প্রণয়ালাপ পর্ব ২

#প্রনয়ালাপ
#লেখনীতে_Maya_Binte_Alam

মধ্যমাংশ

হাতে থাকা ধূসর রঙের ঘড়িটা নেড়েচেড়ে পুনোরায় একবার চোখ বুলিয়ে ঘড়ির কাটায় সময় দেখে নিল সাহির। এনালগ ঘড়িতে কাটার হিসেবে এখন তিনটে বেজে আঠারো মিনিট সময়। নূরের এতো দেরি হবার যথোপযুক্ত কোনো কারন মাথায় আসছে না সাহিরের। গাড়ির সাথে হেলে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে নিচে পিচ ঢালা রাস্তায় পা সামনে পেছনে করে ঘর্ষন করতে করতে কখনো নূরের বাড়ির গেটের পানে, তো কখনো এপাশ ওপাশে তীক্ষ্ম চোখে নজর বুলিয়ে চারপাশে দেখে নিচ্ছে সাহির। রাস্তার পাশে মাথা নুইয়ে দন্ডায়মান ল্যামপোস্টের নিয়ন আলোর তেজ কমে এসেছে রাত্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। কেমন ঝিম ধরানো ঝাপসা আলোর ছটা। একনজরে তাকিয়ে দেখলে যে কারো চোখে ছানি পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এই ক্ষনে এর কমতি পুষিয়ে দিচ্ছে দূর আকাশে থাকা রূপালী দ্যুতি ছড়ানো অংশুমান। সবমিলিয়ে নিদারুন মনমুগ্ধকর নৈসর্গিক আভার ছড়াছড়ি চারিপাশে। মনে বিশেষ এক অনুভূতি নিয়ে বিশেষ মানুষের প্রতিক্ষায় প্রহরের মিনিট গুনছে সাহির। তবে মন্দ মনে হচ্ছে না, প্রিয়জনের প্রতিক্ষায়ও বড্ড সুখ, প্রশান্তিকর অনুভব!

পুনোরায় ঘড়িতে সময় দেখল সাহির। গেটের দিকেও নজর নিক্ষেপ করতে ভুল করল না। এবারেও হতাশার ছাপ স্পষ্ট চোখেমুখে, নূরের টিকিটিরও দর্শন নেই। গেটের পানে তৃতীয় বারের মতো নিজের তৃষ্ণায় কাতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেকেন্ডে অন্যদিকে তড়িৎবেগে ক্ষনিকে নিজের দৃষ্টি নিবন্ধ করল সাহির। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হার্টবিট মিস হয়েছে তার! চরম উত্তেজনাকর অনুভূতিময় অনুভব! প্রত্যেকের নিজের চোখে প্রস্ফুটিত অতি সুন্দর জিনিসের পানে বেশিক্ষণ নেত্রপাত করা দুরূহ। মুগ্ধ নয়নে বহু সময়ের নিমিত্তে দৃষ্টি নিবন্ধিত করে রাখলে ক্রমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াবেগ বর্ধিত হতে শুরু করে। এক সময়ে নিঃশ্বাস ভারি হয়ে দম নেওয়াও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অধিষ্ঠিত ক্ষনে সাহিরের পরিস্থিতিও যেন অভিন্ন, প্রতিরূপ। ফলসরূপে দ্রুতই নিজের নেত্রদৃষ্টি অন্যপাশে প্রতিস্থাপন করেছে নূরের দিক থেকে সাহির। সে ক্ষনে হয়তো হার্টের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে চিরকালের মতোন ওর ক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যেত আজ। এই মূহুর্তে অতি আবেগতাড়িত না হয়ে সময়টা উপভোগ করতে ইচ্ছুক সাহির যদিও নূরকে চোক্ষু সম্মুখে এমন অপরূপা রূপে দেখে নিজের মনকে সামলানো বেজায় মুসকিল।

