নুর পর্ব ১০

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-10
নব মুসলিম মেহেরাব হোটেলের লাউঞ্জে বসে আছে। টেবিলের উপর পা রেখে মাথায় দুটো আঙুল দিয়ে সে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মোমের কথাগুলো কানে কানে বাজছে।
সমস্ত শরীর তখন কাটা দিয়ে উঠলো। সমস্ত শরীরের তাজা রক্ত যেন টগবগ করতে লাগলো গরম হয়ে।
সে আসলেই এতোটা নৃশংস?
মোম এই কথা গুলো না মনে করিয়ে দিলে হয়ত অনুধাবন করতে পারতো না তার কৃতকর্ম গুলো।
সবাই তো মানুষ! যেমন ওর সম্মান আছে তেমনি বাকিদেরও সম্মান আছে।
সে ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে এটা তার ভাগ্য! বাকিরা ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়নি বলে কি ক্ষমতাবানদের কাছে অত্যাচারীত হবে? এটা কেমন নিয়ম? মেহেরাব নিজের মনে নিজেই বলে উঠলো সে ভাগ্য বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। সে তো ভাগ্য বিশ্বাস করেনা কখনো, তার ধারণা ছিল ধর্ম, ভাগ্য, সততা এসব হলো দূর্বল হৃদয়ের মানুষদের জন্য। সততা থাকলে ইশ্বর নিশ্চয়ই আমাদের চাওয়া-পাওয়া গুলো ভাগ্যে রাখবে।
জীবন যুদ্ধে হেরে গেলে এগুলো ভেবে নিজেকে শান্তনা দেয় দূর্বল হৃদয়ের মানুষেরা এটাই এতোকাল মেহেরাব ভেবে এসেছে, ধর্ম হলো দূর্বল চিত্তের হৃদয়ে একপ্রকার শান্তনা।
মোমের কারণে সে আজ ঐশ্বরিক ক্ষমতা কে বিশ্বাস করেছে, আগে তার খুব একা মনে হতো আর এখন তার হৃদয় মন জুরে অলৌকিক ঐশ্বরিক কেউ বিরাজমান। মনে হচ্ছে কেউ আছে, তার উপর নজর রাখা হচ্ছে।
আগের জীবনে কোন কিছু ছিলো না যে যেটা আঁকড়ে মেহেরাব বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকার কোন প্রেরণা ছিলো না। এখন সে সৃষ্টিকর্তার দ্বীনের খোঁজের জন্য বেঁচে থাকবে। সৃষ্টিকর্তা তার বাঁচার প্রেরণা।
ফোন বাজছে! মেহেরাবের বান্ধবীরা কল করছে কয়েকদিন যাবৎ। সে কল রিসিভ করেনা। এমনকি পুরোনো বন্ধদেরও কলও না।
সে একা একাই থাকছে আর ভাবছে।
.
মেহেরাবের কিছু বন্ধুকে দেখা গেলো। মেহেরাবের দিকেই এগিয়ে আসছে।
বন্ধুবান্ধবরা সবাই লাউঞ্জে বসে আছে। মেহেরাব সবার মধ্য মনি। মেহেরাবের বান্ধবীরাও রয়েছে।
তারা মেহেরাব কে দেখেই জরিয়ে ধরলো।
মেহেরাব কে কেউ জরিয়ে ধরলে সেও এদেশের নিয়ম অনুযায়ী জরিয়ে ধরতো।
এবার তা করলো না।
দুই হাত পকেটে রাখা।
মোম কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরাবদের দিকে।
মেয়ে দুটো এখনো জরিয়ে ধরে আছে তাকে।
মেহেরাব পলকহীন ভাবে মোমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
বোরখার আবরণেও মেহেরাবের মোম কে চিনতে অসুবিধা হয়না কখনো।
কোটি কোটি বোরখা পড়া মেয়েদের মধ্যে সে মোম কে চিনতে পারবে। সৃষ্টিকর্তা জানেন। মেয়েটার মধ্যে কি এমন আছে যে সে আশেপাশে থাকলে মেহেরাবের পৃথিবীটা রঙিন হয়ে যায়। চারাপাশ ঝলমলিয়ে উঠে।

মেহেরাবদের সামনের টেবিলে মোমরা বসেছে।
মোম বলল- কাশফিয়া এখান থেকে এখুনি চলো।
-কেন? কি প্রবলেম? এটা এখানকার এক্সপেন্সিভ হোটেলের রেস্টুরেন্টের মধ্যে একটি। চারপাশটা কি সুন্দর!
