#প্রেমজাল
পর্ব ১৭
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
তখন আমার বয়স হবে হয়তো মাত্র ৮ কিংবা ৯ আর আয়ানের ১৫ বা ১৬ বছর। ভাবা যায় ১৬ বছরের দামড়া ছেলে নাকি আমার সাথে বর-বউ পুতুল খেলা খেলতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে আসতো। আর এই তিথি নামের মেয়েটা আমাদের সঙ্গী ছিলো। তাদের আলাপ-আলোচনায় এখন কিছুটা ঝাপসা ঝাপসা মনে পরছে আমার।
.
.
.
দিনটি ছিলো বৈশাখের শেষের দিকে। গ্রীষ্মের ছুটি পরেছে। নিতান্তই এই সময়টায় সবাই গ্রামের বাড়ি আসে আম-কাঠাল খেতে। কথায় বলে মামা বাড়ি যেনো রসের হাড়ি। সো এজ ইউজেল আয়ানও আসে তার মামার বাড়িতে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। অর্থাৎ আমাদের বাড়িতে। এখন যদিও আমাদের মাঝে সাপে-নেউলে সম্পর্ক কিন্তু তখন ছিলো এর ব্যতিক্রম। আমার চোখের মণি ছিলো আয়ান চৌধুরী। যে বর্তমানে আমার স্বামী। ভাবতেও গা শিউরে উঠে। একদা এক ভাপসা গরমের দুপুরে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই শয়তানি মাথায় তুফানি বুদ্ধি কাজ করলো। সবাই বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিতেই সবার অগোচরে বেরিয়ে আসলাম বাড়ি থেকে। সাথে সঙ্গী হলো আয়ান। পরনে হাটু পর্যন্ত ফ্রকের সাথে মাথার চুল গুলো বেনুনী গেথে হাতে খেলনার ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়াতে থাকলাম একের পর এক তেপান্তরের মাঠ। তখন রাস্তা নেই বললেই চলতো। একের পর এক মাঠ পেরিয়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে হতো। আমার সঙ্গী থাকতো কখনো আয়ান কিংবা কখনো আদ্র ভাই৷ যদি বাড়ির সবাইকে ফাকি দিয়ে আদ্র ভাই এর সাথে আসা কমই হতো। তারপর বড় কাকিমণির বেধারাম শাসানী তো ছিলোই। যখন ফাক-ফোকড় পেতাম তখনি আসতাম। হয়তো দু-একবার আসা হয়েছে আদ্র ভাই এর সাথে৷ আগে থেকেই আয়ান আর আদ্র ভাই এর বনতো না। একবার আমি, সুপ্পু, আয়ান, আদ্র ভাই পুকুর ঘাটলায় কাগজের নৌকা ভাসাচ্ছিলাম। নৌকার তালে তালে আমিও এগিয়ে যাচ্ছিলাম পুকুরের দিকে। ঘাটের সিড়িতে থাকা শেওলায় পা পিছলিয়ে পরে যেতেই আয়ান আমাকে সামলায়। যদি অইদিন না বাচাতো তাহলে হয়তো পানিতে হাবুডুবু খেয়ে অইদিনেই আমার শেষ দিন থাকতো। সাতারো যে জানতাম না। কিন্তু সেদিন আয়ান আদ্র ভাই এর থেকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো যেনো তার কারণেই এমন হয়েছে। অনেকটা আমাকে ঘিরেই তাদের শত্রুতার সূত্রপাত হয়। হয়ে দাঁড়ায় দুজন দুজনের চোখের বিষ। তাই আয়ান থাকাকালীন আদ্র ভাই এর ধারে কাছে ঘেষতাম না। আয়ানের সাথে ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো আমার। কিন্তু সেদিন আমাদের পুতুল খেলা নিয়ে তুলুম ঝগড়া লেগে যায়। কারণ, আয়ান ওর ছেলে পুতুল এর সাথে আমার মেয়ে পুতুলের বিয়ে না দিয়ে এই তিথি নামের মেয়ের পুতুলের সাথে দিয়েছিলো। রাগ দমন করে মুখ ফুলিয়ে রাখলেও তিথি নামের মেয়েটা আয়ানকে “বর” বলে সম্বোধন করায় চোখ দিয়ে অশ্রুমালা বইতে থাকে। আমার ছোট্ট হৃদয় খুবই গভীর ভাবে ব্যথিত হয়েছিলো। তখন কারণটা অজানা হলেও এখন অনেকটা উপলব্ধি করতে