প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -৩৩+৩৪+৩৫

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৩৩
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

নিশুতি রাত।বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ফোটা পড়ছে।আকাশে ও গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ডাক দিচ্ছে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে।এই বৃষ্টি মুখর পরিবেশ হয় কারো জন্য রোমান্টিক আবার কারো জন্য হতাশা।ফুটপাত এর মানুষ গুলো বৃষ্টির পানি থেকে আশ্রয় পাওয়ার জন্য খুঁজছে যেখানে সেখানে ঠায়।আর এই দিকে একটা ঘরে দুইজন মানব মানবী খুঁজছে তাদের অনেক গুলো প্রমাণ এর পিছনের একটা যোগ সূত্র।

হোয়াইট বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে আছে জান্নাত। তার পাশেই প্রণয় বসে চেয়ে আছে ।বোর্ডে কিছু ছবি,কিছু স্ক্যাচ লাগানো। একটা ছবি জামিল এর নিথর ক্ষত বিক্ষত লা’শ এর।একটা ছবি লাবণ্য এর আছড় কাটা মুখের। যে আছড় গুলো ছিলো ধ’র্ষক এর।আরেকটা ছবি লামিয়া সুলতানার গলার রগ কে’টে দেওয়া দেহের।স্ক্যাচ টা হচ্ছে একটা লোক একজন মহিলা কে পিছন থেকে হাত আর মাথা টান টান করে ধরে রেখেছে।মহিলা টার সামনেই আরেকজন ছু’রি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মহিলা টি হলো লামিয়া সুলতানা।
বোর্ড এর এক পাশে দুটো হ্যান্ড ফিঙ্গার ফরেনসিক রিপোর্ট পেপার লাগানো। দুটো রিপোর্ট – ই শুধু মাত্র হাত এবং আঙ্গুল ফরেনসিক এর।জান্নাত সব কিছু চোখ ভুলিয়ে দেখে নিজের নখ দর্পনে আনে।বোর্ড এর এক পাশে মার্কার পেইন দিয়ে লেখে,”জামিল এর মৃ’ত্যু “,অন্য পাশে লেখে “লাবণ্য এর ধর্ষ’ণ “।এরপর প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—জামিল এর লা’শ কবে পেয়েছেন আপনারা?

প্রণয় কিয়তক্ষণ চুপ থেকে ভেবে বলে,

—ষোলো- ই ডিসেম্বর।

—লা’শ দেখে কি মনে হয়েছিলো?কয় দিন আগে মা’রা হয়েছিলো তাকে?

—এক দিন পুরো হবে বা হয়নি।বলা যায় হয়তো রাতে ওকে মে’রে ছিলো।সকালে পেয়েছি এমন।

জান্নাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—লামিয়া সুলতানার বাড়িতে গিয়েছিলেন কবে আপনারা?

—আঠারো ডিসেম্বর।

জান্নাত এবার কিছুক্ষণ চুপ থাকে।মার্কার পেন দিয়ে দুটো তারিখ লেখে দুই জায়গায়। জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে পেন এর ক্যাপ আটকে বলে,

—লামিয়া সুলতানার বাড়িতে গিয়ে ছিলেন আপনারা আঠারো ডিসেম্বর। লামিয়া সুলতানা বলেছিলো, “দুই দিন আগে সন্ধ্যার পর দিয়েই একটা গাড়ি এসে লাবণ্য কে উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়”।আর দুই দিন আগে মানে হচ্ছে পনেরো ডিসেম্বর। আবার জামিল এর লা’শ পেয়ে ছিলেন ষোলো- ই ডিসেম্বর সকালে বা দুপুরে। আপনার ভাষ্যমতে জামিল কে হয়তো রাতে মে’রে ছিলো। একদিন আগে রাতে যদি মে’রে থাকে।তাহলে সেটার তারিখ ও এসে দাঁড়ায় পনেরো ডিসেম্বর এ।দুই জনের তারিখ টা- ই কিন্তু একই দিনে হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন?

প্রণয় চুপ করে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে থাকে।জান্নাত কি বুঝাতে চাইছে সেটা তার মাথায় এখনো পুরোপুরি ঢুকে নি।সেই জন্য জান্নাত কে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সুধায়,

—এর মানে আপনি কি বুঝাতে চাই ছেন জান্নাত? ক্লিয়ার করে বলুন প্লিজ?

