প্রণয়ালাপ পর্ব ১

মধ্য রজনীরও ওপারে সময়। ঘড়ির কাটা দু’টো বেজে পঁচিশের ঘরে। নিজের মখমলের মতোন নরম বিছানায় ঘুমে বিভোর নূর। বাহিরে আকাশে মেঘ করেছে, নরম বাতাসও বহমান। কেমন শীত শীত ভাব যদিও শীত কাল নয়। পরিবেশের প্রভাব বলা চলে এ আবহাওয়াকে । যার দরুন এসি অফ করে পাতলা কাঁথা গাঁয়ে জড়িয়ে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে পরম আবেশে নিদ্রাচ্ছন্ন নূর। ও ঘুমিয়েছে খুব বেশি সময় হয়নি। তবে সারাদিনের গ্লানি, ক্লান্তি আর অবসাদের দরুন ঘুম খুব দ্রুতই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে আজ নিজের ওর উপরে। কেবলই ঘুমটা গভীর হচ্ছিল তখনই ফোনের রিংটোনের শব্দে হালকা হয়ে গেল নিদ্রা। বিরক্তি, অস্বস্তিতে মুখ মন্ডলের প্রত্যেকটা পার্ট কুঁচকে গেল নূরের। মগজে তৎক্ষনাৎ উদ্ভব নানান ভাবনা আর প্রশ্নের। ‘কে কল করল এতো রাতে? সবুজ তো নিজের রুমে ঘুমে। সবাই তো বাড়িতেই আছে এখন! তবে কে? যে কল করতে পারে এই মূহুর্তে সে তো খুব ভালোভাবেই অবগত যে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নূর ঘুমে বিভোর হয়ে থাকবে এই সময়ে। অকারণে নূরকে কখনোই সে কল করে অযথা বিরক্ত করবে না! ‘ তবে মূহুর্তে ‘কারো কোনো বিপদ হয়নি তো! ‘ কথাখানি ভেবে চট করে বিছানায় উঠে বসে পড়ল নূর। ঘুমকে সম্পূর্ণ বিদেয় করতে চেয়েও অপারগ ও। উপায়ন্তর ঘুম ঘুম চোখে রুমে জ্বালিয়ে রাখা মৃদু নীল আলোয় বেড সাইট টেবিলের পানে হাত বাড়ালো নূর। মোবাইলের আলো জ্বলে থাকায় বেগ পেতে হয়নি ফোনটা হাতে পেতে।
ফোনটা চোখের সামনে ধরে স্ক্রিনে ভেসে উঠা নামটা দৃষ্টিগোচর হতেই ঘুমে বন্ধ হয়ে আসা পিটপিট করা চোখ দু’টো কিঞ্চিৎ পরিসরে প্রশ্বস্থ হলো। মূহুর্ত সময় অপচয় না করে কলটা ধরল নূর। ঘুমে আচ্ছন্ন স্বরে নূর কিছু বলার পূর্বে অপর পাশ থেকে মিহি স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো নূরের কর্নকূহরে।

–‘ঘুমিয়ে পড়েছো? ‘

এমন নেশা ধরানো কন্ঠ শুনে পরম আবেশে চোখ বুঁজে আসল নূরের। এতো মিষ্টি কেন এই কন্ঠস্বর। সবসময়ই এমন নাকি শুধু নূরের সাথে কথপোকথনের সময়ে এত মিষ্টতা ভর করে মানুষটার স্বরে? কিছু সময় দুপাশে নিরবতা বিরাজের পরে পুনোরায় অপরপাশে থাকা ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করল,

–‘কথা বলছো না কেন? ‘

নূর চোখ বন্ধাবস্থায় ঠোঁটের কোনে সুক্ষ্ম হাসি টেনে বলে উঠল,

— ‘হুম। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তোমার ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ‘

নূরের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর মূহুর্তে ঝড় বইয়ে দিল মানুষটার মনে। তবে এই ক্ষনে আবেগকেন্দ্রিক না হয়ে মনের ডাকে সাড়া না দিয়ে মগজের কথা শুনলো সে। তবে তৎক্ষনাৎ মস্তিষ্ককে প্রশ্রয় না দিয়ে ক্ষানিক মলিন স্বরে বলে উঠল,

–‘স্যরি! ‘

নরম স্বরে নূরের প্রশ্ন,

–‘কেন?’

