#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
অষ্টম পর্ব
অরুপকে গুলি করে হাতে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহাজন, রুবেল ও অন্যদের বকে যাচ্ছে।
অরুপ পা ধরে কিছুক্ষণ কাতরাতে কাতরাতে সেখানেই
পরেগেল।
অর্নিতা সেই বিল্ডিংয়ে ডুকে পরল। হাতে তার একটি মাত্র পিস্তল। জামিল অর্নিতার কথা শুনল না সে ও ভিতরে প্রবেশ করল। অর্নিতা ভিতরে ডুকেই দেখল সেখানে অরুপ পরে রয়েছে।
আর মহাজন তার লোকদের সাথে বকাবকি করছে।
মহাজন তার পিস্তল নিয়ে অরুপের মাথায় তাক করার আগেই অর্নিতা তার হাতে গুলি করে দিলো।
লোকগুলো অর্নিতাকে এই যায়গায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো। অর্নিতার গুলির আওয়াজে ফরহাদ আর তার লোকেরা হুড়মুড়িয়ে ডুকে পরল। অর্নিতা গুলি করে মহাজনের মাথায় তাক করেছে সেই পিস্তল।
অর্নিতা ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে – অরুপকে নিয়ে আপনারা হসপিটালে নিয়ে যান।
আর শুনুন এখানে কি হয়েছে তা বাইরে জানানোর প্রয়োজন নেই। আরেকটি কথা অরুপের গুলি লেগেছে এটাও যেন কোথাও প্রচার না হয়!
অফিসার- মহাজনকে উদ্দেশ্যে করে।ম্যাডাম একে কি করবো?
অর্নিতা- একে নিয়ে যান কেরানিগঞ্জের জেল হসপিটালে। আর শুনুন সেখানকার ওসিকে বলবেন একে যেনো কড়া পাহারায় রাখা হয়।
মোটকথা ওর সঙ্গী সাথীরা যেন টের না পায়। ও আমাদের হাতে ধরা পরেছে এবং আমাদের হাতে ওদের সবকিছু চলে এসেছে।
ওদের সবাইকে আমাদের স্পেশাল ইনভেস্টিকেশন ব্রান্চে নিয়ে যান।
কোনভাবেই এদের ছাড় দেয়া যাবে না!
মহাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেল হসপিটালে। আর তার সঙ্গী সাথীদের কে নিয়ে অর্নিতা তাদের অফিসে চলে গিয়েছে।
সবাইকে স্পেশাল ব্রান্চে পাঠিয়ে দিয়ে অর্নিতা ডাইরেক্টর স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে।
প্রতেকটা ব্রান্চ বা প্রত্যেকটা সরকারি কর্মক্ষেত্রে ডাইরেক্টর বা মহাপরিচালক থাকে। আর এখানেও একজন মহাপরিচালক থাকে।
ডাইরেক্টর স্যার – তোমার কি মনেহয় ওর লোকেরা জানেনি?
অর্নিতা- স্যার আমি পুরোপুরি বলতে পারছিনা তবে আমার মনেহয় এই বিষয়টা গোপন করা প্রয়োজন।
ডাইরেক্টর স্যার- অর্নিতা প্রত্যেকটা পদে শত্রুরা আঘাত করার আগেই বা মাঠে নামার আগে তাদের প্রতিপক্ষের জোড় সম্পর্কে ধারনা করেই নামে। এটা নিশ্চয়ই জানো?
যদি আরেকটু সহজ করে বলি-
তারা আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে সব জানতো!
তাহলে কি মনে হয়? তোমাকে বা তোমার সেই মহাজনকে তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ দিবে?
কখনোই তারা তাকে সুযোগ দিবে না।
এই সমস্ত অপরাধের আর অপরাধীদের পিছনে বড় হাত আছে! সেইসব হাত গুলো খুব বড় হয়! আমরা তাদের দেখতে তো পারবো তবে ধরতে বা ছুতে পারবো না।
অর্নিতা- তাহলে আমরা এখন কি করবো স্যার?
আমাদের সহকর্মী হাসপাতালৃর বেডে পরে আছে।
ওরা হাজার হাজার অন্যায় করে ওরা পাড় পেয়ে যাবে। আর আমাদের মত সৎ কর্মঠ অফিসাররা ওদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবে?