—সব ক্লিয়ার করবো। আগে শুনুন। আপনি তো বলে ছিলেন লামিয়া সুলতানা বলেছে লাবণ্য কে ঘরে আনার পর সে অস্পষ্ট স্বরে ‘বি’ অথবা ‘ভি’ বলেছে।এবার এই পয়েন্টে আসুন।’বি’ তে গুরুত্ব পূর্ণ কিংবা লাবণ্যের রেপ এর সাথে সম্পর্কিত কোনো শব্দ মিলাতে পারছি না।তবে ‘ভি’ শব্দটি এর সাথে মিলে যায় ‘ভিডিও’ শব্দটা।এমন হতে পারে হয়তো লাবণ্য কোনো ভিডিও এর কথা বলতে চেয়েছিলো।

জান্নাত এর কথা থামতেই প্রণয় উৎকণ্ঠিত ভাবে বলে উঠে,

—কারেক্ট। আপনি একদম ঠিক পয়েন্ট ধরেছেন। এই কথা টা বার বার আমার মাথায় এসে ছিলো। কিন্তু শেষে গিয়ে আর আমি মিলাতে পারি না।

—আচ্ছা আমি বলছি শুনুন।আপনি আমাকে বলে ছিলেন যে,আপনাদের গুপ্তচর জানিয়েছে রাফসান মির্জা ড্রা’গ সাপ্লাই করার সময় জামিল দেখে ছিলো। আর পরে তারাও জামিল কে দেখে দ্যান মে’রে পেলে।তাহলে হিসাব সমেত এটা দাঁড়ায় না?ষোলো ডিসেম্বর রাতে জামিল কে মে’রে ফেলা হয় এবং লাবণ্য কে রেপ করা হয়।হয়তো লাবণ্য এর কাছে প্রমাণ হিসেবে কোনো ভিডিও ছিলো। আর সেই ভিডিও এর জন্যই লাবণ্য কে রেপ করে এবং ড্রা’গ দেয় যাতে লাবণ্য কোমায় চলে যায় এবং তাদের রাস্তা ফুল ক্লিয়ার হয়ে যায়?

কথা গুলো বলে জান্নাত থামতেই প্রণয় গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,

—আর ফিঙ্গার এন্ড হ্যান্ড ফরেনসিক রিপোর্ট দুই টা তেই রাফসান মির্জার এর আঙুল এর চাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।লামিয়া সুলতানা কে মা’রার অ’স্ত্র ছু’রির হাতের ছাপ এবং আমার অফিস কেবিনে গ্লাসে হাত রাখা রাফসান মির্জার হাতের চাপ অবিকল এক।এর মানে এটাই দাঁড়ায় যে রাফসান মির্জা- ই লামিয়া সুলতানা কে মে’রে ছে।কিন্তু লামিয়া সুলতানা কে পিছন থেকে যিনি ধরেছিলো সে কে তা এখনো বুঝে আসছে না।

—হুম বুঝতে পারছি।তবে রাফসান মির্জা কে আইন এর কঠোর আওয়াতায় আনতে হলে আপনাদের দরকার একজন বাদীর।আর বাদী হিসেবে দরকার লাবণ্য কে।এবং লাবণ্য যে ভিডিও এর কথা বুঝাতে চেয়ে ছিলো সেটা।যেহেতু রাফসান মির্জা ও আইনের সাথে সম্পর্কিত লোক।তাই দু তিনটা লা’শ কিংবা কিছু মুখের কথা,রিপোর্ট দেখালে হবে না।ঠিক- ই টাকার জোরে বেরিয়ে আসবে।তাই এখন সবার আগে দরকার লাবণ্য কে কোমা থেকে ফিরিয়ে আনার।তার জবানবন্দি, এবং সেই ভিডিও সম্পর্কে জানার।বর্তমানে ভিডিও টা কোথায় আছে সেটাও জানতে হবে।

—জি।আমি লাবণ্য এর।চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো উন্নত করে দিচ্ছি।তারপর দেখি আল্লাহ কি করে।

—আচ্ছা।

বলেই জান্নাত হাসে।প্রণয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড় টা বাজে।প্রণয় কোনো কথা না বলে সোফা থেকে উঠে গিয়ে হোয়াইট বোর্ড টা আবার কার্বাড এর পিছনে রেখে দেয়।সব কিছু ঠিক ঠাক করে এসে জান্নাত এর সামনে দাঁড়ায়। জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে ধরে দুই হাতে।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে প্রণয়। জান্নাত কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে বলে,

—হাসছেন কেন?

প্রণয় জান্নাত এর কথার উত্তর না দিয়ে উল্টা নিজে জান্নাত এর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে,

—রাজনীতি পছন্দ করেন না?

জান্নাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

—নাহ।

—রাজনীতি বিদ দের পছন্দ করেন না?

—নাহ।

—আপনাকে জড়িয়ে ধরে রাখা এই রাজনীতি বিদ কে ও পছন্দ করেন না?

