পুনর্মিলন পর্ব -১৬+১৭

#পুনর্মিলন
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_১৬

নিসান আর আঁখি বেরিয়ে পরেছে। এলাঙ্গা থেকে এক গাড়িতে নবীনগরে যাওয়া যাবে আবার সেখান থেকে বাস ধরে সোজা বরিশাল। সবাইকে বিদায় জানিয়ে যেই না দুজনে বেরুবে তখনই আগমন হলো নতুন একজনের। আগন্তুকের মুখ দর্শন করে আঁখি খানিক গুটিয়ে গেলো। নিসান এর বাহু জাপটে ধরে চেয়ে রইলো মাটির দিকে। অজানা ব্যক্তিটি সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে আঁখির সাথে দাঁড়ানো নিসানকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,

“আপনি আঁখির প্রেমিক?”
“নাহ। ওর বর।”
“আমি কে জানেন?”
“কেনো আপনি জানেন না?”
“আমি কে সেটা আমি জানি আর আঁখি যে কি সেটাও আমি জানি। আর এসেছি সেটাই আপনাকে জানাতে।”
“আমার বউকে আমি চিনি এবং জানিও। বাইরের কারও কাছ থেকে আমার বউয়ের ঠিকুজিকোষ্ঠী জানার দরকার নেই। ওর মনের প্রতিটা ভাজ আমার চেনা।”
“আপনার চেনা প্রিয়তমা যে এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছিলো বিয়ের দিন তা কি জানেন? তাও আবার এক রাত কাটিয়ে এসেছে সেই ছেলের সাথে। আরে ভাই এমন…..”
“আমার বাবার একটাই বউ। আর ছেলেও আমি একাই। সেও তার বাবার একমাত্র ছেলে ছিলো। আমার কোন ভাই নেই। সো নো ভাই নো ব্রাদার। এটা ছিলো প্রথম কথা। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমার বউ কোন ছেলের সাথে পালায়নি। সে একাই পালিয়েছিলো। কারণ সে জানতো তার বাবা যে পুরুষ রূপি পশুর সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে তার না আছে বিবেকবোধ আর না হয়েছে মনুষ্যত্ব বিকাশ। পালানোর কথা শুনলেই যে সেই জ্ঞানহীন পশু বিয়ে ভেঙে দেবে সেটা জেনেই ও পালিয়েছিলো। পালিয়ে নিজের বান্ধবীর বাসায় ছিলো একরাত।”
“তোর সাহস কিন্তু….”
“সাহস না থাকলে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় এসে আঁখিকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে পারতাম কি? পারতাম না। আমি আপনার মতো কাপুরুষ নই। বউ মরেছে দু’মাস হয়নি তার আগেই বিয়ের পিড়িতে বসে গেছেন। বলি লোকলজ্জা বলেও তো কিছু থাকা উচিত নাকি? লজ্জা করে না কাপুরুষ কোথাকার! শুনেছি বউ মরার এক মাসের দিন থেকেই ঘটক লাগিয়েছেন মেয়ে খুঁজতে। শ্রাদ্ধের কাজ শেষ করে নাকি রাতে মেয়ে দেখাও হয়েছে। আপনাকে তো পশুর সাথে তুলনা করলেও পশুজাতকে ছোট করা হবে।”

নিসান এর গম্ভীর গলায় বলা শক্ত কথাগুলো হজম করে নিলো রতন। মুখে কোন লজ্জালু রেষ নেই তার, অপরাধবোধ তো দূর। উল্টে বত্রিশখানা দাঁত বের ফিক করে হেসে উঠলো। তারপর নিসানকে বললো,

“এমন উদারনীতির মহান বাক্য শুনিয়েই বুঝি পটিয়েছেন আঁখিকে? আচ্ছা, আজ বাদে কাল আঁখি যদি মরে যায় তাহলে কি বাকি জীবন সাধুসঙ্গ করে সন্যাসী হয়ে কাটাবেন নাকি? বিয়ে করবেন না?”

