#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন
পর্ব—-১২
—— হিসেব নিকেশের বস্তাটা, আসার সময় কর্ণফুলীতে ফেলে দিয়ে আসতে পারলা না? এখন তো কাস্মীর ঘুরে আসতে আসতে স্টোক করবা তুৃমি তিতাস নদী।
খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয় বন্যা, তারপর সাগরের সাথে ক্ল্যাপ করতে হাত বাড়ায় সে। মোহিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয় সাগর। ঠকঠক করে কাঁপছে তার হাতটি, যেন বরফের সমুদ্রে আপাতত অবস্হান তার! বন্যা ব্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে। তারপর মৃদু নিশ্বাস ফেলে এক ঝটকায় হাতটি নামিয়ে নিয়ে, হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
—– মৃগী রোগীর সাথে হ্যান্ডশীপ করতে বয়েই গেছে আমার। কমশেকম দশ হাত দূরে থাক তুই আমার থেকে।
আরেকদফা হাসির রোল পড়লো সবার মাঝে। আর এতে যেন তিতাস আরো বেশী মজা পেয়েছে এমন ভাবেই হাসতে লাগলো!
এর মাঝেই খাবারগুলো টেবিলের ওপর রাখলো ইরশাদ। ধৌঁয়া উঠা গরম ভাত, টমেটো দিয়ে আঠালোভাবে রান্না করা রুপচাঁদা মাছ, মিক্স সবজি, সিমের ভর্তা আর সাথে সালাদ।
সাগর লোভনীয় দৃষ্টিতে তাঁকালো খাবারগুলোর দিকে, ঠিক তারপরই দেখা গেল সে নিজেকে নিজেই সার্ভ করে গোগ্রাসে গিলছে সেগুলো! বন্যা সেদিকে তাকিয়ে, আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে সবার প্লেটে খাবারগুলো পরিবেশন করে দিল। আর এরপর একনলা খাবার নিজের মুখে তুলতেই, “খুকখুক” শব্দে তুলে কেশে উঠলো সাগর!
খাবার বিষম লেগে, গলায় আঁটকে গেল যেন খাবারগুলো তার! বন্যা তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে পানির গ্লাসটি তার দিকে এগিয়ে দিল।আর তারপরেই পিঠে আলতো থাবড় দিয়ে লাগলো। সাগরের গলার ভেতরটা প্রবলভাবে জ্বললেও, দম আটকানো ভাবটা মুহূর্তে কেটে গেল তার। কিন্তু বন্যা তখনো তার মাথার তালুতে ফু দিতে দিতে তার পিঠ মালিশে ব্যাস্ত!
পুলকিত নয়নে চিন্তিত বন্যার মায়াবী মুখটির পানে তাকালো সাগর। বন্যার মুখমণ্ডল যেন মায়ার সাগর! যার দর্শনে হৃদয়ের মাঝে প্রশান্তির অনাবিল আনন্দে সিক্ত হয় ! সেই এক অমৃতের সুধার মতো প্রশান্তি। যা নিজের মাঝে ধারণ করার লোভ বারবার অস্হির করে তুলে তাকে!
—– কিরে উল্লুক, দম নিয়ে খা না। তোর পাত কি কেউ নিয়ে যাবে? নাকি খাবার শেষে যুদ্ধে যাবি তুই?
নাক ফুলিয়ে বলতে লাগলো বন্যা। কিন্তু তার কথাগুলো একটুও কর্ণপাত হলো না সাগরের। সে আপাতত বন্যার নির্মলতায় নিজেকে বাঁধতে ব্যাস্ত। বন্যার এই বকাগুলোর মাঝেও ভালোবাসার ছোয়া পায় সে। যা তাকে নতুন বন্ধনে বাঁধে!