জান্নাত হেসে দিয়ে বলে,

—এই রাজনীতি বিদ কে পছন্দ করি কিনা জানি না।তবে এই রাজনীতি বিদ টা কে ছাড়া
সতেজ প্রাণ নিয়ে চলা অসম্ভব।

—রাজনীতি, রাজনীতি বিদ দের পছন্দ করেন না।কিন্তু রাজনীতির মা’র প্যাচ তো দেখি ভালোই বুঝেন।

—রাজনীতি বিদ এর পাশের বেলকনি তে ছিলাম তো।তাই সাইড এফেক্ট করেছে।তাছাড়া নেতা সাহেব এর বউ হয়ে এত টুকু না বুঝলে কি হয়?

—তা অবশ্য ঠিক।এখন বলুন সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার জন্য কি গিফট চান আপনি?

জান্নাত প্রণয় কথায় মিহি হাসে।প্রণয় দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,

—আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?

জান্নাত এর আবেদন শুনে প্রণয় জান্নাত এর কোমড় থেকে হাত নামিয়ে হাত দুটো প্রশস্ত করে দুই দিকে মেলে ধরে বলে,

—‘‘আসুন।এই “মন কুঠির” নামক জেল খানার একমাত্র কয়েদি আপনিই। আর কেউ না’’।

জান্নাত প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।মাথা রাখে প্রণয় বক্ষের সেই তার নামে বিট করা যন্ত্র টার উপরে।শুনতে থাকে প্রতিটা স্পন্দন। দ্রুত বিট হচ্ছে প্রণয় হার্ট।জান্নাত ভ্রু কুঁচকায়।মানুষ টা তো স্বাভাবিক -ই আছে।তবে হার্টবিট এতো ফাস্ট কেন?

জান্নাত প্রণয় এর বুক থেকে মাথা তুলে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কি হয়েছে আপনার? আপনার হার্টবিট এতো ফাস্ট কেন?এত টা অশান্ত ভাবে কেন বির্ট করছে?

প্রণয় জান্নাত এর নাকের সেই লালছে কালো তিলটা এবং ডান গালে তে অধর স্পর্শ দিয়ে বলে,

—আপনি শান্ত করে দিন জান্নাত।

প্রণয় এর এই কথা টা তে কি ছিলো জান্নাত জানে না।সে প্রণয় এর দুই চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো এক নেশায় ডুবে আছে যেন সে?সে পুনরায় প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।প্রণয় এর বুকের বাঁ পাশে দুই ইঞ্চি নিচের যন্ত্র তার উপর নিজের ওষ্ঠ যুগোল এর উষ্ণতা স্পর্শ দেয়।প্রণয় চমকায়।হত বিহম্বল দৃষ্টি পেলে জান্নাত এর দিকে তাকায়।প্রণয় এর তাকানো তে জান্নাত নিজের হুশে ফিরে আসে।লজ্জা পায় নিজের কাজে।
প্রণয় জান্নাত কে এমন লজ্জায় মুখে লালাভ আভার জানান দিতে দেখে বুকে হাত দিয়ে বলে,

—লজ্জায় রাঙা মুখ করবেন না জান্নাত, এখানে লাগে।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করেছি।এখনো কিছু বিষয় বাকি আছে।আর যদি কোনো বিষয় বাদ বা ভুল থাকে থাকে।তাহলে বলবেন প্লিজ। আমি ঠিক করে নিবো ইনশাল্লাহ।#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৪+৩৫
#ফাতেমা_জান্নাত

মিষ্টার বিপ্লব কুমার বসে আছে কলকাতায় তার ডেরাতে। তার সামনেই মুখ কাছুমাছু করে বসে আছে রাফসান মির্জা।বিপ্লব কুমার রাফসান মির্জার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যা উপেক্ষা করার সাহস হয়ত রাফসান মির্জার কলিজা দিচ্ছে না।ভ’য়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।কণ্ঠ নালী তে যেন কিছু ছেপে আছে।তাই কিছু বলতে ও পারছে না।মিষ্টার বিপ্লব কুমার যেন তেন কোনো নরম প্রকৃতির মানুষ না। তার সম্পর্কে রাফসান মির্জা জ্ঞাত। তবুও সে কি ভেবে ছিলো তার ড্রা’গ এর ট্রাক পুলিশ এর কাছে ধরা পড়বে?আর বিপ্লব কুমার তার প্রতি এতটা রাগান্বিত হবে?

