#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৬
#ফাতেমা_জান্নাত
—“”” সেই দিন পনেরো-ই ডিসেম্বর ছিলো। আমি টিউশন করিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি।এমন সময় জামিল আমাকে ফোন করে বলে ওর সাথে দেখা করতে।ও আসছে।জামিল আর সাত দিন হয়েছিলো রিলেশনে জড়িয়ে ছিলাম। আমাদের রিলেশন এর কথা কেউ জানতো না।এমনি আমার মা ও জানতো না।তো সেই দিন আমি তখনি বাড়িতে না গিয়ে সেখানে দাঁড়ায় জামিল এর জন্য।এলাকা তা নির্জীব ছিলো। সন্ধ্যা সাতটা কিংবা আট টায় সব দোকান পাট সাধারণত বন্ধ হয়ে যায়।সেখানে একটা দোকান মতো বড়ো বিল্ডিং আছে। তবে আমি কখনো সেই দোকান টা খোলা দেখি নি।সবসময় দোকান টার বাইরে থেকে তালাবন্ধ থাকতো। হঠাৎ সেই দিন সেই দোকান এর ভিতর থেকে আমি কিছু মানুষ এর কথা শুনতে পায়।আমি সেই দিকে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন লোক কিছু কিছু মেয়ে কে হাত বেধে একটা ট্রাকে উঠাচ্ছে।এবং আরেকটা ট্রাকে কিছু লোক ড্রা’গ এর প্যাকেট উঠাচ্ছে।আমি আড়ালে থেকেই সব কিছু দেখছিলাম।হঠাৎ আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই আমি চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখি জামিল। আমি জামিল কে কথা বলতে নিষেধ করে সামনে দেখতে বলি।জামিল ও সামনে তাকায়। জামিল প্রমাণ রাখার জন্য নিজের ফোনটা বের করে ভিডিও করতে শুরু করে।লোক গুলো একে একে সব গুলো মেয়ে কে গাড়িতে উঠায়।গাড়ির ড্রাইভার গাড়িতে উঠে কিছু দূর গাড়ি চালিয়ে যেতেই হুত করে গাড়ি থামায় আবার।কিছু লোক সহ দৌড়ে আসে আমাদের দুই জনের সামনে।আকস্মিক এরকম হওয়ায় আমরা দুই জনেই বিচলিত হয়ে যায়।তখন সেখানে সবুজ পাঞ্জাবী আরো একটা লোক এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। জামিল কে জিজ্ঞেস করে,
—কি করছিলি এখানে?
জামিল নির্লিপ্ত ভাবে ভয় না পেয়ে বলে,
—আপনাদের চো’রা কাজ গুলো দেখছিলাম। আর ভাবছি এর বিপক্ষে কিভাবে স্টেপ নেওয়া যায়।
—ও তাই নাকি?(আমার দিকে তাকিয়ে) তা মেয়েটা কেরে?তোর বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড? বেশ সুন্দর তো।একে পাচার করলে ভালোই লাভ হবে।
বলে লোকটা হেসে উঠে।তার সাথের মানুষ গুলো হাসতে থাকে।জামিল রা’গ দেখিয়ে গর্জন করে বলে উঠে,
—একদম ওকে নিয়ে কিছু বলবি না।তাহলে ভালো হবে না।
লোকটা তখন হেসে উঠে বলে,
—তোকে কেন যেন মনে হচ্ছে তুই শাহরিয়ার প্রণয় এর চামচা। তা ফোনে কি ভিডিও করছিলি? আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ? আর তোর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে কিছু না বললে ও ছুতে তো পারবো তাই না?
