প্রেমালঘ্ন পর্ব -০৩+৪

#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩
,
,
,
,
,
কি সুন্দর করে সহজ ভাবে বলে উঠলেন আসফি ভাই
;একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি

উনার এই আবদার চাইলেই আমি সুন্দর করে ফিরিয়ে দিতে পারতাম। আর দেওয়া উচিৎ ও কিন্তু কেন জেনো কোথাও একটা বাধা পেলাম মনের কোন এক জায়গা থেকে আওয়াজ এলো “তিনি ভালো নেই কষ্টে আছেন তার এই মহূর্তে তোকে প্রয়োজন তুই পারিস না তাকে অবজ্ঞা করতে “””

পা দুইটাও যেনো মস্তিষ্কের সাথ ছেড়ে মনের কথা শুনে আসফি ভাইয়ার দিকে এগুনোর জন্য আমার সাথে বিদ্রোহ জারি করলো পারলাম না নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলাম না তাকে এই রুপ কষ্টের মাঝে রেখে চলে যেতে

আমার হাতের স্পর্শ পেতেই টের পেলাম তিনি হালকা নড়ে উঠলেন যেনো তার সারা শরীরে অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি হলো।আমি আনমনেই হালকা হাসলাম।

;এখনো আগের মতো পাগলী রয়ে গেলি তাই না

উনার মুখে পাগলী শুনে মন আমার ক্ষিপ্ত হলো আর সেই কারণে দিলাম তার মসৃণ চুলে টান। তিনি ব্যাথায় মৃদু আহ বলে উঠলেন। আমি অজান্তেই উনার ব্যাথায় খিল খিল করে হেসে উঠলাম। তিনি আমার হাত ধরে সামনে নিয়ে এলেন আমি অবাক হলাম তার কান্ডে।তিনি আমার হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নিজেও একটা কাপ হাতে তুলে নিলেন

তিনি প্রথমে চুমুক দিলেন আমি মনের অজান্তেই উনার দিকে তাকালাম যে কেমন হয়েছে জানার আশায়। আমি জানি আমার চা টা বরাবরই ভালো হয় বাড়ির সবার ই আমার হাতের বানানো চা টাকে একটু বেশি ভালোবাসে।তবুও কেন জেনো মনের কোণার সুপ্ত ইচ্ছা সামনে থাকা মানব টির মুখের বাক্য।আমার মনের এই সুপ্ত আশাটা হয়তো তার মনের কড়া নারায় তাইতো তিনি।বলে উঠলেন

;হুম যাক মা তোকে বসে বসে খাওয়াইনি ভালো করে কিছু একটা শিক্ষায়েছে।নাহয় এতোদিনে শুয়ে বসে থেকে একদম ফুলে তো হাতি হয়ে যেতি।

উনার এই ব্যাঙ্গাত্মক সরুপ কথাই আপন মনেই মুখটা আমার ফুলে গেলো। উনি বরাবর ই এমন সব সময় আমার পিছনে লাগবেন জানা নেই তার এতে কিসের আনন্দ হয়।।

সন্ধ্যার দিকে রওনা হতে হলো বড় আব্বু আর আলফি ভাইয়া কে তাদের ফ্যাক্টারিতে নাকি আগুন লেগেছে।বড় আব্বুর অনেক কষ্টের এই ফ্যাক্টরির এই অবস্থা শুনে তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। তাইতো সে সন্ধ্যাই আমাকে আসফি ভাইয়ার হাতে দিয়ে রওনা হলেন

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে ছিলাম আসফি ভাইয়ার দিকে পুরাটা সময় তিনি নিশ্চুপ ছিলেন তার ভঙ্গি ছিলো উদাস। হয়তো আমার দ্বায়িত্ব নিতে তিনি ইচ্ছুক ছিলেন না বা বিরক্ত ছিলেন বুঝা গেলোনা। আমি নিজের রুমে গেলাম পড়তে হবে কালকে পরিক্ষা।