“সারাজীবন কেউই বেঁচে থাকে না। মরতে একদিন সবাইকে হয়। উপরওয়ালা না করুন আঁখির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে বাকি জীবন পার করার জন্য আমার আঁখির পরিবর্তে কাউকে চাই না। আঁখির সাথে কাটানো এক মুহুর্তের সুখস্মৃতি নিয়ে আমি এক জীবন অনায়াসে সুখে কাটিয়ে দিতে পারবো। আর আপনার যা ব্যক্তিত্ব ও কথা বলার রুচি তাতে আপনার সাথে মুখে নয় হাতে পায়ে কথা বলা উচিত। কিন্তু আমার আজ সে সময় নেই। তাই ঠিকঠাক আলাপচারিতা সারতে পারলাম না, দুঃখিত। আজ আসছি, ভবিষ্যতে শ্বশুর বাড়ি পা রাখলে আপনার সাথে ঠিকঠাক আলাপ করার সময় আর সুযোগ দুটো হাতে নিয়েই আসবো। সে পর্যন্ত আমার জন্য হলেও সুস্থ থাকবেন আর বেঁচে থাকবেন।”

নিসান রতনের সাথে কথা শেষ করে আঁখির হাত ধরে বেরিয়ে যায়। বাকিরাও বেরিয়ে যায় ওদের এগিয়ে দিতে। শুভ অটো দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। সবাই মিলে একসাথে অটো নিয়ে চলে যায় স্ট্যান্ডে। বাসে উঠার আগ মুহুর্তে নিসান ফাল্গুনীকে জিজ্ঞেস করে সে কবে ফিরে যাবে বরিশালে। ফাল্গুনী বলে, মায়ের সাথে একটা দিন কাটিয়ে তারপর ফিরবে। জাগ্রতর সাথেও আলাদা করে কথা বলে কিছুক্ষণ। আঁখি সবাইকে ধরে কেঁদে কেটে তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিসান এর হাত ধরে বাসে উঠে রওয়ানা করে নিজ গন্তব্যে।

নিসান আর আঁখি চলে গেলে ফাল্গুনী রাস্তার এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকে বিভ্রান্তিকর চেহারা নিয়ে। জাগ্রত আরেক পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফাল্গুনীর দিকে দৃষ্টি বজায় রেখে। যেনো চোখ সরালেই পালিয়ে যাবে ফাল্গুনী। বিলাসি দেবী ফাল্গুনীকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই অটো ডেকে নেন বাড়ি ফেরার জন্য। আঁখিদের বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দুরত্বে তিনি তার বৃদ্ধা মাসির সাথে থাকেন। ফাল্গুনীকে ডেকে অটোতে উঠে বসতে বলে উঠে পড়লেন তিনি। ফাল্গুনীর আগে আগে অটোতে উঠে বসলো জাগ্রত। ফাল্গুনী তা দেখে আশ্চর্য নয়নে মায়ের দিকে তাকালে তিনি মুখ ফিরিয়ে অটোওয়ালাকে তাড়া দিয়ে বলেন অটো স্টার্ট দিতে। অটোওয়ালা অটো স্টার্ট দিলে ফাল্গুনী বড় একটা শ্বাস নিয়ে উঠে পড়ে অটোতে।

_____________

সন্ধ্যে হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। চারপাশে অন্ধকারে ডুবে আছে পুরো বাড়ি। কৃত্রিম আলোয় বিলাসি দেবী বসে আছেন বারান্দায়। বিরক্তি প্রকাশ করার মতো কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। কি করবেন সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বারান্দায় বসে বসে তার মাসি পুটি দেবীর মাথায় তেল ঠেসে দিচ্ছেন কোমল বেগে। পুটি দেবী আরামে চোখ বন্ধ করে আছেন। গুনগুন করছেন এলোমেলো নিজ মনে তোলা সুর গেয়ে। তার খুশির আজ অন্ত নেই। জাগ্রতকে তার খুব মনে ধরেছে। তার কথা পুরুষ মানুষ নিজে থেকে নত হয়ে বউ ফিরিয়ে নিতে এসেছে এর থেকে বেশি আর কি চাই। মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবারই হয়। স্বামী পাগল হোক ছাগল হোক স্বামীর হাত কখনো ছাড়তে নেই। স্বামী স্ত্রী ভুল করলে একে অপরকে শুধরে দেবে অন্যায় করলে শাস্তিও দেবে। তবু কেউ কাওকে ছাড়বে কেনো?