পারি। বারবার তিথি আয়ানকে বর বলেছিলো আর এজ ইউজেল আয়ান আমাকে জ্বালানোর জন্য অই মেয়েকে বউ বলে। ছোট্ট আহানার মনে এতোটাই অভিমান জমা হয়েছিলো কাওকে কোনো কিছু না বলে বাসায় এসে ছাদে নিজেকে আটকে রাখে। সবাই ছিলো সবার কাজে ব্যস্ত। কেও ছিলো আমার এই ছোট্ট মনটাকে বুঝানোর জন্য৷ মাথায় এতোটাই জেদ চেপে বসেছিলো যে কালবৈশাখীর মতো ঝড় ভাঙ্গাতে পারি নি সেদিন। বৃষ্টির পানিতে ভিজে রাতে কাপিয়ে এসেছিলো অনেক জ্বর। সেদিনের পর থেকে আর এই গ্রামের ধারে কাছেও আসা হয় নি অনেকটা ইচ্ছা করেই। তাই হয়তো প্রায় ১০ বছর পর আসায় আমাকে সতীন বলে সম্বোধন করছে এরা। হুহ!! সবার অগোচরে ভেংচি কাটলাম। যাকে হারানোর কষ্ট সইতে না পেরে এতো আর্তনাদ ছিলো, আজ সে আমার সাথে। হাহ!! আমারই পরিপূরক।
.
.
.
একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে অতীতের স্মৃতিচারণ থেকে বেরিয়ে আসলাম। তিথি, আয়ান, দিদুনের আড্ডা জমে ক্ষির। এতো পোকর পোকর কেও করে? কেও খুন হয়ে গেলো হুশ হবে না। করুক গা, হুহ। বিয়ে ছাড়া বউ এর সাথে যতো ইচ্ছা খোশ আলাপ পারুক। খালি এখান থেকে বিদেয় হই, তারপর বুঝবো অতীতের ঘা নতুন করে খোচা মারার ফল। ইড়িং বিড়িং ভাবতে ভাবতে চোখ গেলো অই বুড়োর দিকে। আমার অদূরে বসে খালি ফলের রস গিলেই যাচ্ছে। ঠোঁট হালকা ভিজিয়ে নিলাম। লোভ সামলাতে পারছি না। এদিক-অদিক তাকিয়ে টুপ করে বোতল থেকে এক গ্লাসের মতো খেয়েও নিলাম। কিন্তু চোরের মন পুলিশ পুলিশ। বুড়োটা ঢুলু ঢুলু চোখে আমার দিকে তাকাতেই বুক ধক করে উঠলো! এই বুঝি চিল্লাপাল্লা করা শুরু করবে। আমার পুলিশ বর যদি এখন আমাকে ফলের রস চুরি করে খাওয়ার অপরাধে গ্রেফতার করে। ছিঃ!! কি বিচ্ছিরি কাহিনী রটাবে। কিন্তু এই বৃদ্ধ লোক আমাকে অবাক করে স্মিত হেসে আরেকটা বোতল টা এগিয়ে দিলো। আমার খুশি আর দেখে কে? আমি সাত-পাচ আর না ভেবে ঢগ ঢগ করে অনেকটাই খেয়ে নিলাম। আহ!! অনেক ভালো লাগছে। অনেকটা তিতা লাগলেও খেতেই ফুরফুরে লাগছে। মনে হচ্ছে পাখির মতো আকাশে উড়ছি। অনেকটা চাংগা চাংগা ফিলিংস!!
আমি আয়ানের দিকে কিছুটা চেপে বসে উনার বলিষ্ঠ বাহুতে মাথা রাখলাম। উনাকেও একটু খাওয়ানোর সাধ জাগলো। উনার ফ্লোড করা হাতা দু’তিনেক টানলাম। কিন্তু আমার লাটসাহেব কথার মাঝে বিভোর। উনার হাত টেনে আমার কোলে রাখে বাহু জরিয়ে ধরতে উনি ভ্রু সংকোচন করে আমার দিকে এক পলক চেয়ে আবার ফিরিয়ে নিলো। আমার ছোট্ট হৃদয় আবার ব্যথিত হলো। ধ্যাত!! কেনো ফিরিয়ে নিলো? একটু তাকিয়ে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? আমিও দেখবো কতোক্ষণ পারে। উনার হাতের পাজোরকে আমার অস্ত্র বানালাম। আমার হাতের পর উনার হাত রেখে বিপরীতমুখী রেখে একবার মুষ্ঠিবদ্ধ করে আবার ছেড়ে দিলাম। বার বার এক কাজ চলমান রাখলাম। বেশ মজাও লাগছে।
-“কি হচ্ছে এসব?” ভরাট কণ্ঠে বিরক্তি মিশ্রিত মুখ ভাসিয়ে বললো আয়ান।
উনার দিকে ঠোঁট উল্টে বামে-ডানে মাথা হেলিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলাম।
আয়ান আমার ওষ্ঠ্যদ্বয়ের উপরিংশ আলতো ভাবে হাত দিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো,
-“কিছু খেয়েছো?”
