প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -৩০+৩১+৩২

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৩০
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

প্রণয় ফোনটা ধরে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ব্যক্তি টির বলা কথা শুনে প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রু কুটি কুঁচকে ফেলে। অপর পাশের ব্যক্তি টি বলে,

—প্রণয় দা অফিসে যেই গাড়িটা করে এসেছেন। সেইটাই করে কোথাও যাবেন না।ওটার ব্রেক ফেল করে দিয়েছে রাফসান মির্জার লোকেরা।

বলেই লোকটা ফোন কেটে দেয়।প্রণয় ক্রুর হেসে গাড়িতে উঠে বসে।সজীব গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলে প্রণয় স্টিয়ারিং এ হাত দেয়।সজীব প্রণয় এর দিকে প্রণয় চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে।সজীব ও আর গাড়ি স্টার্ট না দিয়ে বসে থাকে।প্রণয় ফন্ট ক্যামেরা তে পিছনে দেখে।

প্রণয় দের গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রদীপ আর মেহেদি দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় দের গাড়িতে উঠতে দেখে মেহেদি প্রণয় কে বলে,

—চল।ওরা তো গাড়িতে উঠে গেছে।তারমানে চলে যাবেই।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই।চল আমরা চলে যায়।

প্রদীপ ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে চলে যায় মেহেদির সাথে।

ওরা চলে যেতেই প্রণয় আর সজীব গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।সজীব গাড়ির তাঁর ঠিক করে গাড়ি চালানো শুরু করে পার্টি অফিস এর দিকে।প্রণয় ক্রুর হাসে রাফসান মির্জার ব্যর্থ হওয়া প্ল্যান ভেবে।আর মাথায় সাজাতে থাকে রাফসান মির্জা কে কিভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া যায় সেটা।

🌸🌸

রাফসান মির্জা নিজের কেবিনে বসে মেহেদির সাথে কথা বলছে।প্রদীপ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—প্রদীপ, শাহরিয়ার প্রণয় এর গাড়ির তাঁর কে’টে দিয়েছিস তো?যাতে ব্রেক ফেল হয় খুব তাড়াতাড়ি?

প্রদীপ রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,

—জি স্যার। মেহেদি গাড়ির নিচে ঢুকে শুয়ে তার কাটছে।আমি চার দিকে তাকিয়ে দেখছি কেউ দেখছে কিনা?কেউ দেখে নি।

—গুড।

মেহেদির দিকে তাকিয়ে রাফসান মির্জা বলে,

—কি খবর বল? ওরা গাড়িতে উঠেছে তো?ব্রেক ফেল হয়েছে তো গাড়ি? এখনো কোনো নিউজ বের হচ্ছে কেন?

— জি স্যার এতক্ষণে গাড়ি ব্রেক ফেল হয়ে শাহরিয়ার প্রণয় বোধহয় মা’রা ও গেছে।মিডিয়া হয়তো এখনো খবর পায়নি।

মেহেদি এর কথায় রাফসান মির্জা কিছু বলতে যাবে এর আগেই তার ফোনে প্রণয় এর নাম্বার থেকে ফোন আসে।উনি ভ্রু কুঁচকে মেহেদি আর প্রদীপ এর দিকে তাকায়।ইশারায় তাদের কে কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে বলে।দুই জনে বের হতেই রাফসান মির্জা ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই প্রণয় সালাম দিয়ে বলে,

—মির্জা সাহেব এবার ও আপনার প্ল্যান ফ্লপ হলো।আল্লাহ এবার ও আমাকে বাচিঁয়ে নিয়েছে।কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মা’রে কে?আল্লাহ যদি বাচিঁয়ে রাখতে চায় তাহলে আপনি বার বার আমাকে মা’রার প্ল্যান করে কি লাভ?

বলেই ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা রা’গে পাশের ফুলের টব টা ছু’ড়ে ফেলে ভে’ঙে ফেলে।আবার নতুন প্ল্যান করে।”এত সহজে দমে যাওয়ার লোক রাফসান মির্জা নয়” -বলেই রাফসান মির্জা হাসতে থাকে।

🌸🌸

পার্টি অফিস থেকে মাত্র বের হয়েছে প্রণয় আর সজীব। আফজাল সাহেব এর সাথে বেশ অনেক ক্ষণ কথা হয়েছে প্রণয় এর।পার্টি অফিস থেকে বের হয়েই প্রণয় নিজের অফিসে আসে আরেক বার।কিছু ফাইলে তার সিগনেচার দরকার ছিলো। যা না করলেই নয়।তাই প্রণয় আবার অফিসে যায়।অফিসে যেতেই রিফাত ফাইল গুলো নিয়ে আসে।প্রণয় ফাইল গুলো তে সিগনেচার করেই ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

রাতে জান্নাত প্রণয় খাওয়া শেষ করে মাত্র রুমে এসেছে।বরাবর এর চাইতে আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছে প্রণয়। ঘড়িতে ঘন্টার কাঁ’টা বরাবর এগারো এর ঘরে।প্রণয় ঘরে এসেই দরজা বন্ধ করে দেয়। জান্নাত গিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে।প্রণয় ল্যাপটপ নিয়ে বসে। হালকা কিছু কাজ রয়ে গেছে সে গুলো শেষ করেই ঘুমাতে যাবে।

জান্নাত আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছে।প্রণয় কিছুক্ষণ পর পর ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে জান্নাত এর দিকা তাকাচ্ছে। নজর টা বরাবরই নাকের সেই লালচে কালো তিলটা তে গিয়েই আটকায়।

প্রণয় ল্যাপটপ রেখে উঠে এসে জান্নাত এর পিছনে দাঁড়ায়। জান্নাত আয়নার মধ্যে প্রণয় কে দেখে বলে,

—কিছু বলবেন?