নূর স্বাভাবিক কদমে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে সাহিরের পানে এগিয়ে আসছে। দু-হাত মুঠো করে বেশ কয়েকটা বড় বড় নিঃশ্বাসে দম নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল সাহির। ভিন্ন বিশেষ রকমের অনুভূতিকে হৃদয়ের সুগভীরে উপযুক্ত সময়ের প্রতিক্ষায় জমিয়ে রেখে হাসি মুখে নূরের পানে চোখ ফেরালো। পুনোরায় তীক্ষ্ণ চোখে উপর থেকে নিচে নূরকে স্ক্যান করে নিল সাহির। গায়ে জড়ানো আসমানী রঙের লং কুর্তি আর পাজামা, সাথে একই রঙের ওড়না সামনে মেলে পুড়ো শরীরে উপরের দিকটায় জড়িয়ে রয়েছে। লম্বা, ঘন কৃষ্ণকায় চুলগুলো পরম যত্নে খোঁপায় বাঁধা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে হাত খোঁপা করা চুলগুলো। যখন তখন চুলগুলো খুলে যাওয়ার আতঙ্ক থেকে বাঁচতে চিকন একটা কাঠিও স্থান পেয়েছে খোঁপা করা চুলের ফাঁকে। পায়ে বাড়িতে সবসময় পড়ার একজোড়া সাদামাটা স্লিপার। নিদারুন কোনো জাঁকজমক নেই তবুও যেন অসাধারণ কোনো মানবী! সাধারন বেশেও যে কিনা অনন্যসাধারন! সাহিরের মনের রানী!

নূর কাছাকাছি এসে দাঁড়ানোয় ভাবনায় ইতি টানতে হলো সাহিরকে। গভীর প্রেমপূর্ন তীক্ষ্ম নজরে এক হাত সমান দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের প্রেয়সীকে প্রত্যক্ষ করছে ও। নূরও বিশেষ কোনো ভঙ্গি প্রকাশ ব্যতীত সাহিরকে দেখে যাচ্ছে অপলক। কিন্তু অনিচ্ছায় হলেও প্রকাশ পাচ্ছে নূরের মনের গহীনে সাহিরের প্রতি যে অনুভূতির বিচরন তার। তার বহিঃপ্রকাশ নূরের অলক্ষ্যে দেখে বিশেষ করে ঠোঁট নাড়িয়ে হাসল সাহির।

সম্পূর্ন হাসি বিলিন করে শুধুমাত্র ঠোঁটে একটুখানি মৃদু হাসি ঝুলিয়ে রেখেই সাহিরের নূরের প্রতি প্রশ্ন,

–‘দেরি হলো কেন তোমার আসতে বউ? ‘

সম্পূর্ণ বাক্যখানাই ঠিক ছিল। আবেগে মাখা মাখি, কিছুটা অভিমান, ছোট বয়সের অবুঝ শিশুর ন্যায় অভিযোগ। কিন্তু শেষে শব্দটা ‘বউ’ যুক্ত করে নূরের অনুভূতিগুলোকে অনুভবের চূড়ান্ত সীমানায় নিয়ে গেছে সাহির। এসময়ে নিজেকে সামলানো বড্ড দায় হয়ে পড়ে। সাহির কি জানে সেসব? খবর রাখে নূরের মন গহীনের? নাকি জেনে বুঝে, ইচ্ছে করেই করে এসব? নূরকে অপ্রস্তুত করে বড্ড মজা পায় সাহির?

মনের ভাবনার অবসান ঘটিয়ে নূর ভ্রু যুগল কুঁচকে, চোখজোড়া সংকুচিত করে গম্ভীর বদনে সাহিরের দিকে নেত্রদৃষ্টি নিক্ষেপ করল নূর। চেহারায় আর কন্ঠে গাম্ভীর্যের ছাপ বজায় রেখে বলে উঠল,

–‘মহাশয় বিয়ে হয়নি এখনো, হবে ভবিষ্যতে! সো তখন বউ বলবেন এখন নয়। ‘

নূরের কথায় সাহিরের ভ্রুক্ষেপহীন জবাব,

–‘হু, হবে বিয়ে তোমার বিসিএস হওয়ার পরে। জানি তো আমি। তবে যখনই হোক তুমি তো শুধু আমারই বউ হবে। শুধু আমার! ‘

অতঃপর কয়েক মূহুর্ত দু’জনে নিষ্চুপ রইল। সাহিরের কথার পরে নূর চেয়েও কোনো শব্দ খুঁজে পেল না বলা যায় এমন। সত্যিই তো বলল সাহির, আজ হোক কাল হোক সাহিরের অর্ধাঙ্গিনী হবে নূর। দু’জনে দু’জনকে পরিপূর্ণ করবে স্বামী স্ত্রী রূপে। আকস্মিক আগাম বার্তা প্রদান ব্যতীত দু’হাতের আঁজলায় নূরকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে অতি সন্তর্পনে। আচমকা এ ঘটনায় নূর হকচকিয়ে গেল। তবে পরমূহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সাহিরকে বলে উঠল,

–‘ছাড়ো। ‘

সাহির ছেড়ে দেওয়ার বদলে আরো গাঢ় ভাবে জড়িয়ে নিল ওকে নিজের সাথে। তারপর নূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠল,

