#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_65
#Writer_TanhaTonu
সিদ্রাত ঘোর লাগা কন্ঠেই বলল…
—”উহু..আমি আজ সব দেখব,তোমায় আদর করব,পরম ভালোবাসায় তোমায় আপন করে নিবো।আজ কোনো বাঁধা,কোনো না শুনব না..”
সিদ্রাত কথাটা বলেই নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আরশিও পরম ভালোবাসায় সিদ্রাতকে আকড়ে ধরল….
________________________________
ঘুমের মধ্যেই আরশির কেমন যেনো লাগছে।দম বন্ধকর এক অবস্থা।মনে হচ্ছে একজোড়া নয় বরং দুইজোড়া হাত ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আরশি নড়তেও পারছে না।ঘুমটা গভীর হওয়ায় বাস্তবে ফিরেও আসতে পারছে না।শুধু ঘুমের মাঝে অস্বস্তিকর একটা অবস্থা ফিল করতে পারছে।ইচ্ছা করছে চিৎকার করে বলতে আমায় ছেড়ে দিন।দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।কিন্তু আরশি সেসব কিছুই বলতে বা করতে পারছে না।এদিকে তৃষ্ণায় গলাটাও শুকিয়ে কাতর।ফিলিংসটা এমন যে ও ঘুম থেকে উঠতে চাইছে কিন্তু কেউ জোর করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে…
অনেক কষ্টে যেনো আরশি কিছুটা নড়ে উঠলে।অনুভূতিগুলো যেনো গভীর হচ্ছে অর্থাৎ ঘুমটা ক্রমশ হালকা হচ্ছে।ঘুমটা প্রায় ছুটে যাওয়ার পর আরশি চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায়ই বুঝতে পারল যে সত্যিই দুইজোড়া হাত ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছ।ভয় আর আতঙ্কে সাথে সাথে ও ধপ করে চোখ মেলে তাকালো।চোখ খুলতেই ওর চোখ গেলো প্রথমে ঘুমন্ত সিদ্রাতের মুখখানায় যা অতি নিষ্পাপ লাগছে এই মূহুর্তে।আরশি গতরাতের কথা মনে করে কিছুটা ব্লাশিং হলো।আলতো করে সিদ্রাতের খোচা খোচা দাড়িওয়ালা গালটায় হাত বুলাতে বুলাতে লাজুক কন্ঠে বলল…
—”ইশ কি আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছে।কেউ যদি এসে এই মুখটা দেখে তাহলে নিসন্দেহে বলবে ইনি নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ।অথচ গতরাতে কি অত্যাচারটাই না করল আমার উপর!'”
আরশির লজ্জামাখা গালের রক্তিম বর্ণটা যেনো আরও গাঢ় হলো।হঠাৎ আরশির আরও এক জোড়া হাতের কথা মনে পড়ে গেলো।ও সাথে সাথে নিজের আর সিদ্রাতের মাঝখানে তাকালো আর এতেই যেনো ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কারণ সিহু আরশিকে জড়িয়ে ধরে সিদ্রাতের মতোই শান্তিতে ঘুমুচ্ছে।হঠাৎ এমন কিছু দেখায় আরশি আতঙ্কে চাপা চিৎকার করে উঠল আর সাথে সাথে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।কিন্তু আরশির ওটুকু চিৎকারেই সিদ্রাতের ঘুম উড়ে গেলো।ও চোখ খুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো।আরশিও ফ্যালফ্যাল নয়নে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত জিজ্ঞাস করল…
—”এনিথিং রঙ?চিৎকার করে উঠলে কেন?”
আরশি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল…
—”সিহুর চিন্তায় আমি পাগলই হয়ে গেলাম শেষ পর্যন্ত।এই দেখেন আমি আপনার আর আমার মাঝে সিহুকে দেখতে পারছি…এএএ..আমি পাগল হয়ে গিয়েছি…”
সিদ্রাত আরশির কথা শুনে গোল গোল চোখে কিছুক্ষণ আরশির দিকে তাকিয়ে রইল।পরক্ষণেই হু হা করে হেসে উঠে সিহুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে নিয়ে বলল….
—”তাহলে তো আমিও পাগল হয়ে গিয়েছি তাইনা?”
