#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান
#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৪০)
ভ্রমরের আর জড়িয়ে ধরা হলো না। দুজনের নিবিড় আলিঙ্গনে টান পড়ল ফোনের রিংটোনে। মোহচ্ছেদ ঘটল দুজনের। হৃদ্য পকেট থেকে ফোন বের করতে দেখে টিপু কল দিয়েছে। ভ্রমরও ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল। স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে হৃদ্যের মুখে ফেলে জিজ্ঞেস করল,
“আমরা সবার সাথে দেখা করব না?”
হৃদ্য তাৎক্ষণিক উত্তর দিল না। শান্ত চাহনি নিবদ্ধ হলো ভ্রমরের কৌতূহলী চোখ জোড়ায়। শুরুর দিকে ভেবেছিল ভ্রমরকে নিয়ে সবার সাথে হৈ-হৈ উৎসবে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু এখন? অনিচ্ছাকৃত দল থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর চিন্তা-ভাবনারা পথ বদলিয়েছে। মন কিছুতেই চাচ্ছে না ভ্রমরকে নিয়ে ওদের সাথে যোগ দিতে। টিচারদের নিয়মের মধ্যে থেকে রাঙামাটির রোমাঞ্চকর দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে। ইচ্ছে করছে একটু আড়াল হতে,কয়েক প্রহরের জন্য লুকিয়ে পড়তে কোথাও একটা।
“আমরা ঘুরতে বের হব কখন?”
ভ্রমরের পরের প্রশ্নে হৃদ্য নীরবতা ভাঙল। বলল,
“সকালে।”
“কোথায়?”
ভ্রমরের চোখে,মুখে অপার কৌতূহল। হৃদ্য স্মিত হাসল। মিষ্ট স্বরে বলল,
“মেঘের দেশে।”
“মেঘের দেশে! সত্যি?”
বিস্ময়ে ভ্রমরের মনি দুটো চকচক করছে। হৃদ্য শরীর থেকে চাদর খুলে নিল। সযত্নে ভ্রমরের মাথাসহ বাহু ঢেকে বলল,
“হুম। এখন চল ঘুমাবি।”
ভ্রমর খুশি মনে হৃদ্যের আদেশ পালন করল। গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে ঢুকল। হৃদ্য বাইরে থেকে বলল,
“দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিস।”
ভ্রমর মাথা একপাশে কাত করে। দরজা আটকায় না। হৃদ্যও দরজার সামনে থেকে সরে না। এভাবে কেটে গেল আরও কিছু সময়। মুহূর্তকাল পরে ভ্রমরই বলল,
“এখন দরজা লাগাব?”
হৃদ্য লজ্জা পেল। নাকের চূড়ায় গোলাপি রঙের প্রলেপ পড়ল। ঠোঁট কামড়ে লাজুক হেসে বলল,
“লাগিয়ে দে।”
ভ্রমর দরজা আটকাতে গেলে হৃদ্য এক কদম এগিয়ে আসল। সরু ফাঁক দিয়ে চেয়ে বলল,
“আমি দরজা খোলা রাখব। সমস্যা হলে ডাক দিস।”
ভ্রমর আচ্ছা বলে দরজা আটকে দিল। হৃদ্য তখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকল। ভ্রমরের বন্ধ দরজার দিকে নীরবে চেয়ে থাকল। কী ভেবে দরজায় হাত রাখল। কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করল। তারপর বিড়বিড় করল,
“আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আমার সাথে ঘুরতে এসেছিস। তাও আবার বাবা-মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে। ভ্রমর আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?”
ভেতর থেকে কোনো উত্তর এলো না। হৃদ্য আরও কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে পাশের রুমটিতে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ভ্রমরকে বলা কথা অনুযায়ী দরজা খোলাই রাখল।
__________________
ঘুমন্ত নীরবের মুখপানে চেয়ে শরীফা খন্দকারের চোখ ছলছল করে উঠল। অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর দিকে তাকালেন। চাপা স্বরে বললেন,
“সেই দুষ্টুটা এত বড় হয়ে গেছে? বাব্বাহ! কত গুছানো হয়েছে। তখন যদি জানতাম বড় হয়ে এত শান্ত,নম্র,ভদ্র হবে তাহলে কখনই কান মলে দিতাম না। পাজিটা আমাকে দেখলেই কেমন ভেংচি কাটত মনে আছে তোমার? মরিচ গাছের একটা মরিচও রাখত না। ও কি এখনও খুব ঝাল খায়?”
