#নয়নতারা_২৫
#জেরিন_আক্তার_নিপা
অন্ধকারে ফোনের সামান্য আলোতে নক্ষত্র ভালো করে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আজ ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল কেন! সচারাচর ওদের বাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটির তেমন প্রব্লেম হয় না। নক্ষত্র মেইন সুইচের কাছে গিয়ে দেখল মেইন সুইচ অফ করা। রাগে নক্ষত্রর সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এই বাড়ির সব কয়টা কাজের লোক চোর। কাজ চুরিতে পারদর্শী ওরা। কোনো দিকে এদের খেয়াল নেই। আজ নয়নের কিছু হলে ছাড়বে না সে। কিন্তু কাকে ছাড়বে না? অপরাধী তো সে নিজে। সে-ই নয়নকে একা বাড়িতে রেখে গিয়েছিল। তার যাওয়া উচিত হয়নি।
—-আমার ভুলের জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও তারা।”
নক্ষত্র তবুও ভেবে পেল না, কেউ মেইন সুইচ অফ না করলে একা একা অফ হয়ে যাবে কীভাবে। নক্ষত্র বেশি ভাবার সময় পেলো না। মেইন সুইচ অন করে দিয়ে ছুটে নয়নের কাছে চলে এলো। এখনও নয়নের জ্ঞান ফিরেনি। নক্ষত্র এসে নয়নের পাশে বসল। কপাল কেটে গেছে। এখনও চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। নক্ষত্র ড্রয়ার থেকে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে এসে নয়নের কপালে ব্যান্ডেজ করে দিল। নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার। ব্যান্ডেজ করা জায়গায় ঠোঁট ছুঁইয়ে নক্ষত্র বলল,
—-বড় ভুল হয়ে গেছে আমার তারা। তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি আমি। আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছ। আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। রামিশা এতো জোর করল যে মুখের উপর না করতে পারলাম না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি। আর কক্ষনো কোথাও যাব না তোমাকে ছেড়ে। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো তারা।”
নক্ষত্র নয়নের পার্লস পরীক্ষা করছে। না, পার্লস রেট স্বাভাবিকই আছে। হয়তো মাত্রাতিরিক্ত ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।
—-তারা একা বাড়িতে আছে জেনেও মেইন সুইচ বন্ধ করল কে? ওকে ছাড়া তো বাড়িতে আর কেউ নেই। কাজের লোকের রাতে বাড়ির ভেতরে আসে না। এই কাজ তাহলে কে করলো? কেউ তারাকে ভয় দেখাতে চেয়েছে! কিন্তু ওর সাথে এমনটা কেউ কেন করতে চাইবে? তারার সাথে কার কী শত্রুতা থাকতে পারে?”
নক্ষত্র আকাশ পাতাল ভেবেও তারার শত্রু হিসেবে কাউকে কল্পনা করতে পারছে না। আর তাছাড়া দরজা তো বাইরে থেকে লাগানো ছিল। কেউ কীভাবে ভেতরে আসবে?
—-তারা কারো আগেপিছে থাকে না। কারো সাথে তেমন করে কথাও বলে না। এই বাড়িতে আমার সাথেই ওর যা কথা হয়। তাহলে ওর এতটা খারাপ কে চাইতে পারে?”
নয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রর চোয়াল শক্ত হয়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে।
—-আজকের ঘটনার পেছনে যে-ই থাকুক না কেন। আমি ওকে খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দেব। আমার শাস্তির কথা ওই মানুষটা সারাজীবন মনে রাখবে।”
নক্ষত্র নয়নের তার নিজের হাতে নিয়ে বসে আছে। রামিশা, নক্ষত্রর মা ফিরে এসেছে। এসেই রামিশা সবার আগে নক্ষত্রর ঘরে ছুটে আসে। পেছনে পেছনে নক্ষত্রর মা’ও আসে। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই রামিশা বলে,
—-ও মাই গড! নয়নতারার কী হয়েছে? কপালে ব্যান্ডেজ কেন ওর? কী হয়েছে নক্ষত্র?”
নক্ষত্র জবাব দেয় না। তারার এই অবস্থার জন্য তার রাগ কিছুটা রামিশার উপর এসে পড়েছে। রামিশা জোর না করলে সে যেত না। আর তারাও বাসায় একা থাকত না।
নয়নের জ্ঞান ফিরে অনেক রাতে। নক্ষত্র এতক্ষণ ওর হাত ধরে ওর পাশেই বসে ছিল। ঘরে এখন আলো আছে। তবুও জ্ঞান ফিরে নয়ন ভয় পাচ্ছে। চোখ খুলে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে বাবাকে ডাকতে লাগল সে।
—-বাবা! বাবা! আমার ভয় করছে বাবা!”
