নিয়তি পর্ব -১৪

#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব–১৪
___________________

সন্ধায় টুম্পার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে,
তুর্জের মন খুবই খারাপ, কার পিছনে ছুটেছিলে নন্দিনি?

নিলয়টা কে?

কার দেখা পাবেনা, তাহলে কি সেই মানুষটাই নন্দিনির ভালোবাসা ছিলো, আমি দুটো মানুষের জীবনের মাঝখানে এলাম?
নাহ জদি নন্দিনি চায় তাহলে তাদের মাঝে আমি দেয়াল হব না সরে জাবো, তুলিকে নিয়ে বহু দূর চলে জাবো, হয়তো আমার মেয়েটার মায়ের আদর কপালে লিখা হয় নি,

…….

তখন নন্দিনিকে গাড়িতে বসিয়ে সোজা বাড়ি চলে এসেছিলো তুর্জ, দিশা কিছুই বুঝলো না, তাও নন্দিনিকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে, বাড়ি এসে কাওকে কিছু বলে নি, যেখানে নন্দিনি কাওকে কিছু জানায় নি সেখানে তুর্জ কিছু বলা আর ঠিক মনে করল না,

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে নন্দিনি খুব সুন্দর করে সেজেছে হলুদ রংগে।
সব মেয়েদের ড্রেস হলুদে। আর ছেলেদের সাদা।
বেশ আনন্দ করেছে সবাই, নন্দিনি চায় না নিজের গুমরা মুখ দেখে সবার মন খারাপ হক তাই যতটা সম্ভব ততটা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টাই করেছে নন্দিনি,

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় ১ টা বেজে গেছে, নাচ গানে মেতে ছিলো সারাক্ষন।

…….

তুলিকে কহিনুর বেগম ঘুম পারিয়ে নিজের কাছেই শুইয়ে দিয়েছে,
তুর্জ আজ মন স্থির করে ফেললো নন্দিনি কে সোজা সোজি জিজ্ঞাস করবে তার মনে অন্য কেউ আছে নাকি.

তার পর আবার নিজেই বির বির করে বললো নাহ এমন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে এসবের দরকার নেই, তার চেয়ে বরং বাড়ি গিয়েই এর একটা বিহিদ করা হবে।
……

নন্দিনি সেই কখন থেকে ওয়াসরুমে ঢুকেছে প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে গেলো, তুর্জ নন্দিনি আসছেনা দেখে দরজার পাশে দারিয়ে বললো আজ রাত টা কি ঐখানেই কাটানোর ইচ্ছা বুঝি…/??

তুর্জের ডাক নন্দিনির কানে পৌছায় নি, সে এক মনে চেয়ে আছে হাতে থাকা জিনিষ টার দিকে, আর বার বার আয়নায় নিজেকে দেখছে।
বিকেলে যখন মার্কেটে গিয়েছিলো, তখন তুর্জের চোখ এরিয়ে ডাক্তারের ফার্মেসি থেকে একটা জিনিস নিয়ে নিয়েছিলো,
কাল রাতে টুম্পার সাথে বলেছে নিজের শরিলের কন্ডিশনের কথা,
টুম্পা সব শুনে হালকা হাসি দিয়ে মোবাইটা হাতে নিয়ে নেট থেকে সার্জ দিয়ে প্রেগনেন্সি কিট এর এডটা নন্দিনির দিকে বাড়িয়ে দিলো,
মোবাইল হাতে নিতে নন্দিনি হা হয়ে টুম্পার দিকে চেয়ে ছিলো,
টুম্পা নন্দিনির হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ওর হাত ধরে বললো অবাক হওয়ার কি আছে?
তদের বিয়ের ৭/৮ মাস হয়ে গেছে এটাতো হওয়ারই ছিলো, তার পরও আমি শিউর না একটা এনে টেষ্টটা করিয়ে নে ভালো হবে।

………..

টুম্পার কথা মতই আজ এনেছে,তবে রেজাল্ট টা দেখে নন্দিনি ঘেমে একাকার হালকা শিতের মাঝেও।

…..

