না চাইলেও তুই আমার পর্ব ২১+২২

#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২১
সূর্যোদয়! ভোর বলতে বোঝায় দিনের একটি অংশবিশেষ যখন সূর্য উঠতে শুরু করে। ভোর বেলায় সূর্যের উদয়ের সময়ে পরিবেশে মৃদু সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এসময় সূর্য দিগন্তের নিচে অবস্থান করে। ভোড় এবং সূর্যোদয় এক ব্যাপার নয়। সূর্যোদয় হল যখন সূর্যের একাংশ দিগন্তের উপরে চলে আসে এবং তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ভোরবেলা সূর্য দেখা না গেলেও সূর্যের অবস্থান কোনদিকে – তা বোঝা যায়। মিহান ফোন কানে নিয়ে কারো নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি শুনছে আর নিজের কেবিনের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোরের আকাশে সূর্যোদয় দেখছে। মিহানের আজ একটা কবিতা খুব মনে পড়ছে।

রাত শেষে আসবে ভোর,
নতুন বার্তা নিয়ে।
নতুন ভোরের দীপ্তি মাখে,
স্বপ্ন নাও গুছিয়ে।
দিতে হবে পাড়ি তোমায়,
ক্ষীণ বন্ধুর পথ।
সাহস নিয়ে চলতে হবে,
স্থির করো মত।
পদে পদে আসবে বাঁধা
পথে বারংবার,
তারি মাঝে কাটবে তোমার
সহস্র আঁধার।
“পারবে তুমি “সেই প্রত্যাশায়
মনের দুয়ার খোল,
লক্ষ্যে পৌছে জয়ধ্বনির
‌ মালা গলায় তোল।

—- নতুন ভোর
—- মোঃ রিমন আহমেদ

এইসব ভেবে মিহান আনমনে হেসে ফেলে। কাল রাতে এমার্জেন্সি পড়ে যাওয়ার কারণে মিহানকে রাত বারোটার সময় হসপিটালে আসতে হয়। কাল রাত থেকে মিহান হসপিটালে।

————————————–

ঘুমে বিভোর মিরা! ঘুমের মধ্যেও ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। কিন্তু হাসি টা মুখে বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকলো না। পর্দা ফাঁক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ মিরার মুখে পড়ছে। মিরা বিরক্ত হয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে রোদ আটকানোর চেষ্টা করছে। আর ঘুমিয়ে থাকতে না পেরে আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে পরে। সময় কত হলো দেখতে মিরা ফোন হাতে নিয়ে হতবাক হয়ে যায়। হবে না কেনো? অপরিচিত নাম্বারের ফোন রিসিভ করা। রিসিভের টাইম দেখে মিরা আবারো হতবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায়। চার ঘণ্টা বেশি সময় ধরে ফোন রিসিভ করা। চার ঘণ্টা? কমতো সময় না। রাত দুটোর সময়ের কথা। ওতো রাতে কে ওকে ফোন ই বা দিবে? মিরা ধীরে ফোন টা কানের কাছে নিয়ে ছোট করে বলে,

—-” হ্যালো।”

ওপাশ থেকে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিরা এবার একটু গলা পরিষ্কার করে বলে,

—” হ্যালো কে? শুনতে পাচ্ছেন?”

—” শোনার জন্য তো রাত দুটোর সময় ফোন দিয়েছিলাম।”

পুরুষ কন্ঠ! কে হতে পারে? মিরা চুপ হয়ে ভাবতে থাকে।

—” কী হলো চুপ হয়ে গেলে যে?”

মিরা শান্ত গলায় বলে,

—” কে আপনি?”

—” মনে করে দেখো কে আমি? তোমার মনের গহীনে লুকিয়ে আছি আমি!”

মিরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাতের কাছে থাকা টেডিটা জড়িয়ে ধরে বলে,

—” ভীতুরাম!”

মিহান শব্দ করে হেসে বলে,

—” এই না হলে মনের মিল।”

মিরা হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে বলে,

—” ওতো রাতে ফোন দিয়েছিলি কেনো? আর এতক্ষন ফোন রিসিভ করে ছিলিই বা কেনো?”

