প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -২৭+২৮+২৯

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:২৭
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

অন্ধকার রাত।চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ধরণীতে অন্ধকাররূপ ধারণ করেছে।কিন্তু প্রণয় দের বাগান বাড়িতে কৃত্রিম আলোর দ্বারা আলোকিত হয়ে আছে।ফেইরি লাইটের আলো পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে আছে।সেই জন্য এই দিক টাই অন্ধকার নেই।

আকাশে আতসবাজি তে লেখা “SURPRISE” আলোকিত হয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।দুই পরিবার এর সবার মুখশ্রী থেকে ভ’য় এর রেশ কাটিয়ে উপসে পড়া আনন্দ এর রেশ দেখা দিয়েছে।এক মুহূর্ত এর জন্য সবাই ভেবেছে এটা টাইম বো’ম। আর বো’ম ব্লাস্ট হয়ে সবাই আজ এখানেই শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়েছে বো’মা নামক আতসবাজি টি।এখন সবাই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে।সবাই ভেবে নিয়েছে এটা প্রণয় এর কাজ।প্রণয় জান্নাত কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমন করেছে।

আসলে বেঞ্চি তে রাখা বক্স টার ভিতরে বো’ম ছিলো না।ছিলো কাউন্টডাউন আতসবাজি। যা টাইম শেষ হওয়ার সাথেই উপরে উঠে যায় জ্বলজ্বল করতে করতে।উপরে উঠেই ভেসে উঠে “SURPRISE ” লেখা টা।এটা দেখে সবার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে জান্নাত। সে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় যে তাকে এরকম ভাবে একটা সারপ্রাইজ দিবে সে ভেবে পায়নি।

—মি. ভালোবাসা আপনি তো পুরো ভ’য় পাইয়ে দিয়েছিলেন।আমি আশা করিনি এমন একটা সারপ্রাইজ ও যে পাবো।

উৎফুল্ল চিত্তে জান্নাত কথা গুলো বলে উঠে প্রণয়ের হাত ধরে।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলে,

—আমি নিজেও সারপ্রাইজড।

—মানে?

ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে জান্নাত। প্রণয় হাসি দিয়ে বলে,

—মানে ভাবি নি সারপ্রাইজ টা যে এতটা সুন্দর হবে।আর আপনি ও যে এতটা সারপ্রাইজড হবেন ভাবেনি। যাক এমনি হোক আর ওমনে হোক।সাকসেস তো হলো।

জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে আছে।তার বুঝে আসছে না প্রণয় চার দিক মিলিয়ে কি বলছে বা কি বুঝাতে চাইছে।তাই আর কিছু বলেনা জান্নাত। প্রণয় প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—প্রান্তিক, সবাই কে নিয়ে বাসার ভিতরে যা।আমি আসছি।

—কই যাচ্ছো ভাইয়া?

প্রান্তিক এর কথার প্রত্যুত্তরে বলে,

—কোথাও যাবো না।এখানেই আছি।কিছু কথা সেরে আসছি গার্ড দের সাথে।

—আচ্ছা ভাইয়া।

বলেই প্রান্তিক সবাইকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়।প্রণয় আকাশের দিকে তাকায়।কিচ্ছুক্ষণ ভাবে।ভেবেই হেসে পেলে।পকেট থেকে ফোনটা বের করে।কল লিস্ট এর সর্ব প্রথম নাম্বার টাতে ডায়াল করে।প্রথম রিং হতেই অপর পাশ থেকে কল টা কে’টে দেয়।যার ফলপ্রসূ তে প্রণয় এর এখানে একজন মহিলা সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠে,”অপর পাশের ব্যক্তি টি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে”। আসলেই কি ব্যস্ত আছে?নাকি ব্যস্ত তা দেখাচ্ছে।

সময় সএক মিনিট গড়ানোর আগে -ই প্রণয় এর ফোন বেজে উঠে।স্কিনে তাকিয়ে নাম্বার টা দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠে প্রণয় এর প্রণয় ফোন টা রিসিভ করে কৃতজ্ঞতা নিয়ে বলে,

—ধন্যবাদ দিয়ে তোকে ছোট করবো না।আজ যদি তুই বো’ম টা চেঞ্জ করে না দিতি তাহলে হয়তো আমি সহ আমার দুই পরিবার -ই এতক্ষণে লা’শ হয়ে থাকতো।

ওই পাশের ব্যক্তি টি কি বললো বুঝা যায়নি।কিন্তু প্রণয় তার সাথে হেসে হেসে কিছুক্ষণ কথা বলে।কথা শেষ হতেই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে ক্রুর হাসি দেয়।বাসার ভিতরে চলে আসে।বাসার ভিতরে সবাই বসে কথা বলছে।একটা পাশে জান্নাত জেনিথ আর পার্শিয়া কে নিয়ে বসে কথা বলছে আর রাজ্যের কথা বলছে।যেন প্রাণী দুটো তার সব কথা বুঝে।

প্রণয় হেসে জান্নাত এর পাশে গিয়ে বসে।জান্নাত প্রণয় কে নিজের পাশে দেখে কিছুটা মিইয়ে যায় লজ্জায়। গতকাল যেই পুরুষ টা ছিলো পাশের বাড়ির ছেলে নামে পরিচিত। আর আজ সেই পুরুষ টি তার হবু স্বামী বলে লিখিত।

—জান্নাত আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন?

