প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -০২

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-২
সেন্টমার্টিনে দুইদিন থেকে প্রবালদ্বীপ ও বাকিটা ঘুরে সাজেক, নীলগিরিতে যায় শুভ্র ও আরোহী। সাজেকের পাহাড়ের চূড়ায় মেঘেদের খুব কাছ থেকে ছোঁয়া যায়। মেঘের দেশ সাজেক অনিন্দ্য সুন্দর। পুরো এক সপ্তাহ ট্যুরের পর ঢাকা ফিরে দুইজন। এরপর ব্যাস্ত জীবন ও ছোট ছোট খুনশুঁটি।

জেসিকা একদিন শুভ্রর কেবিনে শুভ্রকে ইনিয়েবিনিয়ে বলে যে, আরোহী যে নয় বছর আগেই জানতো শুভ্র কাকে ভালোবাসে সেটা!

শুভ্র প্রথমে অবাক হয় কারন আরোহী সেন্টমার্টিনে তাকে এই কথাটা বলেনি বলে। পরে শুভ্র কথাটাকে হালকা ভাবে নিয়ে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। জেসিকা প্রথমদিন বলে যখন দেখে কোনো লাভ হয় না তখন সে ভাবে আবার দুইদিন পর বলবে।

শুভ্রকে দুইদিন পর জেসিকা আবারো বলে,
–দেখো শুভ্র, আমি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি। আমিও আমার প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছি। আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমি চাই না তুমি অন্ধকারে থাকো তাই তোমাকে আমি জানিয়েছি। আরোহী জানার পরেও সে সবটা চেপে গেছে।

শুভ্র বলে,
–এতে রুহির কি করার ছিলো? সে জানলেই বা কি পরিবর্তন হতো? যা চলে গেছে তা গেছে। এসব এখন মূল্যহীন। আমি নিজের জীবনে নিজের শেষ ভালোবাসা পেয়ে গেছি। আমি সুখে আছি। এসব ভাবার দরকার নেই।

জেসিকা কিছুটা বিরক্ত হয়। তারপর মুখে বিষাদের ছায়া এনে বলে,
–সবাই সবার প্রথম ভালোবাসা পেলো শুধু তুমি ছাড়া। সবাই অন্যকে কষ্ট দিয়ে হলেও নিজেরটা হাসিল করে নিয়েছে!

জেসিকা শেষে পাটকাঠিতে দিয়াশলাই এর নিভু আগুন ছুঁড়ে চলে যায়। যদি সেই আগুন লেগে যায় তো হলোই আর তা না হলে আবারো পরে দিবে। একটু একটু করে ডোজ দিবে যাতে সেটা মনে গাথে। জেসিকা সাইকোলজি নিয়েও কিছুটা স্টাডি করেছে শখের বশো। তাই সে মানুষকে বুঝতে পারে কিছুটা।

শুভ্রর মন ভাবে,
” সত্যি কি উদ্দেশ্য হাসিল করেছে আমার সবটা জেনে!”

কিছুক্ষণ পর তার মনে হয়, না! আমি পেছোনে ফিরে তাকাবো না। সামনের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও ভালোবাসা ছেড়ে পেছোনে যাবো না। রুহিকে আমি ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।

জেসিকা আবারো দুইদিন পর শুভ্রর কেবিনে এগুলা বলতে আসে। জেসিকা কিন্তু বাড়িতে শুভ্রকে এগুলা নিয়ে কিছু বলে না। জেসিকা নিজের মতো বাড়ি ফিরে আর শুভ্র আরোহীকে নিয়ে। তবে সকালে তারা যায় একসাথে।
আরোহীকে হসপিটালে নামিয়ে দিয়ে শুভ্র নিজের কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে সাথে প্রতিদিনের মতো জেসিকা আছে।জেসিকা বলে,

–আমি একটা কথা ভাবছি।

শুভ্র গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
–কি?

–না মানে আরোহী কি ইচ্ছা করে আয়ানাকে যানায়নি যে তুমি আয়ানাকে ভালোবাসো!