চিন্তা গুলো আবার এসে মাথায় দলা পাকতে শুরু করলো কিছুই মাথায় ঢুকছিলোনা অতিরিক্ত উত্তেজনায় যা মনে ছিলো সেগুলো ভুলতে বসেছিলাম এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না কান্না করে দিলাম

এর মাঝেই উদগ্রীব হয়ে রুমে প্রবেশ করলেন আসফি ভাই হয়তো পাশের রুম থেকে আমার কান্নার আওয়াজ শুনেই ছুটে এসেছেন। আমি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকালাম এতেই বুঝি তিনি বেসামাল হয়ে উঠলেন।তার মুখটা হঠাৎ করুন হয়ে উঠলো

আমার সামনে আসতেই আমি উনার কোমড় জড়ায়ে কান্না করে দিলাম অশ্রু গুলো যেনো কোন মতেই থামতে চায়ছেনা। তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন এতে যেনো আমার অশ্রু ধারা আরেকটু পশ্রয় পেলো

;ঢাকা ইউনিভার্সিটি আমার স্বপ্ন হাজারো না পাওয়ার ভিরে এমন এক স্বপ্ন যেটা না পূরন হলে আমার বাচার আর কোন মানে থাকবে না সব হারিয়ে বর্তমানে আমি নিঃস্ব। কিন্তু এটাকে আমি হারাতে পারবোনা এটা আমার বাচার একটা মাত্র উপায়।আমি চাইনা আর ওই বাড়িতে যেতে আমার যে সহ্য হয়না আমি হাজারো চেষ্টা করলেও নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ আমি বাচতে চায়

;ওহে শ্যামাঙ্গিনী তোর ওই কাজল এর মতো কালো চোখে যে এই অশ্রু কোনা গুলো বড্ড বেমানান।তোর ওই চোখে শুধু শোভা পায় হাসির প্রতিফলন। এভাবে যে আমি বেসামাল হয়ে পরি সেটা কি আমার শ্যামাঙ্গিনী বুঝতে পারে।তার ছোট ছোয়ায় যে এই মরুভূমির ন্যায় মানুষের বুকটাই যে তোলপাড় তৈরি করে ওহে শ্যামাঙ্গিনী সেটা কি তোর জানা।।

চোখের অশ্রুর দলা গুলো আপনমনেই বন্ধ হয়ে গেলো। অবাক চোখে উনার শুভ্র মুখশ্রীর দিকে অবকলন করলাম। শান্ত চেহারায় থাকা দুইটি নয়ন অতিরিক্ত অশান্ত। তার সারা শরীরে অদ্ভুদ কম্পন টের পেলাম কিসের এই কম্পন আমার ছোয়াই কি এই শক্ত পুরুষটির এই হাল।

তিনি আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখের নিচে লেগে থাকা অশ্রু মুছে দিলেন আমি তখন ও তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমার মুখের সামনে পানির গ্লাস ধরতে এক নিমিষেই সম্পূর্ণ টা শেষ করে ফেললাম

সারারাত নিজেও আমার পাশে থেকে আমাকে পড়াতে সাহায্য করলেন যে জিনিস টা বুঝতে পারি নি সেটাও সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন উনার এই সুন্দর পড়ানোর জন্যেই হয়তো যে ভার্সিটি থেকে পাশ করেছেন সেই ভার্সিটিতে কর্মরত আছেন।। আমি উনার দিকে তাকিয়ে এইসব ই ভাবছিলাম এর মাঝেই তিনি একটা খাতা রোল করে আমার মাথায় টোকা দিলেন।আমি অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই তিনি আমার দিকে কড়া চাহনী নিক্ষেপ করলেন।দমে গেলাম আমি বইয়ের পাতায় মুখ গুজলাম। পড়তে পড়তে কখন ১০টা বেজে গেছে টের ই পেলাম না। এদিকে যে আসফি ভাই আমার পাশে নেই সেটাও আমার মস্তিষ্ক টের পেলোনা। পেলো যখন তিনি এক প্লেট ভাত নিয়ে আমার সামনে হাজির হলেন হয়তো এতোক্ষন রান্না করলেন। বড্ড মায়া হলো ঘেমে যাওয়া সে মায়া দিয়ে পূর্ণ্য মুখটাই ইচ্ছা করলো টুপ করে উনার ঘাম টা মুছে দিতে।।

