তুমুল বর্ষণের মাঝে কোলে করে নব বধূকে নিয়ে বাহিরের মেন ফোটকে হাজির হলেন আলিফ ভাইয়া। মহূর্ত টা যেনো আমার জন্য থমকে গেলো পা দুইটা হয়ে উঠলো বরফের ন্যায় শক্ত।বড় আম্মু যিনি দরজা খুলেছিলেন তিনি ওদের কে ভিতরে আসতে দিয়ে সবাইকে ডাক দিলেন। এক এক করে সবাই উপস্থিত হলো বসার ঘরে । সবার মাঝেই দেখা যাচ্ছে টান টান উত্তেজনা।বড় আব্বু সবার শেষে বেরিয়ে এলেন। তার আসাতে সবাই শান্ত হয়ে গেলেন।আলিফ ভাইয়া মাথা নিচু করে উঠে দাড়ালেন বড় আব্বুর সামনে।বড় আব্বুর চেহারায় কঠোরতা। গম্ভির গলায় আলিফ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন
;কে এই মেয়ে আর এই ভাবে বিয়ে করাটার মানে জানতে পারি।না আমরা সিরিয়ালের টিপিকাল ফ্যামিলি থেকে বিলং করি আর না তো যদি তুমি বলতে যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তো আমরা জোর করে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম
আলিফ ভাইয়া চুপ করে বড় আব্বুর সব কথা শুনছিলেন এবার তিনি মুখ খুললেন তার ঠোঁট জোড়া একে অপরের থেকে আলাদা হতেই আমি আমার কান জোড়া খাড়া করলাম আমিও শুনতে চায় কেন করলেন এটা আলিফ ভাই
;আব্বা আমি আপনার কাছে ওকে আনতে চেয়েছিলাম এবং সেটা আজকেই তাই আমি ওকে দেখা করতে ডেকেছিলাম রাস্তাই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে যাওয়াই একটা ছাওয়নির নিচে আশ্রয় নিতেই আফরার ভাই দেখে নেয়। আর আমাদের বাসায় নিয়ে যেয়ে এক প্রকার জোড় করেউ বিয়ে দিয়ে দেয় কিছু বলার সুযোগ দেয়না আর তখন যদি ওকে আমি বিয়ে না করতাম তাহলে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো
কথা গুলো বলে থামলেন আলিফ ভাই। পরিবেশ টা শান্ত হয়ে গেলো বুঝাই গেলো বড় আব্বু মেনে নিয়েছেন। আমার ধারণা কে সম্পূর্ণ সঠিক প্রমান করতেই বলে উঠলেন
;বেশ যখন বিয়ে হয়ে গেছেই তখন ২ দিনের মাঝেই ধুম ধাম করে বৌভাত টা করা হবে এখন যে যার যার রুমে যাও।
সবার ঠোঁটের কোণে হাসি বলে দিচ্ছে তারা বড় আব্বুর এই সিদ্ধান্ততে খুশি। বিশ্বেষ করে বড় আম্মু।আমি পিছনে ফিরে চোখের পানি মুছে সামনে এগুতে নিলেই একটা বলিষ্ঠ হাত আমার মাথায় রাখে কেউ পিছনে তাকিয়ে দেখি হাত টা আর কারো না বড় আব্বুর। সবার সামনে গম্ভির শক্ত বড় আব্বুর জান আমি হয়তো ভাইয়ের শেষ সম্বল তাই।
আমি পিছনে ঘুরে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে তাকালাম বড়আব্বুর দিকে।বড় আব্বু জরায় নিলো আমাকে তার বুকে। আদুরে হাত বুলাতে থাকলেন আমার মাথায়
;আমাকে মাফ করে দিস মা। আমি আমার করা প্রতিজ্ঞা রাখতে পারলাম না।
বড় আব্বুর কোথায় নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছিলো। কি হতো সেদিন যদি আমি নিজের আবেগ লুকিয়ে ফেলতাম আর না বড় আব্বুকে জানাতাম আমি আলিফ ভাই কে ভালোবাসি। তখন না বড় আব্বু আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করতো যে আমার সাথে তিনি তার মেঝো ছেলের বিয়ে দিবেন। আমি নিজেকে সামলে খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলাম
;কি যে বলোনা তুমি বড়আব্বু আজকে যদি তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা রাখতে তবে কি বড় আম্মুর হাস্যজ্বল মুখটা দেখতে পারতে না ভাইয়ার প্রশান্তি