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার মধ্যে সময় পার করে রাফসান মির্জা তার পাশের দুই জন বডি গার্ড কে বাইরে চলে যেতে বললো। তারা ও কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করে বেরিয়ে গেলো। গার্ড রা বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে বিপ্লব কুমার তার কোমড় এ প্যান্ট এর সাথে গুঁজে থাকা গু’লি টা বের করেই হুট করে রাফসান মির্জা এর হাটু তে একটা গু’লি করে।রাফসান মির্জা আত্ম চি’ৎকার দিয়ে উঠে ব্য’থায়।কুঁকিয়ে উঠে অস্পষ্ট স্বর বের হয় য-ন্ত্র-নায়।সেই দিকে তাকিয়ে বিপ্লব কুমার ভ্রুক্ষেপ ও করে না।সে তার পাওনা মিটিয়ে নিতে এখন যা যা করা দরকার তাই তাই করবে।

রাফসান মির্জা বিপ্লব কুমার এর দিকে তাকিয়ে ব্য’থায় কাতর কণ্ঠে বলে,

—আপনি এমন করলেন কেন?মিষ্টার বিপ্লব কুমার?

বিপ্লব কুমার পৈ’শাচিক হাসি দিয়ে বলে,

—কি ভেবেছেন? আমার টাকা না দিয়ে হাওয়া হবেন?আমার থেকে পালিয়ে বেড়ানো এত সহজ?আমার টাকা খেয়ে এখন আর আমার পাওনা টা আমাকে দিচ্ছেন না।এত সহজ আমাকে ঠকিয়ে পার পাওয়া?

—বিশ্বাস করুন আমি আপনার টাকা দিয়ে দিবো।

বিপ্লব কুমার রে’গে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,

—কবে দিবি?এই পর্যন্ত হাজার বার এই কথা বলে তুই আমাকে বুঝ দিয়েছিস। আর নাহ।এবার যা হবার এখানে হবে।

বিপ্লব কুমার এর কথা শুনে রাফসান মির্জা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,

—এখানে হবে মানে?কি হবে?

—-যতদিন না তুই আমার টাকা মিটিয়ে দিচ্ছিস। তত দিন পর্যন্ত তোকে আমার কাছেই বন্দি থাকতে হবে।

—কিন্তু আমি এখানে থাকলে আপনাকে টাকা পরিশোধ করবো কি ভাবে?

—তোর লোক দের কে ফোনে বলবি টাকা পাঠাতে।এত বোকা ভেবেছিস আমাকে?তোকা আমি এখান থেকে ছেড়ে দিবো আর তুই গিয়ে নিজেকে গোপন করবি আমার টাকা না দিয়ে?তা আর হচ্ছে না।

—কিন্তু বর্তমানে তো কোনো টাকা নেই আমার একাউন্টে।

—ঠিক আছে।যেদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবি। সে দিন নিজের দেশে ফিরে যাস।তত দিন পর্যন্ত আমার কাছে বন্দি থাক।

বলেই বিপ্লব কুমার ডেরা থেকে বের হয়ে যায়।কয়েক জন গার্ড কে বলে যায় কড়া পাহারা দিতে।যাতে রাফসান মির্জা পালিয়ে না যেতে পারে।

ডেরার ভিতরে রাফসান মির্জা ব্য’থায় কুঁকিয়ে উঠছে বার বার।কেউ আসছে ও না দেখবার জন্য।হাটু থেকে র’ক্ত ঝরে পড়ছে ফ্লোরে। মাথায় চিন্তা এসে ভর করছে রাফসান মির্জার। কি ভাবে বিপ্লব কুমার এর টাকা পরিশোধ করবে?তার অফিস এবং অনৈতিক যে কাজ গুলোর সাথে জড়িত ছিলো সব কিছুর করুণ অবস্থা হয়ে যাচ্ছে।লাভের চেয়ে লস এর মুখ দেখছে বেশি।মুহূর্তে- ই ক্রোধ এসে নির্ভর করে তার সারা অঙ্গে এবং মুখশ্রী তে।”শাহরিয়ার প্রণয় তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা। আমার এই করুণ পরিস্থিতির জন্য তুই দায়ী।তোকে কি আমি ছেড়ে দিবো নাকি?খুব খারাপ হবে।শুধু একবার এখান থেকে বের হই”। বলেই চি’ৎকার দিয়ে উঠে রাফসান মির্জা।

🌸🌸

বিষন্ন তায় ঘেরা মুখ নিয়ে নিজের রুমে শয়নে আছে প্রান্তিক। তার চোখে মুখে পড়েছে বিষন্নতার ছায়া।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।ইচ্ছে করে জগৎ সংসার ছেড়ে অন্য গ্রহে চলে যেতে। এর মধ্যে প্রণয় রুমে আসে।প্রণয় রুমে এসেই প্রান্তিক কে শুয়ে থাকতে দেখে বলে,

—এই সন্ধ্যা লগ্নে তুই এমন শুয়ে আছিস কেন?

