প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০৭

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব- ৭
আয়ানাদের বাড়িতে যায় সবাই। জেসিকাকে এরপর ভালো করে চেপে ধরার পর সে মুখ খুলে সব স্বীকার করে। প্রথমে চুপ করে থাকলেও যখন সাদিয়া গিয়ে চুল মুঠ করে ধরে তখন সে ভয়ে সব বলে দেয়। মিস্টার রিয়াদ নিজের বোনের মেয়ের সামিলের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। রিয়ানা সব শুনে রাগে কোনো রকম রাগ সংবরণ করে তার ফুপিকে ও ফুফাতো বোনকে এখানে আসতে বলে।

মিস্টার রিয়াদ তার বোনকে আসার পর বলে,
–আপা, তোমার মেয়ে যে এতো নিচু কাজ করবে আমি ভাবতে পারিনি। ওর আরোহীর সাথে কিসের শত্রুতা? আরোহী তো তোমাদের সাথে কিছু করেনি! ঘরের মানুষ যদি শত্রু হয়ে যায় তবে কাকে বিশ্বাস করবো বলতে পারো?

মিস্টার রিয়াদের বোন চমকে যান। বলা বাহুল্য, তিনি তার মেয়ের এমন কর্মকাণ্ডের কথা জানতেন না। সে আরোহীকে পছন্দ করেন না এবং শুভ্রর সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু শুভ্র ও আরোহীর বিয়ের পর সে চিন্তা বাদ দিয়েছেন। তিনি তার মেয়ে সামিরার দিকে তাকালে সামিরা মাথা নিচু করে ফেলে।

প্রথমে সামিরা স্বীকার করতে চাইছিলো না কিন্তু পরে বাধ্য হয় কারন যে ব্যক্তি মেইল পাঠিয়েছেন সে ওদের পাঁচ জনের রেস্টুরেন্টে তৃতীয়বার সাক্ষাৎের অডিও রেকর্ড এবং ওই রেস্টুরেন্টের সেই দিনের ফুটেজ ক্লিপ আবারো মেইল করে।

শুভ্র সহ বাকিরা এটাই বুঝতে পারছে না যে কে মেইল পাঠাচ্ছেন?

মিস্টার রিয়াদ নিজে পুলিশে ইনফর্ম করেন। তখন তার বোন তাকে অনেক মিনতি করে যাতে তার মেয়েকে ছেড়ে দেয় কিন্তু মিস্টার রিয়াদ বলে দিয়েছেন,

–আমার ভাগ্নি বলে তাকে ছেড়ে দিবো তা হবে না। ওরা পাঁচ জন যা করেছে তা ঘৃণ্য। ওদের শাস্তুি পেতে হবে।

পুলিশ ঘন্টা খানেকের পর এসে প্রমান সহ সামিরা ও জেসিকাকে নিয়ে যায় ও সাদাদ ও তার বন্ধুদের হসপিটাল থেতে এরেস্ট করে।

ওদের পাঁচ জনকে জেলে বেশিদিন রাখবে না। শুধু তিন মাস সশ্রম কারাদণ্ড। জেসিকা ও সাদাদদের ডাক্তারের লাইসেন্স কেড়ে নিয়েছে এক বছরের জন্য। ওরা চার জন পৃথিবীর কোনো দেশেই এই এক বছর ডাক্তারি প্রেকটিস করতে পারবে না।
আর সামিরা তো মেয়ে! তার জন্য একটা ভালো বিয়ের ঘর এসেছিল। আর সেই বিয়ের পাত্র একজন মেজিস্ট্রেট। সে তৎক্ষণাৎ সব জানার পর বিয়ে ভেঙে দিছে। পুরা এলাকা সামিরার জেলে যাবার কথা রটে গেছে। সামিরার মা-বাবা, ভাই-ভাবি লজ্জায় মানুষের দিকে তাকাতে পারছে না। জেসিকা যেহেতু এই দেশের স্থায়ী বাসিন্দা না তাই ওর বদনাম হলেও সমস্যা নেই তবে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলে তার কি হবে তা সে জানে না। সাদাদ ও সাদাদের বন্ধুদের পরিবারও নিজেদের ছেলেদের এতো অধপতন মানতে পারছে না। সাদাদদের মেডিকেল কলেজ থেকে তাকে শেষ বারের মতো ওয়ার্নিং দিয়েছে।