স্ত্রীর এমন আনন্দ ঘন মুহূর্তে মীর খন্দকার চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করলেন। পুরোনো স্মৃতিতে ভেসে বেড়ানোর সময় দিলেন। শরীফা খন্দকার নীরবের চুলে হাত রেখে বললেন,
“এক বার ঘুমের ঘোরে চুল ছেঁটে দিয়েছিলাম বলে সে কী কান্না! সে কী রাগ! আমার সাথে দুই দিন কথা বলল না। আমাদের বাড়িমুখো হলো না।”
মীর খন্দকার এবারও চুপ থাকলেন। শুধু কয়েক বার ঘাড় নেড়ে হাসলেন। শরীফা খন্দকার চুলে আঙুল বুলিয়ে হঠাৎ বললেন,
“মিয়া ভাই কেমন আছেন? আর ভাবি?”
মুহূর্তে মীর খন্দকারের মুখে কালো ছায়া পড়ল। আর্দ্র স্বরে বললেন,
“উনারা কেউ বেঁচে নেই।”
শরীফা খন্দকার আঁতকে উঠলেন। মুখ থেকে হাসি উবে গেল। আনন্দ অশ্রুগুলো বেদনার রূপ নিল। নীরবের থেকে একটু সরে আসলেন। চোখের পাতায় ভেসে উঠল একটি বিষন্ন বেলা। নীরবের বাবা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘ দিন গাঁয়ের স্কুলে শিক্ষকতায় থাকলেও হঠাৎ বদলি হয় কুমিল্লায়। প্রথমে স্ত্রী-সন্তান ফেলে একা কুমিল্লায় ছুটলেও কিছু দিন বাদেই গাঁয়ে ফিরে আসেন। চোখের পলকে ব্যাগপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলেন। যাওয়ার আগে শরীফা খন্দকারের কাছ থেকে বিদায় নিতে আসেন। তখন নীরবের বয়স চার কী পাঁচ বছর। এরপর আর নীরবের সাথে দেখা হয়নি। নীরবের বাবা প্রয়োজনে এক বার এসেছিলেন। কিন্তু নীরবকে নিয়ে আসেননি। তারপর সম্পর্কটা ফোনের মধ্যে আটকে ছিল। সে যুগে ফোনের ব্যবহার এত সহজ ছিল না বলে শরীফা খন্দকারের সাথে ফোনের যোগাযোগটাও হয়নি। তার কয়েক বছর পর ভ্রমর পেটে আসে। তারপর তো..! শরীফা খন্দকার আর ভাবতে পারলেন না। গলা থেকে অবিশ্বাস্য স্বর বেরিয়ে এলো,
“কী বলছ!”
মীর খন্দকারের দৃষ্টি অন্য কোথাও পড়ল। বিষন্নচিত্তে বলতে থাকলেন,
“তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসার বেশ কয়েক দিন পর খেয়াল হয় শহীদুলের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না অনেক দিন। ওর কথা মনে হতেই মনটা কেমন খচখচ করছিল। নিজ থেকে কল দিতে গিয়ে থেমে গেলাম। ভাবলাম সরাসরি দেখা করে আসলে কেমন হয়? তারপরে একদিন শহীদুলের বাড়িতে হাজির হই। সেখানে গিয়েই জানতে পারি যক্ষ্মার সাথে পেরে না উঠে ভাবি গত হয়েছেন কয়েক মাস হলো। শহীদুলের শরীরের অবস্থাও ভালো না। ভাবির রোগটা ওর উপরে ভর করেছে। ওষুধ চলছে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। এদিকে চাকরি যায় যায় অবস্থা। আর্থিক অবস্থা করুণ! নীরব পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবার পাশে বসে থাকে রাতদিন। আমার সহ্য হলো না। সাত-পাঁচ না ভেবে এক রকম জোর করে ওদেরকে বাড়ি নিয়ে যাই। নীরবকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে শহীদুলের চিকিৎসা শুরু করি। এসব কিছু মা দেখতে পারছিলেন না৷ এক বার বলছে এদেরকে বিদেয় করতে আরেক বার বলছে নতুন বউ আনতে। এর মধ্যে মাও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পুরো শয্যাশায়ী হলেন। আমি এতটা বিপদগ্রস্ত হলাম যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। তুমি তো বাড়ি আসবে না। কিন্তু ঐ মুহূর্তে একটি নারীর শক্ত দুটো হাত বড্ড প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। শেষে