পদ্মপাতার জল পর্ব ১২

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১২
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

দুজনেই পদ্মকে দুইপাশ থেকে ধরে টেনে নিয়ে গেল। ইয়াশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ভাগ্য ভালো দুইজনে ওকে টেনে নিয়ে গেছে নইলে আজকে আমাকে বানরের মতো গাছে উঠতে বলত।
.
.
.
.
ছয়টা বেজে গেছে। ইয়াশ সোফায় বাসে মোবাইল টিপছে। মাহফুজ আমান ড্রয়িংরুমে বসে পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছে। আয়েশা আমান রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছেন। ইনু আর রিনি রেডি হয়ে নিচে চলে এসেছে। দুজনকেই সুন্দর লাগছে। একটু পরে ইরিনা নিচে নেমে এল তৈরি হয়ে। ইয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল, কি রে আপু, মেয়েটা সব সময় এত লেট করে কেন?

ইরিনা- কারন ও ইনু আর রিনিকে তৈরি করিয়ে তবে রেডি হতে গেছে।

ইয়াশ- ভালো লাগে না। এমনিই লেট হয়ে যাচ্ছে।

ইরিনা- একটু ধৈর্য্য ধর। মেয়েটাকে রেডি হতে দে।

ইয়াশ আবার মোবাইলের দিকে মনোযোগ দিল। টিপতে টিপতে বলল, আপু এক গ্লাস পানি দিবি? আপু, আপু…… ইনু… ইয়াশ তিনজনের দিকে তাকিয়ে দেখল ওরা হাঁ করে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াশও সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল। পদ্ম নিচের দিকে তাকিয়ে গ্রাউন ধরে নামছে। ওর পরনে একটা লাল খয়রি গ্রাউন। ছাড়া হালকা ভেজা চুল কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। নিচে তাকানোয় সামনের ছোট চুলগুলো চোখের সামনে চলে এসেছে। বড় চুলগুলো দুইপাশে চিকন কালো ক্লিপ দিয়ে আটকানো। ডানপাশে একটা লাল প্রজাপতির ক্লিপ পরেছে যার ডানা ও নড়ার সাথে উপরে নিচে দুলছে। কানে ছোট লাল টপ। গলা খালি। ইয়াশের হাত থেকে হঠাৎ মোবাইলটা পড়ে গেল। পড়ার শব্দে সবার ঘোর কাটল। সবাই ইয়াশের দিকে তাকাতেই ও বলল, কি? সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?
প্রত্যেকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। ইরিনা বলল, মোবাইলটা পড়ে গেছে তো তাই তাকিয়েছি। তা মোবাইলটা পড়ল কি করে ভাই?
ইয়াশ খানিকটা তোতলাতে তোতলাতে বলল, পপড়ে গেছে আরকি। চলো সবাই লেট হয়ে যাচ্ছে।

ইয়াশ সবার আগে বের হয়ে গেল। ভয় হতে লাগল কি করে সামলাবে আজ পদ্ম নামক মায়াকে! পদ্ম ইরিনার কাছে এসে বলল, আপু আমাকে খুব খারাপ দেখতে লাগছে? আয়েশা আমান বললেন, তোকে তো পুরো নতুন বউ লাগছে। পদ্ম শুনে লজ্জা পেয়ে গেল। ইরিনা ওর মুখ তুলে বলল, আর লজ্জা পেতে হবে না। চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
.
মাহফুজ আমান, আয়েশা আমান, ইনু আর রিনি উঠল একগাড়িতে। ইয়াশ, ইরিনা আর পদ্ম উঠল আরেকটাতে। ইরিনা ইচ্ছে করে পদ্মকে ইয়াশের পাশের সিটে বসিয়ে নিজে পেছন সিটে গিয়ে বসল। দুটো গাড়ি রওনা দিল একসাথে। কিছুদূর যাওয়ার পর, ইরিনা পেছন থেকে বলল, ভাই আজকে মনে হচ্ছে তুই রাস্তা থেকে আশপাশটা বেশি দেখছিস।

ইয়াশ- কই?

ইরিনা- বুঝেছি। গাড়ি থামা। আমি চালাব। কখন আবার তুই সবাইকে নিয়ে স্বর্গে বেড়াতে যাস।

পদ্ম- আপু, তুমি গাড়ি চালাতে পারো?

