প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০৩

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩
জেসিকা, সামিরা, সাদাদ ও তার দুই বন্ধু কফিশপে এসেছে। আজকে তারা নতুন পরিকল্পনা করবে। তখন সাদাদ বলে উঠে,

–এই আরোহীর জন্য আমি ও আমার বন্ধুরা একমাসের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলাম। এরে আমি তিলে তিলে মারবো। আমার মান-সম্মান নষ্ট করেছিলো!

জেসিকা কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
–তুমি কিন্তু আজও পুরো কাহিনী বললে না।
জেসিকার সাথে সাথে সামিরাও একই ইশারা করে। দুই জনের শোনার আগ্রহে সাদাদ বলে,

–আমি ও আমার বন্ধুরা স্কুল থেকে একসাথে। এর আগেও আমরা টাইমপাসের প্রেম করেছি। কারো সাথে ফিজিক্যাল ইনভলব হইনি তবে স্কুলের ছোট ছোট মেয়েরা যখন কাকুতি মিনতি করতো রিলেশন টিকানোর জন্য তখন মানুষিক প্রশান্তি লাগতো। মেডিকেলে ভর্তি হবার পর আয়ানা ও আরোহীর মধ্যে প্রথমে আয়ানাকে আমি দেখেছি। আসলে কাকে দেখেছি মনে নেই তবে দুইজনকে একত্রে দেখিনি। ড্রেস দেখে যে বুঝবো, একইদিনে মেয়েটা ড্রেস কেমনে পাল্টায় তারো জো নেই কারন সাদা এপ্রোন পরিহিত থাকতো। যেদিন আয়ানাকে ডাকি তখন নরম স্বভাবের আয়ানা আমার সামনে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। আর হ্যাঁ, আমরা তিন বন্ধু কিন্তু ওদের সিনিয়র ছিলাম ১ বছরের তবে রেজাল্ট খারাপ হয় ২য় বর্ষ প্রফে। তো আয়ানার ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার দারুন লাগে। আর সুন্দরী তো বটেই। তাই ডিস্টার্ব করতাম। বেশিদিন না মাত্র দুইদিন। আর কাকতালীয় ভাবে দুইদিনই আয়ানাই ছিলো। তৃতীয় দিন একসাথে দুইটা একই চেহারার মেয়ে দেখে ঘাবড়ে যাই পরে ওরাই বললো জমজ ওরা। সেদিন সকালেও তৃতীয় বারের মতো আয়ানাকে ডিস্টার্ব করেছিলাম। ডিস্টার্ব বলতে কিন্তু ফ্লার্ট! একটু রূপের বর্ণনা ও সামান্য স্ল্যাং। দুপুরে কান্নারত আয়ানা ও রণমূর্তি আরোহী আসে। আরোহী এসে অনেক কিছু শুনিয়ে দিয়ে যায় কিন্তু আমি তো বিমূঢ় ছিলাম রণমূর্তির রাগ ও রূপের তেজে! রূপ দুবোনের একই তবে ঝাঁঝ! এরপর থেকে আরোহীর সাথে ফ্লার্টিং। বন্ধুরা আয়ানার সাথে আর আমি আরোহীর সাথে। একদিন সকালে ক্লাস শুরুর আগে দুই বোন ছাড়া কেউ আসেনি। আসলে আমরা মানা করেছি আসতে মানে পাঁচ মিনিট পর আসতে বলেছি। তখন দুই বোনকে আমরা তিন বন্ধু একটু ভয় দেখাচ্ছিলাম কিন্তু মিনিট দুয়েক যেতেই প্রিন্সিপ্যাল হাজির! পরে জানলাম সবাইকে ওরা বলে রেখেছিল। আর আমাদের তিনজনকে সাসপেন্ড করলো একমাস। এরপর মাফ চাওয়াইছে।

সবটা শুনে সামিরা বলে,
–দোষ কিন্তু তোমাদের ছিলো!
জেসিকাও তাই বলে,
তখন সাদাদ বিরক্তি নিয়ে বলে,
–এখন কাজের কথায় আসি। আচ্ছা জেসিকা তোমার প্রথম বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোমার কোনো ভিডিও নেই? আই মিন টু সে রুমডেটের?