বাধ্য হয়ে মরিয়মকে বিয়ে করি। সে এসে এক হাতে সব সামলে নিল। মাও খুব খুশি। কিন্তু বেশি দিন খুশি থাকতে পারলেন না। শুরুতে আড়ালে মরিয়মকে কথা শুনালেও এক পর্যায়ে প্রকাশে চলে আসে। তারপর যখন জানতে পারলেন ও কখনও সন্তান সম্ভাবনা হতে পারবে না তখন মা খুব ভেঙে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময় নীরবকে বুকে টেনে নিলেন। এরপর সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এই ঠিকঠাকও বেশি দিন টিকল না। শহীদুল মারা গেল। তখন নীরব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবার চলে যাওয়ায় ছেলেটা একেবারেই মিইয়ে যায়। এক রকম অনীহাতে পড়া শেষ করে একটা চাকরিতে ঢুকে। আমি এত করে নিষেধ করলাম শুনলই না। আমিও আর জোর করলাম না। একটু অন্য দিকে মনোযোগ থাকলে মনটাও ভালো থাকবে। এই ভেবে চুপ করে গেলাম। তার মধ্যেই খেয়ালে এলো শহীদুল মৃত্যুশয্যায় আমাকে একটা খাম দিয়ে বলেছিল নীরব যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবে তখন যেন এই খামটা দেই। সেই খাম যে আমার ছেলেটাকে হঠাৎ পাল্টে দিবে কে জানত? রাত পার হতে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি দিল। একা একা থাকবে সে। আমার কথা তো শুনলই না দাদির সাথে ঝগড়া করে বেরিয়ে গেলো। যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল, ঐ বাড়িতে সে আর পা রাখবে না। এ দিকে মায়ের কান্নাকাটির শেষ নেই। যে করেই হোক তার নাতিকে বাড়িতে ফেরত চায়! আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে! না মাকে বুঝাতে পারছি না নীরবকে। এই বুঝাবুঝি পর্বের মধ্যে আগমন ঘটে ভ্রমরের। তখন অবশ্য জানতাম না ভ্রমর আমার মেয়ে। কিন্তু মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর মনটা এত দুর্বল হয়ে পড়ল। নিজের মেয়েকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ি। তারপর তো তুমি সব জানো।”
মীর খন্দকার থামলে শরীফা খন্দকার জিজ্ঞেস করলেন,
“এর মধ্যে বিয়ের ব্যাপারটা আসল কী করে?”
মীর খন্দকার উত্তর দেওয়ার পূর্বে নীরব জেগে গেল। শোয়া থেকে বসতে বসতে বলল,
“কী হয়েছে? তোমরা এত রাতে আমার রুমে?”
__________________
রিধি বারান্দা ছাড়ল প্রায় মাঝ রাতে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে। আরও আগেই ঘুমিয়ে পড়ত কিন্তু এই মুহূর্তে শ্রাবণের মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছিল না। তাই ঠিক করেছিল শ্রাবণ ঘুমিয়ে পড়লে তারপর রুমে যাবে।
রুম অন্ধকার দেখে দারুন খুশি হলো রিধি। নিঃশব্দে বিছানায় উঠে দম ছাড়ল। অন্যপাশ ঘুরে চোখ বন্ধ করতে শ্রাবণের কণ্ঠ বাজল,
“এটা কেন করলেন,রিধি?”
রিধি চমকে উঠল। চোখ খুলে কাঠ হয়ে থাকল। শ্রাবণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন।”
এ পর্যায়ে রিধি শ্রাবণের দিকে ঘুরল। ফুঁসে উঠে জিজ্ঞেস করল,
“আমি আপনাকে ঠকিয়েছি?”
শ্রাবণ উঠে বসল। শক্ত গলায় বলল,
“হ্যাঁ ঠকিয়েছেন।”
রিধিও উঠে বসল। কিছু বলতে উদ্যত হতে শ্রাবণ বলল,
“যাকে ভালোবাসেন তাকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করেছেন? আমি তো বিয়ের জন্য জোর করিনি।”
রিধি কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে বলল,
“বলব না।”
“কেন বলবেন না?”
