প্রেমনগর পর্ব ১০

#প্রেমনগর
পর্বঃ১০
লেখাঃ নীলাদ্রিকা নীলা
.
আকাশ বাড়ি ফিরেই দ্রুত রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। এখানে দুইজন কাজের মহিলা কাজ করছে। অহনা তো সেখানে নেই। আকাশ রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ পাওয়া গেল।
আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, অহনা? জান তুমি কি ভিতরে?
অহনা ভিতর থেকে আওয়াজ দেয়, হ্যাঁ গোসল করছি। তুমি কখন এলে?
আকাশঃ এইতো কিছুক্ষণ হলো। জান তুমি ঠিক আছো তো?
অহনা বাথরুমের দরজাটা একটু খুলে মাথা বের করে বললো, কেন! আমার আবার কি হবে?ঠিকই তো আছি।
মাথা বের করায় অহনার ভেজা চুল গুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরতে দেখা যাচ্ছে। অহনাকে দেখার পর আকাশ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অহনা বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আকাশ গলা থেকে টাইটা খুলতে খুলতে বিছানায় বসলো।
.
১ ঘন্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে অহনা এখনো বাথরুম থেকে বের হয়নি। শুধু পানি পরার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে আকাশ জামা কাপড় চেইঞ্জ করে হালকা নাস্তাও সেরে নিয়েছে।
আকাশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, কি করছে এতোক্ষন!এখনো বের হয় না? আরে বাবা আমিও তো গোসল করবো। বিকালে আবার চেম্বারে যেতে হবে৷ আর কতোক্ষন বসে থাকবো।
আকাশঃ অহনা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
অহনাঃ এইতো আর একটু।
আকাশঃ সেই কখন থেকে বলছো শুধু আর একটু আর একটু।
বাথরুমের ভিতর থেকে শুধু পানি পরার আওয়াজ আসছে। আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে এগিয়ে গেল। আকাশ মনে মনে ভাবছে এতো কি করছে ভিতরে!
আকাশ বাথরুমের দরজায় টোকা দিলো, জান তুমি ঠিক আছো তো?
.
অহনা বাথরুমের দরজাটা খুলে আবারও মাথাটা বের করলো,কি হয়েছে! আমার আরও সময় লাগবে তো।
আকাশ দরজাটায় হাত দিয়ে আরেকটু ঢাক্কা দিতেই অহনার টাওয়েল পেচানো ভেজা শরীর দেখতে পেল। অহনাকে দেখতে খুবই সেক্সি লাগছে। ভেজা চুপসানো চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে।
অহনাঃ কি করছো এতো! দেখি।
অহনা দরজা চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আকাশ দরজাটা ধরে আটকে রেখেছে।
অহনাঃ কি হলো সরো।
আকাশ মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো, উহুম।
সে দরজাটা আরও একটু খুলে এবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।
অহনাঃ আরে আরে কি করছো, সরো। আমি গোসল করছি তো৷
আকাশঃ আমিও গোসল করবো।
অহনাঃ আহা আমি একদম ঠিক আছি। তোমার এখন আসতে হবে না। তুমি গিয়ে বসো৷ আমি ঠিক আছি।
.
আকাশ এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলছে, দেখি কেমন ঠিক আছো। নিজের সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা সেটাই কি ভিতরে বসে বসে দেখছো নাকি এতোক্ষন?
অহনা চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশঃ দেখি কেমন ঠিক আছো তুমি।
বলেই আকাশ জোর করেই ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। শাওয়ারের পানি গায়ে পরে আকাশ ভিজে যাচ্ছে। অহনা চিৎকার দিতেই আকাশ অহনার মুখ চেপে ধরলো।
অহনাঃ আরে..আ..আ… উম..
.