ডাইরেক্টর স্যার- শান্ত হও অর্নিতা তোমার বাবার গর্ব তুমি। ঠান্ডা মাথায় সব কাজ করো!
অরুপকে নিয়ে আমি ও অবাক হয়েগেছি।
এটা চিন্তার বিষয়! দুটোই চিন্তার বিষয়! তবে তোমাকে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। ওরা এখন ও হয়তো সব কিছু জেনে নিজেদের স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে।
অর্নিতা মাথা নিচু করে -জ্বী স্যার,
ডাইরেক্টর স্যার- আমাদের এখন অরুপকে দেখে আসা উচিৎ,
______________________________
অরুপকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। অপারেশন করে গুলি বের করে ফেলেছে ডাক্তার রা।
অরুপ এখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছাদিত।
পাশেই অরুপের মা কান্না করছে। অরুপের বাবার মুখে কোন শব্দ নেই পাথর হয়ে বসে আছেন।
অরুপদের আত্মীয় সজনদের কাউকে জানানো হয়নি অরুপের ব্যাপারে।
কারন উপর মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে অরুপের গুলিবিদ্ধের কথা যেন কেউ না জানে।
তার গুলি বিদ্ধের কথা জানামানি। সাধারণ মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
অর্নিতা আইসিউর বাইরে অবস্থানরত অরুপের মায়ের কাছে গিয়ে বসল।
সন্তানের এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা হয়তো কোন মাই চান না।
চ#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
নবম পর্ব
অর্নিতা আইসিউর বাইরে অবস্থানরত অরুপের মায়ের কাছে গিয়ে বসল।
সন্তানের এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা হয়তো কোন মাই চান না।
অর্নিতা – শান্ত হন আন্টি ভেঙ্গে পড়বেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
অরুপের মা- কিভাবে শান্ত হব মা? আমার ছেলেটার হঠাৎ করে এমন কেন হলো? ও তো সুস্থই ছিল তাহলে হঠাৎ এমন কেন হলো? তুমি কি বলতে পারো মা?
অরূপের বাবা- কি হয়েছিল আমাকে বলতে পারো একটু?
অর্নিতা তারপর তাকে সব খুলে বলতে লাগল।
প্রথম থেকে সব শুনার পর তিনি নিজেও আৎকে উঠেন।
অরুপের সব শুনে ডুকরে কেদে উঠেন।
অরুপের মা- মামনি তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
তুমি যদি ঠিক সময়মতো না পৌছাতে তাহলে কি সর্বনাশই না হতো! দোওয়া করি মা দীর্ঘজিবী হও!
আজ তুমি বা তোমরা সবাই সময়মতো না গেলে কি সর্বনাশই না হতো!
অর্নিতা তাকে বুঝিয়ে শান্ত করে উঠে দাড়ালো।
ডাইরেক্টর স্যার ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলছেন।
অরুপ এখনো আইসিউতে একটু সুস্থ হলে কেবিনে ট্রান্সফার করা হবে।
ডাইরেক্টর স্যার সবার সঙ্গে অরুপের বিষয়ে আলোচনা করে বেরিয়ে গেলেন।
অর্নিতাও কিছুক্ষণ কথা বলে আবার চলেগেল অফিসে।
_______________________________
ইনভিস্টিগেশন সেন্টারে এসেছে অর্নিতা।
হাত ঘড়িতে সময় রাত বারোটা বেজে বিশ মিনিট।
ঘড়ি দেখতে দেখতে অর্নিতা তার পাশের লোকটিকে বলে উঠলো-
আরেকটু পানির ছিটাদিন, কম হয়েগেছে!
আবারো একবালতি পানি চোখেমুখে ঢেলে দেওয়া হলো।
লোকটির চোখে ঘুম, ডুলু ডুলু চোখে টেবিলেই বসা দায়!
ঘুমের ঔষুধ কাজ করতে শুরু করেছে।
অর্নিতা- সময় নষ্ট না করে বল! মহাজন অধিকারীর পর আর কে এই পথে আছে?
লোকটি- ডুলতে ডুলতে নিভু নিভু চোখে অর্নিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্নিতা ধমক দিয়ে -বল!
