#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__১৯
#অদ্রিতা_জান্নাত
খুব বাজে ভাবে মাথা ব্যাথা করছে ৷ এটা কাল রাতের ফল ৷ সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি ৷ শুধু চোখ দিয়ে পানি পরে গেছে ৷ মাথা চেপে ধরে উঠে বসলাম ৷ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি এখনো গতকাল রাতের কলটা কাটা হয় নি ৷ মানে সেই রাত থেকে এভাবেই রয়েছে? ইশান কাঁটে নি কেন? পুরো ০৭ ঘন্টা ১৪ মিনিট কল টাইম ৷ কলটা কেটে ফোন চার্জ দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ৷
সেই কখন থেকে ইশিতার ফোনটা বেজে চলেছে কিন্তু ওর ধরার কোনো সময়ই নেই ৷ চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম বেরিয়ে কপাল কুচকে ফেললো ৷ এই ফোনটা ওকে শান্তি মতো গোসলও করতে দিল না ৷ ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে ঝাঁঝালো গলায় বললো,,,,,,,,
ইশিতা : তোমার কি সমস্যা বলো তো? মাত্রই তো কলটা কেটে গেলাম ৷ এখন আবার কি হলো?
ওপাশ থেকে ইশান বললো,,,,,,,,
ইশান : বাহিরে এসো ৷
ইশিতা : মানে?
ইশান : আরে তোমার রুমের ব্যালকনিতে আসো একটু৷
ইশিতা : কিন্তু কেন?
ইশান : উফ বাবা একটু আসো না!
ইশিতা কানে ফোনটা এভাবে ধরেই ব্যালকনিতে চলে গেল ৷ গিয়ে দেখে ইশান নিচে দাঁড়িয়ে আছে আর হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ৷ ইশিতা একটা ধমক দিয়ে বললো,,,,,,,,,
ইশিতা : এখানে কি করছো তুমি? যাও ৷
ওপাশ থেকে ইশান কিছু বললো না দেখে ইশিতা আবার বললো,,,,,,
ইশিতা : আরে কি হলো? কিছু বলছো না কেন?
ইশান : তোমাকে আসতে বলেছি দেখে এভাবে এসে পরবে?
ইশিতা : মানে?
ইশান হালকা শব্দ করে হেসে বললো,,,,,,,
ইশান : হুম নিজেকে দেখো ভালো করে ৷
ইশিতা কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা মনে পরতেই পিছনে ঘুরে রুমের দিকে চলে গেল ৷ নিজের জামা কাপড় নিতে ভুলে গিয়েছিল তাই টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়েছিল ৷ সেটাও ভুলে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য ৷ ওপাশ থেকে ইশান আবার বললো,,,,,,,,,
ইশান : চলে গেলে কেন? ভালোই তো লাগছিল ৷
ইশিতা : চুপ করো ৷ অসভ্য একটা ৷ যাও তো তুমি ৷ এখানে কেন এসেছো ৷
ইশান : তোমাকে দেখতে ৷
ইশিতা : দেখা হয়েছে? এবার তো যাও ৷
ইশান : উহু ৷ নিচে আসো ৷
ইশিতা : কেন?
ইশান : আজকের দিনটা আমাকে দিবা প্লিজ? শুধু আজ ৷
ইশিতা : এভাবে বলছো কেন? আমার তো কিছু করার নেই ৷ নাহলে আজ কেন? সারাজীবনই তোমার কাছে থাকতাম ৷
ইশান : তুমি বাহিরে আসো আমি ওয়েট করছি ৷ প্লিজ আসবে ৷
ইশিতা : আচ্ছা দেখছি ৷
ওপাশ থেকে ইশান কিছু বললো না তাই ফোন রেখে দিলাম ৷ গিয়ে চেঞ্জ করে একটা শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম ৷ বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই বাপি পিছন থেকে ডেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,
—- কোথায় যাচ্ছো?
ইশিতা : এখন কি বাহিরেও যেতে পারবো না আমি? আপনার কথা মতোই তো সব করছি ৷ তাহলে কেন এরকম করছেন?
—- বিয়ের আগে বাহিরে যেতে পারবে না তুমি ৷
ইশিতা : তো গলা টিপে মেরে ফেলুন আমাকে ৷ এভাবে তিলে তিলে মারার থেকে একবারে মরে যাওয়া অনেক ভালো ৷
পিছন থেকে ইতি বলে উঠলো,,,,,,,,,
ইতি : আমিও যাবো ওর সাথে ৷
আরমান চৌধুরি কপাল কুচকে বললেন,,,,,,
—- কিন্তু যাবে টা কোথায়?
ইতি : কাল না বললে? শপিং করতে যাবো আজ ৷ তাহলে এরকম কেন করছো? পালিয়ে তো আর যাবো না, না?