প্রান্তিক বিরক্ত হয় প্রণয় এর কথায়।ভ্রকুটি কুঁচকে ফেলে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তো কি করার কথা ছিলো? গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরার কথা ছিলো নাকি?তাহলে একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে দেও।তখন আর সন্ধ্যা লগ্নে শুয়ে থাকবো না।

—তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?

—আমার মতো সিঙ্গেল মানুষ দের কথা এখন এমনি থাকবে।

প্রণয় ভ্রুলতা কুঁচকে ফেলে প্রান্তিক এর এমন বেখাপ্পা কথা শুনে।হলো কি ওর?প্রণয় কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে,

—ইশির সাথে ঝ’গড়া হয়েছে তোর?

প্রান্তিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে?

—নাহ।আর কিসের ইশি?কোন ইশি?আমি কোনো ইশি কে চিনি না।

প্রণয় অবাক হয় প্রান্তিক এর কথা শুনে।কি বলে ও?কিছু দিন আগে বললো ইশি কে পছন্দ করে।আব্বু আম্মু কে যাতে সে রাজি করায়।প্রণয় ও আর না করেনি।বলেছে আব্বু আম্মুকে সে বলবে।তাহলে আজ হঠাৎ প্রান্তিক এর এমন আচরণ প্রণয় এর মাথায় ঢুকছে না।প্রণয় হাক ছেড়ে জান্নাত কে ডাক দেয়।

—জান্নাত! একবার প্রান্তিক এর ঘরে আসুন তো।

প্রণয় এর কণ্ঠস্বর পেয়ে জান্নাত গায়ে মাথায় ভালো ভাবে উড়না দিয়ে ডেকে প্রান্তিক এর ঘরে আসে।জান্নাত প্রান্তিক এর ঘরে এসে দেখে প্রান্তিক মুখ কালো করে বসে আছে।তার পাশেই প্রণয় ওর কাঁধে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।জান্নাত রুমের ভিতর ঢুকতেই প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—জান্নাত, ইশির সাথে কি প্রান্তিক এর ঝ’গড়া হয়েছে?আপনি জানেন কি কিছু?

জান্নাত একবার প্রান্তিক এর দিকে তাকায়।আবার প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ইশি কে আজকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে।

জান্নাত এর কথা শুনে এতক্ষণে প্রণয় বুঝতে পারলো প্রান্তিক এর মন খারাপ এর কারণ। প্রণয় হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?এটা তো জাস্ট দেখতে এসেছে বিয়ে তো হয়ে যায়নি।

—ভাইয়া পাত্র পক্ষরা ওকে পছন্দ করে গিয়েছে।ছেলে কানাডা থাকে।এক দুই দিনের মধ্যে ছেলে আবার চলে যাবে।চার মাস পরে আবার দেশে এসে ইশি কে বিয়ে করে নিয়ে যাবে বলেছে।

প্রান্তিক এর কথা শুনে প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থাকে।কিছু একটা ভেবে বলে,

—তোদের ফাইনাল এক্সাম কবে?

—দুই মাস পরেই।

—চিন্তা করিস না।ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই ইশি তোর বউ হয়ে এই ঘরে আসবে ইনশাল্লাহ। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।চিন্তা করিস না।( জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে) জান্নাত আমার সাথে আসুন।

বলেই প্রণয় বের হয়ে যায় প্রান্তিক এর রুম থেকে।বাবা মায়ের রুম এর সামনে গিয়ে দরজায় নক করে,

—আম্মু আসবো?

রোকসানা বসে বই পড়ছিলেন। শাহরিয়ার পাবেল নেই বাসায় এখন।প্রণয় এর কথা শুনতে পেয়ে রোকসানা তাকে বলে,

—আয় বাবা।

জান্নাত, প্রণয় দুই জনেই রুমে গিয়ে ঢুকে।রোকসানা ছেলে, ছেলের বউ এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।দুই জন কেই বসতে বলে।জান্নাত, প্রণয় রোকসানার দুই পাশে বসে।রোকসানা হেসে দিয়ে প্রণয় কে বলে,

—আজ যে তাড়াতাড়ি বাসায় আসলি আব্বু?

— কাজ শেষ করে চলে আসছি।তুমি ওষুধ খাও তো ঠিক মতো?