জাগ্রত বাড়ি এসেই পুটি দেবীকে পটিয়ে নিয়েছে। সারাদিন ভালই কেটেছে কোনভাবে। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন পুটি দেবীর সাথে জাগ্রত আলাপ করছিলো ফাল্গুনীকে আগামীকালই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা সে কথা শুনে রেগে গেছে ফাল্গুনী। ফাল্গুনী ফিরে যাওয়া তো দূর জাগ্রতকে মন থেকে ক্ষমাও করতে পারছে না। জাগ্রতের চোখে চোখ রাখলে নিজেকে ছন্নছাড়া লাগে, বুকের পাঁজরে ধুকপুক করা হৃৎস্পন্দন জানান দেয় সুপ্ত অনুভূতির উপস্থিতির কথা। কিন্তু ভেতর থেকে কোথাও একটা আটকে দেয় বারংবার। সবকিছু এলোমেলো লাগে। জাগ্রতকেই সবকিছুর জন্য দোষী বলে মনে হয়। ক্ষমা করার অযুহাত খুঁজে পায় না আবার ঘৃণা করার জোর ও মনে পায় না। সেই সন্ধ্যে থেকে গত এক ঘন্টা যাবত উঠোনে একা একা বসে আছে ফাল্গুনী। ভেতরে জাগ্রত বসে আছে বলে ভেতরে যাচ্ছে না। জাগ্রতকে চলে যেতে বলেছিলো কিন্তু জাগ্রত বিলাসি দেবীর কাছে জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনিই বলুন মা আমার এখন কি করা উচিত। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। কিন্তু ফাল্গুনীকে এবার ছেড়ে যেতে পারবো না।’ এ কথার পর বিলাসি দেবী কোন প্রতুত্ত্যর করেননি। তাতে আরও বেশি অভিমান হয়েছে ফাল্গুনীর। সরাসরি সময়ও চাইতে পারছে না জাগ্রতর কাছে। সময় চাইলে যদি ভেবে বসে ফাল্গুনী মেনে নিয়েছে জাগ্রতকে। তাই চুপ করে উঠোনে বসে আছে টুল পেতে।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে শুয়ে পড়েছে বিলাসি দেবী তার মাসিকে নিয়ে এক রুমে। টিনের পাকা করা ঘরটায় বড় করে শোবার ঘর দুটো। আর বারান্দায় একটা ছোট খোপের ঘর আছে ঘুমানোর মতো। ছোট একটা চৌকি ছাড়া একটা চুল রাখারও জায়গা নেই সেই ঘরে। ফাল্গুনী সেই ঘরেই থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু জাগ্রত আগে আগে সেই ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। ফাল্গুনী তাই মায়ের পাশের ঘরটায় শুয়ে আছে। কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না কিছুতেই। জাগ্রত পাশের রুমে শুয়ে আছে কিন্তু ওর মনে হচ্ছে দুরত্ব যেন খুব কম। যেন পাশেই শুয়ে আছে জাগ্রত। যেনো তার দিকেই চেয়ে আছে অনিমেষ। রাজ্যের উদ্ভট সব চিন্তায় ঘুম আর এলো না ফাল্গুনীর। তাই বাইরের আলো জ্বেলে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো। ভাবলো একটু হাঁটাহাঁটি করলে যদি অস্থিরতা একটু কমে। উঠোনের এক পাশে বস্তাবন্দি কাঠের গুরি রাখা আছে ভাবলো সেখানে গিয়ে বসা যাক। সেখানে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে জাগ্রতকে। সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলী আকাশে উড়াতে ব্যস্ত সে।

“আমার মতো তোমারও ঘুম আসছিলো না তাই না? তা একটু কি বসা যায় আমার পাশে?”
ফাল্গুনী জাগ্রতকে দেখে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতেই জাগ্রত বসার কথা বলে উঠে। তা শুনে ফাল্গুনী ভেবেচিন্তে উত্তর দেয়,
“সিগারেটের গন্ধে আমার গা গুলিয়ে আসে।”
“ফেলে দিয়েছি। বসো।”
ফাল্গুনী দাঁড়িয়ে রইলো, বসলো না। কিন্তু চলেও গেলো না। জাগ্রত নিজেই উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গিয়ে ফাল্গুনীর পাশে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। রাতের অন্ধকারে নিরবতার ভীর গলিয়ে জাগ্রতই প্রথম কথা বলে উঠলো,

“অনেক তো কথা হলো। অভিযোগের কথা দোষারোপের কথা, কষ্টের কথা, অভিমানের কথা। এবার আমার একান্ত কিছু কথা বলি? আমার একান্ত মনের গল্প। যা শুধু আমার আর আমারই। অন্যকোন ভাগীদার নেই যে গল্পের।”

ফাল্গুনী হ্যাঁ বা না কোন জবাব দিলো না। নিরব রইলো। জাগ্রত অপেক্ষা করলো না ফাল্গুনীর জবাবের জন্য। চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,