নক্ষত্রর চোখ লেগে এসেছিল মাত্র। নয়নের গলা পেয়ে ঝট করে চেয়ে উঠে সে। নয়নের পাশে এসে বসে ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নরম গলায় বলে,
—-আমি আছি তো তারা। আমি নক্ষত্র। এইযে দেখো তুমি আমার সাথে। ভয় নেই। আমি আছি। ভয় পেয়ো না তুমি। কিচ্ছু হবে না তোমার।”
নয়নের ভয় কাটে না। সে নক্ষত্রর বুকের সাথে গুটিয়ে যায়। মুখে কিছু বলে না। তবে ভয়ার্ত চোখে ঘরের চারপাশে দেখে। নক্ষত্র ওকে সাহস দেয়।
—-আমি থাকতে কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না। ভয় পেয়ো না। ভয় কিসের বলো। আমি তোমাকে আর কখনও একা ছাড়ব না। আমার ভুল হয়ে গেছে।”
এভাবে নয়ন কতক্ষণ নক্ষত্রর বুকে মিশে রইল সে নিজেও জানে না। এই অবস্থায়ই নয়ন ঘুমিয়ে পড়ল। নক্ষত্র ওকে বালিশে শুইয়ে দিল না। নিজের সাথেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করল। নয়নের কিছু হয়নি এতেই নক্ষত্র খুশি।
নক্ষত্র বাকি রাতটুকু আর ঘুমায়নি। কখন নয়ন জেগে যায়। জেগে গিয়ে আবার যদি ভয় পায়। তাই সে ঘুমঘুম চোখে জেগে রইল।
সকালে নয়নের চোখ আগে খুলে। গতরাতের কথা মনে করে তার কলিজা হিম হয়ে যায়। কী ভয়ংকর রাত গেছে তার জীবনে! ওটা তার জীবনে দ্বিতীয় ভয়ংকর রাত ছিল। নয়ন উঠতে নিলে বাধা পায়। চেয়ে দেখে সে নক্ষত্রর বুকে আর নক্ষত্র দুই হাতে শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে। নয়ন প্রথমে লজ্জা পায়। নক্ষত্রর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখে। নিজে নিজেই হাসে। এখন তার কোন রাগ নেই নক্ষত্রর উপর। নক্ষত্র সারারাত না ঘুমিয়ে তার পাশে বসেছিল। নয়ন যতবারই চোখ খুলেছে চোখের সামনে নক্ষত্রর মুখ দেখতে পেয়েছে। তখন আর ভয় লাগেনি তার। নয়ন হঠাৎ ভীষণ সাহসের একটা কাজ করে বসল। নক্ষত্রর চুল, চোখ, নাক অবশেষে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। লজ্জায় রাঙা হয়ে নক্ষত্রর বুকে মুখ লুকালো। জেগে গিয়েও এভাবে আরও অনেকক্ষণ শুয়ে থাকল নয়ন। নক্ষত্র জেগে যাবে এই ভয়ে নড়াচড়া করল না। চুপচাপ নক্ষত্রর বুকের ধুকপুকানি শুনতে লাগল। তার নিজের মনেও কিছু হচ্ছে। এই মুহূর্তে নিজেকে কতটা সুখী লাগছে বলে বোঝাতে পারবে না সে। এতো সুখ! পৃথিবীতে এতো সুখ আছে জানা ছিল না নয়নের। একজন মানুষকে ঘিরে কারো এতো সুখ থাকতে পারে! একেই কি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বলে?