জেসিকা একটু ভেবে বলে,
–আছে। আমি ও সে দুজনেই দুইটা ভিডিও করেছিলাম। সেটা আমার পুরানো ফোল্ডারে আছে।

সাদাদ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
–ওহ গ্রেট। তোমার ওই প্রথম বয়ফ্রেন্ডের মুখের আদলে শুভ্রর মুখ বসিয়ে দিবো। আর ভিডিও থেকে ছবি নিবো সেগুলোতেও। কোনো সেলফি আছে? ওই ছেলের সাথে এবং অলসো শুভ্রর সাথে।

জেসিকা কিছুসময় ভেবে বলে,
–উম, শুভ্রর সাথে তো অনেক সেলফি আছে। ইভেন শুভ্র তুলেছে এমনও। হসপিটালে, মাঝেমাঝে জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেছি সেখানে। আর প্রথম বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রায় সব ছবি রাগে ডিলিট করে দিয়েছি। তবে ওই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু আছে।

সাদাদ “চলবে” বলে শয়তানি হাসি দেয়। তা দেখে বাকিরাও।

_____আরোহীর কাছে হসপিটলের ঠিকানায় একটা পার্সেল আসে। পার্সেলটা খুলে ভিতরে শুভ্র ও জেসিকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার ছবি। আরোহীর ভ্রু কুঁচকে আসে। ছবিগুলো ভালো তবে তাকে কেনো পাঠালো তা আরোহীর মাথায় ঢুকছে না। আরোহীর তখন একটু পরেই একটা সার্জারি আছে যেটাতে এসিস্ট ইন্টার্ন হবে সে। আরোহী নিজের লকারে ছবি গুলো রেখে দেয়। কেউ হয়তো জেসিকাকে নিয়ে শুভ্রকে ভুল বুঝছে তাই হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ছবি গুলো কালেক্ট করেছে। এই ছবি গুলো ফেসবুক ও ইন্স্ট্রাতে আছে।

এরও সপ্তাহ খানেক পর কিছু আপত্তিজনক ছবি আসে। আরোহীর তখন সন্দেহ হয়। এই ছবিগুলোর মানে কি! আর শুভ্র জেসিকার সাথে এতো ক্লোজলি কিসিং ছবি, জড়িয়ে ধরা ছবি এসব কেনো? অবশ্য প্রতিটা ছবিতে জেসিকাই কিস ও জড়িয়ে ধরেছে। এজন্য আরোহী ভাবে হয়তো জেসিকা ওয়েস্টার্ন মাইন্ডের তাই এগুলো। কিন্তু তাকে কেনো পাঠাচ্ছে? কেইবা পাঠাচ্ছে? আরোহীর মাথায় প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে। শুভ্রকেও বলতে পারছেনা কারন শুভ্র আউট অফ কান্ট্রি। শুভ্রর সাথে জেসিকাও গেছে ইংল্যান্ড। ওদের কাজের জন্য ডাকা।

এভাবেই পরের সপ্তাহে ছবি ও ভিডিও আসে। আরোহীর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে। আর আজকে শুভ্র ও জেসিকা ফিরবে বাংলাদেশে দেড় সপ্তাহ পর। আরোহীর বিশ্বাস হচ্ছেনা এগুলো। শুভ্র জেসিকার সাথে অন্তরঙ্গ! আরোহীর নিজেকে অসহ্য যন্ত্রনা লাগছে। এর আগে এরকম যন্ত্রনা হয়নি। ভিডিওর সাথে একটা মেসেজ আছে,
“If you can’t believe this video, I’ll show you the proof. And you will see it with your own eyes. But you have to wait.”
(তুমি যদি এই ভিডিও বিশ্বাস করতে না পারো তো তোমাকে আমি প্রমান দেখাবো। এবং সেটা তুমি নিজের চোখে দেখবে। তবে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।)

আরোহীর দুনিয়া থমকে যায়। জুলাই মাসের শেষের অর্ধ। এমনিতে প্রচন্ড তাপদাহ। আরোহী দরদর করে ঘামছে। কাউকে একথা বলতেও পারছে না। এক পর্যায়ে আরোহী সেন্সলেস হয়ে যায়।

ঘন্টা দুয়েক পর সেন্স ফিরলে চোখের সম্মুখে নিজের বোনকে ও বান্ধুবীদের দেখে। সবাই আরোহীকে কনগ্রাচুলেট করে। আয়ানা আরোহীকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–আরুরুরু! আমি খালামুনি হবো! তুই ছয় সপ্তাহের প্রেগনেন্ট। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি এখনো কাউকে জানাইনি। শুধু ধ্রুবকে বলছি। আর ধ্রুবকেও বলে দিছি তুই যখন সবাইকে খুশির কথা বলবি তখনি যেনো সবাই জানে।