জান্নাত এর কথার প্রতি উত্তরে প্রণয় কিছু বলে না। প্রণয় কিছু একটা মনে করতে- ই জান্নাত কে অপেক্ষা করতে বলে কার্বাড এর সামনে গিয়ে কার্বাড খুলে দুটো কিটকাট চকলেট এনে জান্নাত এর হাতে দেয়।জান্নাত চকলেট পেয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে প্রণয় কে উৎকণ্ঠিত সুরে বলে,

—আপনি জানলেন কি ভাবে কিটকাট চকলেট যে আমার প্রিয়?

প্রণয় হেসে দিয়ে বলে,

—আপনার বেলকনি তে মাঝে সাঝে উঁকি ঝুঁকি দিলে বুঝা যাওয়া যাবে আপনার কোন চকলেট প্রিয়।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত মাথা নিচু করে হেসে ফেলে ।মাঝে মাঝে বেলকনি তে বসে চকলেট খেতো।আর বেলকনি তে রাখা বাস্কেট এ চকলেট এর প্যাকেট ফেলো দিতো। হয়তো প্রণয় কোনো ভাবে সেটা দেখেছে।

জান্নাত আয়নার সামনের ছোট্ট টুলে বসে বসে চকলেট খাচ্ছে। সাথে পার্শিয়া আর জেনিথ ও জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত তাদের মুখের সামনে চকলেট খাওয়ার জন্য ধরলে তারা মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়।আইসক্রিম হলে নিশ্চিন্ত দুই জনে খেতো। চকলেট হওয়ার কারণে খাচ্ছে না।

প্রণয় সোফায় বসে জান্নাত এর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জান্নাত সেই দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রণয় কে স্বগতোক্তি করে সুধায়,

—কি দেখছেন এভাবে?

প্রণয় জান্নাত এর কথার প্রত্যুত্তর দেয় না।উঠে কাছে এসে পিছন থেকে জান্নাত এর দুই বাহু তে হার রেখে জান্নাত কে দাড়াঁতে বলে।জান্নাত দাড়াতেই নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জান্নাত এর কপালে গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ ভুলিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ নাকের তিল টার দিকে তাকিয়ে নাকের উপরে অধর ছোঁয়া দেয়।জান্নাত খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালে প্রণয় জান্নাত কে আরেক ধাপ অবাক করে দিয়ে জান্নাত কে জড়িয়ে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,

—‘‘আপনার এই চুলের স্মেল,নাকের লালচে কালো তিলে এই কেমন নেশা ছড়িয়ে আছে যে আমি বারে বারে নেশায় পড়ে যায় জানুমণি ’’?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত উত্তর দেয় না।প্রণয় এর বুকে মাথে রেখে হাসে।এই মানুষ টা তার একান্ত একজন। মানুষ টা পাশের বেলকনির সেই বালক টি যে এখন পেয়েছে তার স্বামী রূপের পরিচিতি।

এসব ভেবেই জান্নাত নিজেও প্রণয় কে দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের হাত দুটো নিয়ে যায় প্রণয় এর পিঠের মধ্য খানে।আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।

জান্নাত শুনতে পায় প্রণয় এর বুকের বাম পাশের দুই ইঞ্চি নিচে “হার্ট” নামের যন্ত্র টার হৃৎ স্পন্দন। হার্ট এর প্রতিটা বিট যেন জান্নাত এর নাম বলে বিট করছে।জান্নাত আবেশে প্রণয় কে আরেকটু জড়িয়ে ধরে সকল সংকোচ ভুলে।প্রণয় ও প্রিয় তমা কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।পারে না তো যেন বুকের মধ্যে খানি তে ঢুকিয়ে রাখে।

প্রণয় নেশাক্ত কণ্ঠে জান্নাত কে বলে,

—আজ যদি আপনার কাছে একটু নির্লজ্জ হওয়ার আবদার করি।আপনি কি অনুমতি দিবেন জান্নাত?

এই কথার বিপরীতে কি বলা উচিত জান্নাত এর জানা নেই।মানুষ টাকে বাধা দিবে কেন?মানুষ টা তো তার স্বামী। আল্লাহর দেওয়া রহমত।এই মানুষ টা কে ‘না’ করার ক্ষমতা যে তার নেই।জান্নাত লজ্জায় মুখে র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।প্রণয় প্রিয়তমা স্ত্রীর সম্মতি সূচক উত্তর পেয়ে হাসে।ভালোবাসার রাত টুকু তে হোক না ভালোবাসা আরেকটু গভীর। ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ভালোবাসার আন্দোলনে শিহরিত হোক শিরা উপশিরায়।নাম হোক একটা রাতের। আখ্যায়িত থাকুক ভালোবাসার রাত নামে।সন্ধি হোক দুটো মনের, দুটো প্রাণের,দুটো দেহের।