–‘ঘুমিয়েছো খুব বেশি সময় হয়নি, না? কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিলাম তোমার। ‘

এমন কথায় একটু হাসল নূর। মানুষটার কন্ঠে অপরাধী ভাব স্পষ্ট তবে নূর জানে অযথা কোনো কারনে সে নূরের ঘুম ভাঙ্গাবে না ফোন দিয়ে। যেখানে নূর আজ সারাদিন এতো পরিশ্রম করেছে। শুধু আজ’ই নয় বিগত ক’দিন নূরের হসপিটালে কাজের চাপ যাচ্ছে প্রচুর। সে সাথে পরিবারের দেখাশুনা, নিজের পড়াশোনা সব মিলিয়ে খুব’ই ক্লান্ত থাকে দিনশেষে ও। কপট রাগী কন্ঠে নূর বলে উঠল,

–‘তো ঘুম ভাঙ্গানোর পরে মনে হলো তোমার এ’কথা? ঘুমানোর আগেই তো কথা বলেছিলাম তোমার সাথে। তুমিও তো ঘুমিয়ে পড়েছিলে। তাহলে এখন? ‘

অপরপাশ থেকে অনুযোগের স্বরে,

–‘কেন কল করতে পারি না তোমাকে আমি? যখন যে সময়ে খুশি কল করতে পারি আমি। ‘

–‘সে কথা বলিনি আমি। ‘

অপরপাশ থেকে ব্যাক্তিটি হেসে বলে উঠল,

–‘মন খারাপ করো না। আমিও সেভাবে কিছু বলিনি। ‘

–‘হু!’

–‘কি হু? শুধু হু! ‘

তৎক্ষনাৎ নূরের জবাব,

–‘কি বলব তাহলে? ‘

–‘বলতে হবে না তবে করতে হবে। ‘

চকিত হয়ে বিস্ময়ে নূরের প্রশ্ন,

–‘মানে? কি করব আমি? এতো রাতে? ‘

–‘বেশি কিছু না, রুম থেকে বেড়িয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে মেইন ডোর খুলে ফ্রন্ট ইয়ার্ড দিয়ে হেটে গেইট খুলে বাহিরে চলে এসো। ‘

নূর মৃদু স্বরে আর্তনাদ করে বলে উঠল,

–‘এই কোথায় তুমি এখন? ‘

–‘ঠিক গেস করেছো, আমি তোমাদের বাড়ির গেটের সামনে রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলে দাঁড়িয়ে। এন্ড ট্রাই করছি তোমার বেলকনি দেখার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।’

ফোনরর অপরপাশে থাকা মানুষটার চাপা হাসির শব্দ স্পষ্ট নূরের কানে আসছে। নূর বুঝতে পারছে সে এক দন্ডও মিথ্যে বলছে না। মহা বিস্ময়ে নূরের ডান হাত গিয়ে ঠেকল মুখে। মূহুর্তে নিজেকে সামলে ও বলে উঠল ,

–‘তোমার তো আসার আরো দু’দিন বাকি ছিল? এতো রাতে কিকরে তুমি এখানে? কখন ঢাকা ফিরেছো? ‘

–‘এতো প্রশ্ন একসাথে? ‘

–‘ভনিতা না করে উত্তর দাও তুমি। আর প্লিজ এখন তুমি বলোনা যে এতো রাতে ড্রাইভ করে ফিরেছো তুমি। ‘
–‘মহাশয়া এই মূহুর্তে সেটা আপনার ভালো না লাগলেও সেটাই সত্যি। কাজ শেষ হয়ে গেছিল আজ’ই। স্যরি! ‘

অপরপাশ থেকে নূরের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না মিনিট খানেক হলো। ও’তো নিজের মতো করে ভাবনায় মশগুল। ওর মন, মস্তিষ্কের ভাবনা মতে ‘তখন ঘুমানোর আগে ফোনে যখন কথা বলছিল দু’জনে তখন নিশ্চয়ই ড্রাইভ করছিল মানুষটা। এতটা কেয়ারলেস কিকরে হতে পারে সে? নিশ্চয়ই বাড়ি গিয়ে সকলের সাথে দেখা করে পড়িমড়ি ছুটেছে এখানে। যেকোনো বিপদ হতে পারতো। ‘
দু’মিনিট অতিক্রম হতে চললেও নূরের প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সে অপরাধী ভঙ্গিতে বিনয়ী স্বরে বলে উঠল,

