র বিরক্ত ভরা গলায় শুধু বলল, “মা আমি খাবো না।ডেকো না আর দয়া করে।”
ছেলের তিক্ত মেজাজ বুঝতে পেরে শাহানাজ বেগমও আর ডাকলো না।অরূণী শুয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে খুব সাবধানে কাঁদছে।অরূণীর চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। রুদ্রর ভীষণ অস্থির লাগছে।রুম থেকে বের হয়ে ছাদে যায়।যদি একটা বার দেখা করতে পারতো অরূণীর সাথে! উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল রুদ্র।বুকের ভিতর একরাশ হাহাকার। নিবিষ্ট হয়ে শুধু অরূণীর কথা ভাবছে।আর কোনো চিন্তা রুদ্রর মাথায় আসছে না। আশ্চর্য! রুদ্রর চোখ ভিজে যাচ্ছে। জীবনে খুব কম কেঁদেছে রুদ্র। লাবণ্যর সাথে যখন বিচ্ছেদ হয় তখন রুদ্র পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় কিন্তু কখনো কাঁদে নি।আজ কী এক যন্ত্রণায় রুদ্রর চোখ ভিজে যাচ্ছে। রাত দুইটা পেরিয়েছে। রুদ্র ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে রেলিং ঘেঁষে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে রুদ্রর।অরূণীর দৃষ্টি নিকষ অন্ধকার মিলে আছে। দুইজনের কারো চোখেই এক ফোঁটা ঘুম নেই।অরূণীর বাসার সবাই গভীর ঘুমে নিমজ্জিত।অরূণীর পাশেই ঘুমিয়ে আছে সেলিনা আহমেদ।অরূণী সতর্ক পায়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে। মোবাইল’টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়েল করে রুদ্রর নম্বরে। ফোনের স্ক্রিনে অরূণীর ফোন নম্বর দেখে রুদ্রর বুকের ভিতর আবার ধ্বক করে ওঠে। রুদ্র ফোন রিসিভ করে চুপ হয়ে থাকলো।ওপাশ থেকে অরূণী ফিসফিস করে বলল, “রুদ্র, রুদ্র।”
অরূণীর কণ্ঠ শুনে রুদ্র উতলা হয়ে বলল, “অরূণী?অরূণী তুমি?”
রুদ্র একটু থেমে আবার বলল, “কেমন আছো আবেগী রাণী?তুমি আমায় জ্যান্ত মেরে ফেলছো।একটু দেখা করো না প্লীজ। আমি কাল চলে যাচ্ছি।তোমায় দেখার তৃষ্ণায় বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে।”
এতদিন পর রুদ্রর গলা শুনে অরূণী কান্নার ধকলে কথা বলতে পারছে না। শুধু ই কাঁদছে। কোনো মতে বলল, “কাল সকালে দেখা করবো।এখন আর কথা বলা যাবে না।আম্মা সজাগ হয়ে যেতে পারে।”
অরূণী ফোন রেখে ফ্লোরে বসে পড়লো। অসহনীয় কষ্ট কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ও’কে। দুই জনের ই ভয়ঙ্কর এক নির্ঘুম রাত কাটলো। রুদ্রর বিধ্বস্ত অবস্থা।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুল গুলো জবুথবু হয়ে আছে। চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে লাগলো।
_____________________
আজ অরূণী ভার্সিটির কথা বলে বের হবে। বাসার সবাই যা ভাবার ভাবুক।আজ কিছু পরোয়া করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।অরূণীর মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অরূণী রাকা আর নীড়ার সাথে কথা বলে ঠিক করলো রাকার বাসায় যেতে বলবে রুদ্র’কে। সেখানে বসেই রুদ্রর সাথে দেখা হবে।রাকার বাবা-মা বাসায় না।তাই রাকার বাসায়ই দেখা করা উত্তম সিদ্ধান্ত। ভার্সিটি বা অন্য কোথায়ও বসে দেখা করলে সূর্য জেনে যেতে পারে। রুদ্রর বিকাল পাঁচটা ত্রিশে ফ্লাইট।এখন সকাল নয়টা।অরূণী রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে হতে সেলিনা আহমেদের উদ্দেশ্যে বলল, “আম্মা আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে অরূণী তাকালোও না সেলিনা আহমেদের দিকে। উত্তরের অপেক্ষাও করলো না।আজ কারো কথা পরোয়া করার মত মেজাজ অরূণীর নেই।অরূণীর অন্তর আত্মা কেঁপে কেঁপে ওঠছে। রুদ্র চলে যাচ্ছে কানাডা এই বাক্যটা অরূণীর মনের ভিতর ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে।অরূণীর আজ কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। জাগতিক কোনো খেয়াল অরূণীর নেই।অরূণী দিশেহারা হয়ে গেছে।রাকাদের ড্রয়িং রুমে রুদ্র বসে আছে।অরূণী রাকা’দের বিল্ডিং-এ ওঠার প্রথম সিঁড়ি থেকে তড়িৎ বেগে ড্রয়িং রুমে গেল।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে হাঁপাতে লাগলো।