আরশি যেনো এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। কিছুক্ষণ থ মেরে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে রইল।পুরো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতেই ওর চোখ-মুখ চকচক করে উঠল।উচ্ছ্বস্বিত হয়ে বলল…
—”সি,,সিহুউ..সিহুউ সত্যিই এসেছে!আমাদের স,,সিহুউউ”
অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসের কারণে আরশির কন্ঠে আটকে আসছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে ইশারায় হ্যাঁ বলল।আরশি সিদ্রাতের সাথে মিশে নিজেও সিহুকে জড়িয়ে ধরে সারা গালে চুমু খেলো।সিদ্রাত মৃদু হাসল।আরশি সিদ্রাতের হাসি দেখে লাজুক হেসে বলল…
—”ধন্যবাদ..অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো বড় একটা গিফট দেয়ার জন্য আমায়”
সিদ্রাতের চোখ-মুখে দুষ্টুমি ফুটে উঠল।ও বাঁকা হেসে সিহুকেসহ আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”অনলি ধন্যবাদ?উহু..শুধু ধন্যবাদে তো হবে না।এতো কষ্ট করে সিহুকে আনালাম আর তুমি আমায় শুধু ধন্যবাদ দিচ্ছো?নো নো..আমি মানছি না..আমি তো অন্যকিছু চাই”
সিদ্রাত আরশিকে ইশারার মাধ্যমে কথা শেষ করল।সিদ্রাতের ইশারায় আরশি লজ্জায় পুরোপুরি নেতিয়ে গেলো।লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল…
—”ধ্যাত..পাজি একটা!এখন এসব কিছুই হবে না।সারারাত অনেক কিছু হয়েছে।তাছাড়া সিহু আছে এখন..”
আরশি কথাটা বলেই সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকালো।সিদ্রাত নিশব্দে হাসল প্রিয়তমার এমন লজ্জা দেখে।আরশি সিদ্রাতের উন্মুক্ত বুকে আঁকিবুঁকি করতে লাগল।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত নিজেই বলল…
—”আচ্ছা তুমি তো জানতেই চাইলে না যে সিহুকে কিভাবে আনালাম!”
সিদ্রাতের কথায় আরশি নিজেও কিছুটা অবাক হলো।তারপর মিনমিন করে বলল…
—”অতিরিক্ত উচ্ছ্বাসে ব্যাপারটা মাথায়ই আসেনি”
সিদ্রাত হালকা হাসল।তারপর বলল…
—”রুহানকে বলে রেখেছিলাম নিয়ে আসতে যদি কোনো প্রবলেম না হয়।রুহান ডক্টরের সাথে কথা বলে যখন নিশ্চিত হলো যে জার্নিতে তেমন কোনো প্রবলেম হবে না তখনই আমায় জানালো।আর আমার কথা মতো সিহুকে নিয়ে রওনা দিলো।ভোর সোয়া পাঁচটায় ওরা এখানে এসে পৌঁছেছে।আমিই সিহুকে রুহানের কাছ থেকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছি।আর রুহানও এই হোটেলেই আছে”
আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”ওহ…”
সিদ্রাত মিষ্টি করে হেসে আবারও বলতে লাগল…
—”তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তাই কিছুই দেখোনি।সিহু আসার পর কতক্ষণ যে তোমার গালে আদর করেছে,,ছোট ছোট পাতলা ঠোঁট দিয়ে পাপ্পি দিয়েছে বলার বাইরে।মেয়ে আমার একদম তোমার জন্য পাগল।আমাকে তো এখন চিনেই না..”
সিদ্রাত কথাগুলো বলে হালকা হাসল।আরশিও মৃদু হাসল।তারপর সিহুর কপালে অনেকগুলো চুমু দিয়ে বলল…
—”আমার আম্মুটা!”
সিদ্রাত আবারও হালকা হাসল
আরশির হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ও ঘাবড়ে গেলো।সাথে সাথে কম্বলের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখল সব ঠিকাছে কিনা।জামা-কাপড় ঠিক দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।তারপর সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি দিলো।সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির কানের লতিতে শব্দ করে চুমু খেলো।আরশি কেঁপে উঠল।সিদ্রাত বলল…
—”আমি তোমার ভূষণ..তোমাকে আবৃত রাখার দায়িত্ব আমার।ভালোবাসি তোমায় প্রিয়তমা।তোমার উপর শুধুই আমার হক।তাই সিহু হোক আর যেই হোক তোমার শরীরের গোপন একটা চামড়াও আমি কাউকে দেখতে দিবো না ইনশা আল্লাহ..”