হঠাৎ গোলাবজামের বাটিটি টেবিলের ওপর রেখে আর কিছু লাগবে কিনা জিঙ্গেস করলো ওয়াটার। ইরশাদ মুচকি হেঁসে না সূচক মাথা ঝাকালো। ওয়েটারটি টেবিল ছেড়ে প্রস্হান করতেই তিতাস অবাক উৎসুক দৃষ্টিতে ইরশাদের দিকে তাকালো। ইরশাদ সেদিকে তাকিয়ে, আলতো মুচকি হেঁসে বলল,
—– আমি জানি এইটা অর্ডারের সময় তোরা কেউ বলিস নি। তবে এইটা আমার পক্ষ থেকে ট্রিট।
—– হঠাৎ আমাদের জন্য এতো দরদ!
জিহ্বা দিয়ে নিচের ঠোঁটটি আলতো ছুঁইয়ে বাটিটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো তিশা। চোখে খুশির ঝিলিক তার।তার সাথে আরো দুটি চোখ উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে!
আলতো মাথা নুইয়ে আরশীর উৎসুক চেহারার দিকে তাকালো ইরশাদ। তারপর স্পুন দিয়ে নিজের প্লেটের ভাতগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
—- অনেকের ঝাল খেতে অসুবিধা হতে পারে। আর খাবারের পর মিষ্টান্ন খেতে হবে এমনটা অভ্যেস ও থাকতে পারে।তাই নিলাম।
বিস্ফোরিত চোখে ইরশাদের দিকে তাকালো আরশী! বুকের ভেতরটা হুট করেই মোচর দিয়ে উঠলো তার! ইরশাদকে কথায় কথায় একদিন নিজের এই অভ্যেসের কথা বলেছিল আরশী। আর সেদিন ইরশাদই বলেছিলো তাকে,তার মিষ্টি জাতীয় খাবার মোটেও পছন্দনীয় নয়। বরং মিষ্টি খেলে বিচ্ছিরি ভাবে গা গুলায় তার! আরশীর মনের ভেতরটা এখন জানা প্রশ্নের অজানা উত্তরটি জানার জন্য বারবার ব্যাকুল হয়ে উঠছে! ইরশাদের মনে কি আজো সে আছে! এমন প্রশ্নে অস্হির করে তুলছে তাকে! কেন যেন আজ অধিকার ছেড়ে দিয়ে, সেই অধিকারটা কেবল নিজের নামে স্বাক্ষরিত করে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে তার! হয়তো মানুষের স্বভাবত অদ্ভুত ইচ্ছে বলেই!
হঠাৎ তার না বলা প্রশ্নটি বন্যায় করে বসলো ইরশাদকে,
—– আমরা তো সবাই ঝাল খেতে পারি।আর তুই তো মিষ্টি খাবারের আশেপাশেই ঘেসিস না। তাহলে এইটা কেন?
এবার আলতো মাথা তুলে, আরশীর দিকে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইরশাদ।তারপর শীতল কন্ঠে বলল,
—- ইরহাম ভাইয়ার বৌ এর জন্য৷ আমাদের গেস্ট বলে কথা।
শিউরে উঠলো আরশী! ইরশাদের শীতল দৃষ্টির সাথে শীতল স্বর মুহূর্তেই তাকে জমিয়ে দিল জায়গাতেই! ইরশাদের শান্ত চোখজোড়ার দৃষ্টিতে যেন খুন হওয়ার জোগাড় তার। শীতল হিম তার লোমকূপকে জানিয়ে দিচ্ছে যেন হৃদয়ে কারো অস্তিত্বের খবর!
তাড়াতাড়ি দৃষ্টি ফিরিয়ে, নিচের দিকে তাকালো আরশী। বড্ড অস্হির লাগছে তার এখন। বুকের ভেতরটা চুরচুর করে ভাঙ্গছে যেন তার !
আচমকা চোখ ছোট ছোট করে,লম্বা পাপড়িগুলো বার কয়েক ফেলে বলে উঠলো বন্যা,
—– তুই কি করে জানলি ও এই মিস্টি বেশী ভালোবাসে?
চট করে মাথা নামিয়ে নিল ইরশাদ। ইতস্ততভাবে চোখ বুলাল আশেপাশে। তারপর কন্ঠস্বর যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখেই বলল,
—– সব মেয়েরা পছন্দ করে। তাই ভাবলাম আর কি ওনিও করে।
—- মেয়ে! ও মাই গড! তুই সব মেয়ের পছন্দ জানিস! আমার জানা মতে তো তুই মেয়েদের থেকে লক্ষ মাইল দূরে থাকিস!