রেস্টুরেন্ট সমুদ্রের উপর তৈরি হয়েছে। এটাই এর বিশেষত! সমুদ্রের তাজা হাওয়ার সাথে তাজা মাছ খেতে এক্সিলেন্ট।
তুমি যেই মাছটা অর্ডার দেবে সেটা তৎক্ষনাৎ সমুদ্র থেকে ধরে রান্না করে তোমাকে খাওয়াবে। এটা রেস্টুরেন্টের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মোমদের ক্লাসমেট ডেবিট সেও এসেছে মেমদের সাথে। মোমদের গার্ড হিসেবে।
সে মোমদের নিজের বোন ভাবে। তাই এতদূর একা একা কয়েকটি মেয়েকে অচেনা জায়গায় আসতে দেয়নি।
ডেবিট বলল- তোমরা এখানে খাবে কি করে?
কাশফিয়া-মুখ দিয়ে।
-আরে আমি মিন করেছি কত লোকজন দেখ?
তোমাদের ফেস তো দেখে ফেলবে। এটা ঠিক না।
-কেন টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে।
মোম এই পর্যায়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
আগুনের দৃষ্টি শুধু মোমের উপর। তার সমস্ত এটেনশন মোমের উপর।
ওরা কি এমন গল্প করছে যে মোম হেসে ফেললো। বিশেষ করে ঐ ছেলেটা৷ এর আগে তো মোম কে সে হাসতে দেখেনি।
ছেলেটার সাহস কত বড়?
মোমের সাথে এতো কিসের কথা? মোম তো এমনিতে কোন ছেলের সাথে কথা বলেনা। তাহলে ব্যপারটা কি দাঁড়ালো?
ডেবিট স্যুপটা মোম কে সার্ভ করে দেওয়ার পর
মেহেরাবের হিংস্রতা যেন জেগে উঠেছে।
সে বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো।
সোনালী চুলের মেয়ে গুলো তাকে আবার বসিয়ে দিলো।
তারপর মেহেরাবের চেয়ারের দু’পাশের হাতলে বসলো গা ঘেঁষে।
.
.

সোনালী চুলের দুই বান্ধবী মেহেরাবের মাথার সোনালী চুল গুলোতে বিলি কাটতে লাগলো। মেহেরাবের কোনদিকে কোন খেয়াল নেই।
কিছুক্ষণ নিরবতার পর বন্ধুরা বলল- (অনুবাদ)এসব কি শুনছি আগুন?
মেহেরাব শান্ত চোখে বলল- মেহেরাব আমার নাম মেহেরাব ইসলাম।
-বাট তোমার জন্মগত নাম তো কিং ফায়ার।
-আমার নাম মেহেরাব।
তোমরা শুনেছো আমার নাম কি?