–‘ছাড়বো কেন? আমি আমার ভবিষ্যৎ বউকে ধরেছি, সো নো ছাড়াছাড়ির প্রশ্ন। এভাবেই ধরে থাকবো আজীবন! ‘

লাজুকলতা ভঙ্গিতে একটু হাসল নূর। তবে সে হাসি লুকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,

–‘যখন হব তখনই জড়িয়ে ধরো, ছাড়ো এখন! ‘

নিজের অবস্থান হতে নড়ল না সাহির, ছাড়ল না নূরকে, না নিজের অধিকার। অনেক্ক্ষণ এভাবে থাকার পরেও নূরের কোনো সাড়াশব্দ পেল না সাহির। নূর তো নিজের প্রিয়তমের হৃদযন্ত্রের তালে তালে বেজে ওঠা দ্রিম দ্রিম আওয়াজের প্রতিধ্বনি শুনতে মগ্ন। সাহির কিছু না বলে নূরের মাথায় চুলের উপরে পরপর কয়েকটা চুমু বসিয়ে দিল। শেষের দিকে জোড়ে শব্দ হওয়ায় নূর এইবারে মুখ তুলে চাইল সাহিরের মায়াবী মুখশ্রী পানে। সাহিরও তাকালো প্রেমপূর্ন চাহনিতে নূরের পানে।

নূর সাহিরকে একহাতে জড়িয়ে বিশেষভাবে হেসে আনম্র স্বরে জিজ্ঞেস করল,

–‘সবুজ কি চলে গেছে নাকি এখনো দাঁড়িয়ে আছে? ‘

নূরের প্রশ্নে বজ্র চমকানোর ন্যায় চমকে উঠল সাহির। তবে পরক্ষনেই মৃদু হেসে পুরনোয় নূরের মাথায় আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে মাথা না তুলেই বলল,

–‘দাঁড়িয়ে ছিল এতোক্ষন, মাত্রই গেল। ‘

নূরও হাসল একটু ফের। পরম আবেশে জড়িয়ে রইল প্রিয় মানুষটাকে। কিছু সময় পরে নূর ঠেলে সরিয়ে দিল সাহিরকে নিজের থেকে। সাহির ব্যথিত চোখে নূরের দিকে তাকাতেই নূর ওর সামনে একটা পট ধরল।

সাহির জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে নূর বলে উঠল,

–‘কফি আছে এতে। কফি বানিয়ে এনেছি তোমার জন্য তাইতো দেরি হলো । ‘

সাহির আশ্চর্য হলো নূরের এ’কাজে। এই মূহুর্তে সাহিরের কফি খেতে ইচ্ছে করছিল প্রচুর। শরীরের ক্লান্তি সম্পূর্নরূপে ভ্যানিশের জন্য হলেও। নূর কিকরে বুঝল সাহিরের মনের কথা? হয়তো ভালোবাসে বলে!

সাহির দুষ্টুমি করে বলে উঠল,

–‘আমি তো ভাবছিলাম তুমি বুঝি সাজছিলে, কিন্তু আমি কেন যে ভুলে যাই দুনিয়া এপিঠ-ওপিঠ হয়ে যাবে কিন্তু তোমাকে সাজতে দেখা যাবে না! ‘

সাহিরের খোঁচা স্পষ্ট বুঝলো নূর। তার উপযুক্ত প্রতিত্তুরও করল সঙ্গে সঙ্গে। শান্ত স্বরে বলল,

–‘আমার সব সাজ হবে বিয়ের পর আমার স্বামীর জন্য । তার সামনে, দুজনের একাত্ম মূহুর্তে গুলোতে সাজব আমি! অন্যকারো জন্য, কারো সামনে সাজতে পারবো না আমি। আজ আমি তোমার সাথে বেরোবার আগে সেজে বেরোলে পথে শতশত মানুষ দেখবে আমাকে। তুমি কি চাও আমাকে অন্য কেউ দেখুক বিশেষ রূপে, কামুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করুক আমার উপর! ‘

সাহির মুগ্ধ নয়নে নূরের পানে নিষ্পলক তাকিয়ে শ্রবন করছিল ওর কথাগুলো। নূরের কথা শেষ হতে ও কিছু বলতে চেয়েও অপারগ। অতি মুগ্ধতায় কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। অবশেষে জড়ানো স্বরে বলে উঠল,