সিদ্রাতের কথা শুনে আরশির লজ্জা লাগলেও একটা ভালো লাগাও কাজ করল এই ভেবে যে মানুষটা কতটা সিরিয়াস ওর ব্যাপারে।আর এগুলো একমাত্র ভালোবাসা থেকেই সম্ভব।আরশি সিদ্রাতের ঠোঁটে আলতো করে কিস করল।সিদ্রাত চোখ সরু সরু করে তাকালো।আরশি আবারও সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকিয়ে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল….
—”আমিও আপনাকে ভালোবাসি প্রিয়তম।অনেক বেশি ভালোবাসি তবে আপনি আমাকে যতটা ভালোবাসেন তার থেকে কম।আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা যে গণার সাহস আমার নেই। ভালোবাসি মিস্টার..অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি…”
সিদ্রাতও তৃপ্তিময় এক শ্বাস ফেলল।আরশির কপালে অতি যত্নের সাথে চুমু খেলো।আরশি পুনরায় লাজুক হাসল….
চলবে..
প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_66
#Writer_TanhaTonu
আরশি আবারও সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকিয়ে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল….
—”আমিও আপনাকে ভালোবাসি প্রিয়তম।অনেক বেশি ভালোবাসি তবে আপনি আমাকে যতটা ভালোবাসেন তার থেকে কম।আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা যে গণার সাহস আমার নেই। ভালোবাসি মিস্টার..অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি…”
সিদ্রাতও তৃপ্তিময় এক শ্বাস ফেলল।আরশির কপালে অতি যত্নের সাথে চুমু খেলো।আরশি পুনরায় লাজুক হাসল….
______________________________________
প্রায় একসপ্তাহ সুইজারল্যান্ড থেকে,,বিভিন্ন জায়গা ঘুরে,নিজেদের মধ্যেও কিছু একান্ত সময় কাটিয়ে সিদ্রাত আর আরশি সিহরাতকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে।বাংলাদেশে ফিরে আসলেও আরশির সামার ভ্যাকাশন শেষ হয়নি।তাই আরশির জোরাজুরিতে সিদ্রাত আরশিকে নিয়ে গুলশান যায় নিজেদের বাসায়।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সিদ্রাত কলিং বেল বাজায়।আরশির চোখে-মুখে উচ্ছ্বসতা অনেক দিন পর পরিবারকে দেখবে বলে।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাতের আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়।সামনে সিদ্রাত আর আরশিকে দেখে সিদ্রাতের আম্মু অবাক হয়ে যায়।আরশি সিদ্রাতের আম্মু জড়িয়ে ধরে বলে….
—”কেমন আছো আম্মু?”
সিদ্রাতের আম্মু এতোদিন পর ছেলে-মেয়ে দুটোকে দেখে আর নিজের আবেগ সামলে রাখতে পারে না।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আরশির কপালে চুমু এঁকে বলে….
—”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা..এতোদিন পর আসতে মন চাইলো তাইনা?আচ্ছা আগে ভিতরে চল তোরা”
আরশি আর সিদ্রাত বাসার ভিতরে গেলো।সিদ্রাত সোফায় ধপ করে বসে পড়ল আর সিহরাতকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।সিহরাত নতুন পরিবেশ দেখে যেনো খুব খুশি হলো।খিলখিল করে হেসে পুরো রুমে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।সিদ্রাতের আম্মু সিদ্রাতের পাশে বসে বলল….
—”আমার মানিকটা কেমন আছিস বাবা?এতোদিন পর আসতে মন চাইলো?”
সিদ্রাত কিউট করে একটা হাসি দিয়ে আয়িশা আজওয়াদের কোলে মাথা রেখে সোফায়ই শুয়ে পড়ল আর বলল….