“তুমি যাদের আমার বাবা-মা বলে চেনো তারা আমার বাবা-মা নয়। তাদের সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই।”

ফাল্গুনী চকিতে বিস্মিত নয়নে তাকালো জাগ্রতর পানে। কোন প্রশ্ন করতে ভুলে গেলো। কথাটা ঠিক বিশ্বাস হয়ে উঠলো না যেনো। জাগ্রত কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বললো,

“আমার জন্মদাত্রী ছিলেন যিনি তিনি নাকি কাজ করতেন মায়ের বাপের বাড়িতে। আমার জন্মের সময় মারা গেছিলেন আমার জন্মদায়িনী মা। তারপর আমাকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করে বড় করেছে তারা যাদের তুমি আমার বাবা-মা বলে চেনো। তারা তাঁদের আচরণে কখনো বুঝতে দেয়নি আমি তাদের সন্তান নই। আমার বোন নিলিমা। ওকেও একটা অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নিয়েছিলো বাবা-মা। তাও আবার আমার জন্যই। আমি আমার বন্ধুদের বোন দেখে মায়ের কাছে বোন চেয়ে দু’দিন কান্না করেছিলাম। তাই এনে দিয়েছিলো আমাকে বোন। আমার বাবা একজন মানুষ হিসেবে যতটা যোগ্য একজন বাবা হিসেবেও ঠিক ততটাই সুযোগ্য। তার কোন তুলনা হয় না। কিন্তু মা! সে আমাদের মা হিসেবে যতোটা উত্তম আর শ্রেষ্ঠ একজন মানুষ হিসেবে তেমন ছিলো না। ছোটবেলায় খেয়াল করতাম বাড়িতে যখন কোন প্রতিবেশী আসতো তার সাথে অন্যদের নিয়ে সমালোচনা করতো মা। সোজা বাংলায় বলতে পারো কুবুদ্ধি দিতো সংসারে অশান্তি লাগানোর। তার বাপের বাড়ি বা অন্যান্য আত্মীয়দের সাথেও খুব একটা পরতো না মায়ের। কার ঘরে কি হলো, কে কি করলো, কার মেয়ে পালালো, কার ছেলের বউ কেমন, কার ঘরে কবে ঝগড়া লাগলো; কতোশত প্রসঙ্গ! আমার খুব খারাপ লাগতো এসব। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। কারণ আমি জানতাম আমি তাদের নিজের সন্তান নই। আশেপাশের আত্মীয়দের কাছ থেকে তা শুনে শুনেই বড় হয়েছি। তবে মায়ের ভয়ে কেউ মায়ের সামনাসামনি বলতো না কিছু। মা খুব আগলে রাখতো আমায় এসব থেকে। জানো বাইরে মা যেমনই চলুক যার সাথে যেমনই করুক, আমাদের ভাই-বোনকে কোনদিন কুশিক্ষা প্রদান করে নি। সবসময় সুশিক্ষা দিয়ে গেছে। খুব ভালোবেসে যত্ন করে মানুষ করেছে আমাদের। নিজের সন্তান না হওয়া নিয়ে কোনদিন দুঃখ করতে দেখি নি মাকে। নিলিমার থেকে আমাকে হাজার গুন বেশি ভালোবাসতো মা। কিন্তু কোনকিছু খাওয়া বা দেওয়ার সময় সমান ভাগ করেই দিতো আমাদের দুজনকে। মা হওয়ার দায়িত্ব খুব যত্ন করে পালন করেছে মা। আমাকে কোনদিনও নিজমুখে বলা তো দূর বুঝতেও দেয়নি আমি যে তার ছেলে নই। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখতাম সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতো, আমার ছেলের বউ হবে পুতুলের মতো। দুধে-আলতা হবে গায়ের রঙ। চোখগুলো হবে….. হুম কেমন কেমন যেনো বিশ্লেষণ করতো ঠিক সেভাবে বলতে পারছি না। মায়ের আমার বউ নিয়ে সখ ছিলো খুব। তাই তোমায় কোনদিন মেনে নিতে পারেনি। আর আমিও আমার মায়ের স্বভাবকে ছোটবেলা থেকেই চিনতাম। বুঝতাম তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার মা করতো না। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। প্রথম ছ’মাস বলতে পারো কিছু বলতে চাইতাম ও না। প্রয়োজন মনে হতো না। ভাবতাম যেমন চলছে চলতে থাক। অতিষ্ট লাগতো সংসারের রেষারেষি। কিন্তু পরের ছ’মাস বলতে চাইতাম, চেষ্টাও করতাম কিন্তু মায়ের চোখের জল আর বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের অসুস্থতায় কিছু বলতে পারতাম না। কখনো কখনো বলতাম হয়তো কিছু কিন্তু জোর দিতে পারতাম না। মায়ের স্বভাব আমার অপছন্দনীয় ছিলো কিন্তু তার মাতৃত্ব ছিলো আমার জন্য ভালোবাসার। আমি খুব ভালোবাসতাম বাবা-মা দুজনকেই। আর এ কথাগুলো আমি শেষ ছ’মাসের সময় তোমাকে বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বলতে পারিনি জড়তা-সংকোচ ভেঙে। মনে হয়েছে তুমি আমাকে ঘৃণা করবে হয়তো। ছোট চোখে দেখবে। তোমার চোখে নিজেকে ছোট দেখবো ভেবে চেয়েও বলতে পারি নি। কিন্তু আজ আর হারানোর কিছু নেই ফাগুন। কিছুই নেই। কিচ্ছু না। তাই মনের সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে বললাম তোমাকে সবটা। আমার দুর্বলতা ছিলো আমার ব্যার্থতা। আমি আমার সমস্ত ব্যার্থতার জন্য ক্ষমা চাই। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। একটা শেষ সুযোগ দাও আমাকে। তোমার মনে জমানো যতো ক্ষোভ, অভিমান আর অভিযোগ আছে ভালোবেসে সব মিলিয়ে দেবো। নিজেকে উজার করে ভালোবাসবো তোমায়। আমাকে একটু ঠাঁই দাও তোমার বুকে।”
#পুনর্মিলন
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_১৭