তিনি আমার সামনে চেয়ার নিয়ে বসলেন এক হাত দিয়ে বইটা নিজের সামনে নিলেন অন্য হাত দিয়ে ভাত মেখে লোকমা করে আমার মুখের সামনে ধরলেন

আমি সেটা দেখে ইতস্তত হয়ে বলে উঠলাম
;আমি নিজে খেতে পারবো

তিনি।শুনলেন না আগের ন্যায় মুখের সামনে ভাতের লোকমা ধরে রইলেন আমি না পেরে সেটা মুখে পুরে নিলাম এদিকে আমার ঠোঁটের ছোয়া পেতেই তিনি চোখ বন্ধ করে জোড়ে নিশ্বাস নিলেন যেনো কেউ উনার শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছে।

তিনি একটা করে লোকমা খাওয়াতে লাগলেন একটা করে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন যেগুলোর এন্সার করতে অক্ষম হলাম সেগুলো মার্ক করে রাখলেন। খাওয়ানো শেষ হতেই বইটা আমার হাতে দিয়ে মার্ক করা প্রশ্ন গুলো পড়তে বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।।

_________

স্বপ্নের ভার্সিটির সামনে দাড়াতেই সারা শরীর বেয়ে অদ্ভুদ শিহরন টের পেলাম আলাদা এক ভালোলাগায় সর্বাঙ্গ ছুয়ে গেলো।রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে আসফি ভাইয়া আমার পাশে এসে দাড়ালেন এতোক্ষন যেগুলো মানুষ আড্ডা আর বই পড়তে ব্যস্ত ছিলো তাদের চোখ জোড়া ধীরে ধীরে আমার দিকে পড়লো।সবার এমন তাকানোর মানে বুঝলাম না এরই মাঝে আমার হাত আসফি ভাইয়ার শক্ত হাতে টের পেলাম। কেন জানিনা আলাদা একটা অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করালো হতে বাধ্য করলো এই ছোয়া আমাকে।আমি এক বার ভাইয়ার হাতের মাঝে নিজের হাতের দিকে তাকাছি তো একবার আশেপাশে উপস্থিত ব্যাক্তিদের উপর এখনো তাদের দৃষ্টি আমার দিকে এবার আমি নিজের দিকে তাকালাম। নীল থ্রীপিস এর সাথে গোল্ডেন হিজাব বেধেছি মুখে লাগানো রয়েছে মাস্ক। ব্যাস আমি এবার ভাইয়ার শার্ট ধরে টান দিয়ে ভাইয়াকে খানিকটা নিচু করলাম আমার এমন কাজে তিনি ভ্রু কুচকে তাকালেন। আমি উনার এই দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলে উঠলাম

;আমাকে কি বাযে লাগছে বা অন্য কিছু

আমি ভেবেছিলাম তিনি আমার এমন প্রশ্নে আমাকে ধমক দিবেন কিন্তু না তিনি সেটা করলেন না উলটো মিষ্টি ও গম্ভির সুরে বলে উঠলেন

;তোমাকে নীল রাঙা তে ঠিক কতোটা মহোনীয় লাগছে তা ভাষাতে বর্নণা করা কোন সাহিত্যে বিদের দ্বারাও হয়তো অসম্ভব শ্যামাঙ্গিনী সেখানে আমি তো তুচ্ছু মানব। নীল রঙ মোহনীয় হয়তো এতোটা হতোনা যতোটা তোমার ছোয়া পেয়ে হয়েছে শ্যামাঙ্গিনী

