গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৩৩ এবং ৩৪
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছেন আবির ভাইয়া আর রিহান সাথে লিনা আপুও।আজকে ভাবিকে ওদের বাড়িতে নিতে এসেছেন।আমি, তিশা,অনিক ভাইয়া রেডি হচ্ছি সাথে ভাবিকেও রেডি করাচ্ছি।আবির ভাইয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আজকের জন্য তিনি বরপক্ষ।শাওয়ন চলে যাবে তাই ওকে বিদায় জানানোর জন্য আমার একটু দেরি হয়ে গেছে। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি সবাই গাড়িতে বসে আছে কিন্তু আমার জায়গা কোথায়?তিশা বলল….
.
নেই তো।
.
রিহান ভাইয়া আজকে বাইক নিয়ে এসেছে।কই আগে তো কখনও উনার বাইক দেখিনি।সবাই গাড়িতে যে যার মতে বসে পরেছে আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।তখনই রিহান ভাইয়া বললেন রোজ তুমি বরং আমার সাথে বাইকে চলো।এখন তোমার জন্য গাড়ি কোথায় পাবো(রাগী লুক নিয়ে)।
.
কখন মেঘ হয় আর কখন রোদ উঠে বুঝা মুশকিল।কিসের জন্য আমার উপর এত রেগে কে জানে।হয়তো শাওনের সাথে কথা বলছি বলে।নাহ আমি আপনার সাথে বাইকে যামু না।ওই তিশা তুই নাম তুই রিহান ভাইয়ার সাথে যাবি।
.
ইম্পসিবল!আমি কেন যামু তোর সিট নাই যা ফুটট!
.
শয়তানি,পেত্নী তোরে আমি দেইক্কা নিমু।আমার সাথে এমন করলি।
.
তোদের কাউকে যেতে হবে না। পরী তুই এখানে আয় আমি বাইকে যাচ্ছি।
.
শোন ভাইয়ার কথা নতুন জামাই যাবে শ্বশুর বাড়ি তাও আবার বাইকে হয় নাকি আমিই যাচ্ছি।
.
তাতে কি!তোর প্রবলেম হবে না তো।একটা ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে বললাম না।বাধ্য হয়েই রাক্ষসের সাথে যেতে হচ্ছে।কোথায় ভেবেছিলাম ভাবির সাথে মজা করতে করতে যাবো তা আর হলো না।এখন এই রাক্ষসের বকুনি খেতে খেতে যেতে হবে।মুখ ভার করে বাইকে উঠলাম।গাড়ি ছুটে চলেছে আপন গতিতে আর আমরা পিছন পিছন যাচ্ছি। জানি উনি রেগে আছে তাই আরেকটু রাগানোর জন্য মাঝখানে ফাঁক রেখে বসেছি আমি।দুজনেই চুপচাপ। হঠাৎ উনি একটা হার্ড ব্রেক মারলেন আর আমি না চাইতেও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।উনি বাঁকা হেসে বললেন….
.
কি মিস রোজ এবার কি হলো হুম।খুব তো একহাত দূরে বসেছিলে এখন আমার এত কাছে কেন?
.
আমার এত শখ নেই আপনার কাছে আসার। আপনি এত জোরে না চালালে কখনই আপনাকে এভাবে ধরতাম না(উনাকে ছেড়ে দিয়ে)।সাথে সাথে উনি বাইকটা দাঁড় করালেন।হাত ধরে টেনে আমাকে নামালেন।আর বলতে লাগলেন….
.
আমার কাছে আসার এত শখ নেই তোমার তাহলে কার কাছে যাওয়ার শখ আছে (দাঁতে দাঁত চেপে)।ওই শাওনের।
.
উনার কথায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।কি বলছেন আপনি।
.
যা সত্যি তাই বলছি।সবাই যখন বাইরে ছিলো তখন তুমি কোথায় ছিলে?কি ভেবেছো আমি কিছু দেখিনি আমি কানা।সব দেখেছি।কি করছিলে শাওনের সাথে।
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি! উনি শাওনকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করছেন।চোখ থেকে টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।
.