কথা বলেই লোকটা জামিল কে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে মা’রতে মা’রতে সেই দোকান এর ভিতরে নিয়ে যায়।দুটো লোক আমাকে ও টেনে নিয়ে যেতে থাকে।হাজার চি’ৎকার করে ও কোনো লাভ হয়নি।কারণ কোনো মানুষ -ই ছিলো না সাহায্য করার মতো।দোকান এর ভিতরে নিয়ে গিয়ে জামিল কে ওরা হাত পা বেধে মা’রে। জামিল এর ফোন সবুজ পাঞ্জাবি পরা লোকটা হাতে নিয়ে ভিডিও টা দেখে বলে,
—“বাহ্! শাহরিয়ার প্রণয় এর লোক তো খুব চালু।রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করছে।সাহস অনেকদূর। কিন্তু আজ সব সাহস তোর বের করবো আমি।বলেই জামিল কে আবার মা’রে।”
জামিল যখন মা’র খেয়ে একেবারে নেতিয়ে পড়েছিলো। তখন ওরা কয়েকজন জোর করে আমাকে রেপ করে।রেপ করার আগে আমার ঘাড়ে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে ছিলো। যার ফলে আমি চাইলে ও আর জোর জবরদস্তি করতে পারতাম না।ওরা আমাকে ড্রা’গ দিয়েছিলো। আর রেপ করার বাড়ির পাশে এনে ফেলে যায়।আমাকে ড্রা’গ টা তখনো পুরোপুরি ইফেক্ট না করার ফলে কিছুটা বুঝতে পারতাম সব।আমাকে ফেলে গিয়েই তারা জামিল কে আবার মা’রে। আমার জীবন টা কে ওই রাফসান মির্জা শেষ করে দিয়েছে।বেচেঁ থেকে ও ম’রার মতো হয়ে গিয়েছে আমার জীবন। কেন বাঁচালেন আমাকে ভাইয়া? আমার মাকে ও শেষ করে দিলো ওরা।আমার তো আর কেউই নেই।তাহলে কেন আমাকে রাখলেন ভাইয়া? আমার যে এই জীবন নিয়ে বাচঁতে ইচ্ছা করছে না।””
বলেই হু হু কেঁদে দেয় লাবণ্য।দীর্ঘতম দিন গুলোর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে লাবণ্য আজ কোমা থেকে ফিরে এসেছে।সকালে ডাক্টার প্রণয় কে ফোন করে খবর টা দেওয়ার পরেই প্রণয় তখনি জান্নাত কে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।সাথে রিফাত, সজীব,সুজন কে ও আসতে বলে।হসপিটালে এসেই লাবণ্য কে নিজেদের পরিচয় দেয়।লামিয়া সুলতানার মৃ’ত্যুর খবর জানায়।এর পরেই লাবণ্য কে জিজ্ঞেস সেই দিন রাতে কি হয়েছিলো।আর এতক্ষণ লাবণ্য সেই গুলোই খুলে বলছিলো। এবং সজীব সেগুলো ভিডিও করে রেখেছে।
লাবণ্য এখনো কান্না করছে।প্রণয় জান্নাত কে ইশারা করতেই জান্নাত গিয়ে লাবণ্য কে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে।লাবণ্য কে শান্ত হতে বলে।এর মধ্যে সুজন চোখের পানি মুছতে মুছতে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।তার ইচ্ছা করছে রাফসান মির্জাকে কু’পিয়ে হ’ত্যা করতে।লাবণ্য এর কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।কেন এমন হচ্ছে তা তার অজানা।
🌸🌸
হসপিটালে ডাক্তার এর সামনে বসে আছে জান্নাত আর প্রণয়। অপেক্ষা করছে জান্নাত কে এতক্ষণ টেস্ট করার রিপোর্ট গুলোর জন্য।কিছু দিন থেকেই জান্নাত অসুস্থ। প্রণয় কে বলেনি। আজকে সকাল মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন সময় প্রণয় এসে ধরে ফেলে।চিন্তিত হয়ে সাথে সাথেই প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।
ডাক্তার মরিয়ম রিপোর্ট গুলো দেখে প্রণয় আর জান্নাত এর দিকে তাকায়।প্রণয় দুরুদুরু মন নিয়ে ডাক্তার মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করে,
—আন্টি জান্নাত এর বড় কোনো সমস্যা হয়নি তো?আমারি দোষ।আমি গতকাল -ই খেয়াল করেছি উনার খাবার না খাওয়া টা ঠিক মতো।খাবার এর প্রতি অরুচি টা।আমি ভেবেছি হয়তো এমনিতেই। উনি ও কিছু বলেনি তাই আমি ভেবেছিলাম….
প্রণয় কে কথার মধ্যস্থে থামিয়ে দিলেন ডা. মরিয়ম।প্রণয় এর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলেন,
—আপনার স্ত্রী এক মাসের প্রেগন্যান্ট। আপনারা দুই জনে বাবা-মা হতে চলছেন।
ডাক্তার মরিয়ম এর কথা শুনে প্রণয় যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এরকম একটা সু সংবাদ যেন তার কাছে মরুর বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানির মতো।প্রণয় ডাক্তার মরিয়ম কে বলে রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে এসে জান্নাত কে নিয়ে গাড়িতে উঠে।প্রণয় এখনো চুপ করে আছে।জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে প্রণয় এর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
—মি. ভালোবাসা আপনি কি খুশি হন নি আমি কনসিভ করাতে?
