নষ্ট গলি পর্ব ১১

#নষ্ট_গলি
পর্ব-১১
লেখা-মিম
অাজকাল বড্ড ব্যস্ত সময় কাটে মায়ার। দুই টিচারের কাছে পড়া। সপ্তাহে একদিন ক্লাস। প্রতিদিন রান্না শিখা। সংসারী হওয়ার তোড়জোড় চেষ্টা। সোহানের বাসায় কাটানো সময়গুলোতে ওর পিছনে লেগে থাকা। সময়গুলো সুন্দর যাচ্ছে। সোহান মায়ার জন্য অনেকটা টনিকের মতো। মন ভালো হওয়ার টনিক। অতীত ভুলে থাকার টনিক। সুখে থাকার টনিক। কিভাবে স্টাইল করতে হয়, রেস্টুরেন্টে বসে কিভাবে খেতে হয়, পার্টিতে লোকের সাথে কিভাবে মিশতে হয় সব এই তিনমাসে মায়াকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে সোহান। সংসারের খুটিনাটি কাজগুলো সোহানের কাছ থেকেই শিখছে মায়া। বিশেষ করে রান্নাটা। অফিস থেকে ফিরে হাতে ধরে মায়াকে রান্না শিখায় সোহান। সংসার…. মায়ার সংসার। নিজের সবটুকু দিয়ে সংসারটাকে ঢেলে সাজায় মায়া। অবসরে ঘরের দেয়ালগুলো হাতড়ে বেড়ায় সে। ভালো লাগে এভাবে হাতড়াতে। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় দেয়ালগুলোকে অাষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে। এটা ওর নিজের সংসার। সংসারটা ছিলো ওর জীবনের সবচেয়ে বড় অনাকাঙ্খিত পাওয়া। অার সোহান হচ্ছে মায়ার নজরে ফেরেশতা। তিনমাসে অবশ্য সাতদিন গালি খেয়েছে সোহানের কাছ থেকে। তাও যে সে গালি না, চূড়ান্ত পর্যায়ের বিশ্রি গালি। একেবারে কান পঁচে যাওয়ার মতো। কিন্তু মায়ার কান পঁচেনি। অাসলে গালিগুলো সে কানেই তুলেনি। যে মানুষের এতগুলো ভালো দিক অাছে তার এই একটা খারাপ দিক তো অাড়াল করা যেতেই পারে। গালি দেয়ার ঘন্টা দুয়েক পরই মায়ার জন্য কিছু না কিছু রান্না করে সামনে এনে দাঁড়িয়ে থাকে সোহান। কিন্তু তার মুখে সরি কথাটা একবারও উচ্চারন হয় না। সোহানের ভাষ্যমতে এত ফর্মালিটি তার অসহ্য লাগে। সংসারে এসব সরি টরির ফর্মালিটি না দেখানোটাই ভালো বলে মনে করে সোহান। মাঝে মাঝে সোহানের চাহনিতে মায়া টের পায় সে তাকে ভালোবাসে। অাবার কখনো তার মনে হয় সোহান ওকে ভালোবাসে না। বড্ড দ্বিধায় ভুগে মায়া। ইচ্ছে হয় সোহানকে জিজ্ঞেস করতে অাপনি কি অামাকে ভালোবাসেন? সাহস হয়না জিজ্ঞেস করার। প্রত্যেকটা ব্যাপারেরই সীমাবদ্ধতা থাকে। মায়ারও সীমাবদ্ধতা অাছে। যত যাই হোক সে একজন পতিতা এ কথা ভুললে তো অার চলবে না। সোহান যা করছে সেটাই তো অনেক। এরচেয়ে বেশি অাশা করাটা হবে দিবাস্বপ্ন দেখা। এসবভেবে কখনো মায়ার মনখারাপ হয়। অাবার কখনো নিজের মনকে নিজেই বুঝায় ।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অাঁধার নেমে অাসছে বাইরে। অাশেপাশের বাসাগুলোতে এক এক করে লাইট জ্বলছে। নিজের রুমেও লাইট জ্বালালো মায়া। হাত মুখ ধুয়ে অায়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল অাঁচড়াচ্ছে ও। সোহান অাসার সময় হয়েছে। পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুলটা অাটকে নিলো মায়া। সোহান ঘরে ফিরেই মায়ার পাঞ্চক্লিপটা খুলে চুলগুলো এলোমেলো করবে। এটা তার প্রতিদিনকার অভ্যাস। কলিংবেল বাজছে। দরজা খুলে দেখে সোহান দাঁড়িয়ে। ভীষন ক্লান্ত দেখাচ্ছে সোহানকে। ঘরে ঢুকেই সোফায় গা এলিয়ে দিলো সোহান। ওর পা থেকে জুতো জোড়া খুলে নিচ্ছে মায়া।