বড়আব্বু আমাকে কিছু বললোনা আর আমাকে রুমে নিয়ে যেয়ে আমাকে শুয়াই দিয়েই শরীরে চাদর উড়ায় দিয়ে লাইট বন্ধ করে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে চলে গেলেন। আমি উঠে দরজা লাগায় দিয়ে ব্যালকনিতে চলে এলাম
চোখের পানি আজকে বাধ মানতে নারাজ। জীবনের ১৭ বসন্ত পার করার পরে নিজের সম্পূর্ণ ভালোবাসা লিখে দিয়েছিলাম আলিফ নামক ব্যাক্তিটার নামে।অবশ্য কোন দিন সাহস করে বলে উঠা হয়েছিলোনা ভালোবাসি নামক শব্দ টা। ভয় লাগতো কিসের ভয় জানা নেই আমার অজনা একটা হাত এসে প্রতিবার আমার গলা আকড়ে ধরতো যখনি আলিফ ভাই এর সামনে গেছি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে।
আমি আয়রা আয়রা রহমান ১৯ বছরের যুবতী। বাবা নেই ছোট বেলায় মারা যান মা অন্য জায়গায় বিয়ে করে দিব্বি সংসার করছে।তার যেয় একটা মেয়ে আছে তিনি সেটা বেমালুম ভুলেই গেছে।বড় আব্বুর কাছেই আমি ছোট থেকে মানুষ বড় আম্মু ও আমাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে।ছোট আম্মু ছোট আব্বু আলিফ ভাই ছায়া আপু(আলিফ ভাইয়ার বোন)আরিফা ছোট চাচ্চু আর চাচিমনি র মেয়ে যাকে আমি ছোট আব্বু আম্মু বলি।আর এই পরিবারের হিটলার থুক্কু বড় ছেলে আসফি ভাইয়া।
রাতটা আমার নির্ঘুম ই কেটে গেলো। সকাল বেলা ঘুম ভেংঙ্গে যায় ছায়া আপুর ডাকে। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে কান্না করার জন্য মাথা কেমন যেনো ঝিম ঝিম করছে।অনেক কষ্টে উঠে যেয়ে দরজা টা খুলে দিলো।
;কিছু বলবা ছায়া আপু
;হুম যা ফ্রেশ হয়ে নে তোর জন্য সাপ্রাইজ আছে।
আমি কোন রকম হুম বলে দরজা আটকে ওয়াসরুমে চলে গেলাম চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম বাহিরে বের হতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো আলিফ ভাইয়ার সাথে। আলিফ ভাইয়া আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিলেন আমার দিকে এগিয়ে এসে মাথায় হাত রাখলেন
;কি রে পিচ্চু মুখের এই অবস্থা কেন। সারা রাত ঘুমাস নি চোখ মুখ কেমন ফুলে আছে
;ও কিছুনা আলিফ ভাই আসলে রেজাল্ট বের হলেই তো এডমিশান পরিক্ষা তাই পড়ছিলাম
;পড়াশুনা করছিস ভালো কথা কিন্তু নিজের যত্ন ও তো নিতে হবে তাইনা। নাহলে অসুস্থ হলে কি করে চলবে।
আমি কিছু বললাম না এরই মাঝে ভাইয়ার রুম থেকে বের হয়ে একো অত্যন্ত রুপবতী মেয়ে। এলোকেশী কন্যা বলা চলে পরনে লাল গোলাপি মিশ্রিত শাড়ি ভেজা চুল দেখ মনে হচ্ছে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। বুকটাই মোচর দিয়ে উঠলো কোন দিন ভাবেনি এই রকম একটা সিচুয়েশন তাকে ফেস করতে হবে।
;পিচ্চু এটা তোর ভাবি আফরা কালকে রা,,,,,
আমি থামিয়ে দিলাম
;আমি জানি আলিফ ভাই কালকে আমি সেখানেই উপস্থিত ছিলাম।
আমি আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে হাটা দিলাম এখানে বেশিক্ষন থাকলে সে নিজের অশ্রুর উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে যেটা সে চায়না থাকুক না কিছু কথা গোপণে কি দরকার সম্পর্ক গুলো নষ্ট করার। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে চলে গেলাম রান্নাঘরে বড় আম্মু নাশতা তৈরি করছে আমি যেয়ে চুপচাপ পিছন থেকে বড় আম্মু কে জরায় ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম
;কি হয়েছে পাকনি বুড়িটার
;কিছুনা বড় আম্মু ভালো লাগছেনা
;সারারাত জেগেছিলি নিশ্চয় তাই মাথা ব্যাথা করছে।দ্বারা আমি এক কাপ কফি করে দিচ্ছি
;তুমি কি করে বুঝে যাও আমার কি প্রয়োজন আমার
;যখন তুই ৬ মাসের ছিলি ঠিক তখন থেকে নিজ হাতে মানুষ করেছি তোকে কি ভাবে বুঝলি তোকে আমি বুঝবোনা হুম(গাল টেনে দিয়ে)
আমি কফি নিয়ে সোফার উপরে বসতেই কই থেকে বড় আব্বু মিষ্টি নিয়ে এসে আমার মুখে পুরে দিলেন হঠাৎ এমন কাজে আমি হতদম্ভ হয়ে গেলাম। ছায়া আপু আর আরিফা আমাকে দুই সাইড দিয়ে জরায় ধরলো হঠাৎ এমন কাজে আমি হতদম্ভ হয়ে গেলাম কিছু মাথায় ঢুকছেনা হঠাৎ তাদের এমন ব্যবহার কেনো
;কি হয়েছে বড় আব্বু সবাই এমন রিয়েক্ট করছো কেন
আমার প্রশ্নের জবাবে বড় আব্বু কিছু বলতে যাবে তার আগেয় ছোট আব্বু বড় আব্বুর সাথে বলে উঠলো
ঃকারন আমার মা টা গোল্ডেন পেয়েছেন। রাজশাহীর সকল পরিক্ষার্থীদের মধ্যে ২য় স্থান দখল করেছে
আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিনা অসম্ভব লাগছে আমার কাছে এটা এতো আধারের মাঝে হয়তো আলোর দেখা পাবো হয়তো নতুন কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি যেটাকে আমার শেষ ভেবেছিলাম সেটাই হয়তো আমার শুরু,,,,,,,,,,
#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২
,
,
,
,
স্বপ্ন সত্যি করার প্রথম ধাপ পেরুতে উদ্দেগ হয়েছি। সকাল থেকে সব কিছু গোছ গাছ করছে বড় আম্মু বিকালের ট্রেনে ঢাকা রওনা দিবো কালকে এডমিশান পরিক্ষা উত্তেজনায় হাত পায়ে অসম্ভব কাপুনি হচ্ছে।
২ দিন পেরিয়ে গেছে আলিফ ভাই এর বিয়ের।সুখী দম্পতি বলা চলে তাদের।এই দুই দিন নিজেকে সম্পূর্ণ পড়ার মধ্যে ডুবিয়ে রাখলেও দিন শেষে কোন না কোন ভাব চোখে চোখ পড়ে যেতো আলিফ ভাই এর সাথে হাজারো বৃথা চেষ্টা করেও পারিনি নিজের চোখ সংবরণ করতে হাজার বার মন কে বাধা দিলেও চোখ৷ দুইটা যে তার ই সন্ধান করে।সে কি আর মানে কারো বাধা।
প্যাকিং সম্পূর্ণ্য করে সবে মাত্র বিছানায় বসতেই রুমে প্রবেশ করে আফরা। আমি চোখ তুলে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলাম স্পষ্ট ঠোঁটের সাইডের কাটা চিহ্ন টা তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে বুকের বাম পাশ টা।
আফরা মিষ্টি হেসে দরজার সামনে দাড়িয়েই বলে উঠলো
;আসতে পারি মিষ্টি ননোদিনী
আমি এবার দৃষ্টি উনার দিকে নিক্ষেপ করলাম কি অমায়িক সে হাসি যে কেউ এই হাসির মায়া জ্বালে আবদ্ধ হয়ে যাবে আচ্ছা আলিফ ভাই ও কি তার এই হাসির মায়াতে জড়ায়ে ছিলো তাই তো তার চোখে আর আমার ভালোবাসা ধরা দেয় নি
ভিতর থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলে অনেক কষ্টে মাথা টা উপর নিচ করে অনুমতি জানিয়ে দিলাম আমার অনুমতি পেতেই স্বাচ্ছন্দ্যে রুমে প্রবেশ করে আমার পাশে বসে পরলো
আচ্ছা সে যদি জানতো যে আমার জন্য তার স্বামির জন্য কোন ধারণের অনূভুতি খেলা করে তাহলে কি পারতো এই ভাবে আমার পাশে এসে বসতে। উহু পারতোনা এই যে যেমন আমি চেয়েও পারিনা তার সাথে সহজ হতে।