–‘স্যরি বললাম তো। প্লিজ ক্ষমা করে দাও, আর হবে না সত্যি! কাজ শেষ হয়ে গেছিল কাজ সন্ধ্যার পরপরই। এ ক’দিন তুমি যেহেতু কাজের প্রেশারে আমাকে সময় দিতে পারছিলে না, আমি সে সুযোগ আর সময় দুটোই কাজে লাগিয়েছি। ‘

–‘মানে? ‘

–‘মানে তো পরিষ্কার খেয়া, আমি রাত দিন এক করে কাজটা শেষ করেছি। মিস করছিলাম তোমাদের খুব! ‘

–‘বাড়ি গিয়েছো? ‘

–‘উহুম, তোমার সাথেই দেখা করতে এসেছি সরাসরি। ‘

অসন্তোষের স্বরে নূরের জিজ্ঞাসা,

–‘কেন? বাড়ি কেন যাওনি? ইহান, আন্টি, আঙ্কেল অপেক্ষা করে আছে নিশ্চয়ই! ‘

–‘না নেই কেউ আমার অপেক্ষায়। আমি মা’কে কল করেছিলাম ঢাকায় পৌঁছেই। তখন তো প্রায় দেড়টার উপরে ছিল সময়। ইহান ঘুমিয়ে পড়েছে, সাথে বাবা মা-ও। ‘

–‘ওহ্!’

–‘হেয় টেনশন কেন করছো তুমি? আ’ম ফিট এন্ড ফাইন খেয়া। আর যখন তোমার সাথে কথা বলছিলাম ফোনে তখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম না, রাস্তায় জ্যামে আঁটকে ছিলাম আমি। ‘

–‘সান্ত্বনা চাইনা আমার সাহির! আমি কতবার নিষেধ করেছি তোমাকে ড্রাইভিংয়ের সময় কথা না বলতে। কিন্তু তুমি? ‘

কেঁপে উঠেছিল নূরের কন্ঠ কথাগুলো বলার সময়ে। মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করল সাহির নূরের কথা শুনে । সত্যিই বড্ড ভাগ্যবান ও! সৃষ্টকর্তার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া মেয়েটাকে ওর জীবনে দেওয়ার জন্য।
মৃদু হেসে নূরকে বোঝানোর নিমিত্তে সাহির বলে উঠল,

–‘সত্যি বলছি আমি খেয়া। রাস্তায় বড়সড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল আজ তাই জ্যাম ছিল। আমি রাত সাড়ে এগারো কি বাড়োটার দিকেই পৌঁছে যেতাম ঐ এক্সিডেন্ট না হলে। বিশ্বাস কর প্লিজ! ‘

–‘বিশ্বাস করি তোমাকে! ‘

অস্ফুট হেসে সাহির বলে উঠল,

–‘জানি আমি। তবে আজ আমার আসার অন্য একটা উদ্দেশ্যও ছিল বটে। ‘

ভ্রু কুঁচকে গেল নূরের মূহুর্তে। কৌতূহলী স্বরে জিজ্ঞেস করল,

–‘কি? ‘

সহাস্যে সাহিরের জবাব,

–‘তোমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো আজ। ‘

–‘লং ড্রাইভ? নট বেড আইডিয়া, তবে আজ তো সম্ভব নয় আর। ‘

–‘কে বলল সম্ভব নয়? আমি এতো রাতে তাহলে কেন এখানে এলাম? হু? ‘

–‘তুমি নিশ্চয়ই এখন বলবে আমাকে নিয়ে এক্ষুনি রাতে লং ড্রাইভে যাবে! প্লিজ ডোন্ট সে দিস সাহির। তুমি নিজেও ক্লান্ত একটানা কাজ করে আর আমিও। দু’জনের বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশেষ করে তোমার কারন একটানা ড্রাইভ করে এসেছো তুমি। অন্যদিন যাবো লং ড্রাইভে। আগে তোমার হেলথ ইম্পরট্যান্ট আমার কাছে । ‘

নূরের কথায় মৃদু হেসে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল সাহির। তারপর ভালোবাসায় জড়ানো মিহি স্বরে বলে উঠল,

