#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১১
#Writer_Fatema_Khan
“মা আজ জলদি যেতে হবে অফিসে, তাই নাস্তা করে যেতে পারব না। অফিসের কেন্টিনে কিছু খেয়ে নিব।”
মেহের তার মায়ের কাছে বলে যাচ্ছিলো। তার মা ডেকে বললেন,
“কিছু তো খেয়ে যা।”
“না মা এমনিতেই লেইট হয়ে যাচ্ছে। বাবা আর চাচা তো আরও আগেই বেরিয়ে গেছে এদিকে আমি এখনো বাসায়।”
আয়াত নিচে নামতে নামতে তার মা আর চাচীকে বললো,
“আমিও আজ বাসায় খাব না। আজ ভার্সিটিতে প্রথম দিন। প্রথম দিনেই যদি লেইট হয় স্টুডেন্টরা তার লেকচারার কে নিয়ে কি ভাববে?”
“হুম এটাই ভালো তোরা সবাই বাইরেই খাওয়া দাওয়া কর আমরা আর কষ্ট করে রান্না করব কার জন্য?”
“আম্মু আমি খেয়ে যাব তো আমার জন্য করবে।”
কাসফির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আয়াত আবার তাড়া দিয়ে বললো,
“আমি বের হচ্ছি তোমরা থাক।”
“এই দাড়া বাবা, তোর তো এখনো গাড়ি কেনা হয় নি। তুই এক কাজ কর তুই মেহেরের সাথে মেহেরের গাড়ি করে চলে যা। মেহের তোকে নামিয়ে তারপর না হয় অফিস যাবে।”
মেহেরের মা আয়াতকে নিয়ে যাওয়াতে মেহের বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। আয়াত মেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“না চাচী আমি চলে যাব কোনো সমস্যা হবে না আমার।”
আয়াতের মা মাঝখানে বলে উঠলো,
“সেকি একসাথেই তো যাচ্ছিস তো একসাথে গেলেই বা কি সমস্যা!”
“আমার কোনো সমস্যা নেই চাচী, আমি আয়াতকে ছেড়ে দিব।”
আর কিছু না বলে মেহের বেরিয়ে গেলো তার পেছন পেছন আয়াতও বের হয়ে গেলো। তাদের যেতে দেখে আয়াতের মা আর মেহেরের মা দুইজনেই জোরে হেসে দিলো।
“ফাইনালি তারা একসাথে গেলো, কিছুক্ষণ একলা সময় কাটাতে পারবে।”
“হুম ভাবি না হলে তো একজন আরেকজন থেকে খালি পালিয়ে বেরায়।”
কাসফি তাদের কথা বুঝতে না পেরে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
“আম্মু তোমরা দুইজনে কি নিয়ে কথা বলছো?”
“তুই বুঝবি না তুই খেয়ে তৈরি হয়ে নে, স্কুলে যেতে হবে তো নাকি।”
কাসফি আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
মেহের ড্রাইভিং সিটে বসে আয়াতের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আয়াত এসে পাশে বসে পরলো। আয়াত বসার সাথে সাথে মেহের গাড়ি স্টার্ট দিলো। আজকেও আবহাওয়া কালকের মতোই শীতল। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি এখনো। আয়াত এসি অফ করে দিয়ে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো৷ এর ফলে ঠান্ডা শীতল হাওয়া দুইজনের শরীর ছুয়ে দিচ্ছে।
“তুমি বললে কেনো তোমার সমস্যা হবে না, আমি মা আর চাচীকে বলে বেরিয়ে পরতাম। তোমার কোনো ইচ্ছাই নেই আমার সাথে যাওয়ার আমি খুব ভালো জানি এটা। অবশ্য আমার থেকে ভালো করে জানার কথাও না।”
“আমার সত্যি কোনো সমস্যা নেই, তাই আপত্তি করি নি।”
আয়াত মাথা নিচু করে হালকা হেসে বাইরের দিকে তাকায়। প্রায় পৌঁছে গেছে আয়াতের ভার্সিটিতে। এর মাঝে দুইজনের ভেতর আর কোনো কথা হয় নি। দুইজনেই পুরো রাস্তা চুপচাপ ছিলো। তবে আয়াত কয়েকবার মেহেরের দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে। তাকালেও কথা বলে নি কেউ। আয়াত বাইরে থেকে মেহেরের দিকে তাকালে দেখে বাইরের বাতাসে মেহেরের শাড়ি অনেকটাই সরে গেছে। যার ফলে মেদবিহীন পেট দেখা যাচ্ছে। আয়াত চোখ সরিয়ে নেয় সাথে সাথে। গন্তব্যে পৌঁছলে আয়াত সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেলো। মেহেরের সাথে কোনো ধরনের কথাই বলে নি আয়াত। মেহের ভ্রু কুচকে আয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
“এর আবার কি হলো, কিছুক্ষণ আগেও তো ভালো ছিল। গাড়ি থামার সাথে সাথে এভাবে নেমে চলে গেলো কেন?”
মেহের আর কিছু না ভেবে নিজের অফিসে চলে গেলো।
অফিসে গিয়েই হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো মেহের। না এখনো মিটিং শুরু হতে মিনিট দশেক বাকি। তাই একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে ভেতরের দিকে পা বাড়ায়। আজ দেশের বাইরের একজন ক্লাইন্টের সাথে মিটিং, তাই মেহের তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পারে। নিজের রুমে গিয়ে মিটিংয়ের সব ফাইল গুছিয়ে মিটিং রুমে যাওয়ার সময় কেই নক না করেই তার রুমে ঢুকে পরে। মাথা না উঠিয়েই চোখ উঁচু করে তাকালো মেহের। নিজের বাবাকে দেখে হাসলো মেহের৷
“এত কাজ কাজ না করে নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখ না মা।”
“আমি একদম ঠিক আছি। আর কে বললো যে আমি নিজের খেয়াল রাখি না!”
“তাহলে অফিসে এসেই কিছু না খেয়ে ফাইল নিয়ে কেনো পরলি, বাসায় নাকি বলেছিস অফিসে খেয়ে নিবি, তাই না খেয়েই এসে গেছিস। এখন আমিতো অন্য কিছু দেখছি এখানে এসে।”
“আসলে বাবা আমি এক্ষুনি খাবারের কথাই ভাবছিলাম৷”
সাথে সাথে আয়াতের বাবা রুমে ঢুকলো তার পেছনে একজন স্টাফ। যার হাতে একটা ট্রে, যেখানে মেহেরের জন্য খাবার রাখা আছে। আয়াতের বাবা বললেন,
“আগে খেয়ে তারপর মিটিং করতে যাবি। বুঝলি তো মা।”
“হুম।”
মেহের চেয়ারে বসে খাওয়ার জন্য। কিন্তু খাবার মুখে নেওয়ার সময় তার হাত থেমে যায়।
“আচ্ছা আয়াতও তো কিছু না খেয়েই বেরিয়ে গেলো, কিছু কি খেয়েছে নাকি না খেয়েই ক্লাসে চলে গেলো?”
“কিরে না খেয়ে কি ভাবছিস?”