🌸🌸

রাত সাড়ে চারটা বাজে।রাত জাগা নিশাচর পাখিরা কিচিরমিচির করছে।প্রণয় এর উদাম প্রশস্ত বক্ষে- ই জান্নাত ঘুমাচ্ছে দু হাতে প্রণয় কে জড়িয়ে।যেন এই জায়গা টা তেই সে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে।প্রণয় তাকিয়ে আছে জান্নাত এর মুখশ্রীর দিকে।মেয়ে টার দিকে যত তাকিয়ে থাকে তত যেন তার ঘোর লেগে যায়।যত দেখি তত- ই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।মেয়ে টা কে দেখলেই যেন চক্ষু শীতল হয়।হালাল ভালোবাসা গুলো এমনি।প্রণয় নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঘুম আসছে তার।দুই হাতে সে ও জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এর মাথার কোঁকড়া চুল গুলো তে হাত গলিয়ে দেয়।কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয় আবারো।

হঠাৎ বাইরে কিছুর শব্দ পেতেই প্রণয় জান্নাত কে নিজের বুকের উপর থেকে আলগোছে তুলে নিয়ে বিছানায় বালিশে মাথা টা রেখে শুইয়ে দেয়।শরীর ঢেকে দেয় কাঁথা দিয়ে।উঠে একটা কালো টি- শার্ট গায়ে জড়িয়ে বেলকনি তে গিয়ে দাঁড়ায়।যা ভেবেছিলো তাই।রাফসান মির্জার লোক দের সাথে তার গার্ড দের সাথে মা’রামা’রি চলছে।

প্রণয় রুমে এসে একবার জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে সাইড টেবিল ড্রয়ার থেকে গু’লি টা নিয়ে সাইলেন্সার লাগিয়ে আবার বেলকনি তে চলে যায়।সেখান থেকে রাফসান মির্জার লোকদের মধ্যে একজন এর দিকে গু’লি টা তাক করেই ট্রিগার এর চাপ দেয়।সাথে সাথে গু’লি টা ছুটে গিয়ে লোকটার মাথায় ঢুকে।সেখান এই মা’রা যায় লোকটা। সবাই উপরে তাকাতেই প্রণয় কে দেখে।জানের ভ’য় সবার আছে।সেই জন্য সেখান থেকে পালিয়ে যায় প্রণয় কে না মে’রে। ভেবেছিলো গার্ড দের মে’রে প্রণয় এর বাসায় ঢুকে ঘুমের মধ্যে -ই প্রণয় কে মারবে।কিন্তু তারা কি আর ভাবতে পেরেছে প্রণয় আজ রাতেই জেগে থাকবে।

লোক গুলো চলে যেতেই প্রণয় মোবাইল টা নিয়ে রাফসান মির্জা কে ফোন করে।রাফসান মির্জা ঘুমে বিভোর। এই তো সুন্দর আরাম এর ঘুমের মাঝে কর্কশ শব্দ করে ফোন টা বেজে উঠায় বিরক্ত হলেন তিনি।ঘুম ঘুম চোখেই নাম্বার না দেখে ফোন কানে তুলে বিশ্রী ভাবে গা’লি দিয়ে বলে,

—এত রাতে ফোন করেছিস কোন আমলের দু সংবাদ দিতে?

প্রণয় রাফসান মির্জার গা’লি শুনে মাথা টা গরম হয়ে গেলে ও মাথা ঠান্ডা রাখে।প্রণয় বেশ বুঝতে পারছে রাফসান মির্জা ঘুমের ঘোরে তার নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে কথা বলছে।প্রণয় ক্রুর হেসে বলে,

— স্যার,একটা দু সংবাদ আছে।আর সেটা হলো, শাহরিয়ার প্রণয় তার স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় কাটাচ্ছিলো।আর তার মাঝে আমরা উনার বাড়িতে এট্যা’ক করে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি।

“শাহরিয়ার প্রণয়” নাম শুনে আর প্রণয় এর কণ্ঠ শুনে রাফসান মির্জার চোখ থেকে যেন ঘুম উড়ে গেলো।তিনি তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসে ভালো করে নাম্বার চেক করে দেখে প্রণয় ফোন করেছে।এবার একটু গলা ঝেড়ে কণ্ঠ গভীর করে বলে,

—শাহরিয়ার প্রণয় তুই এই ভোরে আমাকে কেন ফোন দিয়েছিস?

—মির্জা সাহেব আপনি এত দিন যা করেছেন তা আমি কিছু টা হলেও মেনে নিতাম।কিন্তু একটু আগে লোক পাঠিয়ে আক্র’মণ করা টা আমি কখনো মেনে নিবো না।বাইরে গেলে যেমন শান্তি দেন না।এখন বউ এর সাথে ও
একটু শান্তিতে সময় কাটাতে দিচ্ছেন না।আপনার এরকম অতর্কিত আক্র’মণ এর কারণে আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চারা আসবে কি ভাবে দুনিয়া তে?এগুলো ঠিক না মির্জা সাহেব।বউ এর সাথে অন্তত সময় কাটাতে দিবেন।

বলেই প্রণয় হেসে ফোন টা কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা তব্দা খেয়ে বসে আছে।ভোর রাতে শাহরিয়ার প্রণয় কি পা’গল হয়ে গেলো নাকি?ফোন দিয়ে এসব কি বললো? রাফসান মির্জার মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে প্রণয় এর কথা।প্রণয় এর কথা তার ভাবনার বাইরে।