—”তোমাদের ছাড়া একদম ভালো লাগে না আম্মু।কিন্তু অফিসের কাজের এতো চাপ!তারপর আবার তোমার বউ মা তো আছেই!সে এতোদিন তো আমার সাথে নাক ফুলিয়ে রেখেছিলো তোমার নাতনীকে নিয়ে..এতো প্যারার মাঝে আমার নিজেকে স্যান্ডউইচ মনে হচ্ছিলো…”
সিদ্রাতের আম্মু ক্ষানিকটা হাসলেন।আরশি কিছুটা লজ্জাবোধ করল।সিদ্রাতের আম্মু আরশিকে কাছে ডাকল।আরশিও কাছে এসে বসলে উনি বললেন….
—”আমার মেয়ের নামে আমার কাছেই নালিশ জানাস!তোর তো অনেক সাহস বেড়েছে সিদ্রাত!এই আরশি ওকে শাসনের মধ্যে রাখতে পারিস না!একটু পর তো ঠিকি শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে যেয়েও নালিশ করবে।সারাদিনে টাইট দিয়ে রাখবি বুঝলি।এই পুরুষজাত হলো ঘাড়তেড়া জাত।এদেরকে টাইট না দিলে হয়না”
আরশি সিদ্রাতের আম্মুর কথায় ফিক করে হেসে দিলো।তারপর গলা জড়িয়ে ধরে হেসে বলল….
—”ঘরের কর্তীর পারমিশন পেয়ে গিয়েছি..আর কি চাই!”
সিদ্রাত নাক ফুলিয়ে আরশি আর নিজের মায়ের ফিকে তাকিয়ে বলল….
—”মানুষ শুধুই বলে না যে মহিলারা হলো ড্যাঞ্জারাস।আমার বউ আর মা-ই কিনা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে!এই দুঃখ সইবে না আল্লাহ..হাহ!”
আরশি আর আয়িশা আজওয়াদ দুজনই এবার শব্দ করে হেসে উঠল।তারপর সিদ্রাতের আম্মু বলল….
—”আচ্ছা শোন…তোরা রাবিয়ার সাথে দেখা করে আয় যা।আর তোদের বাবারা তো অফিসে।আমি ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই তাড়াতাড়ি আসার জন্য”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”ওকে আম্মু”
সিদ্রাত আর আরশি অতঃপর আরশিদের বাসায় আসল।আরশির আম্মু তো আরশিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে-কেটে শেষ।সাজিদও এসে কতক্ষণ বোনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকল।আরশিও অনেক্ষণ কাঁদল….
আরশির আম্মু ব্যস্ত হয়ে পড়ল জামাই আদরের আয়োজন করতে।কি রেখে কি করবে তার যেনো দিশা পাচ্ছে না মিসেস রাবিয়া…
এর মধ্যে সিদ্রাত আর আরশির আব্বুও বাসায় চলে আসল।আরশির আম্মু-আব্বুর কথামতো আরশিদের বাসায়ই সিদ্রাতের আব্বু-আম্মুও চলে আসল।দুপুরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করল।তারপর দীর্ঘসময় নিয়ে সবাই আড্ডায় মেতে উঠল।বাড়ির ছেলে-মেয়ে ফিরে এসেছে সাথে নিয়ে এসেছে আনন্দের আমেজ…
রাতে আবার সিদ্রাতদের বাসায় ডিনারের আয়োজন করা হলো।রাতের খাবারটা সবাই সিদ্রাতদের বাসায়ই খেলো।রাতে সাড়ে দশটার পর দু’বাড়ির উৎসব শেষ হলো।সিদ্রাত নিজেদের রুমে চলে গেলো।আরশি আরও আগেই রুমে চলে এসেছে।সিদ্রাত রুমে এসে দেখল আরশি কাত হয়ে শুয়ে সিহুর মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর সিহু হাতে একটা খেলনা বাশি নিয়ে ওটা বাজানোর চেষ্টা করছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”আমার সিহু আম্মুটা এখনো ঘুমায়নি কেন হুম?”
সিহু সিদ্রাতের আওয়াজ শুনে শোয়া থেকে উঠে বসল আর ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল।আরশিও মুচকি হাসল সিহু আর সিদ্রাতকে দেখে।সিদ্রাত বেডে বসে সিহুকে কোলে নিলো।সিহু সিদ্রাতের কাঁধে মাথা রেখে হামি দিলো।সিদ্রাত বলল…
—”পাপা ঘুম পাড়িয়ে দেই মামনীটাকে?”
