#পর্ব_২৪(অন্তিম পর্ব)
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
দুপুরের খাবারের পর আড্ডার ছলে ত্রিশাল নিজের শার্টে পায়েশ ফেলে দিয়ে এখন রেদোয়ানের বেডরুমের পাশে চেঞ্জিংরুমের ওয়াশরুমে গিয়েছে। কিয়াই ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে শার্ট বদলে বের হয়ে পুরো রুমে কেউ না থাকার সুযোগে হাতে গ্লাভস পড়ে ড্রেসিংটেবিলের উপরে প্রসাধনীগুলোর মধ্যে হেয়ার ব্রাশটা উঠিয়ে চুল কালেক্ট করতে একটা চিমটাও নিয়েছে। ছেলেদের চুল তো আর মেয়েদের মতো অঝোরে পরে না! তাই খুঁজে একটা-দুটো পেয়েছে। সযত্নে সেটা একটা বক্সে নিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে রেদোয়ান আসলে দেখা করে বেরিয়ে পরবে।
__________
এদিকে প্রহর জেলে আমিরের কাছে গেছে। আমির অনেকটা রোগা হয়ে গিয়েছে। রি*মা*ন্ডে নিয়েও নেপালের তথ্য ছাড়া আর কোনো তথ্য বের হয়নি। প্রহর আমিরের মুখের উপর পানির ছিঁটা দিয়ে সামনে বসে।
“আমির মামা! কেমন আছেন? খাতির-যত্ন ঠিকঠাক?”
এই রোগা শরীরেও যেনো তে’জ কমে না! দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“যতো হাসার হেসে নে। তোর দিন ঘনিয়ে আসছে। তোর শ্বশুরকে খুঁজে পেয়েছিস বলে এতো খুশি হোস না। আমি শুনেছি সে কথা বলতে পারে না ও আগের স্মৃতিও সব মনে নাই। এদিকে তোর বউটাও ম*রা*র মতো।”
প্রহর রম্যস্বরে বলে,
“ঠিকই বলেছ মামা। আমার তো এখন দুঃখের সাগরে ভেসে যাওয়া উচিত। কিন্তু কি করব বলো? তোমাদের মা*স্টারমা*ইন্ডকে তো খুঁজে ফেলেছি! তার লোকেশন ট্র্যাকিং হচ্ছে। কোথায় কোথায় যায় সব। তারপর সেও তোমার পাশেই এখানে থাকবে।”
আমির প্রথমে বিশ্বাস করেনি। তাই ব্যাঙ্গ করে বলে,
“আমার থেকে কথা বের করার ভালোই উপায় পেয়েছিস কিন্তু যা আমি জানিনা তা আমাকে হাজারবার রি*মা*ন্ডে নিলেও মুখ দিয়ে বের করতে পারবি না।”
প্রহর হাসল অতঃপর বলল,
“সময় হলেই জানতে পারবে। আসি তবে।”
প্রহর কা*রাগা*র থেকে বের হতে হতে মেসেজ পায়, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রেদোয়ানের অফিসের লোকেশন ছাড়াও রেদোয়ান আরেকটা জায়গায় ইদানীং বেশি যাচ্ছে এবং লম্বা সময় থাকছে। সেই জায়গাটার লোকেশন নিয়ে প্রহর চটজলদি সাথে কিছু আ*র্মি ফো*র্স নিয়ে যায়। যা করার দ্রুত করতে হবে কারণ রেদোয়ান জানতে পারলে সব সরিয়ে ফেলবে।
রেদোয়ান বাড়িতে এসে নিয়াজ, ত্রিশালদের সাথে কুশল বিনিময় করে সবাইকে বিদায় দিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেয়। এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার ল্যাবে যাবে।
_________
শিতল ল্যাবে সংরক্ষণ করা চয়নিকার মিসক্যারেজ ভ্রূণের ডিএনএর সাথে রেদোয়ান চুল থেকে ডিএনএ টেস্ট করে। রিপোর্ট পজেটিভ। শিতল ত্রিশালের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। এরপর রিপোর্টটা যত্নে রেখে দেয়।