“আমার দুর্বলতা ছিলো আমার ব্যার্থতা। আমি আমার সমস্ত ব্যার্থতার জন্য ক্ষমা চাই। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। একটা শেষ সুযোগ দাও আমাকে। তোমার মনে জমানো যত ক্ষোভ, অভিমান আর অভিযোগ আছে ভালোবেসে সব মিলিয়ে দেবো। নিজেকে উজার করে ভালোবাসবো তোমায়। আমাকে একটু ঠাঁই দাও তোমার বুকে। আমি একটু শান্তি চাই। একটু পূর্ণতা চাই। আর চাই তোমাকে। তোমাকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে ঘুমোতে চাই। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে অন্ধকার হাতড়ে তোমার শুষ্ক কপাল জুড়ে গভীর চুমু দিতে চাই। সকালে তোমার গলা শুনে ঘুম ভাঙতে আর তোমার মিষ্টিমুখ দেখে দিন শুরু করতে চাই। অফিসে কাজের ব্যস্ততায় তোমার ফোন বা মেসেজ দেখে বিরক্ত হতে চাই। অফিস থেকে ফেরার আগে এটা লাগবে সেটা লাগবে বলে তোমার গলায় বায়না শুনতে চাই। ছুটির দিনে কোথাও ঘুরতে যাবো করে একসাথে বসে শতশত পরিকল্পনায় বুঁদ হতে চাই। তোমাকে আমি ধমক দিলে তুমি কেঁদেকেটে আমার বুক ভাসাবে যখন তখন তোমার অশ্রুভেজা চোখের পাতায় আলতো করে ঠোঁট ডুবাতে চাই। তুমি রাগলে আমি আরও রাগিয়ে দেবো। তুমি লজ্জা পেলে আমি আরও লজ্জা দেবো। তুমি ভালোবাসলে আমি আরও অনেক অনেক ভালোবাসা দেবো। ভালোবাসতে চাই তোমাকে। খুব করে ভালোবাসতে চাই।”

জাগ্রতর অনুরাগী, প্রেমান্ধ কন্ঠ সহ্য হলো না ফাল্গুনীর। এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। বুকের ভেতরে দুমদাম হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ যেনো কানে এসে গরম কয়লার উত্তাপ নিয়ে আছড়ে পড়ছে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে। অতীতের সবটাই কেনো এতো ঘোলাটে। প্রতি মুহূর্তে কেনো সব হিসেবের ভাগফল গিয়ে দাঁড়াচ্ছে শুন্যের কোঠায়। যা জানা ছিলো তা ভুল, যা চোখে দেখেছে তা মিথ্যে, যা মনে হয়েছে তা ঘটে নি আর যা কল্পনার অতীত তাই শেষমেশ সত্যরূপে সামনে আসছে।