ইশিতা : এই লোকটাকে এসব বলে কোনো লাভ নেই ৷ এ না কিছু শুনবে না কিছু বুঝবে ৷
বলেই ইশিতা ভেতরে যেতে নিলে ওর বাবা বলে উঠলো,,,,,,,,,
—- যাও তোমরা তবে সন্ধ্যের আগে বাড়িতে দেখতে চাই তোমাদের ৷
বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ ইশিতা ইতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,
ইশিতা : থ্যাঙ্কিউ আপুই ৷
ইতি : হুম চল তুই ৷ ইশানের সাথে দেখা করবি তো ৷
ইশিতা : তুই কি করে…?
ইতি : আমি আমার বোনকে চিনি ৷ নে এবার চল ৷
বলেই ওরা দুজনে বেরিয়ে গেল ৷ ইতি অন্য রাস্তা দিয়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷ ইশিতা একটু সামনে আগাতেই ইশানকে দেখতে পেল ৷ একটা বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ইশিতা ইশানের কাছে গেলে ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,,,,,,
ইশান : ওঠো!
ইশিতা : কার বাইক এটা?
ইশান : ভাইয়ার ৷ আজকের জন্য নিয়ে এসেছি ৷
ইশিতা আর কিছু না বলে উঠে বসলো ৷ ইশান বাইক স্টার্ট দিলো ৷ ইশিতা ইশানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে দিল ৷ বাইকের সাইড গ্লাস দিয়ে ইশান বারবার ইশিতাকে দেখছে ৷ মেয়েটার চোখের পানিতে ইশানের গাঁয়ের শার্ট ভিজে যাচ্ছে ৷ ইশিতার চোখের পানিতে ইশানের বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে ৷ কিন্তু কিছু করতে পারছে না ও ৷
কিছুক্ষন পর বাইক থামালে ইশিতা নেমে আশপাশটা দেখতে লাগলো ৷ চারপাশে গাছ আর দূর দূরান্ত পর্যন্ত রাস্তা ৷ সামনেই একটা বিস্তর মাঠ ৷ আর এই মাঠের মাঝখানে একটা ফুলের দোলনা ৷ মাঠটার একপাশে একটা বড় নদী আরেক পাশে রাস্তা ৷ সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ওরা ৷ চারপাশে ফুলের সুভাশ ছড়িয়ে পরেছে ৷ প্রকৃতির একটা ঠান্ডা বাতাস এসে ইশিতাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে ৷ হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে লাগলো ৷ বৃষ্টির আর ফুলের সুগন্ধ একসাথে হয়ে অন্যরকম একটা মিষ্টি সুভাশ ভেসে যাচ্ছে জায়গা জুড়ে ৷
ইশিতা একটু একটু করে এগিয়ে গেল সামনের দিকে ৷ দুপাশে হাত ছড়িয়ে বৃষ্টির প্রত্যেকটা ছোঁয়া অনুভব করতে লাগলো ৷ বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে ৷ ইশান বাইকের সাথে হেলান দিয়ে হাতে হাত গুজে ইশিতাকে দেখে যাচ্ছে ৷ একটা নেশা ধরে যাচ্ছে ওর ৷ আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে গেল ৷ ইশিতা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন ভিজে তারপর পিছনে তাকালো ৷ ইশানকে ওর পিছনে দেখে চমকে উঠলো ৷
ইশান এক টানে ইশিতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ ইশিতার গাঁয়ের শাড়ি পুরো ভিজে গাঁয়ে লেপ্টে আছে ৷ চুলগুলো মুখের উপরে লেপ্টে আছে ৷ ইশান এক হাতে সেই চুল গুলো সাইডে সরিয়ে দিয়ে ইশিতাকে আরো চেঁপে ধরলো ৷ ইশিতার চোখের পাতা, ঠোঁট ক্রমশ কাঁপছে ৷ সেটা ইশানকে আরো টানছে ৷ মুখটা এগিয়ে নিয়ে ইশিতার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো ইশান ৷ ইশিতা কেঁপে উঠলো ৷
বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷ চারপাশে গাছপালা, ঘাস, ফুল, নদীনালা সব বৃষ্টির পানিতে সজীব হয়ে উঠেছে ৷ প্রকৃতি এক অন্য রকম সৌন্দর্য লাভ করেছে আজ ৷ এক অন্য রকম খেলায় মেতে উঠেছে ৷ আর এই খোলা আকাশের নিচে রয়েছে দুটো অসম্পূর্ণ ভালোবাসার মানুষ ৷ তাদের ভালোবাসার সব কষ্ট আজ বৃষ্টির পবিত্র পানিতে ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷
ইশান ইশিতাকে ছেড়ে দিয়ে ওকে পিছনে ঘুরিয়ে ওর কোমড় চেপে ধরলো ৷ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,,,,, “ইশুপাখি?”