এদিকে বিয়ে না করে তুলি পালিয়ে গেছে বলে রেয়াকত আলীর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী তুলিদের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেছিলো। বহু কষ্টে তাকে সবাই মিলে আটকায়। তারপর দলবল নিয়ে বেড়িয়ে পরলো তুলিকে খোঁজার উদ্দেশ্য। তুলিকে ধরে নিয়ে এসে আবার সে বিয়ের আসরে বসবে। তুলির চিন্তায় তুলির মা অচেতন হয়ে গেছে। তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। আর তুলি বাবা কপাল চাপড়াচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিতে গিয়ে শেষে মেয়েটাকেই না হারিয়ে ফেলে। তুলির কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না। গ্রামের পথ ঘাটে লোকজনদের জিগাসা করা হলেও তারা জানায়,তারা তুলিকে যেতে দেখেনি৷
.
ওসি সাহেব প্রেমনগরের উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলেও মাঝ রাস্তায় পথ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গেছেন। এরিমধ্য নীলার জ্ঞান ফিরলো আর চোখ খুলে বাবাকে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে শুনলো।
নীলার বাবাঃ ছাড়বেন না। ছেলেটাকে একদম ছাড়বেন না!
ওসিঃ আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।
কিন্তু ওসি সাহেব যে এদিকে রাস্তা ভুল করে অন্য দিকে চলে গেছেল সেই ব্যপারটা এড়িয়ে গেলেন। তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন তিনি নিজেও তা জানেন না৷
নীলাঃ বাবা! তুমি কাকে ধরার কথা বলছো?
নীলার বাবা এদিকে ফিরে নীলাকে দেখে বলে উঠলেন, ও মামনি তুমি উঠে গেছো, এখন কেমন লাগছে?
নীলাঃ ভালো। কিন্তু তুমি কাকে ….
নীলার কথা শেষ না হতেই নীলার বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তুমি কোনো চিন্তা করো না মামনি,আসামির খোঁজ পাওয়া গেছে। ছেলেটাকে আজই হাজতে ভরা হবে। কাল রাতে তোর এই অবস্থা করে পালিয়েছে। আর আমি ওকে ছেড়ে দেব?
নীলাঃ কার কথা বলছো। মেঘ!..ওকে তোমরা ধরতে যাবে কেন? ও তো কিছু করেনি। পানি আমি নিজেই ঢেলেছিলাম। ওকে নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাতে হবে না। ওর বিষয় আমি দেখবো। ওর গায়ে একটা টোকাও যেন না লাগে বলে দিলাম।
.
নীলার কথা শুনে নীলার বাবা ওসি সাহেবকে আবারও ফোন করলেন, কিন্তু এবার ফোনে ওসি সাহেবের কোনো কথাই আর বোঝা যাচ্ছে না এবং ওসি সাহেবও এখানকার কোনো কথা শুনতে পাচ্ছেন না। কারণ উনি এখন যেখানে আছেন সেখানে নেটওয়ার্ক নেই। উনি একচুয়ালি কোথায় আছেন উনি নিজেও জানেন না। আশে পাশে শুধু জঙ্গল৷
.
নীলাঃ ছাড়বো না আমি ওই কবিরাজকে! ভন্ড! আমার অনেক টাকা খেয়েছে। আর শেষে কিনা পানি পড়ায় কোনো কাজই হলো না? আমি শ্যামপুরে গিয়ে ওই ভন্ড কবিরাজের আস্তানাটাই ভেঙে দেব!
.
সন্ধ্যার পর ছাদের এক কোনায় দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অহনা। আকাশে হাজারো তারার মেলা৷ রৌদ্র হাতে গিটার নিয়ে ছাদে উঠে এসেছে। অহনাকে এখানে চুপচাপ একা বসে থাকতে দেখে বলে উঠলো, ভাবীর কি মন খারাপ? না মানে তোমাকে তো সব সময় হাসতে দেখি। অথচ এখন দেখছি শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছো।
অহনা রৌদ্রের দিকে তাকালো আর তারপর বললো, আমার বোন তুলি নিখোঁজ। সারাদিন ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি৷ জোর করে বিয়ে দেওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে ও। তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।
অহনার কথা শুনে রৌদ্র ভ্রু কুচকে জবাব দেয়, কিহ! ওই মেয়ে? ওই অতটুকু মেয়ের আবার বিয়ে! ওকে দেখলে তো মনে হয় কিছুই বোঝেনা।
.