কি হলো কথা বলছো না কেন(কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে)
.
কি বলবো আমি।যা দেখার আপনি তো দেখে নিয়েছেন।এখন আমি যাই বলিনা কেন?আপনি বিশ্বাস করবেন না।থাকনা কিছু কথা অজানা কি দরকার শুধু শুধু মিথ্যাবাদী নামটা চিনিয়ে নেওয়ার।
.
তখনই উনি হুংকার করে হেসে উঠলেন।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।এই লোকটা কখন কি করে আমি বুঝতেই পারিনা।চোখের পানি মুছে দু হাতে গাল চেপে বললেন….এই পিচ্চি কি ভেবেছিলে আমি এসব বলবো।ধুর বোকা!আমি যাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তাকে কিনা সন্দেহ করবো কখনও না।।হুম যখন শাওন তোমাকে টাচ করেছিলো তখন খুব রাগ হচ্ছিলো কিন্তু তার জন্য কখনও এমন কথা বলবো না।জানো তো যেকোনো সম্পর্কের মূল ভিওি হলো বিশ্বাস।যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না।
.
আপনি খুব খারাপ!জানেন কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।আসলে আমি বাইরে আসার সময় কোনো কিছুতে পা লেগে পরে যাচ্ছিলাম তখন শাওন এসে আমাকে ধরে ব্যস এইটুকুই আর কিছু না।আর তখনই হয়তো আপনি আমাদের দেখেছেন।
.
হুমম।ঠিক আছে চলো।বেশি দেরি হয়ে গেলে আবার সবাই ভাববে আমরা পালিয়ে গেছি।আর তোমার যে ভাই একটু এদিক ওদিক হলে আমাকে টুস করে উপরে পাঠিয়ে দেবে।
.
হুম চলুন।বাইকে উঠে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।তখন উনি বললেন…কি এখন এক হাত দূরে বসলে না যে।এভাবে বসলে কিন্তু আমার বাইক চালাতে বড্ড অসুবিধা হবে।তুমি বরং একটু সরে বসো।
.
উহুম!আমি সরবো না।পারলে বাইকে স্টার্ট দিন নাহলে এখানেই বসে থাকুন।উনি সানগ্লাস ঠিক করতে করতে বাইকে স্টার্ট দিলেন।বড্ড ক্লান্ত লাগছে উনার উপর নিজের সবটা ভার ছেড়ে দিয়েছি।
.
.
বাড়িতে পৌছেই নিজেকে অনেক ক্লান্ত লাগছে মাথাও ধরেছে তাই এসেই ঘুমিয়ে পরেছি।ভাবির ডাকে ঘুম ভাংলো।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।ফ্রেশ হয়ে সেখানে যোগ দিলাম।আমাকে দেখে সবাই একসাথে বলে উঠলো গুড মর্নিং। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই সন্ধ্যায় মর্নিং পেলেন কোথায়?
.
রিহান বলল….তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলো আর আমরা রাতে ঘুমাই সকালে উঠি। তাই এখন তোমার জন্য সকাল তাই না ভাইয়া (ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে)
.
ভাইয়াও সম্মতি জানালো আর সবাই হাসতে লাগলো।ওকে আমাকে নিয়ে হাসা বের করছি।আচ্ছা রিহান ভাইয়া আপনি ভাইয়াকে কোন এঙ্গেল থেকে ভাইয়া ডাকেন?নিয়ম অনুযায়ী তো ভাইয়াকে আপনার দুলাভাই ডাকার কথা তাহলে আপনি সবসময় ভাইয়া ভাইয়া করেন কেন?(চিন্তিত হয়ে)আমার কথায় উনি বিষম খেলেন আর আন্ডার মতো চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।তাতে কি আমি ভয় পাবো না। সবাই রিহান ভাইয়ার উওরের অপেক্ষায় তখনই ভাবি বললেন….
.
কেন রোজ এটা তোমার ভালোভাবে জানা উচিৎ ছিলো।(কফি দিতে দিতে)
.