—হ্যাঁ আব্বু। জান্নাত প্রতিদিন নিজে এসে ওষুধ দিয়ে যায়।

প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।জান্নাত তাদের মা ছেলের কথা শুনছে। নেতা সাহেব সব দিয়ে পারফেক্ট।নিজের দেশের নিজের শহরের মানুষ এর খেয়াল রাখা,
বউ এর মি. ভালোবাসা হয়ে সর্বক্ষণ ভালোবাসায় ঘিরে রাখা,মা- বাবার বড় ছেলে হিসেবে তাদের দিকে খেয়াল রাখা।ছোট ভাই এর মন খারাপ এর সময় বন্ধুর মতো সঙ্গী হয়ে অভ’য় এবং ভরসা দিয়ে পাশে থাকা।

প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে।দরজা বন্ধ করেই জান্নাত এর কাছে এসে পিছন থেকে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এর মাথার উড়না ফেলে দিয়ে খোলা চুলে মুখ গুঁজে। সেই নেশাক্ত স্মেল নিতে থাকে নাসারন্ধ্র দিয়ে।জান্নাত প্রণয়ের হাত দুটোর উপর নিজের হাত রাখে।প্রণয় হাত জান্নাত এর পেটের উপরেই বিরাজ করছে।জান্নাত ফিসফিস করে বলে,

—এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন কেন মি. ভালোবাসা?

—আপনার আরেকটু ভালোবাসা নিতে।

—তাই?কিন্তু আমার তো এখন কাজ আছে।

প্রণয় জান্নাত কে ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসায়। এর পর নিজেই জান্নাত এর কোলে শুয়ে পড়ে জান্নাত কে বলে,

—কোনো কাজ করতে হবে না।স্বামী ঘরে বসে থাকবে একা আর বউ গিয়ে কাজ করবে?এটা হয় নাকি?উঁহু হয় নট।কোথাও যাওয়া যাবে না।মাথা ব্য’থা করছে যদি একটু আদর করে সারিয়ে দিতেন খুব উপকৃত হতাম।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,

—কেমন উপকার হতো আপনার?

—যান,জান্নাত! আপনি না দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছেন। এসব কি বলা যায় নাকি?

বলেই প্রণয় জান্নাত কে চোখ টিপ মে’রে হেসে দেয়।জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রণয় এর দিকে।প্রণয় কে সে কি এমন জিজ্ঞেস করলো যা বলা যায় না সেটাই বুঝে আসছে না জান্নাত এর।

প্রণয় ডান কাত হয়ে দুই হাতে জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকে।জান্নাত তাকায় প্রণয় এর দিকে।প্রণয় এর মাথার চুলে নিজের একটা হাত ডুবিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চুল টানতে থাকে।আরেক টা হাত প্রণয় এর মুখের উপর।মিনিট খানেক গড়াতেই প্রণয় এর ভারী নিশ্বাস এর শব্দ জান্নাত এর কর্ণপাত হয়।তার মানে মি. ভালোবাসা ঘুমিয়ে গেছে।

জান্নাত অতি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে প্রণয় কে দেখতে থাকে।আর এই দেখার মাঝেই জান্নাত এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।নিজের সুপ্ত বাসনা কে প্রকাশ করে প্রণয় এর গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দেয়।প্রণয় তো ঘুমেই সে তো আর বুঝতে পারবে না ভেবেই জান্নাত খুশি হয়।কিন্তু জান্নাত এর খুশিতে এক বালতি না থুক্কু বালতি না এক পুকুরের পানি ঢেলে দিয়ে প্রণয় জান্নাত কে জড়িয়ে রেখেই বলে উঠে,

—‘‘ঘুমে থাকা অবস্থায় আমাকে চুমু দিলে আমি লজ্জা পায় বেশি জান্নাত। আপনার উচিত জাগ্রত অবস্থায় আমাকে বেশি বেশি চুমু দিয়ে লজ্জা ভে’ঙে দেওয়া’’।

প্রণয় এর কথা শুনে জান্নাত কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না।একে তো ধরা পড়ে গেছে,আবার ধরা পড়ার পর প্রণয় এর এমন কথা শুনে তার রিয়াকশন বাটন হ্যাং করেছে বোধহয়। জান্নাত কে অবাক এর সীমান্ত চূড়ায় নিয়ে বিস্ফোরিত করার জন্য প্রণয় আরেকটা কাজ করে ফেলে।শোয়া থেকে উঠেই হুট করেই টপাটপ ভাবে জান্নাত এর ওষ্ঠদ্বয় এ আলতো নিজের অধর ছুঁয়ে আদর দেয়।এখানেই শেষ নই।আবার জান্নাত এর নাকের সেই লালছে কালো তিল টা তে সুক্ষ্ম ভাবে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে আবার জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে।আর মুখে বলে,