“কিছু না।”
তারপর মেহের নিজের খাবার শেষ করলো। খাবার শেষ হতেই তিনজনে মিটিং রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বিকেল চারটা বাজে। ভার্সিটির ক্লাস সেই অনেক আগেই শেষ কিন্তু আয়াত কাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখছে। বাসায় ফিরবে কিছুক্ষণ পর। প্যান্টের পকেট হতে মোবাইল বের করে মেহেরের নাম্বারে কল দিলো। মেহের নিজের মোবাইল রেখেই মিটিংয়ে গিয়েছিলো। রুমে আসতেই মোবাইলে কল বাজতে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে নেয়। হাতে নিয়ে দেখে আয়াতের নাম্বার। একবার রিসিভ করবে না ভেবেও রিসিভ করতে গেলে কল কেটে যায়। তারপর মোবাইল রেখে দিলে আবার কল আসে মেহের দেখে আবার আয়াত কল করেছে৷ কল রিসিভ করে কানে নিলে আয়াত বলে,
“তুমি কি অফিসে আছো?”
“হুম।”
” আমি এখনো বাসায় যাই নি। আমাকে নিয়ে যেও যাওয়ার সময়, হয়তো বৃষ্টি আসবে।”
“ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি আপনাকে নিয়ে আসব আপনাকে।”
মেহের আয়াতকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়। আয়াত মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা তাদের পুরো পরিবারের ছবিটি দেখে হেসে দেয়৷ যেখানে আয়াত আর মেহের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তবে আয়াত মেহেরের দিকে তাকিয়ে আর মেহের সামনের দিকে। মা, বাবা, চাচা, চাচী সোফায় বসা আর কাসফি তাদের মাঝে। আর সেই মেহের আজ তার সাথে অপরিচিত মানুষের মতো কথা বলছে। কিছুক্ষণ পরেই মেহের ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে নেমে আয়াতকে কল দেয় আর সাথে আয়াত কল রিসিভ করে।
“আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আপনি কোথায়?”
,”আসছি।”
আয়াত কল কেটে গেইটের সামনে এসে পরে৷ মেহের গাড়ির সামনে মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াত এগিয়ে আসতেই কয়েকটা মেয়ে আয়াতের কাছে এসে বলে,
“স্যার আপনার ক্লাস খুব ভালো লেগেছে৷ সত্যি আপনি খুব ভালো পড়ান৷”
তাদের মধ্যে একজন বলে,
“আর কখনো ক্লাস বাংক করবো না স্যার। আপনার লেকচারের পাশাপাশি আপনাকেও খুব ভালো লেগেছে স্যার।”
আয়াত কপাল চুলকে বলে,
“ধন্যবাদ। আমি আসছি।”
“আচ্ছা স্যার কাল আবার দেখা হবে আর উনি কি আপনার বোন?”
“বৃষ্টি আসতে পারে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। আর কাল ক্লাসে এসো কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই আয়াত তাদের এড়িয়ে কথা কাটিয়ে মেহেরের দিকে তাকালো। মেহের দুই ভ্রু কুচকে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আয়াত মেহেরকে দেখে হেসে দেয়। তারপর বলে,
“মেহের চলো বাসায় যাব তো।”
মেহের চমকে উঠে আয়াতের ডাকে৷ তারপর বলে,
“হুম চলুন।”
“মেহের আমি ড্রাইভ করছি, তুমি বসো।”
মাথা নেড়ে মেহের সায় দিয়ে পাশের সিটে বসে পরে। আয়াত ড্রাইভিং সিটে বসে পরে। গাড়ি স্টার্ট দিলে মেহের বারবার আয়াতের দিকে তাকাচ্ছে তা আয়াত খুব ভালোই বুঝতে পারছে৷ আয়াত সামনের দিকে তাকিয়েই হাসছিলো। তা দেখে মেহের বুঝতে পারে তার জন্যই আয়াত হাসছে তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আয়াত বলে,
“কিছু বলবে মেহের?”
“আপনি সকাল থেকে কিছু খেয়েছেন?”
আয়াতের যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না মেহের তার খোঁজ নিচ্ছে। কিছু না বলেই আয়াত ড্রাইভে মনোযোগ দিলো।
চলবে,,,,#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১২
#Writer_Fatema_Khan
গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। মেহের জোরপূর্বক আয়াতকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। কারণ সকাল থেকে আয়াত এখন অবদি কিছুই খায় নি। আয়াত মুখে না বললেও মেহের ঠিক বুঝতে পেরেছে। মেহের আর আয়াত রেস্টুরেন্টে ঢুকে দুইজনেই কিছু খেয়ে নেয়। রেস্টুরেন্টে থাকাকালীন সময়ে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়। আয়াত আর মেহের দুইজনে তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আয়াত একটা শপিং মলের সামনে গাড়ি থামায়।
“মেহের তুমি একটু বসো আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”
“কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?”
“আসছি, শুধু মিনিট দশেক অপেক্ষা করো।”
মেহের আর কথা বাড়ালো না। আয়াতও আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। গাড়িতে মেহের বসে অপেক্ষা করছে। গাড়ির গ্লাস কিছুটা নামিয়ে নেয় মেহের। বৃষ্টির পানি ছিটকে তার মুখে পারছিল। মেহের চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করছিল। বাইরে ভেজা মাটির গন্ধ যেনো তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে। বৃষ্টি বরাবরই মেহেরের পছন্দ। হঠাৎ গাড়ির শব্দে মেহের চোখ খুলে তাকায়। পাশে তাকিয়ে দেখে আয়াত গাড়িতে বসেছে।
“গ্লাস লাগিয়ে নাও, পরে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“হুম।”
মেহের গ্লাস বন্ধ করে নিলে আয়াত গাড়ি স্টার্ট দেয়৷
“মেহের।”
“বলুন।”
“তুমি কি আমার উপর এখনো রেগে আছো?”
“আমি সত্যি কারো উপর রেগে নেই।”
“তাহলে এতটা দূরত্ব কেন আমার সাথে, এভাবে কথা বলো মনে হয় আমাকে চেনোই না।”
মেহের কোনো উত্তর দিল না। চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াতও আর কথা বাড়ালো না। ড্রাইভে মন দিল।
“ভাবি আমি সব ঠিক করে এসেছি। সবাই এলেই সবজি পাকোড়া আর চা বসিয়ে দিব চুলায়।”
“ভালো করেছিস, জানিসই তো আয়াত আর কাসফি এই বৃষ্টির সময় পাকোড়া খুব পছন্দ করে। এসেই যদি এসব পায় খুব খুশি হয়ে যাবে।”
“হ্যাঁ ভাবি। আমিতো খুব চিন্তায় আছি।”
“কেনো রে!”
