প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০৫

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৫
আয়ানার মুখ থেকে সব শুনে সবাই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। শুভ্র ভিডিও ও ছবির কথা জানতো কিন্তু হোটেলের কথা না। সে তো অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করে,

–আমি জেসিকার সাথে হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায়! কি বলছো এসব? আমার সাথে জেসিকার সেরকম কোনো সম্পর্ক না পূর্বে ছিলো আর না পরে আছে। হ্যাঁ, আমি জেসিকার জীবনের সত্যটা জেনেও বন্ধুত্ব নষ্ট করিনি। কারন ইংল্যান্ডে আমি আমার ব্যাচমেট কয়েকজনকে দেখেছি তারাও ওর মতো আছে যারা একাধিক ব্যাক্তির সাথে ফিজিক্যাল ইনভলব থাকে। তবে সবাই না। হাতে গোনা দশ-বারো জন।

আয়ানা কিছু বলবে তার আগে ওরে থামিয়ে নীড় বলে,
–তাহলে আয়ু যে বলল, আরু তোকে ও মিস জেসিকাকে ওই অবস্থায় দেখেছে হোটেলে!

মেঘ তো মাথা গরম পাবলিক তাই সাবিলা ওরে দুইহাত চেপে ধরে শান্ত করছে। আর সাদিয়া কথাগুলো শুনছে ও সাথে জেসিকার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছে। সে ১০০% সিওর এগুলো জেসিকার কাজ। আর জেসিকা ভয়ে বারবার ঘামছে।

শুভ্র বলে,
–জানি না ওসব। আমার স্মৃতিতে এসব কিছু নাই। তবে হ্যাঁ, একদিন হসপিটলে আমার শরীর খারাপ করছিলো এরপর চোখ মেলে আমি নিজেকে হোটেল রুমে পাই এবং জেসিকাও সেখানে ছিলো। তখন সে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো আর বলেছিলো, আমি সিক হয়ে গেছিলাম তাই নাকি আমাকে সেখানে নিয়ে গেছিলো। এগুলা ছাড়া আর কিছু আমি জানি না।

আয়ানা বলে,
–সেদিনই আরু আপনাদের ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখেছে।

–কিন্তু আমি তো নিজেকে পরিপাটি অবস্থায় পেয়েছি। এমনকি মাথা ভার লাগা ছাড়া অন্য কোনো শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় ছিলো না।

শুভ্রর কথায় আয়ানা জবাব দিতে নিবে তার আগে মেঘ বলে,
–তাহলে আমার বোন কি ভুল দেখেছে? তোর সেদিন ঘোরের মাঝে কিছু হয়নি তা তুই নিশ্চিত কি করে? ভিডিও টা?

শুভ্র দুহাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ঢেকে মাথা নিচু করে লম্বা শ্বাস নেয় তারপর বলে,
–ভিডিওটা ফেক। এই নাও এখানে দুইটা আছে তবে নো টেনশন ব্লার করা। দেখতে পারো। আমার সাথে কিছু হলে সামান্য কিছুও আমি বুঝবো। আমি তো আর নেশা করি না তাই না!

শুভ্র মেঘের কাছে নিজের ফোনে ভিডিও গুলো দেয়। নীড়, মেঘ দেখে। তারপর তারাও বুঝে কোনটা ফেক। আয়ানা সহ বাকিদের বলে। তারা সবাই শুভ্রর কথা বিশ্বাস করে। সবাই যেনো কিছুটা স্বস্তি পায়। এবার কিন্তু থেকে যায় যে হোটেলে কি হয়েছে। সবাই হোটেলে রিসেপশনের মাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখবে। এটা শুনে জেসিকা বাঁকা হাসে কারন সে ডিলিট করিয়ে ফেলেছে কয়দিন আগে।

হোটেলের রিসিপশন থেকে হতাশ হয়ে ফিরে এলে এদের আরোহীর কথা মনে পরে। সকালে যে এক্সিডেন্টের কথা বলেছিল সেটা মনে পরে। শুভ্র আয়ানাকে জিজ্ঞাসা করে,

–তারা! রুহির কি হয়েছে বলছিলে? রুহি ঠিক আছে? আমি তখন তোমার কথা গুলো খেয়াল করিনি।

আয়ানা মলিন মুখে বলে,
–জানিনা আমি। শুধু চাই ওই মেয়েটা যেনো আরু না হয়।আমার বোন আর তার বাচ্চা যেনো সুস্থ থাকে।

শুভ্র অবাক হয়। তারপর বলে,
–রুহি তো জার্মানিতে গেছে বললে। সে প্রেগনেন্ট ছিলো? আমি তো জানতাম না! আর এক্সিডেন্টের কথা বলছো কেনো? রুহিকে এখনি ফোন করো।

আয়ানা হতাশভরা দুঃখের সাথে বলে,
–হ্যাঁ, প্রেগনেন্ট। এখন চার মাস। আমি কালকে থেকে ফোন করে পাচ্ছি না আর সকালে তো এগুলো শুনলাম। আমি বাড়ি যাবো। আমার ভালো লাগছে না কিছু।
কথাটা বলে আয়ানা মাথা হাঁটুতে নামায়।

শুভ্র স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সে বাবা হবে! এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে মনে অনেক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে তবে পরক্ষণেই বিষাদে মনে ছেঁয়ে যাচ্ছে। তার রুহির কিছু হয়নি তো! এটা ভেবেই তার দমবন্ধ লাগছে।

