#নিরু❤
পর্ব-১৩
writer- #shanta_islam
আশা- যে প্রেম সর্গ থেকে নেমে এসেছে,,
সে প্রেম আমাকে দিও,,
যেনে নিও,,
দুলাভাই তুমি আমার প্রানের চেয়েও প্রিয়,,ও দুলাভাই
তুমি আমার প্রানের চেয়েও প্রিয়।
দুলাভাইও দেখি আশার সাথে তাল মিলায়।
দুলাভাই- নিশ্বাস আমার তুমি জানে ও শালিকা,,
শালিকা আমার শালিকা
নাওযুবিল্লাহ যেই দুলাভাইকে বিয়ের দিন লজ্জার ঠেলায় একবারো মুখ থেকে রুমাল সরাতে দেখিনি সেই দুলাভাই আজ গানের সাথে নাচও দিচ্ছে। আশা আর দুলাভাইয়ের নাটকিয় নাচ গান বেশ কিছুক্ষণ চললো। দেখতে কিন্তু ভালোই লাগছিলো। কিন্তু আমার কেমন জানি একটু সান্দেহ লাগছিলো,,আশা যে এসব করছে তার পিছনে নিশ্চই কোনো কারণ আছে। অবশেষে আমাদের আশা মহারানী আসল কথায় আসে। জুতা লুকানোর দাবিকৃত বাকি দশ হাজার টাকা দুলাভাইকে আজ পরিশোধ করতে হবে। আশার এই কথা শুনে আমাদের দুলাভাইয়ের নাচের সাথে গানও বন্ধ হয়ে গেলো। দুলাভাইয়ের সাথে থাকা কিছু চাংগু মাংগু রীতিমতো ক্ষেপে উঠেছে। উনার ফ্রেন্ড আর কাজিন হবে মনে হয়। যা দেওয়ার তা বিয়ের দিনই দেওয়া হয়েছে আজ আর কোনো কিছু দেওয়া হবে না। স্পষ্ট জানিয়ে দিলো দুলাভাইয়ের জাংগুমাংগুরা। আমাদের আশারানী এই কথা শুনে রেগে ফায়ার,,,আশা জাবাবে বললো,,দুলাভাই দশটা না পাচটা না বিশ বিশটা শালিকা আপনার (কাজিনরা মিলিয়ে)আমরা দাবী করবো নাতো কে করবে। আজকের জামানায় শুধু দশ হাজার টাকায় কিছু হয় বলেন,,,বিয়ের দিন বিশ হাজার টাকা দাবী করলাম প্রথমে দিলেন পাচশ টাকা তাও আবার জাল নোট। তারপর অনেক জোরাজুরি করে শুধু দশ হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেন। এখন আরো দশ হাজার দিয়ে দাবীটা পুরন করুন। আমি জানি আমাদের দুলাভাই অনেক ভালো। আমাদের খুব ভালোবাসে,,,মানা করবে না তাই না দুলাভাই।
আশার কথা শুনে পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,,,
-কিসের টাকা? কোনো টাকা দেওয়া হবে না। আমার ভাই বিয়ের দিন একটা জুতা পরে এসেছে। দুইটা জুতা দিলেও ভাবা যেতো বাকী দশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা।
কথা বার্তায় বুঝতে পারলাম উনি আমাদের দুলাভাইয়ের ভাই মানে আমাদের বেয়াই।
আশা- এই যে বেয়াই সাহেব বেশি ফটরফটর করবেন না। দোষটা আপনাদেরই। আপনারা যদি অর্ধেক টাকা না দিতেন তাহলে অর্ধেক জুতো দেওয়া হতো না। অর্ধেক টাকা দিয়েছেন তাই অর্ধেক জুতো পেয়েছেন। যদি পুরো টাকা দিতেন তাহলে পুরো জুতোই পেতেন।
দুলাভাইয়ের ভাই- সেম টু ইউ বেয়াইন সাহেব। অর্ধেক জুতো দিয়েছেন তাই আমরাও অর্ধেক টাকা দিয়েছি।
আশা- দেখেন বেয়াই আমার সাথে আইন ছাড়া কথা বলতে আসবেন না।
দুলাভাইয়ের ভাই- আইন ছাড়া সম্পর্ককেই তো বেয়াইন বলে। আপনার সাথে আইন ছাড়া কথা বলবো না তো কার সাথে বলবো বেয়াইন। কথাটা বলেই ছেলেটা আশাকে একটা চোখ টিপ মারে। দেখে মনে হচ্ছে আশা আর ছেলেটা সেম এজের। এক বছরের পার্থক্যও হতে পারে। দুই পার্টির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ তর্ক বিতর্ক হচ্ছে।