তুর্জ এবার সজৎ করতে না পেরে দরজায় জোরে ধাক্কা দিলে নন্দিনি দরজা খুলে বেরিয়ে আসে,
তুর্জ নন্দিনির আসা দেখে খাটের কোনায় শুয়ে পরে,
তবে নন্দিনি তুর্জের দিকে চেয়ে রয়েছে তুর্জতা খেয়ালই করল না,
আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে নিজেকে একবার দেখে বার বার পেটটায় হাত বুলাচ্ছে।

..
খাটের একপাশে শুয়েও শুধু পেটটায় হাত বুলিয়ে জাচ্ছে,

এবার তুর্জ নোটিস করলো নন্দিনির দিকে, চোখ বেয়ে পানি ঝরছে, আর হাতটা পেটে রেখে হাত বুলিয়ে জাচ্ছে।

তুর্জ উঠে নন্দিনির দিকে একটু হেলে বললো কি পেট ব্যাথা করছে বুঝি????

ডাক্তার নিয়ে আসব নাকি?

তুর্জের কথায় নন্দিনির মুখে একটু হাসি এলো, কি বলে না বুড়োটা, পেট ব্যাথা করলেই কি পেটে ধরে রাখতে হয় এমনি রাখা জায় না…
, নন্দিনি এমন চুপ করে তুর্জের দিকে তাকিয়ে থাকায় তুর্জ অবাক ও কেন এভাবে আমায় দেখছে।।।

নন্দিনি উল্টো পাশ ফিরে তুর্জকে ডাক দিয়ে বললো শুনুন..
তুর্জ হুম বলে সম্মতিদিলে নন্দিনি আবার সোজা হয়ে শুয়ে বললো, আচ্ছা তুলিকে এত আদর করেন কেন??

তুর্জ ফিক করে হেসে বললো এত দিন পর এই রাত দুপুরে কথা বললে আমার সাথে তাও এমন কথা?

তুলি আমার মেয়ে আমার অংশ সে ওকে আদর করব না তো কাকে করব শুনি?
নন্দিনি পায়ের কাছে থাকা চাদরটা নিজের শরিলে জরিয়ে চোখ মুখ ঢেকে বললো, জদি আরো কেউ এসে তুলির মত আদর চায় করবেন তো তুলির মত আদর..

তুর্জ এই কথার আগা গুরাই বুঝতে পারছে না, নন্দিনিও আর কথা বলছেনা,

এটা কেমন কথা তুলির মত কাওকে এত আদর করব কেন, আমারতো একটাই সন্তান,তো এটা কেন বললো, একা একা কিছু ক্ষন বিলাপ করেই আবার মুখে এক বিশ্বজয়ি হাসি দিয়ে নন্দিনির মুখের চাদরটা সরিয়ে দিয়েছে।

নন্দিনি অন্য পাশ ফিরে শুয়ে বললো ঘুমোতে দিন তো বড্ড ক্লান্ত লাগছে,
তুর্জ নন্দিনির কথায় কান না দিয়ে নন্দিনির পেটে আল্ত করে নিজের হাতটা দিতেই নন্দিনি চোখ খুলে তুর্জের দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
তুর্জ নন্দিনির দিকে চেয়ে রয়েছে চোখ দিয়ে অঝর পানি ঝরছে দুজনেরই /নন্দিনি জানেনা তুর্জকে সে ভালোবাসে কিনা তবে এই সন্তানটা তার। আর সে নিজের মা হওয়ার স্বাদ ভুগ করবে, করবে না ভুগ করছে এতো এক অজানা অনূভুতি,

তু্র্জের খুব ইচ্ছা করছিলো নন্দিনিকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে তবে তা পারছেনা,
তুর্জ নন্দিনির পেটে হাতটা রেখে বললো নন্দিনি সত্যি তো.???

এখানটায় কেউ আছে?
নন্দিনি নিজের চোখ দুটো বুজে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো,
তুর্জের তো খুশির সিমা নেই সে আবার বাবা হবে, এখন একজন নয় দুজন বাবা ডাকবে…

নন্দিনির কাছ থেকে সরে নিজের বালিশটায় শুয়ে তুর্জ মন স্থির করছে নাহ নন্দিনিকে আমি কারো কাছে জেতে দেব না কারো কাছেনা , ও জেতে চাইলে আজীবন পা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখবে তবুও না।

নন্দিনি অন্য পাশ ফিরে কাদঁছে, তার ভিতরে কেউ আছে তা ভাবতেই নিজের শরিল বার বার সিউরে উঠছে।
তুর্জের চোখের পানিতে বালিশ ভিজে গেছে, খুব ইচ্ছা করছে নন্দিনিকে বুকে টেনে আদর করতে খুব ইচ্ছা করছে ওর পেটে নিজের কানটা গুজে শুনতে সে কবে আসবে???