প্রহর আর্মি নিয়ে রেদোয়ানের ল্যাবে যায়। ল্যাবের দারোয়ান প্রথমে ঝামেলা করলেও যখন জেনেছে আর্মিরা সিভিল ড্রেসে এসেছে তখন চটজলদি রেদোয়ানকে ফোন করে জানিয়েছে। রেদোয়ান হতভম্ব হয়ে শোয়া থেকে হড়বড়িয়ে ওঠে। তার ল্যাবের সার্টিফিকেট ও অনুমতি আছে কিন্তু ল্যাবে যে সে ভা*ইরা*সটা নিয়ে কাজ করছে সেটার অনুমতি নেই। দারোয়ান বলল, তাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্টি ছিল। তাই রেদোয়ান পালানো ছাড়া কোনো উপায় দেখল না। কিয়াকে কিছু না বলেই অতিসত্তর পালিয়ে যায়। কিয়া রেদোয়ানকে দৌঁড়ে বেরোতে দেখে পেছোন থেকে বারকয়েক ডাকে কিন্তু সাড়া পায় না।
প্রহররা সব খুঁজে সেই পেনড্রাইভ ও টেবিলে ও অটোক্লেবে সেই ভাইরাসটার স্যাম্পল পায়। সব বাজেয়াপ্ত করে রেদোয়ানের বাড়িতে পুলিশ ফোর্স নিয়ে যায়। কিয়া অবাক হয়ে প্রহরের দিকে চাইলে প্রহর মাথা নিচু করে মলিন কণ্ঠে বলে,
“তুই ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিস। যে তোর যোগ্য না।”
“কী বলতে চাইছিস? পুলিশ নিয়ে কেনো এসেছিস?”
কিয়ার প্রশ্নে রেদোয়ান হতাশ কণ্ঠে বলে,
“রেদোয়ান ভাইকে ডাক তাহলেই সব বুঝতে পারবি।”
“কিন্তু রেদ তো বাড়িতে নেই। এই আধঘণ্টার মতো হবে দ্রুততার মধ্যে বেরিয়ে গেলো। কিছু বলেও যায়নি। আমি ডেকেছি সাড়াও দেয়নি।”
প্রহর বুঝে গেছে রেদোয়ান পালিয়েছে।
“শিট! দারোয়ান নিশ্চয়ই জানিয়েছে। দারোয়ানকে আগে আটকে রাখার দরকার ছিল। চলুন এখানে পাবো না।”
“কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বল।”
প্রহর চলেই যাচ্ছিল কিন্তু কিয়ার উৎকণ্ঠিত প্রশ্নে ঘুরে তাকায়। কিভাবে কিয়াকে বলবে তার বোধগম্য হচ্ছে না। প্রহরকে অন্ধকার থেকে টেনে তুলতেই হয়তো আলোর আগমন হয়! প্রহরকে করা প্রশ্নের জবাব আলো আসতে আসতে দেয়,
“তোমার হাসবেন্ড রেদোয়ান শাহ, আমার বাবাকে চারটা বছর বন্ধি করে রেখেছিল। যেই ইনফরমেশন বাবা প্রহরকে দিয়েছিল সেটা রেদোয়ান শাহ চু*রি করে নিয়েছিল। তলে তলে তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে তোমারই বান্ধবী চয়নিকার সাথে মিলে। অবৈ*ধ সম্পর্ক ওদের।”
শেষোক্ত কথাটা আলোর বলতে দেরি কিন্তু কিয়ার হাত উঠতে দেরি নাই। স*পাটে চ*ড় পরলো আলোর গা*লে। প্রহর এগিয়ে আসতে নিলে নিয়াজ ও ত্রিশাল ওকে বাঁধা দেয়। চ*ড় খেয়ে আলো তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? না হবারই কথা। উনাকে দেখে মনেই হয় না সে এতো বড়ো মা*স্টারমা*ইন্ড। প্রমাণ না পেলে তো আমিও তাকে সন্দেহ করতাম না। প্রমাণটা সে নিজে দিয়েছে। যেদিন তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে সেইদিন। আমি আমাদের শত্রুকে মিসগাইড করতে সুস্থ হওয়ার পরেও কোমার নাটক করেছি যাতে শত্রুরা প্রহরকে আমাকে নিয়ে কোনো হুম*কি-ধা*মকি না দিতে পারে। রেদোয়ান ভাই আমার জালে পা দিলেন। আমাকে মা*রার অভিপ্রায় এসে নিজেই নিজের জন্য জাল বুনে গেলেন। নিজের কুকর্ম স্বিকার করলেন। সেসবের কোনো রেকর্ড আমার কাছে না থাকলেও চয়নিকার মৃত ভ্রূণের ডিএনএ এর সাথে রেদোয়ান ভাইয়ার ডিএনএ মিলে গেছে।”
