ধোয়ার নেশা পর্ব ১৯

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৯)

অন্ত্রীশা পালকের দিকে তাকাতেই ওকে জড়িয়ে ধরেছে পালক। অন্ত্রীশাকে জড়িয়ে নিয়েই বললো,,

“” আমি আমার পত্রীকন্যাকে পেয়ে গেছি,অন্ত্রীশা।””
“” পত্রীকন্যা?””
“” হুম,স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধাই আমার পত্রীকন্যা।””
“” স্নিগ্ধা?””

পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে খুশি খুশি কন্ঠে বললো,,

“” তোমাকে বলেছিলাম না আমার আর পত্রীকন্যার চিঠী আদান-প্রদান করতো বোরকা পড়া একটি মেয়ে? আসলে ও আর কেউ নয় ঐ আমার পত্রীকন্যা!””

পালকের চকচক করে উঠা চোখের দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশার ভিজে উঠে চোখটা নিমিষেই শুকিয়ে গিয়েছে। থমথমে চাহনিতে চেয়ে রয়েছে অন্ত্রীশা। পালকের শুধু চোখ নয়,তার চোখের পাতার পলকে,ঠোটের হাসিতে,কথার ধ্বনিতে,নিশ্বাসের শব্দে মিশে রয়েছে খুশির আমেজ। যার বিপরীতে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার মনের ভেতরের অন্ধকার কুটিরে জমে থাকা না বলা কথা আর তার শরীরের বাহ্যিকে অতি যত্ন আর আদরের মালিশে সাজসজ্জা!

“” অন্ত্রীশা আমার খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা৷ এতো দ্রুত আর হঠাৎ করেই এভাবে আমার পত্রীকন্যা আমার সামনে চলে আসবে,আমি তো ভাবিইনি। আমার তো এখনো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি। তুমি কি আমাকে একটু চিমটি কাটবে,অনতি?””

পালকের মুখে অনতি ডাকটাও আজ অসাধারন খুশি বয়ে বেড়াচ্ছে। এটাতো তার ডাকনাম। আর এই ডাকনামে তাকে তার খুব কাছের মানুষরাই ডাকে। পালকও কি তার কাছের মানুষ? না তো সে তো খুব দুরের মানুষ নাহলে সে কি করে তার বিয়ে করা বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এতোটা খুশি প্রকাশ করতে পারে??

“” কি হলো,চিমটি কাটোনা!””

অনতি নিজের ভাবনাগুলো সাইডে রেখে ঠোটে কৃত্রিম হাসি হেসে বললো,,

“” চিমটি কাটতে হবেনা। আপনি বাস্তবেই বিরাজ করছেন। যে বাস্তবটা আপনার আর আমার সম্পর্কের ইতি টানতে বলছে।””
“” মানে?””
“” কিছুনা। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবার বাড়ছি।””
“” আমিতো খেয়ে এসেছি। পত্রীকন্যা আমায় নিজের হাতের রান্না খায়িয়েছে। আমি তো ওর বাসা থেকেই এসেছি। কি রান্না করেছিলো শুনবে??””

না আমি কিছু শুনবোনা,কিছুনা। অন্য একটা মেয়ের রান্না খেয়ে এসে আমার সামনে গল্প করবেন? তার থেকে তো ভালো হতো যদি আপনি আমার ভেতরের সবকিছু খেয়ে নিয়ে গল্প করতেন তাও আমার এতো কষ্ট হতোনা। আপনার এই বেখেয়ালিপনা আর অন্ধ ভালোবাসার শাস্তি আপনি পাবেন,আল্লাহ না করুক সেটা যেন আমার হাতে না হয়। তাহলে আপনার কপালে কি শনি আছে আমি নিজেও জানিনা।

অন্ত্রীশা মনের কষ্ট মনেই গেথে রাখতে রাখতে নিজের শাড়ীর আচলে হাত দিয়েছে।

“” আরে তুমি আজ শাড়ী পড়েছো যে,কোথাও গিয়েছিলে নাকি?””
“” হুম,ভেবেছিলাম আমিও আপনার পত্রীকন্যার মতো আমার প্রেমিককে তুলে নিয়ে আসবো,কিন্তু আহম্মকটা আবার অন্য কারো গলায় ঝুলছে!””

পালক বেশ গম্ভীর ও চিন্তিত কন্ঠে বললো,,

“” সেকি,তোমার প্রেমিক তো তাহলে সুবিধার ছেলেনা। এমন ছেলের হাতে তুমি কি করে পড়লে? তোমার মতো এতো ভালো একটা মেয়ের কপালে এমন আহম্মক প্রেমিক??””