মিহান খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” কাল রাতে এমার্জেন্সি পড়ে গেছিলো। কাল সারারাত হসপিটালে ছিলাম ইভেন এখনো আছি। পেশেন্ট দেখে কেবিনে এসে তোমার কথা মনে পড়ছিলো তাই ফোন দিয়েছিলাম আর তুমি কী না কী বলে ফোন না কেটে ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে বিরহের মধ্যে রেখে।”

মিহানের কথা শুনে মিরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ওর মনে করার চেষ্টা করে কাল রাতের কথা, রাতে মিহানের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো মনে নেই ওর মাঝে রাতে একটা ফোন এসেছিলো। মিরা রিসিভ করে শুধু এইটুকু বলেছিলো” পরে কথা বলবো গুড নাইট” এরপর আর কিছু মনে নেই মিরার। সব মনে পড়লে মিরা নিজের মাথায় নিজে একটা থাপ্পড় দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

—” গাঁধী একটা।”

মিরা চোখ বন্ধ করে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

—” তো তুই সারারাত ফোন রিসিভ করে বসে ছিলি কেনো? কাটলেই তো পারতি।”

মিহান নিজের কেবিনে এসে নিজের চেয়ারে বসে বলে,

—” ভালো লাগছিলো তাই কাটিনি।”

মিরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে,

—” সারারাত ফোন কানের কাছে নিয়ে বসে ছিলো?”

—” উহু।”

—” তাহলে?”

—” দুই তিন বার পেশেন্ট দেখতে যেতে হয়েছে তখন ফোন হোল্ড করে গেছি। তাছাড়া সারারাত তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেছি।”

মিহানের কথা শুনে মিরার ঠোঁটে‌ আপনাআপনি হাসির রেখা ফুটে উঠে। নিজেকে সামলে বলে,

—” ওহ। আর কিছু বলবি?”

মিহান মিরার কথা শুনে চুপ থাকে। মিরা কী কথা বলার কথা বলছে ভাবতে থাকে। ভেবে নিজের ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,

—” তাকিয়ে দেখো পুব আকাশে সুর্য মামা হাসে। সোনার শিশির লেগে আছে স্নিগ্ধ ঘাসে ঘাসে। দরজা খোল সকাল হলো ফুরিয়ে গেছে রাত। তোমার দুয়ারে দাড়িয়ে আছি জানাতে তোমায় সুপ্রভাত।”

মিরা হালকা হাসে মিহান তার মনের কথা বুঝতে পেরেছে ভেবে।

—” গুড মর্নিং। তা সকাল সকাল কবি কবি ভাব কেনো?”

মিহান নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,

—” কী করবো বলো? সকালের প্রকৃতি আমাকে কবি বানিয়ে দেয়।”

মিহানের কথা শুনে মিরা মুচকি হাসে। মিহান তা উপলব্ধি করে বলে,

—” অনেক হয়েছে হাসাহাসি এবার ফ্রেশ হয়ে নেও। শুনো আমি চেয়েছিলাম তোমাকে নিজে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেবো। কিন্তু কী করবো কাজের চাপ পড়ছে। তুমি কিন্তু চিন্তা করো না আমি নিজে গিয়ে তোমাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসবো। তুমি এখন নীলার সাথে চলে যায়।”

মিরা আসতে করে বলে,

—” ঠিক আছে।”

—” আচ্ছা আমি রাখি পেশেন্ট দেখতে যেতে হবে।”

—” হুম।”

মিহান ফোন রেখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

—” I Love Yo Mira. I Love You So Much Mira Janpakhi. দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি জানপাখি।”

————————————–

মিরা একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে রিসাব। হাতে একটা গোলাপ ফুল। কিছুক্ষণ আগে মিরা, নীলা,প্রেম আর প্রিয়া ভার্সিটিতে ঢুকতে না ঢুকতেই রিসাব এসে মিরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মিরাকে প্রপোজ করে বসে। মিরা বিরক্তির চোখে‌ রিসাবের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” দেখো আমি এখানে কোনো ঝামেলা চাই না। সুতরাং তুমি এখন আসতে পারো।”