সিহু সিদ্রাতের দিকে করুণ চোখে তাকালো।সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল…
—”ঘুমাবে না মা?”
সিহু দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল….
—”তিতা যাবো ,,,,”
সিদ্রাত জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…
—” তিতা কী?”
আরশি হেসে বলল…
—”তিতা না..দীদা..আপনার মেয়ে দীদাকে খুঁজছে”
সিদ্রাত হাসল।তারপর বলল…
—”দীদাকে দিয়ে কি করবে ও?”
—”আম্মু নাকি ওকে অনেক আদর করেছে আজ।মাথায় হাত বুলিয়ে আরাম দিয়েছে..আরও কত কী!এজন্য সে দীদার কাছে যাবে।দীদা নাকি তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে বলেছে”
সিদ্রাত মৃদু হেসে সিহুর দুইগালে চুমু এঁকে দিলো।সিহু হাসতে গিয়ে হামির জন্য হাসতে পারল না।এর মধ্যেই দরজায় নক পড়ল।আরশি সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে খুলে দিলো।সিদ্রাতের আম্মু বলল….
—”কিরে সিহু ঘুমিয়ে পড়েছে?”
—”ভিতরে এসে দেখে যাও তোমার নাতনী কি করে”
সিদ্রাতের আম্মু রুমের ভিতরে গেলো।সিহু তাকে দেখা মাত্রই কোলে উঠার জন্য লাফাতে লাগল।সিদ্রাতের আম্মু হেসে সিহুকে কোলে নিলো আর বলল…
—”দেখেছিস একদিনেই আমার ভক্ত হয়ে গিয়েছে”
আরশি আর সিদ্রাত হালকা হাসল।সবাইকে হাসতে দেখে বাচ্চা মেয়েটাও হালকা শব্দ করে হাসল।সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”আমি তাহলে ওকে নিয়ে যাই।থাক তোরা”
আরশি বলল…
—”আম্মু তোমার ঘুমাতে অসুবিধা হবে না!”
—”আমার আবার কিসের অসুবিধা?এমনিতেও ওর ঘুম পেয়েছে বুঝাই যাচ্ছে।বেডে শুইয়ে দিলেই ঘুমিয়ে যাবে।তাই না সিহুমনি?”
সিহু কিছু বলল না।আরশি এগিয়ে এসে সিহুর গালে চুমু দিয়ে বলল…
—”ওকে আম্মু টাটা..ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে ওকে!”
সিহুও আরশির গালে চুমু দিলো।তারপর সিদ্রাতের গালেও চুমু দিলো।সবাই হালকা হাসল।সিদ্রাতের আম্মু সিহুকে নিয়ে চলে গেলো।আরশি দরজা লাগিয়ে বেডে এসে বসল সিদ্রাতের পাশে আর বলল….
—”অনেক সহজেই আমাদের সিহু সবাইকে আপন করে নিতে পারে তাইনা?দেখলেন আম্মু এসে ওকে সাথে করেই নিয়ে গেলো..কি মায়া!”
আরশি কথাগুলো বলে হালকা হাসল।সিদ্রাত আরশির কোমর প্যাঁচিয়ে কাছে নিয়ে আসল।হুট করে টান দেয়ায় আরশি সিদ্রাতের বুকে গিয়ে পড়ল আর শার্ট খামচে ধরল।সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল….
—”গাধা!মা-কি শুধু সিহুকে মায়ার টানে নিয়ে গিয়েছে?আমাদের একসাথে টাইম স্পেন্ড করতে দেয়ার জন্য..তোমাকে যেনো বেশি করে আদর করতে পারি সেজন্য নিয়ে গিয়েছে”
আরশি সিদ্রাতের কথায় বেশ লজ্জা পেলো।লজ্জা নিয়ে সিদ্রাতের চোখের দিকে তাকালো আর বলল…
—”আপনার মাথায় এসবই ঘুরে তাইনা?আম্মু সিহুকে মায়ার জন্যই..”
—”শশশশ,,,,”
সিদ্রাত আরশির ঠোঁটে আঙুল চেপে থামিয়ে দিলো।আরশি সিদ্রাতের দিকে অপলক তাকালো।সিদ্রাত আরশিকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনী রাখল। আরশি একটু নড়েচড়ে উঠল সিদ্রাতের স্পর্শে।সিদ্রাত তা দেখে হাসল।আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল….