সবাই ভয়ে ঢোক গিলে ফেলল মেহেরাবের চোখের তীব্রতায়।
ধর্ম, নাম পাল্টিয়েছে কিন্তু কিন্তু স্বভাব চরিত্র তো পাল্টায় নি। একই আছে রাজার মতো, হিংস্র সিংহের মতো৷ সাবধানে কথা বলতে হবে।
মোমের গায়ে ডেবিট স্যুপ ফেলে দিলো এটা দেখে মেহেরাব আবার দাড়িয়ে পড়লো। মোমের চোখে তার চোখ পড়লো।
সমুদ্রে ছূরে ফেলতে ইচ্ছে করছে ছেলেটা কে তার। নেহাত মোম আছে বলে।
মোম ওয়াশরুমের দিকে গেলো ক্লিয়ার হতে।
বিশাল ওয়াশরুম টা ফাঁকা।
মোম এক কোণে হাঁটুর উপর থেকে বোরখা তুলে হাত মোজা খুলে স্যুপ লাগা জায়গা টুকু ধৌত করছে।
কি যেন একটা আওয়াজ হতেই মোম পেছনে তাকালো।
তারপর সামনে তাকিয়েই হকচকিয়ে গেলো।
-আসসালামু আলাইকুম।
মোম এক পা পিছিয়ে গেলো।
মেহেরাবের দৃষ্টি মোম কে অবজার্ভ করছে।
হাত মোজা খুলে বোরখা সে হাটু পর্যন্ত তুলে রেখেছে হাতে।
সাদা স্কার্ট দেখা যাচ্ছে।
মেহেরাব মোমের খুব কাছে এসে পড়লো।
মোমের হার্ট ক্রমশ বাড়ছে প্রচন্ড গতিতে।
সে কয়েক পা পিছিয়ে পড়লো।
হটাৎ মেহেরাব হাত স্পর্শ করলো।
মোম ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল।
মেহেরাব মোমের হাতে থাকা বোরখার অংশটা ছাড়িয়ে নিচে ছেড়ে দিলো যা পর্যন্ত ঠেকলো। পানি নিয়ে নিজ হাতে সফটলি বোরখার স্যুপ লাগা অংশগুলো ধুয়ে দিলো হাঁটু গেঁড়ে বসে।
মোম বাঁধা দিলো সর্বোচ্চ। লাভের লাভ কিছু হলো না।
তারপর হাত মোজা নিয়ে হাতে পরিয়ে দিলো।
মোম মেহেরাবের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে মেহেরাব তাকে টেনে দেয়ালের সাথে দাড় করিয়ে দেয়।
দেয়ালের দুইপাশে মেহেরাব হাত রেখে মোমের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। মোম দু’হাতের মাঝাখানে।
মেহেরাব মোমের দিকে আরেকটু ঝুঁকতেই মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মেহেরাব মুচকি হেঁসে ফেললো।
মোমের কানে কানে বলল- তোমার মতে কোটি কোটি বোরখা পড়া মেয়েদের মাঝখান থেকে তোমাকে এক সেকেন্ডেই চিনে ফেলতে পারি।সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপা।
-সৃষ্টিকর্তায় কৃপায় আমাকে যেতে দিন।
-কেন? ডেবিটের কাছে যাবে?
মোম চোখ খুলে ফেললো।
মেহেরাবের নীল চোখ গুলো কেমন যেন হয়ে গেলো।
যা দেখলে যে কারও গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে।
-তাতে আপনার কি? যে-কারও কাছে যাব আমি।
-কি বললে তুমি?
-ইংরেজিতে বলেছি।
– আবার বলো?
-যে-কারও কাছে যাব। আমার বিষয়।
মেহেরাব নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পাচ্ছেনা। এই সিচুয়েশনেও কোন মেয়ে এভাবে তর্ক করতে পারে।
মেহেরাব শান্ত করলো নিজেকে। তা না হলে সে একটা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে।
অন্য কারও কাছে যাবে মানে কি! মুখের উপর অন্য কারও কথা শুনে মেহেরাবের রঙিন পৃথিবীটা নিমিষেই ভেঙে গেলো। তার ইচ্ছে করছে……. ভাগ্যক্রমে মহান আল্লাহ তায়ালা মেহেরাবের হৃদয়ে বিরাজ থাকায় সে নিজেকে শান্ত করতে পারলো।