–‘উহুম, তুমি কেবল আমার জন্যে সাজবে, আমার সামনে সাজসজ্জা করবে বিয়ের পরে! ‘

সাহিরের কথা শুনে মুচকি হাসল নূর, সাহিরের মুখেও ফুঁটে উঠল বড় হাসির রেখা। তারপরেই ও তাগাদা দিল নূরকে গাড়িতে উঠতে। দু’জনেই সিটে বসতে নূর কফি পটটা এগিয়ে দিল সাহিরের দিকে। সাহির হাতে নিয়ে পটটাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

–‘খাবো কীভাবে এখন? ‘

এক ঝটকায় নূর সাহিরের হাত থেকে কেড়ে নিল পটটা । বিরস মুখে ওর দিকে তাকিয়ে পটের মুখটা খুলে ফেলল। খুলে ফেলাতে এখন মনে হচ্ছে ছোট্র কফি কাপ। সঙ্গে সঙ্গে সাহিরের দিকেই দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে কফি ঢালতে লাগলো সেটায়। না দেখে করায় গরম কফির হালকা ছিটা নূরের হাতে গিয়ে পড়ল। তা দেখে সাহির তৎক্ষনাৎ আর্তনাদ করে বলে উঠল,

–‘ধীরে খেয়া! কি করছো কি তুমি? হাতে পড়বে তো! ‘

নূর ভ্রুক্ষেপহীনভাবে পটের মুখে কফি ঢেলে নিজে কফিতে এক চুমুক দিয়ে সাহিরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাস্যে জবাব দিল,

–‘এভাবে! ‘

সাহির কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে একপলকে শান্ত চোখে নূরের পানে তাকিয়ে থেকে, কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আচমকাই গর্জে উঠল,

–‘এমন করলে কেন? ধোঁয়া ওঠা এই কফি হাতে পড়লে কি হতো ধারনা নেই তোমার, না? হাউ কেয়ারলেস ইউ আর খেয়া! শুধু নিজের প্রতিই কেন? ‘

ঘটনার আকস্মিকতায় কেঁপে উঠল নূর। সাহির সহজে রাগে না, খুব ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ ও। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎই রেগে যাওয়ায় স্বভাব আছে ওর এবং সে রাগের মাত্রা ভয়ংকর। যার উপরে চটে যায় তার খবর করে ছাড়ে। সাহিরের আচমকা এমন রাগের কারন নূর এই মূহুর্তে বুঝে উঠতে অপারগ। নূরকে থম মেরে যেতে দেখে গাড়ির জানালা পথে বাহিরে দৃষ্টি নিবন্ধ করে সাহির যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। নূরের পানে ফিরে মুচকি হেসে ওর হাত থেকে কফিটা নিয়ে খেতে আরম্ভ করল। নূর এখনও চুপচাপ বসে আছে আর শান্ত চোখে সাহিরকে দেখে যাচ্ছে।

কয়েক মূহুর্ত নিরবতায় কেটে যেতে সাহির মৃদু হেসে শান্ত স্বরে বলে উঠল,

–‘থ্যাংক ইয়্যু মাই লেডি! ‘

জিজ্ঞাসু চোখে কৌতূহলী হয়ে সাহিরের দিকে নেত্রপাত করল নূর। সে দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করে সাহির নিজের হাতে থাকা পটের মুখ দিয়ে পরিস্থিতি সাপেক্ষে বানানো কফি কাপ ইশারায় দেখিয়ে সেটায় চুমুক দিতে দিতে বলল,

–‘ফর দিস! রিয়েলি আই ওয়াজ বেডলি থার্স্টি ফর অ্যা কাপ অব কফি। হাউ ডিড ইয়্যু নোউ দ্যাট? আই থিংক ইট’স দি কানেকশন অব হার্ট, ইজ’ন্ট ইট? ‘

নূর শুনে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সাহির আরো কয়েক সিপ নিয়ে কাপটা নূরের দিকে এগিয়ে দিল। নূর এবারেও কথা না বলে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল, ‘কি?’

সাহির হেসে পট থেকে আরো একটু কফি ঢালল পটের মুখে। তারপরে নূরের হাতে সেটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,

–‘খাও। ‘

তৎক্ষনাৎ নূরের জবাব,

–‘না, আমি খাবো না। তুমি খেয়ে শেষ কর। ‘

–‘খেয়া রাগ উঠাবে না প্লিজ! চুপচাপ খেয়ে নাও দ্রুত। তোমার ঘুম ভাবটা কেটে যাবে আর শরীরও ভালো লাগবে। তাছাড়া আবহাওয়াও কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা, শীত শীত ভাব কেমন। ‘