“আয়াত আর মেহেরকে নিয়ে। আমরা তো ওইদিন বিয়ের কথা বলে দিয়েছি কিন্তু এরপর থেকে ওরা দুইজন যেনো আরও আলাদা হয়ে গেছে। কেমন দূরে দূরে থাকে।”
“এইজন্যই তো তাদের একসাথে পাঠালাম। একসাথে গেলে টুকটাক কথা তো হবে দুইজনের।”
“আমরা তো এটাই চাই আমাদের বাচ্চা দুটো যেনো সবসময় সুখে থাকে।”
“মেহেরের একটু সময় লাগবে কিন্তু দেখিস ও একদিন আয়াতকে মেনে নিবে।”
গাড়ির শব্দে বারান্দা থেকে নিচের দিকে তাকালো আয়াতের মা আর মেহেরের মা। আয়াত আর মেহেরকে একসাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখে তারা। আয়াতের হাতে কয়েকটা ব্যাগও আছে। তাদের একসাথে দেখেই দুই জা হেসে উঠে।
“ওই দেখ আমাদের আয়াত আর মেহের একসাথে ফিরছে। দুইজনে তেমন দূরত্বও নেই।”
“হুম। কিভাবে মেহেরকে আগলে ভেতরে নিয়ে আসছে আয়াত যেনো বৃষ্টি মেহেরকে ছুতেও না পারে।”
“ওরা যেনো খুব সুখী হয় রে।”
আয়াত মেহেরের এত কাছাকাছি এসে ব্যাগ দিয়ে মেহেরের মাথার উপর দিয়ে আছে যাতে মেহের ভিজে না যায়। আয়াতের শ্বাস মেহেরের মুখে পরছিল। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহের আয়াতের দিকে তাকাতে পারছে না। আয়াতের গায়ের কড়া স্মেল মেহেরের নাকে অবদি আসছে। তাড়াতাড়ি বাসার সামনে আসতেই মেহের কলিং বেল বাজানো শুরু করলো। আয়াত অনেকটাই ভিজে গেছে। হাত দিয়ে চুলের পানি ঝেরে ফেলছিল। মেহের আড়চোখে একবার আয়াতকে দেখে নেয়৷ দরজা খুলে আয়াতের মা দাঁড়ায়।
“কিরে তোরা একসাথে ফিরবি বলিস নি তো!”
অবাক হওয়ার ভংগিতে আয়াতের মা জিজ্ঞেস করলো৷ যেনো তিনি উপর থেকে কিছুই দেখেন নি।মেহের আর আয়াত ভেতরে ঢুকে গেলো।
“আসলে চাচী আমার আসার পথেই আয়াতের ভার্সিটি তাই নিয়ে আসলাম।”
আর কিছু না বলে মেহের তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াতও তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে মানে ছাদে যেতে নিলে তার মা আটকে বলে,
“ছাদে যেতে হবে না আজ। তোর ঘরে কয়েকটা কাপড় রেখে দিয়েছি ওইখানেই যা। বৃষ্টি কমলে না হয় চলে যাবি উপরে।”
“ঠিক আছে।”
“আর ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। তোর বাবা আর বড় চাচা এক্ষুনি চলে আসবে। তারপর পাকোড়া আর চা করছি খেয়ে নিস।”
“হুম। আমি উপরে যাই তাহলে।”
আয়াত সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আয়াতের মা ছেলের এমন হাসি মুখ দেখে খুশিতে ভরে উঠলেন। এদিকে আয়াত নিজের ঘরে এসে বিছানার একপাশে হাতে থাকা ব্যাগগুলো রেখে দিলো৷ আয়াত বিছানার উপর তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস দেখতে পেয়ে হেসে দিল।
“এই মা আর চাচী যে কি করতে চায় নিজেও জানে না৷ তাদের মেহের তো আমার থেজে দূর দূর ভাগে আর এরা আমাকে তার কাছে রাখার চেষ্টা করছে।”
খাটের উপর থেকে টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আয়াত৷ আধা ঘণ্টা পর আয়াত নিচে নেমে এলো। বসার ঘরে নিজের বাবা আর চাচাকে বসে কথা বলতে দেখে আয়াত তাদের সামনে থাকা সোফায় গিয়ে বসলো৷ বসার ঘর আর রান্নাঘর পাশাপাশি থাকায় আয়াত দেখতে পেলো তার মা আর চাচী চুলায় কিছু তৈরি করছে। তাদের পাশেই মেহেরও টুকটাক কাজ এগিয়ে দিচ্ছে। আয়াত এক পলক তাদের দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রল করতে থাকলো। মেহেরের বাবা আয়াতের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আয়াত।”
আয়াত চাচার ডাকে মোবাইল থেকে চোখ সড়িয়ে চাচার দিকে তাকিয়ে মোবাইল অফ করে সামনে থাকা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে চাচার কথায় মনোযোগ দিলো।
“জি চাচা বলুন।”
“আজকে তোমার ভার্সিটিতে প্রথম দিন ছিলো, তা কেমন ছিলো আজকের দিন?”
“খুব ভালো চাচা। আর বিশেষ করে স্টুডেন্টরা অনেক আগ্রহী। এটার জন্যই আরও ভালো লেগেছে।”
মেহের সেই সময় পাকোড়ার ট্রে নিয়ে বসার ঘরে আসলে আয়াতের মুখে স্টুডেন্টদের সুনাম শুনে আড়চোখে একবার তাকায়। আয়াত প্রথমে মেহেরের এভাবে তাকানোটা বুঝতে না পারলেও মেহের মুখাবয়ব দেখে বুঝতে বাকি রইলো না গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলা মেয়েদের জন্য সে এমন মুখ শক্ত করে আছে। আয়াত মাথা নিচু করে হাসতে লাগলো৷ আয়াতের এই হাসি যেনো মেহেরের দৃষ্টি এড়ালো না আর মেহের আরও রেগে রান্নাঘরে চলে গেলো। মিনিট দুই একের ভেতর মেহের আবার ট্রে করে চা নিয়ে আসলো। চা টেবিলের উপর রেখে যেতে নিলে আয়াতের মা মেহেরকে ডেকে তাদের সাথে বসতে বললো। মেহের কিছু না বলে চুপচাপ একটা সোফায় বসে পরলো। কাসফি উপর থেকে তাড়াতাড়ি ছুটে এলো কারণ তার পাকোড়া খুব প্রিয়। আর সে কিছু না ভেবে গরম পাকোড়া হাতে নিয়ে আয়াতের পাশে ধপ করে বসে পরলো৷ মেহের তার বাবার কোল থেকে মাহিকে নিয়ে তার কোলে বসালো। সবাই অনেক কথা বলছে। আয়াত তো কাসফির হাতের পাকোড়া নিয়ে বারবার খেয়ে নিচ্ছে আর তার জন্য কাসফি মুখ ফুলিয়ে আবার আরেকটা হাতে নিচ্ছে। আয়াতের দিকে বারবার রাগী দৃষ্টিতে কাসফি তাকাচ্ছে। আর তা দেখে আয়াত কাসফির চুল ধরে টেনে দিচ্ছিলো আর কাসফির গাল টমেটোর মতো ফুলছিলো৷ তাদের ভাই বোনের এই ঝগড়া দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। এতে যেনো কাসফি আরও রেগে গেলো৷ তাই পাকোড়ার পুরো প্লেট নিয়ে বসে পরলো। মেহেরের সবসময় তার পুরো পরিবারকে এভাবে একসাথে হাসি খুশি দেখতেই ভালো লাগে। আজ অনেক দিন পর তার পরিবার এভাবে আনন্দে মেতে উঠেছে। কিন্তু মেহের যেনো নিজেকে খুব গুটিয়ে নিয়েছে এসব থেকে। না হলে এদের সাথে এখন সে নিজেও মারামারি করা শুরু করতো। নিজের এমন পরিবর্তনে মেহের নিজেই হেসে উঠলো।
নিজের ঘরে মেহের সেই অনেক আগেই এসেছে। রাতের খাবার খেয়ে প্রায় সবাই এখন নিজ ঘরে৷ রাত ১২টার উপরে বাজে। কিন্তু মেহেরের চোখে ঘুম নেই। মাহিকে ঘুম পাড়িয়ে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি দেখছে। যদিও অন্ধকারে চারদিকের পরিবেশ সে দেখতে না পারলেও তার শীতল অনুভূতি মেহেরের শিরায় শিরায় উপলব্ধি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি বারান্দার মেঝেতে পরে মেঝে ভিজে আছে৷ খালি পায়ে মেহের দাঁড়িয়ে আছে। হালকা ঠান্ডা বাতাসে মেহের কিছুক্ষণ পর পর কেপে উঠছে। হঠাৎ নিজের পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পেরে মেহের পেছনের দিকে তাকালো।
চলবে,,,,,,#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১৩
#Writer_Fatema_Khan
কৃষ্ণ কালো অন্তরীক্ষের দিকে নজর মেহেরের। আজ অন্তরীক্ষে কোনো তারা নেই। মেঘের চাদরে সবটা ঢেকে গেছে অনেক আগেই৷ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির শব্দ আর দুইটি মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। মেহের নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে দেখে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আয়াতও তার ন্যায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের আর কিছু না বলে পুনরায় বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুইজনেই নিরবতা পালন করতে ব্যস্ত। নিরবতা ভেঙে মেহের বললো,
“কিছু বলবেন?”
