প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৬৭+৬৮

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_67
#Writer_TanhaTonu

আরশি মৃদু হেসে বলল…
—”শুধু ফ্রেন্ড বললেও কম হয়ে যাবে।ও আমার কলিজার টুকরো ছিলো।জানেন না সবসময় আমায় বউ বউ করত।হুমকিও দিতো যে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে।আমাকে হারাতে দিবে না।অথচ ও নিজেই হারিয়ে গেলো!”

আরশির চোখের পাপড়িগুলো হালকা ভিজে উঠল এতোদিন পর ফারাবির কথা মনে করে।সিদ্রাতের ভালো লাগছে না এ বিষয়ে কথা বলতে।ও বলল…
—”আচ্ছা ঘুমাও।তোমার শরীর দুর্বল।একটু রেস্ট দরকার তোমার…”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর ছোট্ট করে বলল
—”হুমম..”
______________________________

পরের দিন সন্ধ্যার সময় সিদ্রাত আরশিকে নিয়ে হসপিটালে গেলো।ডক্টর কিছু টেস্ট দিলে আরশি সেগুলো করিয়ে রাতে সিদ্রাতের সাথে বাসায় চলে আসল।দুজনই বড্ড টায়ার্ড।আরশি চিন্তিত হয়ে বেডে বসে থাকল।সিদ্রাত দেখেও কিছু বলল না।ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আরশির পাশে এসে বসল….

—”এতো চিন্তা করছ কেন?কিছু হবে না ইনশা আল্লাহ…”
আরশি চিন্তিত কন্ঠেই বলল….
—”হুমম…তারপরও ভয় তো লাগেই।দেখলেন না ডক্টর সিটিস্ক্যান দিলো,আল্ট্রাস্নো গ্রাম দিলো,ব্লাডের কতগুলো টেস্ট দিলো..একটা টেস্টও বাদ রাখেনি…”

—”আরে ডক্টরের তো এটা দায়িত্ব সবগুলো টেস্ট করিয়ে সিউর হবে যে কোনো প্রবলেম নেই।আর এটা তো জানোই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডক্টররা একটু বেশিই টেস্ট দেয় কমিশন পাওয়ার জন্য”

আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”হুমম…”

সিদ্রাত বুঝতে পারল আরশি তবুও চিন্তা করছে।মেয়েটার মুখটাই শুকিয়ে গিয়েছে।ভিতরে ভিতরে তারও যে চিন্তা হচ্ছে না তেমনটা না।কিন্তু সেটা প্রকাশ করার সঠিক সময়তো এটা নয়।সিদ্রাত আরশিকে বুকে টেনে নিলো।আরশিও চুপটি করে সিদ্রাতের বুকে মাথা রাখল।সিদ্রাত অনুভব করতে লাগল ওর উদাম বুকটা ক্রমশ ভিজছে।সিদ্রাতের ভিতরটা ধক করে উঠল।ও নিজেকে সামলে বলল….

—”এই পাগলী মেয়ে..কাঁদছ কেন তুমি?এতো ভয় পেলে হবে হুম?তুমি নিজেই একজন ডক্টর হবে।অথচ এতো ভীতু হলে হবে?ডক্টররা রোগীদেরকে উৎসাহ দেয় যেনো রোগী মনোবল পায়।আর এদিকে দেখো তো তুমি কি করছ?তোমার কাছে রোগী আসবে জ্বর নিয়ে।তোমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে চেম্বারেই হার্ট এট্যাক করবে…”

আরশির শরীর বারবার কেঁপে উঠছে যা ওর অনবরত কান্নার ছোট্ট একটি প্রমাণ।আরশি কাঁদতে কাঁদতে বলল…
—”আমার মনটা বড্ড অস্থির লাগছে..কেমন যেনো কু ডাকছে।আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না আমার মনের অবস্থা।ভীষণ ভয় হচ্ছে।আমার যদি কিছু হয়ে যায়!আমি যে আপনার সাথে অনেকটা সময় কাটাতে চাই।আমি অনেকদিন বাঁচতে চাই।আপনার ভালোবাসা চাই।এখনই সবার মায়া ত্যাগ করতে চাইনা আমি…আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে..বুকটা বড্ড ভার ভার লাগছে….”

আরশি কথাগুলো বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।আরশির এমন করুণ কান্না দেখে সিদ্রাত নিজেকে সামলাতে পারছে না।ওর চোখ থেকেও নীরব অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।সিদ্রাত চোখজোড়া খিচে বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিলো।তারপর ধরা গলায় বলল….

