প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০৪

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৪
আরোহী ফ্লাইটে উঠার আগে কাউকে মেসেজ করে,
” Done. Now its his turn. Let’s see! ”

জেসিকা ও বাকিরা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। সাদাদ বলে,
–এই আরোহী কই গেলো বুঝলাম না। ডিভোর্স হয়ে গেলো সুবিধা হতো কিন্তু সে উধাও। আর আমরা যে ওদের রুমে মাইক্রোচিপ লাগিয়েছি তার কোনো কাজই হলো না। আরোহী তো ওই রুমে ছিলোই না। আমাদের ভাগ্য ভালো তাই হয়তো আরোহী শুভ্রর সাথে এসব বিষয়ে কথা বলেনি। নাহলে এই মেয়ে প্রচুর চালাক ঠিক বুঝে যেতো।

সামিরা চিন্তিত ভঙ্গিমায় বলে,
–আরোহী আবার বুঝে গেলো নাতো? মানে নরমালি কোনো ওয়াইফ এতো শান্ত থাকে না। আরোহী এতো নিরব কেনো? হাঙ্গামা তো হলো না। চুপচাপ সব মেনে ছেড়ে চলে গেলে!

সাদাদের মনেও এটাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো তবে জেসিকা বলে,

–আরোহী তো প্রথম থেকেই শুভ্রর উপর কোনো জোর করেনি। করলে কি বিয়ের ২ বছর অপেক্ষা করে ভালোবাসা পাবার জন্য! নিজের বোনকে ভালোবাসে জেনেও চুপ করে ছিলো। তো এখন এগুলোতে চুপ করে থাকতেই পারে। আর আমি তো কিছুদিন আগে ওর কাছে কান্না করে মাফ চেয়েছি সাথে কিছু সাজিয়ে বলেছি যে শুভ্র আমার সাথে ফিজিক্যাল হয়েছিলো নেশার ঘোরে। এরপর থেকে প্রায় হতো। আরোহীর আর কিছু বলার থাকে না এতে।

বাকিরাও এই কথা শুনে আর কিছু বলে না। তারা নিজেদের কাজে সফল।

_______এদিকে শুভ্র কাল রাত নয়টার পর হসপিটাল থেকে ফিরে সেই যে আরোহীকে কতো জায়গায় খুঁজতে গেছে তার ইয়াত্তা নাই। দুই পরিবারের সবাই আরোহীর চিন্তায় আছে। মিসেস নূর তো মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বেহাল দশা। সাদিয়া ও সাবিলা শ্বাশুড়িকে সামলাচ্ছে। মেঘ, নীড় ও মিস্টার মুনতাসির সবাই আরোহীকে খুঁজছে। উনারা এয়ারপোর্টেও খবর নিয়েছিলো তবে ইফানের রিকোয়েস্টে এবং আরোহীর রিকোয়েস্ট তারা বলেনি। আরোহীর খালারাও চিন্তিত। উনারা বোনের বাসায় সকালে যাবে। মিস্টার রিয়াদও খুঁজেছে। রিয়ানা খবর পেয়ে মায়ের কাছে চলে এসেছে। এখন দুপুর ২ টা। বিধ্বস্ত অবস্থায় শুভ্র সব জায়গায় খুঁজে এসেছে। মিসেস কিয়ারা দরজা খুলে ছেলের এরূপ অবস্থা দেখে তার বুকটা ধক করে উঠে। শুভ্র ভিতরে এসে সোফায় বসে পরে। শূন্য দৃষ্টিদে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মিসেস কিয়ারা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি ছেলেকে দেয় সাথে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মায়ের সংস্পর্শে এসে শুভ্র মাকে জড়িয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠে। জড়ানো স্বরে শুভ্র বলতে লাগে,

–কেনো চলে গেলো ও? কোথায় গেলো? রুহি আমাকে ছেড়ে কেনো গেলো মা? কি করেছি আমি? ওর শেষে বলে যাওয়া কথাটার মানে কি মা?