জান্নাত এর কথা শেষ হতেই প্রণয় হুত করে তড়িৎ বেগে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে।নিকাব এর উপর দিয়েই জান্নাত এর কপালে গভীর চুম্বন আঁকে।আবার জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে বলে,
—আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি জান্নাত।একটা ছোট্ট প্রাণ আসবে আমাদের পরিবারে। এতে আমি খুশি হবো না কে?আমি অনেক খুশি।রাজনীতি এর সমস্যা গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে টেনশনে থাকতে হয়।আজ চারটা মাস রাফসান মির্জা ভারতে আটকে আছে।এত আমি যতটা না খুশি হয়েছি। তার চাইতে ও বেশি আমার টেনশন হচ্ছে।কখন হুট করে দেশে এসে কি ক্ষতি করে বসে।আর আমার এত এত চিন্তার মাঝে যে আল্লাহ আমাদের কে যে বাবা মা হওয়ার খুশির সংবাদ টা দিয়েছেন তাতে আমার হাজার শুকরিয়া আদায় করলেও যেন কম হয়ে যাবে।
বলেই জান্নাত কে আবার ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে গাড়ি স্টাট দিয়ে বাসার পথে রওনা হয়।
পুরোটা পথ প্রণয় এক হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়েছে। অন্য হাত দিয়ে জান্নাত এর এক হাত জড়িয়ে রেখে ছিলো। জান্নাত শুধু তাকিয়ে প্রণয় কে দেখেছে।মানুষ টার পা’গলামি গুলো শুধু দেখছিলো আর প্রণয় এর আড়ালে হাসছিলো।
বাসায় এসে খুশির সংবাদ টা দিতেই যেন সবার মাঝে উপছে পড়া আনন্দে এসে ভর করেছে।জুনায়েদ আজমী, রাহেলা, জুরাইন, আহ্লাদী সবাই প্রণয় দের বাসায় চলে আসে।জুনায়েদ আজমী আর রাহেলা জান্নাত, প্রণয় এর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে।
জান্নাত প্রণয় এর রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।প্রণয় বাসায় নেই।একটু আগেই বেরিয়ে গেছে।লাবণ্য এর বলা জামিল এর করা সেই ভিডিও এর খোঁজ নিতে।যদি কোনো ভাবে পাওয়া যায় আরকি ভিডিও টা।তাহলে সমস্ত প্রমাণ এক সাথ করে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে কেস ফাইল করবে।
জান্নাত এর কোলের উপর পার্শিয়া জেনিথ দুই জনে বসে আছে।জান্নাত দুই জনের সাথে বসে কথা বলছে।এমন সময় রুমের দরজায় প্রান্তিক আর জুরাইন এসে নক করে।জান্নাত আসতে বলতেই দুই জনে রুমে এসে প্রান্তিক সোফায় বসে।জুরাইন জান্নাত এর সামনে বিছানায় বসে।জান্নাত প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—ইশির কানাডার জামাই এর খবর?
জান্নাতের কথায় প্রান্তিক তেঁতে উঠে বলে,
—এখনো জামাই হয়ছে?তুই যে জামাই বলছ?
—আচ্ছা ঠিক আছে বল।পাত্রের কি খবর?চারমাস পরে তো তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
—ছেলের ওখানে কিছু সমস্যা হয়েছে নাকি কাজে।তাই আরো এক দুই মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
—তাহলে তো ভালোই হলো।এটাই সু্যোগ। আচ্ছা আমি তোর ভাইয়া কে বলে সব কিছু করার প্ল্যান করছি।
—আচ্ছা। দেখিস কিন্তু দোস্ত। ইশির যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না হয়ে যায়।
জান্নাত হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর দিক থেকে জুরাইন এর দিকে তাকায়।জুরাইন পার্শিয়া জেনিথ এর সাথে খেলছিলো। জান্নাত জুরাইন কে বলে,
—কিরে জুরাইন। পাখির সাথে কথা হয় এখন আর?
জুরাইন জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে,
—আমি ওই সব ছোট খাটো বাচ্চা দের সাথে কথা বলি না আপু।আমি ভালো হয়ে গেছি।বন্ধু ও বদলিয়েছি।
—তাই?আমার ভাইটা বুঝি বড় হয়ে গেছে?
—হ্যাঁ আপু।
বলেই জুরাইন হেসে দেয়।জুরাইন এর সাথে প্রান্তিক আর জান্নাত ও হেসে দেয়।অবশেষে জুরাইন এর মাথা থেকে যে পাখির ভূত তাড়াতে পারলো এতেই শুকরিয়া।
🌸🌸
—ওই শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে মে’রেছিস?
ফোনের অপর পাশ থেকে রাফসান মির্জার কথা শুনে মেহেদি বলে,
—না স্যার। মা’রার মতো কোনো সু্যোগ পাই না।শাহরিয়ার প্রণয় সারাক্ষণ বউ এর পাশে পাশে থাকে।স্যার কি সুন্দর মানিয়েছে তাদের।পারফেক্ট কাপল।
—তোর সাথে কথা বলা টাই আমার সব চেয়ে বড় ভুল।আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তুই আমার লোক নাকি শাহরিয়ার প্রণয় এর লোক।প্রদীপ কে ফোন দে তুই।
—স্যার আমার ফোনে ফোন দিয়ে প্রদীপ এর এর সাথে কথা বলেন কেন?প্রদীপ এর ফোনে ফোন দিয়েই তো তার সাথে কথা বলতে পারেন।
—থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। প্রদীপ কে ফোন দে।
মেহেদি রাফসান মির্জার চড়া কথা শুনে প্রদীপ কে ফোন দেয়।প্রদীপ ফোন নিয়ে বলে,
—বলুন স্যার।
—শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে এখনো মা’রতে পারিসনি কেন?
—স্যার তেমন কোনো সু্যোগ পাইনি।শাহরিয়ার প্রণয় সব সময় বউয়ের সাথে থাকে বের হলে মাঝে মাঝে।
—তাহলে দুই জন কে মে’রে ফেল।
—স্যার আপনি কবে আসবেন?