আল্লাহ এই জগ্রার মধ্যে আমি নাই। তাছাড়াও খেয়াল করলাম কিছু ছেলে বার বার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। সত্যি বলতে এখন আমারো কেনো জানি মনে হচ্ছে আজ এতো সাজ দেওয়াটা উচিত হয়নি। জগ্রা পার্টির থেকে একট দূরে সরে আসলাম। শাড়ির কুচিটা লুস লুস লাগচ্ছে মনে হচ্ছে ঠিক না করলে কিছুক্ষণ পর এমনি এমনিই খুলে পড়ে যাবে। তাই ভাবিকে জিজ্ঞেস করে লেডিস ওয়াসরুমের দিকে যেতে লাগলাম,,,ওয়াসরুমে কেও নেই,,যতদূর জানতাম অনুষ্ঠানে মহিলা মন্ডলিদের ভির সব সময় এখানেই বেশি থাকে। কিছুক্ষণ পর পর কেও না কেও মেকাপ ঠিক করতে আসতো। আজ তেমনটা দেখতে পারছি না,,,অবশ্য থাকবেও বা কেনো স্টেজে টাকা নিয়ে যেই জগ্রা লেগেছে সবাই ভির করে জগ্রা দেখে বিনোদন নিচ্ছে। বাঙ্গালি মানুষ কিছু পারুক আর না পারুন দাড়িয়ে দাড়িয়ে জগ্রা দেখতে এক্সপার্ট। যতই তাড়া থাকুক না কেনো তারা দাঁড়িয়ে অন্তত ক্ষনিকের জন্য হলেও জগ্রা দেখবে। আমার জন্য ভালোই হয়েছে শান্তি পূর্ণভাবে আমি আমার কাজ করতে পারবো। শাড়ির কুচির সাইডের সিপটিপিন সব খুলে একে একে সবগুলো কুচি ঠিক করছি উফ ভাবি হলে ভালো হতো। একা একা পারছি না। হঠাৎ ওয়াসরুমের গেট লাগিয়ে দেওয়া শব্দ পেলাম,,পিছু ফিরে দেখি আবির ভাই। যেই দুই তিনটা কুচি হাতে নিয়েছিলাম আচমকা আবির ভাইকে দেখে সাথে সাথে হাত থেকে ওগুলোও পড়ে গেলো। একবার আবির ভাইয়ের দিকে তাকাই আরেকবার আয়না দিয়ে নিজের দিকে তাকাই। আস্তাগফিরুলা পেটে কাপড় নেই। আমার সব কিছু দেখে ফেলেছে,, আমি শেষ। এমন খোলা মেলা অবস্থায় আমি যে নিজেকে ডাকবো তারও কোনো সুযোগ নেই। আবির ভাইকে দেখে এমন সর্ট খেয়েছি প্রায় তিরিশ সেকেন্ডে মতো মূর্তি হয়ে ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুখটা মাত্র খুলেছি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবির ভাই আমাকে ওই অবস্থায় দেয়ালের সাথে জাপটে ধরে। যেই পরিমান হার্টবিট ওঠা নামা করছে আজই মনে হয় হার্ট এট্যাকে মারা যাবো। আবির ভাইয়ের চোখে তীব্র রাগ দেখতে পাচ্ছি। রাগে চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে। রাগে ফসফস করতে করতে বললো,,,
– যেই ড্রেসটা দেওয়া হয়েছিলো সেটা পরিসনি কেনো? চিরকুটে লিখা ছিলো বেশি সাজবি না। তবুও এতো সেজেছিস কেনো?
উনার এমন রাগী ভয়ংকর চেহারা দেখে ভয়ে আমি কেদেই দিলাম,,আমি কেনো,,, আমার জায়গায় অন্য কেও হলেও মনে হয় ঠিক একি কাজ করতো। আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছি,,আমার কান্না দেখে আবির ভাই মূহুর্তের মধ্যেই শান্ত হয়ে গেলো। উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হ। কে শুনে কার কথা আমি আরো জোরে জোরে কান্না করতে থাকি। আরো বেশি কান্না করতে দেখে আবির ভাই জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো,,
– কান্না করছিস কেনো?