অন্ত্রীশা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে পালকের দিকে তেড়ে এসেছে। ডানহাতের শাহাদাৎ আঙুলটা উচিয়ে নিয়ে বললো,,

“” খবরদার আমার প্রেমিককে নিয়ে আপনি কিছু বলবেননা। আমার প্রেমিক আহম্মক হোক আর ডাহম্মক হোক তাকে শুধু আমি বলবো।””
“” এতো ভালেবাসা?””
“” হুম!””

দুজন দু জায়গায় শুয়ে পায়চারীর খেলায় মেতে আছে,একজন অপেক্ষাকে নিজের বশে করে তো আরেকজন অপেক্ষার ব্যর্থতায়। দুজনের মনেই এক অজানা অনুভূতিতে ছুয়ে আছে। একজন খুশিতে স্বপ্নের ঠিকানাগুলো সাজানো নিয়ে আরেকজন কষ্টে ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো কুড়িয়ে নেওয়ায়।

পালক হাজারো ভাবনা নিয়ে ঘুমিয়ে পরলেও ঘুম আসেনি অন্ত্রীশার চোখে। তার ভয় হচ্ছে,অভিমান হচ্ছে,রাগ হচ্ছে,কষ্ট হচ্ছে,কান্না পাচ্ছে আবার ভালোবাসাও পাচ্ছে। বার বার ইচ্ছেগুলো তাকে তাড়া দিচ্ছে পালকের কাছে ছুটে গিয়ে বলতে,,আপনি আর কারো হতে পারেননা,আর কোনো ভুলে পা বাড়াতে পারেননা,আপনি শুধু আমার,আপনার স্বপ্নের রাজ্য সাজানোর প্রত্যেকটি ইটের টুকরে আর সিমেন্টের কনায় শুধু আমি মিশে থাকতে চাই! কিন্তু এক চাপা অভিমান অন্ত্রীশাকে ছুটে যেতে দিচ্ছেনা৷ ভালোবাসাটা যখন লিমিট ক্রস করে অতিরিক্তে পা দেয় তখন আর নিজে থেকে কিছু করতে ইচ্ছে করেনা,একটুও জোর খাটাতে ইচ্ছে করেনা। মন তো শুধু চাই প্রিয় মানুষটি নিজে থেকেই সব বুঝে নিক,নিজে থেকে এসে অভিমান ভাঙিয়ে দিক। অন্ত্রীশা ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে। তার অভিমানরা খুব করে চাইছে পালক নিজে থেকে সবটা বুঝোক। কিন্তু পালক কি আদৌ বুঝবে অন্ত্রীশার অভিমানকে???

অন্ত্রীশার ভেতরটা খুব চিৎকার করে কাঁদছে কিন্তু সেই চিৎকারটা সে আর তার আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো শুনার মতো ক্ষমতা আর কারো নেই। আসলেই ক্ষমতা নেই নাকি আগ্রহ নেই বুঝার???

সকালে মিসেস তানিয়া বেগমের চিৎকারে ঘুৃম ভেঙেছে অন্ত্রীশার। সারারাত কেঁদে কেটে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা তার অজানা। কান্নার প্রবলতাটা হয়তো বেশিই পড়েছিলো যার ফলাফল হিসেবে,মাথা ভারী হয়ে কিছুটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে,চোখগুলো ফুলে আছে সাথে গালটাও ভারী হয়ে এসেছে। অন্ত্রীশা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পা বাড়িয়েছে মিসেস তানিয়া বেগমের রুমে!

“” তোর পছন্দটাই সব হয়ে গেলো,পালক? আমার পছন্দের কোনো মূল্য নেই? এভাবে ছুড়ে ফেলে দিতে চাচ্ছিস?””
“” আম্মু,তুমি এভাবে কথা বলছো কেন? আর পছন্দেরই কি আছে? আমি আর অন্ত্রীশা কেউ কারোর কাছে মানিয়ে নিতে পারিনি। একটা সম্পর্ক এভাবে জোর করে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। যে মেয়েটাকে আমি কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবোনা তাকে কেন সম্পর্কের দোহায় দিয়ে বেধে রাখবো? তারও তো একটা শখ আহ্লাদের ব্যাপার আছে,তারও তো হাজারটা স্বপ্ন রয়েছে!””