—বলতে পারছি না।এই কু***বাচ্চা বিপ্লব কুমার এর টাকা না দিলে বের হতে দিবে না।
—টর্চার করে?
—নাহ। তা করে না।শুধু আটকিয়া রেখেছে।
—আচ্ছা স্যার আমি দেখি কি করা যায়।
বলেই প্রদীপ ফোন কে’টে দেয়।ফোন কে’টে দিয়েই মেহেদির দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়।যে হাসির মানে মেহেদি বুঝতে পারেনি।মেহেদি ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রদীপ এর দিকে।কিন্তু প্রদীপ কিছুই বলে না।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤
গল্পটা শেষ পর্যায়ে। সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ।
[ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক দিতে পারিনি।]#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৭+৩৮
#ফাতেমা_জান্নাত
সকালের সূর্য এর আলোকরশ্মি এসে শহর ময় আলোকিত করে তুলেছে।ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলো ছুটাছুটি করছে নিজে দের কর্মস্থলে যাওয়ার তাগিদে।ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজ নিজ কাজে।কে কার খোঁজ রাখে আর সময় নিয়ে খোঁজ নেয়।কিন্তু যিনি শহরের সব কিছুর দায়িত্ব নেয়।ভালো খারাপ দেখার তাকে খোঁজ নিতেই হয়।সংসার এর বড় ছেলে হিসেবে সংসার এর সবকিছু নজরে রাখা।শহরের মানুষ এর খোঁজ রাখা আর সব শেষে প্রিয় তমা স্ত্রীর ও খোঁজ নেয় সময় পেলেই।প্রিয় তমা স্ত্রী এখন যে শুধু স্ত্রী পদবি তে নেই।হয়ে গিয়েছে তার সন্তানের মা ও।এখন তো একটু বেশিই নজর রাখতে হয়।আর প্রণয় ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সব দিকে নজর রাখছে।
—জান্নাত আপনি তৈরি হয়েছেন?আর কতক্ষণ লাগবে?
—এই তো আর দুই মিনিট।
বলেই জান্নাত ছুটে কার্বাড এর কাছে যাওয়া ধরলেই প্রণয় এসে জান্নাত এর এক হাত মুঠোবন্দি করে আগলে ধরে।নিজের কাছের দিকে টেনে নিয়ে বলে,
—এখন তো একটু শান্ত ভাবে চলে ফেরা করুন জান্নাত। এখন তো আর আপনি একা না।আপনার মাঝে আমাদের আরো একটা ছোট্ট প্রাণ আছে।সেটা তো মাথায় রাখতে হবে।
জান্নাত নিজের ভুল ধরতে পেরে জিহ্ব কে’টে কানে এক হাত দিয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি ভাষী সুরে বলে,
—সরি! আর হবে না।
—আচ্ছা।একটু সাবধানে কেমন?
—জি।
প্রণয় জান্নাত কে ছেড়ে দেয়।জান্নাত কার্বাড থেকে বোরকা নিকাব নিয়ে পরে নেয়।রেডি হয়ে প্রণয় এর সাথে হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আজকে তারা সবাই ইশি দের বাড়িতে যাবে। মূলত বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।ইশি আর প্রান্তিক এর বিয়ের প্রস্তাব নিয়েই যাবে।
–
ইশি দের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছে প্রণয়, প্রান্তিক,শাহরিয়ার পাবেল। জান্নাত আর রোকসানা ইশির রুমে।রোকসানা ইশি কে এক নজর দেখেই ইশির মায়ের কাছে চলে যায়।তিনি সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে।সেখানেই রোকসানা তার সাথে কথা বলছে।জান্নাত ইশি কে রেডি করিয়ে দিচ্ছে।
এক পর্যায়ে জান্নাত ইশি কে তৈরি করে নিচে নিয়ে আসে।ড্রয়িংরুমে সবাই এক সাথে বসে আছে।যেহেতু সবাই পূর্ব পরিচিত তাই আর কেউ না করেনি।তাছাড়া ইশিকে আগে কানাডার যেই ছেলে টি দেখতে এসেছিলো তাদের কে আরো আগেই না করে দিয়েছে।তারা দিন দিন তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছে।আধো বিয়ে করবে কিনা কে জানে.?আর সেখানে তো শুধু দেখা দেখি হয়েছিলো। বাগদান তো হয়নি।বাগদান হলে হয়তো ভাবা যেতো বাদ করবে নাকি করবে না।
সবাই মিলে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামনের মাসেই ইশি প্রান্তিক এর বিয়ে দিবে।কিন্তু এতে ঘোর অমত জানিয়েছে প্রান্তিক। তার এক কথা এত দেরি করে কিসের বিয়ে করবে?বিয়ে যখন হবেই তাহলে এখন হতে সমস্যা কি?আবার এক মাস হওয়ার জন্য অপেক্ষা করো।কিন্তু এগুলো কি আর বড় দের সামনে মুখ ফুটে বলা যায়?মনের কথা মুখে আনার সাহস তার নেই।তাই তো অগত্যা সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলে রাজি হয়ে গিয়েছে।।
🌸🌸
—আচ্ছা মি. ভালোবাসা শুনুন?
