পদ্মপাতার জল পর্ব ১১

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১১
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ওর অবস্থা দেখে শেষে ইয়াশ কম্বলের নিচে ঢুকে ওকে জড়িয়ে ধরল। এভাবেই ইয়াশের চোখজোড়া ঘুমে লেগে গেল। পদ্মও একসময় ইয়াশের বুকে ঘুমিয়ে গেল।
.
.
.
.
সকালে পদ্মের জ্বর ছেড়ে এল। দুইজন এখন বিছানার দুইপ্রান্তে। ইয়াশ কম্বল আগেই লাথি দিয়ে সরিয়ে ফেলে দিয়েছে। পদ্মর গায়ে কিছুটা জড়ানো। সকালের আলো ঢুকতেই পদ্ম কিছুটা নড়ে উঠল। এরপরই ইয়াশ ঘুমের মধ্যে এমন জোরে আড়মোড়া ভাঙল যে ওর পায়ের ধাক্কায় পদ্ম বিছানা থেকে নিচে পড়ে গেল। সাথে সাথে পদ্মের ঘুম ভেঙে গেল। নিচে পড়েই চেঁচাতে লাগল।

পদ্ম- ও আল্লাহ গো, মেরে ফেলল গো। কোমরটা মনে হয় ভেঙ্গেই ফেলল। ইরিনা আপু…তুমি কবে থেকে ঘুমে লাথি মারা শুরু করলে! ওরে বাবা……

ইয়াশ ওর চিল্লাচিল্লিতে আবার নড়ে ঘুমের ঘোরে বলল, আপু, এত সকালে চেঁচাচ্ছো কেন। উঠতে পারব না। চলে যাও।

ছেলে কন্ঠ শুনে পদ্মের মুখে তালা পড়ে গেল। ও বিছানায় দুই হাত রেখে নিচ থেকে উঁকি দিল। ইয়াশ ওর দিকে ফিরে ঘুমিয়ে আছে। ওকে দেখে পদ্ম আস্তে করে মাথা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, এই নেংটি ইঁদুর এখানে কি করছে!!!! বলেই আবার উঁকি দিতেই ইয়াশের খোলা চোখ দেখে চিৎকার করে উঠল। ইয়াশও হঠাৎ ওকে দেখে চিৎকার করতে গিয়ে বিছানার অপর পাশে থপাস করে পড়ল।

ইয়াশ- আউ, এই মেয়ে এত জোরে চিৎকার করছো কেন? জীবনে মানুষ দেখো নাই?

পদ্ম- চিৎকার কি সাধে করছি? এত বড় নেংটি ইঁদুর দেখলে কে না ভয় পাবে।

ইয়াশ- কিহ!!! আবার আমাকে নেংটি ইঁদুর বললে।

পদ্ম- নেংটি ইঁদুরকে নেংটি ইঁদুর বলব না তো কি বলব। যাই হোক, আপনি এখানে কি করছেন?

ইয়াশ- এটা আমার বোনের রুম। আমি যখন ইচ্ছা আসব। থাকব। তার কৈফিয়ত তোমাকে কেন দেব?

পদ্ম- এ্যাঁহ……মনে হয় যেন ছোট খোকা। জানেন না বড় হলে একটু বেছে চলতে হয়।

ইয়াশ- না জানি না। তোমার ফালতু তর্ক বন্ধ করো তো।

বলে ইয়াশ উঠে বিছানায় বসল। কিছু বলার আগেই আবার শুয়ে পড়ল। পদ্ম নিচে বসে বসেই বলল, এই যে মিস্টার, আমাকে কে উঠাবে শুনি?

ইয়াশ- তুমি তো ছোট খুকি না। নিজে নিজেই উঠে যাও।

পদ্ম- নিজে উঠতে পারলে এতক্ষণে উঠেই যেতাম। লাথি দিয়ে ফেলে তো আমার কোমরটা ভাঙলেন।

ইয়াশ- কে? আমি! লাথি! ইম্পসিবল।

পদ্ম- ইস্ রে। সাধু পুরুষ। ধুর বাবা। হুদাই বকবক করছি। নিজেই উঠতে হবে।

ওর কথার মাঝেই ইয়াশ নাক ডাকা শুরু করল। নাক ডাকা শুনে পদ্মের ইচ্ছে করল ঘুষি মেরে নাকটা ভেঙ্গে দিতে। কিন্তু তার আগে ওঠা দরকার। পদ্ম নিজে ওঠার ট্রাই করতে লাগল। হঠাৎ বাম হাতে চাপ পড়তেই পোড়া জায়গায় ব্যাথা পেল। সাথে সাথে ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেলল ও। মুখ দিয়ে একফোঁটা শব্দও বের করল না। তারপর হঠাৎ মনে হল ও শূন্যে ভাসছে। চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল। ইয়াশ ওর সামনে পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে বাম হাতটা টেনে নিল।

পদ্ম- কি করছেন?

ইয়াশ- চুপ করে বসো।

ইয়াশ ব্যান্ডেজটা খুলল। এখনো হাতে ফোসকা পড়ে আছে। ফোসকা চারপাশ লাল হয়ে আছে। ইয়াশ মলম নিয়ে হাতের পোড়া জায়গায় লাগাতে লাগল। পদ্ম চোখ বন্ধ করে দাঁতের দাঁত চেপে রইল। ইয়াশ ব্যাপারটা খেয়াল হতেই জিজ্ঞেস করল, খুব ব্যাথা করছে?