চোখদুটি বড় বড় করে বলল বন্যা! দৃষ্টিতে বিষ্ময় স্পষ্ট।
আরশী অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ইরশাদের দিকে। বিষ্ময়ে থ বনে গিয়েছে তার মুখ! বন্যা সেদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
—–জানিস আরশী, এই যে আমার বন্ধুটি। কোন মেয়ের প্রতি আসক্তই হয় না সে। বরং কেউ কাছে টানতে চাইলে দূরে পালাই।আমি যখন মাস্টার্সে ভর্তি হয়, তখন দেখা হয় ওর সাথে আমার। ক্লাসের কত মেয়ে, আবার অনার্সেরও অনেক জুনিয়ররা ওকে লাইক করতো তখন। কয়েকজন তোমনের কথা ও জানিয়েছিল ওকে। কিন্তু ও! একদম হৃদয়হীনের মতো সবকিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতো।আর ভাষণের মতো করে কি বলতো জানিস?
আরশী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো বন্যার দিকে। যার অর্থ সে জানতে চায়! আর ঠিক তখনই আবার বলে উঠলো বন্যা,
—– সে বলতো, তার সবকিছুর ওপর কেবল তার বৌএর অধিকার। বাকি মেয়েদের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে হিফাজত রাখতে হবে তার নিজেকে!
আরশী পুলকিত মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো ইরশাদের দিকে। ঠিক তখনি আবার আরশীর কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো বন্যা,
—– জানিস, আমিও ভালোবাসি ওকে। গভীরভাবে ভালোবাসি। ওর ভালোবাসায় নিজেকে রাঙ্গাতে চায় আমি! আই এম ইন লাভ ইয়ার। বিয়ে করে নিতে ইচ্ছে হয় আমার ওকে।আর তারপর এতোগুলো আদর করতে মন চায়! একদম আদরের সাগরে ভাসাতে মন চায় আমার ইরশ টাকে!
খুক করে কেশে উঠে আরশী। শুঁকনো ঢোক গিলতে গিয়ে বিষম খেয়েছে সে। ইরশাদ সেদিকে তাকিয়ে, তাড়াতাড়ি ব্যাস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। দুকদম সামনে এগুতেই, আচমকা আরশীর পিঠের ওপর ইরহামের হাতটি দেখলো সে।মুহূর্তেই জায়গাতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সে! আর সাথে সাথে মুঠো হয়ে গেল তার হাতদুটি ও! আর এরপর পরই খাবারের বিল দিবে বলে উঠে গেল সে টেবিল ছেড়ে!
দুঃখী দৃষ্টিতে ইরশাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো আরশী! হুট করেই বড্ড কান্না পেল তার! নিজের করা ভূলগুলোও বিষ রুপে দংশন করছে যেন এখন তাকে! আলতো মাথা নুইয়ে ইরহাম থেকে সরে এলো সে।তারপর মৃদুস্বরে বলল,
—- আমি ঠিক আছি। প্লিজ আমাকে এভাবে স্পর্শ করবেন না। ইতস্তত বোধ হয় আমার।
তাড়াতাড়ি আরশীর পিঠ থেকে হাত সরিয়ে নিল ইরহাম।তারপর মৃদু হেঁসে উওর দিল,
—– আই নো, তুমি অনেক বেশী লাজুক। এন্ড সরি, তোমাকে ইতস্তিত করার জন্য। তবে একটা জিনিস জানো, তুমি অনেক ভালো একটি মেয়ে। একদম পিউর! এমন মেয়ে হয়তো আজকাল হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।আই এম সো লাকি!