—‘‘আপনার এই লালছে কালো তিল টার জন্য আমি কন্ট্রোল লেস হয়ে যায়।এর জন্য এই তিলটা কে আর কত শাস্তি পেতে হয় আল্লাহ জানে’’।

জান্নাত এখনো স্তব্ধ হয়ে এক হাত নাকে আরেক হাত ঠোঁটে দিয়ে বসে আছে।যদি ও এটা প্রণয় এর প্রথম স্পর্শ না।তবুও এই স্পর্শ একটু বেশিই মোহনীয় ছিলো।প্রণয় একবার মাথা উঁচু করে জান্নাত এর এই অবস্থা থেকে মুচকি হেসে আবার আগের ন্যায় শুয়ে পড়ে।

🌸🌸

সময় প্রবাহমান নদীর নেয়।কোনো মতেই স্থির নয়।তবে আপনি যদি আপনার সময় কে স্থির করতে চান তাহলে ঘড়ির ব্যাটারি খুলে রেখে দিন।আপনার সময় স্থির হবে।কিন্তু বাস্তবতার সময় চলমান থাকবে।

বলতে না বলতেই দুই মাস পার হয়ে গেছে।প্রকৃতি তে যদিও এখন ঋতু হিসেবে হেমন্ত। তবে সেটাকে মানুষ গণনার বাইরে রেখে বলছে এখন শীত।কারণ শীত এসে ধরা দিচ্ছে ধীর গতি তে।জান্নাত,প্রান্তিক,ইশির অনার্স ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল শুরু হয়েছে কিছু দিন আগেই।আজই শেষ পরীক্ষা তাদের।

প্রান্তিক ইশির সাথে রা’গ করে এখনো ঠিক মতো কথা বলছে না।ইশি জানে প্রান্তিক তাকে পছন্দ করে।কিন্তু প্রান্তিক প্রকাশ না করা টাই ইশির বিরক্ত লাগছে।জেদ ছেপে রেখেছে নিজের মধ্যে। তাই মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে প্রান্তিক এর সামনে বলবে,”আর মাত্র কিছুদিন পরেই বিয়ে করে আমি শাই…করে লন্ডন চলে যাবো “।ইশির এসব কথা শুনলে প্রান্তিক রা’গ করে উঠে যায় সেখান থেকে।

ইশির বাবা আজকে নিজে এসেছে ইশি কে ভার্সিটি থেকে নিতে।জান্নাত, ইশি,প্রান্তিক তিনজনে এসে গেইট এর বাইরে দাড়াঁ তেই ইশির বাবা রিক্সা থেকে নেমে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। জান্নাত, প্রান্তিক দুই জনেই সালাম দেয়।প্রান্তিক হেসে দিয়ে বলে,

—ভালো আছেন আঙ্কেল?

ইশির বাবা হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর মাথায় হাত রেখে বলে,

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

—জি আঙ্কেল ভালো। আন্টি ভালো আছে?

—হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ। একদিন বাসায় আসো তোমরা।(ইশির দিকে তাকিয়ে) কিরে ইশি মা,ওদের তো মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে যেতে পারিস।নিস না কেন?

ইশি প্রতি উত্তরে দিয়ে বলে,

—আব্বু ওরা তো আসে না আমি বললে ও।

প্রান্তিক বিড়বিড় করে বলে,

—একবার শুধু বিয়ে টা করে নিই।তখন দরকার হলে ঘর জামাই হয়ে থাকবো।

জান্নাত প্রান্তিক এর পাশে থাকায় কথা টা শুনতে পেয়ে ছিলো। তাই প্রান্তিক এর আরেকটু পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফাস করে বলে,

—বাসায় যেয়ে তোর ভাইয়া কে জানাতে হবে এটা।

প্রণয় থতমত খেয়ে করুণ সুরে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দোস্ত প্লিজ ভাইয়া কে এটা বলিছ না।ভাইয়া জানলে বিয়ে তো করাবেই না।উল্টা বিয়ের স্বপ্ন দেখতে ও নিষেধ করে দিবে।

প্রান্তিক এর কথা শুনে জান্নাত ফিক করে হেসে দেয়।ইশির বাবা জান্নাত, প্রণয় কে বলে,

—আজ চলো ইশির সাথে বাসায়।

প্রান্তিক না জানিয়ে বলে,

—নাহ আঙ্কেল। অন্য একদিন যাবো। আমাকে একটু লাইব্রেরী তে যেতে হবে।আজ সম্ভব না।

প্রান্তিক এর সাথে তাল মিলিয়ে জান্নাত বলে,

—আমাকে ও বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি আঙ্কেল। আজ সম্ভব হবে না।