অহনা দোলনায় হেলান দিলো। তারপর বললো, আমার বোনটা খুব সহজ সরল। আমার নিজের কোনো বোন নেই তাই ওকেই আমি নিজের বোন মনে করতাম।
রৌদ্রঃ ঘটনা কখন ঘটেছে?
অহনাঃ জানিনা। আমি একটু আগেই ফোনে খবরটা পেলাম। তারপর থেকেই মনটা ভীষণ খারাপ। মেয়েটা কোনো রাস্তা ঘাটই চেনে না। কোথায় আছে। কি করছে। দেশে তো খারাপ লোকের অভাব নেই। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। ওর কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছে না ।
.
তুলির জন্য রৌদ্রের এখন কিছুটা খারাপ লাগছে। আর সেদিন মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহারও করে ফেলেছিলো।
রৌদ্রঃ আমি দেখছি কি করা যায়!
অহনাঃ তু..তুমি আবার কি করবে?
রৌদ্রঃ দেখি ওর কোনো খোঁজ বের করতে পারি কিনা। আমার নেটওয়ার্ক তো সব জায়গা জুড়ে।
.
তুলিকে খুঁজে না পেয়ে রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। এমন হয়রানি করানোর জন্য তুলির কপালে দুঃখ আছে। রেয়াকর আলীর দলবল বন জঙ্গল বাস ট্রেন সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কাছেও খবর দেওয়া হয়েছে। কোনো ভাবেই তুলির কোথাও কোনো চিহ্ন মিলছে যাচ্ছে না।
.
রৌদ্র সোসিয়াল মিডিয়াতে তুলির একটা ছবি দিয়ে নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে দিয়েছে। আকাশের বিয়ের ছবিতে তুলির ছবিও ছিলো। সেখান থেকেই এই ছবি নিয়েছে রৌদ্র। অনেকে নিউজটা শেয়ারও করছে৷ ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গেছে।
.
রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রৌদ্রের ফোনে একটা কল আসে । রাফি ফোন দিয়েছে৷
রৌদ্রঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।
রাফি হাফাতে হাফাতে বলছে, দোস্ত তুই একটা মেয়ের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে ওই মেয়ের ছবিসহ একটা পোস্ট দিয়েছিস তাইনা।
রৌদ্রঃ হ্যাঁ….হ্যাঁ বল…
রাফিঃ এক ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম ওখান থেকে মামার বাসায় যাচ্ছি। খাবার কিনতে বাস থেকে নামতেই এখানে মেয়েটিকে বোধহয় আমি দেখলাম। বাসে থাকার সময় তোর ওই পোস্টটা দেখেছিলাম। মেয়েটিকে দেখে সন্দেহ হলে তোর পোস্টের ছবিটা দেখে আবার মেলালাম।
রৌদ্রঃ কিহ!! তুই এখন কোথায় আছিস বল আমি এক্ষুনি আসছি৷
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাস স্টপে কিছু লোকজনের কাছে তুলির মতো কাউকে থাকার কথা শুনেছে। কিছুক্ষণ আগেই নাকি তুলি এই পথ দিয়েই গেছে। এই খবর শুনে রেয়াকত আলীর মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আর এদিকে বাস স্টপের আশেপাশে জঙ্গল থেকে শুরু করে সব দোকানপাট লন্ডভন্ড করে রেয়াকত আলীর লোকজন খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে৷ আর রেয়াকত আলী তার বাকি দলবল নিয়ে এদিকে আসার জন্যই গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে৷ তুলিকে তার আজই পেতে হবে৷
.
রাফির কথা শুনে রৌদ্রও বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। এখান থেকে খানিকটা দূরেই জায়গাটা। যেখানকার কথা রাফি বলেছিলো। রৌদ্র ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে। জ্যামের রোড না দিয়ে রৌদ্র এবার অন্য রোডে মোড় নিলো। শীতকাল পরতে শুরু করেছে ৷ আশেপাশে কুয়াশা এবং অন্ধকার।
.
চলবে….
.
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here