আলতো মেকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে মাথা নুইয়ে রইলো আরশী। দু’ফোটা অশ্রু বয়ে গেল তার অধর ছুঁইয়ে! যা সবার অলক্ষ্যেঔ মুছে ফেলল সে! তারপর বিরবিরিয়ে ফিসফিস স্বরে বলল,
—- আপনি জানেন না, আমি খারাপ! খুব খারাপ একটি মেয়ে আমি! আমি কারো হৃদয়কে প্রেমের সায়রে ডুবিয়ে তাতে ছন্দপাতের সৃষ্টি করেছিলাম।আর ঠিক তার পর পরই, তার জিবনের সুখগুলোতে বিষন্নতার কালো মেঘে ঢেকে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম! আমি বাজে, খুব বাজে!
আচমকা ইরশাদের কথায় ঘোর কাটলো আরশীর। হালকা মাথা তুলে ইরশাদের দিকে তাকালো সে। রক্তবর্ণ হয়ে আছে এখনো তার চক্ষুদ্বয়।আর মুছে ফেলা অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়ে যে লহরের সৃষ্টি করেছিল,তার দাগ কেটে আছে যেন এখনো তার সুন্দর গালে! সেদিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিল আরশী। তার এবার ফুফিয়ে কাঁদতে মন চায়ছে! ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে জোরে জোরে মারতে। কেন তার জন্য কষ্ট পাবে মানুষটি। তার মতো মেয়ে কারো দুফোঁটা অশ্রুর যোগ্য না।তাহলে এ মানুষটি কেন তার দেওয়া কষ্ট এখনো বুকে জড়িয়ে রাখবে! মনে মনে ইরশাদের সাথে একা কথা বলার ফন্দি এঁটে নিল আরশী৷ তার যে সামনাসামনি কথা বলা দরকার লোকটির সাথে।
ইরশাদ একটি হোটেলে দুইটি সিঙ্গেলরুম বুক করেছে। তারা এখানে রাত দশটা অবদি থাকবে।ছেলেরা আর মেয়েরা আলাদা কক্ষে বিশ্রাম নিবে সেই প্রয়োজনেই দুইটি কক্ষ নিয়েছে সে।
রাত দশটার শ্যামলী বাসে চড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে তারা। রাস্তায় বেনাপোল হয়ে তারপর তারা কলকাতায় পৌছোবো। রাতটা হয়তো তাদের বাসেই কেটে যাবে এমনটাই ধারনা সবার। তবে মাঝরাস্তায় কোন ধাবা আছে কিনা জানা নেই ইরশাদের। এর আগে বাই এয়ার গিয়েছে সে। ৬০০০ টাকা খরচ হয়েছিল তখন তার। ঢাকা থেকে কলকাতা। যদিও এতে সময় কম লাগে তবে প্লেনে খাবার দিয়েছিল তাদের। ট্রেনে ও যাওয়া যায়৷ ট্রেনেও খাবার দেয় জানা আছে তার। ঢাকা থেকে” মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা” নামক ট্রেনে কলকাতায় যেতে হয় যার ভাড়া ৫০০-১০০০ এর মধ্যে। তবে সবার বাসেই চড়ার ইচ্ছে তাই আর কোন অপশন বলে নি সে তাদের। সবাইকে নিজেদের রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে কিছু ড্রাই ফুড কিনতে বেরিয়ে গেল ইরশাদ। যদিও সে যাওয়ার আগে বাকি ছয় জনের পকেট থেকে দু’শ টাকা করে বের করে দিল বন্যা। এতে ফিক করে হেঁসে দিল ইরশাদ ! তার চিকন দাতের সেই ভূবনভূলানো হাঁসি দেখে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে উঠলো বন্যা। তারপর মিহি স্বরে বলল,
—- হাসছিস কেন? টাকা কি আকাশ থেকে পড়ে নাকি? যদি আরো লাগে সেগুলো তো তোর ই দিতে হবে।
ইরশাদ আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—- দূর আর লাগবে না।
তারপর বেরিয়ে গেল সে।
আরশীর হঠাৎ অদ্ভুত কান্ড করে বসলো। ইরশাদের পেছন পেছন ছুট লাগালো সে! ইরহাম তখন মাত্র প্রবেশ করেছে তার কক্ষে। আর বন্যা ছুটলো তার পিছু পিছু ! পেছন থেকে বন্যার চিৎকার শুনে থমকে দাঁড়ালো ইরশাদ। পেছন ফিরে তাকিয়ে আরশীকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে বড্ড অবাক হলো সে! লোমগুলো শিউরে খাড়া হয়ে গেল যেন মুহুর্তেই তার!