মিসেস তানিয়া বেগম এতক্ষন বসে থাকলেও এবার আর বসে থাকতে পারলেননা। বিছানা ছেড়ে পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ালেন। চোখে তার রাগ আর তাচ্ছিল্যতা। এমন একটা ভাব যে পালক এমন কথা বলছে উনি তা মেনে নিতে পারছেননা। হাতটাও শক্ত হয়ে এসেছে হয়তো পালকের গালে চড়ও পড়তে পারে।

“” থাপড়িয়ে তোর দ্বিতীয় বিয়ের স্বাদ আমি ছুটিয়ে দিবো। তোর বাপ থাকলে তুই এমন গলা উচিয়ে কথা বলতে পারতি? আজ বাপ নাই বলে নিজেকে খুব বড় ভেবে ফেলেছিস?? আমার সাথে তর্ক করছিস???””

শ্বাশুড়ির মুখে পালকের দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনতেই অন্ত্রীশার মাথা পাক দিয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই শরীরের সব শক্তি কেউ কেড়ে নিয়েছে এমন মনে হলো। নিজের শরীরের ভরটাও যেন নিজে ধরে রাখতে পারছেনা। নিজেকে দাড়িয়ে রাখার জন্য দরজাটা আকড়ে ধরে,চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো।

মা আর ভাইয়ের ঝগড়া দেখছে পাপড়ি। একবার মনে হচ্ছে মায়ের দলে যাবে তো আরেকবার মনে হচ্ছে ভাইয়ের দলে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আম্মুর দিক ভাবতে গেলেও আম্মুর কথাও ঠিক আছে,ঘরে বউ থাকতে আবার কিসের বিয়ে?? এটাতো ঘোর অন্যায়! আবার ভাইয়ের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে ভাইয়ের দিক থেকেও সে ঠিক আছে,কেননা সেতো জানে ভালেবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার মধ্যে কত সুখ! সুখটা নাহয় সে বুঝতে পারেনি কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে না পাওয়ায় কতটা কষ্ট এটা ঐদিন আতিশের ব্যবহারেই বুঝে গেছে। আর বোন হয়ে কি করে চাইবে তার ভাইটাও এমন কষ্টে ভুগোক??? তাই সে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকাটাকে গ্রহনযোগ্য মনে করেছে।

পালক এবার মিসেস তানিয়া বেগমের হাতদুটো নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। মেঝের দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে বললো,,

“” আমি পত্রীকন্যাকে ছাড়া বাচবোনা,আম্মু! ও বলেছে কাল ওকে বিয়ে না করলে ও আমার থেকে আবার হারিয়ে যাবে। এতো বছর ধরে ওকে খুজতে খুজতে আমি ক্লান্ত! এবার পেয়েও যদি আবার হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি বেচে থেকেও যে মরে যাবো! ও যে আমার প্রাণ আর প্রাণ ছাড়া শরীরটাকে আমি কি করে বয়ে বেড়াবো?””

ছেলের অসহায়ত্ব আর কষ্টে সব মায়ের মনই গলে যায়। মিসেস তানিয়া বেগমেরও তাই হয়েছে। কিছুক্ষন আগেও যে পালককে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতো পারতো এখন সে শক্ত কন্ঠে দুটো কথাও বলতে পারছেনা। কন্ঠ নরম হয়ে এসেছে,,,

“” তাই বলে তুই অন্ত্রীশার কথা ভাববিনা? তোর ভালোবাসাকে গ্রহন করতে গিয়ে ওকে বর্জন করবি? এখানে ওর কি দোষ?””

পালক মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,,

“” উনার দ্বিতীয় বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই,আম্মা। উনার মতো আমিও পরিবারের চাপেই কাগজে সই করেছিলাম। সামান্য একটা কাগজের সই কখনোই একটা সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনা। তার জন্য অসীম ভালোবাসার প্রয়োজন। আর সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও উনার মতো আমার ও একজন আছে,যাকে আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি!””

অন্ত্রীশার কথাতে পুরো রুমে নিরবতায় ছেয়ে আছে। সবার চোখজোরা অন্ত্রীশার উপর। সবাই অপ্রস্তুত হয়ে আছে। কেউই যেন এমন একটা উক্তি আশা করেনি তাও অন্ত্রীশার কাছ থেকে। সবাইকে বিস্মিত করে অন্ত্রীশা পেছন ঘুরে হাটা শুরু করে দিয়েছে। তার যে আর কিছু বলার শক্তিতুটু নেই। ওখানে থাকা মানে আরো নানা প্রশ্নে সম্মুখীন হওয়া। এখন সে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাইনা, তার যে কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা। মনটা খুব করে জানতে চাইছে,কেন এমনটা হচ্ছে????

অন্ত্রীশা রুমে পা ফেলতেই পেছন থেকে ধরফরিয়ে পালকও ভেতরে ঢুকেছে। উৎকন্ঠে বললো,,

“” সত্যি তোমার আপত্তি নেই অনতি?””