শত জোড়াজুড়ি অনুনয় বিনয়েও কোনো লাভ হলো না। শেষ অবধি কফি খেতেই হচ্ছে ওকে। বিরস মুখে চোখ মুখ কুঁচকে কিছুক্ষণ পরপর কফি কাপে চুমুক দিচ্ছে নূর। সাহিরের প্রতি মনে মনে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকটা ইচ্ছে করেই ধীরে ধীরে করছে নূর। রাতে লং ড্রাইভে যাওয়া ক্যান্সেল আজ। কিছুক্ষনের মধ্যেই ভোর হয়ে যাবে। বাড়ি গিয়ে আরাম’সে লম্বা একটা ঘুম দেবে নূর। কথাগুলো ভেবে মনে মনে হেসে অস্থির নূর।

সাহির নূরের এমন ধীরে ধীরে কফির কাপে চুমুক দেওয়া দেখে তিক্ষ্ম চোখে তাকালো ওর দিকে। নূরের চোখে মুখে অতি সুক্ষ্ম কিঞ্চিৎ পরিসরে হাসির রেখা। কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ ভাবল সাহির। পরক্ষণেই নূরের মুখ পানে চেয়ে মুচকি হাসল। নূর তখনও নিজের মনের ভাবনা আর কফি পানে মগ্ন। সাহির আচমকাই নূরের হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে খেতে শুরু করে দিল। নূর এতোক্ষণ যেদিক দিয়ে চুমুক দিচ্ছিলো সাহিরও ঠিক সেদিক দিয়েই চুমুক দিয়ে খাচ্ছে কফি। নূর হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে সাহিরের দিকে। সে দৃষ্টি লক্ষ্য করে সাহির স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠল,

–‘কি?’

বিস্ময় নিয়ে নূরের জিজ্ঞাসা,

–‘তুমি কফি. ‘

সাহির হাত উঁচিয়ে নূরকে থামিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে নরম স্বরে ওর চোখে চোখ রেখে বলে উঠল,

–‘আমি কফি সেদিক দিয়ে খাচ্ছিলাম যেদিক দিয়ে তুমি চুমুক দিচ্ছিলে, এটায় তো বলতে না? ‘

ঘাড় কাত করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক প্রতিত্তুর করল নূর। সাহির নূরের প্রতিক্রিয়ায় হেসে ওর দিকে একটু চেপে এসে এক হাতে ওর গাল স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

–‘এটা কিন্তু প্রথম নয় খেয়া। আমি এর পূর্বেও একই কাজ করেছি হয়তো তুমি লক্ষ্য করনি। এমনকি আজও প্রথমবার কফির কাপে চুমুক দিয়েছি সেদিক দিয়েই যেদিক দিয়ে তুমি এক সিপ নিয়েছিলে। ‘

নূর অসহায় চাউনি নিক্ষেপ করে সাহিরের দিকে তাকিয়ে। সাহির পুনোরায় নূরের দিকে চেপে বসলো আরেকটু। ওর কানের পাশে মুখ নিয়ে পূর্বের চেয়েও ফিসফিস করে মাদকতা জড়ানো স্বরে বলল,

–‘বাই ডুয়িং দিস আই ক্যান ফিল ইয়্যুর লিপস! দ্যাট’স হোয়াই আই অ্যাম ডুয়িং দিস সুইটহার্ট! ‘

বিস্ময় কন্যা থেকে লজ্জায় লাজুকলতা হয়ে গেল নূর ক্ষনিকে। কিছু না বলে সাহিরের সাথে মিশে রইল। কিছু সময় পরে সাহির নিজেই সরে বসল। নূরের দৃষ্টি এবারে গাড়ির বাহিরে নিবন্ধ।

কফি শেষ করে নূরের দিকে ঝুঁকে সিট বেল্ট বেঁধে দিল সাহির। নূরের কপালে শুদ্ধতম ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে সরে এসে নিজের সিটে বসে নিজের সিট বেল্টও বেঁধে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নূরের খানিক সময় পূর্বে মনে মনে করা নূরের পরিকল্পনা ধূলিসাৎ করে দিয়ে সাহির গাড়ি চালানো শুরু করেছে। নূরেরও যেন মুখ ভারি কিছু দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে কোনো কথা বলতে চরম অপারগ সে। কেবল মানুষটা যেদিকে নিয়ে যাবে বিনা বাক্য ব্যায়ে সেদিকেই যাবে ও।

রাস্তার নিয়ন আলোয় আধো দ্যুতি আধো আধারের ছোঁয়ায় চলমান গাড়িতে বেশ কিছু সময় পাড় করল দু’জনে নিরবচ্ছিন্ন নিরবতায়। নিরবতা ভঙ্গের প্রয়োজন বোধহয় বোঁধ করল সাহির’ই প্রথমে। তাইতো শান্ত অথচ গম্ভীর স্বরে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