প্রিয়ারা মিরার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। লন্ডন হলে মিরা এতক্ষনে এই ছেলের হাত পা ভেঙ্গে দিতো। আর এখানে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে। আশেপাশে ছোট খাটো একটা ভীর হয়ে গেছে ওদের ঘিরে। নীলার ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে এখানে। রিসাব আবার মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

—” মিরা আমি তোমাকে প্রথম দেখে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো এর আগে আমি অনেক মেয়ের সাথে টাইম পাস করছি। কিন্তু কাল তোমাকে দেখে আমার ভিতরে যে ফিলিং এসেছে এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। সারারাত শুধু তোমার কথা ভেবেছি। আমি তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হতে বলছি না। তোমাকে আমি আমার বউ বানাবো।”

মাঝখানে দিয়ে নীলা বলে উঠে,

—” রিসাব সব জিনিস নিয়ে মজা ভালো নয়। তুই জানিস ও কে? ও খান বাড়ির মেয়ে। নিলয় খানের একমাত্র মেয়ে। মামা জানতে পারলে কিন্তু তোর অবস্থা খারাপ করে দেবে।”

রিসাব দাঁড়িয়ে বলে,

—” নীলা আমি এবার মজা করছি না। সত্যি বলছি। সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি মিরাকে।”

মিরা রেগে গিয়ে বলে,

—” ভালো কথা বলছি কানে যায় না। ঝামেলা করতে চাই না বলে না হলে দেখিয়ে দিতাম আমাকে প্রপোজ করার ফল।”

মিরা রেগে ওখান থেকে চলে যায়। মিরার পিছন পিছন নীলারা চলে আসে। মিরা গাছের নিচে বসে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। একে একে সবাই এসে মিরার পাশে বসে। প্রেম আর প্রিয়া মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা নিজেকে শান্ত করে নীলাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” আপু তোমরা ক্লাসে চলে যাও। এদিকে কোনো সমস্যা হলে আমি সামলে নেবো।”

—” আচ্ছা। তোরা তো প্রিন্সিপালের রুমে যাবি তাই না?”

—” হ্যা। ওদের জন্য যেতে হবে।”

—” আচ্ছা সাবধানে থাকবি। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করিস।”

নীলারা চলে গেলে প্রেম মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

—” আজ তুই ওকে মারলি না কেনো?”

মিরা কিঞ্চিত কপাল ভাঁজ করে বলে,

—” আজ সকালে থেকে মন টা ভালো আছে তাই। আচ্ছা চল প্রিন্সিপালের রুমে।”

—” চল।”

মিরা ওদের নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে।
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২২
মিরার পাপা তার কেবিনে বসে আছে। খুব চিন্তিত কোনো কারণে। সামনে থাকা ফাইল টা বারবার দেখছে। এরমধ্যে ম্যানেজার এসে হাজির হয় তার‌ কেবিনে। ফাইল টা রেখে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” কাল বিকেলে লন্ডন যাবার ফ্লাইটের দুটো টিকিট কেটে ফেলুন।”

ম্যানেজার মাথা নিচু করে বলে,

—” ঠিক আছে স্যার।”

—” শুনুন আমি এখানে না থাকাকালীন মিরা মানে আমার মেয়ে অফিস সামলে নিয়ে। আপনাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি এবার আসুন।”

ম্যানেজার মাথা নেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। মিরার পাপা ফোন হাতে নিয়ে মিরার মাম্মার নাম্বার কল করে। মিরার মাম্মা ফোন রিসিভ করে বলে,

—” হ্যা, নিলয় বলো।”

—” কী করছো এখন?”

—” কিছু না রুমে বসে আছি।”

—” আচ্ছা, শোনো তোমার আর আমার জামা কাপড় প্যাক করে নেও। লন্ডনের অফিসে ঝামেলা হয়েছে। আমাকে যেতে হবে।”

—” মিরা যাবে না আমাদের সাথে?”