অন্ত্রীশার ক্লান্ত চোখ আবার গিয়ে ঠেকেছে পালকের চোখে। সেই আগের মতোই চকচক করছে,এবারেরটা কি একটু বেশিই চকচক করছে??

ঐ চোখের চকচকটা তাকে জ্বালিয়ে নাশ করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের এক ইঞ্চি গ্যাপ রেখে একটা করে ফোস্কা পড়ছে। না এক ইঞ্চি নয় আধা ইঞ্চি! অন্ত্রিশা পালকের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারছেনা। বিছানা গুছাতে গুছাতে বললো,,

“” ওমা! আপত্তি কেন থাকবে?? আপত্তি থাকার মতো তেমন কিছু কি ঘটেছে আমাদের মাঝে?””
“” কিছু হয়নি ঠিক আছে,কিন্তু তারপরেও তুমি এতো সহজে মেনে নিবে ভাবতে পারিনি। মনে হচ্ছে অন্য কোনো কারন!””
“” প্রেমিক কারন!””
“” প্রেমিক কারন?””
“” হুম,কাল রাতে স্বপ্নে এসেছিলো। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইলো। আর আমিও মাফ করে দিলাম।””

পালক বিছানায় ধপাস করে বসে পড়েছে,অন্ত্রীশাকে হেল্প করার বাহানায় ওর হাত থেকে কাথাটা নিয়ে নিজে ভাজ করতে করতে বললো,,

“” স্বপ্নে জড়িয়ে ধরতেই সব মাফ?””
“” হুম!””
“” এতো বড় অন্যায় এতো ছোট জিনিসে মাফ?””
“” কেন আপনি চান তাকে আরো কঠিনভাবে মাফ করতে?””

পালক কাথাটা বালিশের উপরে রেখে বললো,,

“” অবশ্যই,তোমার উনাকে কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি দেওয়া উচিত।””
“” সিউর?””
“” ১০০%””
“” ওকে। তাহলে সত্যি সত্যি যখন আমার কাছে মাফ চাইতে আসবে তখন কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি দিবো।””

অন্ত্রীশা ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকতে নিলেই পালক আবার বললো,,

“” স্বপ্নে এসেছিলো বলে সত্যি সত্যিই আসবে?””

অন্ত্রীশা পেছন ঘুরে চোখের পাতা ফেলে হ্যা বোঝাতেই পালক বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে। চোখে বিস্ময় নিয়ে বললো,,

“” তোমার স্বপ্নের এতো পাওয়ার?””
“” না,আমার ভালোবাসার পাওয়ার!””

স্বপ্ন পুরনের ধারটায় চলে এসেও যখন তা অপুর্নই থেকে যায় তখন বুকের একদম ভেতরে না ভেতরেরও ভেতর থেকে ছোট্ট একটা ব্যর্থতার নিশ্বাস বেড়িয়ে আসে। পেছনে ফেলে আসা হাজারও কষ্টগুলো তখন এতোটাই চেপে ধরে যে তার ঐ ব্যর্থটার নিশ্বাসটা ফেলতেও শক্তিটুকু থাকেনা। অন্ত্রীশারও আজ প্রত্যেকটা নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে নিশ্বাসগুলো বন্ধ করে একটা ছোট বাক্সে জমা করে রাখতে।

“” অন্ত্রীশা?””

অন্ত্রীশা বেলকনিতে দাড়িয়েই চাঁদের দিকে মুখ করে ছিলো। কিন্তু সে চাঁদ দেখছিলোনা। তার চোখ বন্ধ করে চাঁদকে অনুভব করার চেষ্টা করছিলো। হঠাৎ পালকের ডাকে চোখ মেলেছে,,,

“” ওখানে দাড়িয়ে কি করছো? এদিকে এসো,আমি পত্রীকন্যার জন্য কি কি কিনেছি দেখে যাও।””

পালকের হাতভর্তি শপিংব্যাগগুলোর উপর ও আজ অন্ত্রীশার রাগ হচ্ছে।

অন্ত্রীশার সামনে লাল বেনারশী মেলতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,,

“” লাল বেনারশী যে?””
“” হুম,বিয়েতে তো লাল বেনারশীই পড়ে।””
“” তাই? তাহলে আমাকে মিস্টি কালার বেনারশী কেন দিয়েছিলেন?””
“” ওটাতো অনিকশার ইচ্ছে ছিলো। ওকে দেখানোর জন্যই দিয়েছিলাম।””

অন্ত্রীশা শুকনো হাসি দিয়ে বললো,,

“” আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন,মিস্টি কালার আপনার পত্রীকন্যারও পছন্দ!””