ফাল্গুনী ঘরে এসে দরজা দেওয়ার পর দু ঘন্টার বেশি পার হয়েছে। শুইয়ে শুইয়ে ঘুম না আসায় গত আধ ঘন্টা যাবত বিছানায় হেলান দিয়ে মেঝেতে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। মস্তিষ্কে ঘোরপ্যাঁচ খাচ্ছে কত কিছু। হাজারও কারণ দাঁড় করিয়েও জাগ্রতকে ঘৃণা করা অথবা ক্ষমা না করার মতো মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না। পুরোনো অভিযোগ সব ধুয়েমুছে যাচ্ছে জাগ্রতর পরিস্থিতির কাছে। শত চেষ্টার পরেও যখন মন থেকে জাগ্রতের বিরুদ্ধে কোন মত দাঁড় করতে পারলো না আগের মতো তখন একবার মনে মনে আওড়ে নিলো, “তবে কি ফিরে যাবো তার বুকে?” ব্যাস! তাতেও ঝড় উঠে গেলো বুকের ভেতর। জাগ্রতকে দুরে সরিয়ে রাখার কারণ আর অভিযোগ গুলো মিলিয়ে গেছে ঠিক কিন্তু ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়ার কারণ বা যুক্তি দাঁড় করাতে পারছে না নিজের জন্য। হৃদয়ে তার জন্য গভীর অনুভূতির উপস্থিতি বিদ্যমান তা হারে হারে টের পাচ্ছে ফাল্গুনী শুধু ফিরে যাওয়াটাই মন মানছে না।

“মন কেনো মানছে না? কেনো?”

কথাটা বলে মুখ চেপে ধরলো ফাল্গুনী। টের পেলো মনের অজান্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে কথা দুটো। পাশের ঘরে মা শুয়ে আছে না শুনলেই হলো। তারপর নিজেকে শান্ত করলো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে। আচমকা কিছু মনে হতেই এক লাফে দাঁড়িয়ে পরলো চকিতে। মনে পরলো জাগ্রত এখনে ঘরে ঢোকেনি। বারান্দার খোপের দরজাটা ক্যাড়ক্যাড় শব্দ ছাড়া লাগানো যায়না। জাগ্রত ফিরে এলে সে অনায়াসে টের পেতো। কিন্তু দরজার শব্দ তো দূরে থাক সামান্য কোন শব্দও তার শ্রবণেন্দ্রিয় ভেদ করে নি গত দুই আড়াই ঘন্টায়। ফাল্গুনীর কলিজায় কামড় দিয়ে ধরলো জাগ্রতর চিন্তা। আস্তে করে দরজা খুললো বাইরে উঁকি দেওয়ার দরূন। কিন্তু হায়! জাগ্রতর রুম তো বাইরে থেকে সিকল তোলা আর উঠোনের শেষ প্রান্তে বস্তার উপরেও তো বসা নেই জাগ্রত। ফাল্গুনীর হৃদয় যেনো থেমে গেলো। ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে বাইরে এসে জাগ্রত বলে ডেকে উঠলো উঁচু গলায়। দুই ডাকে সারা না পেয়ে মাকে ডেকে উঠলো দৌড়ে ঘরের কাছে এসে। বিলাসি দেবীর এক ডাকেই ঘুম ভেঙে গেছে। বড্ড পাতলা ঘুম তার। ফাল্গুনী যখন জাগ্রতর কাছ থেকে দৌড়ে এসে দরজা লাগিয়েছিলো তাও টের পেয়েছেন তিনি। বিলাসি দেবী হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখেন একটু দূরে কাঠের গুরি ভরা বস্তা থেকে একটু দূরে জাগ্রত দাঁড়িয়ে আছে আর ফাল্গুনী ঘরের সামনে এলোমেলো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভীতচিত্তে। তাকে দেখে ফাল্গুনী জাপটে ধরলো আর কান্নামাখা গলায় এক দমে বললো,

“মা জাগ্রত কোথাও নেই। উনি চলে গেছেন। উনি ভালো নেই মা। উনি কোথায় গেলেন আমি কোথায় খুঁজবো ওনাকে? আমার একটু সময় চাই সেই সময়টা উনি দিলেন না আমাকে। উনি খুব খারাপ মা খুব খারাপ।”