নক্ষত্র নড়ে উঠলে নয়ন ঘুমের ভাব ধরে দাঁত কামড়ে পড়ে রইল। নক্ষত্র যদি বুঝতে পারে সে এখন জেগে আছে তাহলে নয়নের লজ্জার শেষ থাকবে না।
নক্ষত্র চোখ খুলে মাথা তুললে নয়নের ঘন-কালো চুল ভর্তি মাথা দেখতে পেল। নিঃশব্দে হেসে ফেলল সে। নয়ন নড়াচড়া করছে না। তার মানে ঘুমিয়ে আছে।
—-ভীতু বউ আমার। নিজে তো ভয় পেয়েছেই। সাথে আমাকেও ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।”
নয়ন ঘুমিয়ে আছে ভেবে নক্ষত্র ওর মাথায় চুমু খেলো। দু’হাতে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে পিষে ফেলার উপক্রম করল। এদিকে নয়ন বেচারির দম বন্ধ হয়ে আসছে। লজ্জা পেয়েই তো সে মরে যাচ্ছে অর্ধেক। মনে মনে নয়ন বলল,
—-এতো জোর গায়ে! আমার হাড্ডি মাংস এক হয়ে যাচ্ছে। ঢিলে করে ধরুন না একটু। আমি তো কোথাও চলে যাচ্ছি না। হালকা করে ধরুন। ছুটে পালাব না আমি।”
নক্ষত্রও মনে মনে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছে।
—-কখনও ছাড়ব না তোমাকে। তুমি চলে যেতে চাইলেও যেতে দেব না। দরকার পড়লে জোর করে আটকে রাখব। খাটের সাথে পায়ে বেঁধে রাখব। কাল রাতের পর তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি তারা। অনেক, অনেক, অনেক ভালোবাসি। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারতাম না। আর একটু সময় তোমার জ্ঞান না ফিরলে আমিও হয়তো মরে যেতাম। রামিশাকে দিয়ে আর জ্বালাতে হবে না তোমাকে। তোমার ভালোবাসা আমার দরকার নেই। আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। তুমি শুধু আমার কাছে থেকো। ভালোবাসতে হবে না। শুধু এখন যেমন আছো তেমনই সারাজীবন আমার সাথেই থেকো।”
দু’জনের মনের অবস্থাই এক। অথচ দু’জন দু’জনের অনুভূতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা। কেউ কারো মনের কথা জানে না। নিজেরা মনে মনে বিপরীত পক্ষের মানুষটাকে ভালোবেসে যাচ্ছে।
ওদের ভালোবাসা নীরবেই বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস, ভরসা, আস্থা আরও পাকা হচ্ছে।
নয়ন বাবার গলা শুনে ছুটে আসে। বাবা, ইমন, আকিব, ঝিনুক, বাবলু, জাহিদ সবাই এসেছে। নয়ন বাবাকে দেখে ছুটে এসে বাবার বুকে পড়ে। খুশিতে দিশেহারা হয়ে গেছে সে। বাবা আজ প্রথম তার শ্বশুরবাড়িতে এসেছে। তাও আবার এই সকাল সকাল। নয়নকে সুস্থ দেখে বাবার দেহে প্রাণ ফিরে এলো।
—-মা কেমন আছিস তুই?”
নয়নের কপালের ব্যান্ডেজ চোখে পড়ে উনার। রাগে দাঁতে দাঁত চাপেন। নক্ষত্র তার কথা রাখতে পারেনি। উনার মেয়ের খেলার নক্ষত্র রাখতে পারেনি। তাই নয়নের এই অবস্থা হয়েছে।
—-তুই ঠিক আছিস মা?”
—-আমি ঠিক আছি বাবা। আমার আবার কী হবে?”
নয়ন বুঝতে পারে না বাবা এসব কী বলছে। কাল রাতের কথা বাবা কি জেনে গেছে? নক্ষত্র বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে? আজব লোক তো! এই কথা বাবাকে বলতে গেল কেন আবার!
—-আমার কিছু হয়নি বাবা।’
ইমন নয়নকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।
—-মুখের উপর মিথ্যা বলছিস কেন? আমাদের কি চোখ নেই? তোর কপালের ব্যান্ডেজ দেখতে পাইনি আমরা? কানা নাকি আমরা?”
ঝিনুক নয়নের কাছে এগিয়ে এলো।
—-কীভাবে হয়েছে এসব? নক্ষত্র তোকে একা বাড়িতে রেখে বাইরে খেতে গিয়েছিল! খাওয়াটা ওর জন্য এতো জরুরি যে ঘরে বউকে ফেলে রেখে সে পেটের দায়ে চলে গেল! কেন রে নয়ন তোদের বাড়িতে রান্না হয় না?”
ঝিনুক নক্ষত্রর উপর প্রচণ্ড রেখে আছে। নক্ষত্রর এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ মেনে নিতে পারছে না সে। সকালে এই কথাটা শুনেই সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অন্ধকারে নয়ন কতটা ভয় পায় তা কারো অজানা নয়। সবাই জানে নয়ন কেন ভয় পায়।
এতক্ষণে নক্ষত্রও শ্বশুরকে দেখে বেরিয়ে এসেছে। বাবাকে সালাম দিয়ে বলল,
—-আপনারা আসবেন আমাকে আগে জানাননি কেন বাবা?”