জান্নাত প্রণয় এর এমন কথা শুনে আরো লজ্জা পেলো। প্রণয় প্রসঙ্গ পালটিয়ে বলে,

—সারপ্রাইজ পছন্দ হয়েছে?

জান্নাত এবার মাথা তুলে প্রণয় এর দিকে তাকায়।খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,

—খুব খুব পছন্দ হয়েছে।আতশবাজি সারপ্রাইজ টা তো আমি জাস্ট ফ্রিজড হয়ে গেছি।ভাবিনি এমন কিছু হবে।

—যাক আলহামদুলিল্লাহ। আপনার পছন্দ হয়েছে এতেই খুশি আমি।

—আমাকে না জানিয়ে এত প্ল্যান করলেন?

—আপনাকে জানালে তো আর সারপ্রাইজ হবে না।আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।

—আরো সারপ্রাইজ?

—হুম।আচ্ছা একটা কথা বলুন তো জান্নাত।

—জি বলুন।

—সেইদিন রাতে যে বললেন একজনকে আপনার ভালোলাগে! সেটা কি আসলে আমি নাকি অন্য কেউ?

জান্নাত মাথা টা নিচু করে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

—আপনি।

প্রণয় মুখ টা কে কিছুটা ফ্যাকাসে করে নিচু কণ্ঠে বলে,

—তারমানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?আমাকে আপনার এমনি ভালো লাগে?

—না মানে তেমন টা নয়।আসলে..

জান্নাত কে আর বলতে না দিয়ে প্রণয় হাসি দিয়ে বলে,

—সমস্যা নেই।বিয়ে তো হয়ে গেছে বা যাবে।এরপর ভালোবাসলে -ই হবে।তখন কিন্তু ভালোলাগা নট এলাও।অনলি ভালোবাসি শব্দটা থাকবে।

জান্নাত কিছু বলতে যাবে।তার আগেই রিফাত এসে প্রণয় কে ডাক দেয়।প্রণয় জান্নাত এর পাশ থেকে উঠে যায়।বাড়ির সবাই অন্যদিকে আছে।জান্নাত সেই সোফায় বসে আছে।

🌸🌸

রাফসান মির্জা নিজের কেবিনে বসে এখনো হেসে চলছে।আজ তার আনন্দের দিন।হাসতে হাসতে -ই বলে উঠে,

—শাহরিয়ার প্রণয় তুই তো শেষ।এবার কে রে চালাবে রাজত্ব? গরীব দের পাশে দাঁড়াবি না?খুব শখ গরীব দের পাশে দাঁড়ানো? বস্তি তে খাবার দেওয়া? তুই তো শেষ।এবার সব গুলো বস্তির ঘর ভে’ঙে আমি দালান উঠাবো।মার্কেট করবো। এসব গরীব দুস্থ নামক কীট সব গুলো কে পায়ের তলায় পিষে মা’রবো।পারবি তুই কিছু করতে?পারবি না। বেচেঁ থাকলেই তো পারবি।এবার হবে আমার রাজত্ব। শাহরিয়ার প্রণয় তু….

রাফসান মির্জা কথা অসমাপ্ত হয় ফোনের রিংটোন এর আওয়াজ এ।টেবিল এর উপর থেকে মোবাইল নিয়ে মোবাইল স্কিনের নাম্বার টা দেখেই বিস্ময়ে আতকে উঠে।এটা কি করে সম্ভব? মোবাইলে ‘এসপি ‘ নামটা জ্বল জ্বল করছে।রাফসান মির্জা ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে প্রণয় বলে,

—আসসালামু আলাইকুম মির্জা সাহেব। আমার ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যান নি তো?

