বড্ড ভালোবাসি পর্ব ৩১+৩২

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৩১ এবং ৩২
লেখিকা :- Labiba Islam Roja
:
:
:
বধূর বেশে বসে আছেন ভাবি।গোলাপি লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস হাতে গোলাপি চুড়ি চোখে গারো কাজল ঠোঁটে গারো গোলাপি লিপস্টিক কপালে টিপ এতেই ওসাম লাগছে ভাবিকে।ভাইয়া ভাবিকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে।একটু পর বিয়ে পরানো শেষ হবে।সারাজীবনের জন্য বাবার রাজ্যের রাজকুমারী আজ হয়ে যাবে অন্যের রাজ্যের রাণী।
.
বিয়ে বাড়িতে পৌছে গেছি অনেক্ষণ আগে।রিহানকে দেখলাম গেস্ট সামলাতে ব্যস্ত।হোয়াইট শার্ট ব্লু ব্লেজার চুলগুলো জেল দিয়ে সেট ডান হাতে ব্রেসলেট বাম হাতে ঘড়ি চোখে সানগ্লাস খুব ড্যাশিং লাগছে।সব মেয়েরা হা হয়ে উনাকে দেখছে।আজকে আমার উনার উপর খুব রাগ লাগছে।এত সাজগোছ করার কি খুব প্রয়োজন আছে।একটু নরমাল সাজ সাজলেই তো হয়।কাকে এত সাজ দেখাবেন উনি।সেই তো আমিই তাকাবো তাহলে আমি তো যে কোনো লুকেই উনাকে ভালোবাসি। আজ উনার হচ্ছে স্মার্ট হওয়া তাই না দাঁড়ান দেখাচ্ছি।
.
বাড়ির এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর উনি।খবর পাঠিয়ে উনাকে নিয়ে এসেছি ।কি হলো রোজ এতক্ষণ ধরে চুপ করে আছো কেন? কেন ডেকেছো বলবে তো।
.
কেন আমার সামনে থাকতে আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি।এতগুলো মেয়ের সামনে থাকার সময় তো দিব্যি দাঁত কেলিয়ে কথা বলছিলেন তাহলে আমার সামনে এমন হুতুম পেঁচার মতো মুখ করে আছেন কেন?
.
কি বলছো রোজ! আমি কখন বললাম আমার তেমার সামনে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।তোমার সামনে দিন-রাত বসে থাকতে পারতাম তাহলে কি যে ভালো হতো কি বলব(দাঁত কেলিয়ে)।কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই আমি উনার সবগুলো চুল এলোমেলো করে দিলাম।
.
রোজ এটা কোন ধরনের পাগলামি! কি হয়েছে এভাবে আমার চুল এলোমেলো করলে কেন?জানো কতটা টাইম নিয়ে আমি চুলগুলো সেট করেছিলাম
.
বেশ করেছি এত সেজেগোজে থাকার কি দরকার হুমম।আপনি দেখেন না এমনি মেয়েরা আপনাকে গিলে খায় তার উপর এমন সাজ পোশাক।আর কখনও এভাবে সাজবেন না বুঝছেন।এত স্টাইলিশ আমার প্রয়োজন নাই নরমালই ভালো।দেখি সানগ্লাস! হুম সানগ্লাস খুললে আরেকটু ভালো হবে।বলেই খুলে নিলাম।হুম এবার ঠিক আছে।
.
রোজের এমন বাচ্চাদের মতো কান্ডে আমি অবাক।এই মেয়ে সত্যি সত্যি এখনও বাচ্চা আছে।কি করে রাগে ফুঁসছে আর এসব দেখে আমি মিটিমিটি হাসছি।
.
কি ব্যাপার আপনি হাসছেন কেন?(চোখ বড় বড় করে)
.
রোজ আর ইউ জেলাস।
.
হুম।কেন হবো না জীবনে ছেলে দেখেনি ওরা।আপনাকে এভাবে দেখবে কেন?সবসময় আপনাকে কুনজরে দেখে। ইচ্ছে করছিলো সব শাঁকচুন্নিদের পঁচা নর্দমায় ফেলে দেই।(দাঁত কটমট করে)
.
