পদ্মপাতার জল পর্ব ১৭

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৭
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ- পদ্ম, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

পদ্ম ওর দিকে তাকাল। ইয়াশ বলল, তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?

পদ্ম একটু চুপ করে থেকে বলল, হুম।

ইয়াশ- কে সে?

পদ্ম- জেনে আপনি কি করবেন?

ইয়াশ- কারন জানার আমার অধিকার আছে।

পদ্ম ওর ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বলল, কোনদিক দিয়ে আপনার অধিকার আছে? ইয়াশ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, সেটা পরে জানতে পারবে। এখন চলো ঠান্ডা লেগে যাবে নইলে। ইয়াশ হাত ধরে ছাদ থেকে নামিয়ে আনল ওকে। একবারও ওর দিকে তাকাল না।
.
.
.
.
পোশাক পরিবর্তন করে ইয়াশ সোজা মাহফুজ আমানের কাছে চলে গেল। আজকে উনি তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে এসেছেন। এখন পড়ার ঘরে বসে পড়ছেন। ইয়াশ দরজায় নক করতেই চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আবার বইয়ে মনোযোগ দিলেন। ইয়াশ তাঁর পাশে চেয়ার টেনে বসল।

মাহফুজ- কতদিন পরে এলি এই রুমে? সেই যে মাস্টার্স পাশ করলি তারপর তো এই রুমে ঢোকাই বন্ধ করে দিলি।

ইয়াশ- হুম।

মাহফুজ- আজ হঠাৎ কি মনে করে? কিছু বলতে এসেছিস?

ইয়াশ- হুম।

মাহফুজ- তাহলে বলে ফেল।

ইয়াশ- পদ্ম কি কিছু জানে?

মাহফুজ- কি ব্যাপারে?

ইয়াশ- বিয়ের ব্যাপারে। ওর কিছু মনে আছে কি না?

মাহফুজ- আমার অভিজ্ঞতা যতদূর বলে, ওর কিছু মনে নেই। ফরহাদ ভাইও মনে হয় কিছু বলেনি। হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস?

ইয়াশ- এখন কি সম্ভব নয়?

মাহফুজ আমান চুপ করে রইলেন। চোখের চশমাটা পাশের ছোট টেবিলে রেখে চেয়ারে হেলান দিলেন। ইয়াশও চুপ করে পাশে বসে আছে। একটু পর তিনি মুখ খুললেন।

মাহফুজ- দেখ বাবা, তোরা ছোট থাকতে আবেগের বসে হোক বা সম্পর্ক রক্ষার্থে হোক, তোর আর পদ্ম মায়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। ওর তখন মাত্র পাঁচ বছর বয়স। আর তোর নয় বছর ছিল। ও সব সময় তোর পিছু পিছু ঘুরত। তোকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারত না। তাই সবাই ধরেই নিয়েছিলাম তোরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবি না। কিন্তু সেই বছরই আমরা চট্টগ্রাম চলে এলাম। আসার সময়ে পদ্ম মায়ের কান্নাভরা মুখটা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। শুনেছিলাম সে নাকি এক দেড় দিন না খেয়ে ছিল। এমনকি জ্বরও চলে এসেছিল কাঁদতে কাঁদতে। এই কথা তখন কাউকে বলিনি। কারন বললেই সবাই ওখানে ছুটে যেত। বিয়ের কথা তোর হয়তো মনে আছে। কিন্তু সেই সময়ের কথা পদ্ম মায়ের মনে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন এর মধ্যে যদি পদ্ম মায়ের অন্য কাউকে ভালো লেগে থাকে তবে……

ইয়াশ- আব্বু, তাও একবার চেষ্টা করে দেখবে? ফরহাদ আঙ্কেলকে বলবে?

মাহফুজ আমান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন তোরা প্রাপ্ত বয়স্ক। তাই আপত্তি থাকার কথা না। তবুও সবার মতামতের ব্যাপার আছে।

ইয়াশ- জানি।

মাহফুজ- আমি ফরহাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখব উনি কি বলেন।

কথাটা শুনে ইয়াশের মুখে হাসি ফুটল। সে মাহফুজ আমানকে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমাকে একটা সিক্রেট বলার আছে।

মাহফুজ- কি সিক্রেট?

ইয়াশ ছেড়ে দিয়ে বলল, তোমার মনে আছে প্রত্যেকদিন আমি বাড়ি থেকে সকালবেলা বের হয়ে যেতাম দুপুরে ক্লাস হওয়ার সত্ত্বেও।

মাহফুজ- হ্যাঁ, তুই তো প্রাইভেট পড়ে খেলতে যেতি। তারপর স্কুলে যেতি।

ইয়াশ- না।

মাহফুজ- তাহলে?