—”তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে গিয়েছো আরশি পাখি।এমন পঁচা কথা কেউ বলে?এসব উল্টা-পাল্টা কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা?”
আরশি ঠোঁটচেপে কাঁদছে।সিদ্রাত একটু থেমে আবারও বলতে লাগল…

—”তুমি বেশি বেশি চিন্তা করছ প্রিয়তমা।আসলে তোমার অবচেতন মন নানা অর্থহীন কল্পনা-জল্পনা তৈরি করছে তোমার মনে যার সবই অহেতুক।প্লিজ এতো ভেবো না।এতো ভাবার মতো কিছু হয়নি।তোমার জাস্ট শরীর দুর্বল আর হালকা পেটে ব্যথা হয় মাঝে মাঝে।এটা গ্যাস্ট্রিকের কারণেই হয় বুঝলে।চিন্তা করো না সোনাপাখি…”

আরশি এবার জোরে জোরে হু হু করে কেঁদে উঠল।কাঁদতে কাঁদতেই ভাঙা গলায় বলতে লাগল…
—”আমি আপনাকে সব বলিনি সিদ্রাত..আপনি টেনশন করবেন বলে বলতে পারিনি আমি।আমার,,,পিরিয়ডেও সমস্যা… প্রচুর ব্যথা থাকে।ব্যথার ওষুধ হাই পাওয়ারেরটা খেতে হয় ওষুধ।ব্লিডিংও মাত্রাতিরিক্ত… ”

আরশি আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।সিদ্রাত স্তব্দ হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ।ওর চোখ থেকেও বিরামহীন অশ্রুকণা গড়াচ্ছে।ঠোঁট কামড়ে কান্না নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সিদ্রাত বলল…
—”পিরিয়ডের প্রবলেম সবারই হয় সোনা।এটা ঘাবড়ানোর মতো নয়।তিন বা ছয়মাসের একটা নির্দিষ্ট কোর্স কমপ্লিট করলেই ঠিক হয়ে যায়।এটা কমন একটা রোগ পাখিটা..এতো ঘাবড়িও না তো।তবে তুমি আমায় অনেক হার্ট করলে আজ।এতোটা কষ্ট তুমি একা একা ভোগ করেছো।আমায় একটাবারও বললে না..আমি এতোটাই পর?”

আরশি ঠোঁট চেপে কাঁদতে লাগল।সিদ্রাত আরশির মাথায় থুতনি ঠেকিয়ে নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছে।মনটা যে তারও বড্ড অস্থির আজ!

_________________

আরশি আর সিদ্রাত বসে আছে ডক্টর রাইয়ানা জাবিনের চ্যাম্বারে।রাইয়ানা জাবিনের গম্ভীর দৃষ্টি আরশির রিপোর্টগুলোতে।সবগুলো রিপোর্ট দেখার পর গভীর একটা শ্বাস ফেলে চোখের ফ্রেমলেস চশমাটা ঠিক করলেন তিনি।তারপর গম্ভীরভাবে বললেন….

—”সমস্যাটা বড় না আবার বড়…ইন আ ওয়ার্ড ফিফটি ফিফটি।ঘাবড়ানোর মতো তেমন কিছুই নেই।এখন চিকিৎসা প্রযুক্তি অনেক উন্নত”

রাইয়ানা জাবিন একটু থেমে জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলেন।আরশির চোখজোড়া জল ছলছল।ও এতোক্ষণে বুঝে গিয়েছে বড় কিছুই হয়েছে।সিদ্রাতের কপালেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।ডক্টর রাইয়ানা জাবিন আবারও শুরু করলেন…

—”জরায়ুতে ফাইব্রয়েড দেখা দিয়েছে।ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর টিউমার।তবে খুশির কথা হলো এটা থেকে ক্যান্সার হয়না। রোগটা মূলত মধ্যবয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে এর পার্সেন্টিজ খুবই কম।যাই হোক…এটা ঘাবড়ানোর মতো তেমন কিছু না।টিউমারটা অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।সার্জারি করতে হবে।তবে আরও কিছুদিন আগে আসলে শুধু ফলোয়াপে থাকলেই হতো..”

আরশির চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল।সিদ্রাত জিজ্ঞাসা করল….

—”বাট ম্যাম ব্যাপারটা তো সিরিয়াস।যেহেতু জরায়ুতে প্রবলেম..এই সার্জারির নেগেটিভ দিকগুলো কি কি?”