শুভ্র বলে,
–ভালোবাসতাম। এখন বাসি না।

জেসিকা বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে কন্ঠে বেদনা এনে বলে,
–সেদিন আয়ানা তার লাভ স্টোরি বলল। আরোহী নাকি আয়ানাকে ধ্রুবের প্রতি অনুভূতি বুঝতে শিখিয়েছে। (আয়ানা এভাবে বলেনি। জেসিকা বাড়িয়ে বলছে।)

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
–মানে?

জেসিকা শয়তানি হাসি হাসে মনে মনে।
–আরোহী আয়ানাকে বলেছে যে ধ্রুব আয়ানার প্রতি যত্নশীল ও আয়ানাও কিছু ফিল করে। আরোহী না বললে তো আয়ানা এসব নিয়ে ভাবতো না। আর তিন মাসের কোচিংয়ের পর ধ্রুবের চাপ্টার ক্লোজ হয়ে যেতো। কিন্তু আরোহী নিজের ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য এসব করেছে। আমি ডেম সিওর!

শুভ্র চুপ করে যায়। যদি জেসিকার বলা কথা গুলো সত্য হয় তবে? শুভ্রর মাথায় সব ভাবনা চিন্তা জট পেকে যাচ্ছে।

জেসিকা জানে শুভ্র সহজে আরোহীকে কিছুই বলবে না তাই সে আজকে এভাবে ডোজ দিয়েছে। আবার কালকে বলবে। বলা বাহুল্য যে জেসিকা শুভ্রদের বাড়ির সবার সাথে অতি ভালো ব্যাবহার করে। আরোহীর সাথে তো হাসি ছাড়া কথাই বলে না।

শুভ্র সেদিনো আরোহীকে কিছু বলেনি। তবে এরপরে জেসিকা এমন ভাবে আরো ৩-৪ দিন বলার পর শুভ্র আরোহীকে জিজ্ঞাসা করেই বসে,

–রুহি! তোমার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করি?

কিছুটা ইতস্তত করে শুভ্র বলে। আরোহী বলে,
–হ্যাঁ করো। এতে বলার কি আছে!

–না মানে। তুমি কি নয় বছর আগে জানতে আমি কাকে ভালোবাসতাম তখন?

আরোহী এমন প্রশ্নে চুপ করে থেকে এরপর আস্তে করে বলে,
–হ্যাঁ জানতাম। সেইদিন জেনেছিলাম যেদিন আপনি আরেকজনের প্রেপোজাল রিজেক্ট করে এসেছেন।

শুভ্রর কেমন যেনো লাগছে। কিছুটা অস্থির। এই কদিনে জেসিকা খুব ভালো ভাবেই শুভ্র মাইন্ডে ব্যাবহার করে ফেলেছে। শুভ্র বলে,
–তুমি আমাকে তো এটা বলোনি!

–না বলিনি কারন আমি এখানে কোনো ভূমিকাতে ছিলাম না। হ্যাঁ আমি জানতাম তবে সাথে এটাও জানতাম যে আমার বোনের মনে আপনি ভাই ছাড়া কিছুই না। আমি আয়ুকে “আপনাকে কেমন লাগে?” তা জানতে প্রশ্ন করেছিলাম। তখন সে বলেছে মেঘ ও নীড় ভাইয়ার মতোই। তাহলে এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়?

শুভ্রর মন শান্ত হয় কিছুটা। সে আরোহীকে নিজের কাছে টেনে নেয়।

______নীড়-সাদিয়া, মেঘ-সাবিলা এদের বিয়ে আজ।সাথে আরেকটা জুটিরো! ইফান-তানু। তানুর দুষ্টামিকে ভালোলাগাতে পরিণত হয় এরপর ভালোবেসে ফেলে ইফান। তিন ভাইয়ের বিয়ে একইদিনে হবে। তিন মেয়ে পক্ষ হয় তাই তিন মেয়ে পক্ষ একসাথে এরেঞ্জমেন্ট করবে। সাবিলার মা, সাদিয়ার বাবা-মা, মিসেস নূর ও মিস্টার মুনতাসির বন্ধু।