মিসেস কিয়ারা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। ছেলেটা তার ভালোবেসে কষ্টই পেয়ে যাচ্ছে।
শুভ্র মাকে ছেড়ে নিজের রুমে যায়। এরপর বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে আরোহীর চিঠিটা বের করে। চতুর্থ বারের মতো চিঠিটা পড়তে লাগে।

প্রিয় শুভ্র শান,
আমাকে হয়তো খুঁজবেন তবে পাবেন না। সইচ্ছাই যে আড়াল হয় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশি কিছু লিকতে ইচ্ছা করছে না। তবে বলবো,
” আজ আঁধার ঘনিয়েছে ওই শুভ্র আকাশে,
রোদ্দুর লুকিয়েছে মেঘের আড়ালে। ”

আপনার আশেপাশে কিছু আছে যা আমাদের অন্তরাল। যেদিন সেটা দূর করতে পারবেন সেদিন শুভ্র আকাশে আবারো রোদ উঠবে।

একটা কথা এই চিঠি যেনো আমাদের দুজন ব্যাতিত কেউ না জানে।

ইতি
আপনার রৌদ্রিতা রুহি।

শুভ্রর কিছু বুঝতে পারছে না। সে কি দ্বিতীয়বারের মতো নিজের ভালোবাসা হারাতে বসেছে!

_______
এক সপ্তাহ হলো আরোহী জার্মানিতে গেছে। জার্মানি পৌঁছে আরোহীর সর্বপ্রথম লক্ষ্য কোনো এক্সিডেন্ট কেস খুঁজা। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু মাত্র। শীত আসতে আরো আড়াই মাস বাকি জার্মানিতে। তখন তার প্রেগনেন্সির ছয়মাস হবে।

শুভ্রর এই এক সপ্তাহে বেহাল দশা। হসপিটালে বলেছে সে তার ওয়াইফ মিসিং তাই সে খুঁজছে। কোনো কাজ করেনি
সে। আরোহীকে খুজেছে আর রাতের বেলা ব্যালকনিতে বসে বসে আরোহীর কথা ভেবে আঁধার আকাশ দেখে গেছে। দুইদিন হলো সিগেরেট খাচ্ছে।

জেসিকা আজ শুভ্রর রুমে এসেছে যাতে শুভ্রকে স্বান্তনা দিতে পারে আর শুভ্রকে নিজের দিকে আনতে পারে।
কালও আসতে চেয়েছিল তবে শুভ্রর রুম বন্ধ ছিলো তাই পারেনি। আজকে দরজা খোলা। জেসিকা যেয়ে ব্যালকনিতে শুভ্রর পাশে বসে হাত থেকে সিগেরেটটা ফেলে দেয় এতে শুভ্রর ধ্যান ভাঙে। জেসিকা বলে,

–কেনো এই এক মেয়ের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? আরোহী তো নিজের জায়গা খুঁজে নিয়েছে। চলে গেছে কোথাও। তুমিও নিজের জীবনে মুভঅন করো। এমনও তো হতে পারে আরোহী কারো সাথে চলে গেছে! কারো সাথে একস্ট্রা এফএয়ার ছিলো! তোমাকে ভালো লাগছে না বলে চলে গেছে। তোমারো উচিত নতুন করে নিজেকে সুযোগ দেওয়া।

শুভ্র কথা গুলো শুনে রাগে জেসিকাকে জোর লাগিয়ে একটা থাপ্পড় দেয় এরপর জেসিকার দুইগালে একহাতের আঙুল দিয়ে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,

–ফারদার আমার সামনে বাজে বকবি না। সবাইকে নিজের মতো ভাবিস না যে বয়ফ্রেন্ড বিট্রে করার দুইদিন পর একজনের সহানুভূতি পেয়ে তাকে নেশার ঘোরে কাছে টানতে চাবি আর সে ছেলেও চলে আসবে। তোদের কাছে শারিরিক চাহিদাটা গুরুত্বপূর্ণ। তুই কি ভাবছিস আমি জানি না তোর বয়ফ্রেন্ড তোকে কেনো ছাড়ছে? সে প্রথমে লয়েল ছিলো তোর প্রতি। এরপর তুই তার সাথে ফিজিক্যাল হবার পর ওই হসপিটলের আরো সিনিয়র কয়েকজনের সাথে বিছানায় গিয়েছিস পরিক্ষায় পাশ করার জন্য। যতোটা সাবজেক্টে প্রফে খারাপ হতো সব গুলা প্রফেসরের সাথে গিয়েছিস হয় তারা তোর ইঙ্গিতে সায় দিয়েছে আর নয়তো কয়েকজনকে ড্রাগ দিয়ে নেশার ঘোরে তারপর নিতি। এটা জেনেই জোসেফ তোর সাথেও সেম কাজটা করেছে। মাথায় লাগছে তাইনা? আমি কিভাবে জানলাম?