চেহারার ভাব কঠিন করে নয়নের বাবা নক্ষত্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নক্ষত্র রাতের ব্যাপারটা কাউকে জানায়নি। ওরা জেনে গেছে নক্ষত্র আন্দাজ করতে পারল না।
—-বসুন বাবা। তারা সবাইকে ঘরে নিয়ে যাও।”
ইমন রাগ সামলে রাখতে পারল না।
—-তোমার বাড়িতে বসতে আসিনি আমরা। আমার বোনের কিছু হলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম না নক্ষত্র। দরকার পড়লে তোমাকে খুন করে আমি জেলে যেতাম।”
নয়নের বাবা ধমক দিয়ে উঠলেন।
—-আহ! এসব কথা কেন হচ্ছে?”
আকিব তাচ্ছিল্যের চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকাল।
—-আমি আগেই জানতাম, এমন কিছু হবেই। ও কখনও আমাদের নয়নের যোগ্যই ছিল না। নয়নকে দেখে রাখতে পারবে না ও।”
নক্ষত্র হতভম্ব। সে এখনও বুঝতে পারছে না। তার শ্বশুর, শালারা এতো রেগে আছে কেন? কী করেছে সে?
ঝিনুকের কথায় নক্ষত্রর ডাউট ক্লিয়ার হলো। কাল রাতের কথা জেনে গেছে ওরা। কিন্তু ওদের জানালো কে? সে তো জানায়নি। তারা জানানোর প্রশ্নই আসে না। তাহলে? অন্য কে জানাল!
—-তুমি নয়নকে একা বাড়িতে রেখে কীভাবে মা বন্ধুকে নিয়ে বাইরে যাও নক্ষত্র! নয়ন বাড়িতে একা ছিল। এর থেকে বড় কিছুও তো ঘটতে পারত। চোর ডাকাত এসে একা বাড়িতে নয়নকে মেরে ফেলে রেখে যেতে পারত। তুমি এতটা দায়িত্বহীন কীভাবে হলে?”
নক্ষত্রর কাছে বলার মতো কিছু নেই। অন্যায় তারই। নয়নও চুপ করে আছে। নক্ষত্রর মুখের দিকে তাকিয়ে তার নিজেরই খারাপ লাগছে।
নয়নের বাবা নক্ষত্রর সাথে একটা কথাও বলল না। সে শুধু নয়নকে বলল,
—-চল মা। এই বাড়িতে তোর থাকতে হবে না। যেখানে তোর খেয়াল রাখার মানুষ নেই সেখানে আমি তোকে থাকতে দিব না। আমাদের সাথে চল তুই।”
নয়ন একবার বাবার মুখের দিকে দেখল। একবার নক্ষত্রর অসহায় চোখে তার চোখ পড়ল। বাবার মুখের দিকে চেয়ে নয়ন খুব নরম গলায় বলল,
—-আমি যাব না বাবা। এখানে আমার খেয়াল রাখার মানুষ আছে।”
সবাই নয়নের কথায় স্তম্ভিত। নয়ন বাড়ি যেতে না করবে এমনটা হয়তো তার বাবাও ভাবেনি। অবিশ্বাস্য চোখে নক্ষত্রর মুখের দিকে তাকালেন উনি। উনার মেয়েকে এই ছেলে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। নয়ন তার বাবাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে! এই ছেলেটার জন্য! বাবার কি রাগ হওয়া উচিত? কিন্তু মনে মনে খুশি হলেন তিনি। নয়ন বাবার হাত ধরে বিনীত গলায় বলল,
—-তুমি রাগ করো না বাবা। আমি এখানে ভালো আছি। তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না।”
নক্ষত্রও বাকি সবার মতো অবাক হয়েছে। আসলে সে একটু বেশিই অবাক হয়েছে। যে মেয়ে বিয়ের পরের দিন তাকে রেখে ভাইদের সাথে চলে গিয়েছিল। আজ সে বাবাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে! বলছে যাবে না! নক্ষত্র কি কানে ভুল শুনছে? নয়নতারা সত্যিই যেতে চাইছে না! তার কাছে থাকতে চাইছে।
নয়নের বাবা যাবার আগে নক্ষত্রকে একটা কথাই বলে গেল,
—-তোমার থেকে এমনটা কখনও আশা করিনি আমি। পরের বার এমন কিছু ঘটলে আমার মেয়ে যেতে না চাইলেও ওকে জোর করে নিয়ে যাব। সেদিন তুমিও আটকাতে পারবে না আমাকে।”
ওরা চলে গেলে নক্ষত্র নয়নের দিকে তাকাল। নয়ন মিষ্টি করে হেসে চলে গেল। বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নক্ষত্র। তার কাছে সবকিছু অবাস্তব। স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। নিজেকে একটা চিমটি কাটল সে। ব্যথা পেল অনেক।
—-এসব তাহলে আমার স্বপ্ন না!”
চলবে___
/