জান্নাত এর কথায় প্রণয় এসে বেলকনি তে জান্নাত এর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে।রাত এখন নয়টা বাজে।জান্নাত জিদ ধরে রাতের আকাশ দেখার জন্য বাইরে এসে বসেছে।প্রণয় এসেই জান্নাত এর মাথাটা নিজের বুকের উপর আগলে নিয়ে জান্নাত কে এক পাশ থেকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,
—বলুন জানুপাখি!
জান্নাত কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বলে,
—জানুপাখি? আজ পর্যন্ত কয়টা নাম দিয়েছেন আপনি আমাকে?
—বলবো?
—হু।
—বেশি না।অল্প কয়েকটা। যেমন-নেশাক্তময়ী,রৌদ্রময়ী কন্যা, নিদ্রাময়ী, ঘুম কন্যা, জানেমান, জানুমণি,জানুপরী, জানুপাখি।
বলেই প্রণয় হেসে দেয়।জান্নাত তাকায় প্রণয় এর মুখ পানে।অবাধ্য মন টাকে একটু শান্ত হতে বলে।এই মানুষ টার ধারে আসলে তার মন টা একটু বেশিই অবাধ্য হতে চাই।ইচ্ছা জাগায় অদ্ভুত সব কান্ডের।এই মানুষ টা তো তার একান্ত-ই একজন। কিন্তু মন কি তা বুঝে?জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—আট টা নাম কে আপনি অল্প বলছেন?
—হুম।এটা আর বেশি কি?বউ কে তো ইচ্ছে করে শত শত ভালোবাসার আদুরে নামে ডাকতে।
—আচ্ছা শুনুন একটা কথা বলার ছিলো।
—হুম বলুন।
—সুজন ভাইয়ার সাথে লাবণ্য এর বিয়ে দিলে কেমন হয়?
জান্নাত এর কথা শুনে প্রণয় অবাক নেত্রে তাকায়।জান্নাত এর কথা তার বুঝে আসছে না কিংবা বুঝে আসতে সময় নিচ্ছে।কিয়তক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় বলে,
—সুজন কি লাবণ্য কে বিয়ে করবে?লাবণ্য এর সাথে কি হয়েছিলো তার সব কিছুই সুজন এর জানা।
—জানা বলেই তো আমি বলছি সুজন ভাইয়া আর লাবণ্য এর বিয়ে দিতে।আপনি খেয়াল করেছেন কিনা জানি না।কিন্তু আমি সেই দিন লক্ষ করেছি লাবণ্য যখন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলছিলো তখন সুজন ভাইয়া লাবণ্য এর দিকে তাকিয়ে ছিলো মোহনীয় দৃষ্টিতে। এবং শেষে চোখের পানি মুছতে মুছতে লাবণ্য এর কেবিন থেকে বের হয়েছিলো। তাছাড়া এখন ও তো প্রায় সুজন ভাইয়া লাবণ্যের কাছে থাকে।তাকে দেখে শুনে রাখে।আমার ধারণা যদি ভুল না হয় দেখবেন সুজন ভাইয়া লাবণ্য কে বিয়ে করার কথা আপনাকে এসে জানাবে।
—কিন্তু লাবণ্য কি রাজি হবে?
—আপনি ওকে বলবেন। দরকার হলে আমি নিজে গিয়ে ও বুঝাবো ওকে।কিন্তু তার আগে সুজন ভাইয়া কি বলে তা অপেক্ষা করতে হবে।
—জি।দেখি কি হয়।আপনি খেতে চলুন।
—খেতে যাবো মানে?
—খেতে আসবেন মানে খেতে আসবেন। এই সময় বেশি বেশি খেতে হয় জানেন না?দুই জনের খাবার খেতে হয়।
—একটু আগেই না খেয়ে আসলাম?
—এখন দুধ এবং ফল খাবেন।
—আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন মি. ভালোবাসা?
—আশ্চর্য! আমি মজা করবো কেন জান্নাত?