–‘তুমি পাশে থাকলে কোনো ক্লান্তিই স্পর্শ করতে পারে না আমাকে খেয়া। আর কতদিন হলো তোমাকে সামনা সামনি দেখি না বলো তো! ‘

–‘এক সপ্তাহও হয়নি, ছ’দিন কেবল। ‘

–‘অনেক সময় খেয়া। অনেক কথা বলে ফেলেছি ফোনে, সময়ও তো অপচয় হচ্ছে শুধু শুধু। প্লিজ তুমি দ্রুত নিচে এসো, অপেক্ষা করছি আমি। ‘

–‘এতো রাতে সাহির? বাবা কিংবা সবুজ কাউকে জানাই নি, হুট করে কিকরে যাবো! ‘

–‘যাও আদ্রিয়ানকে বলে এসো গিয়ে! আমি জানি ও না করবে না।’

–‘রাত তো কম হয়নি, ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ‘

সাহির হেসে উঠল নূরের কথা শুনে। কোনোরূপ নিজেকে সামলে বলল,

–‘প্লিজ ওকে জানাতে না হলেও যাও একবারের জন্য। তখন বুঝতে পারবে ও ঘুমিয়ে আছে নাকি অন্য কাজে বিজি! ‘

সন্দিহান স্বনে নূর বলল,

–‘আজ বড্ড ভনিতা করছো তুমি? ‘

–‘কথা না বাড়িয়ে যাও দ্রুত তুমি। আমরাও তো বেরোবো এরপর। ‘

নূর কিছু না বলে ফোন কানে ধরে রেখেই রুম থেকে বেড়িয়ে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালো সবুজের রুমের সামনে । আঁড়ি পাতলো দরজায় ও, স্পষ্ট না হলেও অস্ফুটস্বরে কথা বলার আওয়াজ আসছে নূরের কানে। তার মানে সবুজ কথা বলছে কারো সাথে। ‘কে সে? ‘ নিজেকে নিজে এই প্রশ্ন করে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে নূর বোকার তকমা দিল। সবুজ এই মূহুর্তে ইরা ব্যতীত অন্য কারো সাথে কথা বলবে না। নিশ্চয়ই ইরা আছে ফোনের অপরপাশে। ওর ভাবনায় ছেদ ঘটালো সাহির। ও বলে উঠল,

–‘কি বিশ্বাস হলো? দেখলে প্রেম করছে আদ্রিয়ান কি সুন্দর। কেবল তুমিই?’

তৎক্ষনাৎ গম্ভীর স্বরে নূরের জবাব,

–‘কি আমি? ‘

চকিত হয়ে সাহির ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে জবাব দিল,

–‘কিছু না, দ্রুত নিচে এসো তুমি। আর হ্যাঁ! ‘

–‘কি বলো? ‘ নরম স্বরে নূরের জিজ্ঞাসা।

–‘আঙ্কেল জানে তুমি আজ রাতে বেরোবে আমার সাথে । ‘

–‘প্রথমে বললেই তো হতো, কত সময় আজিরা প্যাচাল পারলাম আমি। আর তাছাড়া সবুজের রুমে গিয়েও আঁড়ি পাতলাম। ইশ! ও জানলে কি বলবে? তবে কাল সকালেই বলে দেবো আমি ওকে। ‘

–‘সেটা কাল সকালে দেখা যাবে। আপাতত আমাতে কনসেন্ট্রেট কর। আর শুধু আঙ্কেল’ই নয় আদ্রিয়ানও জানে আজ আমি তুমি রাতে লং ড্রাইভে যাবো। ‘

এইবারে নূর ক্ষেপে গেল। কিঞ্চিৎ রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

–‘এটাও আগে বলতে পারলে না তুমি! আমাকে উঠিয়ে ওর রুমের সামনে নিলে। ‘

–‘রাগ করো না খেয়া। ‘

ফোনের অপরপাশ থেকে নূরের কোনো আওয়াজ না পাওয়ার দরুন সাহির অানম্র স্বরে বলল,

–‘প্লিজ রাগ করো না, কথা বল। ‘

–‘রাগ করিনি তো আমি। ‘

–‘উহু, করেছো। নাহলে কথা বলতে আমার সাথে। ‘

–‘করিনি, করিনি, করিনি! আর কি বলবো? ‘

–‘বল ভালোবাসি! ‘

নূর সাহিরের কথা শুনে নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলেছে। সাহির নিজেও উপলব্ধি করতে পারছে নূরের নিঃশব্দ হাসি। তবে আফসোস করে ও বলে উঠল,

–‘তুমি যেহেতু বলবে না আমিই বলছি, ভালোবাসি খেয়া!’