বুঝেছি এভাবে হবে না। ওকে নিয়ে চলুন আমাদের টর্চার সেল এ!
অর্নিতার কথামতো লোকটিকে এবার টর্চার সেল নিয়ে যাওয়া হলো।
অর্নিতা চেয়ার এ বসে আছে। লোকটির চুল টেনে ধরে রয়েছে একজন। আরেকজন তাকে মোটা লাঠি দিয়ে ইচ্ছে মত পিটিয়ে যাচ্ছে।
অর্নিতার সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেল হাতে পিস্তল নিয়ে লোকটির কপালে ঠেকিয়ে বলল-
সোজা উপরে উঠার প্ল্যান করেছিস নাকি?
চল তোর প্ল্যান সাকসেসফুল করি! এত এত টর্চারের পরেও নিজের বসের কথা প্রকাশ করছিস না!
এতটা তো এখন একজন সাধারণ মানুষ তার দেশের প্রতিও দেখায় না! নিজে মার খাবি তারপর ও কিছু স্বিকার করবি না!
পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দেওয়ার আগেই লোকটি নেতিয়ে যাওয়ার শরীর নিয়ে অনেক কষ্টে অর্নিতার পা জড়িয়ে ধরলো।
লোকটি- ম্যাডাম,বলছি ম্যাডাম! মারবেন না!
আমাদের কাছে স্পালাই করে ভারত আর মায়ানমার!
অর্নিতা -এটা আমরা জানি। কার হয়ে কাজ করিস?
লোকটি- উনি খুব ক্ষমতাধর ব্যাক্তি! ওনার কথায় সব চলে ম্যাডাম! উনি সবাইকে ফাসাঁতে পারে বাচাঁতে পারে।
অর্নিতা- কে সে?
লোকটি খানিকটা ইতস্ততবোধ করছে বলতে।
অর্নিতা আবার জিজ্ঞাসা করল কে সে?
লোকটি কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলে উঠলো-
– জানে আলম চৌধুরী!
অর্নিতা কিছুটা চমকে গিয়েছে! অনেক দিনের চেনা নাম! হাজারো চেষ্টা করেও বের করতে পারছিল না জানে আলমের কোন খোঁজ! লোকটির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগল।
অর্নিতা- জানে আলম চৌধুরী? কোথায় তিনি?
লোকটি- উনি দেশে থাকেন না! দুবাই থাকেন! তবে এতটুকু বলতে পারবো উনি দেশের বাইরে থেকেও সবকিছু পরিচালনা করেন।
অর্নিতা- আমাকে জানে আলমের সহোচরী বা তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন কেউ থাকলে বল।
লোকটি- মহাজন অধিকারী সহ আরো অনেকে আছে।
অর্নিতার চোখ লাল হয়েগেছে। প্রতিশোধ! তীব্র প্রতিশোধ! প্রতিশোধের নেশায় সে মত্ত যেন!
মস্তক দিখন্ডিত করলেও যেন শরীরের যে তাপ তা কমবে না!
অর্নিতা- জানে আলম চৌধুরী দেশে কখনো এসেছে?
লোকটি- জানি না ম্যাডাম। তবে এতটুকু বলতে পারবো সে এই বিশ বছরে দেশে আসেনি।
অর্নিতা- হুম ঠিক আছে, বলেই বেরিয়েগেল।
হাই স্পিডে গাড়ি চলাচ্ছে।
সেই লোক যার জন্য সে অনাথ! সেই লোক যার জন্য
লোকেরা তাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিতো!
বাসায় এসেই দৌড়ে বাবার রুমের কাছে গেলো। গিয়ে বাবার পায়ের উপর জাপিয়ে পরলো।
জাহিদ আফসারী বই পড়ছিলেন। মেয়েকে এভাবে আসতে দেখে চমকে গেলেন।
অর্নিতার মা ও আসলেন মেয়েকে কাদতে দেখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন –
কি হয়েছে অর্নিতা?কাদছিস কেন?
অর্নিতা- আমি আমার আম্মুর হত্যাকারীর খোজঁ পেয়েছি মামনি!
অর্নিতার মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। এত বছর পর সেই লোকের দেখা কি করে পেল।
চলবে।