আরোহী প্রেগনেন্সির খবরটাতে খুশি হয় সে এরকম কিছুটা সন্দেহ করছিলো রিসেন্ট সিমটমসে। কিন্তু তার হৃদয়ে যে দহন লেগে আছে! সে বলে,

–তোরাও কাউকে জানাবি না আর না আমি জানাবো! কাউকে না মানে কাউকে না। যাদের জানিয়েছিস শুধু তারাই জানবে। আমি যত সময় লাগে পরে জানাবো।

আয়ানা, ইশু, তানু ও সারা অবাক হয়। তানু বলে,
–কি হয়েছে আরু? তুই কি বেবি নিয়ে খুশি না? ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা? আমিও আয়ুর মতো ইফানকে বলেছি তুই জানালেই সবাই জানবে। তোর খুশিটা বজায় রাখতে
কিন্তু তুই বলছিস যে কাউকে জানাবিই না!

আরোহী বিমূঢ় হয়ে বলে,
–তোদের কথা দিতে হবে। তোরা যাদের বলেছিস তো বলেছিস। আর কাউকে বলবি না আর তাদের কেও স্ট্রিক্টলি মানা করবি। আমি বাকিটা বুঝে নিবো।

আয়ানা কিছু বলতে নিছিলো কিন্তু তার আগেই আরোহী বলে,
–বাড়ির কাউকেই না।

সবাই মনঃক্ষুণ্ণ হয় তবে মানতে বাধ্য।

———–শুভ্র দেশে ফিরার পর আরোহী শুভ্রর সাথে খুব শান্ত আচরন করে। আরোহীর এই শান্ত ভাবটা শুভ্রর কেমন যেনো লাগে। সে কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছিল কিন্তু আশানুরূপ উত্তর পায়নি। আরোহী এড়িয়ে গেছে।

কয়েকদিন পর আরোহীকে এক অচেনা প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন আসে। তাকে এক হোটেল রুমের নাম্বার বলে সেখানে যেতে বলে। আরোহী তখন লাঞ্চ ব্রেকে খাবে। আরোহী যায় সেখানে। রিশেপশনে রুম নাম্বার বললে তারা প্রথমে ডিটেইলস দিতে চাইছিলো না কিন্তু তখন একটা কল আসে আর আরোহীকে ডিটেইলস দেখায় ও ডুপ্লিকেট চাবি দেয়। ডিটেইলস দেখে আরোহীর চোখ মুখ অন্ধকার লাগছে। সব কিছু ভয়ানক দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। সেখানে শুভ্র ও জেসিকা হাসবেন্ড-ওয়াইফ লিখা। আরোহী টলতে টলতে সেই রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমের লক খুলে দেখে জেসিকা ও শুভ্র একই চাদরের নিচে জড়িয়ে শুয়ে আছে। জেসিকার খোলা কাঁধ ও শুভ্রর খোলা বুক দেখা যাচ্ছে।

আরোহীর আর শক্তি নেই দেখার। সে সেখান থেকে টলতে টলতে চলে যায়। প্রায় আট সপ্তাহের প্রেগনেন্সি আরোহীর। শরীর টানছে না। আরোহী চলে গেলে জেসিকা চোখ খুলে এরপর দুজনের উপর থেকে চাদে সরায়। জেসিকা স্লিভলেস টপস পড়া আর শুভ্রর শুধু গায়ের শার্টটা খোলা। শুভ্রকে সকালে জেসিকা পানির সাথে হাইডোজের স্লিপিং পিল দিয়েছিল। এরপর হোটেলে এনে সব প্ল্যান।

আরোহী আর চলতে পারছে না। সে এখন কোথায় যাবে মাথায় আসছে না। সামনে সারা ও আরাশের ফ্ল্যাট। সারা ও আরাশ বিয়ে করেছে দুইমাস হলো। পারিবারিক ভাবে মেনে নিয়েছে সারার বলার পর। আরাশও মনে মনো পছন্দ করতো সারাকে। আরাশের মা ও বোনও এখানে থাকে। আরোহী মিনিট পাঁচেক হেঁটে যায় সেখানে। আরাশের মা দরজা খুলে আরোহীকে বিমুর্ষ অবস্থায় দেখে জলদি করে ধরে ভিতরে নিয়ে বসিয় পানি দেয় ও সারাকে ফোন করে। সারাও বাকি বান্ধুবীদের নিয়ে আধাঘণ্টার মাঝে চলে আসে।