—”শুয়ে পড়ুন,,,রাত,,হয়েছে তো,,”
সিদ্রাত বাঁকা হেসে আরশির কাঁধে কামড় দিলো।আরশি হালকা কাকিয়ে উঠল।সিদ্রাত বাইট দেয়া জায়গায় ঠোঁটের পরশ দিতে দিতে লো ভয়েসে বলল….
—”রাতে ঘুম ছাড়া বুঝি আর কোনো কাজ নেই?আমার জানা মতে তো ঘুমের চেয়ে আরও ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে।সেটা তো করতে হবে তাইনা”
আরশি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সিদ্রাতের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল….
—”আপনাদের পুরুষদের এগুলো একটু বেশিই মন থাকে তাইনা!”
সিদ্রাত মৃদু হেসে আরশিকে শুইয়ে দিলো।আরশিও আবেশে চোখ বন্ধ করে সিদ্রাতকে আকড়ে ধরল…..
___________
গুলশান আরও নয়দিন থেকে সিদ্রাত-আরশি ধানমন্ডি ফিরে গেলো।সাথে সিহুকেও নিয়ে এলো।শুরু হয়ে গেলো তাদের নিত্যদিনের রুটিন।আরশির দুপুর পর্যন্ত ক্লাস,,তারপর বাসায় এসে সিহুকে নিয়ে মেতে উঠা,,সিদ্রাতের জন্য একেক দিন একেকটা আইটেম রান্না করা,সিহুকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া,সন্ধ্যার পর সিদ্রাত বাড়ি ফিরে আসলে তিনজন মিলে অনেক্ষণ মজা করা,রাতে আরশির পড়াশুনা করা..—এভাবেই অতিবাহিত হতে লাগল আরশি-সিদ্রাতের ভালোবাসাময় দিনগুলো।দেখতে দেখতে পাড় হয়ে যায় চারটা মাস।কিন্তু এ কয় মাসে তাদের ভালোবাসা একটুও কমেনি।বরং দুজন যেনো প্রতিদিন ভালোবাসার নতুন নতুন অনুভূতি অনুভব করতে পারে….
অতিবাহিত বিগত দিনগুলো ভেবে আরশি হালকা হেসে উঠল।সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল….
—”না পড়ে হাসছ কেন?পাগল হলে নাকি?”
আরশির হুশ আসে সিদ্রাতের কথায়।ও মুচকি হেসে বলল….
—”দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেলো অথচ মনে হচ্ছে এই তো সেদিন সিহুকে আমি সুইজারল্যান্ড আমার বেডে পেলাম আর অবাক হয়ে গেলাম।সুন্দর দিনগুলো কত তাড়াতাড়ি চলে যায় তাইনা?”
সিদ্রাত হালকা হেসে সম্মতি জানালো।তারপর বলল…
—”আচ্ছা এসব বাদ।পড়ো মনোযোগ দিয়ে।কিছুদিন পর কিন্তু এক্সাম।আর বিশ মিনিট পর আমি এই পাঁচ পেইজ পড়া ধরব”
আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”পড়তে আর ভালো লাগে না।প্রচুর ঘুম পেয়েছে।ঘুম নিয়ে কি পড়া যায়?”
সিদ্রাত কপালে ভাজ ফেলে বলে…
—”তোমার কি হয়েছে বলো তো?ইদানিং বেশ লক্ষ করছি সন্ধ্যার পরই ঘুম পায়।দেখো তো মাত্র আটটা আটাইশ বাজে।এখন যদি ঘুমিয়ে যাও তাহলে কখন পড়বে”
আরশি মুখ কালো করে বলল….
—”আমি কি ইচ্ছা করে ঘুমাই?আমার ঘুম পায়।আমি ঘুমাতে চাইনা কিন্তু নিজেকে ধরেও রাখতে পারিনা।এতো ঘুম যে কেন পায় ইদানিং!শরীরটাও বেশ টলে।হাঁটতেও যেনো শক্তি পাইনা।এতো দুর্বল কীভাবে হলাম বলুন তো”
সিদ্রাতকে এবার একটু চিন্তিত দেখালো।ও বলল..