হাতে আফরার স্পর্শ পেতেই তার দিকে তাকালাম সে মিষ্টি হেসে আমার গালে নিজের কোমল হাত স্পর্শ করে বলে মধুর স্বরে বলে উঠলেন
;নার্ভাস ফিল হচ্ছে
আমি মাথা নারালাম মানে হ্যা।তিনি মৃদু হাসলেন
;নার্ভাস ফিল করার কিছু নেই আমি যতোটুকু আলিফ এর থেকে শুনেছি আর তোমাকে এই ২ দিনে দেখেছি তুমি অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে একটা। তুমি অবশ্যই পারবে নিজের জায়গা করে নিতে।
উনার কথায় কিছুটা সাহস পেলাম
;ওইখানে এতো ভালো ভালো স্টুডেন্ট থাকবে আমি কি পেরে উঠবো ওদের সাথে
;সবসময় নিজেকে নিজের কম্পিটিটোর ভাববা অন্য কাউকে না। যখন নিজেকে নিজের প্রতিদন্ধ মনে করবা তখন দেখবা অন্য কাউকে কিছু মনেই হবেনা
কিছুক্ষণের মাঝেই তার আর আমার মাঝে থাকা সকল জড়তা কেটে গেলো।আমার মাঝে থাকা ভয় টাও কেমন যেনো উবে গেলো বড় বোনের মতো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সে চলে গেলো।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় যেয়ে দাড়ালাম
;জানিনা আমার ভাগ্যেতে ঠিক কি লিখা আছে। জানতে চায় ও না আর যা হবার হোক। তোমার যেভাবে ইচ্ছা আমার জীবন টাকে পরিচালনা করো কিন্তু দ্বিতীয় বার কারো মায়ায় জড়ায়তে দিও না কষ্ট টা যেয়ে ভিষন কঠিন হয়ে যায় সহ্য করতে।
আদৌ দোয়া টা কি কবুল হবে নাকি প্রকৃতি আগে থেকেই নতুন কিছু ভেবে রেখেছে।সামনে কি কেউ আসবে আয়রার জীবনে #প্রেমালঘ্ন নিয়ে। নাকি কবুল হয়ে যাবে আয়রার ভাঙ্গা হৃদয় এর দোয়া।
——
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম উদ্দেশ্য অজনা গন্তব্য অজনা মানুষের মাঝে যেখানে একজন বাদে আর কাউরো মুখ চেনা না। হাজারো অজনার ভিরে কোন নতুন গল্প শুরু হতে যাচ্ছে জানা নেই আমার।
ঢাকা শহরে পা রাখতেই অদ্ভুত শিহরণ বেয়ে গেলো শিরদাঁড়া দিয়ে। অজনা কোন টানে বুকের মাঝে তুমুল গতিতে বিদ্রোহ জারি করা হলো। এই অনুভূতির সাথে এর আগে আমার পরিচয় ছিলোনা।এর মাঝে বড় আব্বু ছোট বাচ্চাদের ন্যায় আগলে নিলেন আমার এক হাত অন্যহাত তখন আলিফ ভাইয়ার দখলে অদ্ভুত হলেও তার হাত ধরায় অন্যকিছু অনুভূতি হলোনা কারন সে ছোট বোন হিসেবে তার বলিষ্ঠ হাত দ্বারা আমার হাত আগলে নিয়েছেন।
৩জনে এসে পৌছালাম একটা ২তালা বাড়ির সামনে। বড় আব্বু ফোন বের করে কারো সাথে কথা বলার কিছু মুহূর্তে মধ্যেই একজন যুবোক গেট থেকে বেরিয়ে এলেন
যুবোক টিকে দেখে আমার হাসি পেলো বড্ড। ঘুম থেকে মাত্র উঠা যুবোক টি তাড়াহুড়ো করে উল্টো করে শার্ট জড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে।চুল গুলো কপালে খেলা করছে।যুবোকটি এগিয়ে এসে বড় আব্বু আর আলিফ ভাইকে জরিয়ে ধরলেন চোখ নিচু রেখেই আমার হাত থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে হাটা দিলেন আশ্চর্যজনক হলেও তিনি কোন রুপ আলাপ করলেন হয়তো আমি নামক কোন ব্যাক্তি তার চোখেই পরেনি ভিতর থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। বড় আব্বুর সাথে পায়ে তাল মিলিয়ে হাটা দিলাম উপরের দিকে।।