রাফসান মির্জা নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,

—তুই কি করে বেচেঁ আছিস? তোর তো এতক্ষণে পো-ড়া লা’শ হয়ে পড়ে থাকার কথা।

—সবই আল্লাহর ইচ্ছা বুঝলেন? তাই তো এখনো বেচেঁ আছি।যাই হোক একটা কথা বলার ছিলো।

রাফসান মির্জা কিছুই বলছে না।চুপ করে শুনে যাচ্ছে রাগ যেন তরতর করে সারা শরীরে বয়ে যাচ্ছে।প্রণয় হাসি দেয়।যেই হাসি তা রাফসান মির্জা ও শুনতে পাচ্ছে।প্রণয় হেসে বলে,

—আপনার সারপ্রাইজ টা কিন্তু দারুণ ছিলো। আমার হবু বউ এর পছন্দ হয়েছে।আপনি যে আমাকে এত ভালোবাসেন আমি জানতাম -ই না।কি সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলেন। আমরা সবাই পুরো সারপ্রাইজড হয়ে গেছি সিরিয়াসলি।

—কু***বাচ্চা। তোকে তো আমি কু’পিয়ে মা’রবো। তুই বাচলি কি ভাবে? তোরা পরিবারে। তোর বউ সব গুলো কে আমি মা’রবো। তুই দেখে নিস।

—রাফসান মির্জা।আমি আপনার লেভেল এর খারাপ নই।খারাপ আচরণ করলাম না।আবার আমি এত টা ও ভালো না যে প্রতিবার আপনাকে ছাড় দিবো। আপনার শত্রু তা আমার সাথে।যা বলার করার আমার সাথে করবেন। কিন্তু এর মাঝে যদি আমার স্ত্রী বা পরিবার কে টানেন। তাহলে আপনি সেই দিন আমার শান্ত শিষ্ট মুখোশ এর আড়াল এর আরেক টা মুখ দেখবেন। সেই দিন বিশ্বাস করতে পারবেন না শাহরিয়ার প্রণয় কিনা আমি।

—এত দরদ? সবার জয?ঠিক আছে দেখ কি হয় তোদের সবার।

বলেই রাফসান মির্জা ফোন কেটে দেয়।হাতের ফোন টাকে এক আছাড় মা’রে ফ্লোরে। তাতেই ফোন ভে’ঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।

🌸🌸

মাথায় শাড়ির আচঁল দিয়ে ঘোমটা টেনে বসে আছে জান্নাত। তার পাশেই প্রণয় বসে আছে।আর তাদের দুই জনের সামনে বসে আছে দুই জন লোক।একজন পাঞ্জাবি গায়ে দেওয়া মাথায় টুপি। আরেকজন ফর্মাল ড্রেসে বসে আছে।দুই জনেই প্রণয় আর জান্নাত এর বিয়ে পড়ানোর জন্য এসেছে।ফর্মাল ড্রেসের লোকটা উকিল।আর পাঞ্জাবী পরা লোকটা কাজী।

মুখোচ্চরিত তিনবার কবুল এবং একটা কাগজ এর মধ্যে সিগনেচার করেই প্রণয় জান্নাত দুই জনেই সম্পূর্ণ হালাল ভাবে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।চারটা হাত একসাথে হয়েছে।দুই জীবন এর প্রাণ এক হলো।কল্পনায় ঘেরা মানুষ টা কে ফেলো।

জান্নাত বেলকনি তে দাঁড়িয়ে অন্ধকার রাত দেখছে।তার কাছে এখনো যেন মনে হচ্ছে সব কিছু তার ভ্রম। কিছুক্ষণ পরেই কে’টে যাবে।
আচ্ছা নিজের অতি প্রিয় স্বপ্ন গুলো সত্যি হলে কি এমন হয়?হয়তো এমন হয়।

আজকের আকাশে চাঁদ টা নেই।শুধু তারা দের বিরাজ রয়েছে। প্রণয় দের বাগান বাড়ির প্রণয় এর রুমের বেলকনি তেই দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে সে।নিচে সবাই খাবার আয়োজন করছেন।

পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই জান্নাত তাকিয়ে দেখে প্রণয় তার দিকে নির্নিমেষ ভাবে তাকিয়ে আছে।জান্নাত কিছু বললো না।আবার আকাশ দেখাই মনযোগ দিলো। প্রণয় গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,

—আপনার কি মন খারাপ জান্নাত?

জান্নাত তাকায় প্রণয় এর দিকে।স্মিত হেসে বলে,

—মন খারাপ না।এখনো বুঝতে পারছি না এত সব কিছু স্বপ্ন ছিলো নাকি সত্যি?

প্রণয় জান্নাত এর একটা হাত টেনে নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে বলে,

—হালাল ভাবে ছুঁয়ে দিলাম। আপনি স্বপ্ন দেখেন নি।সব কিছুই সত্যি ঘটেছে।

—এরকম একের পর এক যে সারপ্রাইজ দিবেন। আমার ভাবনার বাইরে ছিলো।

—একটা জিনিস চাইবো দিবেন জান্নাত?

—জি বলুন।

—‘‘আপনার অধর যুগোল এর উষ্ণতা পাওয়ার জন্য আমার কপাল টা ঠান্ডা হয়ে আছে।একটু উষ্ণতা দিবেন?’’