নূরের নিঃশব্দে হাসি লজ্জারুণ হাসিতে রুপান্তরিত হয়েছে এক্ষণে। সাহিরও নিঃশব্দে ফোনের অপরপাশে নূরের হাসি আর দ্রুতগতিতে নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করে চলেছে। অদ্ভুত শান্তি অনুভূত হচ্ছে মনে। এই মেয়েটাকে জীবনে না পেলে বোঝাই হতো না জীবনের কত রঙ। জীবন কত প্রানবন্ত! খেয়াহীন সাহিরের জীবন রঙহীন ফিকে! কিছু সময় দু’জনে নিশ্চুপ কাটিয়ে দু’জনকে নিরবতায় অনুভবে খুঁজে নিল।
অতঃপর সাহির মুখ খুলল।

–‘দ্রুত এসো খেয়া। ক’ঘন্টা সময় পাবো কেবল। ‘

–‘তো পন করে এসেছেন আজ’ই লং ড্রাইভে যাবেনই যাবেন!’

–‘নাহলে কি সে সুদূর চট্রগ্রাম থেকে ছুটে আসতাম তোমার কাছে! আজ’ই যাবো! ‘

–‘হুম আমি আসছি, একটু অপেক্ষা কর। ‘

–‘আমার সব অপেক্ষা তো তোমাকে ঘিরেই। করছি অপেক্ষা, দ্রুত এসো! ‘

সাহির ফোন কাটার পূর্বে নূর নরম স্বরে ধীরে ধীরে বলে উঠল,

–‘অনেক্ক্ষণ বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো তুমি। ভেতরে এসো। ‘

–‘না, এখন আর যাবো না। সকলে ঘুমে নিশ্চয়ই? ‘

–‘বাবা জেগে আছে বোধহয়। ভেতরে এসো তুমি, কথাও নাহয় বলে যাবে বাবার সাথে। ‘

বিস্ময়ে সাহিরের প্রশ্ন,

–‘আঙ্কেল এতো রাতেও জেগে আছেন? ‘

–‘আর বলো না ইনসমনিয়া’টাও না বাবাকে ইদানীং বড্ড জ্বালাচ্ছে! ঘুমোতে পারে না রাতে ঠিক মতো। এ সময়ে জেগেই থাকে সাধারনত বাবা। ‘

নূরের কথার ধরন শুনে সাহির হেসে উঠল হো হো করে উচ্চশব্দে। বলল,

–‘ইনসমনিয়া’টা! এই এটাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়? ‘

বিরক্তিতে ভ্রু কুঞ্চিত হলো নূরের, সেই সাথে কপালেও ভাজ পড়ল। স্পষ্ট বিরক্তির স্বরে বলে উঠল,

–‘আশ্চর্য, আমি কখন বললাম মানুষ!’

সাহিরের হাসি এখনো থামে নি। হাসতে হাসতেই সাহিরের জবাব,

–‘প্রত্যক্ষভাবে বলনি কিন্তু পরোক্ষভাবে সেটাই মনে হয়েছে। ইনসমনিয়া’টা! ‘

–‘তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। যাও, বাড়ি ফিরে যাও তুমি, আমি কোথাও যাবো না! ‘

প্রথমে চকিত হলেও পরে মুখে মৃদু হাসি ফুঁটে উঠল সাহিরের। নূরের মানে লেগেছে খুব। সাহির প্রায়ই মজা করে নূরের এভাবে কথা বলা নিয়ে। তবে সেটা নিছক মজাই সিরিয়াস কিছু নয়। দু একজন মানুষ ব্যতীত এ মেয়েটা সকলের সামনে সাবলীল কোনো কালেই নয়। সেই দু একজনের কাতারে সাহিরেরও সৌভাগ্যক্রমে নাম আছে। নাহলে তো নূরের ম্যাচিউর সত্তার পেছনে যে লুকায়িত বাচ্চামো সত্তার কথা জানাই হতো না কক্ষনো ওর! খানিক মনভারের স্বরে সাহির বলে উঠল,