ইয়াশ বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর পিছন ফিরে বলল, গ্রামে গিয়ে পদ্মকে দেখতে যেতাম। মাহফুজ আমান কিছু বলার আগেই ইয়াশ দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। মাহফুজ আমান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন দরজার দিকে তার পাগল ছেলের কথা শুনে। তারপর আস্তে করে ওনার মুখে হাসি ফুটল।
.
.
.
.
পদ্ম ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে আছে। ইনু আর রিনি স্কুল থেকে ফেরেনি। ইরিনাও এক বান্ধবীর বাসায় গেছে। বাইরে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে বিরক্তিকর এক সময় কাটছে ওর। ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষণ টিপল। তারপর আবার রেখে দিল। ঘড়ি দেখল। পাঁচটা ছয়। পাঁচটায় ইনু আর রিনির স্কুল ছুটি হয়। আসতে আরও বিশ পঁচিশ মিনিট লাগবে। এর মাঝে কি করা যায় তা ভাবতে ভাবতে রুমে তিন চার বার চক্কর দিল। তারপর আর থাকতে না পেরে নিচে চলে গেল। গিয়ে দেখল আয়েশা আমান রান্নাঘরে কি যেন করছে। টিভির রুম থেকে আওয়াজ আসছে। পদ্ম একবার উঁকি দিয়ে দেখল। ইয়াশ সোফায় বসে টিভিতে মুভি দেখছে। হাতে পপকর্ন। পদ্ম রান্নাঘরের দিকেই পা দিল। সেখানে যাওয়ার আগেই হঠাৎ ইয়াশ ওর হাত ধরে টিভির রুমে নিয়ে এল। কিছু বলার আগেই দরজা মেরে দিল রুমের।

পদ্ম- কি হয়েছে? এভাবে টেনে আনলেন কেন?

ইয়াশ- আমার ইচ্ছা তাই।

পদ্ম- ইহ্। সরুন, আমি আন্টির কাছে যাব।

ইয়াশ- না।

পদ্ম- আমি যাব।

ইয়াশ- না।

পদ্ম- হ্যাঁ।

ইয়াশ- শুনবে না তো আমার কথা?

পদ্ম- না।

ইয়াশ- সত্যি?

পদ্ম- হ্যাঁ, সত্যি।

ইয়াশ- ভেবে বলো। রুমে কিন্তু শুধু তুমি আর আমি।

পদ্ম একবার পুরো রুমের দিকে তাকাল। তারপর ঢোক গিলে বলল, তোতো কি কি কি হয়েছে? আআমি কি আপনাকে ভভয় পাই?

ইয়াশ- ভয় পাও না?

ইয়াশ ওর দিকে এগিয়ে এল। পদ্ম পিছাতে লাগল। পিছাতে পিছাতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল। ইয়াশ দেয়ালে এক হাত রেখে খুব কাছে এসে বলল, এখনও ভয় লাগছে না? ইয়াশ খুব কাছে চলে এলে পদ্ম ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। দুই হাত দিয়ে জামা কুঁচকে ধরল। ইয়াশ হেসে কপালে একটা চুমু দিয়ে ওকে সোফায় টেনে আনল। পদ্ম চোখ বড় বড় করে রইল। ইয়াশ ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর হাতে পপকর্নের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিল। তারপর ওকে অবাক করে দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। ইয়াশ বলল, আমাকে পপকর্ন খাইয়ে দেবে।

পদ্ম- কি করছেন কি আপনি? কি হয়েছে আপনার। সরুন। আমি বাইরে যাব।

ইয়াশ- তিন ঘন্টার আগে তোমার ছুটি নেই। মুভিটা শেষ হবে তারপর যাবে।

পদ্ম পড়ল মহাজ্বালায়। না পারছে উঠতে না পারছে থাকতে। ইয়শ একটা রোমান্টিক মুভি ছেড়ে দিয়েছে আর খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মুভি কিছু কথায় ওর লজ্জায় কান লাল হয়ে যাচ্ছে। তার উপর একটু পর পর ইয়াশের মুখে পপকর্ন দিতে হচ্ছে। পদ্ম মনে মনে ভালো মতো ওকে ধুয়ে দিচ্ছে কিন্তু সামনে কিছুই বলতে পারছে না।

টানা তিন ঘন্টা ওকে বসিয়ে রেখে ইয়াশ আরাম করে শুয়ে মুভি দেখল। মুভি শেষ হতেই ও উঠে পড়ল। পদ্মের পা ঝিনঝিন করে উঠল। মনে হল অবশ হয়ে গেছে। ইয়াশ আড়মোড়া ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করল, হাঁটতে পারবে?

পদ্ম রাগ করে বলল, পারব।

ও উঠে এক পা বাড়াতেই পড়ে গেল। ইয়াশ দ্রুত সোফা থেকে উঠে ওকে কোলে করে সোফায় বসিয়ে দিল।

ইয়াশ- খুব ভাল হাঁটতে পেরেছ।

পদ্ম মনে মনে বলল, নিজে আরাম করে শুয়ে আমার পায়ের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আবার টিচ করছে।

ইয়াশ- তুমি একটু বসো। ঠিক হয়ে যাবে।

পুরো পা কাঁটা কাঁটা করছে। ওকে পুরো দশ মিনিট বসিয়ে বলল, এখন ঠিক হয়েছে?

পদ্ম রাগ করে সোফা থেকে নেমে সোজা দরজার দিকে হাঁটা দিল। ইয়াশের কথার উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে গেল। ইয়াশ ওর কান্ড দেখে হেসে ফেলে বলল, আমার পাগলী।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here