“কিছু বললেই বুঝি আসা যাবে, না হলে আসা যাবে না?”
“এত রাতে যেহেতু এসেছেন অবশ্যই কিছু বলবেন তাই এসেছেন, ঠিক বলি নি আমি।”
“তুমি আমাকে সেদিন থেকে আপনি করে কেন ডাকো মেহের? আমি কি এতটাই পর হয়ে গেলাম?”
“তুই বলে সম্মেধন করা এখন আর সাজে না। আগে আপনাকে আমি ছোট চাচার ছেলে হিসেবে তুই বলে ডাকতাম কারণ আপনি বয়সেও আমার ছোট। কিন্তু ওইদিন বাবা আর চাচার প্রস্তাবের পর আমি আপনাকে তুই করে বলতে পারছি না।”
আয়াত আবার চুপ হয়ে গেলো। মেহেরের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছিটা এসে মেহেরের মুখে এসে পরছিলো আর হালকা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। মৃদু বাতাসে শাড়ির আচল হালকা উড়ছে। যা মেহেরকে আরও মোহনীয় লাগছে। খোলা চুলের এক গাছি চুল চোখের সামনে আসছিলো যা মেহেরকে খুব বিরক্ত করছিলো৷ আয়াত কিছুটা এগিয়ে মেহেরের হাত ধরে নিজের সামনে দাড় করায়৷ তারপর হাত দিয়ে মুখের উপরে থাকা চুল সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দেয়। মেহের আয়াতের এমন স্পর্শে কেপে উঠে। কোমরের দুই পাশে হাত দিয়ে মেহেরকে আরও কাছে আনে আয়াত৷ মেহের আয়াতের এমন স্পর্শ সম্পর্কে অবগত নয়। তাই অনেকটা অবাক হয়েই আয়াতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি, যা মেহেরের কাছে পুরোপুরি অচেনা।
“ভিজে যাচ্ছ তা কি দেখতে পাও না। নাকি আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করো৷ তোমার একটু কষ্ট হলেও আমার কেমন লাগবে তা ভেবেছ একবার৷ আর একটা কথা, আর কখনো যেনো শাড়ি পরতে না দেখি তোমাকে। এই বাকানো কোমড় কেউ দেখুক তা আমার সহ্য হবে না। তাই আজ থেকে আর শাড়ি পরে কোথাও যাবে না তুমি৷ কথাটা যেনো মনে থাকে৷ আর বিছানার উপর তোমার জন্য কিছু ড্রেস আছে আজ থেকে এসব পরবে। কাল থেকে তোমায় আমি শাড়ি পরা না দেখি। আজ আমার সারাটাদিন কেটেছে তোমায় ভেবে। ওই এক মুহূর্ত আমার চোখের সামনে থেকে সরতেই চায়নি, তাহলে ভাবতে পারো অন্যদের কি অবস্থা হবে এমন দেখে৷ বেশি ভেব না ঘুমিয়ে পরো, সকালে অফিস যেতে হবে। আর আমার দেওয়া ড্রেস গুলোই যেনো গায়ে থাকে। শুভরাত্রি মেহের।”
মেহেরের কানের কাছে এসে এসব বলে আয়াত সোজা মেহেরের ঘর থেকে বেড়িয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো। মেহের যেনো পুরো জমে গেছে। এই আয়াত পুরোপুরি অন্য এক আয়াত। এতদিন ধরে যাকে জানত সেই আয়াতের সাথে এর কোনো মিল নেই। আয়াত কখনো মেহেরকে কিছু বলা তো দূর জোরে কথাও বলত না। আর আজ কিনা সেই আয়াত মেহেরকে শাসনের সুরে কিছু কথা বলে গেলো। এ কেমন অনুভূতি মেহেরের জানা নেই। তবে আয়াতের চোখের দিকে তাকানো কষ্টকর মনে হচ্ছিলো৷ যেনো এক নেশা ওই চোখের মধ্যে। মেহের নিজেকে ধাতস্থ করে বারান্দা থেকে ঘরের ভেতর চলে আসলো৷ বিছানায় মাহি ঘুমিয়ে আছে। তার মাথার অনেকটা উপরেই কয়েকটা শপিং ব্যাগ যেগুলো আজ আসার পথে আয়াত কিনেছিলো। কিন্তু এর ভেতর যে তার জন্যই কিছু ছিল তা কখনো মাথাতেও আসে নি মেহেরের৷ ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে মাহির পাশে শুয়ে পরলো মেহের। ক্লান্ত চোখ দুটি আজ বন্ধ করতে মানা৷ ঘুমেরা আজ পালিয়েছে মেহেরের চোখ থেকে। আয়াতের এমন হঠাৎ কাছে আসা তার স্পর্শ বারবার কাপিয়ে দিচ্ছিলো মেহেরকে। এতটা কাছে আসার পরও যখন আয়াত মাথা নামিয়ে মেহেরের কানের কাছে নিয়ে তার ঠোঁট জোড়া ঠেকালো মেহের তখন জমে গেছিলো। বারবার সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতে লাগে। চোখ খিচে বন্ধ করেও কোনো লাভ হয়নি৷ ঘুম যে আজ আর ধরা দিবে না।
অন্ধকার ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে আয়াত৷ বিদ্যুৎ চমকানোতে কিছু সময় অন্তর অন্তর পুরো ঘরটা আলোকিত করে দিচ্ছে। তার চোখেও আজ আর ঘুম নেই।
“কি বলতে গিয়েছিলাম আর কি করে এলাম৷ শুধু মেহেরকে ড্রেস গুলো দিতে গিয়েছিলাম আর আমি কিনা ওকে এতটা কাছে এনে থ্রেট দিয়ে এলাম যেনো আর শাড়ি না পরে৷ এখন আবার আমাকে নিয়ে কতকিছু ভাববে মেহের৷ ওর মন পাওয়ার কত চেষ্টায় থাকি সাথে বাসার সবাইও তাই চায়। আর আমি কিনা নিজের উলটা পালটা কাজের জন্য ওর মন থেকেই উঠে যাব। ড্রেস গুলো দিয়ে চলে না এসে কথা বলার কি প্রয়োজন ছিল। আর মেহেরের ভেজা মুখ দেখে ওকে এতটা মায়াবী লাগছিল আমিই বা কি করতাম। যত দূরে যেতে চাই ততটাই কাছে এসে যাই আমি ওর।”
এসব ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় দুইটি মানুষের নির্ঘুম রাত। পুরো রাত কেউই আর দুচোখের পাতা বন্ধ করতে সক্ষম হয় নি৷
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ কোরআন শরিফ পড়ে নিল মেহের৷ তারপর বারান্দার দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধ এক সকাল৷ ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া পুরো শরীর শীতল করে যাচ্ছে তার। মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে বাইরের শান্ত পরিবেশ দেখে ঘরের ভেতর চলে আসে। আলমারি থেকে একটা সুতির শাড়ি বের করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো মেহের। গোসল সেড়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে নিয়ে কাল রাতের কথা মনে পরতেই একরাশ লজ্জা এসে ভর করে তার রক্তিম মুখশ্রীতে।