—বেশ তাহলে সময় করে এসো একদিন।

—জি।

ইশির বাবা ইশিকে নিয়ে রিক্সায় উঠে চলে যায়।প্রান্তিক জান্নাত কে একটা রিক্সায় তুলে দিয়ে সে তার কাজে যায়।জান্নাত ও বাসার দিকে চলে যায়।

এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে সব কিছু দেখছিলো মেহেদি আর প্রদীপ। হঠাৎ মেহেদি এর ফোন আসে।হকচকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে রাফসান মির্জা ফোন করেছে।মেহেদি নিশ্বাস ফেলে বলে,

—স্যার দুই মাস শেষ হতে চললো অথচ আপনি এখনো আসছেন না কেন?ওখানে কি বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্ছা পালছেন?

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জার ইচ্ছা করছে ঠাটিয়ে দুই টা থা’প্পড় মে’রে দিতে।তবুও রা’গ নিয়ে বলে,

—ওই শাহরিয়ার প্রণয় আর ওর বউ এর কি খবর?

—স্যার তারা দুই জনে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।

—গর্দভ। আমি কি তাদের ভালোর খবর জিজ্ঞেস করেছি?ওরা দুই জনে কি করছে তা জানাতে বলেছি।

—স্যার তারা দুই জনে রুমের ভিতর কি করে তা তো আমি দেখিনি যে আপনাকে বলবো। আর আপনি এসব শুনে কি করবেন?ছিহঃ!! কি নিচু মাইন্ড আপনার স্যার।

রাফসান মির্জার ইচ্ছা করছে মেহদির মাথাটা পাটিয়ে দিতে।রা’গ টা কিছু সংবরণ করে বলে,

—প্রদীপ কে ফোন দে তুই।

মেহদি প্রদীপ এর হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। প্রদীপ বলে,

—জি স্যার বলুন।কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?

—তুই আমকে সাহায্য করবি মানে?আমি কি ভিখারি নাকি?

প্রদীপ বিড়বিড় করে বলে,

—ভিখারি ও আপনার চেয়ে বড়লোক এখন।

রাফসান কিছু শুনতে না পেয়ে বললো,

—কি বললি?

—কিছু না।বলুন স্যার কি বলবেন?

—শাহরিয়ার প্রণয় এর খবর কি?

—স্যার তিনি নিজের মতোই নিজের কাজ করে চলছেন।

—আর ওর বউ?

—স্যার উনার বউ কে একটু আগে দেখলাম রিক্সায় করে বাড়ি যাচ্ছে।

—ওর বউ কে ধরে এনে শেষ করে দে।এরপর শাহরিয়ার প্রণয় কে এমনিই শেষ করে ফেলা যাবে।আমি বলতে পারছি না আমি এখান থেকে কবে আসবো। আমার অফিস আর আউট কাজ গুলোর কি খবর?

—স্যার সব কিছুই দিন দিন ডাউন হয়ে যাচ্ছে।

—এই শাহরিয়ার প্রণয় এর জন্য আমার এই অবস্থা। ওই শাহরিয়ার প্রণয় কে এত সহজে ছাড়বো না।আমার অবর্তমানে এখন সব কাজ তোরা কর।যা আমার করার কথা ছিলো।

—আচ্ছা স্যার।

বলেই প্রদীপ ফোন কেটে মেহেদির হাতে তার ফোন ধরিয়ে দেয়।মেহেদি উৎসুক দৃষ্টি ফেলে বলে,

—স্যার কি বলেছে?

—কবে আসবে ঠিক না।তবে শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে ধরে এনে শেষ করে দিতে বলছে।

—আচ্ছা।তাহলে তো প্ল্যান করতে হবে একটা।

—হুম চল।

বলেই প্রদীপ আর মেহেদি সেই জায়গা থেকে চলে যায়।তিন মাস হতে আর দুই দিন বাকি।অথচ রাফসান মির্জা এখনো ছাড়া পায় নি বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে।তাকে ভারত এর কলকাতায় বিপ্লব কুমার আটকে রেখেছে।আর এই দিকে বাংলাদেশে তার অফিস, আউট কাজ গুলোর করুণ দশা।কবে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে পারবে কবে ছাড়া পাবে বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে তা এখনো অজানাতেই আছেই।জমে যাচ্ছে শাহরিয়ার প্রণয় এর জন্য পাহাড় সম ক্রোধ। ইচ্ছে তো করে সেই ক্রোধানলে পু’ড়িয়ে মা’রতে শাহরিয়ার প্রণয় কে।একবার শুধু ছাড়া পেয়ে যাক তারপরেই শেষ।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here