“আমার ইচ্ছে করছে না তাই বলব না।”
এই মুহূর্তে রিধির মুখ থেকে ছেলেমানুষি উত্তরে শ্রাবণ নিভে গেল। রাগ গলে অভিমানে সিক্ত হলো। কিছুক্ষণ রিধির দিকে তাকিয়ে থেকে বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ল। রিধি হতবিহ্বল! কতক্ষণ থম মেরে থেকে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি নিচে শুয়েছেন কেন?”
শ্রাবণ উত্তর দিল না। সে মনে মনে ঠিক করল রিধি জোর করলেও উপরে আসবে না। এখন থেকে নিচেই ঘুমাবে। একা একা।
অনেক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও যখন রিধির দিক থেকে জোরাজুরি আসল না তখন শ্রাবণ মুখ তুলে তাকাল। রিধি কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। শ্রাবণের অভিমান গাঢ় হলো। চোখে পানি চলে আসবে এমন অবস্থা। এদিকে নিচে শুয়ে থাকার জন্য মন,শরীর কোনোটাই সায় দিচ্ছে না। সে কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে বিছানায় উঠে আসল। এতেও শান্তি মিলল না। অনেকটা সময় ছটফটিয়ে কাটিয়ে দিল। তারপর উঠে বসল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করল,’তুই আমার শান্তি নষ্ট করে দিয়েছিস!’ কথাটা শেষ করেই সজোরে আছাড় মারল। রিধি হুড়মুড়িয়ে উঠল। আতঙ্কে ফেটে পড়ে জিজ্ঞেস করল,
“কীসের শব্দ হলো?”
রিধির প্রশ্নটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ওর মুখটা চেপে ধরল শ্রাবণ। কঠিন স্বরে বলল,
“তুমি অন্যায় করেছ। অনেক বড় অন্যায়। আমি মেনে নিতে পারছি না।”
রিধি ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসল। শ্রাবণ টের পেয়ে হাত সরিয়ে নিল। উঠে দরজার দিকে পা রাখলে রিধি জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
শ্রাবণ দাঁড়াল। দরজার একপাশ চেপে ধরে বলল,
“আমি প্রায়ই ভাবতাম আমাকে তোমার কেন পছন্দ হচ্ছে না? এত চেষ্টার পরও কেন মন পাচ্ছি না? আজ উত্তর পেলাম। মনটা তোমার কাছে থাকলে তো পাব? সে মন যে অনেক আগেই অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছ! এর পরেও এখানে পড়ে থাকব কোন আশায়?”
চলবে
[প্রাণ_ভোমরা সমাপ্তির নিকটে চলে আসছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন]
পর্ব (৪১)
রাত প্রায় শেষের দিকে। হৃদ্য গভীর ঘুমে অচেতন। বুজে থাকা চোখের পাতা কাঁপছে থেমে থেমে। বুনছে বাস্তব-অবাস্তব মিশেল স্বপ্ন জাল। ঘুমের মধ্যে টের পেল তার গায়ে জড়ানো কম্বল নেই। ঠাণ্ডায় শরীর জমে আছে প্রায়। হৃদ্য কুঁকড়ে যাওয়া শরীরটা হালকা মেলল। জমে যাওয়া হাত দিয়ে কম্বল খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পরও যখন কম্বল খুঁজে পেল না তখন হৃদ্যের মস্তিষ্ক সক্রিয় হলো। অচেতন থেকে ফিরে এসে চোখ মেলল। সাথে সাথে আঁতকে উঠল। বিস্ফারিত চোখ দুটো স্থির হয়ে থাকল ভ্রমরের উপর। বেশ কয়েক সেকেন্ড পর বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“তুই এখানে?”
ভ্রমর নিশ্চুপ। হৃদ্যের কম্বলটা আরেকটু ভালো মতো জড়িয়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে হৃদ্যের দিকে তাকিয়ে থাকল। হৃদ্য শোয়া থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠল। রুমের আলো জ্বালিয়ে ত্রস্ত পায়ে এগুতে এগুতে বলল,
“এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন?”
ভ্রমর এবার মুখ তুলল। দুঃখী মুখ করে বলল,
“আমার ঘুম আসছে না।”
হৃদ্য বিছানায় বসল। ভ্রূ উঁচিয়ে ভ্রমরের মুখপানে চেয়ে থাকল কতক্ষণ। তারপর সন্দেহি কণ্ঠে সুধাল,
“কেন?”