আমি তবুও কান্না করেই যাচ্ছি। আবির ভাই আমার শাড়িটা ধরে আস্তে আস্তে কুচি বুনে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো,,
আবির- নে এবার কুচি গুজে নে।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছি।
আবির- তুই গুজবি নাকি আমি নিজেই গুজে দিবো।
এই কথা শুনার সাথে সাথে আমি আর এক মূহুর্তও দেরি না করে উনার হাত থেকে থাবা মেরে কুচি নিয়ে নেই। কান্না করছি আর কুচি গুজছি। আবির ভাই নিচের কুচিগুলো সোজা করে দিয়ে এক সাইডে একটা পিন মেরে দেয়। উনাকে যতই দেখি ততই অবাক হই। উনি আমার কাছে কি চায়? আবির ভাই আমার দুগালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,
-নেক্সট টাইম যদি আমার কোনো কথার খেলাপ করিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।
কথাটা বলেই আবির ভাই দরজায় ঘুসি মেরে বের হয়ে যায়। না এখানে আমি আর থাকবই না। বাসায় চলে যাবো। এসব অশান্তি আর ভালো লাগে না। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখি এক দল মহিলা পার্টি বাইরে ভির করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ইয়া আল্লাহ আমি শেষ এখনি তো আবির ভাই বের হলো সবাই কি মনে করছে। লেডিস ওয়াসরুম থেকে একটা ছেলে বের হলে স্বাভাবিক এটাই হওয়ার কথা। ভাগিস আমার ফ্যামিলির কেও নেই। নাহলে আজ আস্তো থাকতাম না। তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে আসলাম। অনুষ্ঠানে যেয়ে দেখি মারপিট থেমে গেছে। সবাই গোল হয়ে বসে গান বাজনা করছে। আমার কিছু কাজিনরা আবির ভাইয়ের হাতে গিটার দিয়ে গান বলার জন্য জোরাজুরি করছে। আমার এখানে থাকতে আর মন চাইছে না। উনার সামনে যতোক্ষণ থাকবো ততোক্ষণ কিছু না কিছু একটা অঘটন ঘটবে।
নিরু- ভাবি আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। মা খোজ করলে মাকে বলে দিও,,,
ভাবি- সেকি নিরু,,এতো তাড়াতাড়ি যাবে কেনো? এখনো তো প্রোগ্রাম শেষ হয়নি।
নিরু- ভাবি আমার ভালো লাগলে না আমি চললাম,,
কথাটা বলেই আমি হাটা শুরু করলাম। হঠাৎ পিছু থেকে কারো সুর শুনে পা দুটো আটকে গেলো,,
আবির ভাই গিটার বাজিয়ে গান শুরু করেছে,,,
-তুমি না ডাকলে আসবো না,,
কাছে না এসে ভালোবাসবো না,,,
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায় নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়,,,
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল গল্পটা পুরোনো,,,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,,,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,,,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,,,
আবির ভাই শেষের লাইন দুটো আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো,,,উনার চোখ দুটোয় চোখ রাখতে পারছি না। ওই চোখ দুটোয় যে অনেক কিছু ছিলো। যা বলে প্রকাশ করা যায় না। ওই চোখ দুটোয় অনেক না বলা কথা লুকিয়ে ছিলো। ওই চোখ দুটোর মাঝে শুধু আমাকে খুজে পাচ্ছিলাম। উনার গাওয়া প্রতিটি লাইনে আমি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। উনার হৃদয়ের কথাগুলো ওই চোখ দুটো দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছিলো। ইস এখন যে নিজেকে আটকানোটা মুশকিল হয়ে পরেছে। মন বলছে এখনি দৌড়ে যেয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বলি,,ভালোবেসে ফেলেছি আবির ভাই আপনাকে বঢো ভালোবেসে ফেলেছি।
#নিরু❤