আচমকা আরশীর হাতটি ধরে ফেলল বন্যা। ইরশাদও উল্টো পথে এগিয়ে এলো ওদের দিকে।
কোমড়ে হাত গুঁজে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে হতাশ দৃষ্টিতে আরশীর দিকে তাকালো বন্যা। লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে আরশী। নিজের বোকামীর জন্য লজ্জায় মাটির নিচে ডুকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন তার।একহাতের আঙ্গুলের ভাঁজে অন্য হাত গুঁজে মুচড়াতে লাগলো সে! চোখগুলো অস্হির ভাবে ঘোরাফেরা করছে তার। ইরশাদ দৃষ্টিতে বিষ্ময় ঢেলে তাকিয়ে আছে তার দিকে! মেয়েটা চাইছে টা কি! মনে মনে ভাবছে সে।
হঠাৎ ইরশাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুযোগের ভঙ্গিতে বন্যাকে ইশারা করলো আরশী। যার একটাই উত্তর দাঁড়ায়,
“বন্যাকে কিছু বলে এখান থেকে পাঠিয়ে দিতে হবে। কারণ সে ইরশাদের সাথে বাইরে যাবে!”
ইরশাদ পরপর পলক ফেলে আবার পরখ করলো আরশীকে। বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে আছে এখন সে! হুম! মোটেও ভূল হচ্ছে না তার অনুমান! আনমনে ভাবলো সে, ” হয়তো মেয়েটাকে বোঝার সাধ্য তার নেই!”
অন্যদিকে সমানে তাকে প্রশ্ন করে চলছে বন্যা!আর আরশী মুখে কুলুপ এঁটেছে! হঠাৎ “খ্যাক” করে গলা ঝেড়ে বলে উঠলো ইরশাদ,
—- হয়তো ওর কিছুর প্রয়োজন আছে। যা সে কিনতে যেতে চায়ছে। আর যেহেতু আমি যাচ্ছি, আর সে এখানে কিছু চিনে না।তাই হয়তো আমার সাথেই যেতে চায়ছে
—- এমন কি দরকার পড়েছে যে এভাবে বাচ্চাদের মতো দৌড়াতে হবে তোকে ! মানুষ কি ভাববে? ইরহাম ভাইয়াকে বলতে পারলি না?
পরম ঝাঁঝের সাথে বলল বন্যা।প্রতিউত্তরে মাথা নুইয়ে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো আরশী,
—– খুব পারশোনাল কিছু জিনিস। ওনাকে বলতে ইতস্ততবোধ করতাম তাই
—- ওকে আমাকে বল।আমি নিয়ে আসি তুই যা।
—- ন—না।
আরশীর হঠাৎ বিকট শব্দে’ না ‘ শুনে অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকালো বন্যা আর ইরশাদ। এই মেয়েটা আজীবনই ইরশাদের কাছে একটি গোলকধাঁধা। তাই সে পকেটে হাত পুরে আরশীর বাকি কথা শুনার অপেক্ষা করতে লাগলো। অন্যদিকে বন্যা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
—- এমন এবনরমালের মতো বিহেব করছিস কেন? কি সমস্যা?
—- আপু, আমার জন্য তুমি কেন কষ্ট করবে? আমার কাজ আমি করে আসি।আর তাছাড়া, তোমার তো জার্নির পর পরই ঘুম দিতে হয়। না হয় মাথা ব্যাথা করে, তাই না?
—- হুম কিন্তু..
বন্যা কনফিউজড মিশ্রিত চেহারার দিকে তাকিয়ে অনর্গলভাবে বলে গেল আরশী
—- নাকি তোমার এই বন্ধুটি বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ একসাথে গেলে কিছু করে দিবে?
দু’হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইরশাদ আরশীর পানে! যেন এখুনি চোখের অগ্নি দ্বারায় ই সে ভষ্ম করে দিবে তাকে! দাত দিয়ে দাঁত পিষে নাক ফুলিয়ে স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে আরশীর পানে!