_______
আয়ানা সবাইকে রেখে বিকেলের দিকে নিজে একা একা বেরিয়ে গেছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। একদিকে বোনের জন্য ভয় ও চিন্তা আরেকদিকে ধ্রুবের সাথে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। ধ্রুব এক সপ্তাহ ধরে কথা বলতো চায় না, কেমন যেনো ইগনোর করে। রুড ব্যাবহারো করেছে বারবার ফোন করাতে। আয়ানা বুঝতে পারছে না ধ্রুবের কি হয়েছে! আর তিনমাস পর ওদের বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু ধ্রুব হঠাৎ করে যেনো বদলে গেলো।

আর ধ্রুব! সে পড়ন্ত বিকেলে নিজের বাসায় ছাদে বসে আছে। বিষন্ন তার মন। ডুবন্ত তার জীবন সূর্য এই পড়ন্ত বিকেলের ন্যায়। সূর্য ডুবে গেলে যেমন প্রকৃতিতে আঁধার নামে ঠিক তেমনি তার জীবনেও অমানিশা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হতে যাচ্ছে। আজ দুপুরের পর বাড়ি চলে এসেছে।
ধ্রুবের “একিউট লিউকেমিয়া” যা ব্লাড ক্যান্সার।

একিউট লিউকেমিয়া আবার দুই ধরনের যথা
১. একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএলএল।
২. একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএমএল।

একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (এএলএল) চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি। শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে দুই থেকে আড়াই বছর চিকিৎসা নিতে হয়। প্রয়োজনে বোনমেরু ট্রান্সপ্লেট করতে হয়।

ধ্রুবের অনেকদিন ধরে নাক দিয়ে রক্ত পড়তো মানে হাঁচি কাশির সময় আরো কিছু উপসর্গ আছে। তাই সে ব্লাড টেস্ট করে জানতে পারে। এই একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া মারাত্নক এবং জলদি চিকিৎসা শুরু করতে হয়। ধ্রুবের সেকেন্ড স্টেজে এসেছে। ডাক্তার বলেছে বেশিদিন হয়নি এই স্টেজে এসেছে। এখনো চিকিৎসা শুরু করেনি। এই সপ্তাহে সে আমেরিকা যাবে। তার পরিবারকে সবটা জানিয়েছে এবং তাদের সাথে এটাও বলেছে আয়ানার সাথে বিয়েটা ভেঙে দিতে। কারন ধ্রুব তার অনিশ্চিত জীবনে তার ধ্রুবতারাকে এনে আলো কেড়ে নিতে চায়না। ধ্রুব জানে সবার জীবন অনিশ্চিত তবে তারটা তো সে জানে, বাকিদেরটা তো জানে না।

আয়ানা ধ্রুবদের বাড়িতে আসে। সাতদিন ধরে ধ্রুব দেখা করছে না। ধ্রুবের ফ্রেন্ডকে কল করেছিলো সে জানিয়েছে ধ্রুব বাড়ি চলে গেছে। আয়ানা তাই এখানে এসেছে।

আয়ানা ধ্রুবের মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে ধ্রুব কই জানতে চাইলে উনি ছাদের কথা বলে দেয়। আয়ানা ছাদে যাবার উদ্দেশ্য চলে যায়। ধ্রুবর মা ওড়নাতে মুখ চেপে ঢুকরে কেঁদে উঠে। সে ভাবে, তার ছেলে এই কঠিন রোগ মোকাবেলা করে করে ক্লান্ত আর এখন নিজের হৃদমাজারে থাকা ভালোবাসার মানুষটাকেও দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

আয়ানা ধ্রুবের পেছোনে দাঁড়ায়। ধ্রুব বেখায়ালে আছে তাই কারো উপস্থিতি বুঝতে পারে না। তার মন এখন তার ধ্রুবতারাকে ভাবছে। বাড়ির পেছোন সাইডে পশ্চিম দিক তাই সেদিকে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শে পেছোন ফিরে। পেছোন ঘুরে আয়ানাকে দেখে সে ভাবে এটা হয়তো তার কল্পনা! তাই সে ঘোরের মাঝে মলিন হেসে বলে,

–ধ্রুবতারা! তুমি এসেছো? কেনো এসেছো? আমি তোমাকে আমার অন্ধকার জীবনে জড়াতে চাই না। তুমি ভালো থাকো সুখে থাকো অন্যকারো আকাশের তারা হয়ে। আমার আকাশ ভগ্ন এখন। সেখানে তারারা তাদের আলো হারিয়ে ফেলবে।

আয়ানা ধ্রুবের কথার সারমর্ম বুঝতে পারছে না। সে তো তার উত্তর জানতে এসেছে। এসেই ধ্রুবের এরকম কথা শুনবে ভাবেনি। কি হয়েছে তার ধ্রুবের? কি কারনে এতো বিষন্নতা? ধ্রুব কি কারনে তার সাথে এমন করছে বুঝতে পারছে না। আয়ানা হুট করে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে। তার মনে একরাশ মেঘ জমে আছে তার এই মানুষটার জন্য। কেনো অবহেলা করছে? আবার বোনের চিন্তায় বারংবার মন ভয়ে আশংকিত।

আয়ানার হঠাৎ বুকে আছড়ে পড়া ও অশ্রুজলে বুকের খানিকটা ভিজে যাওয়ায় ঘোর ভাঙে ধ্রুবের। সে বুঝতে পারে এতোক্ষন যাকে কল্পনা ভাবছিলো সেটা বাস্তব ছিলো। ধ্রুবের নিজের অসুস্থতার কথা মনে পড়ে যায়। তাই এক ঝটকাতে আয়ানাকে নিজের থেকে আলাদা করে।

চলবে ইনশাল্লাহ,
ছোট ও দেরির জন্য দুঃখিত। আমার দুইটা কুইজ ছিলো আজকে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here