প্রণয় রুমে এসে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

—রাজনীতি তে জড়িয়ে শুধু ভুল করি নি।চরম ভুল করেছি।যার ফল প্রসূতি তে এখন বউ এর সাথে শান্তি তে সময় ও কাটাতে পারছি না।

বলেই।জান্নাত এর কপালে অধর ছুঁয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক দিতে পারিনি ]#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-৩১
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

রাফসান মির্জা আর প্রণয় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।স্থান হিসেবে আছে প্রণয় এর অফিস। আজ হুট করেই রাফসান মির্জা প্রণয় এর অফিসে আসে।প্রণয় এতে কিঞ্চিত পরিমাণ অবাক হলে ও তা মুখশ্রী তে প্রকাশ করে না।প্রণয় এর কেবিন এ শুধু রাফসান মির্জা আর প্রণয় -ই বসে আছে।প্রণয় রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু রাফসান মির্জা কোনো কথা বললে তো?

নিরবতা কে উপসংহার দিয়ে প্রণয় -ই আগে বলে উঠে,

—তা,মির্জা সাহেব। হঠাৎ আমার অফিসে কেন?

রাফসান মির্জা প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলে,

—আসলাম ইচ্ছা হলো একটু তাই।তবে আপনার সাথে একটু খোশ গল্প করার ইচ্ছা ছিলো।

প্রণয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে একটা হাসি দিয়ে বলে,

—আসলে আমি এখন আপনার সাথে খোশ গল্প করতে পারবো না।আমার প্রচুর কাজ আছে।

রাফসান মির্জা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বললেন,

—তাহলে আপনার বাড়িতে একদিন নাহয় নিমন্ত্রণ করেন, আসি।শুনলাম বিয়ে করেছেন। আপনার বউ এর হাতে রান্না খাওয়া হবে।আপনার বউ কে ও দেখা হবে।

—জি আসবেন।এসে খাওয়া দাওয়া করে যাবেন।তবে আমার বউকে আপনাকে দেখাতে আমি ইচ্ছুক না।

—তা মেয়ে পটিয়েছেন কি ভাবে?আমার লোকরা আপনার বউ এর চেহারা না দেখলে ও মুখ ঢাকা অবস্থায় একবার দেখেই বলেছে আমাকে, ঝাক্কাস মাইয়া জোগাড় করছেন আপনি।তা বিয়ের আগে কি বিছানায় গিয়েছে নাকি…..

আর কিছু বলার আগেই প্রণয় রে’গে তাকে চুপ করতে বলে। জান্নাত কে নিয়ে কোনো প্রকার বাজে কথা শুনতে প্রণয় চায় না।প্রণয় রা’গ চেপে রেখে ঠান্ডা গলায় রাফসান মির্জা কে বলে,

—আপনি এখন আসতে পারেন।

—আহা! আপনি রাগ করছেন কেন?আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করেছি নতুন নাকি পুরাতন মা*?

প্রণয় এবার চি’ৎকার করে চেয়ার ছেড়ে উঠেই রাফসান মির্জা কে মা’রার জন্য উদ্যত হয়ে হাত তুলতেই নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার হাত নামিয়ে ফেলে।রাফসান মির্জার হাত ধরে টেনে কেবিন থেকে বের করে দিয়ে সুজন কে ডাক দিয়ে বলে,

—গার্ড কে বল একে এক্ষুনি আমার অফিস থেকে বের করে দিতে।আর যাতে কোনো দিন একে আমার অফিসে ঢুকতে না দেয়।এর সাথে বেশি ভালো ব্যবহার করে ফেলেছি। আর না।

বলেই প্রণয় এক ধা’ক্কা মা’রে রাফসান মির্জা কে।রাফসান মির্জা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তোর বউ কে তো আমি এক রাতের জন্য হলেও নিয়ে আসবোই। যে ভাবেই হোক।দেখে নিস তুই শাহরিয়ার প্রণয়।

এত ক্ষণ যত টুকু রা’গ দমিয়ে রেখেছিলো।এখন সেটা ও উত্তপ্ত লাভার ন্যায় যেন টগবগ করে উঠলো। প্রণয় দৌড়ে গিয়ে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে রাফসান মির্জার নাক বরাবর একটা ঘু’ষি দিলেন।রাফসান মির্জা কিছু টা দূরে ছিটকে পড়ে। আবার জান্নাত কে নিয়ে কিছু বলতে যাবে। প্রণয় এর আগেই ওর গালে দুটো থা’প্পড় বসিয়ে দেয়।

রিফাত এসে প্রণয় কে ধরে শান্ত হতে বলে।কিন্তু বললেই কি শান্ত হওয়া যায়?হঠাৎ প্রণয় এর ফোন বেজে উঠতেই প্রণয় পকেট থেকে ফোন নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ফোন করেছে।মুহূর্ত এর মধ্যে রা’গ টা উধাও হয়ে গেলো। প্রণয় রাফসান মির্জার দিকে আরেক বার শক্ত চাহনি নিয়ে সুজন সজীব কে বলে, “রাফসান মির্জা কে ঘাড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দিতে “।বলেই প্রণয় ফোন নিয়ে কেবিনে চলে যায়।

ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে জান্নাত সালাম দিয়ে বলে,

—আপনি কি ব্যস্ত আছেন?