শান্ত ভাবে বলল- শোন মেয়ে, কান খুলে শোনে রাখ। তোমাকে যেন ঐ ছেলেটার সাথে আর না দেখি।
ছেলেটার সাথে তোমার যা-ই রিলেশন থাকুক হোস্টেলে যাওয়ার পর রিলেশন অফ।
ইজ ইট ক্লিয়ার।
মোম কঠিন চোখে মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে আছে।
-শোন মেয়ে, যদি তোমার আশেপাশে ছেলেটা কে দেখি তাহলে ছেলেটার কপালে দুর্ভোগ আছে। লাথি দিয়ে ফেলে দেব গভীর সমুদ্রে। হাঙরদের ভালো খাদ্য হবে।
বেশ স্বাস্থ্য ছেলেটার হা! হা!হা!।
মোমের রাগে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। কোন অধিকাররে মেহেরাব তাকে এসব বলছে।।
মোম বুঝতে পাচ্ছে তার নেকাবের পিন টা খুলে যাচ্ছে মেহেরাবের হুংকারে।
মোম নেকাব ঠিক করার আগেই মেহেরাব নেকাবে স্পর্শ করলো।
মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মেহেরাব পিনটা সফটলি লাগিয়ে দিলো।
মোমের কানে কানে বলল- এরপর থেকে একশত পিন লাগাবে নেকাবে। যেন সিডরে তুমি আটকা পড়লে আমার তোমাকে উদ্ধার করার আগপর্যন্ত নেকাব হেফাজতে রাখতে পারও। ইজ ইট ক্লিয়ার? তোমার বান্ধবীরা তোমাকে খুঁজছে। নাউ ইউ ক্যান গো।
মোম নেকাবে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে চলে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছে সিংহের থাবা থেকে বের হয়েছে সে।
মোমদের টেবিলে আড্ডা হচ্ছে অন্যদিকে মেহেরাবদের টেবিলেও।
দু-জনের কারও খেয়াল নেই আশেপাশে কি হচ্ছে।
শুধু দু-জন দু-জনের দিকে তাকিয়ে আছে তীব্র দৃষ্টিতে। যেন দু-জন দু-জনকে খেয়ে ফেলবে দৃষ্টিতে।
সোনালি চুলের মেয়েদের একটা মেয়ে হঠাৎ মেহেরাবের গালে কিস করে বসলো। তারপর গালে নাক ঘষতে লাগলো।
মোম এটা দেখে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহেরাবের প্রতি সেটা মেহেরাব বুঝতে পারলো।
মোম হঠাৎ টেবিল ছেড়ে হেটে যাওয়া শুরু করলো।
মোমের পিছনে তার বান্ধবীরাও।
মোম কোন ছেলেকে ভাই বানালেই দোষ আর মেহেরাব কারি কারি মেয়েদের গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে রাখবে। বাহ! মেহেরাবের কি বিচার!
মেহেরাব মোমের চলে যাওয়ার পর শান্ত স্বরে বলল-ডোন্ট টাচ মি!
মেয়েগুলো আদুরে গলায় মেহেরাবের চুলে হাত বুলাতেই মেহেরাব তীব্র স্বরে চিৎকার দিয়ে বলল-ডোন্ট টাচ মি! লিভ মি এলন। গেট আউট ফর্ম হেয়ার। ইজ ইট ক্লিয়ার।
রেস্টুরেন্ট থমকে স্তব্ধ হয়ে গেলো।

.

মেহেরাব ইংল্যান্ডের আইসিস সমুদ্রে পাড় ঘেঁষে হাঁটছে। জ্যাকেট দুই আঙুল দিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে। একটা পাথর নিয়ে দূরের প্রান্তরে ছূরে মারলো।
তার সাথে এসব কি হয়ে গেলো। সারাজীবন সে সবার সাথে গেইম খেলেছে আর আজ কিনা একটা ভীনদেশী তার সাথে গেইম খেলে গেলো। সে আবার একটা মেয়ে। খেলাটা সে এমন ভাবে খেলেছে যে তার
উপর কোন দোষ দেওয়া যাচ্ছে না আবার মেহেরাব কে অনুভব করিয়েছে ঐশ্বরিক ক্ষমতা কে। মেহেরাব কে সে বিয়ে তো করলো-ই না উল্টো যুক্তি দিয়ে তাকে চারপাশ থেকে আটকিয়ে ফেলেছে।

কিভাবে সম্ভব? হাউ ইজ পসিবল।