উনার ফিসফিস করে বলা কথাটি মনের মাঝে ঝড় তুলে দিলো আমার আচ্ছে কারো কথায় এতোটা মোহে ঘিরে থাকে।কেউ কি এতোটা মোহনীয় হয় যতোটা তিনি আমাকে বর্ননা করলেন।

চলবে।#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৪
,
,
,
,
পরিক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এলাম উচ্ছ্বসিত হয়ে আলহামদুলিল্লাহ পরিক্ষা টা ভালোই হয়েছে আশার চেয়ে অনেক গুন বেশি ভালো অবশ্য তার বেশির ভাগ শ্রেয় যায় আসফি ভাইয়ার উপর। আশেপাশে আখি জোড়া খালি ওই মানুষ টাকে ই খুজছে । কিন্তু মানুষ টার তো কোন খোজ ই নাই। ভয় হতে লাগলো কই গেলো তার তো কথা ছিলো সে এখানেই অপেক্ষা করবে আমার জন্য তাহলে কি সে চলে গেলো আমায় না নিয়ে।অপেক্ষার প্রহর কি একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছিলো যে সে অধৈর্য হয়ে সেখান থেকে আমিই বিহীন ই রওনা দিলো।

ভয়ে অভিমানে চোখ জোরায় ঠায় নিলো অশ্রু কোণা।ঠিক সেসময় মনে হলো কেউ হিজাবের উপরে কিছু আটকাচ্ছে।আমি মাথায় হাত দিতেই বুঝতে পারলাম সেটা কোমল কোন ফুল না দেখার কারণে ফুল টার নাম টা বলতে অক্ষম হলেও মানুষটার গন্ধ বুঝতে আমি সময় নিলাম না উহু এটা কোন পারফিউম এর কৃত্রিম সুগন্ধ না এটা তো প্রাকৃতিক এক সুগন্ধ। সবার নিজেস্ব একটা সুগন্ধ থাকে কিন্তু আসফি ভাইয়ার এই সুগন্ধি মনকারা।

আমি পিছনে ঘুরেই জায়গা করে নিলাম উনার প্রসস্থ বুকে তিনি হঠাৎ এমন কাজের জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলোনা তাই তো পিছিয়ে গেলো দুইপা কিন্তু ভুল ক্রমেও তার হাত ঠেকলোনা আমার শরীরে। বরং ডান হাত রাখলেন আমার মাথায়।

;কই ছিলেন আপনি জানেন কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম মনে করেছিলাম

বলেই থামলাম তিনি হয়তো আমার এই বাচ্চামো স্বভাবে হাসলেন যেটা আমার দৃষ্টি গোচর হলোনা

;ওহে শ্যামাঙ্গিনী তুই কি জানিস তোর প্রতিটি স্পর্শ পাগল হয় এই মানব। তোর শরীর থেকে পাওয়া ঘ্রান এই ২৬ বছরের যুবক কে পুনরায় ২০ বছরের কিশোর হতে উৎসাহ দেয়।

উনার এরুপ বাক্যে মনের অজান্তেই লজ্জাই কুপোকাত হয়ে সরে আসলাম। তিনি তো বরাবর ই এমন কখনো কাব্যিক তো কখনো হিটলার তার যে বহুরুপ

;কই গেছিলেন
;শ্যামাঙ্গিনীর সৌন্দর্য টাকে আরেকটু বৃদ্ধি করার উপায় খুজতে গেছিলাম

উনার এরুপ ফিসফিসানো বাক্য শুনে নতুজাত হলাম এই সুঠাম দেহী মানব টা কি জানে তার এরুপ কর্মকান্ডে ঠিক কতোটা লজ্জা ভোগ করতে এই মানবীটাকে।।