—এত খেতে পারবো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে অল্প করে খেতে হবে।
প্রণয় এর সাথে না পেরে অগত্যা জান্নাত খেতে রাজি হয়।জান্নাত প্রতি মুহূর্তে যেন এক অদ্ভুত প্রেমে পড়ে প্রণয় এর।প্রণয় এর কথায়,চলা ফেরায়,হাসিতে,তাকানো তে,গাম্ভীর্যতায় যেন প্রতিটা চাহনিই তাকে মুগ্ধ করে।জান্নাত মাঝে মাঝে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ভাবে,”এই মানুষ টা কে কখনো সে যদি হারিয়ে ফেলে তাহলে কি ভাবে থাকবে?কিংবা প্রণয় যদি কখনো তাকে হারিয়ে ফেলে তাহলে কি ভাবে থাকবে? জানা নেই।কিছুই জানা নেই।এই কথা মনে এসে হানা দিলেই যেন বুক ফে’টে কান্না এসে ভীড় জমায় নিজের মধ্যে।
জান্নাত খেয়াল করলো তার চোখ জ্ব’লছে। অবাধ্য চোখের পানি কপল বেয়ে পড়ার অনুমতি চাইছে।চক্ষু কোটর পানি তে টই টম্বুর।মুহূর্তে -ই নেত্রজল কোনো বাধা না মেনে জলপ্রপাত এর ন্যায় কপল বেয়ে পড়তে লাগলো। প্রণয় নিজের মতো জান্নাত এর সাথে কথা বলছে।আর জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে অশ্রু কণা বিসর্জন দিচ্ছে।প্রণয় এখনো খেয়াল করেনি জান্নাত এর চোখের পানি।
প্রণয় এর জান্নাত এর মুখের দিকে তাকিয়ে -ই হকচকিয়ে যায়।এতক্ষণ সে ফল কাটছিলো। জান্নাত এর চোখে পানি দেখেই উদগ্রীব হয়ে বলে,
—কি হয়েছে জান্নাত আপনি কাঁদছেন কেন?পেটে ব্য’থা পাচ্ছেন? বাবু কিক মে’রেছে?
প্রণয় এর কথা শুনে জান্নাত কান্নারত অবস্থায় ফিক করে হেসে দেয়।প্রণয় প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে জান্নত এর দিকে।জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—মি. ভালোবাসা!দুই মাসে বাচ্চাদের অস্তিত্ব বুঝা যায় না গর্ভে।চার মাস কিংবা পাচঁ মাসেই বাচ্চা রেসপন্স করে।তাদের অস্তিত্ব বুঝা যায় এবং সেই সময় আস্তে আস্তে তারা মায়ের পেটে আ’ঘাত করে তাদের অস্তিত্ব এর উপস্থিতি বুঝায়।আর আপনি কিনা এখনি বলছেন বাবু কিক মা’রছে কিনা?সত্যি মি. ভালোবাসা আমার হাসি পাচ্ছে।
বলেই জান্নাত আবার হাসি দেয়।হাসতে হাসতে জান্নাত এর চোখে পানি চলে আসে।প্রণয় জান্নাত আর দিকে তাকায়।মোহনীয় দৃষ্টিতে নাহ, মুগ্ধকরা দৃষ্টি তে তাকায়।এই মেয়ে টার হাসি তার বক্ষে সুখের সুক্ষ্ম তী’রের মতো ভেদ করে।যার ফলে জান্নাত এর ভালোবাসার প্রতি তা মুহূর্তে সে দগ্ধ বিদগ্ধ হচ্ছে।মেয়ে টা কি তা জানে?জানলে কখনো এভাবে হেসে তার হৃদয় টাকে এভাবে সুখের তী’রে ক্ষত বিক্ষত করতো না।
প্রণয় নিজেকে ধাতস্থ করে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—আপনি কাঁদছিলেন কেন জান্নাত?
প্রণয় এর কথায় জান্নাত এর হাসি থেমে যায়।মুখ থেকে বিলীন হয় হাসির রেখা।থমথমে মুখশ্রী করে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ছলছল দৃষ্টি তে বলে,
—আমি কখনো হারিয়ে গেলে আপনি কি করবেন মি. ভালোবাসা?নাকি আরেকটা বিয়ে করবেন?
এমন সময় জান্নাত এর এহেন কথা শুনে প্রণয় এর মুখভঙ্গি বদলে যায়।জান্নাত তার উত্তর এর আশায় প্রণয় এর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রণয় বার কয়েক বড় করে তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে। সে তার রা’গ প্রকাশ্যে আনতে চাই না।প্রান প্রিয় প্রিয়তমার মুখ থেকে কেউ কখনোই হারিয়ে যাওয়া কথা টা সহ্য করতে পারে না।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলায়। স্মিত হাসে।ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টেনে এনে জান্নাত এর চোখের দিকে নিষ্প্রভ তাকিয়ে বলে,
—জানেন জান্নাত, আল্লাহর কাছে আমার এই মুহূর্তে একটা জিনিস -ই চাইতে ইচ্ছে করছে.।
—কি?
—‘‘আপনাকে দেখে যেমন আমার মনে প্রেমের হাতেখড়ি হয়েছিলো।ঠিক তেমনি আপনাকে দেখেই যেন আমার দেহের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ হয় জান্নাত ’’।
প্রণয় কথাটা বলতে-ই জান্নাত প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।মাথা রাখে প্রণয় এর কাঁপতে থাকে বুকের সেই যন্ত্র টার উপর।জান্নাত উপলব্ধি করতে পারছে।প্রণয় এর মতো তার হার্ট টা ও দ্রুত বিট করছে।দুই জনের হৃদয়ে চলছে প্রিয় মানুষ টা কে হারিয়ে ফেলার আশংকা। জান্নাত প্রণয় এর বুকে মাথা রেখেই বলে,
—এভাবে বলবেন না মি. ভালোবাসা।আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না।
—আমার কি খুব ভালো লাগে জান্নাত আপনার মুখে হারিয়ে যাওয়ার কথাটা শুনতে?