–‘তখন যে ধমক দিয়েছি তার জন্য স্যরি আমি কক্ষনো বলব না খেয়া। ইয়্যু ডিসার্ভ দিস! নিজের ব্যপারে খুব কেয়ারলেস তুমি, খুব! কেন বুঝো না তোমার সামান্য ক্ষতিও আমার সহ্যের বাহিরে। তাই তোমার ভালোর জন্য প্রয়োজনে আমি হাজার বার বকব তোমায়। ‘

বুকের ভেতরে প্রশান্তি অনুভব করছে নূর, অন্যরকম শান্তি। হৃদয় নিংড়ানো সে প্রশান্তি। অশ্রুসিক্ত চোখে সাহিরের পানে চাইল ও। সাহির ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে লক্ষ্য করল নূরের সে চাহনি। নিজেও হাসল একটু। সে সাথে নিজের ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ভাঁজে নূরের বাম হাতের পাঁচটা আঙ্গুল আঁকড়ে ধরল। নূর ছাড়ানোর চেষ্টা না করে নিজেও সাহিরের হাতের মুঠোয় নিজের হাত সপে দিল। মৃদু হেসে সাহির নূরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে বসল,

–‘কখনো ছেড়ে যাবে নাতো? ‘

অবাঞ্চিত অনাকাঙ্ক্ষিত এ প্রশ্নে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ল নূর। সাহিরকে ছাড়ার কথা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। অনেক ভালোবাসে মানুষটাকে ও! নূরের উত্তরের প্রতিক্ষায় ওর পানে চেয়ে না থেকে সাহির ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিল ফের। কিছু সময় পরেই নূরের কিছু কথা সাহিরের কর্ন কূহরে প্রতিধ্বনিত হতে সাহির থমকে গেল।

মস্তিষ্ক আর মনের সাথে লড়ে কয়েক মূহুর্তে সাহিরের করা প্রশ্নের বাস্তবিক উত্তর খুঁজে বের করে নিল নূর। প্রবল অনিচ্ছায় হলেও বলতে আরম্ভ করল,

–‘স্বেচ্ছায় কখনো নয় তবে পরিস্থিতির উপরে কারো হাত থাকে না। ‘

পরোক্ষভাবে নূর নিজের কথায় স্পষ্ট প্রকাশিত হয়েছে সাহিরকে ছেড়ে যাবে ও। তবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে, অতি প্রয়োজনে, সাহিরের জীবনের সব কিছুর শুভ পরিনতি’র লক্ষ্যে। নচেৎ নিজেও তো ওকে ছাড়া কল্পনা করতে অপারগ নিজেকে!

তড়িঘড়ি সাহির একপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিল। নূরের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে সে চাহনি দেখে শুঁকনো ঢোক গিলল নূর। নিজের দিক থেকে ডিফেন্স করার পূর্বেই বুঝল কেউ ওর সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে। সেটা যে সাহির ব্যতীত কেউ নয় জানে নূর। দু’হাতে মৃদু ধাক্কায় ওকে সরাতে চেয়েও পারল না।

–‘প্লিজ বলো না কক্ষণো এ’কথা আর। তুমি চাইলেও আমি দেবো না আমাকে ছেড়ে যেতে তোমাকে। আমার জীবনের পরম পাওয়া তুমি, কত বছরের প্রতিক্ষার ফল তুমি। ভালোবাসি তো তোমাকে! ‘

সাহিরের ভেজা কন্ঠে অসীম ভালোবাসার মিশ্রনে মুখ নিঃসৃত কথাগুলো শুনে নূরের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি অজান্তে পড়ল। সাহির পুনোরায় বলতে শুরু করল,

–‘আমি জানি তুমি খুব ভালো, অতি মাত্রায় ভালো যাকে বলে। প্লিজ আমার সাথে ভালোমানুষি কখনো করোনা। সেটা আমার উপরে ভারি পড়বে। হয়তো কখনো বা আমার ভালোর জন্য, আমাকে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সরে যেতে চাইবে আমার জীবন থেকে। কিন্তু আজ আমি একটা কথা বলছি কান খুলে শুনে রাখ তুমি, তুমি আমাকে যদি কখনো ছেড়ে চলে যাও সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি! সবচেয়ে বড় ক্ষতি আমার জন্য! যেকোনো সময়ে, পরিস্থিতিতে তোমাকে আমার জীবনে চাই খেয়া! ‘