রাইয়ানা জাবিন স্মিত হেসে বলল…
—”যেহেতু আপনাদের পরিবার সম্পূর্ণ হয়নি তাই আমরা সার্জারিটা সেভাবেই করব।আমরা শুধু মায়োক্টিম টিয়ে টিউমারটাকে ফেলে দিবো যেনো গর্ভধারণ করা যেতে পারে।তবে টিউমারটা বড় হওয়ায় আমরা আশ্বাস দিতে পারছি না।রোগীর প্রাণঝুঁকির কোনো রিস্ক নেই তবে গর্ভধারণের ক্ষমতা হারানোর চান্স থার্টি পার্সেন্ট….”

আরশি নিজেকে সামলাতে পারল না।হু হু করে কেঁদে উঠল।সিদ্রাতের চোখে ফুটে উঠল অসহায়বোধ।তবুও নিজেকে সামলে বলল…

—”ম্যাম সার্জারিটা কবে করালে ভালো হবে?আই মিন সার্জারি রিলেটেড বিষয়গুলো আমাকে একটু ডিটেইলস বললে ভালো হতো”

—”ইয়াহ অফকোর্স…পারিবারিক ও মেডিকেল..সবগুলো হিস্ট্রিই যেহেতু আমি জেনে নিয়েছি তাই অহেতুক লেইট করার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনারা যদি রেডি থাকেন তাহলে তিনদিন পরই অপারেশন করা যাবে…”

সিদ্রাত ডক্টরের সাথে সবগুলো ব্যাপার নিয়ে ক্লিয়ারলি কথা বলে অপারেশন ডেইট ফিক্সড করে বের হয়ে আসল।আরশি কেঁদেই চলেছে।ওর কান্না থামার নাম নেই।সিদ্রাত এবার ধমক দিয়ে বলল…
—”সমস্যা কী?মরা কান্না লাগিয়েছো কেন?কেউ কি তোমায় খুন করতে এসেছে?”

আরশি ঠোঁট উলটে কেঁদে বলল….
—”আমি মা হতে পারব না…”

সিদ্রাত বিরক্তি নিয়ে বলল….
—”সর্বজান্তা সমস্বের…”

আরশি কিছু বলতে যাবে তখনই কারও ডাক শুনে চমকে গেলো।পেছনে ফিরতেই ওর মুখের রঙ পালটে গেলো।অস্ফুট স্বরে বলল….

—”নূপুর আপু!”

নূপুর মৃদু হেসে আরশির কাছে এগিয়ে এলো।সিদ্রাতের সাথে কুশল বিনিময় করে আরশিকে বলল…
—”ডক্টরের কাছে গিয়েছিলে বুঝি?এখন কি বাসায় যাবে?”

—”হুম আপু..তুমিও চলো আমার সাথে..”
—”না গো বোন..তা তো আজ সম্ভব না।আজ একটা বিশেষ দিন জানোই তো।জানোই তো আজ কার সাথে দেখা করতে যাবো।তুমিও চলো না আমার সাথে…”

আরশির মুখটা চুপসে গেলো।ও বলল…
—”ফারাবির কাছে?”

নূপুর মাথা নাড়ালো।আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”হুম যাবো..”

সিদ্রাতের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।ও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল….
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_68
#Writer_TanhaTonu

নূপুর মৃদু হেসে আরশির কাছে এগিয়ে এলো।সিদ্রাতের সাথে কুশল বিনিময় করে আরশিকে বলল…
—”ডক্টরের কাছে গিয়েছিলে বুঝি?এখন কি বাসায় যাবে?”

—”হুম আপু..তুমিও চলো আমার সাথে..”
—”না গো বোন..তা তো আজ সম্ভব না।আজ একটা বিশেষ দিন জানোই তো।জানোই তো আজ কার সাথে দেখা করতে যাবো।তুমিও চলো না আমার সাথে…”

আরশির মুখটা চুপসে গেলো।ও বলল…
—”ফারাবির কাছে?”

নূপুর মাথা নাড়ালো।আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”হুম যাবো..”