জাগ্রতকে একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখছেন তিনি আবার মেয়ের মুখে এমন কথা শুনছেন। বিষয়টা বুঝতে পারলেন না তৎক্ষনাৎ। ফাল্গুনীকে শান্ত করবেন বলে পিঠে হাত রাখতেই চোখ যায় আবার জাগ্রতর দিকে। জাগ্রত হাসছে। হ্যাঁ তাইতো। জাগ্রত তো হাসছে। অনেক বেশিই হাসছে। কি তৃপ্তি নিয়ে হাসছে ছেলেটা। হাসতে হাসতে কপাল চুলকাচ্ছে আবার চুলে হাত বুলাচ্ছে। বিলাসি দেবী খুশি হলেন আবার হতবাক ও হলেন। ফাল্গুনী কেঁদেই যাচ্ছে। আবার অস্পষ্ট কথাও বলে যাচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে।

এর মধ্যে পাশের বাড়ি থেকে জানালার খিল খোলার শব্দ হলো। আলম মিঞার পরিবার থাকেন পাশের বাড়িতে। বিলাসি দেবীর সাথে তার বউ আমিনা বেগম এর খুব ভাব। যে-কোন বিপদে আপদে হাতেরথে সাহায্য করেন আলম মিঞা। দিদি বলে ডেকে উঠলেন আলম মিঞা আর তার বউ। হাঁক ছেড়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হইছে দিদি মাইয়া কান্দে ক্যা? জামাই না আইছে হে কই? কোন বিপদ আপদ হইছে নি। আমু আমরা?”

বিলাসি দেবী জবাব দেবেন করে মুখ খুলতেই জাগ্রত জবাব দিয়ে বললো,

“আপনাদের মেয়ে স্বপ্নে দেখেছে তার বর তাকে রেখে চলে গেছে। তাই রাত-দুপুরে গলা ছেড়ে কাঁদছে আমার বউটা। মাফ করবেন চাচি আপনারা ঘুমিয়ে পড়ুন। কাল কথা হবে চাচা।”

আলম মিঞা আর তার বউ হাসতে হাসতে জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন। এদিকে জাগ্রতর গলা পেয়ে চকিতে মাকে ছেড়ে পিছ ঘোড়ে ফাল্গুনী। জাগ্রতকে দেখে উত্তপ্ত কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায় এক নিমিষেই। কিন্তু জাগ্রতর কথাগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশ করার পর খেয়াল হয় কথার মানে আর মুহুর্তেই জমে যায় মন মস্তিষ্ক আর ধ্যান ধারণা। ভীষণ লজ্জায় পড়িমরি অবস্থা। বিলাসি দেবী পুরো বিষয়টা বুঝতে না পারলেও অল্প করে আন্দাজ করে নিলেন। দুজনকে ঘুমিয়ে পড়তে বলে নিজে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়লেন ঘরে গিয়ে। বিছানায় গিয়ে দেখেন পুটি দেবী হেসে কুটিকুটি হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন। তিনি আর মেয়ের মা হয়ে কি বলবেন পিছ ঘুড়ে শুয়ে রইলেন মুখ চেপে। তারও কেনো জানি হাসি খানিকটা এসেই যাচ্ছে মুখে। তারপরেই আবার একটা চিন্তা এসে ধাক্কা দেয় মনে। পুরোনো সেই স্মৃতি আর আক্ষেপ এসে নাড়া দেয় মন মস্তিষ্কে। সব ভুলে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করেন জোর করে।

ফাল্গুনীর লজ্জা করছে ভীষণ। লজ্জানত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শক্ত হয়ে। তবুও ঘরে ফিরে না গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। জাগ্রত ভেবেছিলো ফাল্গুনী আর এক মুহুর্তও দাঁড়াবে না তার আশেপাশে। কিন্তু ফাল্গুনীকে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুক ভরা তৃপ্তি নিয়ে হেসে দিলো শব্দহীন। তারপর এগিয়ে গিয়ে ফাল্গুনীর কাছে দাঁড়ালো। কিছু বলতে নিয়ে জাগ্রতর মনে পড়লো সামনের রুমে শ্বাশুড়ি আছে কিছু বললে স্পষ্ট শুনতে পাবে। জাগ্রত মনে মনে কিছু ভেবে সাহস করে ফাল্গুনীর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আবারও সেই ভরা বস্তার কাছে।