পর্ব-১৪
writer- #shanta_islam
এভাবে আর কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলে হয়তো আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। তাই সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। অনুষ্ঠান শেষ ওবদি নিখোজের মতো ছিলাম। বলতে গেলে লুকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে আশা আমাকে খুজে বের করলো কে জানে। এসেই বললো নিরু আপু টাকা আদায় করেছি। আমার সামনে টাকাগুলো তুলে ধরে নাচছে আর বার বার টাকাগুলো শুঙ্গে গান কারছে,,,
-টাকা আমার টাকা ওগো টাকায় ভুবন ভরা,,,
টাকায় নয়ন ধোওয়া আমার টাকায় হৃদয় হরা,,
এই মেয়েটা আসলেই,,একে নিয়ে আর পারা যায় না। ঘুমের মধ্যেও সে টাকার স্বপ্ন দেখে। যেহেতু টাকা পেয়েছে এখন মেডামের পা মাটিতে পরবে না।
আশা- কি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। টাকা পাবি না।
আমি মরি আমার জ্বালায় আর এই মেয়ে আছে নিজের ফুরতিতে,,,
নিরু- তোর মতো আমি এতো লোভী না। যা এখান থেকে,,,,আমি একা থাকতে চাই।
আশা- এহহহ ডং দেখো না মেয়ের,,,আমারও শখ নেই তোর মতো আবালের রানীর সাথে যেচে কথা বলার। আম্মা তোকে ডাকছে সবাই রওনা দেওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। জলদি আয়।
নিরু- তুই যা আমি আসছি।
সিদ্ধান্ত নিলাম আবির ভাই যেই গারিতে আছে সে গাড়িতে যাবো না। উনার সামনে যতো থাকি ততো দূর্বল হয়ে পরি। তাই যতটুকু সম্ভব উনার থেকে দূরে থাকবো। বাইরে বের হয়ে দেখি দিপা আপু চাচিকে জড়িয়ে কান্না করছে। ব্যাপারটা খটকা লাগছে,,,বিয়ের সময়ও দিপা আপু এতো কান্না করেনি যতটা কান্না এখন করছে। ব্যাপারটা ভালো করে বুঝার চেস্টা করলাম। দিপা আপুর পাশে আশা দাঁড়িয়ে আছে। দিপা আপু কান্না করছে ঠিকি কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর আশার দিকে তাকাচ্ছে। কৌতুহল বসত ব্যাপারটা জানার জন্য সামনে গেলাম। কিছুক্ষণ কান্না করার পর দিপা আপু বলে উঠলো আশা হয়েছে তো আর কতো কান্না করবো মেকাপ নস্ট হয়ে যাচ্ছে তো। দিপা আপুর কথা শুনে উপস্থিত সবাই হো হো করে অট্রোহাসিতে মেতে উঠে। বিষয়টা এবার ক্লিয়ার হলো। সব আশার শিখানো কারসুজি। এ মেয়ে জীবনো সুধরাবার পাত্র নয়। মানুষকে কীভাবে হেনস্তা করবে তা ভালো করে যানে। আশাকে একটা ধমক দিলাম,,ধমক খেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে উঠলো। অয়ন ভাইয়া আর দাদি সহ অর্ধেক পার্টি চলে গেছে। তাদের সাথে আবির ভাইও চলে গেছে মনে হয় কোথাও দেখতে পারছি না। এখন মাত্র একটা গাড়ি আছে। সবাই গাড়িতে উঠেছে। আমি সবার শেষে আসায় দিপা আপুর সাথে ভালো করে কথা বলতে পারিনি। দিপা আপুর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আপুর সাথে কথা বলছি হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলা শুরু করলো। আমি আর দিপা আপু পিছন থেকে চিৎকার করে গাড়ি থামানোর চেস্টা করলাম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না।
দিপা আপু- এটা নির্ঘাত আশার কাজ দেখিস। ধমক দিয়েছিস না তাই কুটনিটা এমন করেছে।
নিরু- ওকে তো আমি পরে দেখে নিবো। বাসা এখান থেকে বেশি দূরে না রিক্সা ধরে একাই যেতে পারবো।
দিপা- না একা যাওয়া লাগবে না। আরে আবির তুই এখনো যাসনি।
দিপা আপুর কথা শুনে পিছু তাকিয়ে দেখি আবির ভাই। উনাকে দেখেই দিপা আপুকে চলি বলে হাটা শুরু করলাম। দিপা আপু দৌড়ে আমার হাত ধরে ফেলে।