দু চোখ বেয়ে অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে।রাকা,নীড়া পাশেই দাঁড়ানো।অরূণী’কে দেখে স্থান কাল ভুলে রুদ্র দিশাহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে।রাকা,নীড়া ওখান থেকে চলে যায় ওঁদের একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে।অরূণী নির্বাক হয়ে দুই হাতে রুদ্রর শার্ট খামচে ধরে রইল। কিছু বলতে পারছে না। রুদ্রও চুপ।আধা ঘণ্টা ওভাবেই কেটে গেল নিঃশব্দে। শুধু অরূণীর কান্নার চাপা শব্দ। রুদ্র অরূণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভারী গলায় বলল, “এ্যাই অরূণী কেঁদো না তো।দুই বছর পর ফিরে এসে একদম বউ বানিয়ে ফেলবো তোমায়।এখন একটু কথা বলো। কতদিন তোমার দেখিনি।তাকাও আমার চোখের দিকে।”
আবেগে রুদ্রর গলা ভারী হয়ে আসছে।অরূণীর রুদ্রর বুক থেকে মুখ তুলে রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার কেঁদে ফেলে। রুদ্রর বুকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি দিতে দিতে বলল, “যেয়েন না আপনি।আমি শেষ হয়ে যাবো।”
– “দুই বছর পর ফিরে আসবো তো পাগলি।তোমার সাথে তো ফোনে কথা হবেই।”
অরূণী তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করতে করতে বলল, “আপনি আমায় ভুলে যাবেন ওখানে গিয়ে। আমি জানি আপনি আমায় ভুলে যাবেন।”
রুদ্রর গলাও ধরে আসছে।চোখ দুটো সিক্ত হয়ে যাচ্ছে।খুব কষ্টে নিজেকে সংযত করে।অরূণীর দুই গালে দুই হাত চেপে ধরে বলে, “এই মেয়েটাকে আমি ভুলতে পারি,বলো?”
রুদ্র ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে আসলো অরূণীর ঠোঁটের কাছে।অরূণী শুধু কাঁপছে।রুদ্র নিজের
ত্তষ্ঠদ্বয় ডুবিয়ে দেয় অরূণীর ত্তষ্ঠে।অরূণীর চোখ দুটো আপনা-আপনি বুঁজে যায়। কয়েক মুহূর্তের জন্য অরূণীর সকল দুঃখ,কষ্ট ভুলেও অন্য এক পৃথিবীতে ভুলে যায়। সর্বাঙ্গে কেঁপে ওঠছে অরূণী। জীবনের প্রথম চুম্বন।কী মাদকীয়তা!কী নেশা!অরূণী নেশাগ্রস্ত মানুষের মত ঘোরের মধ্যে চলে যায়। রুদ্র অরূণী’কে আরো শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে অরূণীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গভীর আসক্তিতে বলে, “ভালোবাসি।”
অরূণীর গলা কাঁপছে। চোখের কোটর বেয়ে পানি পড়ছে। সেই সাথে অরূণীর মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো, “রুদ্র ভালোবাসি।”
চোখের পলকেই যেন কয়েক ঘণ্টা কেটে গেল।কথাই ফুরাচ্ছে না।সেই সাথে অরূণীর কান্না আর রুদ্রর বুকের ভিতর থাকা চাপা কষ্ট। রুদ্র পাহাড়সম কষ্ট গোপন করে বলল, “অরূণী এখন আমার যেতে হবে।দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
অরূণী কিছু বলতে পারছে না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।এই মুখ’টা আবার দুই বছর পর দেখবে।দুই জনের মনে তোলপাড় শুরু হয়েছে! নিদারূণ ক্লেশে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রুদ্র অরূণীর হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “বাসায় নিয়ে সাবধানে পড়বে।খুব গোপনে।আবার ধরা খেয়ো না।”
অরূণী টলমলে শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র ফের বলল, “অরূণী আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।ফ্লাইট মিস করবো আমি। যেতে হবে তাড়াতাড়ি।”
অরূণীর দৃষ্টি গোচর করে রুদ্রর চোখ থেকেও দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। রুদ্রর এই কান্না অন্য কারণে।অরূণী বাসায় গিয়ে চিঠি’টা পড়লেই কারণ’টা বুঝতে পারবে।অরূণীকে কথাটা সামনাসামনি বলার সাহস রুদ্রর হচ্ছিলো না।তাই চিঠিতে বলা ছাড়া উপায় ছিলো না। রুদ্র জানে অরূণী এটা মানতে পারবে না কিছুতেই। নিজের এমন কঠিন সিদ্ধান্তের কারণেই রুদ্রর চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল বিসর্জিত হয়েছে।অরূণী মেনে নিতে পারবে তো রুদ্রর এই কঠিন সিদ্ধান্ত?
(চলবে)
(লিখেই পোস্ট করছি।রিচেক করিনি।অনেক ভুল,টাইপ মিস্টেক রয়েছে।দয়া করে বুঝে নিয়েন)