……..

আল্লাহ মনে হয় আজ তুর্জের জন্য সহায় হয়েছেন,
নন্দিনি নিজে থেকেই তুর্জের বুকে মাথা রেখেছে,
তুর্জও বেশ নরম করে ওকে আগলে ধরে কাদঁছে দুজন কাদঁছে খুব কাদঁছে তবু কারো মুখে কোন কথা নেই।

সারা রাত তুর্জের বুকে শুয়ে ছিলো নন্দিনি তুর্জ নন্দিনির পেটে বার বার চুমু খেয়েছে,
নন্দিনি ঘুমায়না বলে ধমক দিয়ে বললো ঘুমাও নয়তো আমার মেয়ের কষ্ট হবে তো,

নন্দিনি ও কোন পাল্টা উওর দেয় নি খুব আয়েশ করে তুর্জকে জরিয়ে শুয়ে ছিলো।
……
সকালে সবাই নেমে পরেছে যে জার কাজে, শুধু নন্দিনি ছারা ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে!!

কেউ কোন কাজ করতে দিচ্ছে না,

সকালে নন্দিনির ঘুম ভাংগতেই টুম্পার কাছে এসে সব বলে দিলো,

টুম্পা খবরটা শুনেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো ইয়া হু নন্দনি মা হবে, আমি আমার খালামনি হব……….

এই চিৎকার সবার কান অবদি পৌছে গেছে,
কহিনুর বেগম তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে,কারন এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়, নন্দিনি তুর্জকে স্বামী বলে মেনে নিয়েছে??

সালাম সাহেব কহিনুর বেগমের মুখে পানি ছিটকে হুসে ফিরিয়ে আনে, তার পরও আবার সেই আতংকে, কি বলেছে টুম্পা!!!

সবাই হা হয়ে টুম্পাকে দেখছে,সালাম সাহেব এবার টুম্পার কান টেনে বললো তোর ছেলেমানুষি আর গেলোনা বিয়ে হতে চললো তাও এসব কি হুম, এমন কিছু নিয়ে কেও সয়তানি করে নাকি….

টুম্পার মা বাবা দুজনই টুম্পার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে,

টুম্পা ঠোট বাকিয়ে নন্দিনির কাছে এসে বললো কিরে বল সবাইকে আমি কোন মজা করছিনা বল না, নন্দিনি কারো মুখের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়।
এক রকম দৌড়ে সবাইকে এরিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিলো।

তার পর থেকেই একেক জন একেক রকমের কথা( উপদেশ) এটা করবি না উটা না এভাবে থাকবি এটা খা ওটা খা। আর বেশি নড়তেও দিচ্ছেনা,

তুর্জ বেশ খুশি তবে কিছুটা চিন্তিতো বটে, এখন কি নন্দিনি আগের মতই তুলিকে আদর করবে?
…….

সালাম সাহেব চোখের পানি মুছছে আর বাগানে হাটছে,
তুমি যা চেয়েছিলো নিলয় তাই হয়েছে, আমার পাগলি মেয়েটা মেনে নিয়েছে তার সংসার,সে এগিয়ে গেছে বহু এগিয়ে…..

.. বিয়ে খুব সুন্দর ভাবেই সম্পুর্ন হয়েছে, টুম্পাকে বিদায় দিতে গিয়ে সবাই চোখের পানিতে ভাসিয়েছে, দিশাটা বড্ড একা হয়ে গেলো, কত কিছুর জন্যই না আপুর সাথে ঝগরা করতাম, আর বলতাম আপুটা যদি না থাকত!!!

কিন্তু আজ আর আপুকে ছারতে রাজী নয় দিশা।

দিশা টুম্পাকে জরিয়ে ধরে রেখে বলছে আপু যাস না রে আমি তোর টেডিবিয়ার চাইনা সব তুই রাখ ওয়াসরুমে তুই আগে যাস তার পর আমি জাবো।

টুম্পা দিশার মাথায় চুমি দিয়ে বললো ঠিক তো??