মেয়েটির পার্সোনালিটি মেহেরাবের থেকে দৃঢ়।
মসজিদে ঢুকে মেহেরাব মনের মধ্যে শান্তি খুঁজে পেলো।
ঠিক আজানের সময়ে সে যেখানেই থাকুক না কেন মসজিদে হাজির হবে।
মন ভরে আজানের ধ্বনি শুনবে। আজান কাছ থেকে না শুনলে তার ভালো লাগেনা। মসজিদে ঢুকে তার মনে হলো কেউ সিসি ক্যামেরার মতো তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মেহেরাবের সারাক্ষণ এটাই মনে হয়। তার একটু ভয়ও করছে আজকাল।
ইমাম সাহেবের পেছনে সে নামাজ পড়ে।প্রথমবার নামাজ পড়ার সময় সে ভয়ে ছিলো। বুঝতে পাচ্ছিল না কিভাবে কি করবে।
ইমাম সাহেব তাকে শান্তনা দিয়ে অজু করতে সাহায্য করলো। তারপর ইমাম সাহেব যেভাবে নামাজ পড়েছে সেভাবে সেও প্রথম নামাজ পড়েছে অবজার্ভ করে। ইমাম সাহেব তাকে ধীরে ধীরে সূরা, দোয়া ইসলামিক সবকিছু নিয়মকানুন শিখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। ইমাম সাহেব কে সে নিজের শিক্ষক নিয়োগ করেছে।
ইমাম সাহেবের কাছ থেকে সে মসজিদে চমৎকার একটি দোয়া শিখলো।
একটি চমৎকার দু‘আ শব্দে শব্দে অর্থসহ শিখি, যা আমরা নামাজের সিজদায় পড়তে পারব। দু‘আটি ছোট হলেও তাতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রার্থনা রয়েছে।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ আদায় করে বলেন—
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ، وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ، وَبَارِكْ لِيْ فِي رِزْقِيْ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি যানবি, ওয়া ওয়াসসি‘অ্ লী ফী দা-রী, ওয়া বা-রিক লী ফী রিযক্বী (শুধু বাংলা উচ্চারণ পড়ে শিখলে নিশ্চিতভাবেই ভুল শিখতে হবে)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও এবং আমার রিযিকে বরকত দাও।
.
সাহাবি আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি এসব কী দু‘আ করলেন?’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এর পর আর কোনো কল্যাণ (প্রার্থনা) বাকি থাকে কি?’’ [নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ৮০; সনদ সহিহ]
.
এবার চলুন শব্দার্থগুলো শিখে নেই—
.
اَللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
اغْفِرْ لِيْ ইগফিরলি [আমাকে মাফ করো]
ذَنْبِيْ যানবী [আমার গুনাহ]
وَوَسِّعْ ওয়া ওয়াসসি‘অ্ [প্রশস্ত করো]
لِيْ লী [আমার জন্য]
فِيْ ফী [মধ্যে]
دَارِيْ দা-রী [আমার ঘর]
وَبَارِكْ ওয়া বা-রিক [এবং বরকত দাও]
لِيْ লী [আমার জন্য]
فِيْ ফী [মধ্যে]
رِزْقِيْ রিযক্বী [আমার রিযিক (জীবনোপকরণ)]
.
এবার মুখস্থ করা যায় এভাবে—
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ আল্লাহুম্মাগফিরলি যানবি
[হে আল্লাহ্! আমার গুনাহ মাফ করে দাও]
.
وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ ওয়া ওয়াসসিঅ্ লী ফী দা-রী
[আমার ঘরকে প্রশস্ত করে দাও]
.
وَبَارِكْ لِيْ فِي رِزْقِيْ ওয়া বা-রিক লী ফী রিযক্বী
[আমার রিযিকে বরকত দাও]
.