—সরি।
—নেক্সট টাইম আর এসব কথা বলবেন না।ঘুমাতে চলুন।এগারো টা বেজে যাচ্ছে।এখনো ঘুমাতে আসছেন না আপনি।
বলেই জান্নাত কে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজের বুকের উপর জান্নাত এর মাথাটা নিয়ে শুয়ে পড়ে।জান্নাত এর চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়।মাথায় চলছে নানান চিন্তা।রাফসান মির্জা আজ পাচঁ মাস ভারতে আটকে আছে।কখন হুট করে ফিরে আসে বলা যায় না।ওই দিকে জামিল এর করা সেই ভিডিও টা রাফসান মির্জার কাছেই আছে।ওই ভিডিও টা কোনো ভাবে হাতে আসলেই রাফসান মির্জা কে নিয়ে স্টেপ নেওয়া যেতো। আগামীকাল বা পরশু আবার জাতীয় সংসদ ভবনে যেতে হবে।জান্নাত এর প্রেগন্যান্সি এর সময় এখন দুই মাস চলছে।এখন জান্নাত এর চলা ফেরাতে তেমন সমস্যা না হলেও প্রণয় এর মনে ভ’য় টা রয়েই যাচ্ছে।
🌸🌸
—স্যার শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ তো হচ্ছে জুনায়েদ আজমীর মেয়ে জান্নাত আজমী।
ফোনের অপর পাশে রাফসান মির্জা কে কথা টা বললো তার দলের গার্ড।গার্ড রনি রাফসান মির্জা কে আবার বলে উঠে,
—স্যার আপনি বলে ছিলেন শাহরিয়ার প্রণয় এর বাসার সামনে থেকে নজর দিতে।তাই আমরা গত কয়েকদিন থেকে একটা বাসার ছাদ এর উপর থেকেই দূরবীন দিয়ে শাহরিয়ার প্রণয় এর বাসায় নজর রাখতাম। সেই ভাবেই গত কয়েকদিন শাহরিয়ার প্রণয় আর জান্নাত আজমী কে বাসায় এক সাথে বেলকনি তে দেখেছি।
রাফসান মির্জা রনির কথা শুনে ক্রুর হেসে বলে,
—ঠিক আছে তুই ওদের উপর নজর রাখ।আমি দেখি কি করা যায়?
—জি স্যার।
—শুন,মেহেদি আর প্রদীপ কোথায়? ফোন করেছি। ফোন ধরছে না যে।
—স্যার তারা তো দুই জনে রুমে ঘুমাচ্ছে।কালকে অনেক রাত জেগে আপনার কাজ গুলো দেখেছিলো। তাই এখন ঘুমাচ্ছে।
—ওহ।ওদের দুই জনের উপর ও একটু নজর রাখিস। কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ। তাই আমি এখন ওদের উপর ঠিক আগের মতো বিশ্বাস রাখতে পারছি না।নজর ওদের উপর ও দিস।
—জি স্যার।
বলেই গার্ড ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা প্ল্যান সাজাতে থাকে।কি ভাবে কি করা যায়।কিন্তু এই দিকে বিপ্লব কুমার কে বুঝিয়ে বলে ও কোনো লাভ হচ্ছে না।তার এক কথা তার টাকা আগে দিতে হবে তারপর ছাড়া ছাড়ি।কিন্তু টাকা টা দিবে কি ভাবে?সে দেশে নেই।মেয়ে পাচার করে যে টাকা যোগাড় করবে সেটা ও পারবে না তার লোক গুলো ঠিক মতো।সেই পুলিশ এর হাতে ধরা খাওয়া। এই দিকে তার দুই টা কোম্পানি থেকে একটা কোম্পানি পুরো শেষ।আরেকটা চলছে খানিকটা। কিন্তু এটা শেষ হতে ও সময় লাগবে না।তাহলে টাকা টা দিবে কি ভাবে।
রাফসান মির্জা ভাবতে ভাবতে -ই বলে উঠে,
—শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ তাহলে জুনায়েদ আজমীর মেয়ে জান্নাত আজমী? দুই টাই আমার শত্রু। তোরা দুই টাই আমাকে অনেক অপমান করচত।ঠান্ডা মাথায় ঠান্ডা কথা বলে তোরা আমাকে অপমান করেছিলি। কিচ্ছু ভুলে যায়নি আমি।এত সহজে সব কিছু ভুলার পাত্র রাফসান মির্জা না।তোদের শেষ আমি দেখেই ছাড়বো বাই হুক অর বাই কুক।
বলেই রাফসান মির্জা অট্টহাসি তে ফে’টে পড়ে।যাকে অট্টহাসি না বলে বিচ্ছিরী হাসি বললে ও ভুল হবে না।
🌸🌸
পাখি দের কিচির মিচির ডাক আর সুরেলা কণ্ঠের আজান শুনে ঘুম ভাঙলো জান্নাত আর প্রণয় এর।প্রণয় জান্নাত এর কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।ওযু করে জান্নাত কে বলেই মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।জান্নাত ও শোয়া থেকে উঠে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়।নিচে গিয়ে দেখে রোকসানা উঠে গিয়েছে।জান্নাত তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রোকসানার কাঁধে একটু আলসেমি করে মাথা রেখে বলে,
—কি করছো মা?