“আয়াত কাল রাতে আমাকে শাড়ি পরতে মানা করেছে যেনো আমার বাকানো কোমড় কারো নজরে না আসে। ছিঃ তারমানে আয়াতের নজরে পরেছে তাই তো আয়াত এমনটা বললো। আজ তো আয়াতের সামনে যেতেও লজ্জা লাগবে। কি একটা লজ্জাজনক ব্যাপার।”
বিছানার পাশের টেবিলে রাখা ব্যাগ গুলোর দিকে নজর পরতেই মেহের ব্যাগ গুলো হাতে নিলো। একটা একটা করে খুলে সবগুলো ড্রেস দেখে নিল মেহের। ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটে ওঠে মেহেরের।
“এই ধরনের ড্রেস তো আমি সবসময় পছন্দ করতাম। আর বিয়ের আগে এমন ড্রেসই তো পরতাম।”
হলুদ রঙের একটা ড্রেস নিয়ে পরে নিল মেহের। সাথে ছোট কানের দুল, হাতে ঘড়ি, চুলগুলো পেছন দিকে ছোট ক্লিপ দিয়ে আটকানো। যার দরুন কয়েক গাছি চুল মুখের সামনে এসে পরেছে৷ ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে তৈরি মেহের৷ নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিজের আগের মেহেরকে খুঁজে পেলো মেহের। আয়নার সামনে থাকতে থাকতেই পেছনে মাহির শব্দ শুনে পেছনে তাকালো মেহের।
“আম্মু আম্মু খুব সুন্দর।”
মাহি যে মেহেরকে দেখতে সুন্দর লাগছে সেটাই বুঝাতে চাইছে৷ সেটা দেখে মেহের মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিচে নেমে আসে। মেহের মাহিকে কোলে নিয়ে নিচে নামার সময় সবার নজর মেহেরের দিকেই নিবদ্ধ। আজ যেনো সবাই তাদের সেই পুরোনো মেহেরকে দেখতে পাচ্ছে। সবাই বসার ঘরেই ছিলো। আয়াত এক নজর মেহেরের দিকে তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে। এই মেহেরের দিকে তাকানোও যেনো এখন নিষিদ্ধ আয়াতের জন্য। নিজেকে আর দূূর্বল করতে চায় না মেহেরের সামনে। মেহেরকে এই রূপে দেখে মেহেরের মায়ের চোখে পানি এসে গেলো। মেহের নিচে এসে খাবার টেবিলে বসে আর দেখে সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে কেউ কিছু বলছে না। মেহের মাহিকে পাশে বসিয়ে নিজে খেতে লাগলো। মেহের খুব বুঝতে পারছে তার হঠাৎ নিজেকে পরিবর্তনে সবাই অনেকটাই অবাক। মেহেরের মা এগিয়ে গিয়ে মাহিকে কোলে তুলে নিলেন।
“মা আমার খাওয়া শেষ। কাসফি তুই স্কুলে যাবি না, চল আমি পৌঁছে দিয়ে আসব তোকে। আর এমন বৃষ্টির দিনে আমাদের কারো না কারো সাথেই যাবি। আর হ্যাঁ অবশ্যই ছাতা নিয়েই বের হবি৷”
“ঠিক আছে আপু। আমি ব্যাগ নিয়ে আসি।”
কাসফি নিজের স্কুল ব্যাগ আনতে নিজের ঘরে চলে যায়। মেহের একবার আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত মাথা নিচু করে বসে আছে। তার দিকে একবার তাকায় নি অবদি৷ কাসফি নিচে এলে মেহের আর কাসফি দুইজনেই বের হয়ে পরে।
চলবে,,,,,
[খুবই দুঃখিত এতদিন অপেক্ষা করানোর জন্য। অনেকেই জানেন আমি অসুস্থ। তার উপর বাসায় গেস্ট ছিলো। তাই গল্প লেখা একদম সম্ভব হচ্ছিলো না। আগামী পর্বগুলো রেগুলার দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আর গল্প পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।]#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১৪
#Writer_Fatema_Khan
আজ আকাশ মেঘে ঢেকে নেই৷ না আছে অন্ধকার মুখ করে৷ সূর্য আকাশে আছে ঠিক কিন্তু তার তেজ এতটাও না। তবে শীতল হাওয়া এখনো বইছে৷ যেকোনো সময়েই আবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে পারে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আয়াত দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মাত্রই ক্লাস শেষ করে দাঁড়িয়েছে সে৷ ক্লাসে কেনো যেনো মন বসাতে পারছে না আয়াত। বারবার কাল রাতের কথা মনে পরছে। না চাইতেও মেহেরের আতংকিত চেহারাটা ভেসে উঠছে তার সামনে। মেহের যে বড়সড় এক ধাক্কা খেয়েছে এই অপরিচিত আয়াতকে দেখে তা আয়াতের অজানা নয়। কারণ মেহেরের চোখ মুকজ দেখেই বুঝতে পারছিল আয়াত মেহেরকে কতটা লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল। যা থেকে মেহের সরে আসতেও পারছিল না। আয়াত নিজেই মেহেরের সেই লজ্জা মিশ্রীত মুখ দেখে মেহেরের ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়৷ আয়াত বারান্দায় দাঁড়িয়েই আনমনে হাসছিল। এমন সময় আয়াতের মোবাইলে একটা কল আসে। আয়াত মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কল রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়৷ ক্লাস শেষেই আয়াত বাসায় চলে যায়৷