“জানি না।”
কণ্ঠটা বড্ড উদাস শোনায়। ভ্রমর হৃদ্যের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। হাঁটুর উপর এক গাল ফেলে চোখের পাতা বুজে নিতে হৃদ্য দ্রুত জিজ্ঞেস করল,
“বসে বসে ঘুমাবি নাকি?”
ভ্রমর হৃদ্যের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ চেয়ে থাকতে চোখের কোলে জলের ছায়া পড়ে। ভেসে যাওয়া মনি দুটোতে দুঃখের ঢেউ শুরু হতে হৃদ্য কোমল সুরে সুধাল,
“কী হয়েছে,ভ্রমর?”
ভ্রমর হালকা ফুঁপিয়ে উঠল। ঠোঁট উল্টে বলল,
“আমার একা ভয় করছে! তুমি জানো না আমি সব সময় আম্মুর সাথে ঘুমাই?”
কথাটা বলতে বলতে ঝর ঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। হৃদ্য বলতে চাইল,’সব সময় কোথায় ঘুমাস? বাবা আসলে তো আলাদা ঘুমাস।’ বলা হলো না। মনে পড়ল ওটা ভ্রমরের নিজের বাসা। কত বছর ধরে ওখানে থাকছে। তাছাড়া ওদের বাসার কাজের মেয়েটাও সাথে থাকে।
মুহূর্তেই চোখের পানিতে গাল, নাক, ঠোঁট, থুতনি ভিজে গেল ভ্রমরের। চোখের ভেতরটা লালাভ বর্ণ প্রকাশ করতে হৃদ্য এগিয়ে আসল। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“এই ব্যাপারটা তো আমার মাথায় আসেনি!”
ভ্রমর কান্না বিজড়িত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কী?”
“এই যে তোকে একা একা থাকতে হবে।”
“একা থাকতে হবে কেন? তুমি আছো না? আমি তোমার সাথে থাকব।”
হৃদ্য কিছু বুঝার আগেই তার বিছানায় শুয়ে পড়ল ভ্রমর। দুই হাত দিয়ে নাক,মুখ মুছে বলল,
“আসো,ঘুমাই।”
হৃদ্য তখনও বসে। চোখে,মুখে আতঙ্ক! ভ্রমর ভারি আনন্দের সাথে বলল,
“আমরা এত বছর এক সাথে চলাফেরা করছি কিন্তু কখনও এক সাথে ঘুমাইনি তাই না হৃদ্য ভাইয়া? আজ ঘুমাব। খুব মজা হবে।”
ভ্রমরের চোখে,মুখে খুশির ঝিলিক দেখে হৃদ্যের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। গলাটা শুকিয়ে এলো। সে কাঠ হয়ে বসেই থাকল। ভ্রমর এবার একটু বিরক্ত হলো। জিজ্ঞেস করল,
“কী হলো? ঘুমাবে না নাকি?”
হৃদ্য কাঠ স্বরে সংক্ষেপে বলল,
“না।”
“কেন?”
“আমার ঘুম হয়ে গেছে। তুই ঘুমা।”
হৃদ্য বসা থেকে উঠতে নিলে ভ্রমর চট করে তার উরুতে মাথা রাখল। পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল হৃদ্যের মুখে। কপট রাগ নিয়ে বলল,
“আবার চলে যাচ্ছো? আমার ভয় করবে না?”
হৃদ্য ভ্রমরের দিকে এক পলক তাকাল। তারপরে দৃষ্টি সরিয়ে সহজ স্বরে বলল,
“যাচ্ছি না। আছি। তুই ঘুমা।”
ভ্রমরের মাথাটা ঠেলে তুলতে চাইলে সে শক্ত হাতে উরু চেপে ধরে বলল,
“আমি এখানেই ঘুমাব।”
হৃদ্য না চাইতেও এবার চোখ জোড়া ভ্রমরের মুখে আটকাল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
“এখানে ঘুমাবি?”
ভ্রমর মিষ্টি হাসল। চোখ বুজে বলল,
“হ্যাঁ। তুমি যদি আমাকে ফেলে চলে যাও।”
“তোর আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না?”
“না।”
হৃদ্যের বিস্ময় এবার আকাশ ছুঁলো। বলল,
“এত অবিশ্বাস তাহলে আমার সাথে এত দূর এলি কেন?”