ঠিক আছে পিচ্চি আর রেগে থেকো না।এবার শান্ত হও।আচ্ছা আমায় একটা কথা বলো এখন যদি আমি এমন লুকে ভিতরে যাই তাহলে লোকে কি বলবে?
.
কি বলবে….
.
বলবে এই ছেলে কোনো স্টাইল জানে না।রোজের সাথে একে একদম মানায়নি আনস্মার্ট।তখন তোমার কেমন লাগবে।
.
ওহহ তার মানে আপনি ইনডিরেক্টলি বলছেন ওখানে সেজেগোজে যেতে ওকে যান আমার কি।(সানগ্লাস উনার হাতে দিয়ে)আপনি থাকুন আপনার স্টাইল নিয়ে আমি চললাম।
.
রোজ চলে যেতে নিলে রিহান ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে ঘুরায় তারপর নিজের হাতে নিজের চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়।সানগ্লাস আর ব্রেসলেট ওর হাতে দেয়।এরপর জিজ্ঞেস করে এতে হবে কি নাকি জামা কাপড়ও খুলতে হবে।
.
রোজ জানায় এতেই হবে তখনই রিহান বলে…ওকে আজ থেকে আমি এভাবেই থাকবো।আমার পিচ্চি আমার কাছে এই একটা সামান্য জিনিসই তো চেয়েছে আর আমি দেব না তা কি হয়।আরে পিচ্চি তুমি চাইলে তোমার জন্য আমার জীবনটাও দিতে পারি।
.
জীবন দিতে হবে না।সারাজীবন আমার পাশে থেকে আমাকে আগলে রাখলেই হবে। ওকে চলুন বাইরে দেখি কি হচ্ছে!
.
.
আস্তে আস্তে কনে বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলো।সবাইকে জড়িয়ে কান্নায় ব্যস্ত ভাবি।আর আমি এসব দেখে নিজের কথা ভাবছি আমাকেও তো একদিন আব্বু আম্মু ভাইয়া সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে কথাটা ভেবেই বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো।কি করে যাব সবাইকে ছেড়ে।রিহান ভাইয়া ভাবিকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরছেন।সবাই শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।আবির ভাইয়া এসে জোর করে উনাকে এক সাইডে নিয়ে গেলেন।ছেলেরাও যে এত কাঁদতে পারে আজ বুঝলাম যে কোনো ভাইয়ের কাছেই তার বোন রাজকুমারী হয়ে তাকে।কখনও হয়তো বলা হয়না খুব ভালোবাসি কিন্তু তবুও ভাই বোনের মধ্যে অদ্ভুদ এক টান থাকে। যা কাছে থাকলে হয়তো এতটা বুঝা যায় না কিন্তু দূরে গেলে ঠিকই অনুভব করা যায়।
.
বাড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন আবির ভাইয়া আর রিহান।আস্তে আস্তে সেদিকে গেলাম। আমাকে দেখে আবির ভাইয়া চলে গেলেন।উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন উনি।এমন অবস্থায় কি বলা বা করা উচিৎ বুঝতে পারছি না।আস্তে আস্তে কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।উনাকে কাঁদতে দেখে টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো আমার চোখে থেকেও।কান্না ভেজা কন্ঠে উনি বলে উঠলেন…..
.
জানো রোজ আপুকে ছাড়া কখনও থাকিনি।কারনে অকারণে সবসময় জ্বালিয়েছি আর আপু সব সহ্য করেছে।কখনও ভাবিনি আপুকে ছাড়া থাকতে হবে।আজকের পর থেকে আমাদের বাড়িটা একদম নীরব হয়ে যাবে।আর ভাই বোনের মারামারি ঝগড়া ঝাটি হৈচৈ থাকবে না।রাতে দেরি করে ফিরলে বাবা মায়ের বকুনি থেকে কেউ আর আমাকে বাঁচাবে না।দিনশেষে বাড়িতে এসে আর আপুর মায়ামাখা মুখটা দেখতে পাবো না।তুমি বলো আমি কি করে থাকবো।
.