খেয়াল করে দেখুন—এই দু‘আটিতে গুরুত্বপূর্ণ সবই চাওয়া হয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, নিজের গুনাহের মাফ চাওয়া; দ্বিতীয়ত, ঘরে প্রশস্ততা—অর্থাৎ, ঘরের মধ্যে শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ থাকা এবং সেখানে কোনো ঝামেলা, মনোমালিন্য ও সংকীর্ণতা না থাকা ইত্যাদি। আবার শেষে বলা হচ্ছে, রিযিকে বরকতের কথা। রিযিক মানে শুধু খাবার-দাবার নয়, রিযিক মানে জীবনের যাবতীয় উপকরণ—অর্থ-সম্পদ, সময়ে বরকত, পেরেশানি থেকে মুক্তি, নেক সন্তান ও জীবনসঙ্গী সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।
মেহেরাব সব সময় কালেমার সাথে সাথে এই দোয়াটি পাঠ করে। নতুন নতুন যা কিছু শিখছে তা সব-ই পাঠ করে সে।
এপার্টমেন্টে এসে সে অজু করার প্রেকটিস করে।
একা একা নামাজ পড়াও চেষ্টা করে। একা নামাজ পড়তে তার খুব ভয় করে। সাহস হয়না পড়তে।
ইমাম সাহেব বলেছে ধীরেধীরে ভয় দূর হবে! সাহস হবে।
.
.
মোম ক্লাসে লেকচারারের লেকচারের নোটস লিখছিলো।
লেকচারার খুব কড়! ক্লাসে একটা নিঃশ্বাসের আওয়াজও পেলে স্টুডেন্টদের বের করে দেয়।
বিশাল মোটাসোটা একটা কালো পোষাকের লোক হঠাৎ ক্লাসে ঢুকে পড়লো।
সবাই হতবাক!
মোমের নোটসের পেপারের উপর একটা চিরকুট রাখলো।
মোম চিরকুট টা ফেলে দিলো ফ্লোরে।
লোকটা পকেট থেকে আবারও একটা চিরকুট বের করে রাখলো।
সেটা মোম ছূরে মেরে নোটস লিখতে লাগলো। যেন কিছু হয়নি। লেকচারার স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে এসব!
লোকটা আরেকটা চিরকুট মোমের সামনে রাখলে মোম সেটাও ছূরে মারার সময় ভাবলো যে পর্যন্ত চিরকুট না পড়ব সে পর্যন্ত এই মোটাসোটা লোকটা চিরকুট দিতেই থাকবে ক্লাসে দাড়িয়ে লেকচার অফ রেখে।
“চিরকুট গুলো ছূরে মেরে রাগ শান্ত হলো? চিরকুট ছূরে মারোনি তুমি, আমাকে ছূরে মেরেছো!
” শোন মেয়ে, এতো পড়ে কি করবে? এতো পড়াশোনা করা লাগে?
একটুও ডানে বামে তাকাও না কেন? তাকানোর উপর কি গভর্নর ট্যাক্স দিয়েছে?
মোম একবার ডানে আরেকবার বামে তাকালো।
ঐ তো জানালার পাশে টেবিলের উপর পা রেখে চোখে সানগ্লাস পড়ে বসে আছে মেহেরাব।
মেহেরাব মোমের দিকে তাকিয়ে হাতের দুই আঙুল দিয়ে টা টা দিলো তারপর দুই আঙুল ঠোঁটে ছুঁইয়ে মোমের দিকে ইশারা দিলো।
রাগে মোমের মাথা ব্লাস্ট হওয়ার উপক্রম।
মেহেরাব যাওয়ার পর লেকচারার বলল- মিস ক্যান্ডল?
-ইয়েস স্যার?
-স্ট্যান্ডআপ।
-ইয়েস স্যার।
-গেট আউট ফর্ম হেয়ার! ননসেন্স, স্টুপিড গার্ল। আউট!
-ইয়েস স্যার!
.
.

দুই দিন ধরে মেহেরাব কে দেখা যাচ্ছে না। আবার কি নতুন ফন্দি আঁটছে কে জানে।
জানালার ধারে বসে বসে মোম সারা রাত থিসিস লিখলো!
সেহেরি খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে জানালার পর্দা টেনে দেওয়ার সময় মোম একটা কালে গাড়ি দেখতে পেলো।
কাশফিয়া জানালো দুই দিন ধরে রাতে এই গাড়িটা জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকে।
আজ মোমের জন্য ভয়ংকর একটা দিন। মেহেরাবের জন্য স্পেশাল।
মোম কে নিয়ে মেহেরাব রেজিস্টার অফিসে এসেছে। রেজিস্ট্রি অফিসার এবং একজন কাজী
বসে বসে পেপার ঠিক করছে।
মোম মেহেরাবের দিকে একরাশ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিও না। নিজেকে অপরাধী লাগছে।
একটা গেইম তুমি আমার সাথে খেলেছো নিজের বিন্দু পরিমাণ দোষ না রেখে।
পাকা খেলোয়ার তুমি।
আমি তোমার মতো পাকা নয় তবে কিছু হলেও খেলতে চেষ্টা করছি।
জানিনা তোমার মতো হবে নাকি?