সবাই সবার শাস্তি পেলো কিন্তু শুভ্র! তার তো যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। তার রুহি, তার তেজস্বিনী হারিয়ে গেছে তার থেকে সঙ্গে অনাগত ভালোবাসার অংশকে নিয়ে। শুভ্রকে সবাই মিলে শান্তনা ছাড়া আর কিছু তো দিতে পারবে না।

মিসেস নূর ঢুকরে কাঁদছে। মিস্টার মুনতাসির নিজের স্ত্রীকে শান্তনা দিচ্ছে তবে তারও যে হৃদয় পুড়ছে মেয়ের জন্য। সবাই এই জঘন্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে বেরিয়ে এলেও আরোহীর শূন্যতা তাদের ঘিরে ধরেছে।

_______কেটে যায় দেড় সপ্তাহ। সবকিছু যেমন আছে তেমন চলছে। আয়ানার সাথে ধ্রুবের কথা হয়না। আয়ানা সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে। সারাদিন হসপিটলে থাকে বলে টের পায় না তবে রাত গুলে কাটে বর্ণনাতীত কষ্টে। যেখানে প্রতিরাতে ধ্রুবের সাথে কথা বলা তার অভ্যাস সেখানে আড়াই সপ্তাহ ধরে ধ্রুব ইগনোর করে। দেড় সপ্তাহ আগে হসপিটালেই লাস্ট কথা।

রাতের দিকে শুভ্র আয়ানাকে ফোন করে জানায় যে সে একটু আগে জানতে পেরেছে,

“ধ্রুব নাকি আমেরিকায় স্কলারশিপ পেয়েছে। তাই আজ রাতেই ধ্রুবর ফ্লাইট আমেরিকার। ”

আয়ানা বাকশূন্য হয়ে যায়। আয়ানা জানতো যে ধ্রুবের বাহির থেকে পিএইচডির ইচ্ছা ছিলো তবে এতো জলদি না। আরো দুই বছর পর যাবে বলেছিলো। ওদের বিয়ের পর দুজন একত্রে যাবে। কিন্তু ধ্রুবের কিছুদিনের ইগনোরেন্স ও হঠাৎ না জানিয়ে আমেরিকায় চলে যাওয়া আয়ানার কাছে কেমন যেনো লাগে। সে তৎক্ষণাৎ এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায়।

রাত প্রায় ৯ টার বেশি বাজে,,
আয়ানাকে এতো রাতে বাহিরে যেতে দেখে নীড় ওর পেছোনে যায়। নীড় ড্রয়িংরুমে ছিলো। সাদিয়া তাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে কিসের জন্য জানে না সে। মেঘ কেও সাবিলা বের করে দিছে তাই মেঘ ভাবলো দুই ভাইকে যেহেতু তাদের বউরা বের করে দিয়েছে তাই সামনের রেস্টুরেন্ট থেকে নিজে গিয়ে গ্রিল চিকেন ও পেপসি কিনে আনবে। দুই ভাইকে এক ঘন্টার জন্য বের করে দিয়েছে তাদের বউরা। নীড়কে এগুলো খাবার জন্য আনার কথা জানালে নীড়ও সম্মতি দেয়। মেঘ বেড়িয়েছে ১৫ মিনিট হয়ে এলো।

নীড় আয়ানার পেছোনে গিয়ে যখন দেখে আয়ানা গাড়ির দরজা ধরে টানছে মানে চিন্তায় তার ভাইদের বা বাবার কাছ থেকে গাড়ির চাবি চাইতে মনেই নেই। নীড় বোনের এরূপ অবস্থা দেখে বিচলিত হয়। নীড় এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে নিজের রুমের দরজা জোরে ধাক্কাতে লাগে। ভিতর থেকে সাদিয়া বলে যাচ্ছে,

–তোমাকে না বললাম ১ ঘন্টা অপেক্ষা করো। ১৫ মিনিট হলো আর তোমার তর সয় না তাই না!