______

রেজাল্ট দিবে ১ মাস পরে এই ১ টা মাস ঢাকাই থাকার কোন প্রয়োজন নেই বলেই বোধ করলেন বড় আব্বু।ফ্যাকটারিও এখন ঠিক আছে বেশি ক্ষতি হয়নি।তাই তিনি জানালেন কালকে আসবেন তিনি আমাকে নিতে। আমি ছোট করে হ্যা বলে ফোন টা রাখলাম। কেনো যেনো যেতে ইচ্ছা করছেনা রাজশাহী নামক জায়গাটাই। ইচ্ছা করছে না আলিফ নামক সে পুরুষ টির মুখোমুখি হয়ে দাড়াতে। কি করে বুঝায় বড় আব্বুকে মনের মাঝে উঠা ঝড়ের কথা কি করে বুঝাই সকালে ভিজা চুলে আফরা নামক রমনীটাকে দেখলে যে রক্তক্ষরণ হয় এই মনে।।

ধোয়া উঠা কাপটা দৃষ্টি গোচর হতেই জানালা থেকে মাথাটা সরায়ে কাপটার দিকে দৃষ্টি স্থির করলাম।

;কি হলো মগটা নে নাকি এই দেড় ঘন্টা পরিক্ষা দিতেই হাত টা অচল হয়ে গেলো তোর বলি কি শশুড় বাড়িতে যেয়েও কি এমন অর্কমার ঢেকি হয়ে থাকবি নাকি

আমি জবাব দিলাম না। এমনি সময় হলে এটা নিয়ে হয়তো ভাইয়ার সাথে পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে কিন্তু এই মহূর্তে মন চাচ্ছেনা। যতই চেষ্টা করছি নিজেকে শক্ত করতে ততোই দুর্বল হয়ে পরচ্ছি চায় না কেউ দেখুক আমার দুর্বলতার চিহ্ন বহন করা এই অশ্রু কণা।

;ঘুরতে যাবি

আমি এবার তাকালাম উনার দিকে খুব ইচ্ছা করছে হ্যা বলতে কিন্তু মস্তিষ্ক নাহ বলতে উৎসাহ দিচ্ছে।কেন বারবার এই মানুষ টার জন্য আমার সাথে আমার মন বিদ্রোহ জারি করে দেয়।ঠিক আলিফ ভাইয়ার বেলায় যেমন হতো প্রতিবার চাইতাম তাকে মনের অনুভূতি গুলো জানায় দিয়ে মস্তিষ্ক বার বার আমাকে ঠেলতো আলিফ ভাইয়ার দিকে কিন্তু মন সে আমার মতের বিরুদ্ধে যেয়ে আমার সাথে বিদ্রোহ জানাত।

আসফি ভাইয়ার আমার উত্তরের অপেক্ষা করলেন এমন ভাব করলেন যেনো তিনি জানেন আমার উত্তর হ্যা তাইতো আমার হাত ধরে নিয়ে এলেন বাহিরে সে কি অধিকার সে কি টান যেনো হাত টা আমার নয় তার ব্যাক্তিগত সম্পদ তার অধিকার।

তিনি বাহিরের গেটে তালা মেরে পুনরায় হাটা দিলেন।একটাবার এর জন্যও ছাড়লেন না আমার হাত টা।

মেন ফটোক পার হতেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আসফি ভাইয়া এবার আমার দিকে চাইলেন আমি চোখ জোড়া নামিয়ে নিলাম উনার ওই গভীর চোখে তাকানোর সাহস আমার কোন কালেই ছিলোনা কিসের যেনো একটা ভয় হয়।

;ভাইয়া আমি এই ভাবে কি করে যাবো

মাথা নিচু করে কথাটা বলে উঠতেই তিনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন কিছুটা দূরে সরে গেলেন এবার আমি সরাসরি চাইলাম উনার পুরুষালি কঠিন গম্ভীর মুখটার দিকে।তিনি উপর থেকে নিচ আমাকে পরক্ষ করলেন আমি ইতস্ত বোধ করলাম। উনি এবার কাছে এলেন ওর্ণা টার এক মুরি নিজের হাতে তুলে নিয়ে সেটা মাথায় দিয়ে দিলেন।