তিন বিয়ের কনেকে একই রকম সাঁজে সাঁজিয়েছে। তিন বরকেও। লাল লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে সব ম্যাচিং। তিনজনকে চিনতে বেগ পেতে হচ্ছে। আর জমজ দুই ভাইকেও চিনা যাচ্ছে না। কাজি কনফিউজড হয়ে তাকাচ্ছে বারবার। তবে মেঘ ও নীড় কেউ আজকে ফাজলামি করবে না কারন যদি ভুল হয়ে যায় তো সব শেষ।

আরোহী ও আয়ানা আজকে দুই বোন শুভ্র ও ধ্রুবকে পরিক্ষা করবে তাই দুইজন এ্যাশ রঙের একই ডিজাইনের কাতান শাড়ি কিনেছে আর সাঁজটাও একই। প্রথমে যাবে শুভ্রর সামনে। ওদের সাথে ইরা কথা বলার জন্য যাচ্ছে।

শুভ্রর সামনে ওরা তিনজন যায় এরপর ইরা শুভ্রকে ডাক দিয়ে বলে,

–শুভ্র ভাইয়া, বলোতো এখানে তোমার বউ মানে আরুপি কোনটা?

শুভ্র দুইজনকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এরপর শুভ্র বলে,
–আমি কি ওদের দুজনের হাত ধরতে পারি? অন্যকিছু মনে করো না। আমি ভুলেও ভুল করতে চাই না।

ইরা সম্মতি দিলে শুভ্র দুজনের হাত একসাথে ধরে। তারপর বলে,
–বাম পাশের জন।

ইরা অবাক হয়ে বলে,
–কিভাবে বললা?

শুভ্র মুচকি হেসে বলে,

“আমার ছোঁয়ায় যার কাপন হয়,
সেই তো আমার রয়!”
_____তিথি

আরোহী মুচকি হেসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে। এরপর শুভ্রকে বিয়ে বাড়ির কাজ দেখতে বলে ওরা যায় ধ্রুবের কাছে। ধ্রুব তখন ইফানের সাথে বসেছিল। ইরা তাকে ডেকে বলে,
–ধ্রুব ভাইয়া, বলোতো আয়ুপি কোনটা?

ধ্রুব হেসে ফেলে কারন এর আগেও ওরা দুইবোন এমন মজা করেছে। ধ্রুব বলে,

–আজ আমি একটা অভিনব পন্থাতে বের করবো।

তিনজন সহ বাকিরা উৎসুক হয়ে তাকায়। ধ্রুব হুট করে দুইজনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠে,

” ধ্রুবতারাকে উজ্জলতাতে মানায়,
যার যার আকাশে। ”
______তিথি

তারপর দুই রমনির হাসি দেখে সে বুঝে কোনটা আয়ানা। ধ্রুব আয়ানার হাত ধরে বলে,
–তোমার হাসির প্রেমে আমি বহুরাত ঘুমাতে পারিনা। যেদিন পূর্ণ আলো নিয়ে আমার আকাশে উঠবে সেদিন আমার মরেও শান্তি।

আয়ানা ধ্রুবের মুখ চেপে ধরে। ধ্রুব দুই তিনদিন ধরে উপরোক্ত কথাটাই বলছে। যা আয়ানার একটুও ভালো লাগছে না।

তিন জুটির বিয়ে সুন্দর ভাবে মিটে যায়।

_______
বছরের মধ্যাহ্ন। মানে জুন মাসের শেষের দিক।
জেসিকা বুঝে গেছে শুভ্রকে এগুলা বলার চেয়ে অন্য উপায় খুঁজতে হবে। আরোহীর কাউকে সঠিক বুঝানোর এক অসামান্য ক্ষমতা আছে।
জেসিকা, সামিরা, সাদাদ সহ তার বন্ধুরা অন্যকিছু ভাবে। যা কাজ করবেই।

চলবে ইনশাল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here