বারকয়েক কলিংবেল বাজার পর কাসফি দরজা খুলে দাঁড়ায়। আয়াতকে দেখে একটা হাসি দিয়ে দরজা থেকে সড়ে দাঁড়ায়। আয়াত তার মাথায় একটা টোকা দিয়ে ছাদে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে সোজা নিজের মা বাবার ঘরে চলে যায়। মেহেরের মা কাসফি থেকে জানতে পারে আয়াত এসেছে। তাই খাবার গরম করে আয়াতের জন্য। কিন্তু আয়াত খেতে না আসলে খাবার নিয়ে আয়াতের মায়ের ঘরের দিকে যায়। দরজায় নক করতেই ভেতরে আসার জন্য বলে উঠলো আয়াতের মা। খাবার হাতে নিয়েই হাসি মুখে ভেতরে ঢুকলেন তিনি।
“কিরে বাবা তুই না খেয়ে এখানে বসে আছিস কেনো, এদিকে আমিতো খাবার গরম করে বসে ছিলাম খাবার টেবিলে।”
“আচ্ছা চাচী তুমি আর মা কি সারাদিন সবাইকে খাওনোর জন্যই বাসায় ঘুরাঘুরি করো! যখনই বাসায় আমরা কেউ আসি তোমরা দুইজন তাকে খাওয়ানোর জন্য পাগল হয়ে যাও।”
আয়াতের বাবা অট্টহাসিতে ফেটে পরেন। আয়াতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,
“আয়াত তুই কিন্তু একদম আমার মনের কথা বললি। এরা দুই জা মিলে পারে না আমাদের খাইয়ে খাইয়ে মেরে ফেলে।”
দুই জায়ের মুখে যেনো মুহূর্তেই অমবস্যা নেমে এলো তাদের দুইজনের কথা শুনে। আয়াতের মা রাগী গলায় বলে উঠলো,
“ভাবি কাল থেকে আর এদের জন্য রান্নার দরকার নেই। শুধু আমার আর তোমার জন্যই রান্না হবে। তখন দেখব কোথাথেকে এরা খাবার খায়।”
আয়াত এতক্ষণে নিজের খাবার খাওয়া শুরু করে দিল। আয়াতের বাবা দুষ্ট হাসি হেসে তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে,
“আরে তুমি রাগ করো কেনো, তোমার হাতের খাবার খেয়েই তো তোমার প্রেমে পরেছিলাম। তারপর না আব্বাকে মেনেজ করে তোমার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম।”
আয়াত বাবার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। মেহেরের মা দেবরের কথা শুনে মুচকি হাসলেন। সত্যি তার দেবর আয়াতের মাকে বিয়ে করার জন্য কত কাঠখড় না পুড়িয়ে সবাইকে রাজি করিয়েছে। আয়াতের মা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আয়াতের বাবার দিকে তাকালেন৷ মনে মনে ভাবলেন,
“এই নির্লজ্জ লোক কিনা ছেলের সামনে এভাবে লজ্জা দিল, কোথায় ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভাববে তা না তিনি নিজের প্রেমের কাহিনি শোনাচ্ছেন।”
আয়াত ফ্লোরেই বসে খাচ্ছিলো। খাওয়া শেষ করে মায়ের রাগান্বিত মুখ দেখে খাটের উপরে বসে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“রাগ করে না মা, বাবা তো তোমায় এখনো কত ভালোবাসে দেখেছো।”
“এই না হলে আমার ছেলে, কি করে বাবার মনের কথা সব বুঝে যায় আর তুমি কিনা এত বছর সংসার করেও রাগ হয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকো।”
“আচ্ছা বাবা শোনো না আমরা কিন্তু কাল সকালেই বের হব।”
“কোথায় যাবি?”
প্রশ্ন করলেন মেহেরের মা।
“আরে চাচী জানো আজ কে কল করেছিলো!”
“কে?”
“আমার মামা। গ্রামে থাকে যে উনি। বলেছে গ্রামে যেতে।”
“হঠাৎ! সব ঠিক আছে তো?”
“সব ঠিক আছে। মামার বড় মেয়ে বিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই আমাদের সবাইকে কালকেই যেতে হবে। তাই তোমরা রাতেই সবাই নিজেদের সবকিছু গুছিয়ে নাও।”
“হ্যাঁ ভাবি কতদিন হলো গ্রামে যাই না। এবার কিন্তু আমরা কিছুদিন বাড়িয়ে থাকব। আয়াতের বাবা তুমি আর ভাইয়া কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।”
“আয়াতের মা কবে তোমায় কোনো কিছু করতে বারণ করলাম আমি!”
“ভাবি চলেন বাইরে গিয়ে কি কাজ আছে দেখি। এদের বাপ বেটার কাছে ভালো লাগছে না।”
বিছানায় রাখা এটো প্লেটটা নিয়ে আয়াতের মা বেড়িয়ে গেলেন। সাথে গেলেন মেহেরের মা। আজ তাদের দুইজনকে খুব খুশি খুশি লাগছে। অনেকদিন হয় বাসার বাইরে কোথাও যায় নি তারা। আসলে সংসার জীবনে পা দিলে নিজের শখ আহ্লাদ সবকিছু যেনো মেয়েদের জন্য অমব্যার চাঁদ হয়ে যায়। মন চাইলেও নিজ থেকে কোথাও যেতে পারে না। একটা দায়িত্ব নামক শিকল তাদের পা বেধে রাখে নিজেদের জন্য ভাবার। মেহের আর মেহেরের বাবা একসাথে বাসায় ফিরলে জানতে পারে কাল তারা গ্রামে যাবে। তারা তাদের বড় গাড়ি করেই কাল গ্রামের উদ্দেশ্যে বের হবে বলে জানিয়েছে আয়াত। রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে নিজ নিজ ঘরে চলে গেলো। মাহিকে ঘুম পারিয়ে মেহের নিজের আর মাহির ব্যাগ গুছিয়ে নিল। আয়াতের দেওয়া সবগুলো ড্রেস নিল আর সাথে কয়েকটা শাড়ি। বিয়েতে পরার জন্য শাড়ি অর্নামেন্টস সব গুছিয়ে ঘরের বাইরের দিকে পা বাড়ালো। কাসফির ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো৷ মেহের তার মাকে বলে রেখেছিল কাসফির কাপড় সে নিজেই গুছিয়ে দিবে তাই মা যেনো চিন্তা না করে। কিন্তু কাসফির ঘরে আসতেই যে সে এমন কিছু দেখবে সে ভাবেও নি। কাসফি খাটের পাশে ফ্লোরে বসে আছে মুখ কালো করে। আর তার বিছানার উপর আলমারির সব কাপড় পরে আছে এদিক ওদিক। এসব গুছাতে গুছাতেই তো সকাল হয়ে যাবে। মেহের এগিয়ে গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে এভাবে মুখ কালো করে বসে আছিস কেনো? আর সবকিছু এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেনো রেখেছিস?”