ইমোশনাল হয়ে গেছে সাহির। তাই নিজের মনে থাকা নূরকে নিয়ে ভয়গুলোর বহিঃপ্রকাশ করছে আপনমনে। নূরেরও সাহিরের এই অসহায় অবস্থা কন্ঠস্বর একদমই সহ্য হচ্ছে না। ওর প্রিয় মানুষটাকে সবসময় ও স্ট্রং দেখতে চায়, কখনো ভেঙে পড়ুক সেটা চায় না। নূর অতি সন্তর্পনে সাহিরের চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিল কিছুক্ষণ। তারপরেই সুযোগে সাহির হালকা স্বাভাবিক হতেই মন খারাপ করে বলে উঠল,

–‘লং ড্রাইভে বোধহয় আজ যাওয়া হবে না, না? ওকে এখানেই টাইম স্পেন্ড করি দুজনে গাড়িতে বসে বসে। কি বলো তুমি? ‘

নূরের কথা শুনে হেসে ফেলল সাহির। নূরকে ছেড়ে উঠে ওর গা ঘেঁষে বসে পড়ল। আলতো করে নূরের নাকের ডগায় টান দিয়ে বলল,

–‘উহুম, যাবো তো লং ড্রাইভে। তবে মনে হচ্ছে রাতে পারবো না, ভোর তো প্রায় হয়ে এসেছে। ‘

চোখা চোখে তাকালো নূর সাহিরের পানে। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সাহির জিজ্ঞেস করল,

–‘কাল তো তেমন কোনো জরুরি কাজ নেই হসপিটালে তাইনা? মানে তুমি হসপিটাল যাচ্ছো না বা না গেলেও সমস্যা হবে না। তাইতো? ‘

তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেও পরক্ষণে খানিক ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠল,

–‘ভনিতা কেন করছো? তুমি তো আর এমনি এমনি আসোনি আমি নিশ্চিত সব খোঁজ খবর নিয়েই এসেছো
। তো জানোই তো সবকিছু! ‘

নূরের কথায় সাহির ভ্রুক্ষেপ না করে বলে উঠল,

–‘আজ তোমার বাড়ি ফেরা হচ্ছে না সুইটহার্ট। ফিরলেও ধরো রাতের দিকে একেবারে। ‘

চকিত হয়ে নূরের প্রশ্ন,

–‘মানে? ‘

–‘মানে হলো তুমি আজ সারাদিন আমাকে সময় দেবে। ‘

–‘তুমি কি বলছো জানো তুমি? ‘

–‘টেনশন করো না, আঙ্কেল আর আদ্রিয়ানের থেকে পারমিশন আমি নিয়ে নেব। ‘

–‘তো শুধু তুমি আর আমি? ‘

নূরের প্রশ্নে সাহিরের জবাব,

–‘না, আমি তুমি আর আমাদের ছেলে। ‘

এতোক্ষণ গোমড়া মুখে থাকলেও ইহানের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে গেছে নূর। উৎফুল্ল স্বরে জিজ্ঞেস করল,

–‘এই কখন নিবে ইহানকে সাথে? গাড়ি ঘোরাও তুমি আমি বাসা থেকে চেঞ্জ করে আসি। তারপরে তোমাদের বাড়ি গিয়ে তুমি ফ্রেশ হয়ে নেবে আর ইহানকেও সাথে নিয়ে নেব আমাদের। ‘

–‘তার প্রয়োজন পড়বে না, এক্ষুনি গিয়ে ইহানকে সাথে নেব। আমি ফোন করছি বাড়িতে ওকে রেডি করবে মা। ওখানে যেতেও সময় লাগবে অনেক। ‘

–‘কোথায় যাবো? ‘

–‘ গাজীপুরের ঐদিকে আমাদের একটা বাগান বাড়ি আছে সেখানে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জ্যাম বাড়বে রাস্তায় তাই দিনের আলো ফুঁটবার আগেই যাওয়া ভালো৷ খালি রাস্তা পাওয়া যাবে। খালি রাস্তায় গাড়ি চালানোর মজায় অন্যরকম। ঢাকার জ্যামে গাড়ি চালাই নাকি ঠেলাগাড়ি ঠেলি কিছুই বোঝা যায় না। পিঁপড়ার গতিতে জান বাহন সব চলে। ‘

সাহিরের কথা শনে হাসতে হাসতে অবস্থা বেহাল নূরের । কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলল,

–‘সিরিয়াসলি ঠেলাগাড়ি? সাহির তোমার মনে হয় তুমি ঠেলাগাড়ি চালাও। ‘

সাহির হতাশ স্বরে জবাব দেয়,

–‘এর থেকে ভালো আর কোনো উপমা খুঁজে পেলাম না, সেটায় মনে হয় আমার! ‘

–‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। আর পরবর্তী পরিকল্পনা কি? ‘

–‘কি ঘুরতে যাওয়ার?’