সিদ্রাতের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।ও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল….
_________________________________
নূপুর বলল….
—”তাহলে আমার কারে করেই যাই।সিদ্রাত ভাইয়া…নিয়ে গেলাম আপনার বউকে”

সিদ্রাত জোরপূর্বক হাসতে চেয়েও পারল না।শুধু বলল…
—”হুম নিয়ে যাও।আসার আগে ফোন দিও আমায়।কার পাঠিয়ে দিবো…”

আরশি সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে দেখল সিদ্রাতের মুখে রাগের ছাপ।আরশি বুঝতে পারল না হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণটা কি।তাই মৃদু কন্ঠে বলল….
—”আপনি কি কোনো কারণে রেগে আছেন?”

সিদ্রাত যেনো আরশির প্রশ্নে আশার আলো দেখল।ও করুণস্বরে বলল….
—”তোমার কি যেতেই হবে?”

আরশি সাথে সাথে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।সিদ্রাতের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল।ও ভেবেছিলো হয়ত আরশি বলবে যে আপনি না চাইলে যাবো না।কিন্তু এমন কিছুই হলো না।ভিতরে ভিতরে সিদ্রাতের রাগ অনেকটাই বেড়ে গেলো।কিন্তু ও প্রকাশ করল না।গম্ভীর কন্ঠে বলল….

—”আচ্ছা যাও..আসার আগে আমায় ফোন দিও।গাড়ি পাঠিয়ে দিবো”
—”আপনি আস,,,,,”

“আপনি আসবেন না আমায় নিতে?” কথাটা আরশি শেষ করতে পারল না তার আগেই সিদ্রাত কারে উঠে গেলো আর মূহুর্তেই কার স্টার্ট দিলো।আরশি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সিদ্রাতের চলন্ত কারটার দিকে।ওর কেন যেনো মনে হচ্ছে সিদ্রাত ওকে ইগনোর করল।ভালোবাসার মানুষের ইগনোর কি নেওয়া যায়!

—”আরশি চলো তাহলে….”

আরশি নূপুরের কথায় ভাবনার অতল থেকে বেরিয়ে আসে আর বলে…
—”হুম চলো আপু”

অতঃপর আরশি নূপুরের সাথে প্রস্থান করে ফারাবির উদ্দেশ্যে…

বাসায় এসে সিদ্রাত একদফা ভাঙচুর করে ফেলেছে।ওর মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে যে আরশি কেন ফারাবির কাছে গেলো।আবার অদ্ভুত এক ভয়ও বুকে হানা দিচ্ছে আসন্ন আশঙ্কায়…ফারাবি ছিনিয়ে নিবে না তো তার কাছে থেকে প্রিয়তমাকে?সিদ্রাত দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ল।বিড়বিড় করতে করতে বলতে লাগল….

—”নাহ,,,এরকম কিছুই হবে না।ফারাবি কেন কাউকেই আমি জিততে দিবো না আমার ভালোবাসার কাছে।ও শুধুই আমার..অনলি মাইন…”

রাগ,জিদ আর ভয়ে সিদ্রাত লাল চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।হঠাৎ সিহু গুটি গুটি পায়ে সিদ্রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর কোলে উঠে বসে গলা জড়িয়ে ধরে।সিদ্রাত চমকে যায় প্রথমে।পরে সিহুকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে….
—”কি হয়েছে আমার মা-টার?মুখটা এমন শুকনো কেন?”

সিহু কোনো কিছু বলল না।একটু পর সিদ্রাত সিহুর ভারী শ্বাস অনুভব করতে পারল।বুঝতে পারল ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।সিদ্রাত সিহুর কপালে চুমু এঁকে দিলো….

আরশি বাসায় ফিরল সন্ধ্যার একটু আগে।রুমে ঢুকে দেখে লাইট বন্ধ।একদম অন্ধকার হয়ে আছে সব।আরশি ভ্রু কুচকালো এতে।তারপর সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট অন করতেই ওর চোখ গেলো বেডে শুয়ে থাকা সিদ্রাতের দিকে।ও সিহুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।সিহুও লক্ষী বাচ্চার মতো চুপটি মেরে ঘুমোচ্ছে।আরশি মৃদু হাসল দুজনকে দেখে।শব্দহীন পায়ে এগিয়ে গিয়ে সিহুর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর সিদ্রাতের ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে লাজুক হেসে সাথে সাথে সরে এলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর গেলো কিচেনে।হালকা পাতলার মধ্যে চিকেন ভেজিটেবল পাকোড়া আর ক্রিমি পাস্তা বানালো।এর মধ্যেই মাগরিবের আজান দিয়ে দেওয়ায় আরশি সবকিছু গুছিয়ে রুমে চলে আসল।এসেই দেখল সিদ্রাত ওযু করে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে।আরশি মুচকি হেসে বলল…
—’নামাজ পড়ে আসুন।পাকোড়া আর পাস্তা বানিয়েছি”