দিপা আপু- সেকি তুই একা যাবি কেনো? আবির এদিকে আয় তো।
নিরু- আপু ছারো না আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
দিপা আপু- হোক দেরি। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক,,,
আবির ভাই সামনে আসে,,
আপু- কিরে তুই এখনো যাসনি।
আবির- আমার এখানে একটু কাজ ছিলো তাই দেরি হয়েছে। তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
আবির ভাই আর দিপা আপু একই বয়সের তাই দুজন দুজনকে তুই তুই করে ডাকে।
আপু- আর বলিস না,, ভালোই হয়েছে তুই এখনো যাসনি। নিরুও এখানে রয়ে গেছে,,একটা কাজ কর তোরা দুজন এক সাথে রওনা দে।
নিরু- আহ দিপা আপু আমি একাই,,,,,কথাটা পুরো বলার আগেই আবির ভাই বলে উঠলো,,,
– ওর মতো আবালের রানীকে আমি নিয়ে যাবো না। তোর বোনকে নিয়ে গেলে কে জানে কখন ঘাড়ে জ্বীন চেপে বসে।
কতো বড় সাহস আমাকে আবালের রানী বলে। উনার প্রতিটা কথায় এতো রাগ উঠছিলো,, মনে হচ্ছিলো উনার মাথার চুল গুলো ছিরে ফেললে হয়তো একটু শান্তি পেতাম। রাগে গা টা জ্বলে যাচ্ছে।
দিপা- যা না ভাই একটু কস্ট করে নিয়ে যা। ও তো এমনিতেও একটু বোকা টাইপের। তাই একা একা পাঠাতেও পারছি না,,,
নিরু- আপু একটু বেশি বেশি বলে ফেলছো। আমি একাই যেতে পারবো। আর হ্যাঁ আমি আবালের রানী না। কথাটা বলেই মুখে ভেঙছি কেটে সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম।
রাগ হচ্ছে প্রচন্ড কিন্তু রাগের থেকেও কস্টটা বেশি হচ্ছে। কাকে ভালোবাসছি আমি যে আমাকেই বুঝে না। সে আমাকে বুঝবে ও বা কি করে। আজ পর্যন্ত তো আমি নিজেই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারলাম না উনি আমার কাছ থেকে চায় টা কি। মূহুর্তের মধ্যে উনার একেক রং দেখি। কখনো কাছে টেনে নেয় আবার কখনো অবহেলার পাত্র বানিয়ে দেয়। উনি আদো আমাকে ভালোবাসে কি না সেটা পর্যন্ত জানি না। না না এটা হয়তো ভালোবাসা না। হয়তো আমার আবেগ,,,হয়তো আমার ভুল,,হয়তো আমার কল্পনা। কথাগুলো ভাবছি আর রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছি। রাস্তাটা ফাকা গাড়ি পাওয়াটা মুসকিল হবে মনে হচ্ছে। আরেকটু সামনে এগোলে হয়তো গাড়ি পাবো। ভাবতে ভাবতে হাটছি। হঠাৎ কেও আমার হাতটা ধরে ফেললো।
নিরু- হাত ছাড়ুন,,,অনেকটা রাগ নিয়ে কথাটা বললাম।
আবির- বাপ রে এতো রাগ।
নিরু- হাত ছারতে বলেছি ছাড়ুন।
আবির- তোর বোন আমাকে তোকে ভালো করে বাসায় পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে।
নিরু- কে বলেছে দায়িত্ব নিতে। আমি একাই যেতে পারবো। কথাটা বলেই জটকা মেরে আবির ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে হাটা শুরু করলাম।
দুপা এগোতেই হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলে আবির ভাই আমাকে জাপটে ধরে। আচমকা পরে যাওয়ার ভয়ে আমি উনার কলার শক্ত করে খামচে ধরি। উনার চোখের সাথে চোখ পড়ে গেছে। দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কেওই কারো কাছ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। উনার বলা কথাগুলো মনে পরতেই এক রাশ অভীমান নিয়ে উনাকে ছেরে চলে যেতে নিলাম,,আবির ভাই আমার কোমড় ধরে হেচকা টান মেরে উনার বুকের সাথে আমাকে আকড়ে ধরে। উনার হাতের ছোয়ায় আমি বার বার কেপে উঠছি। আবির ভাই আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,,,
আবির- এতো তাড়া কিসের তোর,,
নিরু- ছারুন আমাকে,,,
আবির- আর যদি না ছারি!