প্রণয় স্মিত হেসে বলে,

—নাহ।বলুন। কিছু বলবেন?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত চুপ করে থাকে।প্রণয় ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—ভিডিও কলে আসুন জান্নাত। আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।

—জি আচ্ছা।

বলেই জান্নাত ভিডিও কলে কানেক্ট হয়।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত চোখ তুলে প্রণয় এর দিকে তাকাচ্ছে না।প্রণয় জান্নাত কে লজ্জা পেতে দেখে হাসছে।জান্নাত কিছুক্ষণ পরেই বলে উঠে,

—বাসায় কখন আসবেন আজ?

—চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আসার।বলতে পারছি না কখন আসবো।

—ওহ আচ্ছা।

—আচ্ছা এখন রাখলাম। আমার একটু কাজ আছে জান্নাত।

—জি।আসসালামু আলাইকুম।

বলেই জান্নাত ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।গত কাল রাতে এর পর থেকে জান্নাত তার সাথে কথা বলছে না লজ্জায়। সামনে ও আসছে না।প্রণয় অফিস আসার সময় ও জান্নাত সামনে আসেনি।বেলকনি তে দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রণয় রুম থেকেই বলে এসেছে সে অফিসে গেলে জান্নাত যেনো তাকে একবার হলেও ফোন করে।সেই সুবাদে এই এখন ফোন করেছে।নয়তো মনে হয় না ফোন করতো।

🌸🌸

রাত বারো টায় প্রণয় বাসায় আসে।বাসার এক্সট্রা ছাবি দিয়ে মেইন দরজা খুলে বাসায় ঢুকে।ড্রয়িংরুমে এসে দেখে প্রান্তিক টিভি দেখছে।হরর মুভি দেখছে। প্রণয় যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই দিকে তার কোনো নজর নেই।প্রণয় পিছন থেকে গিয়ে প্রান্তিক এর কাঁধে হাত রাখতেই প্রান্তিক চমকে উঠে চি’ৎকার দেয় “ভূ’ত” বলে।প্রণয় প্রান্তিক এর মুখ চেপে ধরে। প্রান্তিক চুপ হয়ে যেতেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে,

—রাত বারো বাজে টা তুই বসে বসে হরর মুভি দেখছিস। আবার তোকে ধরতে না ধরতে ভূ’ত বলে চি’ৎকার দিচ্ছিস কেন?

প্রান্তিক প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তো ভ’য় পাবো না?একে তো হরর মুভি দেখছি।এর মধ্যে তুমি যদি পিছন থেকে এসে গায়ে হাত দাও।ভ’য় পাওয়া টা কি স্বাভাবিক না?

—খেয়েছিস তুই?আব্বু আম্মু ওষুধ খেয়েছে রাতে?

—হুম।জান্নাত ওষুধ দিয়েছে ওদের।

—যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তুই।বেশি রাত জাগিস না।সকালে পরে নামাজ পড়তে উঠতে পারবি না সময় মতো।

—আচ্ছা যাচ্ছি।

বলেই প্রান্তিক টিভি অফ করে চলে যায় রুমে।প্রণয় কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে যায়।

প্রণয় রুমে এসে দেখে জান্নাত বিছানায় ঘুমাচ্ছে। জান্নাত এর পাশেই পার্শিয়া জেনিথ ঘুমাচ্ছে। প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় চেঞ্জ করতে।

চেঞ্জ করে এসে শুতে যেতেই জেনিথ শোয়া থেকে উঠে এসে জান্নাত এর আরেক পাশে শুয়ে পড়ে।প্রণয় তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়। প্রণয় ভ্রুকুটি কুঁচকে বলে,

—আমার বিয়ে করা বউ।আমাকে আমার বউ এর পাশে শুইতে না দিয়ে দুই জনে দুই পাশে কি সুন্দর করে শুয়ে আছে।এটা আমি মানবো না।

বলেই প্রণয় জেনিথ পার্শিয়া দুই জন কে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।প্রান্তিক এর রুমের দরজা এখনো খোলা।দুই জনকে প্রান্তিক এর রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা টা হালকা ভিড়িয়ে দিয়ে প্রণয় ক্রুর হাসে।যেন সে তৃতীয় বিশ্ব যু’দ্ধ জয় করেছে।নিজের রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে দেয়।

বিছানায় এসেই জান্নাত কে টেনে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে শুয়ে পড়ে।জান্নাত ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকায় প্রণয় এর দিকে।তারপর দুই পাশের দিকে নজর দিয়ে দেখে পার্শিয়া জেনিথ কেউ নেই।জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রণয় কে বলে,

—পার্শিয়া,জেনিথ কই?

—বের করে দিয়েছে ওদের রুম থেকে।ওদের কারণে আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি না জান্নাত। দুই জনে দুই পাশে শুয়ে থাকে আপনার।

জান্নাত অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় করে বলে,

—দুটো বোবা প্রাণী নিয়ে ও জেলাস?

