প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০৬

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব- ৬
আয়ানা আচম্বিত দৃষ্টিতে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব শক্ত কন্ঠে বলে,
–মানা করেছিলাম না? আমার কাছে আসতে মানা করেছিলাম তো! দেখো আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ যাও এখান থেকে।

আয়ানা অশ্রুসিক্ত চোখে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবের নিজেরো খারাপ লাগছে তবে তার হাতের বাহিরে সব। সে চাইলেও যদি নিয়তি না চায় তো কিছুই সম্ভব না। আয়ানাকে এভাবে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব গম্ভীর ভাবে কন্ঠে বিরিক্তিকর ভাব এনে বলে,

–যাও তো প্লিজ! আমি একা থাকতে চাই। বিরক্ত করো না। নিজের বাসায় যাও।

আয়ানা হতভম্ব। আজ কিনা সে বিরক্তির কারন ধ্রুবের! কই এতোগুলা বছরে তো কখনো বিরক্তির কারন ছিলো না। আয়ানা আর দাঁড়ায় না। তার কাছে সবকিছু অসহ্য লাগছে। সে তার বোনের মতো এতো শক্ত থাকতে পারে না। প্রচন্ড আবেগময় তার মন। আয়ানা চলে গেলে ধ্রুব আপন মনে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। সন্ধ্যা পেরিয়ে যায় আয়ানার বাড়ি ফিরতে। বাড়ি ফিরে দেখে সবাই চলে এসেছে। আয়ানা নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর এক নাগারে চারটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চারটা স্লিপিং পিল নিলে মানুষ মরে না তবে ঘুমের মধ্যেই কিছু হতে পারে। যেমন, স্ট্রোক!

মিসেস নূর রাতের খাবার খেতে মেয়েকে ডাকতে আসে তবে আয়ানা দরজা খুলে না। সে ভাবে হয়তো বোনের জন্য মন খারাপ করে ঘুমিয়ে গেছে। বাড়ির সবাই চিন্তিত। নীড় মেইলের মাধ্যমে জার্মানিতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। সবাই চায় আরোহী সুস্থ থাকুক।
________

সকালেও যখন আয়ানাকে ডাকার পর দরজা খুলছে না তখন সবাই ভয় পেয়ে যায়। সকাল ৯ টা বাজে তাও কি ঘুম! আর প্রতিদিন তো ছয়টার আগেই উঠে। মেঘ দরজা ভাঙতে বললে মেঘ ও নীড় দুই ভাই মিলে দরজা ভাঙে। মিসেস নূর ভয়ে কাঁদতে থাকে। তার দুই মেয়েকে নিয়েই তার ভয়। দরজা খুলার পর মিস্টার মুনতাসির সবার আগে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়ের মাথাটা নিজের কোলে নেয়। মিসেস নূরকে সাদিয়া সামলাচ্ছে আর সাবিলা আয়ানার চোখ মুখে পানি দিচ্ছে। নীড় গিয়ে বোনের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখে নিঃশ্বাস চলছে তবে ধীর গতিতে। মেঘ রুমে ঢুকে স্লিপিং পিলের পাতাটা দেখেই দৌড়ে গাড়ি বের করতে চলে গেছে। নীড় তার বোনকে কোলে তুলে নেয়। মিসেস নূরকে সাবিলা ও সাদিয়াকে বলে যায় সামলাতে। মিস্টার মুনতাসির ওদের সাথে যায়।

সরোয়ার্দি হসপিটল বাড়ি থেকে আধ ঘন্টা দূরত্বে। মেঘ হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে ২০ মিনিটে পৌঁছে যায়। মিস্টার মুনতাসির পেছোনের সিটে মেয়েকে বারবার জাগানোর চেষ্টা করছে।
সন্তান যদি বুঝতো, তাদের ভুল কিছু করাতে বাবা-মায়ের কি হাল হয়। মিস্টার মুনতাসির চোখের পানি মুছছে বারবার।

ধ্রুব নিজের কেবিনে বসেছিল তখন ধ্রুবের এক বন্ধু এসে ওকে আয়ানার খবরটা দেয়। ধ্রুবের মাথা তো পুরো হ্যাং মেরে আছে। যার সুখের জন্য সে নিজেকে তার জীবন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে সে নিজেই নিজের জীবন নিয়ে খেলা করছে!

এক ঘন্টা পর আয়ানার জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফেরার পর সামনে তার মাকে দেখে উঠে বসে। তারপর বলে,

–আমি এখানে কেনো?

মিসেস নূর কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–তুই স্লিপিং পিল কেনো নিয়িছিলি? তোর বোনের কোনো খোঁজ নেই আর তুই এগুলো কেনো করছিস? আমাদের কি হাল হবে বুঝিস তুই!

–আমার কড়া ঘুম প্রয়োজন ছিলো তাই চারটা মেডিসিন খেয়ে ফেলেছিলাম। এতে আমি ২০-২৪ ঘন্টা ঘুমাতাম।

সবাই এসে কেমন আছে? ও শাশন করে কেবিন ছেড়ে যায়। তখন ধ্রুব কেবিনে ঢুকে দরজা লক করে আয়ানার কাছে এসে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে তারপর বাহু খামচে ধরে বলে,

–খুব মরার শখ তোমার? তো বিষ খেতে! স্লিপিং পিল কেনো খেলে? জীবনের মায়া তো তোমার নেই তাইনা। কেউ তার জীবনের সল্প সময়ের জন্য আফসোস করে আর তুমি হেলাফেলা করো!

আয়ানা থাপ্পড় খেয়ে অবাক হয়না। কিন্তু আশ্চর্য লাগে তার। কাল যে ছেলে তাকে বিরিক্তিকর ভেবে চলে যেতে বলল আর আজ সেই এভাবে শাশন করতে এসেছে!