“আপু আমার তো মাথায় আসছে না কোনটা রেখে কোনটা নিয়ে যাব? আমার তো সবগুলো কাপড় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।”
“কিহ! এক আলমারি কাপড় গ্রামে নিয়ে তুই কি করবি?”
“আমার তো সবগুলাই খুব ফেভারিট।”
“বাচ্চা যে তুই বাচ্চাই থেকে গেলি। ক্লাস নাইনে পড়িস এখন তো একটু সিরিয়াস হ।”
“আমি সিরিয়াস হলে তুমি, মা আর চাচী আছে কি করতে তাহলে!”
মেহের আর কথা না বাড়িয়ে কাসফির কাপড় গুছাতে লাগলো। যেগুলো নিবে না সেগুলো গুছিয়ে কাসফির হাতে দিচ্ছে কাসফি সেগুলো আলমারিতে রেখে দিচ্ছে। অনেক গরম পরছে তাই মেহের গায়ের ওড়না খুলে পাশে রেখে কাপড় গুছাতে লাগলো। কাসফি তা খেয়াল করে বললো,
“আপু তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। কতদিন পর তুমি শাড়ি ছেড়ে ড্রেস পরেছো। কবে এই ড্রেসগুলো কিনলে আমাকে তো দেখাও নি বা আগেও দেখিনি তোমার কাছে এই ধরনের ড্রেস। তবে যাই বলো তোমাকে না আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
কাসফির কথায় মেহেরের হাত থেমে যায়। কাল রাতের কথা মনে পরতেই একরাশ রক্তিম আভা এসে ভিড় করে মেহেরের দুই গালে। কাসফির কথাকে উপেক্ষা করে কাসফির হাতে আরও কিছু কাপড় দিয়ে বললো,
“এগুলোও আলমারিতে রেখে দে৷ আর তোর সব কাপড় গুছানো হয়ে গেছে। সব প্রয়োজনীয় জিনিসও আমি রেখে দিয়েছি, তোর আর কিছু আলাদা করে নিতে হবে না।”
“আপু এই ব্যাগের কাপড় গুলাও রাখো।”
কয়েকটা শপিং ব্যাগ এনে মেহেরের হাতে দিয়ে বললো। মেহের ভ্রু কুচকে কাসফির হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো। আর সবগুলো জামাই নতুন৷
“তুই এই নতুন কাপড় কোত্থেকে আনলি, আমার জানামতে এই কাপড় তোকে কেউ কিনে দেয়নি?”
“আপু কাল আয়াত ভাইয়া এনে দিয়েছে৷ ভাইয়া আসার পরেই তো আমার ঘরে এসে দিয়ে গেলো। সুন্দর না! আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে।”
“খুব সুন্দর হয়েছে।”
মেহেরের মুখটা মুহূর্তেই চুপসে গেলো। কাসফির কাপড় গুলো গুছিয়ে বললো,
“ঘুমিয়ে পর। কাল খুব সকালে উঠতে হবে।”
মেহের ভাবলো,
“তারমানে আয়াত একলা আমার জন্য কিছুই আনে নি, কাসফির জন্যও এনেছে।”
থমকে গেলো মেহেরের পা।
“একি ভাবছি আমি! আয়াত আমার জন্য আনলে অবশ্যই সবার জন্য আনবে তাই না। আমি এমন কোনো স্পেশাল মানুষ নই যে আমার জন্যই আনতে হবে। আসলেই কি আমি স্পেশাল কেউ নই?”
চলবে,,,,,,#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১৫
#Writer_Fatema_Khan
সূর্য পূব আকাশে উঁকি দিয়েছে সেই কখন। গ্রামের উদ্দেশ্যে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ফজর নামাজ আদায় করার পর পর হলেও তারা বের হচ্ছে সকাল ৭টার দিকে৷ সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছিল লাসফি৷ তার দিকেই সবার নজর৷ বাকিরা সবাই বসার ঘরে কাসফির জন্য অপেক্ষা করছিল। আয়াত তার দিকে তাকিয়ে দেখল র ভাবল,
“কাসফি খুব করে সেজেছে। একটা টপ্স, সাথে ব্লু প্যান্ট, চুল গুলো একটা পোনিটেল করে বাধা, হাতে ঘড়ি অন্য হাতে ব্রেসলেট, হালকা মেকআপ, ঠোঁটে গাড় রঙের লিপস্টিক। বাহ্! খুব সুন্দর লাগছে তো পিচ্চিকে।”
হাসলো আয়াত পিচ্চিকে এত সাজতে দেখে। পরক্ষণেই আয়াত মেহেরের দিকে তাকালো। “একদম সাদামাটা মেয়েটা। ঠিক আগের মতোই। একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিস পরেছে তবে এটা আমার দেওয়া না। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, অবাধ্য কিছু চুল বারবার চোখ আর কপালের উপর পরে আছে। তবে সেগুলো সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে না মেহের। মুখে অতিরিক্ত কোনো প্রসাধনী নেই না রাঙিয়েছে অধর জোড়া। হাতে চেইনের একটা হাত ঘড়ি, কানে ছোট দুল, গলায় মেহেরের জন্মদিনে দেওয়া চাচার সেই ছোট স্টোনের লকেটসহ চেইন৷ সুন্দর বললে ভুল হবে অমায়িক লাগছে। আচ্ছা এই মেয়েটা সাজে না ঠিক আছে কিন্তু চোখে কাজল দেয় না কেন! মেয়েটা কি বুঝে না কাজল দিলে তাকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগবে। যা আমাকে মুহূর্তের ভেতর ধ্বংস করতে সক্ষম। আমি যে তাকে সেই ভয়ংকর রকমের সুন্দরী রূপে দেখতে চাই। আর এই মেয়েটা হাতে চুড়িও পরে না। অদ্ভুত! অথচ বেশির ভাগ মেয়েরাই রেশমি চুড়ি পরতে খুব পছন্দ করে।”
“আয়াত কোথায় হারিয়ে গেলি! যা গিয়ে গাড়ি বের কর দেরি হচ্ছে আমাদের, এমনিতেও অনেক লেইট করে ফেললাম।”
আয়াতের বাবার কথায় হুশ এলো আয়াতের। তাকিয়ে দেখে সবাই এখনো বসার ঘরেই দাঁড়িয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলছে আর তার গাড়ি বের করার অপেক্ষা করছে। আয়াত কাল বিলম্ব না করে দ্রুত বেরিয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে বাড়ির সামনে এনে হর্ণ বাজালো। তারপর একে একে সবাই বের হয়ে গেলো। আর গাড়িতে উঠতে লাগলো। আয়াত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল সেই সময় মেহের বাসা থেকে বের হয়ে এলো। আয়াতের দিকে এক নজর দেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো। সাদা টি-শার্টের উপর কালো জ্যাকেট সাথে ব্লু জিন্স ভালো দেখাচ্ছিলো আয়াতকে। সবার উঠা শেষ হলে আয়াত গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। বসার পর পরই আয়াতের মুখে আধার নেমে এলো। একদম পেছনের সিটে মেহের, আয়াতের মা বাবা বসেছে। মাঝের সিটে মেহেরের মা বাবা আর তাদের কোলে মাহি। আর সামনে আয়াত ড্রাইভিং সিটে তার সাথেই বসেছে কাসফি৷ আয়াত তার পাশে কাসফিকে একদম আশা করে নি। সে ভেবেছিল মেহের বসবে কিন্তু মুখ ফুটে বলতেও পারবে না কিছু৷
“ভাইয়া আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলতো?”