এইরে রিহান ভাইয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলাম নাতো।তবুও জিজ্ঞেস করলাম কেন আমি জানবো কেন?
.
কারন রাহাতের সাথে রিহানের প্রথম পরিচয় তোমাকে ঘিরে।তুমি যদি সেদিন অসুস্থ না হতে তাহলে রাহাতের সাথে ওর দেখাও হতো আর ভাইয়াও ডাকতো না।যে সম্পর্কের সূএপাত তোমাকে ঘিরে হয়েছে আমার ভাইটা চায় না সেই সম্পর্ক ভুলতে বুঝেছো।কি রে ভাই তাই তো।
.
হুম আপু ঠিক বলেছো।আচ্ছা ভাইয়া আপনার এতে কোনো প্রবলেম নেই তো।
.
না না এতে প্রবলেমের কি আছে! তেমার আমাকে যা ইচ্ছা তাই ডাকতে পারো কোনো সমস্যা নেই।
.
ভাই একটা গান ধর না।অনেকদিন তোর গান শুনি না।দাঁড়া আমি তোর গিটারটা নিয়ে আসছি।
.
না আপু ভালো লাগছে না।অন্যদিন শুনাবো।আবির ভাইয়া বললেন…ভালো না লাগার কি আছে এমন পরিবেশ তার উপর আকাশে একটা চাঁদ আর নিচে চাঁদের হাট আর তুই বলছিস ভালো লাগছে না।দেখ রোজ তোদের বাড়িতে আর কবে আসবে না আসবে তার ঠিকঠিকানা নাই সো ওকে তোর একটা গান শুনানো উচিৎ।
.
নারে অন্যদিন শুনাবো।তিশা আমাকে গুতা মেরে বলল…ওই তুই বল তাহলে গাইবে।
.
আমি কেন বলতে যাব?তুই বল
.
উফ আমি আর তুই কি এক!তোর মধ্যে একটা প্রেম প্রেম ব্যাপার আছে।আমার মধ্যে নেই তাই আমার কথা রাখবে না আর তোর কথা ফেলবে না।বুঝতে পারছিস ভাবি আর আবির ভাইয়া ইশারায় আমাকে বলার জন্য বলছেন।
.
রিহান ভাইয়া গান না একটা গানই তো!ভাবিও গিটার নিয়ে হাজির।উনি মুচকি হেসে গিটার হাতে নিলেন।তখনই আবির ভাইয়া বলে উঠলেন এতক্ষণ ধরে সবাই বললাম শালা তোর কানেই গেলো না।আর এখন রোজ বলতে না বলতেই গিটার বাজাতে শুরু করলি। উনি কিছু না বলে মুচকি হেসে গান ধরলেন…..
.
.
রাতের সব তারা আছে দিনের গভীরে
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে
তুই কি আমার হবি রে!
……………………………………
মন বাড়িয়ে আছি দাড়িয়ে
তোর হৃদয়ে গেছি হারিয়ে
তুই জীবন মরণ সবি রে
তুই কি আমার হবি রে!
………………………………..
আমার পথটা চলে যায় তোরই দিকে
চোখের কলম শত কবিতা লিখে
এই হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে
সেই কবিতা শুধু তোকে নিয়ে
……………………………………….
চোখ ভরে তুই দেখ পড়ে তুই
প্রেম কবিতায় তোকে ছুঁই
তুই চিনে নে সে কবিরে
তুই কি আমার হবি রে
………………………………….
রাতরে সব তারা আছে দিনের গভীরে
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে
তুই কি আমার হবি রে!
__________ ___________
.
.
পুরো হানটাই আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ডেডিকেট করে গাইছিলেন।উনার গলার সুরটা খুব মিষ্টি।এই মিষ্টি সুরে সারারাত গান শুনলেও অনীহা আসবে না।কি করে এত সুন্দরগান উনি।সবার তালির আওয়াজে হুশ ফিরলো।সবাই উনার গানের প্রসংশা করলেন।
.