গুড গার্লের মতো রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন দিয়ে দাও এবং কবুল বলে ফেলো আমাকে নিজের সমস্ত লাইফের জন্য কবুল করে।
কয়েকদিন আগে কাশফিয়া বলল লাইব্রেরিতে কয়েকজন ছেলে তাকে ঘিরে ধরেছিলো।
ছূরি, রিভলবার দেখিয়ে একটা পেপারে সাইন নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
কাশফিয়া টেনশনে আছে, না জানি কোন পেপারে সে সাইন করেছে।
ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলা কালীন মেহেরাব এন্ট্রি নিয়ে মোম কে বলল -কথা আছে। বাহিরে চলো।
মোম যেতে নিষেধ করলে লেকচারার তাকে যাওয়ার আদেশ দিলো!
মেহেরাব গাড়ির উপর বসে বসে সানগ্লাসে ফু দিচ্ছে! মোম পেপার টা দেখে মেহেরাবের দিকে তাকালো।
পেপারটা স্টেম পেপার ছিলো রেজিস্ট্রি করা।
কাশফিয়ার সাইন নিচে।
মেহেরাব পেপার নিয়ে বলল- এটা একটা ম্যারেজ পেপার।
কনের সাইন আছে এখন বরের সাইন দিলেই ম্যারেজ কমপ্লিট।
-এর মানে?
-তুমি ভালো করেই জানো।
-এতোটা নিচ আপনি?
-শোন মেয়ে, ঐ যে দেখছো আমার এক ফ্রেন্ড? নেবি ব্লু পোশাকে?
ঐ ফ্রেন্ড এই ম্যারেজ পেপারে সাইন করার জন্য রেডি হয়ে আছে।
ছেলেটা হাত নাড়লো, মেহেরাবও হাত নাড়লো।
-আপনি এটা করতে পারেন না।
-আমি সব পারি! কাল সকালে রেজিস্ট্রি অফিসে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ি হোস্টেলের সামনে থাকবে।
যদি তুমি কাল রেজিস্ট্রি অফিসে আমাকে অপেক্ষায় রেখেছে তো কাল তোমার ধর্মের বোনের শুভ বিবাহ হবে আমার বন্ধু ভাইয়ের সাথে।
-আপনি আপনি…..। মোম বিশ্বাস করতে পাচ্ছেনা এসব কিছু।
-আমি জানি তোর চোখে আমি জঘন্য। আরেকটু জঘন্য হলাম না হয়।
আমার সাথে গেইম খেলার ফল তুমি পাবে।
এখন যাও হোস্টেলে যাও, ক্লাসের দরকার নেই। এতো পড়াশোনা করে কি করবে?
হবে টা কি?
রাতে আরাম করে ঘুমিও আমার সপ্ন দেখে দেখে। সকালে তো আমাকে জলজ্যান্ত দেখবেই।
.
মেহেরাব সাইন করে ফেলেছে। মোম সাইন করার সময় হাত কাঁপতে লাগলো।
মেহেরাব মোমের হাত ধরে বলল-সাইন করে নাও। আমি আছি তো!
[ নব মুসলিম মেহেরাব সবে অনুভব করেছে ঐশ্বরিক ক্ষমতা কে, সৃষ্টিকর্তা কে, তার মধ্যে ভুল ত্রুটি রয়েছে যা ধীরেধীরে শুধরে যাবে! তাকে ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং দোয়া করবেন তাকে যেন আল্লাহ তায়ালা হেদায়েত দান করে ]
.
❤আল-কোরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর একটি বাণীঃ
_১০। অনাথদের রক্ষণাবেক্ষণ করো। [সূরা বাকারা ২:২২০]
.
.
চলবে……..💔💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here