হাতে জাগ্রতর স্পর্শ পেয়ে ফাল্গুনীর মনে হলো যেনো তার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা কিছু দৌড়ে নেমে গেলো। বুকের পাঁজরেও কি যেনো ছোটাছুটি করতে লাগলো। কেমন এক মন কেমন করা উষ্ণ প্রশান্তি।

জাগ্রত বসিয়ে দিলো ফাল্গুনীকে। তারপর নিজেও বসে গেলো ফাল্গুনীর পাশে। মাঝের দুরত্ব এক হাতেরও কম। জাগ্রত খেঁকিয়ে কাশি দিলো। গলা পরিষ্কার করে বলল,

“স্বপ্নটা কি জেগে জেগে দেখছিলে নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে?”

ফাল্গুনী এবার না লজ্জা পেলো আর না রেগে গেলো। শান্ত হয়ে বসে রইলো সামনের দিকে তাকিয়ে। জাগ্রত আবারও বললো,

“তোমায় না নিয়ে আমি ফিরে যাবো তা ভাবলে কি করে ফাগুন? একবার ভুল করেছি বলে কি বারবার একই ভুল করবো। আসলে তুমি চলে যাওয়ার পর আর ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। আর বসে থাকতেও পারছিলাম না মশার জ্বালায়। তাই হাঁটছিলাম পুরো উঠান জুড়ে। তাই হয়তো আমায় দেখতে পাওনি আর তারপরেই….যাকগে সেসব। আমি বোধহয় বেশি বলে ফেলছি। তুমি কি কিছুই বলবে না?”

এবারও চুপ করে রইলো ফাল্গুনী। তবে মুখাবয়বে এক আকাশ সমান প্রশান্তি বিরাজিত তার। জাগ্রত কি তা বুঝতে পারছে না কিছুক্ষণ আগে ফাল্গুনীর সেই অশান্ত মন যে এখন নিমিষেই শান্ত হয়ে বসে আছে। ফাল্গুনীর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। জাগ্রতর কথার কোন জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না। শুধু মনে হচ্ছে সময়টা যেভাবে চলছে চলতে থাকুক।
ফাল্গুনী বুঝতে পারছে তার মনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব মিলিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছে জাগ্রতর মাঝে নিজেকে। তবুও দূরে সরে থাকার কথা জোর করে টেনে আনলো না মনে।

“ফাল্গুনী।”

জাগ্রতর ডাকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো ফাল্গুনী। জাগ্রত বললো,

“আজ আমার ছুটি শেষ। কাল থেকে যেভাবেই হোক অফিস জয়েন করতে হবে আমাকে। পাঁচদিন ছুটি কাটিয়েছি, নতুন করে আবার ছুটি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। অফিস করতে হলে কাল ভোরেই আমাকে রওয়ানা করতে হবে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। তুমি যাবে তো আমার সাথে?”

জাগ্রতর কথায় ফাল্গুনী জবাব দিলো কোমল কন্ঠে। বললো,

“আমার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কোন জবাব দিতেও ইচ্ছে করছে না। আপনি কথা বলুন, অভিযোগ করুন চাইলে দোষারোপও করুন কিন্তু কোন প্রশ্ন করবেন না দয়া করে। শুধু এভাবেই বসে থাকুন আমার পাশে। ছেড়ে যাবেন না আমাকে। আমার যা বলার আমি ঠিক বলবো আপনাকে। আমাকে একটু সময় দিন। আমি একটু সময় চাই। তবে তা আপনাকে দূরে সরিয়ে নয়। আপনাকে পাশে নিয়েই আমি সময় চাই আপনাকে কাছে টেনে নেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে।”

“আমি তোমার পাশে আছি আর বাকি জীবনও থাকবো। তুমি না-হয় খেয়াল করে কাছে থেকে যেও। দুজনের নতুন জীবনের শুরুটা না-হয় দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েই শুরু হোক। পাশে থাকার দায়িত্ব আমার আর কাছে থাকার ভার তোমার। কি বলো? নেবে তো? যথাযথ পালন করবে তো দায়িত্ব?”

“যদি আপনি সত্যিই পাশে থাকেন তবে আমিও থাকবো আপনার কাছে। তবে শুধু পাশে নয়, বিশ্বাস, ভরসা, সম্মান আর ভালোবাসাও চাই। পারবেন সব মিলিয়ে ভারসাম্য করে পাশে থাকতে? যদি পারেন তবে আমি শুধু কাছে নয় আপনার পাশেও থাকবো।”

~চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here