রোকসানা হেসে দিয়ে চুলার উপর থেকে দুধ এর পাতিল নামিয়ে একটা গ্লাসে দুধ ঢেলে নেয়।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে দুধের গ্লাস সামনে ধরে রেখে বলে,
—এই যে আমার মায়ের জন্য দুধ গরম করছিলাম। এখন গ্লাসের পুরো দুধ টুকু শেষ করতে হবে।
দুধ দেখেই জান্নাত নাক মুখ চিটকায়।দুধ কোনো কালেই তার পছন্দ নয়।দুধের থেকে কি রকম একটা গন্ধ লাগে তার কাছে। দুধ দেখলেই গা গুলিয়া আসে।কিন্তু কনসিভ করার পর থেকেই প্রণয় জোর করে তাকে এক গ্লাস দুধ খাওয়াবে।এটা যেন প্রণয় এর অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
জান্নাত রোকসানার দিকে তাকিয়ে বলে,
—মা আমি খাবো না দুধ।তোমার ছেলে বলে গিয়েছে তাই না আমাকে এখন দুধ দিতে?
—আমার ছেলে না বললেও আমি এখন তোর ঘরে দুধের গ্লাস নিয়ে যেতাম।
—কিন্তু মা….
—কোনো কিন্তু নয়।তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন। কোনো কথা শুনবো না।
জান্নাত কে কথার মধ্যস্থে থামিয়ে দিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে কাছে এসে দাঁড়ায় প্রণয়। জান্নাত করুণ মুখ করে প্রণয় এর দিকে একবার তাকায়।কিন্তু এতে কোনো কাজ হয় না।প্রণয় দুধের গ্লাস টা হাতে নিয়ে নিজেই এগিয়ে দেয়।বাধ্য হয়ে জান্নাত খেয়ে নেয়।এই মা ছেলের চক্করে পড়ে।তার জীবন তিতাময় হয়ে গেছে।সারাদিন খাওয়াবে।
প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে ঘরে চলে আসে। জান্নাত কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হেসে বলে,
—জান্নাত আমাকে সংসদ ভবনে যেতে হবে আগামীকাল। তাছাড়া আজ ও একটা কাজে বের হবো।আপনি থাকতে পারবেন তো একা?কোনো সমস্যা হবে না তো?
জান্নাত না সূচক মাথা নাড়িয়ে স্মিত হেসে বলে,
—কোনো সমস্যা হবে না।আপনি যেতে পারেন সাবধানে। মা তো আছেই।দরকার হলে আম্মু কে ডেকে নিবো।
—আচ্ছা।
বলেই প্রণয় এসে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে।কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়।ড্রেসিংটেবিল এর উপর থেকে চশমা টা নিয়ে চোখে পড়েই,মাক্স অ মুখে লাগিয়ে বেরিয়ে যায় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে।জান্নাত ও হেসে দেয় বিপরীতে।
প্রণয় বাসা থেকে বের হয়েই রিফাত, সজীব, সুজন কে ফোন দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় তাড়াতাড়ি আসতে বলে।যাতে কেউ জানতে না পারে সেই ব্যাপারে ও খেয়াল রাখতে বলে।চার জনেই বেরিয়ে যায় নিজে দের গন্তব্য স্থানের উদ্দেশ্যে। প্রণয় কোনো ভাবে জামিল এর মোবাইলে করা ভিডিও টার খোঁজ পেয়েছে।তাই আরো নিশ্চিত হতে সেখানে যাচ্ছে।ভাগ্য ভালো হলে ভিডিও টা ও পেয়ে যাবে।
গাড়িতে বসে প্রণয় স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে।মন পড়ে আছে জান্নাত এর কাছে।আজ কাল জান্নাত এর কাছ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না।মনে হয় এই বুঝি হারিয়ে ফেললো। কিন্তু শুধু তো নিজের দিক ভাবলে হয় না।শহরের এমপি হয়েছে জন সাধারণ এর সেবা করতে সেখানে ঘরে বসে থাকা টা কি মানায়?তাই তো দিন শেষে অবাধ্য মন টা কে নিয়েই বেরিয়ে পড়ে জন সাধারণ মানুষ এর একটু সাহায্য করার জন্য।
এই দিকে প্রণয় যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে তা রাফসান মির্জার লোকদের চোখ এড়িয়ে যায়নি।প্রণয় কে ফলো করে মেহেদি আর প্রদীপ ও যাচ্ছে।প্রণয় কোথায় যাচ্ছে এত সকাল সকাল মূলত সেটাই দেখার মূল উদ্দেশ্য তাদের।প্রণয় এর নজরে আসেনি তারা পিছনে যে ঈগল এর চোখের ন্যায় কেউ নজর রাখছে।
চলবে ইনশাল্লাহ ✨🍁