-” জঘন্য একটা দিন ছিলো। কুত্তার মতো খাটতে খাটতে জীবন শেষ। মাথা ঝিমঝিম করছে।”
মায়া কোনো কথা বলছে না। সোহানের গায়ের শার্টটা খুলে দিলো। সোহান চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে সোফায় বসে অাছে। দশ মিনিট পর হাতে গরম তেলের বাটি নিয়ে অাসলো মায়া। তার পিছন পিছন রতন এলো এক বোল কুসুম গরম পানি সহ। সোহানের পায়ের কাছে বোলটা রাখলো রতন। সোহান বোলে পা ডুবিয়ে বসে অাছে। অার মায়া সোহানের মাথায় গরম তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
দশ মিনিট পর সোহান বললো,
-” তয়লা অার ট্রাউজার বের করো গিয়ে অামি গোসল করবো।”
সোহানের ওয়াশরুমে তয়লা অার ট্রাউজার রেখে অাসলো মায়া। চুলায় দুধ বসিয়েছে সে।মায়া জানে সোহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই এক মগ স্ট্রং কফি চাইবে।
মায়ার রুমে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে সোহান। এক হাতে মগ ধরে রেখেছে। অন্য হাতে মায়ার চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে।
-” তোমাকে একটা ব্যাপারে জানানো হয়নি। তুমি নেক্সট মান্থ থেকে বিজনেস শুরু করছো। পরশু থেকে অামার এক পরিচিত ভাই অাছে উনি তোমাকে ঐ ব্যবসায়ের অাটঘাট বুঝাবেন।”
-” অামি? বিজনেস? ”
-” হ্যা তুমি। তোমাকে যদিও জানানো উচিত ছিলো। কিন্তু তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার রাইট অামি মনে করি অামার অাছে। তাই তোমাকে জানানোটা প্রয়োজন মনে করিনি। অামি তোমার ভালো চাই সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই তোমার কোনো সন্দেহ নেই?”
-” সন্দেহ নেই। কিন্তু কিসের বিজনেস?”
-” লেডিস শপ। মেয়ে মানুষের সমস্ত কিছু ওখানে তুমি সেল করবে। অাসলে সেল তুমি করবে না। অাটজন মেয়েকে কাজে রেখেছি। ওরা সেল করবে। অার তুমি হচ্ছো ওদের বস। দোকান নিয়ে নিয়েছি। ডেকোরেশনের কাজ চলছে। বাহির থেকে সব প্রোডাক্ট অানাচ্ছি। অর্ধেক প্রোডাক্ট এসেছে। বাকিগুলো অন দ্য ওয়ে। এখানে তোমার জন্য সবচেয়ে খুশির সংবাদ কোনটা তুমি জানো? ঐ অাটটা মেয়ে তোমার মতই পতিতা ছিলো। ঐ নষ্ট গলি থেকে ওদের তুলে এনেছি। এর মধ্যে দুটা মেয়ে প্রেগনেন্ট। ওরা অন্য এলাকার। অার তোমার পাড়া থেকে এনেছি তিনজনকে। অার বাকি তিনটাকে এনেছি ঢাকার বাহিরের পতিতালয় থেকে।”
মায়ারবিস্ময় অাকাশের চূড়ায় উঠে যাচ্ছে। অাবারো একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। যা সে কখনোই কল্পনা করতে পারেনি। শুধুও কেনো? সেই অাটটা মেয়েও কখনো কল্পনা করতে পারেনি এমন কিছু ঘটতে পারে। অাটটা জীবন, না না পেটের বাচ্চাগুলো সহ দশটা জীবন এখন ভালো দিন দেখতে পাবে। এতবড় বিস্ময়ের ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না মায়া। দুচোখ উপচে পানি ঝড়ছে। সোহানের গলা জড়িয়ে কাঁদছে মায়া। সোহানের গেন্জির ডানদিকের কাঁধের জায়গাটা ভিজে যাচ্ছে মায়ার চোখের পানিতে। সোহান মায়াকে কান্না থামাতে বলছে না। সে জানে এটা খুশির কান্না। তাই মায়াকে কাঁদতে দিচ্ছে সে। মায়ার পিঠে -চুলে অালতো করে হাত বুলাচ্ছে সোহান। সেই সাথে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি লেগে অাছে তার।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here