আমি এবার মাথা উপর নিচ নাড়ালাম। উনার ভ্রু কুচকে গেলো। খানিকটা বুঝতে পারলাম যে উনি জানতে চাইছে যে আমি কি খেয়েছি?
আমি ঠোট প্রসারিত করে বোতল টা এগিয়ে দিলাম। উনি বোতলের শরণাপন্ন হতেই উনার চক্ষু কোটরের ব্যাসার্ধ অত্যাধিক বেড়ে গেলো।
আমি হাত বারিয়ে বোতলটা উনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি ছো মেরে নিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন।
আমি কাদো কাদো ভাব নিয়ে বললাম,
-“আমাকে ফিরিয়ে দেন অইটা! আমি আপনার সাথে খেতে চাই”
উনি উনার চোখ গরম করে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে টেনে দাড়া করানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু আমি শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে ত্যাড়ামি করে বসে রইলাম।
আয়ান আমার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে বললেন,
-“কলপারে চল! চোখ-মুখ ধুয়ে দিবো”
আমি তারপরো ঠাই বসে রইলাম।
-“তুই কি মনে করিস? আমি তোকে শেহজাদীর মতো কোলে নিয়ে যাবো? আমার কাছে থাপ্পড় না খেতে চাইলে উঠ এক্ষুনি। চল বলছি” বলে উনি হাত ধরে টানতে লাগলো।
আমি উনার দিকে ভ্রুক্ষেপ করলাম না। আমি বার বার হাত গুটিয়ে নিচ্ছি,হুহ। উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে আশে-পাশে তাকাতে লাগলাম। রাত হয়তো অনেকটা হয়েছে। দূর-দূরান্তে কোনো সাড়াশব্দ অব্দি নেই। আড় চোখে লক্ষ্য করলাম তিথি এবং দিদুন আবারো মিটমিট করে হাসছে। তিথি দিদুনের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“নানু! মেয়ের নেশা চড়ে গেছে”
আমার স্পষ্টভাবে কর্ণপাত হলেও বেশি একটা ঘামালাম না। হঠাৎ….
#প্রেমজাল
পর্ব ১৮
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
রাত হয়তো অনেকটা হয়েছে। দূর-দূরান্তে কোনো সাড়াশব্দ অব্দি নেই। আড় চোখে লক্ষ্য করলাম তিথি এবং দিদুন আবারো মিটমিট করে হাসছে। তিথি দিদুনের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“নানু! মেয়ের নেশা চড়ে গেছে”
আমার স্পষ্টভাবে কর্ণপাত হলেও বেশি একটা ঘামালাম না। হঠাৎ উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে টানাটানি করতে লাগলেন। আমি এবার উনার দিকে হালকা ঝুকে ভেংচি কেটে আবার স্বাভাবিক ভাবে এদিক-অদিক চোখ চঞ্চল রাখলাম। তবে ঢের বুঝতে পারলাম উনি আমাকে নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত। উনার মুখে আস্তে আস্তে রাগী ভাব ফুটে ওঠছে। ইশ!! এই লোকটাকে রাগলেও চরম লাগে। নাকের ঢগা লাল হয়ে যায়। কুট্টুস করে একদিন একটা কামড় মেরে দিবো, হুহ। না না!! শুধুই কি একটা? একটা কেনো অনেকগুলো দিবো। কিছু হলেই এই আস্ত বজ্জাত লোক ধমক দেয়। ডানে গেলে ধমক, বামে গেলে ধমক, নিচে গেলে ধমক, উপরে গেলে ধমক। সবসময় এই ধমকা-ধমকির উপরি রাখে। মাঝে মাঝে মনে হয় একদম ধমকের উপর পিএইচডি করে রাখছে। তাই আমিও অনেক গুলা কামড় মারবো। কয়টা কামড় মারা যায়? ২টা? উহু ৩টা? না না ৫টা। হাতের আঙ্গুলের দাগ গুনে গুনে ভাবতে লাগলাম। আমার আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে মনে হচ্ছে আমি শূণ্যে ভাসছি। নিজের ভর উপলব্ধি করতে পারছি না। ভালোভাবে ডানে-বামে, উপরে-নিচে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম। কেও তার বলিষ্ঠ দুই বাহু দিয়ে আমাকে পাজকোলে নিয়ে আগলে আছে। আমি উনার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালাম। উনি নিতান্তই রেগে আছে।
আমি মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে আয়ানের গলা জরিয়ে ধরলাম। উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যা আমার পিঠ ছেয়ে গেলো। উনি বড় বড় পা ফেলে কলপাড়ের দিকে নিয়ে আসলেন। উনি আমাকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই আমি একহাত দিয়ে উনার কাধ খামচে ধরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলাম। যার অর্থ আমি নামতে একদমি নারাজ।