–কি হলো? কথা বলো? চারটা স্লিপিং পিলের কি দরকার ছিলো। সর্বোচ্চ দুইটা খেতে পারতে। সুইসাইড কেনো করতে হবে তোমার? আমি ছাড়া কি তোমার নিজের কোনো পরিবার নেই? আমি না থাকলেও তোমার পরিবার তো আছে।

ধ্রুবের লাস্ট কথাগুলো আয়ানার ভালো লাগে না তাই সে বলে,

–ডাক্তার ধ্রুব, আই এম টোটালি ফাইন নাও। আমি নিজেও ডাক্তার। আমি তো জানি যে চারটা খেলে কি রিস্ক থাকে। সবটাই জানি। আপনাকে বলতে হবে না। আপনি বরং আপনার কাজে যান। আমার পেছোনে টাইম ওয়েস্ট করতে হবে না। আমার পরিবার আছে এখানে। সো ইউ মে গো নাও।

ধ্রুব আচমকা হাতের বাঁধন শিথিল করে দেয়। এরপর কেবিন থেকে চলে যায়।

শুভ্রর পরিবারের সবাই হসপিটালে চলে এসেছে আয়ানাকে দেখতে। শুভ্রও একবার দেখে এরপর রোগী দেখতে চলে গেছে। দুপুর যখন গড়িয়ে যাচ্ছে তখন শুভ্রর কাছে অচেনা মেইল থেকে আরেকটি ভিডিও আসে। শুভ্র তখন লাঞ্চ ব্রেক থেকে লাঞ্চ ও আয়ানার কেবিন থেকে সবার সাথে সাক্ষাৎ করে ওয়ার্ড ভিজিট করে ৩.৩০ নাগাদ নিজের কেবিনে ফিরেছে। শুভ্র ভিডিওটা দেখে রাগে চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।

ভিডিওটা ছিলো হোটেল রুমের। সেদিন কি কি হয়েছিলো সব ভিডিওটাতে আছে। লাঞ্চ ব্রেকের পর ওয়ার্ড ভিজিট করে বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত তার কোনো রোগী নেই তাই ভিডিওটা দেখে।

শুভ্র তৎক্ষণাৎ আয়ানাদের কাছে যায়। কিছুক্ষণ পর আয়ানাকে রিলিজ করে দিবে। সবাইকে ভিডিওটা দেখায় তারপর জেসিকাকে নার্স মারফত ডেকে আনে। জেসিকা আসা মাত্র মেঘ সবার আগে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। জেসিকা হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে আছে। শুভ্রও এরপর আরেকটা থাপ্পড় দেয়। মেঘকে সাবিলা অনেক কষ্টে সামলায়। নীড় মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে ইচ্ছুক না কারন শব্দবাণ তার জন্য পারফেক্ট।

সবাই চাচ্ছে ব্যাপারটা বাড়িতে সমাধান হোক। হসপিটালে সিনক্রিয়েট করাটা সমীচীন না।

আয়ানার রিলেজের সাথে সাথে সবাই মানে ধ্রুব, জেসিকা এরাও সাথে যায়। সবাই চলে গেলে আড়াল থেকে একজন বাঁকা হাসে। সেই মানুষটাই শুভ্রকে এসব ভিডিও দিয়েছে। সেই মানুষটা এরপর কাউকে ফোন করে,

–আমার কাজ শেষ। কালকে আয়ানা কথাটা বলার পরেই লাস্ট এই ভিডিওটা শুভ্রকে দিতে হতো। আমি দিয়ে দিয়েছি।

অপরপাশের ব্যাক্তি শুনলো। এরপর যে ভিডিও সেন্ড করেছে সে আবার বলে,

–জেসিকা ভেবেছিলো, সে ভিডিও ডিলেট করে দিয়ে নিজের বিপক্ষের প্রমান মিটিয়ে ফেলেছে। হাহ! ওদের ফেক ভিডিও বানানোর পরে সেন্ড করার পর যখন রেষ্টুরেন্টে তারা দেখা করতে যায় তখনি তাদের সব পরিকল্পনা জানতে পেরে যাই। আর হোটেলের ভিডিওটা কালেক্ট করতে কষ্ট করতে হয়েছে কারন হোটেল ম্যানেজমেন্ট কাউকে সিসিটিভি ফুটেজ সহজে দেয়না। আমরা কালেক্ট করার পর মোটা অংকের টাকা ও রেপুটেশনের ভয় দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেই তাই জেসিকারা জানতেও পারেনি যে কেউ তাদের ডিলিট করানোর আগেই সেটা কপি করে নিয়ে নিয়েছে।

ফোনের অপরপাশ থেকে এক নারী কন্ঠের হাসি শোনা যায়। এরপর সেই নারী কন্ঠের মালকিন বলে,

–ওদের সবাই এবার নিজের অপকর্মের শাস্তি পাবে। ডাক্তারদের হয়তো কয়েক বছরের লাইসেন্স কেড়ে নিবে। আর বেচারা নিউ রেজিস্টার ডাক্তার গুলা! এবার ওদের ক্যারিয়ারের শুরুতেই বড় একটা ধাক্কা।

ভিডিও পাঠানো মানুষটা বলে,
–এরপরের কাজ?

–উমম। সেটা পরে জানাচ্ছি। ততোক্ষণ কিছু করার দরকার নেই। ওদের শাস্তি গুলো এনজয় করো। ওদের অনুতপ্ত মুখশ্রীর ভিডিও কিন্তু অবশ্যই পাঠাবে। আমি তখন সুখ নিদ্রাতে যাবো কিছুক্ষণের জন্য।

ফোনের দুইপাশেই হাসির রোল পরে যায়।

চলবে ইনশাল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here