প্রণয় এর এমন আবদারে জান্নাত তাকায়ি আছে তার দিকে।কিয়তক্ষণ পরেই ঠোঁটের কোলে হাসি ফুটে উঠে।প্রণয় সেই হাসির কারণ বুঝে হাটু গুঁজে বসে জান্নাত এর সামনে। জান্নাত প্রণয় এর মুখটা কে দুই হাতের আজালায় নিয়ে প্রণয়ের কপালে ওষ্ঠদ্বয় এর উষ্ণতা দেয়।ভালোবাসার স্পর্শ দেয়।হালাল স্পর্শ। জান্নাত এর ওষ্ঠদ্বয় এর স্পর্শ নিজের ললাটে পেয়ে প্রণয় ও স্মিত হাসে।দুই হাতে জান্নাত এর কোমর জড়িয়ে ধরে। জান্নাত হকচকিয়ে তাকায় প্রণয় এর দিকে।প্রণয় অমায়িক হাসি দিয়ে জান্নাতের চোখে চোখ রেখে বলে,

—‘‘আজ থেকে আপনি আমার জানুপরী’’।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-২৮
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—প্রণয় দা,আজকে দুপুর দুইটাই রাফসান মির্জার মা’ল পরিবহণকারী ট্রাকে ড্রা’গ যাবে সিলেট বর্ডার ক্রস করে ভারতে।

ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির কথা শুনে প্রণয় ফিচেল হাসে।ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি কে বলে,

—ঠিক আছে।আমি দেখছি কি করা যায়।সাবধানে থাকিচ তুই।

—ঠিক আছে প্রণয় দা।

লোকটা ফোন কাটতে গিয়ে আবার বলে উঠে,

—প্রণয় দা!

—হ্যাঁ বল।

—বৌদি ভালো আছে?

—হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে।

—আচ্ছা দাদা।

বলেই লোকটা ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় সজীব কে ফোন করে।প্রথম রিং হতেই সজীব ফোন তুলে বলে,

—আসসালামু আলাইকুম ভাই।

—ওয়ালায়কুম সালাম।সজীব শুন।

—বলেন প্রণয় ভাই।

—এখনি পুলিশ কে ইনফর্ম করে বলে সিলেট বর্ডারে চেক পোস্ট বসাতে। আজকে দুপুর দুই টাই রাফসান মির্জার মালবাহী ট্রাক ড্রা’গ নিয়ে যাবে বর্ডার ক্রস করে।

—আচ্ছা ভাই।আমি এখনি সব করতাছি।

বলেই সজীব ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় ল্যাপটপ এর কি- বোর্ডে কিছু একটা দ্রুত হাতে টাইপিং করে। লেখা শেষ হতেই ক্রুর হেসে বলে,

—মির্জা সাহেব! আপনার জন্য একটা বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার পক্ষ থেকে।

বলেই প্রণয় ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।মাথায় চলছে নানান হিসেব।সব কিছুর পিছনে একটা-ই যোগ সূত্র।যা প্রণয় ধরতে পারলে ও আংশিক ভাবে মিলাতে পারছে না একটা জায়গায়।

🌸🌸

দুপুর দুই টার নিউজ দেখার জন্য টিভি এর সামনে বসে আছে রাফসান মির্জা। আজ সে বরাবর এর চাইতে একটু বেশিই খুশি।তার ড্রা’গ গুলো বর্ডার ক্রস করে ভারত গেলেই তার হাতে চলে আসবে এক কোটি টাকা।যেখানে যাবে ড্রা’গ। সেখানের মালিক এর সাথে আগেই ডিল করে ছিলো ড্রা’গ নিতে হলে এক কোটি টাকা দিতে হবে।লোক গুলো ও রাজি হয়েছিলে রাফসান মির্জার কথায়।মূলত তারা বিভিন্ন স্কুলে কলেজে রাফসান মির্জার দেওয়া ড্রা’গ গুলো সাপ্লাই করবে এর আগেও করেছে স্কুল কলেজে সাপ্লাই। এতেই স্টুডেন্ট রা ড্রা’গ আসক্ত হয়ে এখন বেশি বেশি ড্রা’গ চাচ্ছে।স্টুডেন্ট দের হাতে যত বেশি ড্রা’গ তুলে দিতে পারবে আর স্টুডেন্ট রা ড্রা’গ আসক্ত হবে এতে তাদের লাভ তত বেশি গুণ বেড়ে যাবে। সেই জন্য বেশি টাকা হলেও প্রয়োজন বিধায় রাফসান মির্জার থেকে ড্রা’গ নিচ্ছে।

রাফসান মির্জা মেহেদি আর প্রদীপ কে ডাক দেয়।দুই জনেই রাফসান মির্জার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাফসান মির্জা মেহেদি এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ড্রা’গ এর ট্রাক রওনা হয়েছে?