উনার কথার প্রতিওোরে কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছিনা।আজ যে আমিও বাকরুদ্ধ।মেয়েদের জিবনটাই যে অদ্ভুদ বাবার রাজ্য বড় হয়ে একদিন সবাইকে পর করে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়।দুনিয়াটা যে বড় নিষ্ঠুর।তবুও নিজেকে শক্ত করে বললাম কেন এত চিন্তা করছেন ভাইয়া তো ভাবিকে নিয়ে মাঝে মাঝে আসবে আপনাদের সাথে দেখা করতে।আর আপনার যখন মন চাইবে তখন চট করে ভাবিকে দেখে আসবেন।আগে তো আমাকে দেখার জন্য লুকিয়ে যেতেন।এখন ভাবির বাহানায় আমাকেও দেখে আসবেন।।( উনাকে হাসানোর জন্য বললাম।)
.
রোজ আপুকে একটু দেখ প্লিজ।জানো কখনও নিজের কষ্টের কথা কাউকে মুখ ফুঁটে বলবে না খুব চাপা স্বভাবের।আমার মতো এত প্রাণ খুলা নয়।আমি জানি রাহাত ভাইয়া আপুকে খুব ভালো রাখবে।তবুও তুমি একটু দেখ প্লিজ।
.
উনাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললাম।আমি আছি তো কেন এত টেনশন করছেন।ভরসা করেন তো আমায়(দুহাত দিয়ে গাল চেপে)
.
হুম।অনেক বেশি।
.
চিন্তা করবেন না ভাবিকে আমরা খুব ভালো রাখবো।আর এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ(কপালে চুমো একে)এরকম চিচকাঁদুনে বর আমার ভালো লাগবে না।
.
আমার কথায় মৃদু হাসলেন উনি।তুমিও তো কাঁদছো।
.
কি করবো আমার বরের কান্না যে আমার সহ্য হয় না।দাঁড়ান এবার চুলগুলো ঠিক করে দেই।
.
কেন থাক না। তুমিই তো বললে এভাবে থাকতে তাহলে?
.
এখন ভেবে দেখলাম এরকম আনস্মার্ট লোককে আমার বর বানানো যাবেনা।আমার সেই আগের স্টাইলিশ বরই চাই।যাকে দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে যাবে।বার বার ক্রাশ খাবো।
.
তার মানে আমি যদি স্মার্ট না হতাম তাহলে আমাকে ভালোবাসতে না তাই তো।(গাল ফুলিয়ে)
.
ধুর পাগল!(চুল ঠিক করতে করতে) আমি আপনাকে যেকোনো রূপেই ভালোবাসি।এবার ওদিকে চলুন আমাদের যেতে হবে তো নাকি!
.
.
বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছি আম্মু হাসি মুখে বরন করলেন তার বৌমা কে।নিজ হাতে ধরে নিয়ে বসালেন সোফার উপর।সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ভাইয়া আর ভাবিকে নানাভাবে টিজ করছে।ভাইয়ার বন্ধু অনিক ভাইয়া বলে উঠলেন….দেখ রাহাত একা বিয়ে করেছিস ঠিক আছে কিন্তু তোর বাসরে উকিঁঝুকিঁ দেওয়ার পুরো রাইট আমাদের আছে।তাদের কথার মাঝেই সিরিয়াস মুড নিয়ে আমি বলে উঠলাম…..
.
ভাইয়ার বাসর তো হবে না।সবাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।একথা শুনে ভাইয়া আর ভাবি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।অনিক ভাইয়া নিজের কৌতুহল মিটানোর জন্য প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন আমার দিকে…কেন রোজ আর আজ যদি না হয় তাহলে কবে হবে?
.
কোনো দিনও হবে না।
.
সবাই আবারও অবাকের শেষ পর্যায়ে।আমার কথায় যে সবাই বড় সড় শক খাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।তাতে কি ব্যাপারটায় আমি তো মজা পাচ্ছি।
.
কেন রোজ আমার মাথায় তো কিচ্ছু ঢুকছে না।সবাই বিয়ে করে বাসর করে কেউ কেউ তার আগেও করে আর সেখানে রাহাত বিয়ে করেও কোনোদিন বাসর করবে না।এটা মানতে পারছিনা।
.
আরে ভাইয়া সবাই নিজের জন্য বউ আনে তাই বাসর করে কিন্তু ভাইয়া তো নিজের জন্য বউ আনেনি তাই ভাবির উপর ভাইয়ার কোনো অধিকারও খাটবে না।
.