ইশিতা কিছু বললো না চুপ করে রইলো ৷ ইশান ইশিতাকে কোলে তুলে নিল ৷ সেই ফুলের দোলনায় গিয়ে ইশান ইশিতাকে কোলে নিয়ে বসলো ৷ ইশিতা ইশানের বুকে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো ৷ হয়তো এটাই ইশানের কাছে আসার শেষ দিন ওর ৷ দুদিন পর তো আবার অন্য কারো হয়ে যাবে ও ৷
বৃষ্টি থেমে গেছে ৷ আধার কেটে আকাশের সূর্যটাও উঁকি মেরেছে ৷ আশেপাশের সবকিছু হালকা আলোতেই জ্বলজ্বল করছে ৷ বৃষ্টির পানি গুলো চিকচিক করছে ৷ তবে ইশিতার মনের আধার কেটে আশার আলো এখনো জ্বলে উঠে নি ৷ যেমন ছিল তেমনই আছে ৷ এক দৃষ্টিতে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে ও ৷ মনটা আজ ছটফট করছে ৷ ইশানের ছোঁয়া পেয়ে ওর মনের ভিতর এক অন্যায় আবদার বারবার জেগে উঠছে ৷ একটু খানি ভালোবাসার জন্য ওর মনটা ছটফট করছে আজ ৷ ইশান ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ওর গালে আলতো করে হাত রেখে মুখটা ঘুরিয়ে ওর মুখের মুখামুখি করলো ৷ ইশিতার চোখের পানি ইশান ঠোঁট ছুঁইয়ে শুষে নিল ৷ কাতর চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
ইশান : কেঁদোনা ইশুপাখি! তোমার কান্না সহ্য হচ্ছে না আমার ৷ কেঁদো না প্লিজ ৷
ইশিতা ইশানের বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,,,,
ইশিতা : খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে আমার ৷ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে আজ ৷ তোমার থেকে দূরে যেতে পারবো না অামি ৷ মরে যাবো আমি ৷ অন্য কারো হয়ে বেঁচে থাকতেও পারবো না আমি ৷ পারবো না আমি তোমায় ছাড়া বেঁচে থাকতে ৷ মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার ৷ মেরে ফেলো আমায় ইশান ৷ মেরে ফেলো প্লিজ ৷ আমি আর সহ্য করতে পারছি না ৷
ইশান ইশিতাকে চেপে ধরে বললো,,,,,,,
ইশান : ইশুপাখি প্লিজ এরকম করো না ৷ এরকমটা বলো না ৷ আমি নিতে পারছি না আর ৷ আর চোখের পানি ফেলবে না প্লিজ ৷
ইশিতা কিছুক্ষন এভাবেই কেঁদে নিলো ৷ তারপর চোখ মুছে ইশানের কোল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেল ৷ ইশানকে টেনে তুলে ওর হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
ইশিতা : চলো ৷
ইশান : কোথায় যাবো?
ইশিতা ইশানের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,,,,,,
ইশিতা : চলে যাবো ৷ অনেক দূরে চলে যাবো ৷ এই বিষাক্ত শহরটাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো ৷ এই শহরের বিষাক্ত মানুষগুলাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো ৷ অনেক দূরে যেখানে কোনো খারাপ কিছুর কালো ছায়া অবধি থাকবে না ৷
ইশান : তুমি যাবে আমার সাথে?
ইশিতা : হুম যাবো ৷ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ইশান ৷ আমি আর পারছি না সব কিছু সহ্য করতে ৷ চলে যাবো তোমার সাথে আজ ৷ নিবে না আমায়?
ইশান : তোমাকে তো আমি সেই কবে থেকেই বলছিলাম ৷ তুমি আজ বলছো তো আমি কেন না করবো? আমার সাথে যাবে? তাহলে চলো এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাই ৷
ইশিতা হালকা হাসলো ৷ ওর টেনশান হচ্ছে এরপর কি হবে সেটা ভেবে ৷ ইশান গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে জোরে ডাক দিলো ইশিতাকে ৷ ইশিতা গিয়ে বাইকে উঠে বসলো ৷ কিছুটা পথ যেতেই ইশানের ফোন বেজে উঠলো ৷ ইশিতা ইশানের পকেট থেকে ফোন বের করে কল রিসিভ করে ইশানের কানে ধরলো ৷ ওপাশ থেকে কি বললো সেটা ইশিতা শুনতে পেলো না ৷ তবে ওপাশের জনের কথা শুনে ইশানের মুখটা মলিন হয়ে গেল ৷
সাইডে বাইক দাঁড় করিয়ে ইশান নিজের মাথা চেপে ধরলো ৷ ইশিতা অবাক হয়ে বললো,,,,,,,,,
ইশিতা : কি হয়েছে ইশান? কে ফোন করেছে? কি বলেছে তোমায়?
ইশান ইশিতাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে দিলো ৷ ইশিতা ভয়ে ভয়ে আবার বললো,,,,,,,,,
ইশিতা : ইশান প্লিজ বলবা কি হয়েছে? আমার খুব টেনশান হচ্ছে ৷
ইশান কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,
” ই..ইশিতা প…পাপার গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট হ…হয়েছে!”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,