“একদম কিউট একটা পিচ্চি, কিন্তু এত সাজার কি আছে বল তো আমাকে?”
“না সাজলে এখনকার ছেলে মেয়েরা আনস্মার্ট বলে বুঝলে।”
“কিন্তু আমার কাছে কেন যেন সবসময়ই সাজ বিহীন মেয়েদেরই ভালো লাগে। কোনো অতিরিক্ত প্রসাধনী নেই যা দৃষ্টিতে আসছে সব মন ছুয়ে যাওয়ার মতোই।”
কাসফি যেন চিন্তায় পরে গেলো আয়াতের কথায়। সাজ বিহীন আবার কাউকে সুন্দর দেখায় নাকি! লুকিং গ্লাসের দিকে নজর আয়াতের সে মেহেরের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহের একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ওই রাতের পর তার সাহস হয় না এই ছেলের চোখের দিকে তাকানোর। বড়ই অদ্ভুত সেই চোখ জোড়া, যাকে পড়া মেহেরের সাধ্যের বাইরে। আর দেরি না করে গাড়ি স্টার্ট দেয় আয়াত৷ গাড়ির গ্লাস নিচে নামিয়ে কাসফি বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। তার মনে আজ আনন্দের শেষ নেই। অনেকদিন পর গ্রামে যাবে। ভাবতেই মন নেচে উঠছে৷ ঘন্টাখানেক পর আয়াত একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়ায় আয়াত।
“আমাদের এখানেই সকালের নাস্তা সেড়ে নেওয়া দরকার পরে আবার অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
আয়াতের কথায় সবাই সায় জানায়। সবাই নেমে হোটেলের ভেতর যায়। সবাই হালকা নাস্তা সেড়ে নেয়। মাহি কান্না করছিল, মাহিকে মেহের কোলে তুলে নেয়।
“মা তোমরা থাক আমার খাওয়া শেষ আমি মাহিকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসি। মাহির হয়তো খিদে পেয়েছে।”
“আচ্ছা যা, তুই গিয়ে গাড়িয়ে বসে মাহিকে খাইয়ে দে।”
মেহের মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হোটেলের বাইরে চলে এলো। গাড়িতে উঠে মাহিকে খাইয়ে দিল। মাহি ঘুমিয়ে গেছে৷ বুকের উপর রেখে পিঠে হালকা চাপর দিতে লাগলো মেহের। গাড়ির গ্লাসে হঠাৎ টোকা পরাতে ঘাবড়ে গেলো মেহের। বাইরে আয়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় পরে যায় মেহের। আয়াত গাড়ির দরজা খুলে বলে,
“মাহি ঘুমিয়েছে?”
আজ তিনদিন পর আয়াত মেহেরের সাথে কথা বললো। আয়াত নিজেও ওই রাতের পর থেকে যথেষ্ট দূরে দূরে থাকে মেহেরের থেকে। মেহের আশেপাশে থাকলে নিজেকে যেন ঠিক রাখতে পারে না সে। মেহের আস্তে জবাব দেয়৷
“ঘুমিয়ে গেছে।”
“তাহলে এটা নেও গ্রামে যেতে যেতে দেরি হবে৷ এটা খেলে মাইন্ড ভালো লাগবে।”
আয়াতের এক হাতে এক কাপ লেবু চা আর অন্য হাতে কফি৷ মেহের জানে আয়াত তার জন্য চা এনেছে। কারণ মেহের কফি খায় না। তার অপছন্দের জায়গায় সবচেয়ে উপরে হয়তো কফি। কেমন নাক মুখ কুচকে ফেলে কফি খেতে বললে। মেহের লেবু চা টা নিয়ে নিল আয়াতের হাত থেকে। তারপর তাতে চুমুক দিল। আয়াতও অন্যদিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিল। তাদের মাঝে আর কোনো বাক্য বিনিময় হলো না। তারা দুইজনেই সামনাসামনি আসলে সব কথা হারিয়ে ফেলে খালি তাকিয়ে থাকতেই পারে৷ আয়াতের কফি শেষ হলে মেহেরের দিকে তাকায়।
“শেষ হয়েছে?”
“হুম।”
আয়াত মেহেরের হাত থেকে ওয়ান টাইম কাপটা নিয়ে সামনে থাকা ডাস্টবিনে দুইজনের কাপগুলো ফেলে দেয়। আবার গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। হোটেল থেকে সবাইকে বের হতে দেখলে আয়াত মেহেরের দিকে তাকায়।
“মেহের।”
মেহের অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল আয়াতের ডাকে তার দিকে। প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে মেহের আয়াতের দিকে। মেহেরের তাকানোর ফলে আয়াত যেন হার্ট বিট মিস করলো।
“এভাবে তাকিও না, এই চাহনিতেও মাদকতা আছে।”
তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকালো মেহের। নিজের মনেই আওড়ালো,
“এই লজ্জা দেওয়ার জন্য ডেকেছিল!”
“তোমায় খুব সুন্দর লাগছে আজ, একদম মায়াবতী। আমার কল্পনার মায়াবতী লাগছে।”
সবাই কাছেই এসে পরেছে। তাই আয়াত মেহেরের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়৷ একে একে সবাই আবার নিজের স্থানে বসে পরে৷ মাহি ঘুমের ভেতর বলে মেহের আর তার মায়ের কাছে দেয় নি। নিজের কোলেই রেখেছে৷ গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো গ্রামের পথে। কিছুক্ষণ পর পর আয়াত আয়নায় মেহেরকে দেখছে। মেহেরও আড়চোখে আয়নায় আয়াতকে দেখছে৷ সামনের গ্লাস খোলা থাকার ফলে মেহেরের খোলা চুল গুলো আরও এলোমেলো করে দিচ্ছিলো বাইরের অবাধ্য হাওয়া। মাহি ঘুম থেকে উঠে মেহেরের মায়ের কোলে চলে যায়। সিটে নিজের গা এলিয়ে কখন যে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে মেহের নিজেও জানে না। তার ঘুম ভাঙলো কারো ডাকে।
“মেহের উঠো আমরা পৌঁছে গেছি।”
চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আয়াতকে সামনে দেখতে পায় মেহের৷ পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেছে। মেহের আয়াতকে পাশ কাটিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। আয়াত ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর গাড়ি বাড়ির এক সাইডে রেখে লক করে ভেতরে চলে গেলো৷
চলবে,,,,