সবাইকে সব বলে আরোহী ঢুকরে কেঁদে উঠে। আয়ানা প্রচন্ড রেগে গেছে। সে শুভ্রকে খুন করতে পারলে বাঁচে। তার বোনকে এই শুভ্র জন্য এতোগুলা বছর তো কষ্ট করতে হলোই আবার এখনো! বাকিরা শান্ত করে ওকে। আরোহী চোখের পানি মুছে বলে,

–আমি দূরে কোথাও চলে যাবো। আমি থাকবো না এখানে। এই দেশেই থাকবো না। আমি ও আমার বেবি সবার আড়াল হবো।

আয়ানা বলে,
–হ্যাঁ। তোকে দূরে যেতে আমি সাহায্য করবো। তোর পাসপোর্ট তো আমাদের বাসায়। আমি এম্বাসিতে দিবো। জার্মান এম্বাসিতে। আমাদের জন্ম তো জার্মানিতে আব্বু-আম্মুর পিএইচডির সুবাদে। ভাইরা আমেরিকায়। তো জার্মানিতে আমি ও তুই জন্মসূত্রে নাগরিক। সেখানে সু্বিধা হবে। সময় কম লাগবে। একমাসের ভিতর তুই চলে যেতে পারবি। আর তাছাড়া তখন তোর প্রেগনেন্সির ৩ মাস হয়ে যাবে। রিস্ক কমে যাবে কিছুটা ফ্লাই করার জন্য।

বাকিরাও সায় জানায়। আরোহী এই একমাস তার মায়ের বাসায় থাকবে। এতে শুভ্র যাই বলুক।

শুভ্রর ঘুম ভাঙে সন্ধ্যার পর। শুভ্র নিজেকে পরিপাটি অবস্থায় পায় তবে হোটেল রুমে দেখো অবাক হয়। তখন জেসিকা ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতো বেড়িয়ে বলে,
–আমি এনেছি তোমায়। তোমার মাথা ঘুরছিলো তো রেস্টের জন্য এনেছি।

শুভ্র কিছু বলে না। আসলেই তার মাথা ঘুরছিল আর এখন ভার ভার লাগছে

–তুমি শাওয়ার নাও। আমি অনলাইনে তোমার জন্য এক্সট্রা ড্রেস অর্ডার করেছি।

শুভ্র শাওয়ার নিতে চলে যায়। যদি এতে একটু ফ্রেশ লাগে। শুভ্র গেলে জেসিকা বাঁকা হাসে। যা করার সে তো করেই ফেলেছে। বাকিরাও জেসিকার তখনকার মেসেজ দেখে খুশি হয়।

শুভ্র আরোহীর মেডিকেলে যেয়ে শুনে আরোহী ও বাকি বান্ধুবীরা দুপুরের পর থেকে ডিউটি করেনি। শুভ্র আরোহীকে ফোন করেও পায়না। আজকে জেসিকা ও শুভ্র একসাথে বাড়ি ফিরে। শুভ্র রুমে ফিরে দেখে রুম অন্ধকার। তবে বিছানায় কেউ শুয়ে আছে। শুভ্র লাইট জ্বালিয়ে দেখে সেটা আরোহী। আরোহী তো এতোজলদি ঘুমায়না। তাহলে? শুভ্রর মনো প্রশ্ন জাগে। আরোহীর গায়ে হাত দিয়ে দেখে টেম্পারেচার একটু হাই। শুভ্র বুঝে যে আরোহী এইজন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে। শুভ্র ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে গেলে দেখে তার মা খাবার বাড়ছে। মিসেস কায়রা বলে,

–আরুটার জ্বর জ্বর ভাব ও চোখ লাল ছিলো তাই আমি জোর করে খাইয়ে দিয়েছি আর বলেছি ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরতে।

শুভ্র বলে,
–ওহ ভালো করেছো। আমিও এসেছিলাম রুহির ও আমার জন্য খাবার নিতে।

এরপর শুভ্র খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমাতে চলে যায়। আরোহীকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে। আরোহীর ঘুম খুব ঘন তাই জেগে যায়নি।