—হুম।মেয়েরা যেই রকম কোলবালিশ নিয়ে পর্যন্ত জেলাস হয়। ঠিক সেই রকম আমার ও পার্শিয়া,জেনিথ কে নিয়ে জেলাস হয়। সারাদিন বউ কে কাছে পায় না।রাতের সময় টুকু ও ছাড় দিবো নাকি?এই রাফসান মির্জা আর পার্শিয়া,জেনিথ মনে হয় গোপনে ষ’ড়যন্ত্র করেছে আমার বিরুদ্ধে। নাহলে আমি আপনার কাছে আসলে একদিন রাফসান মির্জা লোক পাঠাবে গণ্ডগোল করার জন্য।নয়তো পার্শিয়া জেনিথ আপনার দুই পাশে থাকে।

এতক্ষণ নিজের মতো কথা বলে প্রণয় চুপ হয়।জান্নাত তাকিয়ে আছে প্রণয় এর মুখের দিকে।হুট করে প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকায়।দুই জনের নজর এক হয়।প্রণয় মৃদু হেসে বলে,

—জান্নাত বিয়ের আগে বলেছিলাম বিয়ের পর ছুটিয়ে প্রেম করবো। কথা টা মনে আছে আপনার?

জান্নাত মিহি স্বরে বলে,

—হু।

—প্রেম করতে পারবেন আমার সাথে?হালাল প্রেম?

জান্নাত লজ্জায় রাঙা মুখ করে বলে,

—জানি না।

প্রণয় জান্নাত কে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,

—না পারলে ও সমস্যা নেই।আমি শিখিয়ে দিবো আপনাকে।হালাল প্রেমের হাতেখড়ি হবে নাহয়।

বলেই জান্নাত এর কপালে অধর ছোঁয়া দেয়।ডান হাতে নিজের মোবাইল টা সাইড টেবিল থেকে নেয়।রিফাত,সজীব,সুজন এবং আরো একজন ব্যক্তি কে একটা ম্যাসেজ করে দেয়।চারজনের কাছেই ম্যাসেজ এক সাথে চলে যায়।এবং ম্যাসেজ টা চার জনে দেখেই রিপ্লে দেয় ” অপেক্ষা করছি ভাই নেক্সট ধামাকার জন্য”।

প্রণয় চারজনের ম্যাসেজ দেখেই ক্রুর হাসে।মোবাইল টা রেখে দিয়ে জান্নাত এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ঘুমিয়ে গেছে।প্রণয় চোখ বন্ধ করবে এমন সময় প্রণয় এর ফোনে আরেকটা ম্যাসেজ আসে।প্রণয় ফোন নিয়ে দেখে প্রান্তিক ম্যাসেজ করেছে।ওপেন করে দেখে প্রান্তিক ম্যাসেজ করেছে,

“বিয়াত্তা ভাইয়া!পার্শিয়া, জেনিথ আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।দুই জনেই আমার গায়ের উপর ঘুমাতে আসছে বার বার।”

প্রণয় হেসে দিয়ে রিপ্লে দেয়,

—অভ্যাস করে নে।বিয়াত্তা ভাইয়া বলার অপরাধে আজ থেকে পার্শিয়া,জেনিথ এর দায়িত্ব তোর।

লেখেই প্রণয় ম্যাসেজ সেন্ড করে ফোন টা রেখে দেয়।জান্নাত কে আরেকটু আবেশে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে যায়।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

আহ্! শান্তি শান্তি ফিলিংস হচ্ছে রাফসান মির্জ কে ঘুষি টা দেওয়ার পর থেকেই।#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩২
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—স্যার ভারত থেকে মিষ্টার বিপ্লব কুমার ফোন করেছে। আপনার সাথে কথা বলতে চাইছে।

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জা ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায় মেহেদি দিকে।রাফসান মির্জার চোখে মুখে ভ’য় এর ছায়া পড়েছে।মেহেদি এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—উনি ফোন করেছে কেন?

—স্যার আমাকে বলে নি।শুধু বলেছে আপনার সাথে কথা বলতে চায়।আপনাকে নাকি কয়েক বার ফোন করেছে।কিন্তু আপনি ফোন ধরেন নি।তাই আমাকে করেছে ফোন।বলেছে আপনি যদি এবার তাকে ফোন না করেন।তাহলে তিনি পুলিশ কে জানাবেন।

“পুলিশ ” কে জানানোর কথা টা শুনেই রাফসান মির্জার শরীরে ঘামের উপস্থিতি দেখা গেলো।মেহেদি রাফসান মির্জার এই অবস্থা দেখে বলে,

—স্যার বিপ্লব কুমার এর সাথে কি আপনার কিছু নিয়ে চুক্তি বদ্ধ ছিলো।

—তোর এত কিছু জেনে কি লাভ।তুই যা এখন।আমি বিপ্লব কুমার এর সাথে কথা বলে নিবো।

—আচ্ছা স্যার।

বলেই মেহেদি রাফসান মির্জার কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।রাফসান মির্জা সেই দিকে তাকিয়ে টেবিল এর উপর থেকে ফোন টা নিয়ে ভ’য়ে ভ’য়ে বিপ্লব কুমার কে ফোন দেয়।দুই বার রিং হতেই অপশ পাশ থেকে ফোন রিসিভ করে বিপ্লব কুমার খেঁকিয়ে বলে উঠে,

—আপনার সমস্যা কি মির্জা সাহেব?আপনি আমার ফোন তুলছেন না কেন?

রাফসান মির্জা আমতা আমতা করে বলে,

—মাফ করবেন। আসলে আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম তো।তাই ফোন ধরতে পারিনি।

—কাজের অজুহাত আমাকে দেখাতে আসবেন না।আপনাকে আমার হাড়ে হাড়ে চেনা আছে।আমার টাকা খেয়ে ড্রা’গ পাঠান নি কেন আপনি?