দাঁত দিয়ে জিহবা কেঁটে মাথা নুইয়ে ফেলল আরশী! আর মনে মনে বিরবিরালো,
” খাইছে!আজ ইরশাদ তোর চাটনি বানিয়ে ছাড়বে রে আরশী!মুখে কস্টেপ মারতে পারিস না রে তুই! কেন এমন ভূলভাল বকিস!”
অন্যদিকে মিনমিনিয়ে ইরশাদের গুনগান করে ঐ জায়গা ছেড়ে কেটে পড়লো বন্যা। আপাতত ইরশাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে যাওয়া চায় তার।
লম্বা পা ফেলে হেঁটে চলেছে ইরশাদ। আর পেছন থেকে রীতিমতো দৌড়িয়ে ইরশাদের সাথে হাটায় পাল্লা দিয়েছে আরশী। বারবার ইরশাদের হাতটি ধরতে চেয়েও ধরতে পারছে না সে। সংকোচবোধ বারবার কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। ওড়নাটি কেমন হাত পায়ের সাথে পেঁচিয়ে যাচ্ছে তার! শেষে আর না পেড়ে দাঁড়িয়ে গেল সে। আরশীকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে তফাতে দাড়িয়ে পড়লো ইরশাদও৷ চারদিকে শো শো ধ্বনিতে বাতাস বইছে।আর বাতাসে এলোমেলো হচ্ছে আরশীর কপালের ছোট ছোট চুলগুলো।সে পরম বিরক্তির সাথে চুলগুলো সরিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বলল,
—– আপনি এতো জোরে হাটছেন কেন? আমি তো আপনার সাথে হাটায় পারছি না।
—– আপনি আমার সাথে হাটবেন কেন? আমারতো চরিত্রগত সমস্যা।
নাক ফুলিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দিল ইরশাদ। পকেটে হাত গুঁজে, এটিটিউডের সাথে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে সে।
আরশী গুটিগুটি পায়ে একদম ইরশাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তার অবাধ্য চুলগুলো বারবার আছড়ে পড়ছে তার কপালে।কিন্তু সেই চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে নেওয়ার একদমই চেষ্টা করছে না আজ সে। যেন আজ নিজের সব নিয়ম ভেঙে অবাধ্য হওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে তার!
ইরশাদ বারবার আঁড়চোখে তাকাচ্ছে তার দিকে। উড়ে এসে পড়া চুলগুলো আলতোভাবে কানের পেছনে গুঁজে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে জাগছে এখন তার মনে! এ যেন এক অনৈতিক ইচ্ছে যার কোন অধিকার ই নেয় তার কাছে! মিষ্টি মাতালকরা সুবাস বয়ে আসছে আরশীর গাঁ ছুয়ে। নিজেকে এই মুহুর্তে, নিজেকে বড্ড এলোমেলো লাগছে ইরশাদের ! সে “খ্যাক ” শব্দ তুলে নিজেকে হালকা স্বাভাবিক করে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
—- কি হলো এতো কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন?
—– আসলে, হয়তো আমার উপস্থিতি বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আপনার জন্য৷ আর তাই,
—– আপনি আর আমি কেবল অপরিচিত। আপনি বন্যার বোন।আর ইরহাম ভাইয়ার স্ত্রী।
শেষের শব্দটি কন্ঠনালী ছেড়ে বের হতেই গলা কেঁপে উঠলো ইরশাদের! সে এক ঢোক গিলে বলল,
—- সুতরাং বিরক্তের কোন প্রশ্নই আসে ন।আসুন, খাবার কিনি। দেরি হচ্ছে।আরেকজনের বৌ পর পুরুষের সাথে বেশী ক্ষণ থাকাটা মানায় না।
ইরশাদ আবার হাটা ধরলো। এবার ধীরগতিতেই হাটছে সে।আর আরশী ছলছল চোখ নিয়ে হাটছে তার পিছুপিছু
চলবে
( সরি ফর লেইট। পুরো দিন কারেন্ট ছিল না)