নিরু আবিরের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো। সুধু চোখ দিয়ে অভীমানের দুফোঁটা অশ্রু গরিয়ে পরলো। আবির নিরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
– আচ্ছা যা আজ থেকে আর তোকে আবালের রানী ডাকবো না। রানী ভিক্টোরিয়া বলে ডাকবো।
আবিরের কথা শুনে নিরু গাল দুটো ফুলিয়ে নেয়। আবির মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো চলেন রানী ভিক্টোরিয়া ভাগ্য ভালো থাকলে সামনে যদি কোনো গাড়ি পাই,,,
হাটতে হাটতে হঠাৎ একটা গাড়ি পেলাম। গাড়িতে উঠতে আমার ভালো লাগে না। রিক্সাই বেটার ছিলো কিন্তু যেহেতু রিক্সা পাচ্ছি না তাই গাড়িতেই উঠতে হলো। আবির ভাই আমার পাশে বসে ফোন টিপছে। আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ আবির ভাই গাড়ি থামাতে বললো,,,
___ কি হলো গাড়ি থামাতে বললেন কেনো, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই অপেক্ষা করছে৷
___ এএএ উনি মহারানী ভিক্টোরিয়া হয়ে গেছে। সবাই উনার জন্য বরণ ডালা নিয়ে বসে আছে।
___ এটা কেমন কথা আমি কখন বলেছি যে সবাই আমার জন্য বরণ ডালা নিয়ে বসে আছে।
___ শোন বেশি প্যাট প্যাট করবি না। আমি যা বলি তা কর। গাড়ি থেকে নাম।
এসব শুনে খুব জিদ লাগছিল মনে চাচ্ছিল উনার মাথার উপর এক গ্লাস পানি মারি। না না এক গ্লাসে হবে না পুরো এক বালতি পানি উনার মাথায় মারতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাটাঁ শুরু করলাম। যে এটুকু পথ হেঁটেই যাব উনার সাথে থাকলে তেরাতেরা কথা শুনতে হবে এত কটু কথা শোনে কে। শাড়ীর আচলে টান পড়তে বুঝলাম হয়েছে কি! ঘুরে দেখি আবির ভাই আচলের মাথা ধরে রেখেছে। ” একা একা কোথায় যাচ্ছিস?
নিরু- বাড়িতে,,,
-বাড়িতে যাওয়ার তর সইছে না তাই না! ওই পলাশ নাকি টলাশ কে জানি আছে তার জন্য মন খালি আকুপাকু করছে তাই না”
নিরু- আপনি কিন্তু একটু বেশি করছেন।
আবির ভাই একটা রিক্সা থামিয়ে উঠতে বললো। উনি কিভাবে জানলো আমার রিক্সায় উঠতে মন চাইছে।
আবির- কিরে রিক্সায় উঠবি নাকি এখানেই ফেলে রেখে চলে যাবো। আমি এক লাফে রিক্সায় উঠে পরলাম। এখানে আর কোনো রিক্সাও দেখতে পারছি না। দুজনের মধ্যে মোটামুটি ভালোই গেপ রেখে বসেছিলাম। আবির ভাই আমার কোমরে হাত রেখে আমাকে উনার সাথে বসায়। উনার শীতল হাতের স্পর্শ কোমড়ে পাওয়ার সাথে সাথে আমি চমকে উঠে উনার দিকে তাকাই। উনি কোমরে হাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কাপাকাপা কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
– আ,,,আ,,আবির ভাই প্লিজ,,,
উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। একটু পরেই শুরু হলো ধাক্কা খাওয়া। আঁকাবাকা রাস্তা রিক্সা বেসামাল হয়ে পরে। ভাগ্যিস আবির ভাই ধরে বসেছিলো নাহলে আজ বিল্ডিং থেকে না পরে রিক্সা থেকে পরেই মারা যেতাম। আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হওয়ার সাথে সাথেই আবির ভাই আমার কোমড় ছেরে দেয়। উনি আগে থেকেই জানতেন সামনের রাস্তায় প্রবলেম ছিলো। ইস আর আমি কি কি না ভেবে ফেললাম উনার ব্যাপারে,, আসলেই নিরু তুই একটা বোকা। যতক্ষন রিক্সায় ছিলাম মন চাচ্ছিলো উনার কাধে একটু মাথা রাখি। উনার শীতল হাতে হাত রেখে হারিয়ে যাই অজানা দেশে। বাকি রাস্তা আমরা কেওই কারো দিকে একবারের জন্যও তাকাইনি। বাসার সামনে রিক্সা থামে,, নামার আগেই আবির ভাই বললো ” আর যদি ওই পলাশের সামনে তোকে দেখেছি আলগা নাচ নেচেছিস তো খবর আছে বলে দিলাম”। কথাটা বলেই ভারা মিটিয়ে উনি উনার বাসায় ডুকে গেলো। আর আমি মাথা নিচু করে রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। আর কত আমাকে অপমান করলে উনার শান্তি হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানে।
চলবে,,,,,
চলবে,,,,