—কিছু সমস্যার কারণে পাঠাতে পারিনি।সামনের মাসে অবশ্যই পাঠাবো।

—আমি এত কিছু শুনতে চাই না।আপনি আগামীকাল কের মধ্যে ভারত আসবেন। আমার সাথে দেখা করবেন। এবার সামনা সামনি- ই আপনার সাথে আমার কথা হবে যা হওয়ার।

—তা কি করে হয়।আমি..

রাফসান মির্জা কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বিপ্লব কুমার বলে,

—আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না।আগামীকাল যাতে আপনাকে আমি ভারত দেখি।

বলেই বিপ্লব কুমার ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা কি করবে বুঝতে পারছে না।ভারতে বিপ্লব কুমার কে ড্রা’গ সাপ্লাই করবে বলে বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে এডভান্স পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে ছিলো। কিন্তু তার বদলে রাফসান মির্জা এখনো ড্রা’গ দিতে পারে নি বিধায় বিপ্লব কুমার গত দুই দিন থেকে তাকে পর পর ফোন করে যাচ্ছে।কিন্তু রাফসান মির্জা ফোন ধরে নি।পঞ্চাশ হাজার টাকা সে কি ভাবে পরিশোধ করবে ভেবে পায়না।ড্রা’গ এর গুদাম ঘর পু’ড়িয়ে ফেলেছে পুলিশ।তাই ড্রা’গ ও সাপ্লাই করতে পারছে না টাকা ও আসছে না।অন্য দিকে অফিস এর একের পর এক ডিল গুলো কম্পানি রা ক্যান্সেল করে দিচ্ছে।ব্যাংকে যেই পরিমাণ টাকা ছিলো। ভেবে ছিলো মানুষ কে টাকা খাইয়ে ভোট কিনে নিবে।কিন্তু মানুষ তার থেকে টাকা নিয়ে শাহরিয়ার প্রণয় কে ভোট দিয়ে এমপি পদবী তে জিতিয়ে দিয়েছে।কি করবে বুঝতে পারছে না রাফসান মির্জা।মিষ্টার বিপ্লব কুমার ও বলেছে ভারত গিয়ে তার সাথে কথা বলতে।না জানি কি ব্যবস্থা করে রেখেছে?

🌸🌸

—প্রণয় দা,রাফসান মির্জা তো মনে হয় ভারত যাবে।

ফোনের ওই পাশের লোক টার কথা শুন প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রুকুটি কুঁচকে ফেলে।প্রণয় ফোন কলে থাকা ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসু ভাবে সুধায়,

—কেন যাবে ভারত?জানছ কিছু?

—না দাদা।তবে এত টুকু বুঝতে পারছি বিপ্লব কুমার এর সাথে তার কিছু একটা নিয়ে কথা হয়েছে।

—কয় দিনের জন্য যাবে?

—গত কাল যাবে।তবে মনে হয় দুই তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে।আপনার ক্ষতি না করে রাফসান মির্জা কি করে বেশি দিন দেশের বাইরে থাকবে?

—আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে, আমাকে সব আপডেট জানাস।

—আচ্ছা দাদা।বৌদি কেমন আছে দাদা?

—দাদার খবর না নিয়ে বৌদির খবর নিচ্ছিস?

—দাদা এতকাল আপনার খবর নিয়েছি এবার নাহয় কয় দিন বৌদি এর খবর নিই।

—তোর বৌদি ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ।

—আচ্ছা দাদা সাবধানে থাকবেন আপনি।আমি প্রতি মুহূর্তে খবর জানাবো।

—আচ্ছা।

বলেই প্রণয় ফোনটা কেটে দেয়।তারমানে প্ল্যান টা আরো কিছু দিন পিছাতে হবে।অবশ্য এতে তাদের -ই আখেরি লাভ হয়েছে।রাফসান মির্জা ভারত থেকে আসবে।তাদের থেকে এমন একটা সারপ্রাইজ পাবে।আর আনন্দে জ্ঞান হারাবে।ভেবেই প্রণয় ক্রুর হাসে।

🌸🌸

জান্নাত আর প্রান্তিক মুখোমুখি বসে আছে ড্রয়িংরুম এর সোফায়। প্রান্তিক জান্নাত এর দিকে বিরক্ত সূচক দৃষ্টি ফেলে বলে,

—আমার উপর এতটা নির্দয় কি ভাবে হতে পারলি তুই আর ভাইয়া?

প্রান্তিক এর কথা শুনে জান্নাত অবাক হয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,

—কি করেছি আমরা?

—তোরা দুই জনে সারা রাত আরামে ঘুমাস।আর এই দিকে পার্শিয়া, জেনিথ কে আমার রুমে দিয়ে আমার ঘুম হারাম করিস।এটা কি ঠিক?

—অবশ্যই ঠিক।যতকাল তুই সিঙ্গেল থাকবি। তত কাল পার্শিয়া, জেনিথ এর দায়িত্ব তোর উপর থাকবে।

পিছন থেকে ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে কথা টা বলছিলো প্রণয়। এসেই জান্নাত এর পাশে বসে পড়ে।প্রান্তিক বড় ভাই এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তাহলে আমি আগামীকাল -ই বিয়ে করবো।

—একদম না।তুই বিয়ে করলে পার্শিয়া জেনিথ কে রাখবে কে?তাছাড়া তোকে কে ও বা বিয়ে করবে?