—” না মিরা যাবে না। ও এখানে থাক।”

নিতু উত্তেজিত হয়ে বলে,

—” আমি ওকে ছাড়া থাকবো কী করে?”

—” শান্ত হও তুমি। আগে আমার কথা শোনো। মিহানকে তো আমি তিন মাস সময় দিয়েছি। এখন যদি মিরাকে আমরা সাথে করে লন্ডন নিয়ে যাই তাহলে কীভাবে হবে। বোঝার চেষ্টা করো। মিরা যদি মিহানকে মেনে নেয় তাহলে আমরাও এদেশে একবারে থেকে যাবো।”

মিরার মাম্মা মন খারাপ করে বলে,

—” ঠিক আছে। আমি জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি।”

—” আচ্ছা, এখন রাখি একটা মিটিং আছে এখন।”

—” হুম।”

মিরার পাপা ফোন কেটে আবার ফাইল দেখতে শুরু করে।

————————————–

মিহানের মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে ওর পাপার বিজনেস জয়েন্ট করতে। ঠিক মত পরিবারের লোকজনকে সময় দেওয়া যায় না। যেকোনো মুহূর্তে এমার্জেন্সি পড়ে যায়। কিন্তু কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করে এই পেশার মধ্যে। এসব কিছু নিয়ে ভাবতে ভাবতে মিহান নিজের কেবিন থেকে বের হয়। এরমধ্যে মিহানের ফোন বেজে উঠলে মিহান না দেখে ফোন রিসিভ করে বলে,

—” হ্যালো কে?”

—” তোর শালা।”

মিহান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নামটা দেখে খানিকটা হেসে বলে,

—” আমার বউ মিরা। আমার জানা মতে মিরার আর কোনো ভাই বোন নেই। কিছু কাজিন আছে অবশ্য।”

—” মজা করছি আমার সাথে? থাক ওসব কথা, এখন বল কোথায় আছিস তুই?”

মিহান ভ্রু কুঁচকে বলে,

—” কেনো কী হয়েছে?”

—” মুনতাহা আমার সাথে রাগ করে কাল বাবার বাড়ি চলে গেছে।”

মিহান এবার শব্দ করে হেসে বলে,

—” আবার কী করছিস তুই মুনতাহা সাথে?”

—” কিছু করিনি।”

—” সত্যি করে বল।”

—” কিছুদিন যাবৎ মুনতাহা কে ঠিক মত সময় দিতে পারিনি কাজের চাপে। কাল বিকেলে ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা ছিলো কিন্তু কাজের চাপে সেটাও ভুলে গেছি। তাই রাগ করে চলে গেছে।”

মিরা হেসে বলে,

—” এখন কী করবি?”

—” তুই একটা বুদ্ধি দে না ভাই।”

—” আচ্ছা, শোন মুনতাহা যেসব কিছু পছন্দ করে যেমন ফুসকা, চকলেট এইসব কিনে সাথে কিছু ওর পছন্দের ফুল ওর কাছে যাবি। ওগুলো ওর হাতে দিয়ে যতক্ষন না তোকে মাফ করবে ওর সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবি।”

—” ভাই ও তো এখন ভার্সিটিতে।”

—” তাহলে আর কী চলে যা ওখানে।”

—” ওখানে তো ওর ফ্রেন্ডরা থাকবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই?”

—” আছে।”

—” কী উপায়?”

মিহান এতক্ষন হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির পাশে চলে এসেছে। দরজা খুলে গাড়িতে বসে বলে,

—” দেবদাস হয়ে যা।”

—” কী দেবদাস? আমার ওতো সুন্দর বউ থাকতে কী দেবদাস? কখনো না। আচ্ছা, তুই যা বললি এতে কাজ হবে তো?”

—” তোর কী মনে হয়? আমি কখনো তোকে ভুল পরামর্শ দিয়েছি?”

