পদ্মপাতার জল পর্ব ২৪

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_২৪
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

মাহফুজ- আগামী শুক্রবার পদ্ম মায়ের বিয়ে।

ইয়াশ- কি!!!!!!!!

ইয়াশ সবার দিকে একবার তাকাল কথার সত্যতার যাচাইয়ের জন্য। সবার মুখভঙ্গি একই কথা বলছে। মাহফুজ আমান আবার বললেন, শুধু ওর না, তোমারও বিয়ে।

ইয়াশ- কার সাথে।

মাহফুজ- সেটা না হয় বলা বাকি থাক।

ইয়াশ- আমি বিয়ে করব না।

মাহফুজ- দেখো, আমি তোমাকে মতামত দেওয়ার জন্য ডাকিনি। আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে ডেকেছি।

ইয়াশ- আঙ্কেল আন্টি আপনারা কিছু বলুন। পদ্মের সাথে আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে এসব কি হচ্ছে?

ফরহাদ- দেখো বাবা, পদ্ম যদি রাজি থাকে তো আমরা কি করতে পারি?

ইয়াশ- পদ্ম?

পদ্ম লজ্জায় মুখ কান লাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ইয়াশ মুখ দেখেই বুঝে নিল যা বোঝার। আবার জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা কে?

পদ্ম- পছন্দের একজন।

ইয়াশ- তুমি না আমাকে ভালোবাসো তবে আরেকজন কি করে পছন্দের হয়?

মাহফুজ- কি হচ্ছে ইয়াশ। বড়দের সামনে এভাবে কথা বলছ। আমাদের যা বলার তা বলা হয়ে গেছে। এখন সবাই যার যার কাজে যাও। ভাই আপনারাও রেস্ট নিন।

সবাই উঠে চলে গেল। পদ্মও সরে পড়ছিল। তার আগেই ইয়াশ ওকে টেনে ছাদে নিয়ে এল। খুব শক্ত করে হাত ধরে আছে। পদ্ম অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না। ইয়াশ রাগীস্বরে বলল, খুব শখ না আরেক ছেলের হাত ধরে বিয়ে করা?

পদ্ম- আমার হাত ছাড়ুন। লাগছে।

ইয়াশ- লাগুক।

পদ্ম- আরে, ছাড়ুন বলছি। আমার হাতে দাগ হয়ে যাচ্ছে। কালশিটে পড়ে যাবে। কালকে ওর সঙ্গে ঘুরতে গেলে সমস্যা হয়ে যাবে।

ইয়াশ- বাহ্। বিয়ের আগেই ও হয়ে গেছে।

পদ্ম- ওমা হবে না? কয়দিন পর তো ওগো বলেই ডাকবো। তাই আগে থেকে প্র্যাকটিস করছি।

ইয়াশ- প্র্যাকটিস, না? কালকে ঘুরতে যাবে? দাগে সমস্যা হবে?

পদ্ম- হুম।

ইয়াশ হঠাৎ পদ্মের মুখ চেপে ধরে ওর গলার ডান পাশে কামড় দিল। পদ্ম ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না। পদ্ম নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে ইয়াশ। ছাড়ার নামই নেই। একটু সময় পরে গলা ছেড়ে দিয়ে সরে এল ওর কাছ থেকে। পদ্ম হাত দিয়ে ধরে দেখল একেবারে গভীরভাবে দাগ বসে গেছে। একটুর জন্য রক্ত বের হয়নি। পদ্ম চোখ গরম করে বলল, এটা কি হল? ইয়াশ উদাসভাব করে বলল, তোমার বিয়ের গিফট। কালকে বরকে দেখাবে। তোমার এক্স কি গিফট দিয়েছে।

পদ্ম- রাক্ষস একটা। ইস্। কাল কি হবে?

ইয়াশ পদ্মকে কাছে টেনে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দেব না। এত বছর অপেক্ষা করেছি। এত সহজে হাল ছাড়ব না। দরকার হলে বিয়ের আসরে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসব। মাইন্ড ইট। ইয়াশ চলে গেল নিচে। পদ্ম গলায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
.
.
.
.
নিচে গিয়ে সোজা আয়নার সামনে দাঁড়াল। ভয়ঙ্কর রকম ভাবে কামড় দিয়েছে। লাল হয়ে ফুলে গেছে জায়গাটা। হাতও ছোঁয়াতে পারছে না। ব্যাথা করছে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার ঘেটে মলম বের করল পদ্ম। একটু নিয়ে লাগালেই ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল ইয়াশ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

পদ্ম- আপনি?

ইয়াশ- তোমাকে দেখতে এলাম।

পদ্ম- হুহ্।

ইয়াশ- দেখি গলাটা।

পদ্ম ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নার দিকে ফিরে টুলে বসে ছিল। ইয়াশ কাছে এসে ওর চুলগুলো একপাশে সরিয়ে নিল। জায়গাটা কালশে হয়ে যাচ্ছে। ইয়াশ বলল, খুব ব্যাথা পেয়েছ, তাই না?

পদ্ম- ……

ইয়াশ- এখনও করছে?

পদ্ম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। কিছু বলার আগেই হঠাৎ ইয়াশ কামড়ের জায়গায় চুমু দিতে লাগল। ওর ঠোঁটের ছোঁয়ায় পদ্মের সারা শরীরে বিদ্যুৎ ছুটে গেল। পদ্ম দ্রুত টুল থেকে উঠে সরে গেল।

ইয়াশ- কি হল?

পদ্ম- কি করছেন?