ভ্রমর চোখ মেলল। হৃদ্যের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইল। বলল না। থেমে গিয়ে কিছু একটা ভাবল। তারপরে আচমকা বলল,
“এখন ঘুম পাচ্ছে। কাল বলব।”
হৃদ্যের রাগ হলো। দুঃখ পেল। তার মধ্যেও কেমন এক আনন্দ অনুভব করল। যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল রক্তরঙা হৃদপিণ্ডটায়! হৃদ্য আড় চোখে বুকের বা পাশে তাকাল। ভ্রমর যেন শুনতে না পায় তেমন করে জিজ্ঞেস করল,’কেমন শান্তি অনুভব করছিস?’
ভ্রমর উশখুশ করলে হৃদ্য বলল,
“এখানে শুলে ঘুম আসবে না। বালিশে শো। যাব না কথা দিচ্ছি।”
ভ্রমর চোখ বন্ধ করেই বলল,
“তাহলে তুমিও শোও।”
“তুই যে আমাকে এত অবিশ্বাস করিস এখানে না আসলে জানতামই না।”
ভ্রমর চোখ মেলল। বিরক্ত নিয়ে বলল,
“তুমি কি আমাকে ঘুমাতে দেবে?”
“আমি তো ঘুমাতেই বলছি।”
“তাহলে শুচ্ছো না কেন?”
ভ্রমরের সাথে পেরে না উঠে হৃদ্য বাধ্য হয়ে পাশের একটি বালিশে শুয়ে পড়ল। ভ্রমর হৃদ্যের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“তুমি কম্বল গায়ে দিবে না?”
“তোর কম্বলটা নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলতে বলতে হৃদ্য শোয়া থেকে উঠছিল। সাথে সাথে হাতে টান খেল। ভ্রমরের দিকে তাকালে সে বলল,
“এটা অনেক বড় দুজনের হবে।”
হৃদ্য কম্বল দিয়ে পুরো শরীর ঢাকল না। এক অংশ পায়ের উপর ফেলে চোখ বন্ধ করল। কিছুক্ষণের মধ্যে ভ্রমরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে। ভারি নিশ্বাসের শব্দ কানে বাজে। হৃদ্য চোখ মেলে মৃদু হাসে। ভ্রমরের ঘুমন্ত মুখের দিকে বিমুগ্ধ চাহনি ফেলে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। নিজের ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। করিডরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাবার নাম্বারে বার্তা পাঠাল,’ আব্বু,জরুরি ভিত্তিতে আমার একটা চাকরির প্রয়োজন। তুমি কি কোনো ব্যবস্থা করতে পারবে?’
হৃদ্য ভেবেছিল বাবা ঘুমিয়ে আছে তাই কল না দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছিল। কিন্তু বার্তা প্রেরণ হওয়ার সাথে সাথে ফোন বেজে উঠায় হৃদ্যের বুক কেঁপে উঠল। টের পেল তার হাত,পা কাঁপছে!
____________
শ্রাবণ বের হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসেছিল রিধি। মুহূর্তকাল পর চৈতন্য ফিরতে পুরো রুমে চোখ বুলায়। শ্রাবণকে না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে বসার রুমে আসে। তার ধারণা ছিল শ্রাবণ বাসার মধ্যেই কোথাও একটা আছে। কিন্তু পুরো বাড়ি তল্লাশি চালিয়েও যখন কোথাও খুঁজে পেল না তখন খানিকটা ভয় জমা হলো বুকে। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা নিয়ে বসার রুমে বসে থাকল। মনের কোণে দুর্ভাবনা, উৎকণ্ঠা, অশুভ চিন্তা-ভাবনা আসতে সে বাবার রুমের দিকে ছুটে যায়। দরজার কাছে এসে পা দুটো আটকে যায়। মনে পড়ে নিকটবর্তী এক আত্মীয়র বাসায় দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরেছেন বেশ রাত করে। এত রাতে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। তাছাড়া উনারা তো শ্রাবণকে পছন্দ করেন না। চলে গেছে শুনলে দুঃখ পাবেন বৈ কি খুশি হবেন!
রিধি রুমে ছুটে আসে। শ্রাবণের নাম্বারে কল দিয়ে বন্ধ পেতে কতক্ষণ আগের ঘটনা মানসপটে স্পষ্ট হয়। বুঝতে পারে সেই শব্দটা ফোন ভাঙার জন্যই হয়েছিল। মুহূর্তে রিধি চিন্তা শূন্য হয়ে পড়ে। রাগে, দুঃখে চোখ দুটো জলে টলমল হয়। অপরাধবোধ ছড়িয়ে পড়ে মনের অন্দর মহলে। উচ্চারণ করল,’একটা ভুল!’