ভাইয়াঃআচ্ছা রিহান আমি তেমার ভাই+দুলাভাই।আমাকে একটা কথা বলো তো কাকে উৎসর্গ করে গানটা গাইলে।যদি হৃদয় কাউকে অনুভব না কর তাহলে এত ইমোশন দিয়ে গানটা গাইতে পারতে না।তা সত্যি বলো।
.
ভাইয়ার কথায় আমার হাত পা কাঁপছে।উনি যদি আমার কথা বলে দেন তাহলে কি হবে।উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনার এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথাি নেই।আমার দিকে তাকিয়ে ডেবিল হাসি দিয়ে বলতে লাগলেন…….
:
:
#Part_34
:
:
ভাইয়া হিসেবে বলা যায় না তবে দুলাভাই হিসেবে তোমাকে বলাই যায়।
.
ভাই হিসেবেও বলতে পারো।আমি তেমন ভাই হতে চাই না যার সাথে কিছু শেয়ার করা যায় না ভয় ভীতি কাজ করে। আমি সেই ভাই হতে চাই যার সাথে অনায়াসে সবকিছু শেয়ার করা যায়।ওকে তাহলে তুমি যেটাতে কমফোর্টেবল সেভাবেই বলো।আই মিন দুলাভাই হিসেবেই বলো।
.
হুম একজনকে খুব ভালোবাসি। নিজের জীবনের থেকেও বেশি। যেকোনো মূল্যে তাকে আমার চাই ই চাই।তাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন।আর আজকের এই গানটা তাকে ডেডিকেট করেই গাওয়া।সে মিশে আছে আমার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে।আজীবন ওকে ভালোবাসতে চাই।ওকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।
.
ভাইয়াঃএত ভালোবাসা!ওয়াও কবে থেকে চলছে শালা বাবু।
.
আবিরঃপাক্কা ২ বছরের লুকোচুরি প্রেম।
.
ভাইয়াঃদুই বছর ও মাই গড!
.
আবিরঃহুম দুই বছর আগে হিরোইনকে একটা পার্টিতে দেখে আমাদের হিরোর রাতের আরামের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো।তারপর তার ঠিকানা বের করে তাকে দেখত।কিন্তু আশ্চর্যেরর বিষয় হলো এই দুই বছরে কখনও মেয়েটার সামনে দাঁড়ায়নি দূর থেকে ভালোবেসে গেছে।
.
ভাইয়াঃতার মানে ওয়ান সাইডেড লাভ।
.
আবিরঃহুম তখন ছিলো।কিন্তু এখন না।
.
ভাইয়াঃ এখন মেয়েটা জানে তুমি তাকে ভালোবাসো?(রিহানকে উদ্দেশ্য করে)
.
হুম জানে!এ বছর ও আমাদের কলেজে এডমিট হয়েছে।জানো ভাইয়া ওই মেয়ে অনেক দুষ্টু আর ঝগড়াটে।কলেজ ঢুকেই আমার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া স্টার্ট করেছিলো।আর এখনও বাচ্চা মুখ ফুঁটে না বললে কিচ্ছু বুঝে না।আমি যে ওকে ভালোবাসি সেটা ওকে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ওই যে ঢেড়স মাথায় কিচ্ছু নেই তাই বুঝলো না।পরে একদিন ভেঙে টুকরো টুকরো করে বলার পর বুঝলো।
.
ভাইয়াঃআহারে!আমার শালাবাবু ফেঁসে গেছে।এই বাচ্চা ঢেরস মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন কাটাবে কি করে বলেই সবাই অট্রহাসিতে ফেটে পরলো।
.
ভাইয়ার কথায় মুচকি হাসলেন উনি!কি করবো ভাইয়া এই বাচ্চা ঢেরস মেয়েকেই যে আমি সারাজীবন আমার কাছে রাখতে চাই।ওই বাচ্চামো গুলো দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।আমি চাই সারাজীবন ও এভাবেই বাচ্চা থাক।কারন এই বাচ্চা মেয়েটাকে কখনও এডাল্ট ভালো লাগবে না।(আমার দিকে তাকিয়ে)
.