মেহেদি বিনয়ী হেসে বলে,

—জি স্যার। এতক্ষণ হয়তো বর্ডার ক্রস করে ফেলেছে।

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জা হাসে।মনে মনে হাজার ভাবনা কষে।এক কোটি টাকা দিয়ে কি কি করবে সে।হঠাৎ টিভিতে সংবাদ পাঠিকার কথায় ধ্যান ভে’ঙে সেই দিকে তাকিতেই যেন তার মাথায় আকাশ ভে’ঙে পড়লো। টিভি তে লাইভ নিউজ দেখাচ্ছে সিলেট বর্ডার এ পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়েছে। বর্ডার ক্রস করা সব ট্রাক চেক করছে।

সিলেট বর্ডার এ পুলিশ একটা ট্রাক চেক করে দেখে ট্রাকে ড্রা’গ এর ছোট ছোট প্যাকেট। পুলিশ ট্রাক ড্রাইভার কে গাড়ি থেকে বের করে আনে।শার্টের কলার্ট ধরে বলে,

—এই ট্রাক এর ড্রা’গ গুলো কার?কোথায় যাচ্ছে?

ট্রাক ড্রাইভার ভ’য় পেয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে,

—এগুলো ভারত যাচ্ছে।

—ড্রা’গ গুলো কার?

—আহসান মির্জার।

—আহসান মির্জা কে?কোথায় থাকে?

ট্রাক ড্রাইভার বলে,

—আমি জানি না।আমি তাকে দেখিনি। শুধু আমাকে একটা নাম্বার থেকে ফোন করে বলে ছিলো **** এই জায়গায় তাদের একটা ডেরা আছে।সেখান থেকে ড্রা’গ ট্রাকে নিয়ে ভারত যেতে।সাথে কালো পোশাক পরা কয়েক জন লোক ও ছিলো আমার সাথে।ওই নাম্বার থেকে আর ফোন আসেনি।

ড্রাইভার এর কথা শুনে পুলিশ বলে,

—চল ডেরা টা দেখাবি।

বলেই পুলিশ ড্রাইভার কে টানতে টানতে নিজেদের সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠে,এবং অন্য কয়েক জন্য পুলিশ কে বলে,

—ট্রাক টা থানায় নিয়ে যাও।

রাফসান মির্জা টিভিতে শুধু দেখে ছে তার ড্রা’গ এর ট্রাক ধরা পড়েছে।পুলিশ যে লোক টা কে এত কিছু জিজ্ঞেস করেছে সেগুলো তিনি দেখতে পায়নি।তিনি মেহেদি আর প্রদীপ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আজকে যে বর্ডার এ চেক পোস্ট বসবে।তোরা আমাকে জানাস নি কেন?

—স্যার আমরা তো পুরো খবর নিয়েছি। আজকে চেক পোস্ট বসার কোনো কথা ছিলো না।তাহলে হঠাৎ করে কিভাবে?

প্রদীপ কথায় রাফসান মির্জা কিছুটা ভাবতে বসে।তার এখন মাথা খারাব হয়ে গেছে। এক কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিলো। আর এখন এক লাখ ও পাবে না।তার মধ্যে ড্রাইভার টা যদি তার নাম বলে দেয়।তাহলে তো সব শেষ।কিছু একটা ভেবে পেতেই রাফসান মির্জা বলে,

—আচ্ছা এই বর্ডার এ চেক পোস্ট বসানো এর পিছনে কোনো মতে শাহরিয়ার প্রণয় এর হাত নেই তো?

মেহেদি কথার প্রত্যুত্তর এ বলে,

—থাকতে ও পারে স্যার। বলা যায় না।শাহরিয়ার প্রণয় আপনার থেকেও বুদ্ধিমান। কখন কি করে বুঝায় যায় না।

মেহেদির কথা তে রাফসান মির্জা তেঁতে উঠে বলে,

—তুই কি বলতে চাইছিস আমার বুদ্ধি নেই?
আমার মগজ ফাঁকা?

মেহেদি কিছু বলতে যাবে এমন সময় প্রদীপ টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,

—স্যার আপনার ড্রা’গ এর ডেরা তে আ’গুন লাগাই দিছে কে?নাকি দাবানল লাগছে?

রাফসান মির্জা টিভির দিকে তাকিয়ে এসব দেখে হায় হুতাশ করতে থাকে।তার বুঝে এসে গেছে এই সব কিছুর পিছনে প্রণয় এর হাত আছে।তাই চি’ৎকার করে বলে উঠে,

—শাহরিয়ার প্রণয় তুই কাজটা ভালো করলি না।আমার সব শেষ করে দিলি তুই।তোর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।সাপের লেজে যখন পাড়া দিলি তাহলে সাপের দংশ’নে বি’ষ শরীরে ঢুকার জন্য ও প্রস্তুত থাক।

🌸🌸

রাত এগারো টা বাজে।প্রণয় এখনো বাসায় আসেনি। জান্নাত প্রণয় এর রুমের বেলকনি তে থাকা চেয়ার বসে আছে।তার সামনেই টেবিল এর উপরে পার্শিয়া আর জেনিথ বসে আছে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে। ঘুম জান্নাত এর চোখের পাতায় এসে বসে আছে।কিন্তু এখনো প্রণয় আসেনি বিধায় সে না ঘুমিয়ে বসে আছে।