রিধি দিশাহারা হয়ে সদর দরজা মেলে সিঁড়িতে নেমে আসে। মূল গেইটে তালা ঝুলতে দেখে সম্বিৎ ফিরে। আপনমনে প্রশ্ন রাখে,’আমি তো শুরু থেকে চেয়ে আসছিলাম মানুষটা চলে যাক। তাহলে আজ কেন আমার এত খারাপ লাগছে? আমার তো খুশি হওয়ার কথা!’ রিধি চোখ টিপে চোখের পানি শুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করল। ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি টেনে সিঁড়ি কেটে কেটে উপরে ছুটছে। মাথা নেড়ে বার বার বলছে, ‘আমি খুশি। খুব খুশি।’
___________________
“হৃদ্য ভাইয়া? জলদি উঠো। আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।”
ভ্রমরের ক্রমাগত ধাক্কায় হৃদ্য হুড়মুড়ে উঠে বসল। চোখে দিবার আলো পড়তে চোখ বুজে ফেলে। চোখ ঢলতে ঢলতে জিজ্ঞেস করল,
“সকাল হয়ে গেছে?”
ভ্রমর সেই প্রশ্ন কানে নিল না। শশব্যস্ত হয়ে বলল,
“জলদি জামা পাল্টে আসো। আমাদের এখনই বাসে উঠতে হবে।”
” বাসে উঠতে হবে? কেন?”
ভ্রমর হৃদ্যের থেকে সরে আসল। বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
“বাসায় যেতে হবে। বাজান কল দিছিল।”
হৃদ্য তড়িৎগতিতে দাঁড়াল। দুজনের একজনও খেয়াল করল না হৃদ্য বাইরের মেঝেতে বসে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়েছিল। হৃদ্য কিছু একটা বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল। ভ্রমরের আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“সত্যিই বাড়ি ফিরে যাবি?”
ভ্রমর সামান্য হাসল। সহজ স্বরে বলল,
“হ্যাঁ,আমি তো রেডি। তুমি কি এভাবেই যাবে? মুখ ধুবে না?”
হৃদ্য সাথে সাথে কিছু বলতে পারল না। অনুভব করল কেউ তার খুশি কেড়ে নিচ্ছে। রক্তরঙা হৃদয়টার রঙ কেড়ে নিচ্ছে।
ভ্রমর নিজের ওড়না দিয়ে হৃদ্যের মুখ মুছে দিয়ে বলল,
“আর ধুতে হবে না। চলো। দেরি হলে বাজান রাগ করবে।”
ভ্রমর আর অপেক্ষা করল না। হৃদ্যের রুমে ঢুকে ব্যাগপত্র নিজেই বাইরে নিয়ে আসল। হৃদ্য নীরস স্বরে পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“সত্যিই বাড়ি ফিরে যাবি?”
ভ্রমর জবাবে বিরক্ত চোখে তাকাল। হৃদ্য এক কদম এগিয়ে সুধাল,
“তোর বাজানকে খুব ভালোবাসিস?”
ভ্রমর ব্যাগপত্র রেখে হৃদ্যের দিকে তাকাল। আবেগ ভর্তি কণ্ঠে বলল,
“হুম খুব।”
হৃদ্য আর কিছু বলল না। ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে ভ্রমরের কাছ থেকে ব্যাগপত্র নিজের দখলে নিয়ে হাঁটা শুরু করল।
___________________
মেয়েকে আকস্মিক ফিরে আসতে দেখে খানিকটা চমকালেন শরীফা খন্দকার। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন দুই দিনের আগে ফিরবে না। তাহলে ফিরল কেন? সে তো কোনো কল দেয়নি। তবে কি হৃদ্যের সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে? প্রশ্নগুলো প্রকাশ করার সময় পেলেন না শরীফা খন্দকার। ভ্রমর ফেরার পর থেকে মীর খন্দকারের আগে-পিছে ঘুরছে। এক বার ভাবল আড়ালে ডেকে নিবে। সেই সুযোগও মীর খন্দকার দিলেন না। হঠাৎ বললেন,
“নীরব,যাও তো ভ্রমরকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসো।”
তার এই একটি আদেশে তিনটে মানুষ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। অথচ কেউ একটা কথা বলল না। মীর খন্দকারের দিকে তিনজনই এক দৃষ্টে চেয়ে থাকল। পরের আদেশটা দিলেন ভ্রমরকে,
“নীরব এখানে নতুন। যাও ও কে আশপাশটা দেখিয়ে নিয়ে আসো। ”
ভ্রমর ঘাড় এক পাশে কাত করতে তিনি পুনরায় বললেন,
“তোমার ফোনটা দিয়ে যাও।”
ভ্রমর বাবার কাছে ফোন রেখে নীরবের দিকে এক ঝলক তাকাল। তারপরে ধীর পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। নীরবও পিছু নিয়ে চোখের আড়াল হতে শরীফা খন্দকার স্বামীর নিকট এগিয়ে আসলেন। সরাসরি বললেন,
“এই বিয়ে হতে পারে না।”
স্ত্রীর নিকট এমন কথা প্রত্যাশা করেননি মীর খন্দকার। চোখে,মুখে বিরক্ত উপচে পড়তে শরীফা খন্দকার বললেন,
“তুমি ভুল করছ।”
“আমি ভুল করছি?”