;শ্যামাঙ্গিনী তুই কি জানিস তোর এই অগোছালো খোলা চুল চোখে লেপ্টে থাকা কাজল মাথায় দেওয়া এই ওর্ণাতে ঠীক কতোটা এই প্রেমিক পুরুষ কে আকৃষ্ট করে

আমি নতুজাত হলাম লজ্জায়।লোকটার হয়েছে কি জানা নেই আমার।অবশ্য আমার জানা না জানাতে তার তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মন হয়না সে তো আমাকে পুনরায় নিয়ে যেতে লাগলেন উনার পরিচিত গন্তব্যেতে আর আমার জন্য সেটা অপরিচিত গন্তব্য। কিন্তু মন্দ লাগছেনা উনার হাতের ভাজে নিজের ছোট হাতটা রেখে উনার পায়ের সাথে তাল।মিলিয়ে হাটতে। নতুন এক অনুভূতি ছিলো এটা গোধূলি লঘ্নে পরিচিত এক অ-প্রেমিক এর হাতে হাত দিয়ে হাটতে।আচ্ছা এটা কি শুধুই গোধূলি লগ্ন নাকি #প্রেমালঘ্নের শুরু।

আমি উনার দিকে চাইলাম আশেপাশের পরিবেশের দিকে তাকানোর ইচ্ছাটা এই মহূর্তে মন কে নাড়া দিচ্ছেনা বরং এই মহূর্তে পাশে থাকা ব্যক্তিটার উপর গবেষণা করতে ইচ্ছা করছে।আলিফ ভাইয়ার ভাই হওয়ার স্বর্তেও দুই ভাইয়ের চেহারায় বেশি কোন মিল নেয়।শুধু দুইজনার ভ্রু তে কালো তিল রয়েছে তাও আবার একই জায়গায় একই সমান। এটা আমি আগে খেয়াল করি নি। আগে কোন দিন ভাইয়াকে এতো কাছ থেকে যে দেখাও হয়নি।

;আমাকে দেখা হলো নাকি আরও বাকি আছে

সামনের দিকে হাটতে হাটতেই কথা টা বলে উঠলেন তিনি আমি সাথে সাথেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। লম্বা এক নিশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিলাম যেনো নিশ্বাস কেউ গলার মাঝেই আটকে রেখেছিলো।

;এমন ভাবে নিশ্বাস নিচ্ছিস যেনো তুই কোন চুরি করেছিস আর আমি সে চুরি ধরে নিয়ে তোর গলা আটকে রেখেছিলাম।

;এ এমন কিছুই না আসফি ভাই

;এমন যে অনেক কিছু সেটা তোর তোতলানোই বলে দিচ্ছে তোতলারানী।

;আমি তোতলা রানী না

;তুই এখনো সে ছোট বেলার মতোই তোতলি রয়ে গেলি রে তোতলারানী

উনার এরুপ কথায় রাগ হলো আমার গাল ফুলায়ে অন্য দিকে যেতে নিলেই বাধা পরে আমার হাত।আমি তো ভুলেই গেছিলা৷ যে আমার হাত বন্ধি এই হিটলার নামক লোকটার হাতের ভাজে।আমি কিছু বলার জন্য পিছনে ঘুরতেই একটি মেয়েলী মধুর কন্ঠ আমার কানে বারি খেলো

;আসু(আসফি)

আমি আর আসফি ভাইয়া দুইজনেই তাকালাম। আমার ভ্রু জোড়া কুচকে গেলেও আসফি ভাইয়া ছিলেন শান্ত আর নির্বিকার যেনো এমন কোন শব্দ তিনি বহুবার শুনেছেন। সুন্দর করে পরিপাটি করে শাড়ি পরিহিত মেয়েটি কাছে আসতেই আসফি ভাইয়ার হাতের বাধন টা ছুটে গেলো।আমি অবাক হলাম