রাত এগারো টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে প্রণয় বাসায় আসে।নিজের রুমে এসে দেখে লাইট জ্বালানো। কিন্তু জান্নাত নেই রুমে। পার্শিয়া আর জেনিথ ও নেই।প্রণয় ভেবে নিয়েছে জান্নাত তাদের বাসায় গিয়েছে।তাই আর কোথাও না খুঁজে কার্বাড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।চেঞ্জ করে বের হয়ে বেলকনির লাইট জ্বালানো দেখে।কি মনে করে যেন বেলকনি তে যায়।গিয়ে দেখে জান্নাত টেবিল এর উপর মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশে পার্শিয়া আর জেনিথ ও ঘুমাচ্ছে টেবিল এর উপর শুয়ে।জান্নাত এর কাধঁ পর্যন্ত ছড়ানো কোঁকড়া চুল গুলো মুখ এর উপর এসে মুখ ঢেকে দিয়েছে।প্রণয় জান্নাত এর চুল গুলো দেখে কিছু টা ভ্রু কুঁচকায়। আনমনে ভেবে উঠে,”মেয়ে টার চুল গুলো এত ছোট কেন?কোমর পর্যন্ত বিছানো কোঁকড়া চুল হলে সৌন্দর্য আরো বেশি বেড়ে যেত মেয়ে টার।অবশ্য এত টুকু তে ও বেশ লাগছে। মাশাল্লা “।

আনমনে কথা গুলো ভেবেই প্রণয় হেসে দিয়ে ঘুমান্ত জান্নাত এর পাশে গিয়ে জান্নাত এর কাঁধে হাত রেখে বলে,

—জান্নাত, জান্নাত। চলুন ঘরে গিয়ে ঘুমাবেন। এখানে এভাবে কেন বসে ঘুমাচ্ছেন?ঘাড় ব্য’থা হয়ে যাবে।

প্রণয় এর কথার কোনো প্রত্যুত্তর আসে না।জান্নাত গভীর ঘুমে মগ্ন।প্রণয় ভেবে পাচ্ছে না কি করবে?কিছু একটা ভেবে জান্নাত এর মাথা টাকে টেবিল এর উপর থেকে আলগোছে তুলে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে জান্নাত কে কোলে নিবে এমন সময় জান্নাত চোখ খুলে তাকায়।দুই জনের দৃষ্টি এক হয়ে যায়।কিয়তক্ষণ তাকিয়ে থাকে দুই জন দুই জনের দিকে।এই মুহূর্ত টা বাংলা সিনেমায় দেখালে নিশ্চিন্ত “লা,লা,লা,লা,” বাদ্যধ্বনি বাজতো।আর জলসা সিরিয়াল হলে সাত আট মিনিট এই ভাবে তাকিয়ে থেকে একটা হিন্দি গান চলতো।

—মি. ভালোবাসা আপনি কখন আসলেন? আমাকে ডাকেন নি কেন?

প্রণয় পাশের একটা চেয়ার বসে বলে,

— আধ ঘন্টা হয়ে এসেছে আমি যে বাসায় আসছি।আর আপনাকে ডেকেছি ও।কিন্তু আপনি ঘুমাচ্ছিলেন পরিবার নিয়ে।

—পরিবার নিয়ে?

বলেই ভ্রুকুটি কুঁচকে ফেলে জান্নাত। প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,

—এই যে পার্শিয়া আর জেনিথ ও আপনার সাথে ঘুমাচ্ছিলো।তো ওরা তো পরিবার এর সদস্য। তাই বলেছি।

—ওহ আচ্ছা।খাবেন না?

—না খেয়ে এসেছি। আপনি খেয়েছেন?

—হ্যাঁ। একটা কথা বলার ছিলো।

—জ্বি বলুন। একটা কেন বলবেন? যত ইচ্ছে তত টা বলুন।

—নাহ একটাই বলি এখন।

—আচ্ছা বলুন।

বলেই স্মিত হাসে প্রণয়। জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপনি তো আমার বড়।আপনি কেন আমাকে “আপনি “সম্বোধন করছেন?তুমি করেই বলতে পারেন।

জান্নাত এর কথায় প্রণয় হেসে দেয়।হেসে জান্নাত কে বলে,

—আমি কেন”আপনি” সম্বোধন করছি জানেন?

—কেন?

