#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৬
Zannatul Eva
এই ডায়েরি তোমার কাছে! কোথায় পেয়েছো এটা? আর তুমি সারারাত কোথায় ছিলে? ভেবো না আমি কিছু জানিনা। তুমি সারা রাত বাড়ির বাইরে ছিলে। কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
মাহিরকে প্রশ্ন ছুড়লেন তালেব আহমেদ।
মাহির নিচু স্বরে বলল, সব বলবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার সমস্ত কথা মন দিয়ে শুনতে হবে।
তালেব আহমেদ গম্ভীর স্বরে বললেন, কী কথা?
আমি জানি তুমি এই ডায়েরিটা আমার হাতে দেখে ভীষণ অবাক হচ্ছো। কিন্তু আমি জানিনা তুমি এই ডায়েরিটা কখনও পড়ো নি কেনো। তবে আজ তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া তুমি এই ডায়েরিটা পড়বে। এরপর আমি তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবো। প্লিজ বড় দাদাভাই আমার এই কথাটা রাখো।
একথা বলেই মাহির টেবিলের উপরে ডায়েরিটা রেখে দিয়ে চলে গেল। তালেব আহমেদ প্রচন্ড অবাক হলেন। কেনো মাহির তাকে এই ডায়েরি পড়তে বলছে! কী আছে এই ডায়েরির মধ্যে? সায়েদা এই ডায়েরিটা তাকে উপহার দিয়েছিলো। কিন্তু সায়েদার সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর কখনও এই ডায়েরি খুলে দেখে নি সে। তবে কী এই ডায়েরির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তার অজানা!!
ভাবতে ভাবতেই তালেব আহমেদ ডায়েরিটা খুলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় মকবুল মিয়া এসে বলল, মালিক আপনার একটু পশ্চিমপার যাওন লাগবো। জমিটা লইয়া একটা ঝামেলা লাগছে। চলেন।
মকবুল মিয়া হলো তালেব আহমেদের ডান হাত বাম হাত। মানে তালেব আহমেদের বিশ্বস্ত কাজের লোক। মকবুল সবসময় তালেব আহমেদের সাথে সাথেই থাকে। বাড়ির বাজার করা থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ মকবুল মিয়াকে ছাড়া একদমই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
তালেব আহমেদ তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পরলেন। ডায়েরিটাও টেবিলের উপর পড়ে
রইলো। মাহির একটু পরে তালেব আহমেদের ঘরে এসে দেখলো তিনি নেই। হতাশ হয়ে বলল, রুহি আমার কাছে ফিরে আসুক তা কারোরই সহ্য হচ্ছে না। এখনই মকবুলটাকে আসতে হলো! কেনো যে এমন হচ্ছে!
ইতোমধ্যেই রুহির ফোন এলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে রহি বলল, দাদাভাই ডায়েরিটা পড়েছেন? কী বললেন উনি? বলুন না আমাকে তারাতারি।
মাহির আমতা আমতা করে বলল, ইয়ে মানে দাদাভাই একটা জরুরি কাছে বাইরে গিয়েছে। তুমি চিন্তা করো না। এলেই আমি বলবো ডায়েরিটা পড়তে।
রুহি রাগি স্বরে বলল, কেনো! আপনি পুরো ঘটনাটা খুলে বলতে পারলেন না তাকে!! আপনি বুঝিয়ে বলতেন। তাহলেই তো হতো।
তোমার কী মনে হয় দাদাভাই আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবেন! ভাববেন আমি হয়তো তোমাকে পাওয়ার জন্য ওনাদের মেলানোর চেষ্টা করছি। তার চেয়ে বরং উনি নিজে ঐ ডায়েরিটা পড়ে সবটা জানবে এটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি আমাকে না বলে চলে গেলেন কেনো?
ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে এতো সুন্দর লাগছিলো যে তোমার ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিতে একদম ইচ্ছে করছিলো না। সরি না বলে আসার জন্য।
আপনি কিভাবে দেখলেন আমাকে সুন্দর লাগছিলো না পেতনি লাগছিলো? আপনি তো সোফায় শুয়ে ছিলেন।
মাহির হালকা কেশে বলল, ডায়েরিটা খুঁজতে খুঁজতে বিছানার দিকে গিয়েছিলাম তখন জাস্ট দেখেছিলাম একবার তোমাকে।
আচ্ছা! শুধু দেখছিলেন?
একথা বলেই রুহি মিটমিট করে হাসলো। কারন যখন মাহির বিছানায় তার পাশে গিয়ে বসেছিলো তখন সে শুধু চোখ বন্ধ করে ছিলো। ঘুমোয়নি। তাই মাহিরের উপস্থিতি, তাকে স্পর্শ করা এবং কপালে চুমু দেয়া সবটাই সে অনুভব করেছে।
মাহির ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। মনে মনে বলল, এই রে! রুহি কি তবে বুঝতে পেরেছিলো তখন? বুঝলে বুঝেছে। আমি কি অন্য কাউকে আদর করেছি? আমি তো আমার নিজের বউকেই আদর করেছি। আমি ভয় পাচ্ছি কেনো! অদ্ভুত!!
মাহির জোরালো গলায় বলল, তা নয়তো কী! আমি তো তোমাকে দেখছিলামই।আর…..আর যদি কিছু করেও থাকি তাহলে বেশ করেছি। যদি ভুল কিছু করতাম তাহলে তো তুমি আটকাতেই। তাই না?
রুহি আমতা আমতা করে বলল, সে আমি কী জানি! আমি তো ঘুমিয়েছিলাম। ঘুমন্ত মানুষ কী করে জানবে অন্যরা কী করছে না করছে। কেউ তো আর আমাকে জাগায় নি।
মাহির মৃদু হেসে বলল, ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়। কিন্তু যে জেগে থাকে তাকে জাগানো যায় না।
কী?
কিছু না। রাখছি এখন। তোমাকে পরে আপডেট জানাচ্ছি।
বলেই মাহির ফোন রেখে দিলো। মনে মনে বলল, তার মানে রুহি তখন জেগে ছিল। আর আমি ভেবেছি ও ঘুমিয়ে পরেছে। তবে ও যে আমাকে ভালোবাসে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।
রুহির মনের ভেতরে এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে। খোলা জানালা দিয়ে একটা দমকা হাওয়া ভেসে এলো। এ হাওয়া অবেলায় তার মনে বসন্ত জাগালো। রুহির জীবনে প্রথম বসন্ত হয়ো এসেছিলো সৌরভ। যাকে রুহি ভালোবাসতো। কিন্তু সে তো রুহির ধর্ষনের খবর পেয়ে আর কখনও যোগাযোগ করেনি। রুহিকে একা করে চলে গেছে। কিন্তু যখন জীবন থেকে বসন্তের সব রঙ মুছে গিয়েছিলো ঠিক তখনই মাহির এলো তার জীবনে দ্বিতীয় বসন্ত হয়ে।
__________________
গভীর রাতে তালেব আহমেদ মাহিরের ঘরে এসে দেখলেন, মাহির ঘুমোচ্ছে।
এতো গুলো বছর ধরে সায়েদাকে ভুল বুঝে এসেছি। ওদের পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্কও রাখিনি। তামজিদকেও ওদের সাথে কথা বলতে দেই নি। আমার ভুলের জন্য ছোট ছোট বাচ্চা দুটোকেও কষ্ট পেতে হচ্ছে। তবে এবার আমি আমার সমস্ত ভুল শুধরে নেবো। ওদেরকে আর কষ্ট পেতে দেবো না।
তালেব আহমেদ মাহিরের কাপালে আলতো করে ছুঁয়ে বললেন, ঘুমোচ্ছিস দাদুভাই?
মাহির চোখ মেলে তাকিয়ে দাদাভাইকে দেখে চমকে উঠলো। বলল, কী হয়েছে বড় দাদাভাই? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
আমি একদমই ঠিক আছি দাদুভাই। তুমি কাল আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে?
মাহির অবাক হয়ে বলল, কোথায়?
চলবে……..