এবার ভাবির মুখ দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেঁদে দেবে।নিশ্চয় ভাবছে ওকে বিয়ে করে এনে ভাইয়া অন্যের হাতে তুলে দেবে।অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মুচকি হাসছে।
.
অনিক ভাইয়া সহ এখানে উপস্থিত সবাই শকড।এরকম আবার হয় নাকি!অনিক ভাইয়া এবার বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠেই বলে উঠলেন….রোজ ঘটনাটা একটু খুলে বলবে।ওই রাহাত তুই চুপ কেন কিছু বল।রোজ কি বলছে এসব।আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।তুই নিজের জন্য বউ আনিস নি তাহলে কার জন্য এনেছিস?
.
কেন আমার জন্য এনেছে।ভাইয়া বিয়ে করতে চায়নি।আমি বাড়িতে একা একা থেকে বোর হচ্ছি তাই আমার রিকুয়েস্টে আমার জন্য একটা সঙ্গী নিয়ে এসেছে।তাই ভাইয়ার বউয়ের উপর কারো অধিকার খাটলে সেটা আমারর।
.
ওহহ এই ব্যাপার আমি আরো ভাবলাম কি না কি!উফ আরেকটু হলে হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেত।
.
যাও ভাইয়া ঘুমিয়ে পরো ভাবিকে আমি ছাড়ছি না। ভাবি চলো আমরাও ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে।(হাই তুলে)
.
এই রোজ এটা ঠিক হচ্ছে না তুমি রাহাতের সাথে অন্যায় করছো।
.
অনিক ভাইয়াকে থামিয়ে ভাইয়া বললেন….!কিসের অন্যয় আমার পরী কখনও কোন অন্যায় করতে পারে না!পরী তোর জিনিস তোর যা ইচ্ছা তাই কর তুই খুশি থাকলেই আমি খুশি। যা তুই রাহাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পর আমরা কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘুমাবো গুড নাইট।
.
ধুর ভাবলাম একটু মজা করবো তা না দিলো তে প্ল্যানটা মাটি করে।সবসময় আমার কথা কেন এত ভাবে কে জানে! তোমার বউ আমি নিয়ে যাচ্ছি তাতে তোমার খারাপ লাগছে না।
.
কেন খারাপ লাগবে আমার যা সবই তো তোর।তুই নিচ্ছিস তাই খারাপ লাগছে না অন্য কেউ নিলে ডেফিনেটলি খারাপ লাগতো।অনেক দকল গেছে তোমাদের উপর গিয়ে শুয়ে পরো।
.
তাই বলে বউও।ধুর ধুর একটা নিরামিষ।আমার মাঝে মাঝে প্রচুর সন্দেহ হয় এটা আমার ভাই নাকি অন্য কারোর। আজকের দিনেও নাকি তিনি বউ ছাড়া থাকবেন ভাবা যায়।কোথায় ভেবেছিলাম ভাবিকে তার রুমে দেওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করবে তা না উল্টো আমিই কেস খেয়ে গেলাম ভাল্লাগেনা।
:
:
#Part_32
:
:
অনেক্ষণ ধরে ভাইয়ার রুমে ভাবিকে নিয়ে বসে ভাইয়ার জন্য ওয়েট করছি।কিন্তু তার আসার নামই নেই।আসবেই বা কি করে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় থাকলে তো তার দিন দুনিয়ার কোনো হুশই থাকে না।এদিকে ঘুমে আমার আর তিশা আর আমার অবস্থা কাহিল।তবুও বসে বসে ভাবির সাথে গল্প করছি এমন সময় ভাইয়া এসে রুমে ঢুকলেন।যাক বাবা এখন আমাদের ছুটি।
.
কি রে পরী এখনও ঘুমাসনি।
.
আমি ঘুমালে তোমার বউকে পাহারা দিবে কে?এতক্ষণ ধরে তোমার জন্য বসে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত।তোমার রুমে রইল তোমার বউ এবার আমি আসি।
.
কেন তুই ওয়েট করছিলি কেন?তুই না বললি তুই রাহার সাথে থাকবি তাহলে?
.