পরেরদিনও আরোহীর সাথে শুভ্রর তাড়াহুড়োতে বেশিকথা হয়নি আর গাড়িতে জেসিকাও ছিলো। সেদিন রাতে আরোহী শুভ্রকে বলে সে তার বাবা-মায়ের বাসায় কিছুদিন থাকতে চায়। শুভ্র আরোহীকে কাছে টেনে কারন জিজ্ঞেস করলে আরোহী জবাব কোনো মতে কাটিয়ে দেয়।
আরোহী তার বাবা-মায়ের কাছে চলে যায় দুইদিন পর। সপ্তাহ পেড়িয়ে যাবার পরেও যখন ফিরে না তখন শুভ্র আনতে যায় কিন্তু আরোহী সবাইকে বলেছে আরো কিছুদিন থাকবে। শুভ্রও সেখানে তিনদিন থাকে। তারপরেও আরোহী যেতে নারাজ। আরোহী বলে,

–সামনের সপ্তাহে তো আপনি চট্টগ্রাম যাবেন। সেখানে দুই-তিনদিন থাকবেন। আমি সে পর্যন্ত এখানে থাকতে চাই। শুভ্রর যে আরোহীকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে সেটা আরোহী বুঝতে পারছে না। বুঝবে কি করে? চোখের সামনে যা দেখেছে তাই সত্য বলে জেনেছে আর এখন শুভ্রর সবকিছুতে অভিনয় মনে করে। বেচারা শুভ্র তো এসব জানেই না। সে যে কতো বড় ধোঁকার স্বিকার!

শুভ্র চট্টগ্রাম চলে যায়। আর এদিকে সেদিনের হোটেলের ঘটনান তিন সপ্তাহ হয়ে এলো। আরোহীর ফ্লাইট পরের সপ্তাহে। ১২ সপ্তাহ প্রেগনেন্সির হলেই ফ্লাই করবে। শুভ্রে আরো কিছু কাজে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হয়। মূলত এই কাজটা ধ্রুব ও ইফানের। ধ্রুব সরোয়ার্দির হেডকে বুঝিয়েছে যাতে বান্দরবানের তার কাজটা শুভ্রকে ট্রান্সফার করে আর সে কিছুটা উইক। আর ইফান নিজের পড়াশোনা করা চট্টগ্রাম মেডিকেলের অথারিটিকে রিকুয়েস্ট করেছে যাতে শুভ্রকে কিছুদিন বিজি রাখে। ধ্রুব ও ইফানও সবটা শুনেছে আর তারা দুজনেই চেয়েছিল শুভ্রকে চরম শাস্তি দিতে।

আরোহীর ফ্লাইটের তিনদিন আগে শুভ্র ঢাকা আসে। একয়দিন ফোনে শুভ্রর আরোহীর সাথে একটু কথা হতো। আরোহী বেশি কথা বলতো না শুভ্রই বলতো এই বিষয়টা শুভ্রর খটকা লাগে কিন্তু তার মাথায় আসছে না। শুভ্র আরোহীকে বলে বাড়িতে আসতে কিন্তু তার আগেই আরোহী ইফানকে বলে ইরাকে আর তার ছোট খালার নয় বছরের ছেলেকে তাদের বাড়িতে (বাবার বাড়ি) আনে। তিন খালার ছেলে-মেয়ের সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট করতে শুভ্রর ইচ্ছা হলো না।

এরপর যথা সময়ে আরোহী শ্বশুর বাড়ি ফিরবে বলে বাবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে সকলের দোয়া নিয়ে। তিন মাসের প্রেগনেন্সির ব্যাপারটা অনেক কষ্টে লুকিয়ে রেখেছে সে।

এরপরই এয়ারপোর্টে যায়। ওকে বিদায় দিতে ধ্রুব, ইফান ও আরাশ আসে। মেয়েদের রাত ১১টায় বাসার বাহিরে থাকলে সন্দেহ হবে তাই তারা ৮টা পর্যন্ত থেকে চলে গেছে। আরোহী সবার থেকে ওয়াদা নিয়েছে যাতে সে কোথায় আছে তা কেউ না জানে। শুভ্রর কাছে সে মৃত হয়ে থাকবে। সবাই সেটাই মেনে নেয় কষ্ট হলেও। আরোহী আরেকটা পরিকল্পনা করেছে যা ওরা কেউ জানে না। সেটা সে জার্মানি যাওয়ার পর ঠিক করবে সেখানে একমাস থেকে।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড____________________________________

চলবে ইনশাল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here