;মিতালি তুমি।

;হুম তুমি যাবানা রুহান এর বাসায়।

;আমার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো

;তো কি হলো এখন চলো।আর এই মেয়েটা কে

;এই আমার চাচ্চুর মেয়ে এক্সাম দিতে এসেছিলো কাল চলে যাবে দেখে ওকে নিয়ে বের৷ হয়েছিলাম

;ওহ। এই ছোট আপুনি আমাদের অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড এর বাসায় আজকে অনুষ্ঠান আসু না গেলে সবাই মন খারাপ করবে এমনকি আসুও । তুমি ওকে আমার সাথে আসতে দেও

আমি আসফি ভাই এর দিকে তাকালাম উনার চোখে বিরক্তি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। কিসের এই বিরক্তি বুঝলাম আমার উপর কি এই বিরক্তি কারন আমার জন্যই তিনি তার ফ্রেন্ড এর অনুষ্ঠানের কথা বেমালুম ভুলে গেছিলেন।

;আপনাদের ফ্রেন্ড আমি বাধা দেওয়ার কে আপু

আসফি ভাইয়া যেনো অবাক হলেন। তিনি কি এটা মনে করেছিলেন আমি উনাকে যেতে বারণ করবো?

;তুই যাবি আমার সাথে

উনার প্রশ্নে তাকালাম মিতালি নামক মেয়েটির দিকে। হাসিখুশি মেয়েটির মুখ টা কেমন অন্ধকার নেমে এলো হয়তো ফ্রেন্ড দের মাঝে বাহিরের কারো প্রবেশ এর জন্য।আমি মৃদু হাসলাম মাথা দুই সাইডে নাড়িয়ে জানামাল নাহ

;তাহলে আমিও যাচ্ছিনা

আসফি ভাইয়ার এমন কথায় আমি মিতালি দুইজনেই থমকালাম

;সে কি না না আপনি প্লিজ জান আর তাছাড়াও আমাকে প্যাকিং করতে হবে ওলরেডি সন্ধ্যা নেমে এসেছে।আপনি প্লিজ যান

অনেক জোড়াজুড়ি করার পরে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। উনার এই দৃষ্টিতে আমার বুকের মাঝে জড় তুলে দিলো। কারো শান্ত দৃষ্টিও বুঝি এতোটা ভয়ংকর হয়।তিনি আমার হাতে চাবি দিয়ে হাটা ধরলেন তার পাশে হাটা ধরলো শাড়ি পরিহিত সে রমনীটাও।

ইশ কি সুন্দর না লাগছে দুইজন কে পাশাপাশি। কালো পাঞ্জাবী পরিহিত সুদর্শন পুরুষটির পাশে নিল রাঙা শাড়িতে সুন্দরী এক রমনী।ডুবন্ত সূর্যের আলোতে অপূর্ব লাগছে। আমার ভিতর থেকে চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। হাটা ধরলাম পিছন দিকে। কিছুক্ষন আগে যে দুই মানব মানবী একই সাথে হাতে হাত দিয়ে একই রাস্তাই যাচ্ছিলো কিছু সময়ের ব্যবধানে এখন দুইজন দুই রাস্তাই পুরুষটি এখনো হাটছে কিন্তু তার পাশের মানবী এখন অন্য কেউ আমিও একই ভাবে এগুচ্ছি কিন্তু আবারো আমার পাশের জায়গাটা ফাকা

কি মনে করে আখি দুইটা পিছনে ঘুরালাম। মিতালী নামক মেয়েটি রিক্সাই উঠছে। আসফি ভাইয়া যত্ন করে শাড়ির আচল টি ঠিক করে রিক্সাই উঠায় দিলেন। আমি হাসলাম জানিনা সে হাসিতে কি ছিলো মুগ্ধতা নাকি বিষন্নতা।

প্রেমালঘ্ন শুরু হওয়ার আগেই কি তাহলে শেষ হয়ে গেলো দুইজনার সে মধুর লঘ্ন।পুনরায় কি আসবে তাদের একসাথে চলার পথ নাকি এখানে সমাপ্তি ঘটে যাবে।।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here