কিয়া রেগে বলে,
“তুমি নিজে নাটকবা*জ আবার অন্যের চ*রিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলো! নিজের কো*মায় যাওয়ার নাটক সাঁজিয়ে এখন এসেছ আমার সংসার ধ্বংস করতে। বে*হায়া মেয়ে।”
“ঠিক আছে মানলাম। আসো তবে। নিজ চোখে দেখবে। তোমার স্বামীর ব্যাবহার্য চিরুণী বা তোয়ালে নিয়ে আসো যেটাতে তার চুল পাওয়া যাবে। লাগলে তুমি যেকোনো হসপিটালেও টেস্টটা করাতে পারো। তাছাড়া তোমার স্বামীর নিজস্ব ল্যাব থেকে ভা*ইরা*স ও পেনড্রাইভ পাওয়া গেছে এবং সেখানকার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজও।”
আলো নিজেই কিয়াকে নিয়ে রেদোয়ান ও কিয়ার বেডরুমে যায় তারপর কিয়াকে রেদোয়ানের চিরুণী বা তোয়ালে বের করতে বললে কিয়া নিরবে বের করে নেয়। তারপর টেনে গাঁড়িতে নিয়ে বসায়। কিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। প্রায় বিশ মিনিট পর চয়নিকাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে পৌঁছায়। প্রহরও সাথে এসেছে। আর্মিরা রেদোয়ানের ব্যাপারে হেডকোয়াটারে ইনফর্ম করলে হেডকোয়াটার থেকে শু*ট করার অনুমতি দিয়েছে। রেদোয়ানকে দেখলেই প্রথমে শু*ট করা হবে যদিও রেদোয়ান সিলেটের বাহিরে যেতে পারবে না। সবজায়গাতে কড়া নিরাপত্তা ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
আলো কিয়াকে নিয়ে যায় চয়নিকার কাছে। মৃ*ত লা*শের মতো শুয়ে আছে চয়নিকা। আলো চয়নিকার মাথা থেকে চুল নেয় তারপর সংরক্ষণ করা ভ্রূণটা নিয়ে কিয়াকে বলে,
“চলো এবার। তুমি যেখানে বলবে সেখানেই ডিএনএ টেস্ট করানো হবে। চাইলে ত্রিশালদা নিজেও করতে পারবে আমার ল্যাবে। ভেবোনা, তোমার স্বামীর ল্যাবের মতো আমার ল্যাবে কোনো অনৈতিক কাজ করা হয় না। আমি আমার মায়ের ফিক্সড ডিপোজিট ও নিজের উপার্জন দিয়ে ল্যাব করেছি। অনুমতিও নেওয়া আছে, কী ধরণের এক্সপিরিমেন্ট করা যাবে সেটার।”
কিয়া নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
“আমি নিজে করব। বায়োকেমিস্ট্রিতে অনার্স করে বিয়ের পর মাস্টার্স করে আর চাকরির ইচ্ছে হয়নি। যদি আমার প্রসিডিওরে ভুল হয় শোধরে দিবে। আমি নিজে দেখতে চাই। তাছাড়া মেশিন তো আছেই।”
ওরা মানা করে না। কিয়ার মনের অবস্থা কল্পনা করাও হৃদয়বি*দারক। এতোগুলো বছর! কিয়াও টেস্ট করে পজেটিভ রেজাল্ট পায়। একদম নিরব হয়ে বসে আছে। না! সে কাঁদলো না। অতি শো*কে পা*থরের মতো অবস্থা তার। শিতল কিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আলো মলিন কণ্ঠে বলে,
“শিতল আপু, কিয়া আপুকে নিয়ে গাড়িতে যাও। রেদোয়ান ভাইকে পু*লিশ-আ*র্মিরা জলদি পেয়ে যাবে।”
