#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২২ #প্রতীক
লেখিকা – Zaira Insaan
থেমে দাঁড়ালো সে। বলা মাত্র দ্রুত শ্রবণ হলো। কালই বিয়ে! মানে কি? মিহি পা ফেলে দ্রুত সামনে আসলো। বলল,,
“কালই বিয়ে মানে কি? আমার মত না নিয়ে আগে ভাগে বিয়ে ফিক্সড করে দিলা!”
ঝাঁঝ গলায় গরম হয়ে গেল মিহি। এমন রূপ দেখে অবাক হয়ে গেল রুগল প্রণিমা। মিহি একই প্রসঙ্গে আরো বলল,,
“বিয়ের জন্য রাজি কি হলাম তোমরা আমাকে কালই বিয়ে দিয়ে দিবা! পাত্রের খবর জানা নেই। আমি পাত্র কে চিনি না পাত্র আমাকে চিনে না তো সাদি কেমনে হবে!!”
“পাত্র তোকে চিনে তোর সব খবর জানে। এদিকে আয় বস এখানে।” শান্ত গলায় ধীরে ধীরে বলেন প্রণিমা। মিহি আরো রেগে গিয়ে বলে,,
“এটা কি কোনো সিনেমা চলছে যে পাত্র আমাকে চিনে বলে হুট করেই বিয়ে করে ফেলব?”
প্রণিমা কপালে হাত রাখলেন। মিহি এবার অতিরিক্ত চেঁচামেচি করছে না বুঝে। প্রণিমা বলেন,,
“এই জন্যই তো বলছি এখানে এসে বস।”
“আমি এখন বিয়ে করবও না পাত্র ও দেখব না।”
এই বলে ধপধপ করে পা ফেলে রুমে চলে গেল মিহি। প্রণিমা’র মেজাজ গরম হয়ে গেল। এই মেয়েটা কিছু বুঝে না শুধু শুধু চেঁচাবে!
___________
ঠিকঠাক সময়ে রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মিহি। পরনে আকাশি লেডিস শার্টের উপর কফি কলারের লম্বা সোয়েটার। চুলগুলো এক সরু কাঠি দিয়ে উঁচু করে খোঁপা করা। ছোট ছোট চুলগুলো খোঁপা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাজগোজ নেই তাও সুন্দর লাগছে। কিছুদূর হেঁটে হেঁটে রিকশা খোঁজছে। কিন্তু যা দাম বলছে তা দ্বারা ভার্সিটি যাওয়া একদমও সম্ভব না। হঠাৎ পেছন থেকে এক ভারী কন্ঠ কানে এলো,,
“আপনি মিহি না?”
আচমকা কারোর মুখে নিজের নাম শুনে চট করে পিছনে ফিরল মিহি। শ্যাম বর্ণের সুঠাম দেহের এক পুরুষ। মুখে মৃদু হাসি। মিহি নম্র গলায় বলে,,
“ইয়েস।”
ছেলেটা এগিয়ে আসলো হাত বাড়িয়ে বলে,,
“প্রতীক চটার্জী।”
মিহি হাত না মিলিয়ে বলল,,
“ওহ্ আচ্ছা।”
প্রতীক বোধহয় লজ্জিত হলো । সে হাত গুটিয়ে জিন্সে পকেটে ঢুকালো। মিহি মুখ ঘুরিয়ে রিকশার তালাশে লাগল। প্রতীক কে সরতে না দেখে বিরক্ত হতে লাগল তার। সেখান থেকে সরে আসলো। প্রতীকও সাথে সাথে যেতে লাগল। মিহি আঁচ করতে পেরে বলল,,
“জ্বি আপনি আমাকে চিনেন?”
“আমি চিনি তোমাকে কিন্তু তুমি চিনো না।”
ভ্রু কুটি করল ও। বলল,,
“কীভাবে চিনেন? আপনার সাথে আজই প্রথম দেখা!”
বাঁকা হাসলো প্রতীক। বলল,,
“নিজের হবু বউ কে না চেনার কারণ কি?”
কুঁচকানো ভ্রু সোজা হলো। এই মাত্র বুঝলো এটাই তাহলে পাত্র যার সাথে আজকেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। লজ্জায় গাল লাল হলো মিহির। এভাবে যে দেখা হবে ভাবেনি সে। একটু ফিরে পুরোপুরি তাকালো তার দিকে। সুদর্শন শ্যাম পুরুষ। গালে চাপ দাঁড়ি ও মুখে মুচকি হাসির জন্য সৌন্দর্য আরো বেড়ে উঠে। প্রতীক এরই মাঝে বলল,,
“ব্যস্ত আছো? না মানে কোন কিছু নিয়ে তাড়া আছে?”
“হ্যা একটু ব্যস্ত। সামনে পরীক্ষা সেজন্যে আরকি।”
নম্র গলায় মুখে হাসি টেনে বলল মিহি।
“আমার গাড়ি আছে পেছনে আসো তোমাকে ড্রোপ করে দেয়।”
“না লাগবে না আমি যেতে পারব।” মুখে হাসি রেখে বারণ করে বলল মিহি।
“হবু বউ কে ভার্সিটি পৌঁছে না দিলে আমার পাপ হবে, বুঝলে?”
কথাটা পছন্দ হলো না মিহির। সেই কখন থেকে হবু বউ হবু বউ শুরু করছে। সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। তাও মুখে চাপা হাসি রাখল সে। প্রতীক এতবার বলার পরেও রাজি হল না মিহি। সে একা যাবে এবং এ কথাই সে অনঢ়। প্রতীক আর জোর করল না। মিহি সেখান থেকে কোনমতে পালাই হওয়ার জন্য দরদাম না করে রিকশায় উঠে গেল। আর ফিরলো না রিকশার হুক টেনে নিল যাতে প্রতীক নামক ওই লোক দেখতে না পায়।
___________
ভার্সিটি এসে লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলল মিহি। দম ছুটেছে দরুন! কি এক মুহুর্ত পার করে এসেছে। বড় বেজায় সেই লোক! এত কথা কেমনে বলে!
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ক্লাসরুমের দিকে অগ্ৰসর হলো। ক্লাসে ঢুকতে না ঢুকতেই কে যেন মুখে এক গ্লাস পানি মেরে দিল।
(চলবে…)