জেসিকা হতভম্বের মতো চোখ দুটো বড় বড় করে বসে আছে। শুভ্র আবারো বলে,

–জোসেফ আমাকে বলেছে এগুলা এবং পর্ণ সাইটে এক প্রফেসরের সাথে তোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো সেটা দেখার পর জোসেফ তোকে ছেড়েছে আর ওই জেনিফা আপুকে বিয়ে করার কথা ভেবেছে। এগুলো জানতে পারি তোর সাথে পরিচয় হবার দেড় বছর পর। জোসেফের সাথে ব্রেকআপের পর তুই ব্ল্যাকমেইলড না হলে ওগুলো করতি না তবে নিজের সবকিছু নষ্ট তুই নিজে করেছিস। এখনে যদি তুই তোর কথা বলতে আসিস তো আই এম স্যরি। কোনো প্রস্টিটিউটও তোর থেকে ভালো কারন তারা বাধ্য ছিলো বা প্রতারনার শিকার হয়ে সেটা হয় আর তুই স্বইচ্ছায়। আরেকটা কথা আরোহীর চলে যাবার পেছোনে যদি তোর হাত থাকে তো তোকে আমি ছাড়বো না!

জেসিকা ঘামতে থাকে। তারপর সেখান থেকে উঠে চলে যায়।

জেসিকা চলে যাবার পর শুভ্র কাল রাত ১২ টায় তার কাছে যে দুইটা ভিডিও আসে সেই মেইলটা ওপেন করে। ভিডিও দুইটাতে মানুষের চেহারা বাদে সব ব্লার করা। দুইটা একই ভিডিও তবে ছেলের ফেসে একটাতে জোসেফের ফেস আর আরেকটাতে শুভ্রর! মেয়ের ফেসে দুইটাতে জেসিকা। মেইলে এটাও লেখা,,
” আরোহীর আড়াল হবার একটা কারন। ”

মেইলটা কে করেছে তা শুভ্র জানে না তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছে জেসিকা কিছুটা হলেও ইনভলব এতে। এখন শুভ্র বাকি কারন গুলো জানার চেষ্টা করবে। এখন অচেনা মেইলকারি থেকে ক্লু এর আশায় আছে।

সেপ্টেম্বর মাস শেষ হয়ে এলো। আয়ানা সকাল সকাল বিধ্বস্ত অবস্থায় শুভ্রদের বাড়িতে আসে এরপর শুভ্রর রুমে যেয়ে আক্রোশের সাথে দরজায় কড়াঘাত করতে থাকে কারন দুইদিন ধরে আরোহীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আর আজ সকালে খবর পেয়েছে আরোহী যেই মেডিকেলে গিয়েছে সেই এড়িয়াতে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে এবং অথরিটি আজকে বলেছে সেখানে তাদের দুইজন কর্মি ছিলো যার মধ্যে একজন প্রেগন্যান্ট ছিলো। দুর্ঘটনা ঘটেছে বিস্ফোরণজনিত কারনে। নিহতদের আইডেন্টিফাই করা যায়নি।

শুভ্রর ভোরে নামাজের পর চোখ লেগে আসছিলো। হঠাৎ শব্দে ঘুম ছুটে যায়। দরজা খুলার পর আকস্মিক ধাক্কায় শুভ্র ফ্লোরে পরে যায়। আয়ানা চিৎকার করে বলে,

–শুধুমাত্র আপনার জন্য মিস্টার শুভ্র আমার বোন এতোদূরে গেছে আর আজ দুইদিন আমি ওর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। যদি আমার বোনের কিছু হয় আই সোয়ের আই উইল কিল ইউ। আপনার লোক দেখানো দেবদাস গিড়ি ছুটিয়ে দিবো একদম। অন্য মেয়ের সাথে ফুর্তি করার সময় তো দেবদাস থাকিস না। তোর আর তোর জেসিকার এসব অবৈধ কাজের জন্য আমার বোন চলে গেছে। হোটেলে গিয়ে তোমরা তোমাদের কাজ করো তাইনা? আমি তোকে মেরেই ফেলবো।

আয়ানাকে সাবিলা গিয়ে আটকায়। আয়ানাকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে বাকিরাও আরেক গাড়িতে করে এখানে আসে।

জেসিকাও শব্দ পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে এসব শুনে ভয় পেয়ে যায় সেখান থেকে পালাতে নিলে সাদিয়া দেখে ফেলে আর ওরে ধরে ফেলে।

চলবে ইনশাল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here