–‘সত্যি চলে যাবো? ‘

–‘মিথ্যে করে কি চলে যাওয়া যায়? ‘

–‘এই বুঝোনা তুমি মজা করছিলাম আমি। আমি জানি তো মেডিকেলের পড়া গুলো কত্ত কঠিন। মনে রাখার জন্য নানান পন্থা অবলম্বন করতে তুমি। ‘

–‘বুঝেও তুমি এমন কর! ‘

–‘মুখটা ভার করোনা প্লিজ! তোমাকে দেখতে. ‘

–‘দেখতে কি? বিচ্ছিরি লাগে? ‘

–‘এইবারে তুমি আমার মেজাজ চড়াবে মনে হচ্ছে। এই টপিক এখানেই অফ, আর কোনোদিন উঠবে না। ‘

–‘হুম, ফোন রাখি। ‘

–‘রাখি মানে কি? রাখবে না একদম বলে দিলাম। নিচে আমার সামনে এসে না দাঁড়ানো অবধি কল কানেক্ট থাকবে। ‘

–‘আমি যাচ্ছি না। ‘

–‘তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন খেয়া? কত কষ্ট করে আসলাম আমি অথচ তুমি? তুমি আমার ফিলিংসের কোনো তোয়াক্কা’ই করনা। ‘

–‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে লাভ নেই। আর আমি আপনার তোয়াক্কা করি কি করি না সেটা আপনি বেশ জানেন। আপাতত বাড়ি না গেলে ভেতরে আসুন। ফ্রেশ হয়ে টানা কয়েকঘন্টা ঘুমান, তারপর ঘুম থেকে উঠে খেয়েদেয়ে যেখানে খুশি চলে যাবেন। ‘

মুখ কাচুমাচু করে সাহির বলে উঠল,

–‘খেয়া? ‘

দৃঢ় স্বরে নূরের জিজ্ঞাসা,

–‘কি খেয়া? কি বলেছি শুনানি? না শুনলে কিছু করার নেই আমার, ফোন রাখছি। ‘

–‘দেখো আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, চাঁদটা কি সুন্দর আলো ছড়াচ্ছে। হাউ রোমান্টিক ওয়েদার! ‘

–‘কথা শেষ, ফোন রাখছি। ‘

–‘সত্যিই রেখে দিবা? ‘

সাহিরের কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসছে নূর। এতোক্ষন সাহিরের বোধগম্য না হলেও পরিবেশ নিশ্চুপ হতে স্পষ্ট নূরের হাসি কর্নকূহর অবধি আসছে। ও নিজেও আনমনে হাসল একটু। মুখে হাসি রেখে আনম্র কন্ঠে বলল,

–‘ইট’স থ্রি ও’ক্লক খেয়া। দ্রুত এসো! ‘

নূর বুঝল সাহির ধরে ফেলেছে ওর চালাকি তাই কোনো ভনিতা না করে বলল,

–‘আসছি! ‘

কান থেকে ফোনটা নামাতে গিয়ে পরেক্ষনে মগজে একটা প্রশ্নের উদয় হতে তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,

–‘এই তুমি ভেতরে এসো। রাতে নিশ্চয়ই ডিনার করনি, না? ‘

–‘এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি আসার সময় রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটা মাঝারী মানের ঝুপড়ি হোটেল থেকে খেয়ে এসেছি। ‘

–‘সত্যি তো? মিথ্যে হলে খবর আছে তোমার! ‘

–‘শতভাগ সত্যি। আর কাল সকালে তোমাকে দিয়ে যাওয়ার সময় নাহয় সবার সাথে দেখা করে নেওয়া যাবে। তুমি এখন এসো নিচে জলদি। ইট’স থ্রি.টেন এ.এম আলরেডি! ‘

–‘আসছি। ‘

–‘হুম, ভালোবাসি! ‘

মুদু হেসে নূরের প্রতিত্তুর,

–‘আমিও!’

প্রথম অংশ..

(প্রথম পোস্টটা অসাবধানতার কারনে ডিলিট হয়ে গেছে তাই নতুন করে পোস্ট করতে হলো। দুঃখিত!)

#প্রনয়ালাপ (শুভ পরিনতি উপন্যাস ভিত্তিক)
#লেখনীতেঃMaya_Binte_Alam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here