ওরা সবাই প্রহরদের বাড়িতে আসে।
রাত প্রায় দশটা। কিয়া এখনও নির্বাক বসে আছে। সন্ধ্যা থেকে এক ফোঁটা পানিও খায়নি। কিয়ার মা-বাবা, ভাই-বোনেরা এসে শান্তনা দিচ্ছে তো কাঁদছে কিন্তু তাতেও কিয়ার হেলদোল নেই। তখনি খবর আসে রেদোয়ানকে ধরতে পেরেছে। রেদোয়ানকে পালাতে দেখে ধরার জন্য পায়ে শু*ট করে তারপর ধরে। এখন ফার্স্টএইড করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে। প্রহর সবাইকে নিয়ে সেখানে যায়। পু*লিশরা নিজেরা রেদোয়ানকে জিজ্ঞেসাবাদ করলেও প্রথমে সে কিছুই স্বিকার করে না। তারপর কিছুক্ষণ উত্তম-মাধ্যম দেওয়ার পর র*ক্তা*ক্ত করে আবার প্রশ্ন করা হয়। তখনও বলছিল না বলে প্রহর পু*লিশকে বলে নিজে ভিতরে যায় সাথে ফোনে কলে কানেক্ট থাকে নিয়াজের সাথে। প্রহর রেদোয়ানকে প্রশ্ন করে,
“তোমাকে আরমান স্যার অনেক পছন্দ করতেন। তুমি তো স্যারের প্রিয় ছাত্র। তাও তার সাথে এমন কেনো করলে?”
“কী করেছি আমি? বল তুই। কী করেছি?”
রেদোয়ানের হাঁপানো কণ্ঠের জবাবে প্রহর আবারও সুধায়,
“বুঝতে পারছ না? অভিনয়ে তুমি পাকা আমি স্বিকার করি। স্যারের এতো প্রিয় ছাত্র হওয়া স্বত্বেও এমনটা করলে কেনো?”
“আমি উনার প্রিয় ছাত্র! তাহলে তুই কী? আমার শ*ত্রু যখন আমার প্রিয় প্রফেসরের প্রিয় ছাত্র হয় তখন কেমন লাগে বল তো?”
প্রহর অবাক হয়। সন্দিহান কণ্ঠে সুধায়,
“তোমার শ*ত্রু মানে?”
“হ্যাঁ তুই আমার শ*ত্রু। তোর জন্য আমি জীবনে সব হারিয়েছি। আমার মা প্রহেলি শেহমাতকে প*তি*তালয়ে থাকতে হয়েছে। আমার নামমাত্র বাবা আমির শাহ আমারে মাকে সেখানে বি*ক্রি করে এসেছিল। তার জন্য দায়ী কে? তোর বাবা-মা ও দাদাজান দায়ী। আমির শাহ তোর মা হিয়াকে ভালোবাসতো। তোর বাবা-মায়ের বিয়ের পর আমার মাকে নিয়ে সে পালিয়ে বিয়ে তো করে কিন্তু যখন মাকে ত্যাজ্যকন্যা করা হয় তখন মাকে তার জীবন থেকে সরানোর চেষ্টা করে এবং সফল হয়। এই সবকিছুর জন্য দায়ী তোর পরিবার।”
প্রহর হতবাক হয়ে বসে আছে। এদিকে ফোনের মাধ্যমে সবাই সবটা শুনে ওরাও বাকরুদ্ধ। আড়ালে এতোকিছু ছিল যা আড়ালেই ছিল। প্রহর নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“তুমি ফুফিজানের ছেলে? তাহলে এতোদিন বলোনি কেনো?”
“কী বলব? আমি নিজের প্রতিশোধ নিতে এসেছি। তোর জীবনটাও ছাড়খার করে দিয়েছি। তোর বাবা-মা যে কার অ্যা*কসিডেন্টে মা*রা গেছে সেটাও আমি করিয়েছি। হাহা। তোর প্রিয়তমা আলোও জীবন-মৃ*ত্যুর সন্ধিক্ষণে।”
প্রহর চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নেয়। নিজের বাবা-মায়ের মৃ*ত্যুর কথা মনে পরতেই রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসছে কিন্তু সে এবার সব আইনের হাতে ছেড়ে দিবে। প্রহর ধীর কণ্ঠে সুধায়,
“আমি নাহয় তোমার শ*ত্রু কিন্তু কিয়া? তাকে তো তুমি ভালোবাসতে। নাকি শ*ত্রুর ফ্রেন্ড বলে ওর সাথেও!”