সিদ্রাত আরশিকে পুরোপুরি এভোয়েড করল।ওর কথা শুনেও যেনো শুনল না।টুপিটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আরশি ব্যথিত নয়নে তাকিয়ে রইল সিদ্রাতের যাওয়ার পানে।সিদ্রাতের এই অবহেলাগুলো যে ভীষণ ভয়ানকভাবে পুড়াচ্ছে ওকে।আরশি ডান হাতের তালু দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখটা মুছে ফেলল….

নামাজ পড়ে আরশি সিদ্রাতের আসার অপেক্ষায় বসে রইল।আধা ঘন্টার মধ্যেই সিদ্রাত বাসায় ফিরে এলো।আরশির দিকে একবার তাকিয়ে আবারও চোখ ফিরিয়ে নিলো।আরশি হুটহাট অকারণে সিদ্রাতের অবহেলাগুলো মানতে পারছে না।ও সিদ্রাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ধরাগলায় বলল…..

—”আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন কেন?কি করেছি আমি?”

সিদ্রাত শূন্যদৃষ্টিতে আরশির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।মেয়েটার চোখের জল যেকোনো সময় বাঁধ ভাঙবে।সিদ্রাত চোখ সরিয়ে অন্যদিকে যেতে নিলে আরশি সিদ্রাতের হাত টান দিয়ে ধরল।সিদ্রাত গম্ভীরকন্ঠে বলল…..

—”টানাটানি করছ কেন?ভালোলাগে না আমার এসব।ছাড়ো… ”

আরশি সিদ্রাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁদতে বলে….
—”আমি তো মারা যাবো এজন্য বুঝি এখনই মায়া কাটানো শুরু করে দিয়েছেন?ডক্টর বলেছে তাইনা যে আমার অপারেশন সাকসেসফুল হবে না!আমার হাতে আর তিনদিন আছে..তারপর সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো…এজন্যই বুঝি এখনই অবহেলা করছেন?”

আরশির কথা শুনে সিদ্রাতের কপালের রগ ফুলে উঠল রাগে।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল….

—”এসব ফালতু কথা কোথায় পাও?অনেকদিন ধরে চড় খাও না..সেটাই মিস করছ তাইনা?”

আরশি নাক টানতে টানতে বলল….
—”তাহলে আপনি আমায় এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন?”

সিদ্রাতের শক্ত কন্ঠের জবাব….

—”তুমি ফারাবির কাছে কেন গেলে?একবারও আমায় জিজ্ঞাসাও করলে না?আমার মতামতও জানতে চাইলে না?আমার থেকেও ও তোমার আপন?”

আরশি সিদ্রাতের কথায় চমকে উঠল।অসহায়ভাবে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত শান্ত চাহনী আরশির দিকে।আরশি সিদ্রাতের বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল।কাঁদতে কাঁদতে বলল….

—”ফারাবি মৃত সিদ্রাত…আমি ওর কবরে গিয়েছিলাম।আজ ওর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো”

আরশির কান্নার গতি আরও বেড়ে গেলো।সিদ্রাত স্তব্ধ হয়ে গেলো আরশির কথা শুনে।ও যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে এমন একটা সত্য শুনে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সিদ্রাত বলল…
—”মানে?”

আরশি সিদ্রাতের কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না।ও কেঁদে-কেটেই শেষ।কাঁদতে কাঁদতে আরশির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।সিদ্রাত আরশির অবস্থা বুঝতে পেরে আর ঘাটলো না।কোলে তুলে নিলো আরশিকে।যত্নের সাথে বেডের একসাইডে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আরশির পাশে শুলো।আরশি সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল।সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল….

—”আর কেঁদো না লক্ষীটি।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তোমার জানপাখি…প্লিজ আর কেঁদো না”

সিদ্রাত অনেক কষ্টে আরশির কান্না থামায়।আরশি কান্না বন্ধ করলেও একটু একটু পর পরই কেঁপে উঠছে।সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল….

চলবে…..
চলবে….

ভেবেছিলাম বড় ধরণের সারপ্রাইজ দিবো।কিন্তু পায়ের ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে।কি লিখেছি আমি জানি না।লিখার অবস্থায় ছিলাম না।তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চাইনা তাই দিলাম…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here