হুম ঠিক মুচকি হাসি দিয়ে দিশার মন ভোলানো কথায় কি হবে,টুম্পাতো আজ থেকে পরের অধিনে তাই জেতে তো হবেই,

নন্দিনিকে জরিয়ে ধরে টুম্পা বলে গেছে সামলে নে এবার, নয়তো পসতাবি………

… তুর্জ চেয়েছিলো আজই বাড়ি রওনা দিতে, তবে বড় জেঠুর আর জেঠিমার মন টা ভালো নেই, তারা খুব জুর করায় থেকে গেলো,

তবে জেতে তো হবেই…
তাই সকাল সকাল রেডি সবাই, তুর্জ ওয়াদা করে গেছে জখনই সময় হবে তখনই এখানে চলে আসবে, আর পরের বার আসলে এক সপ্তাহ থেকে জাবে,

….

নন্দনি আর তুর্জ বেরিয়ে পরল,নিজের বাড়ির গন্তব্যে,

সালাম সাহেব আর কহিনুর বেগম থেকে গেলেন, কারন এমনিতেও কোথাও জাওয়া হয় না ব্যাবসার কাজের চাপে,

আর ভাইও একা হয়ে জাবে, সালাম সাহেব থাকলে দুএক কথায় অন্তত্য কিছুটা ভালো লাগবে।

….
বাসে কেউ কারো সাথে কথা বলছে না, তুলি তার বাবার কোলে বসে বাহিরে হাত দিয়ে খেলা করে যাচ্ছে, আর নন্দিনি এক বিরাট দ্বিধায় আছে,

সে মা হওয়ার খুশি উপভূগ করবে নাকি, নিলকে ভুলে এত দূর এগিয়ে আসার জন্য দুখি হবে.
নিলয় কোথায় তুমি প্লিজ একবার সামনে এসো আমি আর পারছিনা কিছু বলার ছিলো তোমায়,
আমি যে আর তোমার নেই, তা কি তুমি জানো?
জানলে রাগ করবে, নাহ রাগ করবে কেন তুমি তো আরো এগিয়ে গেছো, আমার ডাক তোমার কান পর্যন্ত জায়নি এতটা কাছে থেকেও দেখা পেলাম না।
……….

তুর্জ বেশ করে তুলিকে নিয়ে খেলছে।
বাড়িতে শিলা বেগম বেশ খুশি, কারন আবার নতুন অথিতির আগমন সপ্নাও খুশি তবে সোহামের চিন্তায় মগ্ন বেশি আর কি,


দুপুর হয়ে গেলো বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে,
নন্দিনি বাড়িতে ঢুকতেই শিলা বেগম নন্দিনিকে জরিয়ে ধরে কাদঁছে,
আমি বেশ খুশিরে মা তুই মেনেতো নিয়েছিস, তবে কিভাবে কি হল জানিনা তবে জাই হল সব ভালোই হল।

সপ্না নন্দিনির থুতনিতে হাত দিয়ে বললো, যা হয় ভালোর জন্যই হয় রে বোন,…..
সপ্না তুর্জ আর নন্দিনির সম্পর্কে সব জানে তাই এমনটা বললো।

তুলিকে সপ্নার কাছে দিয়ে তুর্জ বেরিয়ে পরেছে…. কোথায় গেছে তা কাওকে বলে জায়নি,
সোহাম এসে নন্দিনির সাথে বেশ আড্ডা মারল, তবে সপ্নার দিকে আর চোখে চেয়েও চোখ টা নামিয়ে নেয়,কারন খুব অপরাধি বুধ করে নিজেকে সপ্নার হাল দেখে।
চোখের নিচটা কালি রাতে কি ঘুমায় না, এত জত্নে থাকা চুল গুলো এমন কেন.?
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ঠিক মত খায়না মনে হয়……
সোহাম সব খেয়াল করে তবে কিছু বলে না।
কি বলবে তা খুজে পায় না, কারন সপ্না কিছু জানতে চাইলে সে তো তাকে মিথ্যা আর বলতে পারবেনা, তাই চুপ হয়ে দূরে সরে থাকে।
যে দিন সপ্না সব জেনে নেবে সেদিন কি হবে কে জানে, জদি সে নিজের ক্ষতি করে দেয়??
সেই ভয় সোহাম কে কুরে কুরে খাচ্ছে।

সন্ধা গরিয়ে এলো তুর্জের খবর নেই,
নন্দিনিও একটু চিন্তা করছে, দুপুরে খায়নি গেলো কোথায় মানুষটা,…. এটা কি জ্বীন নাকি গায়েবি আসে জায়…

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here