“হ্যাঁ। ভুল করছ। শুধু তোমার একার মতে বিয়ে হতে পারে না। ”
“তুমি আর কার মত চাচ্ছো?”
শরীফা খন্দকার চুপ করে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর বললেন,
“ভ্রমরের কথা বাদ দিলাম। নীরবেরই তো এই বিয়েতে মত নেই।”
“নীরব বলেছে তোমাকে?”
“বলেনি। কিন্তু ওর হাবভাবেই বোঝা যায়।”
মীর খন্দকারের চোয়াল শক্ত হয়ে আসল। মুখে কাঠিন্যভাব স্পষ্ট হতে শরীফা খন্দকার বলে দিলেন,
“ভ্রমর অন্য কাউকে ভালোবাসে।”
কথাটা বলেই শরীফা খন্দকার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। অপেক্ষা করছিলেন একটি ভয়ানক চিৎকারের। যার পরে শুরু হবে তুমুল তান্ডব! কিন্তু এ কী! তার ভাবনা ভুল করে দিয়ে মীর খন্দকার স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“আমি জানি।”
শরীফা খন্দকার আকাশ মাপের বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“তুমি জানো? এরপরও এসব করছ?”
মীর খন্দকার সোফায় বসলেন। নিরুদ্বেগে বললেন,
“এসব ভালোবাসা নয়। বয়সের দোষ। ওরা দুজন একসাথে চলাফেরা করেছে তাই ভাবছে একে অপরকে ভালোবাসে। আর ভালোবাসা হলেও আমি মানব না। ঐ ছেলেটাকে আমার পছন্দ নয়।”
“আমার পছন্দ।”
মীর খন্দকার স্ত্রীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন,
“কী দেখে তোমার পছন্দ হলো?”
শরীফা খন্দকারকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিলেন না। আচমকা তার হাত দুটো ধরে অনুরোধের সুরে বললেন,
“ভ্রমরকে আমি সামলে নিব। তুমি দয়া করে কোনো ঝামেলা করো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ভ্রমর সুখে থাকবে। নীরবের উপর আমার সেই বিশ্বাস আছে।”
শরীফা খন্দকার স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভ্রমরকে নাহয় সামলে নিবে। আমাকেও নিচ্ছো। কিন্তু হৃদ্য? ও কেন তোমার কথা শুনবে?”
মীর খন্দকার স্ত্রীর হাত ছেড়ে দিলেন। কঠিন স্বরে বললেন,
“ওকেও শুনতে হবে।”
“তুমি বললেই ও শুনবে?”
মীর খন্দকার খানিক্ষণ চুপ থাকলেন। কিছু একটা ভেবে সহসা বললেন,
“যদি হৃদ্য মেনে নেয় তাহলে তুমিও মেনে নিবে?”
“ও মানবে না।”
মীর খন্দকার বাঁকা হাসলেন। স্ত্রীর নিকট থেকে একটু সরে আসলেন। ভ্রমরের ফোন থেকে হৃদ্যের নাম্বারে কল দিলেন। রিসিভ হতে বললেন,
“কাল কত তারিখ মনে আছে? প্রতি বছর এই দিনে তুমি আমার কাছে আসতে এবার আমি যাব। কোথায় দেখা করবে বলো।”
চলবে