ইয়াশ- তোমাকে তো আমিই ব্যাথা দিয়েছি তাই আমিই ব্যাথা কমিয়ে দিচ্ছি।

পদ্ম- লাগবে না। আপনি চলে যান। প্লিজ।

ইয়াশ- সত্যি চলে যাব?

পদ্ম- হ্যাঁ। আর একটা কথা দিতে হবে।

ইয়াশ- কি কথা?

পদ্ম- আগে বলুন রাখবেন।

ইয়াশ- তোমার জন্য আমি সব করতে পারব।

পদ্ম- সব করতে হবে না। আমার কাছে আসবেন না। আমার বিয়েটা ভাঙবেন না।

ইয়াশ- পদ্ম……

পদ্ম- এতদিনের সব ঋণ শোধ করব আমি। প্লিজ বিয়েটা ভাঙবেন না। আপনারটাও না।

ইয়াশ- বেশ। আমি বিয়ে করব। তবে তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী মানা আমার পক্ষে সম্ভব না।

পদ্ম লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে রাখল। ইয়াশ একবারও পেছনে না তাকিয়ে বারান্দা টপকে চলে গেল। পদ্ম দেয়ালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রইল। লজ্জায় হাত পা যেন বিকল হয়ে গেছে। তবু অনেক কষ্টে মলমটা লাগিয়ে ওড়না দিয়ে ডেকে দিল স্মৃতিটাকে।
.
.
.
.
দেখতে সব শপিং শেষ। পদ্মরাও শপিং শেষে নিজেদের গ্রামে ফিরে গেছে। বিয়ে ওখান থেকেই হবে। ইয়াশ এখনো নিজের হবু বউয়ের ছবি দেখেনি। কথাও বলেনি। পদ্মের বরেরও খবর নেই। কোনো দিক থেকে খোঁজও নিতে পারছে না। সবাই কেন যেন সব লুকিয়ে রেখেছে। কেউ কিছু বলছে না। যাকেই জিজ্ঞেস করে বলে বিয়ের পরে দেখবে। ইনু রিনিকে অনেক পটানোর চেষ্টা করল। চকলেটের লোভ দেখাল। কিন্তু অবাক কান্ড! তাদের অতি প্রিয় চকলেট চোখের সামনে দেখেও ওরা পটলো না বরং অভিজ্ঞদের মতো বলে গেল, এত অস্থির কেন ভাইয়া? বিয়ের পরে তো দেখতেই পারবে।
.
.
.
.
ইয়াশের বিয়েটা হয়েই গেল। পদ্ম বলেছিল তাই নাকি ওর বিয়েটা মসজিদে করিয়েছে মাহফুজ আমান। ইয়াশ ব্যাপারটা শুনে মনে মনে বলল, নিজের বিয়ের থেকে আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা বেশি। বর আর বউয়ের মাঝে পর্দা। এপাশ থেকে ওপাশে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ইয়াশ কনের মুখ দেখতে পারল না। বিয়েটা আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল পালিয়ে যাবে কোথাও। কিন্তু পদ্মের জন্য পারেনি। যেদিন রাতে পালাবে সেদিন সব ঠিকঠাক করে ঘুমের ভান করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখল তিনটা। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে যেতেই হাতে টান পড়ল। দেখল ডান হাতের কবজি একটা ওড়না দিয়ে বাঁধা। উৎসুক হয়ে ওড়নার ওপর প্রান্ত খুঁজতে গিয়ে দেখল পদ্ম মেঝেতে বসে ওর বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ওর ডান হাতও ওড়না দিয়ে বাঁধা। ইয়াশ বুঝতে পারল পদ্ম কোনভাবে টের পেয়েছে যে ও পালাবে। তাই এই কান্ড। সেদিন আর পালানো হয়নি। তারপরের দিনই পদ্ম চলে গেছে। যাওয়ার আগে শপথ করিয়ে নিল যাতে এই বিয়েটা করে নেই। বিয়ের পর যত খুশি পালানোর চেষ্টা করুক। ওর আপত্তি নেই। তাই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েই গেল অন্য কারো সাথে।

ইয়াশ বাসর ঘরে যেতেই চাইছিল না। কিন্তু বোনেরা মিলে জোর করে ঢুকিয়ে দিল। ঢুকে দেখল রুম অন্ধকার। ফুলের সুগন্ধ নাকে লাগছে। লাইট কেন বন্ধ বোঝা গেল না। নিজেও জ্বালালো না। ইচ্ছে নেই নতুন বউয়ের মুখ দেখার। যাকে নিজের করে পেতে চেয়েছে সে এখন অন্য কারো ঘরে বাসর করছে। ইয়াশ আন্দাজ করে করে বারান্দায় চলে এল। পাশে ইরিনার রুমে লাইট জ্বলছে। সবাই ওখানে গল্প করছে। কত মজা করছে। কত আনন্দ ওদের জীবনে। আর ওর বুকটা পদ্মের কথা ভেবে হাহাকার করে উঠল। একটা চেয়ারে বসে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। কাস্তের মতো চিকন চাঁদ। তবুও আলো আছে। সেভাবে কখন ঘুমিয়ে পড়ল বলতে পারবে না। হঠাৎ ঘাড় ব্যাথায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। উঠে ফোনের আলো জ্বালিয়ে দেখল রাত আড়াইটা। ইরিনার রুমের লাইট অফ। সবাই ঘুমে কাঁদা। নিজেও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। রুমে ঢুকতে না ঢুকতে নতুন বউ এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে। শব্দ শুনে মনে হচ্ছে চোখের জলে নাকের জলে এক হয়ে গেছে। ইয়াশ ছাড়াতে গিয়েও থেমে গেল। এ কে?
চলবে…

*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here