উফ ভাইয়া তুমি কি আমাকে ওই বাংলা সিরিয়ালের দজ্জাল ননদ ভাবো।আমি বলেছিলাম তোমাকে দিয়ে একটু আকুতি মিনতি করানোর জন্য কিন্তু তুমি তো তুমি একবারও বললে না…. পরী আমার বউকে তুই নিয়ে যাস না।কি গো ভাইয়া তুমি হ্যাঁ
.
এইজন্যই বলিনি আমি জানতাম তুই এমন কোনো কাজ করবি না।যতই মুখে তখন এসব বলিস না কেন রাহাকে আমার রুমেই দিয়ে যাবি।
.
আর যদি না দিতাম তাহলে!
.
তাতেও প্রবলেম ছিলো না।কারন তোর একমাত্র ভাইয়ের বউ তোর ইচ্ছা করতে পারে ওর সাথে থাকার।এখনও বলছি তোরা এই রুমে থেকে যা আমি অন্য রুমে চলে যাবো।
.
ক্ষমা করো ভাইজান আমায়!আমার এরকম ইচ্ছা কখনও হবে না।কাল রিসেপশন আমার অনেক কাজ।গুড নাইট।
.
.
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছি।তিশা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পরছে।আমার চোখে ঘুম নেই শুধু উনার কান্না ভেজা মুখটা মনে পরছে।একটা কল দেব না থাক!হয়তো এখন ঘুমিয়ে পরেছে।ঘুমের মধ্যে ডিস্টার্ব করলে উনার ঘুমটা উড়ে যাবে।থাক কালকে তো দেখা হবেই।উনাকে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানা নেই।
.
.
পরেরদিন….
.
পার্লারের লোক এসে ভাবিকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।ভাইয়া আগে থেকে স্টেজে বসা আছে।এতক্ষণে রিহানদের বাড়ির লোকেরাও চলে এসেছে।আমি আর তিশা মিলে ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছি আর টিজ করছি। ভাবিকে এই লুকে দেখে ভাইয়াকে ক্রাশ খেতেই হবে।আর ভাবি লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে আমাদের কথা হজম করে যাচ্ছে।নিচে এসে ভাবিকে স্টেজে বসিয়ে আংকেল আন্টির সাথে কথা বললাম। হঠাৎ মনে পরলো আমার ফোন রেখে এসেছি তাই ফোন আনতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম।
.
.
অনেকক্ষণ ধরে এসে রোজকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।তিশাক জিজ্ঞেস করলাম তিশা বলল এক্ষুণি আপুকে নিয়ে নিচে এসেছে কিন্তু কই আমি তো আপুর কাছ থেকে এখন আসলাম তাহলে গেলো কোথায়।হঠাৎ সিড়ির দিকে নজর যেতেই আমি থমকে গোলাম….বাচ্চাদের মতে লাফিয়ে লাফিয়ে সিড়ি ক্রস করছে।বাতাশে শাড়ির আচঁল দুলছে।আজকে একদম পরীর মতো লাগছে।আরে এটা তে সেই শাড়ি যেটা আমি চুজ করে দিয়েছিলাম কিন্তু সেদিন তো শাড়িটা নেয় নি তাহলে এটা পেলো কোথায়।আকাশী রঙের শাড়ী ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক চোখে কাজল আর হাতে কয়েকটা আকাশী রঙের চুড়ি চুলগুলো ডার্ক করে ছেড়ে দেওয়া এই সাজই আমাকে পাগল করে তোলার জন্যই যথেষ্ট।এক নজরে চেয়ে আছি রোজের দিকে।কখন যে রোজ আমার সামনে চলে এসেছে টেরই পায়নি।রোজের তুরির শব্দে ধ্যান ভাংলো।
.
কি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন?(মুচকি হেসে)
.
তোমার মাঝে…
.
আমি তো এখানে তাহলে আপনি এখনও ওদিকে কি দেখছেন।ওই মেয়েগুলোকে দেখছেন নাকি!কি মেয়েগুলোকে পছন্দ হয়েছে।(চোখ টিপে)
.
আর ইউ জোকিং মি।যে নজর একবার তোমার উপর পরেছে সে নজরে আর কেউ পরবে না।আমার চোখ তোমায় দেখেছে তাই এইচোখ দিয়ে আর কাউকে দেখা সম্ভব নয় বুঝলে।
.
আপনার মধ্যে কি কবি কবি ভাব চলে আসলো নাকি!