ইরিনা- হুম।

ইয়াশ- কিন্তু ……

ইরিনা কোনো কথা শুনল না। শেষে বাধ্য হয়ে ইরিনার উপর গাড়ির দায়িত্ব দিতে হল।
.
.
.
.
ওরা সাড়ে সাতটার আগেই পৌঁছে গেল। আদনান, রাফি, নীলা আর মনিকা গেটেই দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশের গাড়ি থামতেই ওরা এগিয়ে এল। মনিকা লাফাতে লাফাতে ইয়াশের কাছে এসে ওর হাত ধরে বলল, কেমন আছো জানু? কালকে থেকে একটা কলও করোনি, ম্যাসেজেরও আনসার দাওনি।

আদনান- কি রে ইয়াশ, তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন? মন খারাপ নাকি?

রাফি- ওয়াট এ বিউটি!!!!!

ইরিনা আর পদ্ম গাড়ি থেকে নামল। সবাই পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে ওর অস্বস্তি বেড়ে গেল। ইয়াশ বুঝতে পেরে বলল, ভেতরে যেতে দিবি না?

আদনান – অবশ্যই, আয় আয়।

ওরা সবাই ভেতরে গেল। আদনান মাইক নিয়ে বলল, আমার বেস্টফ্রেন্ডরা সবাই চলে এসেছে। এখন কি অনুষ্ঠান শুরু করব?

সবাই চিৎকার করে বলল, ইয়েস।

বার্থডে কেক আনা হল ভেতর থেকে। আদনান দাঁড়াল কেকের সামনে। ওর বাবা মা আর বন্ধুরা দাঁড়াল ওর পাশে। এর মধ্যে ফটোগ্রাফার চটপট কয়টা ছবি তুলে নিল। তারপর কেক কাটা হল। সবাই চিৎকার করে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ বলতে লাগল। খাওয়া শেষে এবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পালা। আদনান মাইকে বলল, আমার বার্থডে পার্টি আজ শুরু হবে ইয়াশের গান দিয়ে।

রাফি একটা গিটার ইয়াশের হাতে ধরিয়ে দিল। আদনানের বাড়ির মাঝখানটায় গোল একটা মঞ্চ করা হয়েছে। ইয়াশ ওখানে মাইক নিয়ে উঠল। আলো ওর দিকে ফোকাস হতেই ও বলল, আমি গান গাইব তবে একটা শর্তে।

সবাই- কি শর্ত?

ইয়াশ- মিস পদ্মকে আমার সাথে গাইতে হবে।

আরেকটা লাইট পদ্মের দিকে ফোকাস হতেই ও চমকে উঠল। পদ্ম যেতে চাইল না কিন্তু সবার চাপে ওকে মাইক নিয়ে মঞ্চে উঠতেই হল। ইয়াশ একটা চেয়ারে বসে গিটার বাজনো শুরু করতেই চারপাশ চুপ হয়ে গেল। তারপর গান শুরু হয়ে গেল। ইয়াশ বেশ ভালোই গান গায়। চারপাশ অন্ধকার। এখন লাইটের ফোকাস দুইজনের দিকে। পদ্ম নার্ভাস হয়ে গেল। কিন্তু গান শুরু হতেই আস্তে আস্তে নার্ভাসনেসটা কেটে গেল। দুইজনের গলা মিলে এক সুরে।

♪ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে
ভাবনা তোর আসছে দিন রাত ধরে
এলোমেলো মনটাকে কি করে খেয়াল রাখে
কেন আমি এত করে তোকে চাই…

পারব না আমি ছাড়তে তোকে
পারব না আমি ভুলতে তোকে
পারব না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার………

ভাল্লাগে চাইলে তুই আড়চোখে
চাইছি তোর ওই দুচোখ আর তোকে
এলোমেলো দিস করে
সারাটা দুপুর ধরে
বসে বসে উড়ে চলি কল্পনায়…

দেখা দিয়ে তুই যদি চলে যাস
কি কারণে বল এত পিছু চাস
আমিও কি চেয়ে বসি তোর কাছে
সাধাসিধে মনে করে কি এখন
কি কারণে বল এত উচাটন
আমিও কি পেয়ে বসি তোর কাছে

কথা চিনুক, কথার রকম
আমায় ডাকুক…

পারব না আমি ছাড়তে তোকে
পারব না আমি ভুলতে তোকে
পারব না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার………

ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে
ভাবনা তোর আসছে দিন রাত ধরে
এলোমেলো মনটাকে কি করে খেয়াল রাখে

পারব না আমি ছাড়তে তোকে
পারব না আমি ভুলতে তোকে
পারব না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি একবার………♪

গানের মাঝেই ইয়াশ চেয়ার থেকে উঠে এল মাইক নিয়ে। এগিয়ে গেল পদ্মের দিকে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here