উনার কথাগুলো মুগ্ধ নয়নে শুনছি আমি।সত্যি এত ভালোবাসেন আমায়।আবার উনার উপর রাগও হচ্ছে আমার আমাকে ঢেরস বলা হুহ।উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম…. মেয়েটাকে এত ভালোবাসেন তাহলে সবার সামনে ঢেরস ঢেরস বলে ছোট করছেন কেন?
.
আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেন আমি ভিন্ন গ্রহের কোনো প্রাণী।আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য রিহান বলে উঠলো….
.
রোজ তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন?আমি তো আমার পিচ্চির কথা বলছি।প্লিজ তুমি এত হাইপার হইও না।কি করবো বলো ওর বুদ্ধি হা্টুর নিচে তাই ঢেরস না বলে থাকতে পারি না।আর ছোট বড়র কি আছে। আমি তো জাস্ট মজা করে বলছি।
.
আপনি আবার উনাকে ঢেরস বলছেন?উনাকে ভালোবাসেন আবার উনার অগোচরে উনাকে ঢেরস বলেন লজ্জা করে না।
.
৩২ দাঁত বের করে দাঁত কেলিয়ে বললেন…না লজ্জা করে না।কারন ওর সব বাচ্চামো আমার বেলায়।সবার সবকিছু বুঝে কিন্তু আমাকে এখনও ভালো করে বুঝতে পারে না।এই যে এখন তুমি যেভাবে কথা বলছো ও থাকলে এভাবেই বলতো ঢেরস তো আর কি বলবে।উনার কথা শুনে সবাই হাসছে আর আমি রাগে ফু্সছি।কত্ত বড় সাহস রিহানের বাচ্চা রিহানের সবার সামনে আমাকে অপমান করে।
.
ভাইয়াঃএই পরী তুই এত রাগছিস কেন?ও তো ওর ভালোবাসার মেয়েটাকে বলছে।আর তুই তো সে নস তাহলে!আর রিহান তোমার এটা ভারী অন্যায় হয়েছে সত্যি মেয়েটা এখানে নেই আর তুমি তাকে এভাবে বলছো।এটা ঠিক হচ্ছে না।
.
ভাইয়ার কথা শুনে সবাই মুখ চেপে হাসছে।ভাইয়া তোমাকে কি করে বলি সে আর কেউ নয় তোমার বোন।তাইতো আমার এতো ফাটছে।
.
রিহানঃওকে ভাইয়া সরি।সরি রোজ আর হবেনা।
.
উনার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিলাম।তা দেখে উনি কিছুটা হাসলেন।
.
ভাইয়াঃ শালাবাবু তোমার বউকে আমায় দেখাবে না।আমার একমাত্র শালার বউ আমি না দেখলে কি হয় তুমিই বলো।আমি শুধু এটা দেখতে চাই কে সেই লাকি গার্ল যে আমার শালাবাবু কে পাশে পাবে।কি দেখাবে না।
.
হুম সময় হলে ঠিক দেখাবো।তুমি না দেখলে কি করে হবে।
.
ছাদে আড্ডা দিতে দিতে রাত প্রায় ২ টা বাজে।আমাকে আর তিশাকে একটা রুম দেওয়া হয়েছে।আমাদের রুম রিহান ভাইয়ার রুমের পাশেই।রিহান ভাইয়া আর আবির ভাইয়া একসাথে শুয়েছেন।
.
সকালে ঘুম ভাংতেই দেখি রিহান আমার কাছে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকাতেই বলে উঠলেন “গুড মর্নিং” রেড রোজ।
.
আআপনি এখানে।তিশা কোথায়?
.
হুম আমি!তিশা নিচে গেছে সবার সাথে বসে গল্প করছে। চিন্তা করো না কেউ দেখবে না।আর দেখলেও সমস্যা নেই এই বাড়ির মোটামুটি সবাই জানে তুমি আমার বউ হচ্ছ।
.