—‘‘কিছু ভালোবাসা “আপনি ” সম্বোধন এই সুন্দর মানায়। যেমন আমার আর আপনার ভালোবাসা’’।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-২৯
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

প্রণয় রেডি হচ্ছে অফিস যাওয়ার জন্য।জান্নাত ও ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।প্রণয় -ই তাকে বলেছে আবার ভার্সিটি যাওয়া শুরু করতে।তাই আজ থেকে ভার্সিটি যাবে। দুই জনে এক সময় বের হলেও আলাদা আলাদা ভাবে যাবে।বাইরের কেউ এখনো জানে না জান্নাত প্রণয় এর স্ত্রী।তাই প্রণয় ও জানাতে চায় না।যদি তার রাজনীতি এর ফলে জান্নাত এর উপর কোনো বিপদ এর আচঁ আসে?তাই প্রণয় শুধু দুই পরিবার আর ইশি, রিফাত,সজীব, সুজন এর বাইরে বাকি সবার কাছে বিষয় টা গোপন করে রেখেছে।

জান্নাত বোরকা পরে হিজাব আর নিকাব হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রেডি হতে পাচ্ছে না।রেডি হতে পাচ্ছে না বললে ভুল হবে।মূলত প্রণয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত জায়গা পাচ্ছে না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে।প্রণয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবী উলটা পিঠ থেকে ঠিক করছে জান্নাত এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।মানে কি এসব এর?পাঞ্জাবী ঠিক করতে ও কি আয়নার সামনে দাঁড়ানো লাগে।

প্রণয় ইচ্ছে করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার খুব ইচ্ছে করছে তাকে এমন করতে দেখে জান্নাত কি ভাব মূর্তি ধারণ করে।আয়নার মধ্যে দিয়ে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে প্রণয় মিটিমিটি হাসে।যা জান্নাত এর চোখ এড়িয়ে যায় নি।জান্নাত এবার স্বগতোক্তি তুলে বলে,

—আপনি রেডি হতে এত সময় কেন লাগছে?

প্রণয় স্মিত হেসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

—আমি জানি না তো।আপনি জানেন কি কেন এত দেরি হচ্ছে আমার?

—জানবো কেন? অবশ্যই জানি।আমাকে রেডি হতে দিবেন না আপনি এটাই আপনার দেরি করার কারণ। ছেলে মানুষ এর রেডি হতে এত সময় লাগতে পারে সেটা আমার কল্পনার বাইরে।

জান্নাত এর কথা শুনে প্রণয় উৎফুল্ল চিত্তে বলে উঠে,

—তাহলে আমকে ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন আপনার।আমাকে ধন্যবাদ দিন জান্নাত।

জান্নাত অবাক নেত্রে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ধন্যবাদ কেন দিবো?

—এই যে ছেলে মানুষ রেডি অধিক সময় লাগে।সেটা আমি আপনার কল্পনার ভিতরে নিয়ে আসলাম।এবার ধন্যবাদ দেন।

জান্নাত কি বলবে বুঝে না পেয়ে চুপ করে আছে।প্রণয় জান্নাত এর চুপ করে থাকা তা নিতে পারে না।তাই নিজের মুখ টা কে কিছু টা চুপসে নিয়ে বলে,

—জানেন জান্নাত আমি একটা ভুল করেছি।

জান্নাত ভ্রু কুঁচকে প্রণয় এর মুখের দিকে তাকায়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বলে,

—কি ভুল করেছেন?

—প্রথম ভুল রাজনীতি তে জড়িয়েছি, দ্বিতীয় ভুল বাবার অফিস এর দায়িত্ব নিয়েছি। আর এসব দায়িত্ব নেওয়ার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বউ এর সাথে একটু সময় কাটাতে পারি না।এই দুঃখের কথা শুধু আপনাকেই বললাম বুঝলেন।কাউকে তো আর এসব বলা যায় না।নতুন বিয়ে করেছি দরকার ছিলো অনন্ত এক সপ্তাহ সব কাজ থেকে আমাকে ছুটি দেওয়ার। কিন্তু সব গুলো যেন আমার আস্ত শত্রু।একটা বুঝলো না নতুন বউ রেখে কাজে যেতে আমার মন সায় দেয় না।এসব কেন বুঝে না ওরা একটু বলবেন আমাকে জান্নাত?

জান্নাত প্রণয় এর এমন অভিযোগ শুনে হাসবে না কাঁদবে সেটাই হয়তো ভুলে গেছে।কি লাগামছাড়া কথা এটা আবার অভিযোগ বাক্য। প্রণয় পাঞ্জাবী পরে জান্নাত কে ডাক দেয় তার কাছে আসতে।জান্নাত তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে -ই জান্নাত এর দিকে মুখ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বলে,

—পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো লাগিয়ে দিন।

জান্নাত বিপরীতে কিছু না বলে হেসে বোতাম লাগিয়ে দিয়ে সরে আসতে গেলেই প্রণয় জান্নাত এর কোমর জড়িয়ে ধরে জান্নাত কে আয়নার সামনে দাড়াঁ করিয়ে নিজে পিছনে দাঁড়ায়। হাসি দিয়ে বলে,