—কেন ইশি করবে?

—ইশির তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোকে বিয়ে করবে।আর ওর বাবা মা ও তোর সাথে ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বসে আছে।

—সময় হলে সেটা দেখতে পারবে।

—সে যা ইচ্ছা তুই কর।কিন্তু পার্শিয়া জেনিথ এর দায়িত্ব তোকে এই নিতে হবে।(জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে)জান্নাত রুমে আসুন তো।

বলেই প্রণয় উঠে রুমে চলে যায়।জান্নাত ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে সুর সুর করে প্রণয় এর পিছন পিছন রুমে যায়।প্রান্তিক ওদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কত গুলো কথা বলে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। প্রান্তিক এর পিছন পিছন পার্শিয়া আর জেনিথ ও যাওয়া ধরে।প্রান্তিক দুই জনের দিকে তাকিয়ে বলে,

—একদম আমার পিছন পিছন আসবি না।

প্রান্তিক এর কথা শুনে দুই জনে একবার ডাক দিয়েই দৌড়ে প্রান্তিক এর রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে।প্রান্তিক সেই দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ায়।

🌸🌸

অন্ধকার রাত।বর্ষার ঋতু এখন।তাই বাসার আশ পাশ ওর ছোট খাটো ডোবা, জঙ্গল থেকে ব্যাঙ এর ডাক শুনা যাচ্ছে।সাথে ঝি ঝি পোকারা ও যেন তাদের আওয়াজ সবার কানে পোঁছানো এর প্রতি যোগিতা করছে।আকাশে কালো চাদরে চাঁদ ও নেই তারাকা রাজিরা ও নেই।নিকষ কালো চাদর দিয়ে যেন আবৃত আকাশ টা।হিম শীতল বায়ু ও প্রবাহমান।শরীর শীতল করে দেয়।

বেলকনি তে বসে কিছু নিয়ে চিন্তা করছে প্রণয়। জান্নাত এসে পিছন থেকে প্রণয় এর কাঁধে হাত রাখে।প্রণয় এই হাতের ছোঁয়া বুঝতে পারে।ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টেনে নিজের কাঁধ এর উপর রাখা হাতের মালিক এর হাত টা ধরে সামনে এনে হেসে বলে,

—আমার সামনে চেয়ারে বসুন।

জান্নাত বসে প্রণয় এর সামনে একটা চেয়ারে। তার হাত দুটো এখনো প্রণয় এর হাত এর মাঝে অবস্থানরত। জান্নাত এর গায়ে জড়ানো পার্পল কালারের শাড়ি।কাধঁ পর্যন্ত কোঁকড়া চুল খোঁপা করা।প্রণয় মোহনীয় দৃষ্টিতে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত প্রণয় কে কিছু বলবে এর আগেই প্রণয় জান্নাত এর হাত দুটো নিজের সামনে উঁচু করে তুলে ধরে হাতের পিঠে নিজের অধর ছোঁয়া দেয়।হিম শীতল বাতাস এর সাথে প্রণয় এর অধর ছোঁয়া যেন জান্নাত এর শরীর শিরদাঁড়া হলো।বয়ে গেলো যেন ভালোবাসার স্রোত শরীর এর প্রতিটা শিরা উপশিরা দিয়ে।লজ্জা পেয়ে জান্নাত এর মুখ র’ক্তিম আভায় পরিণত হয়েছে।জান্নাত লজ্জায় মুখ ডাকবার ঝো নেই।আড় চোখে একবার প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে এক পলকে।জান্নাত মিহি স্বরে বলে,

—এভাবে কেন দেখছেন?

—ভালো লাগছে।তাই।

জান্নাত আবার মৃদু কণ্ঠে বলে,

—সব সময় – ই তো দেখেন।

—‘‘আপনাকে দেখতে আমার মাঝে ক্লান্তি আসে না জান্নাত। ইচ্ছে করে আপনাকে সব সময় সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকি আপনাতে।আপনাতেই আমার চক্ষু শীতল হয় জান্নাত ’’।

প্রণয় এর কিছু একটা মনে পড়তেই জান্নাত কে বলে,

—জান্নাত আমার একটা ভাবনার সমাপ্তি করতে হেল্প করবেন?

জান্নাত এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,

—জি বলুন।

প্রণয় জান্নাত এর হাত ধরে জান্নাত কে রুমে নিয়ে আসে।বেলকনি এবং রুমের দরজা আটকে দিয়ে কার্বাড এর পিছন থেকে একটা বোর্ড। সাদা রং এর একটা বোর্ড বের করে আনে।এই টা তো হোয়াইট বোর্ড।জান্নাত ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বোর্ড টা বের করে এনে যখন প্রণয় জান্নাত এর দিকে ফেরায়।বিস্ময়ে জান্নাত চোখ বড় বড় করে প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় স্মিত হেসে জান্নাত এর হাতে কালো মার্কার পেন তুলে দিয়ে বলে,

—“এবার এগুলো সল্ভ করুন। পুরোটা ঘিরে যেন উত্তর একটা – ই হয়।

জান্নাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে বুঝে বিষয় টা নিজের আয়ত্তে আংশিক ভাবে এনেই প্রণয় কে প্রতিটা পয়েন্ট এক করে দেয়।প্রণয় সব কিছু বুঝতে পেরে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন?।আজকে গল্প দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না।তবুও লেখে ফেললাম।তাই আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here