—”আগামীকাল তোমায় নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো।রোগ নিয়ে হেয়ালিপনা করা আমার পছন্দ না”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বইটা টেবিলে রেখে সিদ্রাতের পাশে এসে বসল। সিদ্রাতের কাঁধে মাথা হেলিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল আর বলল…
—”আচ্ছা সে না হয় গেলাম।এখন একটু ঘুমাই”
সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”জাতে মাতাল তালে ঠিক”
আরশিও হালকা হাসল।সিদ্রাত বলল….
—”আচ্ছা ঘুমাও কিন্তু সিহু কোথায়?ওকে নিয়ে একবারে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি”
—”সিহু ড্রয়িং রুমে বসে কার্টুন দেখে।যান গিয়ে নিয়ে আসেন”
—”হুম…”
আরশি বেডে একসাইডে শুয়ে পড়ল।সিদ্রাত গেলো সিহুকে আনতে।একটু পর সিদ্রাত সিহুকে কোলে নিয়ে রুমে আসল।আরশি চোখ খুলে দেখল সিহুর হাতে গ্লাস।আরশি আস্তে করে বলল….
—”গ্লাসে আবার কী?”
সিদ্রাত সিহুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।সিহু গ্লাস নিয়ে বেডে উঠে আরশির পাশে বসল।সিদ্রাত দরজা লাগাতে লাগাতে বলল….
—”লেবুর শরবত..লবণেরটা।এটা খেয়ে ঘুমাও।প্রেসারটা ঠিক থাকবে”
আরশি মৃদু হাসল।সিহু আরশির কাছে গ্লাসটা এগিয়ে দিলো।আরশি শোয়া থেকে উঠে বসে শরবতটা ধক ধক করে খেয়ে ফেলল।ইতোমধ্যে সিদ্রাত আর সিহু শুয়ে পড়েছে।আরশিও লাইটটা অফ করে সিহুর পাশে শুয়ে সিহুকে কাতুকুতু দিতে লাগল।সিহু খিলখিল করে হেসে উঠল।আরশিও হাসতে লাগল।সিদ্রাত হেসে বলল….
—”এখন এই দুই বাচ্চাকে আমি সামলাই…”
সিদ্রাত আরশিকে আর,সিহুকে জাপটে জড়িয়ে ধরল।সিহু এখনো হাসতাছে।আরশিও হাসল।সিদ্রাত বলল…
—”আরশি তুমি আর বড় হবে না।বাচ্চাদের সাথে খেলা তোমার যে কবে বন্ধ হবে!”
আরশি হেসে বলল….
—”কোনোদিনও না…আমার ভালো লাগে।আপনিও খেলে দেখেন..ভালো লাগবে হুহ…জানেন ছোটবেলা ফারাবি আমায় কাতুকুতু দিতে দিতে বিছানা থেকে ফ্লোরে নামিয়ে আনত।বজ্জাত ছিলো একটা!”
সিদ্রাতের মুখটা কালো হয়ে গেলো।ফারাবি নামটা তো সে ভুলেই গিয়েছিলো।আজ এতোগুলো বছর পর আবারও উঠে এলো সেই নামটা।সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”তোমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড ছিলো তাইনা?”
আরশি মৃদু হেসে বলল…
—”শুধু ফ্রেন্ড বললেও কম হয়ে যাবে।ও আমার কলিজার টুকরো ছিলো।জানেন না সবসময় আমায় বউ বউ করত।হুমকিও দিতো যে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে।আমাকে হারাতে দিবে না।অথচ ও নিজেই হারিয়ে গেলো!”
আরশির চোখের পাপড়িগুলো হালকা ভিজে উঠল এতোদিন পর ফারাবির কথা মনে করে।সিদ্রাতের ভালো লাগছে না এ বিষয়ে কথা বলতে।ও বলল…
—”আচ্ছা ঘুমাও।তোমার শরীর দুর্বল।একটু রেস্ট দরকার তোমার…”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর ছোট্ট করে বলল
—”হুমম..”
চলবে…
ফারাবির কথা মে বি অনেকেই ভুলে গিয়েছেন।তাই আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছি..ফারাবি হলো নূপুরের ভাই আর আরশির অনেক কাছের ফ্রেন্ড
বিঃদ্রঃ আগামীকাল সবার জন্য হার্ট এট্যাক করার মতো সারপ্রাইজ আছে😜