—এবার আপনি তৈরী হোন।আমিও হচ্ছি।সমস্যা হবে না।

দুই জনেই রেডি হয়ে নেয়।প্রণয় বেরিয়ে যাবার আগে জান্নাত কে আবার নিজের কাছে ডেকে নেয়।জান্নাত প্রণয় এর সামনে এসে দাড়াঁ তেই প্রণয় জান্নাত এর কপালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এর স্পর্শ দেয়।কিছু সময় নিয়ে জান্নাত কপাল থেকে অধর সরিয়ে হাদি মুখে বলে,

—সাবধানে যাবেন।কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন করবেন। আমি ইনশাল্লাহ চলে আসবো।

— জি আচ্ছা।

—আরেকটা কথা।

—জি বলুন।

—আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে জানাবেন না।এতে আমার শত্রু রা হয়তো আমার ক্ষতি করার জন্য ঘুটি হিসেবে আগে আপনার ক্ষতি করতে চাইবে।তা আমি চাই না।সেই জন্য কাউকে বলবেন না।

—আচ্ছা বলবো না।আপনি সাবধানে যাবেন।

—জি ইনশাল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।

—-আসসালামু আলাইকুম।

—ওয়ালায়কুম সালাম।

বলেই জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।জান্নাত তার ব্যাগ নিয়ে বের হয় রুম থেকে।গতকাল গিয়ে তাদের বাসা থেকে তার বই নিয়ে এসেছে।জান্নাত বের হয়ে রিক্সা নিয়ে ভার্সিটি চলে যায়।প্রান্তিক বাইক নিয়ে আগেই গিয়েছে আজ।তার কাজ আছে কোথায় যাবে তারপর ভার্সিটি আসবে।অবশ্য জান্নাত এর রিক্সার পিছনে সজীব ও এসেছে।অতি সর্তকতা এর সাথে জান্নাত এর রিক্সার পিছনে নজর রেখে গিয়েছিলো যাতে কেউ বুঝতে না পারে।প্রণয় -ই সজীব কে বলেছে জান্নাত ভার্সিটি যাওয়ার সময় জান্নাত কে ফলো করে যেতে।যদি কোনো বিপদ হয় জান্নাত এর।সেই জন্য দূর থেকেই ফলো করতে বলেছে।তবে যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

🌸🌸

রাফসান মির্জা বসে বসে ভাবছে কি ভাবে শাহরিয়ার প্রণয় কে রাস্তা থেকে সরানো যায়।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় কিছু একটা আসতে -ই মেহেদি আর প্রদীপ কে ডাক দেয়।মেহেদি, প্রদীপ এসে দাঁড়াতে -ই বলে,

—শাহরিয়ার প্রণয় বিয়ে করেছে তাই না?

প্রদীপ স্বগতোক্তি করে বলে,

—জি স্যার।

—ওর বউ টা কে? চিনিস বা দেখেছিস ওর বউ কে?

—না স্যার। আমরা তো আপনার সাথেই চিপকে থাকি সবসময় আরশোলার মতো।দেখবো কেমনে?

মেহেদির এমন অতিরিক্ত কথায় রাফসান মির্জার রাগ উঠে যায়।এই ছেলে টা ইদানীং বেশি কথা বলে।বলে না,সঙ্ঘ দোষে লোহা ও ভাসে।প্রদীপ এর সাথে থেকে থেকে এই মেহেদি ও এখন অতিরিক্ত কথা বলে।রাফসান মির্জা প্রদীপ কে বলে,

—খোঁজ নিয়ে আমাকে জানা শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানার চেষ্টা কর কে ওর বউ বাই হুক অর বাই কুক।

বলেই রাফসান মির্জা হেসে দেয়।প্রদীপ আর মেহেদি রাফসান মির্জার কেবিন থেকে বের হতে যাবে।এর আগেই রাফসান মির্জা দুই জনকে আবার ডাক দেয়।অতি আস্তে তাদের দুই জনকে কিছু বলে।এর পরেই তিন জনে সম সুরে হেসে উঠে।

🌸🌸

প্রণয় অফিস থেকে মাত্র বের হয়েছে।আজকে একবার পার্টি অফিসে যাবে আফজাল সাহেব এর সাথে দেখা করতে।সেই জনে রিফাত আর সুজন কে অফিস এর বাকি কাজ গুলো করে নিতে বলে সজীব কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিস থেকে।গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় প্রণয় আর সজীব। সজীব উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে।প্রণয় উঠে ফন্ট সিটে বসতে যাবে এমন সময় প্রণয় এর নাম্বারে একটা ফোন আসে।প্রণয় ফোনটা ধরে “হ্যালো” বলার আগেই ওপাশ থেকে ব্যক্তি টির বলা কথা শুনে প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রু কুটি কুঁচকে ফেলে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক দেওয়া হয়নি]

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই?
আগামীকাল গল্প দিতে পারবো কিনা শিউর ভাবে বলতে পারছি না।তবে ইনশাল্লাহ চেষ্টা করবো দেওয়ার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here