কিহহ!সকাল সকাল কি আবুল তাবুল বকছেন।
.
কফি হাতে রুমে প্রবেশ করলেন ভাবি।পেছন থেকে ভাবি বলে উঠলেন….যা সত্যি তাই বলছে।
.
উনার কথায় আমি বিষম খেলাম।এরা এসব কি বলছে আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
.
এত চাপ নিও না।আমি কাউকে কিছু বলবো না।যখন বলার প্রয়োজন পরবে তখন অবস্থা বুঝে বলবো।।রিহান সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করে।।তোমাকে দেখার পর থেকে আজ অবধি যা যা হয়েছে সব আমায় বলেছে।তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে একদিন তোমাদের কলেজ গিয়েছিলাম কিন্তু আমার বেড লাক তোমায় দেখতে পাইনি।তুমি বাড়ি চলে এসেছিলে।তারপর যখন আমাকে দেখতে এ বাড়িতে এলে তখন তোমরা যাওয়ার পর রিহান কিছু নিয়ে আপসেট ছিলো জিজ্ঞেস করাতে সব বলে।তারপর আমার কথাতেই তোমার কাছে ক্ষমা চায়।জানো রোজ ভাই তোমায় খুব ভালোবাসে ওকে কখনও কষ্ট দিও না।তোমাকে ছাড়া আমার ভাইটা থাকতে পারবে না।
.
ভাবির কথা শুনে মাথানিচু করে বসে আছি।কি বলবো আমি।কি নির্লজ্জ ছেলে নিজের বড় বোনকে সব বলে দিয়েছে।কি লজ্জা এখন ভাবিও জানে কেমন লাগে।
.
ঠিক আছে ঠিক আছে এত লজ্জা পেতে হবে না।তোমরা গল্প করোরো আমি আসছি। আমার আবাবার কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।
.
আপনি এখনও বসে আছেন কেন?আপনিও যান।
.
আমি যাব কেন?আপু কি বলে গেলো শুনতে পাও নি।
.
না শুনতে পাইনি।কাল সবার সামনে এতবার আমাকে ঢেরস বললেন আর এখন এসেছেন এই ঢেরসের সাথে গল্প করতে।এই ঢেরস আপনার সাথে করবে না গল্প। এই ঢেরসের সাথে আর কখনও কথা বলতে আসবেন না।বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেলাম আমি।উনি এখনও সেখানে হা হয়ে বসে আছেন।হয়তো ভাবতে পারেননি এমন কিছু হতে পারে।
.
.
বাড়িতে এসে দুদিন ধরে ফোন অফ করে রেখেছি।কেন রাখবো না সবসময় আমাকে বাচ্চা বলে হেলা করা মানলেও আমি ঢেরস এটা মানতে পারব না।বাসায় এসে কল দিলাম লাইন বিজি কার সাথে এত সময় নিয়ে ফোনালাপ করেন।এরপর আর ব্যাকও করলেন না।থাকুন আপনি আপনার মতো হুহ।এখনকলেজও যাই না।তাই উনার সাথে যোগাযোগ এক্কেবারে বিচ্ছিন্ন।এরমধ্যে উনি বার কয়েক কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি বলিনি।বলবো না এাট উনার শাস্তি হুহ।
.
ঠান্ডা হাওয়ায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আমার
মনে হচ্ছে আমি মেঘের উপর ভাসছি।আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম চারিদিকে গুটগুটে অন্ধকার।তবে কাছে কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে।আমি কোথায় সেটা আবিষ্কার করতে পারছিনা।হঠাৎ মনে হলো আরে আমি তো আমমার রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে এটা কোথায়?মুহূর্তেই অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো নদীর পাড় হবে।কিন্তু বুঝতে পারছি না।আর আমি এখানে এলাম কি করে।ভাবতে ভাবতে কান্না চলে আসছে গলা শুকিয়ে গেছে।কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে আমি এখন কি করবো।নিজেকে কি করে বাঁচাবো।
.
.
চলবে………..