পদ্ম চোখ খুলে তাকাল। ইয়াশ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পদ্মের চোখে ব্যাথায় সামান্য পানি জমে আছে। হঠাৎ ওর কথায় বৃষ্টির পানির মতো টপ টপ করে ঝরতে লাগল ওর চোখ থেকে। নিজের চোখের পানির দেখে নিজেও অবাক হয়ে গেল পদ্ম। ইয়াশ চোখের পানি মুছে বলল, মনে হচ্ছে খুব বেশিই ব্যাথা করছে।

পদ্ম অন্যদিকে মুখ ফিরে বলল, উঁহু।

ইয়াশ- তাহলে?

পদ্ম- কিছু না।

ইয়াশ ওর হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে আবার ওর দিকে তাকাল। পদ্ম চোখের পানি মুছে ফেলেছে কিন্তু নাক টানছে। ইয়াশ মুচকি হেসে ওর হাতে টিস্যুর বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল, একটা সত্যি কথা বলো তো।

পদ্ম- কি?

ইয়াশ- হাতটা পুড়ল কি করে?

পদ্ম ইয়াশের চোখের দিকে তাকাল। ইয়াশকে দেখে ও কিছুই বুঝতে পারে না। এখনো খারাপ কিছু দেখেনি। হয়ত সামান্য বিরক্তিভাব, সামান্য রাগ, সামান্য যত্ম, সামান্য ভালোবাসা। ভেবেই ওর লজ্জায় কান লাল হয়ে গেল। মুখে লজ্জার হাসি আসার আগেই মাথা নামিয়ে ফেলল। কিন্তু লুকাতে পারল না। সবকিছু ইয়াশের চোখে পড়ে গেল।

ইয়াশ- কি হল? এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমি কি এমন জিজ্ঞেস করলাম যে এত লজ্জা পাচ্ছো?

পদ্ম- কিছু না। আর হাতটা এমনিই পুড়ে গেছে গ্রিল করার সময়।

ইয়াশ- সত্যি বলছ?

পদ্ম উপরে নিচে মাথা নাড়ল। ইয়াশ বলল, আমি আপুকে পাঠিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছি। নিজের যত্ন নেবে। বলেই চলে যাচ্ছিল। পদ্ম ডেকে বলল, একটা কথা ছিল।

ইয়াশ- কি?

পদ্ম- কালকে মানে…… আপনি কোথায় ঘুমিয়েছেন?

ইয়াশ- কালকে বৃষ্টিতে ভিজে তো ভালই জ্বর বাঁধিয়ে ছিলে। আর তোমার এত ঠান্ডা লাগছিল তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ছিলাম। তখন চোখ লেগে গিয়েছিল।

পদ্ম- ও…আচ্ছা, আপনি মনিকাকে অনেক ভালোবাসেন, তাই না?

ইয়াশ- হঠাৎ?

পদ্ম- না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।

ইয়াশ আর কিছু না বলে একটা কিলার হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। এই হাসির যে কি অর্থ ছিল তা পদ্ম বুঝতে পারল না।
.
.
.
.
বিকালে পদ্ম ইনু আর রিনির সাথে বাগানে চলে গেল। ইয়াশ সারাবাড়ি পদ্মকে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষে বাগানে এল। এসে দেখল পদ্ম ওদের পেয়ারা পেড়ে দিচ্ছে। ওকে এমনভাবে দেখে ইয়াশের মেজাজ চরম খারাপ হল। এসেই চিৎকার করে বলল, বাড়িতে কি কাজের অভাব হয়েছিল নাকি বানর হওয়ার ইচ্ছা জেগেছে?

পদ্ম ইয়াশের চিৎকার শুনে একটা ঢালে পা দুলিয়ে বসে বলল, সত্যিই কাজের অভাব হয়েছিল। আপনারও হয়েছে নাকি?

ইয়াশ- আমার হতে যাবে কেন?

পদ্ম- তাহলে এখানে কি?

ইয়াশ- এটা আমার বাবার বাগান। আমি যখন ইচ্ছা তখন আসব। তাতে কার কি?

পদ্ম- তা ঠিক।

ইয়াশ- এখুনি নামো। হাতে ব্যাথা করছে না?

পদ্ম- করলে কি পেয়ারাগুলো কি আপনি পেড়ে দিবেন।

ইয়াশ ইতস্ততভাবে বলল, দেবো। আগে নামো। পদ্ম নেমে এসে বলল, যান।

ইয়াশ- কোথায়?

পদ্ম- গাছে। পেয়ারা পেড়ে দিন।

ইয়াশ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, আজকে আদনানের জন্মদিনের পার্টি আছে। সবাইকে যেতে বলেছে। এতক্ষণ ইনু আর রিনি দুইজনের কথা শুনছিল। পার্টির কথা শুনে দুজনেই আনন্দে লাফিয়ে উঠল।

ইনু- সত্যি ভাইয়া?

ইয়াশ- হুম।

ইনু এবার পদ্মকে টেনে বাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আজকে তুমি আমাকে সাজিয়ে দেবে।

পদ্ম- কিন্তু পেয়ারা…

রিনি- কালকে পদ্ম আপু। চলো চলো।

দুজনেই পদ্মকে দুইপাশ থেকে ধরে টেনে নিয়ে গেল। ইয়াশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ভাগ্য ভালো দুইজনে ওকে টেনে নিয়ে গেছে নইলে আজকে আমাকে বানরের মতো গাছে উঠতে হতো।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here