—” ঠিক তা না ভাই। এবার ও খুব রেগে আছে। তাই ভয় করছে।”

মিহান হেসে বলে,

—” আরে বেটা স্বাধীন কিছু হবে না যা। আমি আছি তো না কী?”

—” আচ্ছা ভাই তাহলে আমি এখনি যাই ওর কাছে।”

—” তুইও তোর বউয়ের কাছে যা আমিও আমার বউয়ের কাছে যাই।”

মিহান হেসে ফোন কেটে দেয়। মিহানের খুব কাছের বন্ধু স্বাধীন চৌধুরি। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তার স্ত্রী সিদরাতুল মুনতাহা খান। অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। ওদের বিয়ে পারিবারিক ভাবে দেখে শুনে হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ের পর ভালোবাসার কমতি রাখেনি দুজনে। যতই ঝগড়া করুক না কেনো দুজনে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। এসব ভেবে আনমনে হেসে ফেলে মিহান।

————————————–

মিরারা ক্লাস শেষ করে মাঠ এক কোণে এসে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। প্রেম আর প্রিয়া মিরার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা এখনো ওদের কাছে আসেনি। মিরা বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। প্রিয়া বুঝতে পেরে বলে,

—” কী হলো? কী দেখছিস ওদিকে?”

মিরা গেটের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” ভীতুরামের আসার কথা কিন্তু এখনো আসছে না কেনো তাই ভাবছি।”

প্রেম ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” ভাইয়া মনে হয় কাজে আটকে পড়েছে। এসে পড়বে চিন্তা করিস না।”

মিরা গেটের থেকে চোখ সরিয়ে বলে,

—” হুম।”

ওদের কথার মাঝে রিসাব এসে আবার মিরাকে প্রপোজ করে। রিসাবের দলের ছেলেমেয়েরা ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মিরা একে তো মিহানের জন্য চিন্তা করছে তার উপরে রিসাব নামের উটকো ঝামেলা। মিরা এবার আর কন্ট্রোল করতে না পেরে রিসাবকে মারতে শুরু করে। প্রেম আর প্রিয়া বসে বসে মজা দেখছে। ভার্সিটির অনেকে মিরার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

মুখে রুমাল বাঁধতে বাঁধতে ভার্সিটিতে গেট দিয়ে ঢুকছে মিহান। একটু সামনে এগলে ভীর চোখে পড়ে মিহানের। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা ছেলেকে মিহান জিজ্ঞাসা করে,

—” আচ্ছা, ভাইয়া ঐ জায়গায় এতো ভীর কেনো?

—” আর বলবেন না ভাইয়া। একটা ছেলে সকাল থেকে মেয়েটাকে বিরক্ত করছে। মেয়েটা প্রথমে ভদ্র ভাবে বুঝালেও ছেলেটা বুঝে না। তাই মেয়ে রেগে উত্তম মধ্যম দিচ্ছে। যাই ভাইয়া আমার একটু তাড়া আছে আজ।”

—” আচ্ছা।”

মিহান ভীরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

—” এটা আবার মিরা নয়তো?”

মিহান আর না দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে ভীরের দিকে যায়। ভীর ঠেলে সামনে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায় মিহান। মিরার মার খেয়ে ছেলেটা মাটিতে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে আর মিরা ছেলেটাকে একের পর লাথি মেরে যাচ্ছে। মিহান দৌড়ে গিয়ে মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

—” মিরা, জানপাখি আমার কী করছো? মোরে যাবে তো! এমন করছো কেনো?”

মিরা মিহানের পিঠে কিল ঘুষি দিতে দিতে রেগে বলে,

—” ভীতুরাম ছাড় আমাকে। ওর কত বড় সাহস আমি দেখতে চাই। সকালে প্রপোজ করেছে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন আবার…. ভীতুরাম ছাড় তুই আমাকে।”

মিহান মিরাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

—” তুমি শান্ত হও জানপাখি। আমি দেখছি। তুমি শান্ত হও।”

মিহানের কথায় মিরা কিছুটা শান্ত হয়। চোখ বন্ধ করে মিহানের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে।

চলবে….💙
চলবে….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here