চোখের ইশারায় নূর হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। সাহির বলতে আরম্ভ করল,

–‘ তারপরে সারাদিন ওখানে একসাথে কাটিয়ে রাতে ব্যাক করব আবার। ‘

আফসোসের স্বরে নূর বলে উঠল,

–‘ইশ, সবাই যেতে পারলে কত্ত ভালো হতো। ‘

ইতোমধ্যে গাড়ি চালাতে শুরু করেছে সাহির। সামনে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে গাড়ি চালাতে চালাতেই জিজ্ঞেস করল,

–‘সবাই মানে কে কে? ‘

–‘আমি, তুমি, ইহান, আদিল ভাইয়া, তাহিন আপু, ভাইয়া, ইতি, নিকিতা আপুকেও বলতাম আসতে। মজা হতো খুব, না?’

–‘আদ্রিয়ান আর ইরাকে কেন বাদ দিলে? নাকি ওদের নাম নিতে ভুলে গেছো, কোনটা?’

–‘উহুম, ভুলবো কেন? ভুলিনি আমি। আসলে ওরা তো নিউ কাপল তাই ওদের প্রাইভেসি প্রয়োজন। ওরা একা একা কোথাও গেলেই বোধহয় সেটা ভালো হবে। ‘

নূরের কথা শুনে করুন চোখে ওর পানে চেয়ে সাহির বলে উঠল,

–‘তাহলে আমরা কি খেয়া? ওল্ড কাপল? কিন্তু ওদের আর আমাদের সম্পর্কের বয়স তো প্রায় একই। তুমি সব জেনে বুঝেও এই না ইনসাফ করো আমার সাথে! ‘

–‘আরে আজ তো আমি সময় দেবো তোমাকে। তাছাড়া এতো রাতে আমি তোমার সাথে বেড়িয়েছি, গাড়িতে ঘুরছি কম মনে হচ্ছে তোমার? ‘

–‘একদমই না, মজা করছিলাম আমি। ‘

নূর চুুপ করে রাতের ঢাকা শহর দেখতে মগ্ন হয়ে পড়ল। কিছু সময় পরে সাহির ডেকে উঠল,

–‘খেয়া!’

–‘হু।’

–‘তখন আদ্রিয়ান যে গেটের সামনে ছিল বুঝলে কীভাবে? ‘

সাহিরের কথায় বিশেষভাবে একটু হাসল নূর কিছু বলল না। তা দেখে সাহির’ই বলল,

–‘তোমাদের বন্ডিংটা খুব স্ট্রং। আমি এমন সম্পর্ক পৃথিবীতে আর কোথাও দেখিনি জানো! ‘

–‘হয়তো কোথাও আছে হয়তো নেই। ‘

–‘হুম হয়তো! ‘

–‘এই সাহির শোনো না! ‘

–‘বল, শুনছি। ‘

–‘আমার মনে হয় কি জানো, আজ না সবুজ নিজের সুবিধার জন্য ইরাকে অতো রাত অবধি জাগিয়ে রেখে ফোনে কথা বলেছে। ‘

কথাটা শুনে সাহির নূরের দিকে তাকাতে নূর কথা বন্ধ করে পুনোরায় বলে উঠল,

–‘আমি যখন কফি বানাচ্ছিলাম কিচেনে তখনই হঠাৎ মাথায় খেলে গেছিল কথাটা। আমি যতদূর জানি ওরা দু’জনে কথা বললেও এতো রাত অবধি না। আর তুমি যেহেতু আগেই বলেছিলে রাতে আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে সে হিসেবে তুমি আসা অবধি সবুজ জেগে থাকতো। বিশেষ করে যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমার সাথে গেটের বাহিরে এসে আমার দেখা হয়। আর আমি তোমাকে তখন লক্ষ্য করেছিলাম, আমি তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও তুমি গেটের দিকে তাকিয়ে হেসে ইশারায় কথা বলছিলে। আর এমনিতেও আমি নাইন্টি পার্সেন্ট শিউর ছিলাম ও আসছে আমার পেছনে পেছনে। তোমার ব্যবহারে পুরো শিউর হয় গেছিলাম। ‘

–‘আগে হলে পুরো হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউরিটি দিতে পারতে তাইনা?’

অপেক্ষা করুন পরবর্তী অংশের..

ধন্যবাদ, হ্যাপি রিডিং —

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here