“উহুম। কিয়াকে আমি ভালোবাসি। ওর প্রতি আমার ভালোবাসা কোনো প্রতিশো*ধ না। যদি হতো তবে ওকে বিয়ে করে সংসার করতাম না।”
“তাই বুঝি, চয়নিকার সাথে মিলে ওকে ধোঁ*কা দিলে? চয়নিকার সাথে অবৈ*ধ সম্পর্ক রেখে প্রত্যেকবার চয়নিকার এ*বোর্ট করিয়ে কিয়ার প্রতি ভালোবাসা জাহির করলে?”
রেদোয়ান এবার উচ্চস্বরে হেসে বলে,
“হ্যাঁ। চয়নিকা আমার হাতের পু*তুল মাত্র। বিনোদনের জন্যও ব্যাবহার করেছি। কিয়ার জায়গা চাচ্ছিল তাই ওকে… ”
“তোমার সত্যি মনে হয়, এসব শুনলে কিয়া তোমাকে ভালোবাসবে?”
“তোর কথা সে বিশ্বাস করবে?”
আবারও রেদোয়ান হাসতে থাকে। প্রহর এবার উঠে আসে। হাতের কাছে রি*ভলভা*র থাকার পরেও নিজেকে সংযত করে নেয়। কিয়াকে পাঠাবে সেখানে। কিয়া এতক্ষণ সব শুনেও শান্ত হয়ে বসে ছিল। প্রহর এসে ওকে ভিতরে যাবে কিনা জিজ্ঞেসা করলে কিয়া শান্তস্বরে জবাব দেয়,
“আমি একা যেতে চাই।”
“হুম যা।”
কিয়া সেখানে যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে পরপর দুটি গু*লির বিকট শব্দে পুলিশ ও প্রহররা ভেতরে গিয়ে দেখে টেবিলের উপর রাখা রি*ভলভার*টা কিয়ার হাতে। রেদোয়ানের কপালের মাঝ বরাবার দুইবার শু*ট করা। এবার কিয়া ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদছে। জড়ানো কণ্ঠেস্বরে অনেক কিছুই বলছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। শেষে অতিরিক্ত মানসিক চাপে জ্ঞান হারায়।
__________
সবকিছুর শেষে এখন সব অন্ধকার মুক্ত হয়েছে। রেদোয়ানের মৃত্যুর দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। আলোর বাবাও প্রায় সুস্থ। অনেককিছু তার মনে পরেছে এবং বাকশক্তিও ফিরেছে। শিতল সাড়ে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ও কিয়া আড়াই মাসের। কিয়া এখন ওর বাবা-মায়ের সাথে থাকে। কিয়ার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাচ্চা জন্মের পর কিয়ার বাবার এক নিঃসন্তান বিপত্নীক কলিগ যার বয়স পঁয়ত্রিশ। তার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে যদিও কিয়া বিয়ে করতে নারাজ। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। সেদিন রেদোয়ানকে গু* লি করার পর পুলিশরা সবকিছু বিবেচনা করে কিয়ার উপর চার্জ আরোপ করেনি।
প্রাসাদের মতো বাড়িটিতে প্রহর, আলো ও আলোর বাবা মাত্র তিনজন থাকেন। শিতল, নিয়াজ ও রঞ্জনা খালা নিয়াজের বাড়িতে থাকে। রঞ্জনা খালা মাঝেমধ্যে আসেন।
বিকেলের সময়। গোধূলি তার রঙ দেখাচ্ছে। আলোর বাবা ঘুমাচ্ছেন। প্রহর ও আলো বাগানের দেলনায় বসে একমনে গোধূলির ডুবন্ত সূর্য দেখছে। পিকু ও রিও ওদের ঘিরে দৌঁড়ে খেলা করছে। প্রহর হঠাৎ স্বগতোক্তি করে,
“প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,”
পরের পঙক্তি আলো মুচকি হেসে বলে,
“তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ!”
একে-অপরের চোখে নিজেদের ভালোবাসার গোধূলিতে আলোয় রাঙুক জীবনের শেষ প্রহর অবধি।
সমাপ্ত