.
হুম শুনেছি প্রেমে পরলে সবাই কবি হয়ে যায়।আচ্ছা বাদ দাও।তুমি এই শাড়িটা কোথায় পেলে?
.
মানে!আপনি কি বলতে চাইছেন।আমি কি রাস্তার কুড়ানো জিনিস পড়ি নাকি।
.
আরে আজব তো!আমি সেটা কখন বললাম।
.
হুম ডিরেক্টলি বলেন নি তবে এটাই মিন করেছেন।
.
উফ আমি শুধু বলতে চেয়েছি তুমি তো সেদিন এই শাড়িটা নিলে না উল্টো আমার থাপ্পড় দিয়ে চলে গেলে(গালে হাত দিয়ে) তাই বললাম।
.
হুম তখন আপনার উপর রেগে ছিলাম বলে আপনার সামনে নেইনি।আপনি আসার পর নিয়ে এসেছে।আমার ক্রাশ বয় আমাকে কিছু চুজ করে দেবে আর আমি নিব না তা কি হয়।
.
তখনই আবির ভাইয়া বলে উঠলো….রোজ তোমাকে আজ খুব মিষ্টি লাগছে।দেখে মনে হচ্ছে এই রংটা একদম তোমার জন্যই পারফেক্ট আর কাউকে এই রঙে মানাবে না।
.
দেখতে হবে না পছন্দ টা কার(ভাব নিয়ে)
.
উনার কথায়য় আমি আর আবির ভাইয়া মুচকি হাসলাম।
.
.
তিশা শাওন লিনা আপু আবির ভাইয়া আমি আর উনি
খাওয়ার টেবিলে বসে আছি উনার এক কথা উনার সাথে আজ আমাদের সবাইকে খেতে হবে।নাহলে উনি খাবেন না।তাই বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে।খাচ্ছি আর সবাই মিলে গল্প করছি।খেতে খেতে অনেকটা খাবার উনার মুখে লেগে গেছে।হাতের ইশারায় বললাম কিন্তু উনার তাতে কোনো হিলদোলই নেই।থাক আপনার মুখে ময়লা থাকবে আমার কি তাই চুপচাপ খাচ্ছি। খাওয়া শেষ হলে আমি যেই উঠতে যাব তখই উনি আবার আমাকে টেনে বসালেন।কি হলো জিজ্ঞেস করাতে কোন উওরই দিলেন না।খাচ্ছেন তো খাচ্ছেনই রাক্ষস কোথাকার।সবার খাওয়া শেষ হলে সবাই চলে যাচ্ছে শুধু আমিই যেতে পারছি না।সবাই যাওয়ার পর উনি একটা টিস্যু আমার দিকে এগিয়ে বললেন…..
.
নাও মুখটা মুছে দাও তো।
.
কিহ!আমি পারবো না।
.
কেন প্রবলেম কি?
.
দেখুন এটা আমাদের বাড়ি।যখন তখন যে কেউ আমাকে আর আপনাকে এভাবে দেখে ফেলতে পারে।কি হবে বুঝতে পারছেন।আমি যাচ্ছি বলে উঠতে গেলে আবার বসিয়ে দিলেন।
.
হুম(শান্ত ভাবে)।কেউ দেখবে না।এখানে সারারাত না থাকতে চাইলে চুপচাপ কাজটা কর আর চলে যাও।
.
বুঝতে পারছি রাক্ষসেরর কথা না শুনলে এখানেই সারারাত কাটাতে হবে।উফ অসহ্য
.
বকা শেষ! এবার কাজটা কর।
.
মনে মনেও কিছু বলা যায় না।কেমন করে শুনে নেয়।কোথায় কে কাকে বকছে।
.
বকবক অফ করো আর যা করার তাড়াতাড়ি কর।
.
চারিদিক চোখ বুলিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে টিস্যুটা উনার মুখের কাছে নিয়ে আর এগুতে পারছিনা।তবুও অনেক কষ্টে মুখটা মুছিয়ে দিলাম।
.
এইতো গুড গার্ল বলেই কপালে চুমো দিয়ে এমনভাবে চলে গেলেন যেন এখানে কিছুই ঘটেনি আর আমি এখনও সেখানে “থ” মেরে বসে আছি।
.
.
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here