পালক হাত থেকে বেনারশী ফেলে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” তাইতো! এটাতো আমার মাথায়ই ছিলোনা। এখন কি হবে? এতোরাতে তো মার্কেট খোলাও পাবোনা। ধুর! কালকে আবার মার্কেটে যেতে হবে।!!””

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পালক অন্ত্রীশার বিছানায় একটি কাগজ দেখতে পেলো। কাগজটি সেই মিস্টি কালার বেনারশীতে রাখা যেটা অন্ত্রীশা বিয়ের দিন পড়েছিলো। পালক সোফা থেকে উঠে চিঠীটা হাতে নিয়ে পড়ছে,,,,

***মাঝরাতে আমার প্রেমিক স্বপ্নে এসেছিলো। সে বলেছে আমি যদি এখনি আমার প্রাক্তন স্বামীকে রেখে বাসায় না ফিরি তাহলে নাকি সে আমার কাছে সত্যি সত্যি ক্ষমা চাইতে আসবেনা। এখন আপনিই বলুন সে যদি ক্ষমা চাইতে না আসে তাহলে আমি কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তিটা কিভাবে দিবো? তাই চট করে সব গুছিয়ে চলে যাচ্ছি!

আপনার বিয়েতে তো আমি কিছু দিতে পারলামনা। তাই আপনার পত্রীকন্যার পছন্দের রঙের বেনারশীটা দিয়ে গেলাম। ভুলেও তাকে বলবেননা যে এটা পুর্বে ভুল জায়গায় ব্যহার হয়েছে তাহলে কিন্তু ও পড়বেনা।

যাইহোক,আপনার বিয়ের শুভকামনা রইলো।

ইতি

অন্ত্রীশা

হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ঘরোয়াভাবেই বিয়ের কার্যসম্পাদন হচ্ছে। সাক্ষী হিসেবে পালকের ফ্রেন্ড কাদির আর আতিশের আসার কথা ছিলো। কিন্তু আতিশ অফিসের দোহায় দিয়ে আসতে পারেনি তাই স্নিগ্ধা তার এক ভাইকে নিয়ে এসেছে। কাজী একটু পরই চলে আসবে।

মিসেস তানিয়া বেগম আর পাপড়িও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।যতই হোক এ বাড়ির ছেলের বিয়ে,হোক না তা দ্বিতীয় বিয়ে,কিন্তু বিয়েতো!

“” এইটা কোনো বেনারশী হলো পালক? এমন ভুটকানো কালারে আমাকে কেমন বিদঘুটে লাগছে। তোমার মাথায় এটা আসলো কিভাবে?? তুমি কখনো দেখেছো মিস্টি কালারের বেনারশী পড়ে বিয়ে করতে??””

স্নিগ্ধা শাড়ীটা এমনভাবে ছুয়ে দেখছে যেন এতে মাছের আশটে লেগে আছে,ভালো করে হাত দিলেই হাতে লেগে গন্ধ বের হবে!

“” এতো রাগ করছো কেন,পত্রীকন্যা? এটাতো তোমার ফেবারিট কালার,তাই সারপ্রাইজ দিলাম!””
“” ফেবারিট? এইটা আমার ফেবারিট কালার? কে বলেছে তোমাকে?””
“” কেন,তুমিই তো চিঠিতে আমাকে জানিয়েছিলে,ভুলে গেলে?””

পালকের কথাই স্নিগ্ধা আমতা আমতা করে বললো,,

“” ওটাতো তখন ছিলো,এখন আমার এটা ভালো লাগেনা।””

পালক স্নিগ্ধার হাত ধরতে গিয়েও থেমে গিয়ে আদুরী কন্ঠে বললো,,

“” রাগ করেনা। আচ্ছা এর পর থেকে এমন ভুল আর কখনো হবেনা৷ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও?””

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বললো,,

“” কাজী কখন আসবে? উফ! কখন যে এই শাড়ীটা চেন্জ করবো, কেমন পচা মাছের গন্ধ আসছে শরীর থেকে!””

সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে কাদির কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে। কাজী তার মতো কাজ শেষ করে স্নিগ্ধার দিকে কলম এগিয়ে দিলেন সাইন করার জন্য। স্নিগ্ধা ঝটপট সাইন করে দিতেই পালকের দিকে পেপার আর কলম এগিয়ে ধরলেন কাজী।পালক রেজিস্ট্রী পেপারটা নিজের দিকে নিতেই চোখ পড়েছে স্নিগ্ধা সিথি নামটার উপর। মিস্টি একটা হাসি নিয়ে নিজেও সাইন করার জন্য কলমটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরেছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here