–আরে রাখো তোমার ১ ঘন্টা। আগে আমাকে গাড়ির চাবি দিয়ে যা মন চায় করো। কিচ্ছু বলবো না।

নীড়ের গাড়ি চাবি চাওয়াতে সাদিয়ার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে বলে,
–কেনো কেনো? গাড়ির চাবি দিয়ে কি করবা? তোমার বাহানা আমি শুনবো না। ১ ঘন্টা মানে ১ ঘন্টাই।

নীড়ের এবার মেজাজ গরম হচ্ছে। একটু আগে বোনকে কাঁদতে কাঁদতে গাড়ির দরজা ধরে টানাটানি দেখে সে আন্দাজ করে ফেলেছে যে কিছু হয়েছে। এতোক্ষন দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে সে মেঘকে মেসেজ করে দিয়েছে যে,

“যদি বাড়ির কাছে এসে পরে থাকিস তো দেখ আয়ু কোন দিকে যাচ্ছে। ”

নীড় কন্ঠে গম্ভীর্যতা এনে ভরাট গলায় বলে,
–দরজা না খুললেও দরজার নিচ দিয়ে চাবিটা পাস করো। এরপর যা মন চায় করো।

সাদিয়া গম্ভীর পূর্ণ কন্ঠ শুনে তাই করে। নীড় গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে দেখে আয়ানা নেই সেখানে। সে গাড়িতে উঠে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গেট থেকে বেরিয়ে দারওয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে দিক বলে দেয়। নীড় প্রথমে মেঘকে পথিমধ্যে পায় তারপর তাকে তুলে নিয়ে কিছুক্ষণ পর মেইন রাস্তায় আয়ানাকে পায়। আয়ানা গাড়ি খুজছে। কিন্তু তার কাছে না আছে মোবাইল আর না আছে টাকা।

দুই ভাই গাড়ি থেকে নেমে আয়ানাকে গাড়িতে এনে বসায়। এরপর পানির বোতল এগিয়ে দিলে আয়ানা পানি খেয়ে হাপাতে থাকে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সব বলে। মেঘ এবার মাথা গরম না করে কেমন যেনো হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত। নীড়ও ভাবছে কেনো এমন করছে! মেঘ বলে,

–আচ্ছা, ধ্রুব তো এর আগে কখনো এমন করেনি। হঠাৎ করে কি হলো? তোকে ধ্রুবের সাথে দেখলে আমার ভরসা লাগে। যে আমার বোন ঠিক আছে। সেদিনো হসপিটালে ধ্রুবকে আমি তোর জন্য কাঁদতে পর্যন্ত দেখেছি। ছয় বছর ধরে ওরে আমরা চিনি। কোনো দিন তুই রাগ করে থাকলে ওর অবস্থা সেদিন কাহিল হয়ে যেতো। সেই ধ্রুব তোকে ইগনোর করছে? আমার তো নিজের ফুফাতো ভাই শুভ্রর থেকে ধ্রুবকে বেশি বিশ্বাস হয়। রক্তের সম্পর্কের থেকেও মাঝে মাঝে আত্নার সম্পর্ক বড় হয়ে যায়।

নীড় বলে,
–এসব বাদ দে এখন। আগে এয়ারপোর্ট চল। রাত ১২ টায় আমেরিকার ফ্লাইট থাকে। এখন সাড়ে নয়টার বেশি বাজে।

ওরা তিনজন রওনা হয়। নীড় ড্রাইভ করছে আর মেঘ পেছোনে আয়ানাকে নিয়ে বসে আছে।
সাড়ে এগরোটার আগেই পৌঁছে যায়। ধ্রুব তখনো বাহিরের ওয়েটিং রুমে আছে। আয়ানা দৌড়ে যায় ধ্রুবের নাম জোরে উচ্চারন করে। ধ্রুব হঠাৎ আয়ানার ডাকে থমকে পেছোন ঘুরে সাথে ধ্রুবের পরিবারো। ধ্রুবের পরিবারের সবার চোখে পানি। তারা তো জানে ধ্রুবের কি জন্য আমেরিকায় যাওয়া।

এয়ারপোর্টের ফ্লোর অনেকটা পিচ্ছিল। আয়ানা ধ্রুবের কাছে যেয়ে পা পিছলে পরে যেতে নিলে ধ্রুব এগিয়ে এসে ধরে ফেলে।

চলবে ইনশাল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here