আয়ান বেশ শান্ত গলায় বললেন,
-“নামো”
আমি এবারো উনার কথা পাত্তা দিলাম না। দিলাম তো নাই আরো উনাকে জ্বালানোর জন্য ফন্দি আঁটতে লাগলাম। উনার ঘাড়ে আমার হাতের আঙ্গুল আলতো ভাবে ছোয়া দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলাম। কিন্তু এই ব্যাটা পুরাই গন্ডার। উনার কোনো তেমন ভাবান্তর হলো না।
আয়ান তীব্র রেগে বললো,
-“নামবি নাকি এক আছাড় দিয়ে ফেলে দিবো, ইডিয়েট?” বলে সাথে সাথে উনি উনার হাতের বেষ্টনী আলগা করতেই আমি তার গলা জরিয়ে ধরলাম। এই লোককে বিশ্বাস করা মানে, শিয়ালের কাছে মুরগি তুলে দেওয়া। আমি অসহায় ভাব নিয়ে নিশ্চুপ ভাবে চোখ বন্ধ করে উনার হৃদ স্পন্দন অনুভব করে থাকলাম।
আয়ান আমাকে আবার নামাতো চেষ্টা করতেই বাধ্য মেয়ের মতো উনাকে ছেড়ে দিলাম। উনার দিকে আর ফিরেও তাকালাম না। আমার ছোট্ট মনটা অভিমানের আধারে ডুবে গেলো। একটু কোলে করে রাখলে কি হয়? অন্যদিকে তাকিয়ে আঁচলের সরু প্রান্ত একনাগাড়ে হাতের আঙ্গুলে প্যাচাতে লাগলাম। আরেকবার খুলতে লাগলাম।
আয়ান কড়া গলায় কঠোর ভাবে বললেন,
-“চোখ-মুখে পানি দাও” বলে কল চিপাতে লাগলেন। কিন্তু আমি কোনো ভ্রুক্ষেপ করলাম না। একমনে প্যাচ খুলছি আর লাগাচ্ছি।
আয়ান চোয়াল শক্ত করে ধমক দিয়ে বললো,
-“কিছু বলছি আমি”
আমি এবার ঠোঁট উল্টে উনার দিকে সাড়া দিলাম। অভিমানের দেয়াল চুরমার করে বাচ্চাদের মতো তাকালাম।
আয়ান চোখ পাকিয়ে কলের মুখের দিকে ইশারা করলেন। আমি কলের কাছে এসে মুখে হাত বারিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনিও আমার দিকে রাগি ভঙ্গিতে তাকিয়ে কল চাপতে লাগলেন। কলের মুখ থেকে গড়গড় করে পানিতে বের হতে লাগলো। হাতে ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়েও উনার দিকে একমনে তাকিয়ে আছি। উনি আবার আমাকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন। আমি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে উনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কলের দিকে নজর দিলাম। পানির স্রোতধারা আমার হাত বেয়ে বেয়ে নিচে উপচে পরছে। যার ফলে আমার কাপড়ের অনেকটা কুচি ভিজেও গেছে রীতিমতো। পানির এমন ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলতে লাগলো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আমি দুই হাতে পানি আবদ্ধ করে ঠুস করে আয়ানের মুখে ছুড়ে দিলাম। যার পরিপ্রেক্ষিতে উনার মুখ বেয়ে সারা বুক ভিজে গেলো।
আকস্মিকভাবে এমন হওয়ায় আয়ান আমার এলাহী কান্ডে রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেসে। উনার চোখ দু’টো বিস্ময়ে বড় আকারে বিবর্তন করছে। উনি এতোটাই শোকড যে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। উনার এমন অবস্থা দেখে আমি এবার শব্দ করে হেসে ফেললাম।
আয়ানের তীক্ষ্ণ নজরে আমার হাসি ফুস হয়ে উড়ে গেলো আকাশে। উনার চাহনি দেখে মনে হচ্ছ আর এক গাল হাসলে আমাকে টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গায় ভাসাবে। আমি ঠোঁটে এক আঙ্গুল চেপে ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলাম। হাসি যেনো থামছেই না আমার।
আয়ানের ভ্রু কুচকে বিরক্ত মিশ্রিত মুখ নিয়ে উনার বুক নিজেই ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন,
-“অনেকখানি ভিজে গেলো। আমার আজকে এই গ্রামে তোমাকে নিয়ে আসাই উচিত হয় নি”
আমি মুখে তাচ্ছিল্য হাসি টেনে বললাম,
-“কেনো? আমি আসায় খুব অসুবিধা হয়ে গেলো বুঝি? আমি থাকায় আপনার অই তিথি বউ কে আদর করতে পারলেন না বলে, তাই নয় কি?”