ভিতরে ৩টা রুম একটা কিচেন একটা ডাইনিং রুম। বড় আব্বু এক রুমে গেলেন আলিফ ভাইয়া গেলেন আসফি ভাইয়ার রুমে আর আমি গেলাম অপরটিতে। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখলাম আসফি নামক ছেলেটি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে হয়তো মাথা ব্যাথা করছে। শ্যমলা বর্ণের ছেলেটির চেহারায় আজব এক মায়া কাজ করে মাঝে মধ্যে প্রচন্ড হিংসা হয় ছেলে মানুষের মাঝে কেনো এতো মায়া থাকবে মায়া থাকবে মেয়েদের। জোড়া ভ্রু র এই পুরুষটি গল্পের বইয়ের মতো মারাত্মক সুদর্শন নাহলেও এর মাঝে আলাদা এক মায়া আছে।আলাদা এক রুপ আছে আলাদা এক পার্সোনালিটি আছে যা যে কোন মেয়েকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
আমি এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করলাম। এখানে এসে আরেক দফা অবাক হলাম কি সুন্দর পরিপাটি রান্নাঘর কোন ছেলের হয়।হঠাৎ করে মাথায় খেলে গেলো আচ্ছা এমন নই তো ভাইয়া চুপিচুপি বিয়ে করে সংসার করে।আর তার অর্ধাঙ্গিনী রান্না ঘড় টাকে এতো সুন্দর করে রেখেছে।
হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। পিছনে ফিরতেই চোখ দুইটা আটকে গেলো রক্তিম সে চোখ জোড়ায়। আচ্ছা লাল চোখ এ বুঝি কারো এতোটা সুন্দর হয়।
;এসেই শুরু করে দিলি নিজের অধিপত্যে ছড়ানো। কেন করিস এমন কি লাভ হয় তোর আমার সব কিছুর উপরে নিজের অধিপত্যে ছড়িয়ে আমার সব কিছুই তো নিজের অধিপত্যেতা বিস্তার করে নিলি কিছুই তো রইলোনা আর আমার শ্যামাঙ্গিনী
উনার উতপ্ত নিশ্বাসে আসতে করা বলা কথা গুলো হৃদপিণ্ডে অসম্ভব মাত্রাই ঝড় তুলে দিলো।বুঝলাম তিনি নিজের সজ্ঞানে নেই তাইতো বলে উঠলেন কথা গুলি।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার থেকে কিছুটা দূরে দাড়াতে নিলেই তিনি আমাকে বাধা দিয়ে নিজেই আমার হাত ধরে চাপাতির কৌটা টা সামনে আনলেন উনার হালকা উতপ্ত হাতের ছোয়া পেতেই ছিটকে গেলাম দূরে তিনি হাসলেন ছোট করে।আমি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান নিতে চাইলেন তিনি বলে উঠলেন
;যেতে হবেনা চা কর কড়া করে আমি এই মহূর্তে বানাতে পারবোনা। চা বানাতে পারিস নাকি খালি বড় হয়েছিস
আমি কপট রেগে গেলাম এমনিতেই কি বলি হিটলার তিতা করলা। আমি বিরবির করে কথা গুলো বলে চা বানাতে মন দিলাম তিনি ততক্ষণে জায়গা ছেড়ে সোফাতে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়েছে প্রচুর ক্লান্ত লাগছে উনাকে। হয়তো কলেজ থেকে মাত্র ফিরে বিছনায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতেই আমরা এসেছি।। (ওহ বলাই হয়নি আসফি ভাইয়া ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক পদে কর্মরত)
আমি সবার জন্য চা করে বড় আব্বু আর আলিফ ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসলাম। বড় আব্বু শুয়ে থেকে আরাম করছেন আর আলিফ ভাই নিজের প্রিয় মানুষ টার খোজ নিচ্ছে হয়তো বিয়ের পরে প্রথম আলাদা রাত কাটানোর কষ্ট বুকে নিয়ে বেরাচ্ছে। আচ্ছা আমার ও তো কষ্ট হয় প্রতিনিয়ত আমিও তো আগুনে দগ্ধ হয় আমার ও তো স্বপ্ন ছিলো কতো শত তাহলে আমার স্বপ্ন গুলো কেনো এই ভাবে ভেংগে গুরিয়ে গেলো
আমি হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে আসফি ভাইয়ার চা উনার টেবিলে রেখে সেখান থেকে প্রস্থান করতে নিলেই উনার ক্লান্ত মাখা গলার আবদারে পা দুইটা থমকে যায় হৃদপিণ্ডের গতি বেরে যায়।
চলবে!