আয়ানের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনার কুচকে থাকা কপালে গভীর ভাজের আবির্ভাব ঘটলো। উনি কিছু বলতেই চাইলে বলতে দিলাম না। আমি আমার ডান হাত উনার বাম বুকে রেখে, আমার বাম হাত উনার ডান গাল স্পর্শ করতেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
আয়ান অবাক চাহনি নিয়ে আমার দিকে ঝুকে চোখ সরু করে তাকালো। আমি ঠোঁট প্রসারিত করে ঠোট উলটে ঘোর লাগা কণ্ঠে বললাম,
-“আপনাকে না আমার মাঝে মাঝে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। মনে হয় পুরাই চকলেটের ফ্যাক্টেরি! খেয়ে ফেলবো নাকি?” ( বুকে রাখা হাত শার্টের কলা টেনে )
আয়ানের চোখ জোড়া আমার চোখে আবদ্ধ। উনার চোখ-মুখে এখনো বিস্ময়ের আভাস। আমার চঞ্চল দৃষ্টি উনার চোখ আর ঠোটের মাঝে মগ্ন। আমি আয়ানের দিকে পা ভর করে হালকা এগিয়ে যেতেই উনার নাক-মুখের গরম নিশ্বাস আমার মুখে উথাল-পাতাল আছড়ে পরতে লাগলো। আমি আলতো হেসে উনার ঠোটের দিকে এগিয়ে যেতেই ঠাস ঠাস করে পর পর দু’তিনেক ঠাডা পরলো। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোড়ন পরলো। যার সাপেক্ষে আয়ান মাথা উপর করে আকাশের দিকে তাকালো। আর আমার কাঙ্খিত জিনিস হাতছানি দিয়ে ধরা দিলো না। আমি এককথায় পেতে গিয়েও পেলাম না। ব্যর্থ হলাম আমি। ধ্যাত!! আমি আমার হাত গুটিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে ধারালাম।
আয়ান তার ভ্রু সংকোচন করে বললেন,
-“কি? তাড়াতাড়ি ঘরে চলো। ঝড় আসবে হয়তো”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভেংচি দিলাম।
আয়ান চরম বিরক্ত হয়ে আবার বললেন,
-“চলো”
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
-“একদমি না”
উনি আমার উত্তর শুনে হতাশ হলেন। সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“যাবা না কেনো?”
আমি উনার দিকে উৎফুল্ল চাহনি নিয়ে বললাম,
-“কোলে নিবেন?”
আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে কোল তুলে নিলেন। আমার খুশি আর দেখে কে? আমি পরম আবাশে উনার গলা জরিয়ে তার মুখপানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আয়ান ঘরে এসে আমাকে বিছানায় শুয়ে দিতেই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমি উনার উনার ঠোটে ঠোট ছুয়ে দিলাম। হতভম্ব হয়ে গেলেন উনি। আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
কিছুক্ষণ পরেই কেও পাশে শুয়ে পরার আন্দাজ করতে পারলাম। চোখ পিটপিট করে তাকাতেই সারা ঘর আধারে ডুবে গেছে।
আমি আস্তে আস্তে আয়ানের কাছে গিয়ে উনাকে জরিয়ে ধরলাম। উনি নিশব্দে হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। অতঃপর উনি নিজেও আমাকে উনার সাথে মিশিয়ে নিলেন।
#